ভারতে মধ্যবিত্ত তথা উচ্চবিত্ত মহিলাগণ যতদূর জানি নিয়মিত বিউটি সালোন এ যাতায়াত করেন। ভুরুর চুল তুলতে, পেডিকিওর, ম্যানিকিওর, নখের সৌন্দর্য বাড়াতে, হাত পায়ের ওয়্যক্সিং করতে, স্পা করতে, নানান ধরণের ফেশিয়াল, ইত্যাদি প্রভৃতি।সত্যি কথা বলতে কি আমি এর আগে কখনও এসব জিনিস একটাও করি নি বা করাই নি।
যতবার গেছি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে, তা কেবলই হেয়ার ড্রেসারের কাছে মাথার চুল ছেঁটে ফেলতে এবং একবারই ভিক্টোরিয়া ফলসের সালোনে গিয়ে চুল বাঁধার দক্ষযজ্ঞ করেছি।
তো যেহেতু বয়স বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে এখন মনে হয়, যে সব জিনিস কখনও করা হয়ে ওঠে নি, তেমন কিছু অ্যাডভেঞ্চার করেই ফেলি অন্তত একটিবার।
সেই সব ভেবেই রোমানিয়া সফরের সময় ঝুঁকি নিয়ে, ফেশিয়াল করার জন্য একটা জমকালো বিউটি সালোনে ফেশিয়াল করানোর একটা স্লট বুক করে ফেলেছিলাম।
বুখারেস্ট যে এত বিশাল শহর, তা যারা কখনও সেখানে যায় নি তাদের বলে বোঝানো অসম্ভব।
পশ্চিম ইয়োরোপের দেশগুলোর রাস্তাঘাট মূলতঃ সরু সরু হয়, জারমানির কিছু রাস্তা বাদ রাখলে। সে তুলনায় বুখারেস্টে থই পাওয়া ভার।
ভাষা একটা সমস্যা। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সুলভ এবং প্রচুর হলেও শহরের কেন্দ্রস্থলে দিশেহারা অবস্থা হয়ে যায়।
ফলতঃ বুক করা টাইমের আধঘন্টা পরে গিয়ে আমার নির্দিষ্ট সালোনে উপস্থিত হলাম।
তবু তারা ফিরিয়ে দেয় নি। অন্য যার স্লট ছিল পরে, তাকে ফোন করে অনুরোধ করে আধঘন্টা পিছিয়ে দেয় তার স্লট।
এবার শুরু হলো আমার রূপচর্চা।
প্রথমেই একটা ঘরে একটি উঁচুমতো খাটে শুতে হলো। ফিজিওথেরাপিস্টদের যেমন খাট থাকে তেমন।
মাথার ওপরে নানা রকমের যন্ত্রপাতি, লাইট।
বিউটিশিয়ান ইংরিজি জানেন। বড়ো একটা সাইক মুখের ওপর ফেলে আতস কাচ দিয়ে মুখমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করে জিজ্ঞাসা করলেন, শেষ কবে ফেশিয়াল করেছি।
জানালাম যে কখনই করি নাই।
এখানে হরেক রকমের ফেশিয়াল করার ব্যবস্থা আছে, তবে তিনি রেকমেন্ড করলেন যে আমার জন্য উপযুক্ত হচ্ছে মুখের ত্বক পরিস্কার করে ফেলা।
প্রথমেই কীসব লিকুইড দিয়ে মুখটা মুছে দিলেন।
তারপর মুখের ওপর নেমে এলো গরম ভাপ, জলীয় বাস্প হবে। সেইটে সরিয়ে একটা যন্ত্র দিয়ে গাল নাক এসবের চামড়া থেকে চেঁচে তুলছিলেন মরা ত্বক ময়লা ইত্যাদি। আমার পক্ষে চিৎ হয়ে শুয়ে কিছুই দেখা সম্ভপ হচ্ছিল না, সামনে কোনও আয়না যেহেতু নেই। তারপরে একটা কীরকম যেন সাবানের মত জিনিস মাখানো হলো, একটু কুটকুট করছিল বটে, সেটা বুদ্বুদ মতো হয়ে ফুলে উঠছিল, সেটা মোছা হলো। তারপরে ব্ল্যাকহেড হোয়াইট হেড এসব তোলার জন্য আরেক প্রস্থ পরিস্কার করবার পালা। মাইক্রো নিডলিং করা হলো, মোটেই ব্যাথা লাগেনি একটুও। দুই গালেই করেছেন, ডান হালে গোটা তিনেক এবং বাঁ গালে একটা। এপরে ফের আরেকটা কী যেন লোশন মাখানো হলো। তারপরে চোখ যদিও বুদেই রেখেছিলাম, তাও চোখের ওপর কাপড় দিয়ে ঢেকে মুখের ওপর লাল নীল আলো ফেলা হচ্ছিল বেশ টের পাচ্ছিলাম। এরপর শেষ স্টেপ। মুখের ওপর মাস্ক দেবার পালা। মাস্ক জিনিসটা গুলে এনে মুখের ওপর লাগিয়ে দিলেন তিনি। আবার সেই লাল নীল আলোর যন্ত্রটা কিছুক্ষণ জ্বলল।
এরপরে আমার স্লট ছিল ম্যাসাজের জন্য। ঐ মাস্ক পরা অবস্থাতেই ম্যাসাজের ঘরে চলে গেছলাম। মিনিট দশ পনেরো পরে ঐ ঘরে এসে বিউটিশিয়ান বোনটি একটানে মুখোশটা টেনে খুলে দিলেন আমার। ম্যাসাজ শেষে যখন বাইরে এলাম, আয়নায় মুখ দেখবার আগেই বুঝেছি যে যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে।
কিছু ত্বক পরিচর্যার সরঞ্জাম কিনেছি ইদানীং, সেই মতো যত্ন নেওয়া শুরু করেছি একটু একটু।