আমরা ঐ প্রকাণ্ড হলঘরের বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাইরে চড়া রোদ, সামনে একটু ছায়ার নীচে সিমেন্টের স্ল্যাবে বসে বাকি ওয়াইনটুকু খেতে খেতে আমি বাঘাকে বলছি — দেখতে পাচ্ছো তো স্বচক্ষে কেমন দেশে এনে ফেলেছি তোমায়?বাঘার মুখে মিষ্টি হাসি। সে বলে — সত্যিই তাই। যারা আসে নি, তাদের বলে বোঝানো যাবে না।
গেওর্গি আমাদের কথা বুঝতে না পারলেও এটুকু বোঝে যে আমরা তারিফ করছি তার দেশের।
আমি ঐখানে বসেই প্ল্যান করতে শুরু করি — বুঝলে, এর পরের ট্রিপে আমরা যাবো মলদোভা। পুরো মদের জায়গা। মলদোভার কনিয়াক যে না খেয়েছে, সে জানে না কী জিনিস সেটা।
— না না, কনিয়াক না, ওতে বড্ড বেশি অ্যালকোহল পার্সেন্টেজ। ওয়াইনই ভালো।
— আরে দূর, মলদোভার ওয়াইনও চমৎকার। নেক্সট ট্রিপে কী করব বুঝতে পারছো? মলদোভা আর আর্মেনিয়া কভার করে তুর্কিয়েতে ঢুকে পড়ব ল্যান্ড বর্ডার ধরে যেদিকটায় এশিয়ান পার্ট। ওখানে চমৎকার সব পাহাড়....
বাঘা বলল — মলদোভাতেও এরকম ওয়াইন পাওয়া যাবে?
— আলবাৎ পাওয়া যাবে না! ওখানকার ওয়াইন আরও ভালো, ঐ তো ওকে জিজ্ঞেস করো।
বাঘু আর কেমন করে জিজ্ঞেস করবে, আমিই হাঁকি — সের্গেই! মলদোভার ওয়াইন এই গ্রুজিয়ার থেকে অনেক ভালো না?
গেওর্গি এগিয়ে এসে বলে — মোটেই না, গ্রুজিয়ার ওয়াইনের ওপর আর কোনও ওয়াইন হয় না। আমি প্রমাণ দিতে পারি।
— কীরকম?
— দেখছেন না, কয়েক পাত্র খাবার পরেই আমি গেওর্গি থেকে কেমন করে সের্গেই হয়ে গেছি!
এই শেষ বাক্যটা বাঘাকে অনুবাদ করে বুঝিয়ে দেবার দরকার পড়ল না। এক চুমুকে বাকিটুকু শেষ করে উঠে দাঁড়াতে গিয়েই বুঝতে পারলাম এই জিনিসের তেজ। তবে সাবধানে ব্যালেন্স রেখে হেঁটে বেরিয়ে গেছি। বেরোনোর আগেই একটা চমৎকার শোরুম রয়েছে বিবিধ ওয়াইনের। সেখানে ফোটো তোলার পরে গাড়িতে চেপে ফের যাত্রা শুরু। দূরে দেখা যাচ্ছে আজেরবাইজান। গাড়ি উঠছে পাহাড় বেয়ে। চারিদিকে নানান ফলের ক্ষেত, আঙুরই বেশি, স্ট্রবেরি, নানান রকমের রাসবেরি, পীচ, নেকটারিন, আবার কখনও একপাশে খাদ।
আমি আল্পস পর্বতমালার দেশের মানুষ, পাহাড় আমার দৈনন্দিন জীবনে অচেনা কিছু নয়। তবে এই সৌন্দর্য অন্যরকমের। সম্ভবত মানুষগুলোর ব্যবহার এত ভালো বলেই হয়ত যা দেখি তাই ই বেশি বেশি ভালো লেগে যায়। আর তা যদি না হয়, তবে এর পেছনে রয়েছে রঙীন সুরার কারসাজি।