এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • একুশ শতকের প্রধান দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে

    Aritra Goswami লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ মে ২০২৫ | ১২২ বার পঠিত
  • নতুন শতকের আমরা ২৫ বছর পার করে ফেলেছি। গত শতাব্দীর শুরু হয়েছিল সর্বহারা বিপ্লবের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ ও কয়েক কোটি মানুষের মৃত্যু পেরিয়ে, অনেক রাষ্ট্রে বিপ্লব এসেছে, কিন্তু সর্বহারার মুক্তি ঘটেছে কি? শতাব্দী শেষে সোভিয়েত ইউনিয়ান উবে গেছে ও চীনসহ অন্যান্য “সমাজতান্ত্রিক” রাষ্ট্রে ব্যক্তি পুঁজির চাষ চলছে। উল্টো দিকে, নতুন শতকে ফ্যাশিবাদ আবার ফিরে এসেছে। সঙ্গে নিয়ে এসেছে বিশ্বযুদ্ধ ও গণহত্যার আতঙ্ক।

    কেন এমন হ’ল? যদি আরও তলিয়ে দেখি, তাহলে মার্ক্সিয় মহলে ঘুরতে থাকা এক ধারণার কথা বলতেই হয়। ফ্যাশিবাদ হ’ল, অবক্ষয়ের পুঁজিতন্ত্র। অর্থাৎ, পুঁজিবাদী সমাজ তার অবক্ষয়ের সময় ফ্যাশিবাদকে আঁকড়ে ধরে। এখন, এক শতাব্দীর ব্যবধানে পুঁজিতন্ত্র ও তার অবক্ষয় আর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। তার মানে কি এ' যুগের ফ্যাশিবাদও অর্থনীতির ভিত্তি মোতাবেক “নয়া” রূপ ধারণ করেছে? তার জন্য আমাদের যেতে হ’বে পুঁজিবাদের গভীরে।
     
    ১. পুঁজিবাদ কী?
     
    পুঁজিবাদ এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে উৎপাদন হয় সামাজিক ভাবে, কিন্তু উৎপাদনের উপকরণ ব্যাক্তিমালাকানাধীন। আগের কোনো ব্যবস্থায় সামাজিক ভাবে উৎপাদন সম্ভব ছিল না। শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তির ফলেই উৎপাদনের সামাজিকরণ সম্ভব হয়।

    এই পুঁজিতন্ত্র সবসময়ই নির্ভরশীল ছিল অতিউৎপাদনের ওপর। কারণ বাজারের চাহিদা আগের থেকে অনুমান করা সম্ভব নয়। ফলে, একাধিক প্রাইভেট সংস্থা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে উৎপাদন করে থাকে। এই জন্যই অতিউৎপাদন – অপচয়, অবক্ষয়, ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়!
     
    ২. প্ল্যাটফর্ম পুঁজির উত্থান
     
    একুশ শতকের প্ল্যাটফর্ম পুঁজির উত্থান এই দ্বন্দ্বের মীমাংসা ঘটাতেই। অ্যালগোরিদম ও এআই নির্ভর প্ল্যাটফর্ম, শুধু যে বাজারগত চাহিদার পূর্বাভাস পেতে পারে তাই নয়, এর মাধ্যমে অনিশ্চিত প্রতিযোগিতা ও অতিউৎপাদনের সঙ্কট থেকে মুক্তি মেলাও সম্ভব।
     
    এখানেই শেষ নয়। আগের মতো মজুরি-শ্রমের আত্মসাতের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্ম আর মুনাফা অর্জন করে না। বা করলেও তা এক্ষেত্রে গৌন। প্ল্যাটফর্মের যুগে, কোনো ধরনের শ্রমই আর বাণিজ্যিকরণের বাইরে নয়। এই যে সারাদিন আমরা প্ল্যাটফর্মে সময় কাটাই, পোস্ট করি, কমেন্ট করি, রিয়্যাক্ট করি, রিল দেখি, এই সবকিছুই এখন শ্রমের অন্তর্গত! এমনকি যখন আমরা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারও করছি না, তখনও প্ল্যাটফর্ম আমাদের ওপর নজরদারী চালাচ্ছে! জেনে নিচ্ছে আমাদের হাসি, কান্না, ভালোলাগা, ভালোবাসা… সব কিছুই। এই সব কিছু আবার আমাদের কাছেই ফিরে আসছে, লোভনীয় পণ্য হয়ে! এক কথায়, স্রেফ মুনাফার খাতিরেই যাবতীয় সামাজিক শ্রম ও মেধার একচেটিয়াকরণ! এর সাথে প্রাক-পুঁজিবাদী ভাড়া বা “রেন্ট”কে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। "প্ল্যাটফর্ম ফি"এর প্রচলন থাকলেও তা প্র্যাটফর্মের আয়ের মূল উৎস নয়।

    সর্বহারা বলতে, কারখানার শ্রমিককেই একসময় বোঝানো হ’ত। এখন সেই ধারনা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে! সর্বহারা বলতে এখন, প্রত্যেক প্ল্যাটফর্ম ইউজার, প্রত্যেক অসংগঠিত ও সংগঠিত শ্রমিক, প্রত্যেক পরিযায়ী শ্রমিক, গিগ ওয়ার্কার, এবং প্রত্যেক প্রত্যেক গরিব ও ভূমিহীন কৃষককে বোঝা দরকার।

    আসলে সর্বহারা মানেই কারখানার শ্রমিক, এই ধারনাও আসলে ইউরোকেন্দ্রিক। ঔপনিবেশিক শাসনে কৃষকও সময় বিশেষে সর্বহারার ভূমিকা পালন করে এসেছে। সে’ নীল বিদ্রোহই হোক বা আমেরিকার দাস বিদ্রোহ, শ্রেণি চরিত্রের দিক ছিল সর্বহারা! প্রাক-পুঁজিবাদী ঘরানার শোষণের মাধ্যমে আসলে মুনাফাই জমছিল, পুঁজিবাদই পুষ্ট হচ্ছিল। সামন্ততন্ত্র নয়! উপনিবেশের বিদ্রোহী কৃষকদের সর্বহারা চরিত্র অস্বীকার করে, "জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব" (বিশেষ ক্ষেত্রে "নয়া গণতান্ত্রিক"ও বটে) ও “ভালো” বুর্জোয়াদের পেছনে ছুটে, আসলে সর্বহারা বিপ্লবের সর্বনাশ হয়েছে! এ’ প্রসঙ্গে পরে আলোচনা করা যাবে।
     
    ৩. ফ্যাশিবাদ কী? কেনই বা তার পুনরাবির্ভাব?
     
    ফ্যাশিবাদ বলতেই আমাদের হিটলার, গ্যাস চেম্বার, বিশ্বযুদ্ধ এবং সর্বোপরি স্বৈরতন্ত্রের কথা মনে পড়ে। হাল আমলে, যে কোনো স্বৈরতন্ত্রী শাসককেই ফ্যাশিস্ট বলার চল হয়েছে। হাসিনা তা উজ্জ্বল উদাহরণ।

    ফ্যাশিবাদ সম্পর্কে সব থেকে বড় “মিথ” হ’ল, গত শতাব্দীর ফ্যাশিবাদ এক ইউরোপীয় জিনিস! এটি সাবেক সর্বহারা ধারণার মতই এক ইউরোকেন্দ্রিক ঢপ! এ’ কথা ঠিক ফ্যাশিবাদ নাম নিয়ে সমরবাদী, প্রতিবিপ্লবী রাষ্ট্র, সে’ আমলে ইউরোপেই গড়ে ওঠে। কারণ ১৯১৭র অক্টোবরের ঠেলা ইউরোপে লেগেছিল। কিন্তু মনে রাখতে হ’বে, ফ্যাশিবাদ পুঁজিবাদের এক মতাদর্শীয় প্রতিক্রিয়া। সেই প্রতিক্রিয়া যতটা না ইউরোপে জন্মেছিল, তার চেয়ে ঢের বেশী প্রভাব বিস্তার করেছিল উপনিবেশে।
     
    আমাদের উপমহাদেশের কথাই ধরা যাক। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, অবিভক্ত ভারতে “দ্বি জাতি তত্ত্ব”এর উদয় কিন্তু সাবেক ফ্যাশিস্ট যুগেই। তার দুই নির্মাতা, সাভার্কার ও জিন্না, আদতে দুই বিলেতে পড়া বুর্জোয়া! এসব নেহাৎ নিছক কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়! তারা দুজনেই কার্যকারী ভাবে, আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়ার ফ্যাশিস্ট স্বার্থ সিদ্ধি করতেই নেমেছিলেন, সর্বহারা শ্রেণিকে বিভাজনের মধ্যমে।
     
    এখানেই ফ্যাশিস্ট মতাদর্শের মূল নির্যাস লুকিয়ে আছে। এটি নেহাৎ কোনো স্বৈরতান্ত্রিক গঠনের নীতি নয়। স্রেফ সংকটের সময়, গায়ের জোরে বুর্জোয়া অর্থনীতির কোনো কেনেসীয় প্রতিষেধকের বিষয় নয়। ফ্যাশিবাদের লক্ষ্য খুব সুনিশ্চিত। ধর্ম, জাত, ভাষা ইত্যাদির ভিত্তিতে সর্বহারা শ্রেণিকে বিভাজিত করা। যাতে বিপ্লব ঠেকানো যায়। এর প্রভাব শুধু জার্মানিতে বা সাম্রাজ্যবাদের রাজধানীতে নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি উপনিবেশেই!
     
    মনে রাখা দরকার বলশেভিক বিপ্লব যতটা না ইউরোপের শ্রমিকদের আন্দোলিত করেছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি আন্দোলিত করেছিল উপনিবেশের মুক্তিকামী মানুষদের, সর্বহারাদের। সেই কারণেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবক'টি শোষিতের বিপ্লব ঘটেছে… উপনিবেশেই। আবার ইউরোপে হিটলার হেরে গেলেও, উপমহাদেশে জিন্না কিন্তু জিতেছিলেন, পাকিস্তান গঠনের মাধ্যমে। স্বাধীন ভারতে সাভার্কার সাথে ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও, তার উত্তরসূরীরা আজ পেরেছে। কাজেই, ফ্যাশিবাদ জিতেছে এবং লালিত-পালিত হয়েছে উপনিবেশে ও তার পরবর্তী রাষ্ট্রে। সুতরাং, ফ্যাশিবাদ মানে শুধু গ্যাসচেম্বার নয়। ফ্যাশিবাদ মানে দেশভাগ, দাঙ্গা ও গণহত্যাও! এ’ শতাব্দীর ফ্যাশিবাদ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, গত শতকের ধারাবাহিকতা মাত্র।
     
    ৪. প্ল্যাটফর্মের যুগে ফ্যাশিবাদ কেন?
     
    উপনিবেশে বা উপমহাদেশে ফ্যাশিবাদের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা থাকলেও, তা কখনই সবসময় জোরালো ছিল না। এখন, উপনিবেশ-উত্তর দেশের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বেও ফ্যাশিবাদের পুনরাবির্ভাব হচ্ছে। সেই কারণেই “নয়া-ফ্যাশিবাদ” বলার দিকেও ঝোঁক বাড়ছে।

    আগেই বলেছি, প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাব পুঁজিবাদী প্রতিযোগিতামূলক বাজারের ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। এর ফলে, ব্যক্তিমালিকানার ধারনাও কিন্তু আজ সঙ্কটের মুখে। ব্যক্তিমালিকানার যুক্তিটিই দাঁড়িয়েছিল প্রতিযোগিতার অযুহাতের ওপর ভর করে। এটিই পুঁজিতন্ত্রের প্রধান অভ্যন্তরীন মতাদর্শগত সংকট। একদিকে শ্রমের শোষণের পরিসর সে সর্বত্র বিস্তার করেছে, গোটা শ্রমজীবী শ্রেণির সর্বহারাকরণ করেছে, পাশাপাশি তার ব্যক্তিমালিকানার যুক্তিও অসাড় হয়ে এসেছে। এমন অবস্থায় সর্বহারা বিপ্লবের ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক! এবং তার সহজাত প্রতিক্রিয়া হিসেবে ফ্যাশিবাদের পুনরাবির্ভাব।
     
    পুঁজিবাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বৈপ্লবিক বদল এলেও, ফ্যাশিবাদ কি বদলেছে? নজরদারি ও প্রেডিকশানের যুগে তেমন বদল তো আসা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই বদল, পুজিতন্ত্রের গঠনগত বদলের ফলেই এসেছে। কিন্তু আগেই বলেছি ফ্যাশিবাদ পুঁজিতন্ত্রের এক মতাদর্শগত প্রতিক্রিয়া। যার উদ্দেশ্য, সর্বহারা শ্রেণির মধ্যে বিভাজন ঘটানো। সে বিভাজন ঘটানো হয়, ভাষা, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, ইত্যাদির মাধ্যমে।
     
    একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বিভাজনের এই সকল পদ্ধতি আসলে প্রাক-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকেই আসছে। যা মার্ক্সের কথায় "formal subsumtion" হিসেবে পুঁজিতন্ত্রেও প্রচলিত ছিল, ইউরোপে পুঁজিবাদের প্রথম দিকে, এবং উপনিবেশ ও উপনিবেশ পরবর্তী রাষ্ট্রে, আরও অনেক দিন পর্যন্ত। ফ্যাশিবাদ এই "formal subsumtion" কেই আত্তীকরণ করে। শোষণের কৌশলগত দিক থেকে নয়, মতাদর্শগত দিক থেকে। সেই পথেই এ’ যুগের ফ্যাশিবাদও হাঁটছে। এই শতকে, পুঁজিবাদে নয়া জিনিসপত্র থাকলেও ফ্যাশিবাদে নেই।
     
    ৫. এ শতকের প্রধান দ্বন্দ্ব তবে কী?
     
    এক কথায়, নব ও সম্প্রসারিত সর্বহারা শ্রেণির সঙ্গে ফ্যাশিবাদের দ্বন্দ্ব। ফ্যাশিবাদ কোনো নিছক রাষ্ট্রনীতি নয়, বরং মতাদর্শগত প্রতিক্রিয়া। এই প্রতিক্রিয়া নয়া-উদারিকরণের হাত ধরে আসেনি। বরং এসেছে তার ব্যর্থতার হাত ধরে। মুক্ত বাণিজ্য ও ভুবনায়ন  বিশ্ব শান্তিও আনেনি, শোষণমুক্তিও আনেনি, বুর্জোয়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন না। বরং প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে! তার ফলেই প্ল্যাটফর্মের উদ্ভব। যেখানে প্রতিযোগিতামূলক বাজার ও অতিউৎপাদনের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। সাথে প্রয়োজন ফুরিয়েছে ব্যক্তিমালিকানারও! যে কারণেই পুরনো ফ্যাশিবাদের আজ প্রয়োজন পড়েছে, যা বহাল তবিয়তেই বেঁচেছিল উপনিবেশে। 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ? | 198.98.***.*** | ২২ মে ২০২৫ ১৪:০৭731560
  • এ কি সেই বকলম নাকি? 
  • কৌতূহলী | 115.187.***.*** | ২৩ মে ২০২৫ ১৩:১৩731590
  • খুব দরকারি লেখা , প্ল্যাটফর্ম পুঁজি সম্পর্কে নতুন ভাবনার খোরাক পেলাম। 
    দুটো জিনিস একটু বুঝতে চাইছি/
    ১) আগের কোনো ব্যবস্থায় সামাজিক ভাবে উৎপাদন সম্ভব ছিল না। শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তির ফলেই উৎপাদনের সামাজিকরণ সম্ভব হয়।
    ২)প্রাক-পুঁজিবাদী ঘরানার শোষণের মাধ্যমে আসলে মুনাফাই জমছিল, পুঁজিবাদই পুষ্ট হচ্ছিল। সামন্ততন্ত্র নয়! 
    এই দুটো বিষয় একটু ব্যাখা করবেন? যদি সম্ভব হয়?
  • Aritra Goswami | ২৩ মে ২০২৫ ১৪:১২731591
  • ধন্যবাদ সময় করে পড়ার জন্য। আপনার দুটি জিজ্ঞাস্য নিয়ে বলি, 
    1. শিল্প বিপ্লবের আগে উৎপাদন হ'ত ব্যক্তিগত ভাবেই। একজন কৃষক তার মত করেই চাষ করতো, কুমোর তার মতন করেই মাটির জিনিস বানাতো, কামার লোহার জিনিস, এবং ইত্যাদি। তাদের যন্ত্রপাতিও তাদের নিজস্ব ছিল। অবশ্যই তাঁদেরকে খাজনা দিতে হ'ত। এবং ইচ্ছে মত পেশা বেছে নেওয়ারও সুযোগ ছিল না। শিল্প বিপ্লবের পরেই, উৎপাদন ব্যক্তিগত পরিসর অতিক্রমের সুযোগ পায়। একটি জুতোর কারখানায় যে জুতো তৈরি হয়, তা একজন মুচি নিজের বানানো বলে আর দাবী করতে পারে না। অনেকের যৌথ শ্রমের ফলেই তা তৈরি হয়। অর্থাৎ শ্রমের একপ্রকার সামাজিকরণ সম্ভব হয়। যা আগের কোনো ব্যবস্থায় ছিল না।
       
    2.  আগেই বললাম, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদকের উৎপাদনের স্বাধীনতা থাকলেও, তা ছিল তার বংশ ও জমির সাথে বাঁধা। অবশ্যই তাঁকে খাজনা দিতে হ'ত, যা একপ্রকার অর্থনৈতিক শোষণ কিন্তু তা সামন্ততন্ত্রের মূল ভিত্তি নয়। জমিদার সময় বিশেষে খাজনা মকুবও করে দিতেন। শোষণের মূল ভিত্তি ছিল বংশগত এবং ভূমিদাসত্ব। যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি নীল চাষ শুরু করে, তখন তা শোষণের এই সূত্র ধরে হয় না। অবশ্যই যারা নীলচাষি, তারা সামন্ততান্ত্রিক ভূমিদাসত্বর জায়গা থেকেই নীল চাষ শুরু করে, কিন্তু তাঁদের ইচ্ছে মত চাষের সুযোগ কেড়ে নেওয়া হয়। যা অবশ্যই একটি পুঁজিবাদী উৎপাদনের বৈশিষ্ট্য। এবং উৎপাদন কোনো খাজনা আদায়ের জন্য ছিল না। ছিল শ্রমের মূল্য আত্মসাতের জন্য। ফলে সামন্ততন্ত্রের অর্থনীতি বহির্ভূত ভূমিদাসত্ব ও বংশনীতি নীলকর সাহেবেরা গ্রহণ করলেও, শোষণের মূল ধরনটি ছিল অর্থনৈতিক ও পুঁজিতান্ত্রিক। সামন্ততান্ত্রিক কায়দায় কৃষকেরা চাষ করলেও তাঁদের একপ্রকার সর্বহারাকরণ চলছিল, এবং বিদ্রোহও সেই যায়গা থেকেই।
  • কৌতূহলী | 115.187.***.*** | ২৩ মে ২০২৫ ১৪:৩০731593
  • এবার বুঝলাম। অনেক ধন্যবাদ অরিত্রবাবু।
    আচ্ছা ,ব্রিটিশপূর্ব ভারতে সামন্তব্যবস্থা কি ইউরোপীয় সামন্তব্যবস্থার মতই ছিল?নাকিকিছু মৌলিক পার্থক্য ছিল?
  • Aritra Goswami | ২৩ মে ২০২৫ ১৯:২৭731595
  • অবশ্যই তফাৎ আছে। ইউরোপে ভূমিদাসের ওপর সরাসরি সামান্ত প্রভূর নিয়ন্ত্রণ ছিল। ভারতীয় ক্ষেত্রে ভূমিদাস সরাসরি বলা যায় কি না, তা  নিয়েও সংশয় আছে। এক্ষেত্রে জাত পাত বিষয়টি মুখ্য। এটি অনেক বিস্তারিত আলোচনা পরিসর। কমেন্টে লিখতে চাইনা।  
  • কৌতূহলী | 115.187.***.*** | ২৪ মে ২০২৫ ০০:২৭731602
  • @অরিত্রবাবু 
    বেশ , আপনি কখনও আপনার অবকাশমতো আলাদা আর্টিকেল এ আলোচনা করলে খুব ভাল হয়,
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন