এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আগস্ট, তোমাকে আমরা ভুলব না

    শুভ রায়চৌধুরী লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ আগস্ট ২০২৪ | ৪৬৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • এত খবরের ভিড়ে, এত নৃশংসতার মাঝে আমি নিজেকে কোথায় আড়াল করব? কোনও একটা শান্তির পরিসর খুঁজে পাব এই আশা আমার নেই। যা করতে চাইছি, করতে পারছি না। এই যে, এখন একটা গল্প লিখতে বসেছি তোমাদের শোনাব বলে, তার শব্দ সাজাতে বসে আমাকে বার বার সম্মুখীন হতে হচ্ছে দেশের বাস্তবতার সামনে, আমার নিজের অস্তিত্বের কাছে— এমন বাস্তবতা আগে কখনও আমাদের অস্থিমজ্জায় পোকা ধরাতে পারেনি, পোকাগুলো ওদের মুখোশ খুলে ফেলেছে, ওরা নগ্ন, ওরা রক্তপিপাসু, আমরা সবাই জানতাম, কিন্তু মুখ বুজে মেনে নিয়েছিলাম।

    আমরা এক ভয়ংকর দৈত্যকে রোজ রোজ মোকাবিলা করছি, জঘন্য ও নৃশংস, কিন্তু আমরা পালাতে পারছি না। কোথায় যাব? এই গল্প যাদেরকে নিয়ে লিখব ভেবেছিলাম, তাদের অনেককে এ-মুহূর্তে খুঁজে পাচ্ছি না। তারা নিপীড়িত, তারা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। দরজায় টোকা দিচ্ছি, উত্তরে শুধুই নৈঃশব্দ, কখনও চাপা কান্নার আওয়াজ, কারওর মুখের ভাষা হারিয়ে অবিরাম অব্যাখ্যাত চিৎকার। সংলাপ লিখব কীভাবে? চিৎকার, কান্না, নৈঃশব্দ কি কোনও ভাষা নয় তবে? এগুলো কি সংলাপ হতে পারে না? তবে বলো, কোন ভাষায় লিখলে নিপীড়ন থেকে ওদের মুক্ত করতে পারব? ইঞ্জিনিয়াররা এত দিনেও কেন একটা যন্ত্র আবিষ্কার করতে পারল না যেটা কান্না, নৈঃশব্দ আর চিৎকারকে ভাষায় অনুবাদ করে দিতে পারবে! ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে। ঠিক কী করলে দৈত্যের হাত থেকে আমার চরিত্ররা, আমরা বাঁচতে পারব?

    আমরা জানি আমাদের কোনও স্বর্গ নেই; আমরা জানি স্বপ্নের চাইতেও হত্যার রক্ত গাঢ় হয়। তবু, আমরা নাগরিকরা প্রতিমুহূর্তে ওই দৈত্যের বিরুদ্ধে মিছিলে, শব্দের মিছিলে, স্লোগানে নিজেদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছি। দৈত্য আমাদের চিহ্নিত করে রাখছে, সময় বুঝে খুলে নেবে হাত-পা, খুবলে নেবে চোখ, ছিঁড়ে ফেলবে কণ্ঠনালি আর ভেঙে দেবে তার দিকে তুলে রাখা তর্জনী। দৈত্যের পোষ্য স্তাবকরা সোশ্যাল মিডিয়া, টিভিতে আমাদের শুনিয়ে যাচ্ছে আমরা কতটা হিংস্র, বন্য। তারা দৈত্যের হাতে এঁকে দিচ্ছে চুম্বন। ভবিষ্যতের কাছে কী রেখে যাব আমরা?

    তবু, কিছু পুরনো ও নতুন দৃশ্য এই আগস্ট আমাদের সামনে এনেছে, তুমি ভাবতে পারো এগুলো একটা অগল্পের টুকরো বা আমার কল্পনা বা রিয়ালিটি।

    দৃশ্য ১:

    চরিত্র – নামহীন যৌবন

    ওই ওখানে রেল ওভারব্রিজে একা দাঁড়িয়ে যে যৌবনকে তুমি দেখতে পাচ্ছ, সে অনেকটা শুষ্ক কাঠের মতো, সামান্য আগুনে জ্বলে উঠবে দাউ দাউ। সে একটি বুলেট হতে পারে, আবার একটি বুলেট হতে পারে খবর এবং উলটোটাও। সে একটি সোচ্চার মন্তব্য হতে পারে, মন্তব্যটা হতে পারে সামান্য একটি ফেসবুক পোস্ট বা একটি বুলেট। ওর চিন্তার উন্মাদ চরিত্রটিকে কেউ অনুভব করতে পারছে না। সে নিজের হাত-পা গুটিয়ে নেয়, মুখ বন্ধ করে, দীর্ঘ শ্বাস টেনে নেয় ফুসফুসে, মনের মধ্যে জমিয়ে রাখে স্থিতিশক্তি, যেটা একটু পড়েই প্রবল গতিতে ভেঙে দিতে চাইবে পুরনো অন্ধত্ব যা অশিক্ষার মাংসপিণ্ডরা সযত্নে লালন করেছে যুগ-যুগ। কান পেতে সে শুনছে দৈত্যের পদতলে পিষে যাওয়া চিৎকার। চিৎকার হয়ে উঠতে চাইছে একটা বুলেট, যে বুলেট উত্তর দিতে চাইছে দৈত্যের হুমকিকে— তুমি কিছু বলেছ কি রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়েছ, লুকিয়ে পড়ো নাহলে এনকাউন্টার করা হবে। সে যৌবন জানে আইন আমাদের সবার উপরে, কিন্তু জিভ হতে পারে একটা বুলেট। তুমি যদি নিজের মুখ সেলাই করে ফেল, তবে নৈরাজ্যের কাছে হেরে যাবে। ওই যৌবন যদি একটা বুলেট হতে চায়, তবে তুমিও একটা বুলেট হতে পারো। যৌবনের পাশে দাঁড়াও, মনে রেখো যে নাগরিক জিভের ব্যবহার জানে সে ওই যৌবনের মতোই স্বৈরাচারের চোখে বিষাক্ত শরীর। তোমার এই শরীর হতে পারে একটা ন্যাশনাল নিউজ বা একটা বুলেট, বা, যে অন্যের যন্ত্রণা নিজের মধ্যে নিয়ে আগুন জ্বালায় সেও হয়ে ওঠে শাসক বিরোধী একটা বুলেট। 
    দেখো, যৌবন এবার হাতে তুলে নিয়েছে রঙ-তুলি, দেওয়ালে লিখছে—
    সমস্ত স্বৈরাচারের
                বিচি
            কেটে দাও

    দৃশ্য ২:

    চরিত্র – যে ছেলেটা নিয়োগ দুর্নীতিতে আত্মহত্যা করেছিল
     
    বোনের শুকনো মুখটা রোদ-পোড়া কালো পিচে ভেসে উঠলেই শহরটাকে আরও রুগ্ন মনে হতো ছেলেটার। সে ভাবত কেউ নেই তাদের জন্য, কিছু নেই তার। তার মনে হতো সব ধ্বংস হয়ে পচে-গলে যাক। সেদিন, দু'মুঠো ভাতের জন্য তার মতো অনেক যুবক-যুবতীর সঙ্গে শহরের উপকণ্ঠে লড়াই করতে-করতে যখন দেখল ঘুণপোকা গণতন্ত্রের শরীরের ভিতরটা খেয়ে ফেলে শুধু চামড়াটুকু রেখেছে, ছেলেটা সহ্য করতে পারল না, দৌড়ে পালাল শহরের ম্যাপের প্রতিটি রাস্তা ও গলিপথ ধরে বাড়িতে। দেখল, মা অপেক্ষা করছিল একরাশ আশা নিয়ে ঘোলাটে চোখে। ছোট বোন তাকে এক থালা পান্তা এনে দিয়েছিল শরীর ঠান্ডা রেখে ঘুমনোর জন্য; কিন্তু সে অনুভব করেছিল তার আর কিছুরই প্রয়োজন নেই, শরীরের কাঠামো বর্তমানের বোঝা আর বইতে পারছে না এবং থালাটা সরিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছিল। ছেলেটা ভেবেছিল, শুয়ে থাকব আর কখনই উঠব না, এবং অহেতুক সময় নষ্ট হবে আমার এই জাগরণে, কারণ বাইরে অশরীরীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে যারা পরের কয়েকশো শতাব্দীতেও ঘুমবে না: অন্ধকার, অজ্ঞতা, জোচ্চুরি, শোষণ, বেকারত্ব, অশ্লীলতা, রুচিহীনতা, মূর্খতা, পাগলামি... তবু সে জেগে উঠেছিল যেন অন্য এক সময়-পরিসরে, শুনছিল কারা যেন বলছে তার প্রাণ নেই, ওদের মুখগুলো মুখোশে ঢাকা, আলাদা করে চেনা যায় না কোন চরিত্রে কে অভিনয় করছে। কিন্তু ছেলেটা বুঝতে পারছিল আগের তুলনায় তার জীবনীশক্তি যেন অনেক বেশি। মুখোশধারীদের কাছে জানতে চেয়েছিল তার কী হয়েছে। যদিও সে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছিল কবেই যেদিন একদল ভ্যাম্পায়ার আমাদের সবার গলা টিপেছিল, ফুটো করে দিয়েছিল কণ্ঠনালি। ছেলেটা ও-ভাবেই শুয়ে থাকল ঘণ্টার পর ঘণ্টা, তার শরীর ঢাকা থাকল সাদা চাদরে, এরপর মুখোশধারী কারা যেন তার হাত-পা ধরাধরি করে শুইয়ে দিল ঠান্ডা ধাতব পাটায়। এতই ঠান্ডা পাটা যে, তার শিঁড়দাড়া ও কশেরুকা বরফের মতো জমে শক্ত আর অসাড় হয়ে গিয়েছিল। সে বুঝতে পারল তার হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ধুকপুক বন্ধ; আবারও একবার, তখন, লঘু-অস্তিত্বের অসহনীয় আবেগ জড়ো করে ছেলেটি উঠে পড়ল এবং একে-একে দেওয়াল, বন্ধ দরজা ভেদ করে ওয়ার্ডের পর ওয়ার্ড উদ্‌‌ভ্রান্তের মতো ছুটতে থাকল, সে নিজেও জানত না কোথায় তার গন্তব্য। তবে একটা শরীরের আশ্রয় তার প্রয়োজন, অজানা গন্তব্যের দিকে হাত বাড়াল, একজন  মানুষ, পরিত্যক্ত আসবাবের মতো যিনি বাথরুমের কোণায় পড়েছিলেন, যিনি আর কয়েক দিন বা কয়েক ঘণ্টা পর বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে মর্গে যাবেন যেখান থেকে ছেলেটা পালিয়েছিল। সে লোকটার চেতনা ফেরাতে বুকের দিকে তার হাত পৌঁছতে গিয়ে আতঙ্কিত হয়ে দেখেছিল— হাতটা লোকটার বুকে প্রবেশ করেছে, সিস্টোল-ডায়াস্টোলের মাঝে এক মুহূর্তের জন্য আটকা পড়েছে। ছেলেটা আতঙ্কে হাত সরিয়ে নিয়েছিল। সে লোকটার ধমনীতে উষ্ণ রক্তের স্পন্দন অনুভব করেছিল আর ওই কয়েক মুহূর্তে তার সংবেদন হাজার হাজার স্বাধীন ইচ্ছার চিত্র জমা করছিল। অবিরাম ঝলকানিতে স্মৃতি এসে ভিড় করছিল: তার জন্ম, শৈশব, পিশাচের হাতে বাবার খুন, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের মধ্যে মায়ের গর্ভধারণ, আস্তাকুঁড়ে বোনের জন্ম। সে যাতে ঘুমিয়ে না-পড়ে, তাই বার বার মাথা ঝাঁকাচ্ছিল, এ-কোন বাস্তবতা বুঝতে পারছিল না। শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত ফেলে সে মনে করার চেষ্টা করছিল— কীভাবে আমি মর্গে এলাম, কী ঘটেছিল? কিন্তু কিছুই মনে পড়ছিল না। সে বুঝেছিল তার অস্তিত্ব তখন শরীরের বাইরে, এক্টোপিক, আর তার পচনশীল মাংসল শরীরটা নগ্ন, অন্ধকারে ও নৈঃশব্দে পড়ে আছে, কাটাছেঁড়া চলছে। ওই শরীরে অনুভূতি নেই, ইতিহাস নেই, স্মৃতি নেই, তাপাঙ্ক ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে হিমাঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেছে। রিপোর্টে লেখা থাকবে না মৃত্যুর কারণ শাসকের দুর্নীতি। কেউ এই খুনের বিচার চাইবে না। সে-সময় ডেলিভারি থিয়েটারে যন্ত্রণায় দুমড়ে-মুষড়ে যাওয়া এক মহিলা চিৎকার করছিলেন। সুখের যন্ত্রণা। ছেলেটা সেই মহিলার ভিতরের সুখ অনুভব করেছিল, যেন সে আগামী ভোরে তাঁর কোলের পাশে থাকার অপেক্ষায়। নতুন অস্তিত্ব নিয়ে সে আবার ফিরে যেতে চাইছিল ঘরে, যেখানে হয়তো এখনও অপেক্ষা করছে যুগ-যুগ ধরে তাকে জন্ম দেওয়া মা, আর শকুনদের হাতে প্রতিদিন অপমানিত হওয়া বোন। ছেলেটি চাইছিল নতুন জন্মে সে কিছুতেই হার মানবে না, গর্জে উঠবে দৈত্যের বিরুদ্ধে আর দৈত্যের বাড়ির দেওয়ালে লিখবে—

    সমস্ত দুর্নীতির
                বিচি
            কেটে দাও
     
    দৃশ্য ৩:
    চরিত্র – রক্তিম জিভের জান্তব অন্ধকার আরও গাঢ় হলে যে মেয়েটি বাড়ি ফিরতে পারেনি, ফিরবেও না আর, সে

    মেয়েটির খালি ঘরে আগুন যা রেখে গেছে তা হল ধোঁয়ার অলৌকিক চাদর। অলীক ইউটোপিয়ার স্বপ্ন নিয়ে তার শহর এখন বিক্ষিপ্ত মেঘের গুচ্ছ। তার শহর, যা আমাদেরও, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ যা-কিছু নিষিদ্ধ সে'সব শরীরে ধারণ করে হয়ে উঠেছে এক-একটা পিশাচ। আমরা ওদের চিনতে চেষ্টা করছি এই এখন, কতটা দেরি করে ফেলেছি! এই শহর কি সত্যিই চেয়েছিল মেয়েটি রাতে বেরোক? ওই দৈত্যটা চেয়েছিল রাত দখল করুক পিশাচেরা। আমরা সহ্য করেছি, আর তার ফলাফল: মেয়েটা ঘরে ফেরেনি।

    আজ ১৪ আগস্ট রাতে, মেয়েটি এখন ন্যাশনাল মিউজিয়ামের ছাদে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে, কয়েক মিনিট কাটবে, মিউজিয়ামের গাত্র বেয়ে চুঁইয়ে পড়বে স্বাধীনতার স্যাঁতসেঁতে তরল। মেয়েটি সে-ইতিহাসের কেউ নয়, মেয়েটি নিজেই হয়ে উঠছে ইতিহাস। সে দেখতে পাচ্ছে অজস্র মশাল হাতে এগিয়ে আসছে বীরাঙ্গনার দল, ওরা কেটে নিতে চাইছে দৈত্যের মাথা। যে মেয়েটার শৈশবের সেই পাপ-স্পর্শের দুঃসহ স্মৃতিতে আজও রাতে ঘুম ভেঙে যায়, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটা তার বাবা বা দাদার নোংরা হাত মুখ বুজে গোপন করে যন্ত্রণায় মরছিল, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটা প্রতিনিয়ত পাড়ার লোকের চোখে ডাইনি হয়ে উঠেছিল, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটা উঠতে-বসতে শুনত সে অলক্ষ্মী, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটার ওড়না টেনে ধরেছিল মোটরবাইকের কীট, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটা পোশাকে লাল দাগের জন্য টিউশন ক্লাস থেকে অপমানে লজ্জায় বাড়ি ফিরেছিল, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটার শৈশব-কৈশোরের খেলার মাঠ দখল করেছে একদল বাঁড়া, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটার ইচ্ছে ছিল ক্লাব-এ গিয়ে ক্যারাম খেলার, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটা চা-এর দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে শুনেছে আদৌ সে মেয়ে কি না, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটা পিরিয়ডসে প্রিয় ফুল ছুঁতে পারেনি বা ঠাকুরঘরে ঢুকতে পারেনি, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটা সন্তান না-থাকায় প্রতিনিয়ত সমাজের কটূক্তি শুনেছে, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটা আঠারো হতে না-হতেই বই বন্ধ করে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয়েছিল, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটাকে দু'মুঠো অন্নের জন্য মুখ বুজে সহ্য করতে হয় পুরুষ সহকর্মী বা বস্‌-এর অন্যায় দাবি, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটা বাসে-ট্রেনে সহযাত্রীর ঘৃণ্য আচরণে বাড়িতে ফিরে বমি করেছে, সে আজ পথে নেমেছে। যে মেয়েটা অন্য একটি মেয়েকে ভালোবেসে প্রতিদিন আড়ালে চোখের জল ফেলে, সে আজ পথে নেমেছে। আর মিউজিয়ামের ছাদে মায়ের বুকে ফিরতে না-পারা মেয়েটির হাত শক্ত করে ধরেছে আসিফা, নির্ভয়া, তাপসী... আর ওই মশাল হাতে মেয়েরা এসেছে অনেক পথ পেরিয়ে, ওরা চাইছে ঘৃণ্য ধর্ষক পিশাচদের হাত থেকে পরিত্রাণ। ওরা শুধু একা নয়, ওদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে হাজারো পবিত্র হৃদয়, সবাই আগুন ধরিয়েছে আর দৈত্য ভয় পেয়ে নতুন করে সাজাতে বসেছে দাবার ঘুঁটি। তবু এই আগুন যা রেখে যাবে, বৃষ্টিতে যেন তা ধুয়ে না যায়। সমস্ত পিশাচদের বিরুদ্ধে মেয়েরা দেওয়ালে লিখছে—

    সমস্ত ধর্ষকের
                বিচি
            কেটে দাও

    দৃশ্য ৪:

    চরিত্র – যে শিশুটির বাড়ি, পাড়া আগুনে পুড়িয়ে ছাই করেছিল দৈত্য-পোষ্য কিছু সমাজবিরোধী

    শিশুটির অতীত ট্রমা তাকে ঘুমোতে দেয় না। প্রতিরাতে জেগে ওঠে, আর চিৎকারে ফেটে পড়ে পাগলের মতো। সে চিঠি লেখে ঈশ্বরকে, কিন্তু কোন ঠিকানায় পাঠাবে জানে না। কেউ তাকে ঠিকানা বলে দিতে পারেনি। চিঠির উপর চিঠি জমা হয়ে আকাশ ছুঁয়ে ফেললে হয়তো ঈশ্বর তার চিঠি পাবে, এই আশা নিয়ে সে আবারও একটা চিঠি লিখতে বসেছে–    
        "আমি ঘুমতে পারি না। প্রত্যেক দিন রাতে একটা কুৎসিত ব্যাঙ এসে আমার দরজায় টোকা দেয়। ব্যাঙটা খুব রাগী, গোল গোল লাল চোখ, লম্বা জিভ বের করে আমার গাল চাটে। ও কথা বলে কম, গলার স্বর ভাঙা-ভাঙা, চামড়া খসখসে রুক্ষ। আজ আমি দরজা খুলিনি। ব্যাঙটা রাগে দরজাটা ভেঙে ফেলেছে মাথা দিয়ে মেরে। ওর কারণেই আজ আমাকে সবাই অনাথ বলে। ঠাকুর তুমি সাবধানে থেকো, তুমি যদি ভালো লোক হও, ভালো কাজ করো, তবে ও তোমাকেও জিভ দিয়ে পোকার মতো মুখে পুড়ে নেবে।"
        তুমি এই শিশুটিকে চিনে রাখো। ওর যত্ন নিয়ো। তুমি না-পারলেও, ওর মধ্যে যে ক্ষোভ জমা হচ্ছে তা একদিন হয়ে উঠবে বিদ্রোহ। সেদিন এই শিশুটি যুবক হয়ে ওই দৈত্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে, রাস্তা-ঘাট স্টেশনে-স্টেশনে দেওয়ালে লিখে রাখবে–

    সমস্ত রাজনৈতিক দলের গুন্ডাদের
                বিচি
            কেটে দাও

    দৃশ্য ৫:
    চরিত্র– একজন বৃদ্ধা আর তুমি

    টিভি বন্ধ করো। যে-সব মিডিয়া আড়ালে দৈত্যের পদলেহন করে আর সামনে টিআরপি'র জন্য কতগুলো জোকারকে বসিয়ে খবরের নামে বিনোদন যোগায় তাদের প্রত্যাখ্যান করো। খবর এখন আমাদের শহরের গলিতে-গলিতে। নেমে এসো রাস্তায়, বার বার। দেখো: দুটি সাদা প্রজাপতি নীরবতার মধ্য দিয়ে ভাসছে কেমন! তুমি এখন রাস্তায়, বাগবাজার কি শ্যামবাজারে। ভাবছ আর জি কর-এর দিকে যাবে একবার। পুলিশে-পুলিশে ছয়লাপ। পথ অবরুদ্ধ। তুমি দেখছ পুলিশের লাঠি ভাঙা, ভাঙা বোধহয় মেরুদণ্ডও। তুমি থামলে, এবং একজন বৃদ্ধা তোমার হাত চেপে ধরল। তিনি বললেন, "আমার ছেলেমেয়েরা আমাকে এখন বাইরে আসতে দিচ্ছে, ঘরে থেকে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল এত দিন। কিন্তু বাইরে এসেও আমি শ্বাস নিতে পারছি না। দম আটকে আসছে।" তুমি জানতে পারলে বৃদ্ধার সন্তানেরা বাইরে থাকে। তিনি কোভিড-এ প্রায় মৃত্যু-মুখ থেকে ফিরেছেন। তখন সবাই তাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে জমা করেছিল হাসপাতালে, না-হয় তিনি মরতেন একলা ঘরেই, সেখানেও তো তিনি বিচ্ছিন্নই থাকতেন। হাসপাতালে তিনি নিজের পরিচিত কারওর মুখ দেখতে পাননি। তারপর তিনি সুস্থ হয়েছিলেন, ফিরে এসেছিলেন। পুলিশেরও কি উচিত নয় দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসবার? তুমি কি বৃদ্ধার এই নতুন জীবনে ফিরে আসার গল্পটা পুলিশকে বলবে একবার? তিনি অনেক কথা বলতে চাইছেন, কিন্তু তুমি দেখতে পাচ্ছ আরও মানুষ কথা বলতে চাইছে তোমার সঙ্গে। তুমি কথা বলো সবার সঙ্গে, আমরা যত নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখব ততই দৈত্য ওই ফাঁকা জায়গাগুলোর দখল নেবে।
        একটা সময়ে যখন সবকিছু নিভে যায়, মনে হয় আমরা শান্তিতে আছি। পাখির মতো মুক্ত, আর উড়ছি। মুক্ত হওয়া মানে নির্ভীক হওয়া। এই শান্তিতে থাকা মানে বিভীষিকার মুখোমুখি হওয়া, ভয়কে চিনতে পারা এবং সব বুঝেও মুখ বুজে থাকা। তারপর ভেতরে ভেতরে তৈরি হয় উত্তেজনা, সেটাকে বাড়িয়ে দিয়ে মিডিয়া তোমাকে বিনোদন যোগায়। আমরা যে ভয় পেতে, উত্তেজনায় কাঁপতে ভালোবাসি। মিডিয়া তোমাকে ওই বৃদ্ধার কথা বলবে না, বলবে না শুধু কোভিড নয়, দৈত্যটাও আমাদের দমবন্ধ করে দিচ্ছে। তুমি যদি মিডিয়ার অভিনয়, মিথ্যাচার বুঝতে পেরে রেগে যাও, তবে দেওয়ালে লিখতে পারো–

    সমস্ত জোকার মিডিয়ার
                বিচি
            কেটে দাও

    দৃশ্যগুলো বাড়তে থাকবে। যে দৃশ্যগুলো লিখলাম না বা লিখতে পারলাম না (অস্বস্তি, ক্ষয়, যন্ত্রণা তো আমাদের সবারই কমবেশি হয় লিখতে গিয়ে), তুমি লিখে নিয়ো, মনের মধ্যে ধারণ কোরো।

    আমরা এখন সংখ্যায় হাজারো কি লক্ষাধিক, সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়বে যদি আমরা হাতে-হাত ধরে রাখতে পারি। তোমার হাতেই সব আছে, এখনও হয়তো সব রাস্তার দখল দৈত্য নিতে পারেনি। তুমি নিজের দাঁত দেখো, জিভ দেখো, ভোকাল কর্ড প্রসারিত করো। নিজেকে বলো: এই মুখের মধ্যে যে-ভাষা জমিয়ে রেখেছি, সেগুলো এবার ছুঁড়ে দেব, কলরব তুলব। তুমি নিজের আঙুল দেখো, নিজের নখ দেখো। নিজেকে বলো: এবার আমি ক্ষতের ওপরের শুকনো চামড়া খুঁটে তুলে সত্যটা সামনে নিয়ে আসব। তোমার শরীরে, তোমার মনে, তোমার চোখে লেগে থাকা ইনোসেন্ট থাকার চিহ্নগুলো মুছে ফেলার সময় এটাই। খাতার পাতায় লেখো 'দেশ' আর অনুভব করো শত শত যন্ত্রণার স্রোত। আমাদের এই ঐক্য উষ্ণতা দিয়ে পূর্ণ করবে দেশের শীতলতা। আমাদের দেশ, সে হয়তো বুঝতেই পারছে না কোন কোন ক্ষত থেকে তৈরি হচ্ছে ক্যানসার বা ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে! আমাদের ধারণা ছিল দেশ প্রগতির ডানায় উড়ছে, কিন্তু সেই উড়ান কি সত্যিই আমরা কেউ দেখেছি? সময় এসেছে দেশকে জড়িয়ে ধরে তাকে সুস্থ করবার, তাকে আগুনের পাশে নিয়ে গিয়ে উষ্ণ করে তুলবার। এর জন্য দৈত্যকে আমাদের থামাতেই হবে। যেমন আগাছা উপড়ে ফেললে আবার জন্মায়, যেমন ক্ষতস্থানে তৈরি হয় নতুন কোশ, ঠিক তেমন তোমাকে নির্মূল করার ক্ষমতা ওই দৈত্যের নেই। তোমার পদচিহ্ন, তোমার স্পষ্ট উচ্চারণ থেকে ক্রমশ সৃষ্টি হবে প্রতিবাদীদের জনঅরণ্য। তাই দৈত্যের রাইফেলের সামনে নিজেকে শান্ত রেখো, নিরস্ত্র হলেও ভয় পেয়ো না, তুমি একা নও, জেনো রাইফেলের গুলির সংখ্যা সীমিত হয়। দৈত্যের অন্ধকার মুহূর্ত আমাদের আলো হয়ে উঠুক। যত দিন না দৈত্যের জন্য সেই অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে আমরা ক্লান্ত হয়ে থেমে যাব না, এই প্রতিজ্ঞা থাকুক।

    আখ্যান পরবর্তী: এই লেখা যদি একটা গল্প হয়, তবে এখানেই শেষ। আর যদি লেখাটা আমাদের সবার বর্তমানের দুঃসহ যন্ত্রণার মুহূর্তযাপনের কথা হয়, তবে পরবর্তী অংশ সবাইকে নিজের মতো করে পরে লিখে নিতে হবে...

    [ স্বীকার: এই লেখার সাহস সঞ্চার করেছে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়-এর 'এক যে ছিল দেওয়াল' (১৯৯৭)। ]
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাপাঙ্গুল | ২৬ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৫৯536870
  • লেখাটা ভাল , কিন্তু উদ্ধৃতি আর সন্দীপনী খুব ক্লিশে, ওগুলো ব্যবহার না করা উচিত।
  • শুভ রায়চৌধুরী | ২৬ আগস্ট ২০২৪ ১৬:১৬536871
  • @পাপাঙ্গুল, ধন্যবাদ। হ্যাঁ, উদ্ধৃতিটা না থাকলেও চলত। তবে স্বীকার অংশটি দিতে বাধ্য হয়েছি কিছুটা, কারণ স্লোগানের আইডিয়াটা ওই লেখা থেকে এসেছে।
  • পাপাঙ্গুল | ২৬ আগস্ট ২০২৪ ১৮:১১536875
  • বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে উৎসর্গ করা ওই গল্পের শেষে দেওয়ালটা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এই আখ্যানের পরবর্তী অংশ অবশ্য ভবিষ্যৎ লিখবে। yes
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন