এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • লখিন্দরের লোহার বাসরে সাপ কাকে কামড়ায়? 

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ১২ আগস্ট ২০২৪ | ৪৮২ বার পঠিত
  • কলকাতার আরজিকর হাসপাতালের পিজিটি মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের পর লিঙ্গ বৈষম্যবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চিকিৎসক সহ নাগরিক সমাজের ক্ষোভ সামনে এসেছে। আর যাই হোক মহিলাদের ওপর অত্যাচার বাংলা মানে না। কিন্তু প্রশ্ন হল লখিন্দরের এই যে লোহার বাসর, স্বাস্থ্য বিভাাগের পেল্লায় পরিকাঠামো, তাতে ছেঁদা দিয়ে কালসর্প ঢুকে বারবারই বেহুলাকেই কামড়াচ্ছে কেন? বছর দশেক আগে যখন স্বাস্থ্য ভবনে কর্মরত ছিলাম, সরকারী স্টাফ, জিএনএম, এএনএম মিলিয়ে নার্সের সংখ্যা ছিল সাঁইতিরিশ হাজারের মত আর ডাক্তার দশ হাজারের আসপাশে। এছাড়া জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের - এনআরএইচএমের বেশ কয়েক হাজার অস্থায়ী এএনএম নার্স। এই দশ বছরের যা গতিপ্রকৃতি তাতে ডাক্তারের সংখ্যা কমেছে বই বাড়েনি, নার্স কিছু বাড়লেও বাড়তে পারে আর বেড়েছে নানা স্তরের অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা। পুরো সরকারী হেলথ কেয়ার সেক্টরটায় কর্মীর অভাবে নাভিশ্বাস ওঠার যোগাড়। তার ওপর নানা ভাবে শাসক দলের চাপ। অসহনীয় অবস্থা। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয় কিন্তু বড় বড় বাড়িতে না আছে স্বাস্থ্য কর্মী, না যন্তরপাতি সুপার স্পেশালিস্ট দূরস্থান। এসব তথ্য বললে নতুন কিছু বলা হয় না কারণ সাধারণ রোগীর বা তাদের পরিবারের অভিজ্ঞতা থেকে এসব বোঝা যায়। তবে কোন তথ্যটা সামনে আনার জন্য এই লেখা? এর উত্তরে বেশি ভ্যানতাড়া না করে বলব যা আড়ালে থাকছে সেটা হল একটা তথ্য যে স্বাস্থ্য বিভাগেই বা সামগ্রিক ভাবে হেলথ কেয়ার সেক্টরে লিঙ্গ বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। সারা দেশেই এই ছবি। ডাক্তার আর নার্সের অনুপাতই বলছে সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থার পুরোটাই নার্সদের দিকে হেলে রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে প্রায় একাসনে বসা, ক্ষমতা কাঠামো একেবার তলার দিকের ইনটার্ন বা পিজিটি ডাক্তার মিলে সরকারী স্বাস্থ্য পরিষেবার বেঁকা পিঠটাকে কোনরকমে পাবলিকের মারটার খেয়েও ধরে রেখেছেন। কিন্তু নার্সিং কলেজগুলো বাদ দিলে প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ ডাক্তারবাবুদের যাদের মধ্যে বিবিদের সংখ্যা নেহাতই কম। ওই কলেজগুলোর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক মহিলা নার্সদের হাতে থাকলেও, কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য ভবনের পুরুষ ডাক্তারবাবুদের হাতে। আর একটু খুলে বলি মুখের রক্ত তুলে দিনরাত এক করে কাজ করে চলা নার্সদের কার্যকরী ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ একছত্র নিয়ন্ত্রণ পুরুষ ডাক্তারবাবুদের। আরো খুলে বললে বলা যায় নার্সদের আলাদা একটা উপ বিভাগ থাকলেও কোন আলাদা বিভাগ নেই। যুগ্ম অধিকর্তা অবধি নার্সদের দৌড় আর তাঁকে কাজ করতে হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষ স্বাস্থ্য অধিকর্তার অধীনে যিনি অবশ্যই একজন ডাক্তার। বৃটিশ আমল থেকে পশ্চিমবঙ্গে এটা চলে আসছে, প্রসঙ্গত কেন্দ্রীয় সরকারের আছে আলাদা নার্সিং বিভাগ। আলাদা নার্সিং বিভাগ-অধিকরণের দাবী অনাদায়ী এখানে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে, বাম আমলে নার্সিং সংগঠনগুলো আলাদা প্রশাসনিক কাঠামো দাবী করতে করতে এলে গেছে আর এই আমলে হেলে গেছে। এর ফল কী হয় জানেন? গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ স্তর অবধি নার্সদের পুরোপুরি পুরুষ অধিকৃত ডাক্তারি ব্যবস্থার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হয়। টিচিং কলেজগুলোর মেডিক্যাল সুপারিনটেন্ন্ডেট কাম ভাইস প্রিন্সিপ্যাল-এমএসভিপিরা সর্বত্র হাতে মাথা কাটার কাণ্ডারী হয়ে বসে থাকেন, হয়ে থাকেন নিশ্চিত ভাবেই শাসক দলের প্রভাবশালী নিয়ন্ত্রক। তারা একসময় সব সিপিএম হয়েছিলেন এখন সব্বাই তৃণমূলের।

    সঞ্জয় রায় নামক ধর্ষক খুনী বলে অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ার কাল সাপ হয়ে যে বাসর ঘরে ঢুকল সেই ঘরটায় ক্ষমতাবান লখিন্দরেরা সাপে কাটা পড়ে না। পড়েন ক্ষমতাতন্ত্রের শিকার এক মহিলা পিজিটি যিনি ইনটার্ন আর বিশাল নার্স বাহিনীর সঙ্গে কাজের চাপে দিন কয়েক ধরে দিনেরাতে সামলাচ্ছিলেন রোগীর চাপ। তাঁর নাম জানি না। তিনিই আজকের বেহুলা। যাঁর ভেলা ভাসাচ্ছি আমরা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অসিতবরণ বিশ্বাস | 2401:4900:745c:f5fc:1be5:2787:7886:***:*** | ১২ আগস্ট ২০২৪ ২২:৫৮536273
  • একটা প্রশ্ন রাখছি:
    অনুব্রত-র মাথায় কার হাত?
    রাজীবকুমারের মাথায় কার হাত?
    শাজাহানের মাথায় কার হাত?
    পার্থ,বালুর মাথায় কার হাত ?
    সবাই জানে।
    অপরাধী এক হোক বা বহু, এদের মাথায় কার হাত? নইলে পুলিশ তথ্য প্রমাণ লোপাটে এত তৎপর কেন? পুলিশ মমতা সরকারের হয়ে বহু তথ্য প্রমাণ লোপাট করেছে, বহু প্রমাণ।
    এই পুলিশ ও এই মুখ্যমন্ত্রীকে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করি না। 
  • upal mukhopadhyay | ১২ আগস্ট ২০২৪ ২৩:০২536274
  • আপনি আসল বিষয়ে আসুন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন