এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হিরোশিমা সন্তোষীমা 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ৪৬৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • জাপানের সঙ্গে তখন আমেরিকার যুদ্ধ। জাপান আমেরিকাকে ঘোল খাইয়েই চলেছে। থামছেই না। কিছুতেই কিছু করতে না পেরে, আমেরিকায় এক বিলিতি সামরিক বিশেষজ্ঞর ডাক পড়ল। তিনি এসেই একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন, যেটা আগে কেউ বুঝতেই  পারেনি। পরিষ্কার বলে দিলেন, জাপানের সামরিক বাহিনীই এর জন্য দায়ী। চারদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গেল। হাততালি থামার পর  তিনি সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্সের পেয়াদা ডেকে বললেন, এখনই খুঁজে বার কর, জাপানি বাহিনী কোথায়। পেয়াদা বলল ইয়েস জাঁহাপনা। 

    তারপর ঝড়ের গতিতে শুরু হল অনুসন্ধান। বছরখানেক ধরে প্রচুর পরিশ্রম এবং বিপদের ঝুঁকি নিয়ে পেয়াদারা জাপানিদের গরুখোঁজা করে রিপোর্ট বানাল। তাতে লেখা আছে, একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আমরা বার করেছি। জাপানি সামরিক বাহিনী আসলে জাপানে আছে। বিলিতি বিশেষজ্ঞ শুনে খুব খুশি হলেন। পিঠ চাপড়ে বললেন, কী করেছ ভাই। পেয়াদা বলল, এখানেই শেষ নয় হুজুর। আরও একটা জিনিস আমরা বার করেছি, যে ওরা লুকিয়ে আছে। কোথায় আছে সেটা জানে একমাত্র জাপানিরা। 
     
    বিলিতি বিশেষজ্ঞ বললেন, ঠিক আছে। জাপানি সামরিক বাহিনীকে বল তারা কোথায় আছে, যেন তিন মাসের মধ্যে জানায়। এও জানিয়ে দাও, যে তুমি তদন্ত করছ। 

    পেয়াদা যুদ্ধের মধ্যেই জাপানে গিয়ে হাজির হল। যুদ্ধ হলে কী হবে, জাপানিরা খুব অতিথিবৎসল। শত্রুরাও ঘরে এলে জামাই আদর করে। পেয়াদা তো সারাদিন সুশি খেয়েদেয়ে মোটা হয়ে হয়ে গেল। ওদিকে দিন গড়ায়, মাস গড়ায়, বছর গড়ায়। বিলিতি বিশেষজ্ঞ এবার তলব করে এনে বললেন, তদন্ত কতদূর হে। পেয়াদা একটু আমতা-আমতা করে বলল, প্রায় সমাপ্ত হুজুর। 
    - কী জানা গেল? 
    পেয়াদা বলল, জাপানিরা তেমন সহযোগিতা করছেনা হুজুর। ওরা শুধু বলছে, জাপানি বাহিনী জাপানেই আছে। 
    বিশেষজ্ঞ বললেন, সে তো আগেই বলেছ। জাপানের কোথায়? 
    পেয়াদা বলল, হুজুর,  অনেক তদন্তের পর আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, সুশির মধ্যে মাছটা কোথায় আছে, শরবতের মধ্যে চিনিটা কোথায় আছে, এ তো জানা সম্ভব না। গোটা শরবত জুড়েই আছে।
    বিশেষজ্ঞ গোঁফ মুচড়ে বললেন, এ তো দারুণ পর্যবেক্ষণ। ভাবা যায়না। 
    পেয়াদা বলল, তাহলে কর্তব্য কী হুজুর?  
    বিশেষজ্ঞ বললেন, কর্তব্য আর কী। গোটা শরবতটাই বোম মেরে উড়িয়ে দাও।
    যে স্টেনোগ্রাফার সিদ্ধান্ত টুকছিল, সে শুনে আঁতকে উঠে বলল, কিন্তু হুজুর, শরবতের বেশিটাই তো জল। ওতে তো অসামরিক লোকই বেশি মরবে।
    বিশেষজ্ঞ বললেন, গুড পয়েন্ট, কিন্তু তাতেও কোনো সমস্যা নেই। পেয়াদা, আগে তো বোম মারো। তারপর একটা লিস্টি বানাও কোন কোন অসামরিক লোক মরল। লিস্টি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, তাদের কীকরে বাঁচিয়ে তোলা যায়।

    যেমন কথা তেমনই কাজ। পেয়াদারা গিয়ে জাপানের মাথায় বোম ফেলে এল, যাকে এখন আমরা হিরোশিমা-নাগাসাকি বলে থাকি। গুচ্ছের লোক মরে গেল। মরে যাওয়া লোকের লিস্টিও বানানো হল। বিচারে কোনো ভুল ছিলনা, কিন্তু বিজ্ঞানের যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের আর বাঁচানো গেলনা। তাতে কোনো সমস্যা হলনা, কারণ পৃথিবীতে এর পরই অ্যাটম বোমের রমরমা কারবার চালু হয়ে গেল। খুবই লাভজনক ব্যবসা। এই শিল্পের উন্নতিতে অবদানের জন্য পেয়াদা আর বিশেষজ্ঞকে নিয়ে হইহই পড়ে গেল দুনিয়া জুড়ে। তদন্তে অসামান্য সাফল্যের জন্য পেয়াদা পেল ব্যোমকেশ বক্সী বিশেষ পুরস্কার। বিলিতি বিশেষজ্ঞ অ্যাটম বোমের এক ফ্যাক্টরির ডিরেক্টর হলেন -  তারা অনেক দিন আগে থেকেই তাঁকে চাকরির অফার দিয়ে রেখেছিল। এছাড়াও হিরোশিমার সাফল্যে পেলেন সন্তোষীমা পুরস্কার। পুরস্কার বিতরণের দিন কাব্য করে বললেন, সীমার মধ্যে হিরো তুমি বাজাও আপন সুর। তাতে খুব হাততালি পড়ল। সঞ্চালক প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা, আপনি তো মহাপুরুষ, কিন্তু সাধারণ মানুষের উপকারার্থে একটা কথা বলবেন কি, যে, এই অভূতপূর্ব আইডিয়াটা আপনার মাথায় এল কীকরে? 

    মহাপুরুষ একটু স্মিত হেসে বললেন, কেন? বিশেষজ্ঞ হবার আগে আমি কলকাতা হাইকোর্টের আর্দালি ছিলাম তো।

    পুঃ গপ্পোটা সত্যি নয়, প্রতীকি, বলাবাহুল্য। এইসব উদ্ভট গপ্পো আজকাল আর বানিয়েও লিখতে হচ্ছেনা, যাদুবাস্তবতা চারদিকে গিজগিজ করছে। তুলে নিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করলেই হল। এবং সেটা  হাস্যরসের থালায় না, রসটা আসলে বীভৎস। একটা পাঁঠাকে যখন বলি দেওয়া হয়, বাকি পাঁঠারা নাকি তখনও নিজেদের মধ্যে কাঁঠালপাতা নিয়ে মারামারি করে। ব্যাপারটা হাস্যকর, কিন্তু হাস্যরসাত্মক কি?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Arindam Basu | ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:১৮530910
  • লেখাটি তির্যক বা শ্লেষ ধরে নিয়েও একটা কথা বলা উচিৎ যে হিরোশিমায় পরমাণু বোমা বিস্ফরণ মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক বিপর্যয় | তাকে ব্যঙ্গবিদ্রূপের প্রেক্ষিত করে তোলা অনুচিত কাজ হয়েছে। সৈকতের কাছে কি অন্য উদাহরণ ছিল না?
  • &/ | 151.14.***.*** | ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩১530911
  • ড্যাশদের ডিফেন্ড করতে আলফাল বকলে কোনো লাভ হয় কি ?
  • &/ | 151.14.***.*** | ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩২530912
  • যুক্তিতে তীক্ষ্ণ বক্তব্যে গোছানো সম্পাদকের কলম থেকে এত বাজে লেখা এক্সপেক্ট করি না
  • Argha Bagchi | ০৩ মে ২০২৪ ১০:১৬531341
  • অন্ধরা ও ভক্তরা চিরকালই ব্যঙ্গকে ভয় পায় | কেননা একমাত্র বিদ্রূপই পারে সরকারী ইতরামোর কাছা খুলে দিতে | 
  • Chaitali Das | ১৭ মে ২০২৪ ১০:৪১531847
  • সত্যিই তাই। Theatre of the absurd. আজকাল আর অনেক কিছুই মিলিয়ে উঠতে পারি না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন