- তারপর?
- তারপর হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা আবার বাঁশি ওঠালেন। আবার সারা রাস্তা ভরে উঠল তার সুরের মূর্ছনায়। বাঁশি বাজাতে বাজাতে তিনি পাহাড়ের দিকে এগিয়ে গেলেন। তার পেছন পেছন এবার চললে ইঁদুর নয়, গ্রামের সকল ছেলেমেয়েরা।
অনি ঢোক গিলল। তারপর?
- তারপর? তারপর কি হলো, কেউ জানে না। দুটো শিশু ফিরে এসেছিল। একজন অন্ধ, একজন বোবা। ফলে বাকিদের পরিণতি যে ঠিক কি হয়েছিল, জানা যায়নি কখনও।
- তোমার কি মনে হয়?
নন্দিনী হাসে। কে জানে, হয়তো বাঁশিওয়ালা তাদের নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন কোনও নতুন স্বর্গদেশে, যেখানে জরা-ব্যাধি নেই, ক্ষোভ-ঘৃণা নেই, মিথ্যে নেই, ব্যাভিচার নেই।
- আচ্ছা মা, বাপিও কি এরকমই কোনও দেশে গেছে?
নন্দিনী ছেলের কপালে আলতো করে হাত বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ঘুমাও। অনেক রাত হলো যে অনি। অনি চোখদুটো বুজে চাঁদ ডোবার অপেক্ষা করে। নন্দিনী ঘরে ফিরে আসে। এক বছর হতে চললো। চোখ তার এখনও শুকায়নি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে সে বিয়ের আগের কথা ভাবে। স্বপ্ন দেখে। গুনগুন করে। সুজিত কিশোর কুমার বড্ড ভালোবাসতো। নন্দিনী মাঝেমধ্যে ঠাট্টা করে বলতো, কিশোরদাই বুঝি আমার সতীন।
শিউরে ওঠে নন্দিনী। ঘড়ির দিকে চোখ যায় তার। পৌনে তিনটে। নিঃশব্দে এগিয়ে যায় সে অনিকেতের ঘরের দিকে। হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালার গল্পটার শেষটা তার খুবই পরিচিত। স্বর্গদেশ বলে কি কিছু হয়? দিনের শেষে কেউ নদীতে ডুবে মরে, কেউ ঋণে।
নন্দিনী কাষ্ঠ হাসে। হাত দুটো তার বাড়িয়ে দেয় ঘুমন্ত অনির গলার দিকে। পারে না। প্রতি রাতের মতো এই রাতেও ফিরে আসে বিফল হয়ে। নন্দিনীর চোখে জল। মৃত্যু ও মৃত্যুর উপকণ্ঠে দাঁড়িয়ে সে চোখের জল মোছে।
ভোর হল। সূর্য জানালায় কড়া নাড়ে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।