এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রোডামিন-বি ও কিশোর বেলার ফাঁকি মিঠাই

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ মার্চ ২০২৪ | ৫৫৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  •  রোডামিন -বি ও কিশোরবেলার ফাঁকি মিঠাই

     

    (১)
     
    চলুন একটু ঘুরে আসি। ভাবছেন কোথায়? না, না। একদম চিন্তা করবেন না। আমরা এখন স্মৃতি পথে মানসযাত্রা করবো। একেবারে হাল আমলের কচিকাঁচাদের বাদ দিয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব বা ষাটোর্ধ্ব মানুষজনের কাছে এই যাত্রা যে খুব স্মৃতিমেদুরতায় ভরা এক চনমনে আনন্দের পথচলা হবে তা আমি গোড়াতেই হলফ করে বলতে পারি।
     
    গরমের ছুটি পড়েছে স্কুলে। মধ্যাহ্ন ভোজনের পাট চুকিয়ে বাড়ির সবাই একটু নিদ্রালস হয়েছেন। মায়ের কোলঘেঁষে বল্টু পল্টু ছোটন টোটনের দল সবাই শুয়ে আছে। শান্ত, শব্দহীন দুপুর বেলা। হঠাৎ পাড়ার গলিপথের স্তব্ধতার আড় ভেঙে টঙ টঙ করে মৃদু ঘন্টার আওয়াজ ভেসে আসে। বিছানায় শুয়ে থাকা মানবকরা তখন আর ঝন্টু মন্টু নয়। তারা তখন প্রদোষ মিত্তির কিংবা প্রখর রুদ্র। সতর্ক সারমেয়র মতো সবারই কানদুটো বিলকুল খাড়া। দূর থেকে ভেসে আসা মৃদু ঘন্টার আওয়াজ এখন অনেকটাই স্পষ্ট। সেই শব্দ কর্ণপথে প্রবেশ করেই আকুল করিল সব প্রাণ। সবাই উতল হয়ে উঠেছে এক অজানা প্রত্যাশায়। ঘুমে চোখ জুড়িয়ে যাওয়া মাকে আলতো ধাক্কা মেরে তাঁর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলা –
     
    মা, দু আনা পয়সা দেবে? বুড়ির চুল খাব। মিঠাই কাকু এ পাড়ায় অনেক দিন পর এসেছে। তুমি ঘন্টার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছ? দাওনা মা।
    ঘুম জড়ানো চোখে মা হয়তো বললেন -
    দেরাজের বাঁ দিকের ড্রয়ারে রাখা আছে। বেশি নিবিনা যেন।
     
    বল্টু পল্টু ছোটন টোটনের তখন তুরীয় অবস্থা। আলিবাবার মতো অপ্রত্যাশিত খাজানার সন্ধান পেয়ে তাদের তখন প্রবল তুর্কী নাচন। সদর দরজার আগল খুলে দে ছুট, দে ছুট সেই ঘন্টা বাজিয়ের স্বপ্নের পশরা চেখে দেখার জন্য।
     
    (২)

    কি! অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে গেল তো? খুব স্বাভাবিক। আজ থেকে পাঁচ - সাড়ে পাঁচ দশক আগে এমনই ছিল কিশোর কিশোরীদের সুলভ মনোহরণের আয়োজন। তবে এসব নিয়ে কথা বলতে আজ খাতা খুলে বসিনি। আজ কথা বলবো ফাঁকি মিঠাই তথা বুড়ির চুল তথা কটন বল ক্যান্ডির ফাঁক ফোকর নিয়ে। 
     
    এক হৈচৈ ফেলে দেওয়া খবর এসেছে সুদূর দক্ষিণ ভারতের পুদুচেরী থেকে। খুব সম্প্রতি পুদুচেরী সরকার এক সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাদের রাজ্যে বুড়ির চুল বা ফাঁকি মিঠাইয়ের বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। জলে ঢিল ছুড়লে যেমন জল নড়েচড়ে উঠে ঢেউ তুলে পাশের জলকে আলোড়িত করে ঠিক সেভাবেই একে একে ছড়িয়ে পড়েছে পাশের প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে।আর তাই পুদুচেরীর পথে হেঁটে তামিলনাড়ু সরকার‌ও রাজ্যে কটন বল ক্যান্ডির বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এখন থেকে ঐ দুই দক্ষিণী প্রদেশে আমাদের ছোট বেলার বহু আনন্দময় স্মৃতি বিজড়িত মিঠাইয়ের উৎপাদন ও বিক্রি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। কেন এমন ফরমান?



    কোথায় ঘটল বিচ্যূতি? সরকারের পক্ষ থেকে অধ্যাদেশ জারি করতে গিয়ে তামিলনাড়ুর মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এম সুব্রহ্মণ্যিয়াম জানিয়েছেন -
    “রাজ্যে কটন বল ক্যান্ডির উৎপাদন ও বিক্রি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হলো। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এই জনপ্রিয় মনোলোভা মিঠাইয়ের মধ্যে অত্যন্ত ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ রোডোমাইন - বি মেশানো হচ্ছে বিপদজ্জনক পরিমাণে যা শরীরের পক্ষে হানিকর। এই নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফলে কটন বল ক্যান্ডির প্রস্তুতকারীরা, বিপণনকারী ভেণ্ডাররা এবং সর্বোপরি কটন বল ক্যান্ডির উপভোক্তারা সচেতন হবে বলেই আমার স্থির বিশ্বাস।”

    (৩)

     

    রোডোমাইন বা রোডামিন-বি। আজকের আসামি। এই পদার্থটি সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নেওয়া যাক্। রোডামিন-বি (RhB) একটি রাসায়নিক যৌগ যার বহুল ব্যবহার প্রধানত বস্ত্রবয়ন শিল্পে। রঞ্জক পদার্থ হিসেবে যথেষ্ট পরিচিত হ‌ওয়ায় রোডামিন-বি এই রাসায়নিক যৌগটি সিল্ক, পাট, চামড়া, উল‌ ও সুতো রঙ করার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য রঞ্জক পদার্থের তুলনায় রোডামিন অনেকটাই সস্তা, ফলে প্রসাধনসামগ্রী তৈরিতে এবং রঙিন প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদনেও এই রঞ্জক পদার্থের সাহায্য নেওয়া হয়। এহেন এক গুরুত্বপূর্ণ ও সুলভ রঞ্জক পদার্থ মুনাফালোভী অসচেতন খাদ্য প্রস্তুতকারীদের দৌলতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে গোবি মাঞ্চুরিয়ান, লঙ্কার গুঁড়ো, চিলি চিকেন, সস ও কটন বল ক্যান্ডির মতো মুখরোচক প্রস্তুতিতে। বিপদ এখানেই। কেন এই আশঙ্কিত উদ্বেগ? এখন তার খোঁজ করি ।

     

    (৪)
     
    গবেষণা সূত্রে জানা গিয়েছে যে রোডামিন-বি মানুষের শরীরের পক্ষে মোটেই অনুকূল নয়। 
    বরং দীর্ঘদিন ধরে এই রঞ্জক পদার্থের সংস্পর্শে এলে চামড়ার অসুখ, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, চোখের সংক্রমণ থেকে শুরু করে কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হয় ‌, রোডামিন বাড়ায় পেটে টিউমার সৃষ্টির ঝুঁকি। পাশাপাশি রোডামিনের প্রভাবে 
    ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা তৈরি হয়। যদিও এই বিষয়ে বিজ্ঞানী মহলে মত মতদ্বৈধতা রয়েছে।
    আমাদের দেশে তো বটেই, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষজনের মধ্যেও রঙদার খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হবার প্রবণতা রয়েছে। এই দুর্বলতা বিষয়ে খাদ্যপ্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো বিলক্ষণ অবগত। তাই উপভোক্তাদের - শরীর স্বাস্থ্য সুস্থতার - তোয়াক্কা না করেই কেবলমাত্র খাদ্যদ্রব্যকে ক্রেতাদের নজরে দেখনদার করে তুলতে রোডামিন-বি এর মতো বিপদজ্জনক রাসায়নিক রঞ্জক পদার্থ যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কটন বল ক্যান্ডির মতো জনপ্রিয় শিশুখাদ্যে। মনে রাখতে হবে যে কোনো অবস্থায়ই এটি খাবারদাবারে মেশানো যাবেনা। অথচ তাই করা হচ্ছে ‌।
    বিশিষ্ট চিকিৎসক ও আ্যাপোলো হাসপাতাল, চেন্নাইয়ের অঙ্কোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট প্রসাদ ঈশ্বরণ এই বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে জানিয়েছেন যে, বহুদিন ধরেই তাঁরা রোডামিন-বি এর বিপদ প্রসঙ্গে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছেন। এতোদিন পরে সরকারের টনক নড়েছে। দেরিতে হলেও যে শেষপর্যন্ত খাদ্যে বিষক্রিয়া নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। পুদুচেরী সরকার সর্বপ্রথম মৌচাকে ঢিল ছোড়ে। এরপর একে একে তামিলনাড়ু, কর্ণাটক এবং এখন অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার‌ও রোডামিন-বি এর অপব্যবহার সম্পর্কে উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে। বাজার থেকে কটন বল ক্যান্ডির পাশাপাশি অন্যান্য রঙিন খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে যাচাই করে দেখা হচ্ছে মানুষের শরীরে এই রাসায়নিক যৌগটি কী প্রভাব ফেলেছে। ব্যবসার নামে এমন কাণ্ড কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।

    আরও এক গবেষিকা শ্রীমতী মিনাক্ষী এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “গবেষণায় জানা গিয়েছে যে রোডামিন- বি মানব কোশের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এই রাসায়নিক যৌগটিকে ব্যবহার করা হলে তা সেরিবেলাম টিস্যু এবং ব্রেনস্টেমের ক্ষতি করতে পারে।”



    (৫)

    শুরু করেছিলাম অনেকটাই পেছনে ফেলে আসা শৈশবের এক নির্ভেজাল (?) আনন্দের রোমাঞ্চকর কাহিনী দিয়ে। এখন প্রবীণ শরীরে বাসা বেঁধেছে হরেক উপসর্গ। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মিষ্টিমণ্ডার রসাস্বাদনেও বঞ্চিত করি নিজেকে। তাতে আক্ষেপ নেই, কিন্তু যখন দেখি এ কালের কচিকাঁচারা আমাদের‌ই অবিমৃষ্যকারিতার জন্য অনেক অনেক সহজ আনন্দের থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তখন হতাশা জাগে বৈকি!

    এমনটা নিশ্চয়ই নয় যে কেবলমাত্র দক্ষিণী রাজ্যগুলোতেই যথেচ্ছভাবে ক্ষতিকর রোডামিন-বি ব্যবহার করা হচ্ছে। আসমুদ্র হিমাচল বিস্তৃত বিপুলা এই ভারতবর্ষের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা জনপদের অগণিত শিশু কিশোর কিশোরী কোনো এক মধ্যাহ্ন বেলায় হয়তো বা আজ‌ও উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করে বুড়ির চুল বা মুখে দিলে নিমেষে গলে যাওয়া ফাঁকি মিঠাইয়ের জন্য। তাদের আনন্দকে ভবিষ্যতে যেন আর রোডামিনের বিষে বিষিয়ে না তুলি। আমাদের রাজ্য কবে সচেতন হবে?
     
    ** এই রচনাটি প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ritabrata Gupta | 2401:4900:7079:61ca:37d:4027:8f90:***:*** | ১৮ মার্চ ২০২৪ ২১:০৬529564
  • অসাধারণ  !  খুব  ভালো  লাগলো  .  এত  কিছু  জানতাম  না .  ধন্যবাদ  সোমনাথদা  !
  • kk | 2607:fb90:eab2:c595:b03f:86dc:a8bb:***:*** | ১৮ মার্চ ২০২৪ ২১:১০529565
  • ভালো আর জরুরী ইনফর্মেশন। 
  • sarmistha lahiri | ১৯ মার্চ ২০২৪ ০০:৪৮529578
  • ছোটবেলার প্রিয় বস্তটির খোঁজ পেয়ে যতটা উৎফুল্ল হলাম, তার নির্মাণ প্রক্রিয়া জেনে ততটাই ভীত হয়েছি। যাক সুন্দর ভাবে ব‍্যখ‍্যা করায় বিশেষ তথ‍্য সমৃদ্ধ হলাম।
  • অরিন | 119.224.***.*** | ১৯ মার্চ ২০২৪ ০১:০৭529581
  • "এহেন এক গুরুত্বপূর্ণ ও সুলভ রঞ্জক পদার্থ মুনাফালোভী অসচেতন খাদ্য প্রস্তুতকারীদের দৌলতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে গোবি মাঞ্চুরিয়ান, লঙ্কার গুঁড়ো, চিলি চিকেন, সস ও কটন বল ক্যান্ডির মতো মুখরোচক প্রস্তুতিতে। বিপদ এখানেই। কেন এই আশঙ্কিত উদ্বেগ? এখন তার খোঁজ করি ।... দীর্ঘদিন ধরে এই রাসায়নিক যৌগটিকে ব্যবহার করা হলে তা সেরিবেলাম টিস্যু এবং ব্রেনস্টেমের ক্ষতি করতে পারে"
     
    তা, এই যে এত খোকাখুকু, মায় বড়রা অবধি গব গব করে গোবি মাঞ্চুরিয়ান, চিলি চিকেন, তারপর বুড়ির চুল খেয়ে ফেলেছে, এবার তাদের কি হবে? কি মনে হয়?
  • মিহির মাইতি | 2405:201:8000:b1a1:20df:80d2:b5d6:***:*** | ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৫:৪১529584
  • খুব‌ই প্রয়োজনীয় ও তথ্য পূর্ণ আলোচনা। তবে সমস্যা কেবল রোডামিন-বি আর ফাঁকি মিঠাইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ তেমন নয়। বিরিয়ানি থেকে বোঁদে, রাঙা আলু থেকে হরেক রকমের সবজি সবেতেই প্রাণঘাতী রঙের রমরমা। হোটেলের লোভনীয় খাবারে মেশানো হচ্ছে নানান ধরনের রঞ্জক। এক পাকচক্রে আবর্তিত হচ্ছে আমাদের স্বাস্হ্য, শরীর। রোডামিন নিয়ে পুদুচেরী সরকার ব্যবস্থা নিলে বাকিরা উদ্যোগ নেয়না কেন? খাদ্য সুরক্ষা দফতরের লোকজনকে উদ্যোগী হতে হবে। দ্রুত এই কাজ শুরু হোক।
  • সৌমেন রায় | 2409:40e1:19:1073:8000::***:*** | ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৮:০৭529585
  • যুব সমাজের বেশিরভাগ তো বাড়ির বাইরে থাকে।এই সব ছাই পাশ খাচ্ছে তো! অবশ্য বাড়িতে থাকলেও তাদের ডাল ভাত পছন্দ নয়।
     
    মিষ্টি আলুর ব্যাপারটা কি ? ওতে কিভাবে প্রয়োগ করা হয়। সব্জি নিয়ে একটা পুরো লেখা হোক।আর একটা হোক অন্যান্য খাবার নিয়ে।
  • অরিন | 119.224.***.*** | ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৯:৪২529586
  • মিহির মাইতি, "রোডামিন নিয়ে পুদুচেরী সরকার ব্যবস্থা নিলে বাকিরা উদ্যোগ নেয়না কেন? খাদ্য সুরক্ষা দফতরের লোকজনকে উদ্যোগী হতে হবে। দ্রুত এই কাজ শুরু"
    সৌমেন রায়, "মিষ্টি আলুর ব্যাপারটা কি ? ওতে কিভাবে"

    সাধারণত খাবারে রঙ মেশানো দুরকম ভাবে করা হয়, Natural ও Synthetic Food Colorant দিযে। এখন ভারত সরকারের Food Safety and Standards Authority of India (FSSAI) এর সাইট যদি দেখেন, দেখবেন এই নিয়ে সরকারের বিস্তারিত বয়ান, বই, সব কিছু রয়েছে, যেমন এই লেখাটি, https://fssai.gov.in/upload/media/FSSAI_News_Colour_Kashmir_28_12_2020.pdf খাবারে রঙ মেশানো মানেই সেটি অন্যায় ব্যাপারটা এমন নয়।

    এখন কিছু ক্ষেত্রে, যেমন এই রোডামিনের ক্ষেত্রে, খাবারে ব্যবহার করার কথাই নয়, যদিও ভারতে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়। নানান রকমভাবে করা হয়। যেমন রাঙালু ("মিষ্টি আলু") তে খোসার রঙ বেশী করে দেখানোর জন্য দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে আলু বাড়িতে নিয়ে এসে ভাল করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে রান্না করতে হবে।

    যদি পণ্ডিচেরির সরকার নিষিদ্ধ করে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের সরকার করছে না কেন? তার একটা কারণ, এই ব্যাপারগুলো বড় শহরে খুব একটা হবার কথা নয়, কারণ ধরুন যারা রান্না করে বিক্রি করে, তারা যদি দোকানে গিয়ে খাবারে দেবার রঙ চায়, তাহলে অধিকাংশ দোকানে পারমিটেড রঙ পেয়ে যাবে। ছোট রাজ্য বা শহরগুলোতে অনেক সময় পাওয়া যায় না, তখন যা তা রঙ দিয়ে দেয়। বিশেষ করে লঙ্কাগুঁড়ো, হলুদ, ইত্যাদিতে।

    এবার মুশকিল হচ্ছে, কোন কোন রাজ্যের সরকার ব্যান করেছেন কারণ হয়ত দেখেছেন যে, যে পরিমাণ ভেজাল মেশানো হয়েছে (exposure assessment), আর যতটা মানুষ খেতে পারে, তাতে শরীরে কিলোগ্রাম-প্রতি-দিনের হিসেবে তার টকসিসিটি সবচেয়ে বেশী যে পরিমাণে গ্রহণ করা যেতে পারে, তার চেয়ে অনেক বেশী হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য অনেক রাজ্যের সরকারও যদি এই এক ব্যাপার লক্ষ করেন, হয়ত নিষিদ্ধ করবেন, তবে বড় শহরে এ সমস্যা হবার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম।

    এখনো অবধি ভারত থেকে কোন গবেষণা বেরোয় নি যে ক্যাণ্ডি ফ্লস খেয়ে শিশুদের মস্তিষ্কের অসুখ হয়েছে বা ভারসাম্য রক্ষার সমস্যা হয়েছে (তবে "হতে পারে", সেটা অন্য সমস্যা)। এখন এই জাতীয় টক্সিন একদিন বা দুদিন খেলে একরকম, কিন্তু যদি কেউ নিয়ম করে বহুদিন ধরে খেতে থাকে (যেমন ধরুন রোজ রোজ চাইনিজ চিকেন মাঞ্চুরিয়ান বা গোবি মাঞ্চুরিয়ান কেউ যদি খান), তখন তার ব্যাপারটা অন্য রকম। এবার বিশেষ করে rhodamine b থেকে ক্যানসার হবে কিনা যেহেতু স্থির নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, সেই জিনিস মানুষ কতটা শরীরে নিতে পারবে তার পরিমাপ অন্যরকম করে করা হয়। আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে সুইস কেমিস্ট প্যারাসেলসাস বলে গেছেন, "Dose is the poison", মানে বিষ মাত্রেই কেমিকালি সে বিষ নয়, কতটা শরীরে কতদিন ধরে প্রবেশ করছে, তার হিসেবে তাকে বিষ বলে ধরে নিতে হয়।

    এক্ষেত্রে রিপোর্ট পড়ে মনে হচ্ছে যে সব রাজ্যে এই খাবারগুলোকেই ব্যান করা হয়েছে, সেখানে হয়ত রাজ্য সরকারের হাতে তথ্য আছে যে প্রচুর পরিমাণে মেশানো হচ্ছিল, যার জন্য পুরো খাবারগুলোর বিক্রিকেই নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল।
  • Somnath mukhopadhyay | ১৯ মার্চ ২০২৪ ১০:০৬529588
  • লেখাটাকে ঘিরে এমন সুন্দর আলোচনা হচ্ছে দেখে বেশ খুশি হচ্ছি। সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে আসা হলাহল পান করে দেবাদিদেব নীলকন্ঠ হয়ে ছিলেন। একালে আমাদের অবস্থাও অনেকটাই তেমন। এদেশে সবেতেই ভেজাল। আম নাগরিক কখনোই এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করেনা। অরিন উদ্যোগী হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাঠকদের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিচ্ছেন দেখে ভারি ভালো লাগছে। জমে উঠুক খেরো খাতার আলোচনা ‌
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন