এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সুগন্ধ

    Suvasri Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ১২ মার্চ ২০২৪ | ৩৬৪ বার পঠিত
  • সুগন্ধ
    শুভশ্রী রায়

    এই কাহিনী খুশবু নামে একটি প্রান্তিক মেয়ের। এই লেখায় তার নাম পাল্টে দিয়েছি। খুশবু আমাদের আবাসনে পরিচারিকার কাজ করত এক সময়। সেই সূত্রে আমাদের সঙ্গে তার পরিচয়। মেয়েটি দেখতে ভালো, অসম্ভব সুন্দর বড় বড় চোখ, ছিপছিপে গড়ন।
    আমাদের আবাসনের কাছে পাইকপাড়াতেই মেথরপট্টিতে তার বাড়ি। এখানেই তার জন্ম। গরীব পরিবারের মেয়ে, শৈশব থেকেই খাটতে অভ্যস্ত।
    বছর পনেরো বয়সে মেথরপট্টিতেই তার বিয়ে হয়। বর, দুই দেওর ও এক ননদ নিয়ে বড় সংসার। বিয়ের পরেও তাকে আগের মতোই খেটে খেতে হ'ত।
    পরপর দুটি ছেলে হ'ল তার। ঘরেবাইরে খাটাখাটনিও বাড়ল। বর অল্প রোজগার করত তবে মারধর করত না। মোটামুটি সুখেই ছিল তারা।
    কিন্তু এই সুখ স্থায়ী হ'ল না। তেইশ বছর বয়সে খুশবু বিধবা হয়ে গেল। ক' দিন খুব কাঁদল সে। তারপর চোখের জল মুছে যথারীতি সংসার ও দুই ছেলের জন্য খাটাখাটনি শুরু। নির্মম দারিদ্র্য কাউকেই বেশি দিন শোক করতে দেয় না।
    এই সময়টায় খুশবু আমাদের বাড়িতে কিছু দিন পরিচারিকার কাজ করেছিল। ওর পেটে অনেক ক্ষিদে জমা থাকলেও আমরা টুকটাক কিছু খেতে দিলে দুই ছেলের জন্য নিয়ে যেত। সময় কুলচ্ছিল না বলে সে আমাদের বাড়ির কাজ ছেড়ে দেয়। তারপর অনেক দিন ওকে দেখিনি।
    রাস্তায় এক দিন ওকে দেখে চমকে উঠলাম। কপালে কেমন একটা কালো, গভীর দাগ। আমাকে দেখে মলিন হেসে চলে গেল। কি জানি কী শুনতে হবে ভেবে আমি আর কিছু জিজ্ঞাসাও করিনি।
    পরে পাড়ার এক বৌদির মুখে শুনলাম, খুশবু'র দেওর জোর করে ওর সঙ্গে শোবে বলে বাড়াবাড়ি করছিল। ও বাধা দেওয়ায় লাঠি দিয়ে ভীষণ জোরে মেরেছে।
    শুনে আমার এত কষ্ট হ'ল যে কী বলব! একটি বিপন্ন মেয়ে, স্বামী নেই, দুই বাচ্চাকে নিয়ে কত কষ্ট করেই না যাকে বেঁচে থাকতে হয়, তার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে দেওর এরকম করছে! অবশ্য আমাদের দেশে গরীব এবং ছিটেফোঁটাও লেখাপড়া না জানা মেয়েদের ওপর অনেক নির্যাতন হয়, তার ওপর মেয়েটির যদি রূপ থাকে তাহলে তো কথাই নেই। অাশ্চর্য ব্যাপার হল, এ সব ক্ষেত্রে সমস্ত সমাজই চুপ করে মজা দেখে।
    পরেও কয়েকবার শুনেছি খুশবু'র কথা। যতবারই তার বদমাইশ দেওর তার সঙ্গে জবরদস্তি করতে চেয়েছে, মারধর খেয়েও সে রাজি হয়নি। কখনোই আশেপাশের কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি৷ তবু সে প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে। তার লড়াইকে আমি কুর্নিশ করি।
      পাঁচ বাড়ি বাসন মেজে, কাপড় কেচে যে সব মেয়ের দিন যায় তাদের সাজগোজ করার সময় থাকে না। গায়ে গন্ধ ঢালার ফুরসত তাদের থাকে না। অবিরত পরিশ্রম করে বলে ঘামও হয়। তাদের গা থেকে কখনো কখনো একটা কটূ গন্ধ বেরোয় তা ঠিক।
    তবে আমি কিন্ত খুশবুর কাছাকাছি গেলে একটা মিষ্টি গন্ধ পাই। কিসের গন্ধ জানি না। হয়তো তার চারিত্রিক দৃঢ়তা, সাহস অার অন্তরের পবিত্রতা সব মিলে মিশে এই গন্ধটা আসে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Shamik Sarkar | 2409:40e0:102e:17f0:8000::***:*** | ১২ মার্চ ২০২৪ ১৯:২৯529301
  • পুরো লেখাটাই দারুণ তবে শেষের চারটে লাইন সেরা। আরো লেখা চাই। 
  • Subha Ghosal | 2405:201:403a:4041:1c61:11a9:c048:***:*** | ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১১:১২530809
  • ভালো লাগলো গল্পের বিষয়বস্তু , খুশবু কে ভালো না লেগে উপায় নেই। আরো এরকম লেখা চাই 
  • চিত্তরঞ্জন হীরা। | 2409:4060:2e9e:fb52:16a3:c1c:eef7:***:*** | ২১ জুলাই ২০২৪ ১২:৪৮535094
  • খুব সুন্দর লেখা। বাস্তব ঘটনা, কিন্তু পরিবেশনার গুণে সুন্দর স্মৃতিকথা হয়ে উঠেছে।
  • Suvasri Roy | ২১ জুলাই ২০২৪ ১৫:৩৭535102
  • @চিত্তরঞ্জন হীরা @ Subhash Ghoshal @Shamik Sarkar
    লেখাটি পড়ে সাড়া দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নেবেন৷ 
  • Suvasri Roy | ২১ জুলাই ২০২৪ ১৫:৩৯535103
  • @চিত্তরঞ্জন হীরা
    সাড়া দেওয়ায় ঋদ্ধ হ'লাম। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন