এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  স্মৃতিচারণ   স্মৃতিকথা

  • এল ডোরাডো

    যোষিতা লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | স্মৃতিকথা | ৩০ নভেম্বর ২০২৩ | ১০০৬৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৬ জন)
  • এখানে লিখব সোনার দেশ সুইটজারল্যান্ডের নানান অভিজ্ঞতা ও মানুষের কথা।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যোষিতা | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৩৯741613
  • - কত জমা আছে বললেন?
    - জ্যাদা নেহি, সত্তর হাজার কি আস পাস।
    - আস পাস মানে? আপনি সঠিক ফিগারটা জানেন না?
    - অভি ইয়াদ নেহি।
    - আচ্ছ ধরে নিচ্ছি রাউন্ড ফিগারে সত্তর হাজার। এটা আপনার কন্ট্রিবিউশন এবং এমপ্লয়ার্স কন্ট্রিবিউশন মিলিয়ে, এতগুলো বছরের সুদ টুদ মিলিয়ে, তাইত?
    -হাঁ।
    - তা এই টাকাটা আপনি পুরোটা তুলে নিতে চাচ্ছেন কেন রিটায়ারমেন্টের টাইমে?
    - আরে এটাই তো এতক্ষণ ধরে বলতে চাচ্ছি।
    - বলুন। শুনছি।
    - আমার তো নানান দেশ দেখার শখ আপনি জানেন। আমি এই টাকা খরচ করে পৃথিবীর নানান দেশে ঘুরব।
    - তারপরে?
    - মানে?
    - তারপরে কী করবেন?
    - আরে আপনি বুঝতে পারছেন না। অন অ্যান অ্যাভাভারেজ কাছের বা দূরের দেশ মিলিয়ে ধরে নিন দেশ প্রতি আমার যাতায়াতের খরচ, লো বাজেটে থাকা খাওয়া, ঘোরা, এসব মিলিয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার মত খরচ হবে। তাহলে, সেভেন্টি থাউজেন্ডকে আচ্ছা নাহয় তিন হাজার দিয়েই ডিভাইড করলাম। তাহলে দাঁড়াচ্ছে, সেভেন্টি ডিভাইডেড বাই থ্রি...

    গোল্ডিজি মোবাইলের ক্যালকুলেটর খুলে টাইপ করবার আগেই আমি বললাম, টোয়েন্টি থ্রি।
    উনি তা সত্ত্বেও নিজে হিসেবটা করে বললেন, ইয়েস রাফলি টোয়েন্টি থ্রি কান্ট্রিজ।
    প্রত্যেক দিনই নতুন নতুন আশ্চর্য হবার মত খবর, ঘটনা, মানুষ, দেখতে পাই। গোল্ডিজির এই হিসেব এবং ভবিষ্যতের প্ল্যানিং দেখে শুনে, আরেকবার অল্প করে অবাক হলাম।
    ব্যাকগ্রাউন্ডটা বলে নিই। প্রায় সতেরো বছর ধরে আমাদের বন্ধুত্ব। গোল্ডি হার্নে। আমার পুরোনো ক্লাসমেট। একসময়ে আমরা ক্লাসে পাশাপাশি বসতাম। জার্মান ল্যাংগুয়েজের ক্লাসে।
    তখন আমাদের দুজনেরই নাগরিকত্ব ছিল ভারতীয়। তার কিছু সময় পরে এক এক করে আমরা সুইস নাগরিকত্ব অর্জন করেছি, ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছি। উনি মারাঠি, আমি বাঙালি। উনি রেস্টুরেন্টে রাঁধুনির কাজ করতেন, এখনও কয়েক মাস আগে অবধিও করছেন। আমি আইটির চাকরি করতাম তখন , এখনও করি চাকরি। গোল্ডিজির শিক্ষাগত যোগ্যতা ক্লাস ফোর পর্যন্ত।
    তবে পড়াশুনো করতে পারার সুযোগ না পেলেও, তিনি জীবনের উচ্চাশা কখনও ছাড়েন নি। দশ বারো বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিনা টিকিটে ম্যাড্রাসের ট্রেনে চড়ে বসেন। একটা ট্রেন নয়। মহারাষ্ট্রের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এক ট্রেনে ম্যাড্রাস পৌঁছনো যায় না। বিনা টিকিটে তো আরোই অসম্ভব। কখনো চেকার ধরে ট্রেন থেকে নামিয়ে হিড়হিড় করে নিয়ে যাচ্ছে রেলপুলিশের হাতে তুলে দেবে বলে, উনি চেকারের হাত ছাড়িয়ে দে দৌড়।
    এমনি করে ম্যাড্রাস পৌঁছনো, সেখানে গিয়ে ভাষ শেখার সঙ্গে সঙ্গে হোটেলে কাজ করে দিন গুজরান। তারপরে এক চাইনীজ পরিবারের সঙ্গে সিমলায় যাওয়া। ছোট চাকরের কাজ সেই বাড়িতে। চাইনীজ মনিব খুবই মারধোর করত, বেশ ঘৃণার চোখেও দেখত। কিন্তু বাড়ির বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য পেটেভাতে অমন বাচ্চা চাকর সিমলা অঞ্চলে পাওয়া অতটা সোজা নয়। সেখানে কিছু মাস বা বছর কাটিয়ে ফের চেনা শহর ম্যাড্রাসে ফিরে আসা। সমবয়সী পোরোনো বন্ধুদের সঙ্গে ফের দেখা হলো, আবার কাজ জুটে যায় ছোটোখাটো রেস্টুরেন্টে।
    অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা দেখে সব কটা বন্ধু মিলে ঠিক করে ফেলে জীবনের আল্টিমেট প্রোফেশন। স্মাগলার। উঁহু কোঙ্কন উপকূলের নাম না জানা বন্দর থেকে ডিঙি নৌকোয় করে বোম্বাই সিনেমার নকল করে সোনার বিস্কিটের স্মাগলিং নয়। বন্ধুরা মিলে অন্য প্ল্যান বানায়। গোরখপুর।
  • যোষিতা | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:১৩741614
  • ছেলেগুলো লেখাপড়া না শিখলেও জানে যে স্মাগলিং এর হাতেখড়ি নেবার জন্য গোরখপুর সস্তা এবং এর জন্য কোনো ডনের কাছে জীবন বাঁধা রাখার বাধ্যবাধকতা নেই।
    যার কাছে যা টাকাপয়সা ছিল, সমস্ত সঙ্গে নিয়ে চারজন সাহসী কিশোর রওনা দিল গোরখপুরের উদ্দেশে। কাছেই নেপাল বর্ডার। পাসপোর্ট ভিসার ঝামেলা নেই। ওদিকে গিয়ে জিনিসপত্র কিনে, উধারকা মাল ইধার করে ফেলতে পারলেই, কাম তামাম। নেপালে যে কোনও জিনিস প্রচণ্ড সস্তা। ছাতা, পেন, টর্চ, লাইটার, ইলেকট্রনিক্স,... বন্ধুরা ট্রেনে যেতে যেতে অনেক প্ল্যান করে।
    বর্ডারের কাছে পৌঁছে দেখে ওপারে যাওয়া অত সোজা না। চিটিংবাজ দালালেরা ঘুরঘুর করছে। তাদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া গেল না। চকচকে ছোরা দেখিয়ে ওদের সমস্ত টাকা পয়সা জামাকাপড় যা ছিল সব লুঠ করে নিল।
    স্মাগলিং এর স্বপ্ন শেষ। নিঃস্ব হয়ে ফের দক্ষিণে ফিরে আসা।
    চাকরের কাজ থেকে, জোগাড়ির কাজ হয়ে, অবশেষে রাঁধুনির কাজে উত্তরণ। ধীরে ধীরে আবার পুরোন সম্পর্ক, আত্মীয় স্বজন, বাবা মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ হলো। গরীব ঘরের হিন্দু মেয়ের সঙ্গে বিয়েও দিলো বাড়ি থেকে দেখেশুনে। মালায়ালি মেয়ে, শ্বশুরবাড়ির দেশ কেরালায় গিয়ে রান্নার চাকরি নিলেন যুবক গোল্ডিজি।
    কেরালায় ঘরে ঘরে বিদেশে যাবার ট্রেণ্ড। ওদিকে লোকাল চাকরি তেমন নেই। প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই কম করে একজন বিধেশে থাকে। যে বিদেশে থাকে সে ঘরে টাকা পাঠায়। এমন পরিবারই চারদিকে। শ্বশুরবাড়ির গ্রামেও তাই ফরেন থেকে পাঠানো টাকার গুণে সবাই স্বচ্ছল। অধিকাংশই যায় মিডল ইস্টের দেশগুলোয়। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত, যার যেমন কাজ জুটবে, চলে যাবে।
    গোল্ডিজি ভাবলেন, ওসব দেশে গেলে কর্মক্ষমতা কমে গেলে ফিরে আসতে হবে, সিটিজেনশিপও ওরা দেয় টেয় না, তারচেয়ে ইয়োরোপে ট্রাই করলে কেমন হয়?
    কিন্তু ইয়োরোপের প্রায় অনেক দেশেই স্কিল্ড লেবার চায়। সার্টিফিকেট। জেনুইন সার্টিফিকেট। প্রাইমারি ইস্কুল পাশ করা হয় নি তো কী হয়েছে? চেষ্টা করলে হবে না, এমন কাজ দুনিয়ায় আছে নাকি? খবর নিয়ে জানা গেল, দিল্লিতে একটা সংস্থা আছে, এক পাঞ্জাবি লোক চালান সেটা, সেখানে শেফ হবার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারলে সেই সার্টিফিকেট ইয়োরোপে অ্যাকসেপ্ট করে। কোনও হোটেল ম্যানেজমেন্টের কলেজে পড়বার মত ক্ঠিন জিনিস না। পরীক্ষার ফি যথেষ্ট চড়া। পরীক্ষাটাও বেশ কঠিন। সারাদিন ধরে পরীক্ষা হলো। পরিচ্ছন্নতা, কিচেনের নিয়ম, তরকারি কোটা থেকে শুরু করে আমিষ কেমন করে কুটতে হয়, একেক রান্নায় মাংস কেমন করে কাটা হবে, কেমন করে রাঁধা হবে, স ম স্ত!
    পরীক্ষায় পাশ করে গেলেন আমাদের গোল্ডিজি। এক জার্মানি প্রবাসী ভারতীয়র রেস্টুরেন্টে চাকরিও মিলে গেল। কোচি থেকে মিডলইস্টে কেবল ট্রানজিট লাউঞ্জে ছিলেন, ফ্লাইট পৌঁছে গেল হামবুর্গে।
  • যোষিতা | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৫৫741647
  • প্রকাণ্ড শহর হামবুর্গ। চারিদিকে সাহেব মেম গিজগিজ করছে। দেখলেই শ্রদ্ধায় মনের ভেতরটা কেমন যেন করতে থাকে। মাথাটা নত করা যায় না, নত মস্তকে থাকলে সাহেব মেমদের রূপ, সৌন্দর্যের ছটা, স্মার্টনেস, সাজগোজ, এসমস্ত দেখবে কেমন করে? আহা! কী উন্নত শহর। ঝকঝকে। ছবির মতো লাগে। কাজের জায়গাতেও ঝকঝকে করে রাখতে হয় রান্নাঘরটাকে। কাজের চাপ আছে, মানুষের সঙ্গে মিশতে পারবার চাপ আছে, তবু হাল ছাড়লে চলবে না, সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, মাঝে মাঝে নিজের গায়েই চিমটি কেটে বুঝে নিতে হয় যে এটা স্বপ্ন, না কি বাস্তব। গাঁয়ের ইস্কুলে ক্লাস ফোরে পড়তে পড়তে পড়া ছেড়ে দেওয়া একজন অশিক্ষিত লোক কিনা জার্মানির এমন একটা শহরে চাকরি করতে এসেছে!
    সমস্যা হচ্ছে ভাষা নিয়ে। গোল্ডিজি দেশে রেখে এসেছেন, ইস্কুল পড়ুয়া কন্যা, ছোট্ট পুত্র যে কিনা সবে ইস্কুলে যাচ্ছে, এবং গিন্নিকে, যিনি সংসার সামলাবেন।
    মাস ফুরোবার আগেই মাইনের টাকা জমা পড়ে গেল ব্যাঙ্কে। উঁহু টাকা তো নয়, ডয়েচ মার্ক। এমনিতে রেস্টুরেন্টে থাকা খাওয়া ফ্রি, মানে ওটা চাকরির শর্তের সঙ্গে ইনক্লুডেড। ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে এদেশে সুদ টুদ কিছুই দেয় না সেটা জেনে নিয়েছেন। তাহলে সিংহভাগই দেশে পাঠিয়ে দেওয়া যাক। ব্যাঙ্ক টু ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার সহজেই করা যায়, কিন্তু এই কদিনে যেসব ভারতীয় মানুষদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, যারা কিনা গোল্ডিজির মতই অশিক্ষিত, কুলিমজুর বা রাঁধুনি গোত্রের, তারা কক্ষনো ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে সরাসরি টাকা পয়সা পাঠায় না। সবাই হয়ত 'লিগ্যালি' কাজ করছে না, সে কারনেও হতে পারে। নানানরকমের এজেন্সী আছে, তারাই নিরাপদে মানি ট্রান্সফার করিয়ে দেয়।
    দেশে ফোন করা সম্ভব নয়। মোবাইল ফোনও নেই কারো। ইমেইলে, চিঠিতে, খবরাখবরের আদানপ্রদান হতে থাকে। মাসে মাসে দেশে টাকা যেতে থাকে, স্ত্রী কন্যা পুত্র দারুন ভালো আছে, গোল্ডিজি নতুন নতুন উদ্যম খুঁজে পান আরো বেশি করে খাটবার। জার্মান ভাষার ক্লাসে ভর্তি হয়ে যান। এমন সুন্দর টেবিল চেয়ারওলা ইস্কুলে তিনি কস্মিনকালেও যান নি। দেয়ালে সবুজ রঙের বোর্ড, রং বেরঙের চক পেন্সিলে শিক্ষক খসখসিয়ে লিখে চলেছেন বোর্ডের ওপর। নতুন করে অক্ষর পরিচয় হয়, নতুন করে শব্দ শেখা, এরকম সিস্টেম্যাটিকভাবে তিনি জীবনে কোনও ভাষায় শেখেন নি, তা সে তামিলই হোক কি মালায়ালি, বা টুকটাক ইংরিজি। চমৎকার সব রঙীন রঙীন বই খাতা। হুড়হুড়িয়ে কাজ চালানোর মতো ভাষা শিখে গেলেন গোল্ডিজি।
    বাহ, কী চমৎকার ব্যাপার, লোকে কী বলছে পরিষ্কার বুঝতে পারছেন, রাস্তায় সবকটা সাইনবোর্ড পড়ে ফেলতে পারছেন, খবরের কাগজে চোখ বোলালেও মোটামুটি খবরের হেডলাইনগুলোয় কী লেখা আছে তা পরিষ্কার। গোল্ডিজি মন খুব ভালো হয়ে যায়, মাঝে মাঝে নিজেকে ভদ্রলোকগোত্রীয় বলে মনে হতে থাকে।
  • যোষিতা | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:২০741648
  • কিন্তু কমপ্লেক্স যায় না ম'লে। তা সে ছোটোলোক হোক কি বড়োলোক। ছোটোলোকদের কমপ্লেক্স একরম, বড়োলোকদের কমপ্লেক্স আরেকরকম। গোল্ডিজি যেহেতু বেসিকালি ছোটোলোক, মানে বংশানুক্রমেই খানদানি ছোটোলোক, তাই বড়োলোকদের সমাজে একটু আড়ষ্ট, একটু লজ্জালজ্জা ভাব। লঘুগুরু জ্ঞানও চড়া দাগের। ছোট্টোবেলা থেকে যাদের সঙ্গে একাসনে বসা তো দূরে থাকুক, দূর থেকে "হেঁহেঁ সাব" বলে গড় করে এসেছেন, তেমন লোকজনের সঙ্গে নিত্য সমানে সমানে ওঠা বসা হলে ব্যালেন্স রাখা টাফ হয়ে যায়।
    যেমন কন্যার বয়স দীর্ঘকাল ফিক্সড রেখেছিলেন ষোলোতে। সেসব শুনে যারা বোঝে, তারা হেসে নেয়। টানা আটবছর কন্যা ষোলোতেই আটকে ছিল, পরে আলাপ হবার পরে জেনেছি। বিয়ের বয়স পেরিয়ে যেতে পারে, সেরম একটা দুশ্চিন্তা ছিল বাপের মনে, তাই মেয়ে কলেজ পেরিয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গেল, কিন্তু গোল্ডিজি প্রাণে ধরে তার বয়সটুকু বাড়তে দিলেন না।
    যদিও এসব একটু পরের পরের কথা।
    হামবুর্গে চাকরি চলছিল ভাল, খরচও খুব কম, এমনিতেও জার্মানি মোটের ওপর পশ্চিম ইয়োরোপে তেমন খরচ সাপেক্ষ দেশ নয়, ভাষাটাশা শিখতে শিখতে গোল্ডিজির মনে ইচ্ছে জাগছিল এসব জাগাতেই বাকি জীবনটার জন্য থেকে যেতে। কিন্তু সংসারের খুঁটিতে তিনি বাঁধা, বৌ, ছেলে, মেয়ে, তিনজনকে এখানে এনে ফেললে খরচে কুলোবে না। আলাদা করে ঘর ভাড়া নাও রে, খাইখরচা রয়েছে, উপরন্তু দেশে অল্পের মধ্যেই যেটুকু সম্পত্তি বানিয়েছেন, সব বেহাত হয়ে যাবে। দোটানায় পড়ে গেলেন এই ভদ্র টাইপের ছোট্লোকটি।
    চাকরির সাড়ে চার বছরের মাথায় বিনামেঘে বজ্রপাতের মত একটা ঘটনা ঘটল, যা আমূল পাল্টে দিল গোল্ডিজির জীবন আরও একবার।
  • যোষিতা | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:৩১741649
  • এটা জার্মনির চেনা ছক। নতুন কিছু নয়, বিভক্ত জার্মানির টাইম থেকেই এই ছক চলে আসছে। যুদ্ধে পরাজয়, মাথা হেঁট করে দোষ স্বীকার টিকার সেসব ঠিক আছে, হিটলার কত বড়ো পাষণ্ড ছিলো, সেসব প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারিকুলামে অবশ্যপাঠ্য। তবে ফরেনারদের বেশিদিন দেশের মধ্যে রেখে দিলেই এদের ভীষণ চুলকোয়। পাঁচবছর টানা ওয়ার্ক পার্মিটে কাজ করা মানে, সে লোক পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হয়ে তো যাবেই, আজ বাদে কাল নাগরিকত্বের দাবিও করে ফেলতে পারে, তখন কার হেন সাধ্যে যে সে রোধে তার গতি? তারপরে দেশ থেকে বিয়ে থা করে এনে বংশানুক্রমে গেঁড়ে বসবে। দেশটায় বেশি বেশি বিদেশি হয়ে গেলে দেশটার কি আর কোনও ইয়ে থাকবে? ছাত্র হোক, কি চাকুরে, ছোটোলোক টু বড়োলোক, জার্মানিতে হুটহাট পার্মিট ক্যানসেল করে দিতে পারে, মানে আর রিনিউ করব না, যাও, কী করবে করো। এতটা কাল ওরা এরকমই করে এসেছে, এখানেও অন্যথা হলো না। নরম্যালি বুদ্ধিমান লোকেরা যেটা করে, পটাশ করে জার্মান বান্ধবীকে বিয়ে করে নেয়, তখন আর কেও তাড়াতে পারবে না। যার বান্ধবী নেই, সেও যাহোক তাহোক করে বুড়ি টুড়ি যাকে পেলো, তারই সিঁথিতে সিঁদুরের কৌটো উপুড় করে দেয়। নইলে পায়ের নীচের মাটি সরে যাবে।
    কিন্তু গোল্ডিজি অশিক্ষিত এবং সরল। তাঁর পাসপোর্টে জ্বলজ্বল করছে স্পাউসের নাম রাজলক্ষ্মী দেবী। এমতাবস্থায় ছাদনাতলার প্ল্যান ক্যানসেল্ড। ওঁর আশেপাশের চাকরবাকর শ্রেণীর বন্ধুরা সমবেদনা জানালো অনেক, এরকম একটা "গন কেস" লোকের জন্য চাঁদা তুলে মদ হুইস্কি খাওয়া হলো। কিন্তু গোল্ডির মনিব আশা দিচ্ছিলেন। তাঁর বক্তব্য - তুমি পাঁচ বছর কম্প্লিট হবার আগেই দেশে চলে যাও। ওখানে ছ সাতমাস কাটিয়ে আবার ফিরে এসো। আবার নতুন করে ওয়ার্ক পার্মিট করে দেবো আমি, ভদ্রলোকের এক কথা, ট্রাস্ট মি, তোমার কাজে আমি বেজায় স্যাটিসফায়েড।
    এসব কথার সবটাই ফেস ভ্যালু, গ্যারান্টি কিছু নেই। এত পাঁপড় বেলে এখানে আসতে পারা গেছে, সংসারটা কত সুন্দর হচ্ছে। দেশে ফির্লে আবার পায়ের নীচে শক্ত জমি পেতে পোঁদ ফেটে যাবে। আত্মীয় কুটুম, নিজের মা ভাই বোনেরা সব এমনিতেই বসে আছে শকুনের মতো কেমন করে ছোঁ মেরে বা ঠকিয়ে গোল্ডিজির কষ্টার্জিত পয়সাকড়ি গাপ করে দেবে তার জন্যে, এই অবস্থায় দেশে গেলে কেউ পাশে দাঁড়াবে না। তবে কি 'ইল্লিগ্যাল' হয়ে গিয়ে এখানেই গোপনে থেকে যাবেন? আর কখনও দেশে ফেরা হবে না, পেপারলেস, ট্রেসলেস, একটা "না হয়ে যাওয়া" মানুষের জীবন কি তবে বেছে নিতে হবে টাকা উপার্জনের জন্য? আজন্ম এই সারসত্যটুকু তিনি হাড়েমজ্জায় জানেন, টাকা না থাকলে এই দুনিয়ায় কেউ পোছে না।
    এদিকে ছোটোলোক বন্ধুরা খবর দিলো - বস, সুইটজারল্যান্ড মে কাম হ্যায়, লেকিন উধার জানে কে লিয়ে কুছ প্রবলেম হ্যায়।
    - কেয়া প্রবলেম?
    - মত্লব, ওয়ার্ক পার্মিট, এম্পলয়্মেন্ট কন্ট্র্যাক্ট, বগেরা বগেরা, লেকিন পগার বহুত আচ্ছা হ্যায়।
    আর গোল্ডিজিকে পায় কে? সুটকেস গুছিয়ে, মাথার চুল আচড়ে, গোল্ডিজি রওনা দিলেন রেল স্টেশনের দিকে। খবরে প্রকাশ, সুইস কান্টন শাফাউজেনের বর্ডার দিয়ে সন্ধেবেলায় যে ট্রেনগুলো জার্মানি থেকে ঢোকে, ওতে চেকার থাকলেও, ইমিগ্রেশন পুলিশ থাকে না। একটা শেংগেন অঞ্চল থেকে নন-শেংগেন দেশে যাতায়াত পুরোপুরি অবাধ নয় , কিন্তু চান্স একটা নেওয়া যেতেই পারে। জীবনের রেলগাড়ি যে স্পীডে ছুটে চলেছে অভিজ্ঞতার লাগেজ নিয়ে, তাতে এরকম একটা ঝুঁকিপূর্ণ রেলযাত্রায় আর নতুন করে ভয় পাবার কিছু নেই। নিরাপদে বর্ডার পার হয়ে গেলে, তারপরে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই তিনি পৌঁছে যাবেন সেই কাঙ্খিত শহরে। জুরিখ। এল ডোরাডো।
  • Rouhin Banerjee | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:১০741650
  • দারুণ এগোচ্ছে তো!
  • যোষিতা | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৪৪741652
  • ঘুম যখন ভাঙল, তখন সন্ধে পেরিয়েছে, জানলার বাইরেটা যতটা অন্ধকার হওয়া উচিৎ ছিলো তার চেয়ে বেশি আলোকিত ও উজ্জ্বল। কারণ আর কিছুই নয় বাইরে জোৎস্না এবং তুষারের মাখামাখি। এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায় দেখ। ট্রেন যেখানে থেমে রয়েছে, সেই স্টেশনটা দেখে তো জার্মানি বলেই মনে হচ্ছে, একটু দূরে বাড়ি ঘরদোরের পেছন থেকে একটা ছুঁচোলো মত উটকো টিলা যেটার গায়ে কোনও তুষার জমে নেই। উদ্ভট ঐ টিলাটা যে একটা মৃত আগ্নেয়গিরি কন্ভার্টেড টু দুর্গ-কাম- রেস্টুরেন্ট সেটা গোল্ডিজি অনেক পরে জেনেছিলেন।
    এর পরে রেলগাড়ির ডিরেকশন টা উল্টো হয়ে গেল। রেলের গাড়ি ফের চলতে শুরু করল জার্মানির শেষ বড়ো স্টেশন পেরিয়ে মায়াবী জ্যোৎস্নার মধ্যে দিয়ে ছোট ছোট কয়েকটা স্টেশনে না দাঁড়িয়ে সোজা সুইটজারল্যান্ডের সীমান্ত শহর শাফাউজেন। সাধারণতঃ এই শহরে পৌঁছনোর আগেই ইমিগ্রেশন পুলিশ ট্রেনের মধ্যে গায়ের রং দেখে দেখে পাসপোর্ট কন্ট্রোল করে থাকে।
    এমন একটা শীতের রাতের লাস্ট ট্রেনে তাকে পাওয়া গেল না।
    ট্রেন ননস্টপ টেনে চালিয়ে ঢুকে গেছে জুরিখ মেন স্টেশন, সেখানে গোল্ডিজির গরীবগুর্বো চেনা-অচেনা বন্ধুদের একটা দল তাকে রিসিভ করতে পৌঁছে গেছে। এরা অধিকাংশই তথাকথিত ইল্লিগ্যাল ইমিগ্র্যান্ট। অশিক্ষিত ছোটোলোকেরা যেমন হয় আর কি! নেহাৎ এদিকটায় পুলিশের টহলদারি নেই, নইলে একজোড়া পুলিশ এসে এদের কাছে প্রপার ড্কুমেন্ট্স চাইলেই এদের খবর ছিল। টেনে গাড়িতে তুলবে, তারপর হাজত, তারপরে আর কীই বা করবে, হয় ছেড়ে দেবে, নয় ডিপোর্ট করবে। এদের খুঁজে পাবার জন্য কোনও পরিশ্রমেরই প্রয়োজন হয় না। খালি চোখে দেখলেই চেনা যায়, কালো কালো লোকগুলো, আনস্মার্ট, পরনে ক্যাটক্যাটে কালারের সস্তার জামাকাপড়, রংচঙের কোনও সেন্স নেই, সবসময় একটা দলের মধ্যে ঘোরে। এরা কি ইয়োরোপের এই সফিস্টিকেটেড সমাজের মেইনস্ট্রীমে ইন্টিগ্রেটেড হতে পারবে? সম্ভব? অথচ এরাই ঢুকে পড়ছে পোরাস বর্ডার দিয়ে, অবিরাম। কিচ্ছু করবার নেই ভনভনিয়ে মিষ্টির লোভে মাছির মত ঢুকছে এই লোকগুলো। প্রপার শিক্ষা নেই, উচ্চশিক্ষা ভালো ভালো রেজাল্ট তো কল্পনার বাইরে, ভোকেশনাল ট্রেনিং ও নেই, অথচ এরাই ইয়োরোপের এই সব অঞ্চলে অদৃশ্য ওয়ার্কফোর্স।
    এই ট্রেন থেকে নেমে গোল্ডিজি যেখানে যাবেন আগামিকাল, সেখানে কি তিনি লিগ্যাল হবেন নাকি ইল্লিগ্যাল? এই সমস্ত অবশ্য এখন তিনি ভাবছেন না। বর্ডার ক্রসিং এর ফাঁড়াটা কেটে গেছে। আজ রাত্রে এই নতুন দলের লোকেদের সঙ্গে জমিয়ে ফুর্তি করা হবে। জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। আজ রাতে মাল না খেলেই নয়।
  • গোবু | 202.8.***.*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০১:০৭741654
  • বাঃ দারুন লাগছে! চলুক!!
  • aranya | 2601:84:4600:5410:acdf:3dbc:1ead:***:*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০১:২৫741655
  • বাঃ 
  • দীমু | 223.19.***.*** | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:১৯741659
  • এগোনোর অপেক্ষায়
  • গোবু | 202.8.***.*** | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৫৭741660
  • যোষিতা , অতপর? 
  • যোষিতা | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:০৬741661
  • গোল্ডিজি এতক্ষণ ধরে নিজের গল্প বলতে বলতে একটু দম নিয়ে নিলেন। আমরাও গল্প শোনার মধ্যে অল্প বিরতি পেয়ে টয়লেট থেকে ঘুরে এলাম, কিংবা গরম কফির জন্য আবদার করে ফেললাম।
    গোল্ডিজি মাঝে মধ্যেই আসেন আমাদের কাছে আড্ডা মারতে। কফির জন্য জল চাপিয়ে এসে গোল্ডিজিকে জিজ্ঞেস করলাম — সঙ্গে কী খাবেন?
    ভদ্রতার করে উনি উত্তর দিলেন — কুছ নেহি!
    — আরে ধুৎ! ওসব নেকুপনা করবেন না তো! ঢাকাই পরোটা খাবেন?
    — পারাঠা? ঢাকাই মৎলব? 
    — হ্যাঁ। ঢাকা  কা না সুনা হোগা।
    —  বাংলাদেশ কা ক্যাপিটাল সিটি জো হ্যায়...
    — ঐটাই।
    — আচ্ছা। আপকা বাংলাদেশকো সাথ কোয়ি কানেকশন হ্যায়?
    — আগে ছিল। এখন নেই। সেই সূত্রেই ঢাকাই পরোটা আমাদের বাড়িতে ছোটবেলা থ্কেই বানাতে দেখেছি। খাবেন? বানাবো?
    উনি যথারীতি ন্যাকামি করতে লাগলেন, আমি ফুলস্পীডে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ময়দা মেখে ফেলে পরোটা বেলবার কাজে মন দিলাম। গোল্ডিজি নিজে রাঁধুনি হওয়া সত্ত্বেও রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলেন না, যে বিচিত্র পরোটা কেমন করে বেলতে হয়, কেমন করে ভাজে।
    বেলবার সময়ে কী কী দিতে হয় এর ভেতরে।
    মিনিট কুড়ি পরে বিজয়িনীর মতো পরোটা সার্ভ করে রন্ধনের ফীডব্যাক জানতে উদগ্রীব হয়ে রইলাম। 
    — আচ্ছা হুয়া, বঢ়িয়া হুয়া, ইতনা লেয়ার্স ক্যায়সে কিয়া...
    এসব বলেই উনি জানতে চাচ্ছিলেন, আমার ঢাকা কানেকশন কীভাবে।
    বললাম — আমার মা ও দিদিমা পূ্র্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে আসেন। পার্টিশনের বেশ কিছু বছর পরে। উঁহু, ওঁদের কাছে কোনও নথি ছিল না। নো লিগ্যাল ডকুমেন্টস। এবং ওঁরা ভারতবর্ষে নিজেদের আইনত রিফিউজি হিসেবে নথিভূক্তও করেন নি। রিফিউজি সার্টিফিকেট না থাকায় কোনও বিশেষ সুযোগ সুবিধাও পেলেন না, যেগুলো বরাদ্দ ছিল ইস্ট পাকিস্তান ডিসপ্লেসড পিপলদের জন্য।
    অর্থাৎ সেভাবে দেখতে গেলে আমি একজন ইল্লিগ্যাল ইমিগ্র্যান্টের সন্তান।
    কিন্তু, এখন এসব নয়, আপনি বলুন তারপরে কী হলো?
  • যোষিতা | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৯741662
  • গোল্ডিজি চিনিহীন ব্ল্যাক আরাবিকা কফিতে চুমুক দিতে দিতে মৌতাত করে বলতে শুরু করলেন পরবর্তী ঘটনাবলী।
    পরের দুটো দিন সম্পূর্ণ রেস্ট। খাও দাও ঘুমোও বেড়াও ফুল মস্তি। জুরিখের মত ঝকঝকে তকতকে শহর জার্মানিতে তিনি আর দেখেন নি। এখানে লোকজনের হাতে পয়সাও যে তুলনায় বেশি, তা তাদের পোশাক আশাক চালচলনে ফুটে উঠছে সর্বক্ষণ।
    ঐ বন্ধুরাই চাকরি ঠিক করে দিল। জুরিখ শহর থেকে কিছু দূরে রুয়েটি নামক এক মফঃস্বল শহরে পাকিস্তানি মালিকের ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট আছে। তার একজন রাঁধুনি দরকার অবিলম্বে। ব্যবসা খুব ভাল চলছে, ইন্ডিয়ান ফুডের ডিম্যান্ড বেড়েছে, অতয়েব গোল্ডিজি ওখানে গেলেই বিনা ইন্টারভিউয়েই চাকরি হয়ে যাবে। এবং হলোও তাই।
    রুয়েটি একটু শান্ত ফাঁকা ফাঁকা জায়গা। এদেশে বহুতল বাড়ি নেই বললেই চলে, কেবল রিফিউজি বা দরিদ্র লোকজনেরা বহুতল বাড়িতে থাকে, সস্তায় ভাড়া পাওযা যায় বলে। রুয়েটিতে একটাও বহুতল নেই, বড়জোর দোতলা কয়েকটা বাড়ি। স্থানীয়রা চুপচাপ শান্তিপ্রিয়, তবে বহিরাগত দেখলে একটু উৎসুক হয়ে পড়ে, যদিও তা মোটেও প্রকাশ করে না হাবে ভাবে।
    রেস্টুরেন্টটাই গোল্ডিজির বাসস্থান বনে গেল। ঘুম থেকে উঠে কাজে লেগে পড়ো। রেস্টুরেন্টের টয়লেটই তার টয়লেট। ভের থেকে সব রান্নার ব্যবস্থা রেডি করে, রান্না শেষ করতে করতে দুপুর হলেই এগারোটা বারোটা নাগাদ লোকজন খেতে চলে আসবে। তাদ্র সির্ভ করবার জন্য ফর্সা  রঙের সুন্দর দেখতে ওয়েটার আছে। এই ব্যাপার বুঝতে বুঝতে ওঁর বেশ কয়েক বছর লেগেছিল, মন মানতে চায় নি বলেই হয়ত বুঝতে দেরি হচ্ছিল।
    দুপুরের লোকজনের ভিড় পাতলা হয়ে গেলে সন্ধের রান্নার আয়োজন। ফের রান্না। রাতে সব বাসন মেশিনে ধুতে বসিয়ে, কিচেন ঝকঝকে করে ফেলে, ঐ রেস্টুরেন্টের মেঝেতেই বিছানা পেতে ঘুম।
    প্রথম মাসের শেষে পুরো বেতন হাতে মিলল না। ব্যাং অ্যাকাউন্ট নেই। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জন্য লিগাল কাগজ লাগে। সেটা যতক্ষণ না হচ্ছে, হাতে অতগুলো ক্যাশ পেলে যদি সব চুরি হয়ে যায়? তখন কী হবে?
    পাকিস্তানি মালিক মিষ্টি করে বুঝিয়ে দিলেন গোল্ডিজিকে।
    খাঁটি কথা।
    কিন্তু ওয়ার্ক পারমিট কবে হবে?
    সেটা সময়ের অপেক্ষা।
    টাকা কটা দেশে পাঠানো হয়ে গেল। পরের মাসেও ঐ একই গল্প। বেতনের অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশ পাচ্ছেন বা পাচ্ছেন না। একটু বেশি ক্যাশ চাইলেই মালিক বলছে, আরে, অত টাকা দেশে পাঠিয়ে দিলে নিজের জন্য রী রাখবে? আমি তো তোমার টাকা মেরে দিচ্ছি না। তোমার ঐ সামান্য কটা টাকা মেরে দিয়ে কি আমি বড়োলোক হয়ে যাব? আরও দুটো হোটেল আছে আমার। তাছাড়া তুমি তো বাইরে কোথাও বেরই হও না, খাচ্ছ দাচ্ছ ঘুমোচ্ছ থাকছ এখানে, তোমার আবার হাতে ক্যাশের কী দরকার বাপু?
    হক কথা। গোল্ডিজি কোত্থাও বের হচ্ছেন না। হাতে কোনও প্রপার ডকুমেন্ট নেই। জার্মানীর বৈধ কাগজের মেয়াদও পেরিয়ে গেছে। উনি ইল্লিগ্যাল। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। বেশি চেঁচামেচি তো দূরে থাক, পুলিশের কাছেও যেতে পারবেন না। পুলিশ কেন, বাইরের কোনও মানুষই জানে না, এই তল্লাটে একজন নতুন মানুষ এসেছে। সে মাসের পর মাস বাস করছে রেস্টুরেন্টের টেবিলের তলায় বিছানা পেতে। তাকে কেউ কক্ষনো দেখতে পায় নি। প্রায় দুবছর সে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়ায় নি।
    মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে ইংরিজিতে এমে পড়তে ঢুকল। নতুন মিলেনিয়ামবর্ষও পেরিয়ে গেছে দুবছর। জার্মানিতে আর ডয়েচমার্ক নয়, ইউরো হয়ে গেছে কারেন্সি। গোল্ডিজি আটকা পড়ে রইলেন রেস্টুরেন্টের ভেতরে। মালিক আর মাইনেও দিচ্ছে না প্রায় আটদশ মাস। 
    মিষ্টি স্বর কর্কশ হয়ে গেছে বহুদিন। চোখ পাকিয়ে ভয় দেখায় মালিক, বেশি তেড়িবেড়ি করলে সোজা রাস্তায় বের করে দেব। পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে। ডিপোর্ট করে দিলে ইহজন্মের মত ইয়োরোপে আসার স্বপ্ন মিটে যাবে।
    গোল্ডিজি এসব শুনে বুঝতে পারেন যে মুক্তির কোনও উপায় নেই। মাথা পাগল পাগল লাগে।
  • যোষিতা | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৮741663
  • সে সমযে ইন্টারনেট অ্যাকসেস বলতে কম্পিউটার ছাড়া গতি নেই। স্মার্ট ফোন বাজারে আসে নি। এলেও সুবিধে হতো না গোল্ডিজির। কারন সুইস সীম কার্ড পেতে গেলে চাই বৈধ নথি। ফলতঃ রেস্টুরেন্টের ল্যান্ডলাইন থেকে গোপনে বন্ধুবান্ধবদের জানাচ্ছিলেন এই সব বৃত্তান্ত।
    বল্ধুরাও বিশাল পণ্ডিত এই লাইনে। কেউ বলে, বকেয়া বেতনের আশা ছেড়ে নতুন চাকরি জয়েন করো, চাকরির অভাব নেই, তবে নতুন মালিকও এরকম করবে কি না তার গ্যারান্টি আমি দিতে পারব না। কেউ বলে, অতগুলো মাসের মাইনে ছেড়ে দিও না, মালিকের পায়ে ধরো, যদি দয়া মায়া থাকে প্রাণে, কিছু নিশ্চয় দেবে, মালিককে চটিও না, শত হলেও অন্নদাতা। আরেকজন বলে, পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে দাও, অ্যাসাইলাম সীকার হয়ে যাও, অ্যাসাইলাম না মিললেও সমস্যা নেই, আমরা চাঁদা তুলে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করছি, পরে মাসে মাসে আমাদের শোধ দিয়ে দিও সেই টাকা। কিছু কিছু অপশন বেশ লোভনীয়। কিন্তু গোল্ডিজির বয়স হয়েছে, স্মাগলার হবার মত ডেয়ার ডেভিলতায় আজকাল মন কেমন সাড়া দেয় না। হয়ত দিত, কিন্তু দেশে বিবাগযেগ্যা কন্যা, ছেলের ইদানীং বাইপোলার ডিজর্ডার ধরা পড়েছে, দেশে একবার যাওয়া চাই অবিলম্বে। ছেলের চিকিৎসা, ঘরের খরচ, বেশ কিছু চাকা দরকার। ফ্লাইটের টিকিটের দামও কম না।
    গোল্ডিজি শেষবারের মত মালিককে অ্যাপ্রোচ করলেন।
    লাভ হলো না।
     
  • যোষিতা | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৪০741664
  • প্রচুর টাইপো হয়েছে
  • যোষিতা | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:১৯741665
  • যেটা হলো, সেটাই ছিল অনিবার্য। রাতের দিকে জ্বর এলো। 
    গত সাত বছরে গোল্ডিজি সেভাবে অসুস্থ হন নি কখনও। হাল্কা সর্দি কাশি কখনও সখনও হয়েছে।
    জ্বর হওয়াতে গোল্ডিজির মনে জেঁকে বসল ভয়। কাজ করতে পারবেন তো তিনি পরদিন এই জ্বর নিয়ে? ওষুধ পত্র কে দেবে? যদি ডাক্তারের কাছে যেতে হয়? মেডিকেল ইনশিওরেন্স বাধ্যতামূলক এখানে, যেটা তাঁর নেই। চিন্তায় শরীর আরও খারাপ হতে লাগল। রেস্টুরেন্টের কাবার্ড থেকে এক দু ঢোঁক হুইস্কি নীট মেরে দিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে সেঁদিয়ে গেলেন টেবিলের নীচে।  প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, সকালে যদি সময়মত ঘুম না ভাঙে? দিনের বেলায় শোবার জন্য তো কোনও জায়গা নেই। 
    ইষ্টনাম অর্থাৎ মেরীর নাম জপ করতে করতে গোল্ডিজি একসময়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। 
    ঘুম একটু দেরিতেই ভেঙেছে, তবে মালিক তখনও দোতলার থেকে নীচে নামেন নি। জ্বর কতটা, সেটা বোঝা যাচ্ছে না, থার্মোমিটার নেই। হয়ত উনচল্লিশ কি সাড়ে উনচল্লিশ ডিগ্রি হবে। কাল রাতে যে চল্লিশের কাছাকাছি ছিল সেটা বুঝতে পারছিলেন আন্দাজেই।
    শরীর দুর্বল, কিন্তু বিশ্রাম নেবার উপায় নেই। মালিককে বললে কি আজ ছুটি দেবে? 
    বলে ফেলাই ভাল। শরীরের অসুস্থতা গোপন করেছেন এটা পরে মাসিক জানলে হয়ত রাগারাগি করতে পারে। মালিকের মেজাজ বুঝেই চলতে হয়।
    টুকটাক কাজ করতে করতেই মালিক এসে গেছে। বরাবরের মতই গম্ভীর। তবু সাহস করে গোল্ডিজি জানিয়েই দিলেন অসুস্থতার কথা।
    সামান্য কথাকাটাকাটি অবিশ্বাস ইত্যাদির পরে, মিনিট দশেকের মধ্যে চাকরিটি খোওয়া গেল। মানে পত্রপাঠ তখনই বিদায় নিতে হবে। বকেয়া বেতন তখন ত্রিশ হাজারেরো বেশি। একটি পয়সাও আদায় করা গেল না। সরাসরি গেটাউট করে দিল মালিক। 
    সবেধন নীলমণি বেঢপ নড়বড়ে দুচাকার সুটকেস হাতে মিস্টার গোল্ডি হার্নে অনেক অনেক দিন পরে খোলা আকাশের নীচে রাস্তায় এলেন।
    অদূরেই বাসস্টপ। কোথায় যাবেন এখন তিনি?
    বন্ধুদের ডেরায় জুরিখ শহরে? বন্ধুদের মধ্যে কারোকে রাজি করিয়ে এখানে এনে মালিককে যদি বুঝিয়ে সুঝিয়ে কিছু টাকা অন্ততঃ আদায় করা যায়। 
    সেরকমই ভেবে যাচ্ছিলেন জুরিখের দিকে। হঠাৎ মনে হলো জুরিখের আরবাইটসআমট মানে এমপ্লয়মেন্ট অফিসে জানালে কেমন হয়?
  • যোষিতা | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:৪১741669
  • একে ওকে তাকে জিজ্ঞাসা করতে করতে ঝোঁকের মাথায় পৌঁছেও গেলেন আরবাইটসামটের দপ্তরে। কী করবে ওরা বড়জোর? ডিপোর্ট করবার থেকে বেশি কোনও শাস্তি তো হবে না! তাতে অন্ততঃ দেশে ফেরার টিকিটটা হয়ে যাবে। এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে ওটাই বরং শ্রেয়। সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেছে। মান মর্যাদা বলে জীবনে কিচ্ছুটি নেই, সেইসঙ্গে উপার্জনও হচ্ছে না। ক্রীতদাসের মত জীবনের থেকে দেশে ফেরাই বুদ্ধিমানের কাজ।
    এইসমস্ত সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে গোল্ডিজির চোখের পাতা ভিজে এসেছিল।
    আরবাইটসামটের দপ্তরে উনি একাই এসেছেন, লাইন টাইন কিছু নেই। কাচের জানলার ওপারে কেরানীবাবু জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে সম্ভাষণ করে জানতে চাইল আগমনের হেতু।
    এযাবদ শেখা জার্মান ভাষার নলেজ গত দুবছরের অব্যবহারে জং ধরে গেছে। তবু তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করে গ্রামার টামার ঠিকঠাক ব্যবহার করে জানালেন, যে সদ্য চাকরি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে মালিক।
    কাচের জানলার ওপার থেকে তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দিলো, যে এটি ভুল জায়গা, চাকরি চলে গেলে যে দপ্তরে যেতে হবে, সেটি বীমার অধীনস্থ অন্য একটা অফিস। সেখানে গেলে ওরা গোল্ডিজিকে বলে দেবে কীভাবে বেকার থাকার সময়ে উনি বীমা কোম্পানী থেকে টাকা পয়সা পেতে পারেন মাসে মাসে। ওঁর বীমাকৃত মাসিক বেতনের সত্তর শতাংশ উনি মাসে মাসে পাবেন, চিন্তার কিচ্ছু নেই।
    - কিন্তু আমার বেতন তো বীমাকৃত নয়!
    - তা কেমন করে হবে? সবার বেতনই একটা ঊর্ধসীমা পর্যন্ত বীমাকৃত। আপনার স্যালারি স্লিপেই লেখা থাকবে।
    গোল্ডিজি এবার আরেকটু বুঝিয়ে বললেন, যে মালিক প্রায় দুবছর ধরে ঠিকমত মাইনে দেয় না। কোনওমাসে অর্ধেক, কোনওমাসে আরও কম, তারপরে গত প্রায় একবছর যাবদ মাঝে সাঝে হাতে একশ কি দুশো ফ্রাংক ধরিয়ে দেয়। তিনি হিসেব করে দেখেছেন, প্রায় তিরিশ হাজারেরো বেশি ফ্রাংক এখনও বকেয়া!
    - বলেন কী! আপনি বসুন। আমি ভেতর থেকে এব্যাপারে জেনে আসছি।
    অনতিবিলম্ব পরে একজন ঊর্ধতন আধিকারিক এসে গোটা ঘটনাটা গোল্ডিজির কাছ থেকে জেনে নিল। গোল্ডিজি সবই বললেন, কেবল ঐ টুক করে এদেশে ঢুকে পড়ার অংশটুকু উহ্য রেখে। ওদের অবশ্য সে নিয়ে আগ্রহও নেই।
    একজন এমপ্লয়ার তার এম্পলয়ীকে মাসের পর মাস, তেইশ মাসের কাছকাছি সময় বেআইনি ভাবে কাজ করিয়েছে, ট্যাক্স দেয় নি, আরও গোটা সাতেক ম্যান্ডেটরি ইনশিওরেন্সের প্রিমিয়াম দেয় নি, এগুলো মারাত্মক অপরাধ। তার ওপর রয়েছে জোর করে একজনকে দিয়ে কাজ করানো, তার স্বাস্থ্য বীমা পর্যন্ত নেই, দুর্ঘটনার বীমা নেই, দুরকমের পেনশন বীমা, ইনভ্যালিড হবার বীমা, বেকার হয়ে গেলে সেই ব্যাপারের বীমা, ইত্যাদি ইত্যাদি লম্বা লিস্ট। শহর, জেলা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে কর বাবদ। এ একেবারে যাচ্ছেতাই রকমের অপরাধ।
    - দেখি, আপনার এম্পলয়্মেন্ট কন্ট্র্যাট দেখি।
    - কাগজে কলমে তো কোনও কন্ট্র্যাক্ট হয় নি!
    - বুঝেছি, মৌখিক কন্ট্র্যাক্ট। সমস্যা নেই। এম্পলয়ারের নাম ঠিকানা ফোন নম্বর দিন, ওকে জবাবদিহি করতে হবে।
    ঘটনার পর্যায়ক্রমে গোল্ডিজির জ্বরটর সব ধাঁ হয়ে গেছে। কাঁচুমাচু হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তবে আমার এখন কী হবে?
    - আপনার জন্য আমরাই উকিল খাড়া করব, যদি ঐ লোক আপনার বকেয়া অর্থ ফেরৎ না দেয় এবং যাবতীয় ম্যান্ডেটরি কন্ট্রিবিউশন জমা না করে। এছাড়া গোপনে ব্ল্যাকে কাজ করিয়েছে, তার জন্যও শাস্তি পেতে পারে মালিক।
    গোল্ডিজি নিজে কোনও শাস্তি পাবেন না এরকম আভাস পেয়ে আরেকটু সাহস নিয়ে বললেন, তাহলে এখন আমার কর্তব্য কী?
    - আপনি আপনার অস্থায়ী ঠিকানাটা আমাদের জানিয়ে যান। আপনার জন্য একটা বৈধ ওয়ার্ক পার্মিট যত শীঘ্র সম্ভব ইস্যু করে দেওয়া হবে, সেইসঙ্গে আপনার একটা চাকরির ব্যবস্থা আমরা দেখছি।
  • যোষিতা | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:৫৪741670
  • - তারপর কী হলো গোল্ডিজি? আপনি অর্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা পেয়ে গেলেন?
    আমার রসিকতা বুঝে নিলেন গোল্ডিজি। বললেন - উঁহু, অত ইজি ছিল না ব্যাপারটা। কেস অনেকদূর অবধি গড়িয়েছিল।
    - কীরকম?
    গোল্ডিজি আবার বলতে শুরু করলেন, তার ইল্লিগ্যাল থেকে লিগ্যাল হবার গল্প।
  • গোবু | 202.8.***.*** | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:৩৭741671
  • বেশ হচ্ছে - চলুক !!
  • aranya | 2601:84:4600:5410:c952:f6cf:f07a:***:*** | ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৩৪741673
  • দারুণ 
  • kc | 37.39.***.*** | ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০১:১৬741674
  • এতো এখন অবধি একদম মিডল ঈষ্টের গল্প পচ্ছি, ভার্বাটিম। যো'দি আরও ...
  • যোষিতা | ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০২:১৩741675
  • দিন সাতেকের ভেতরেই গোল্ডিজির চাকরি এবং ওয়ার্ক-কাম-রেসিডেন্ট পার্মিট ক্যাটেগোরি B (Aufenthaltsbewilligung B)  ইশু হয়ে গেল। এক বছর এর মেয়াদ, বছর পূর্ণ হবার সময় আবার আরও এক বছর করে বাড়াতে হবে, তবে সেই সময়ে চাকরি থাকা চাই। এমনি করে টানা দশ বছর বাড়াতে পারলেই উনি Aufenthaltsbewilligung C পেতে পারবেন, যেটা পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট পার্মিট, টানা পাঁচ বছরের জন্য ইশু হয়। পাঁচ বছর শেষ হলে বাড়ানো যেতে পারে, চাকরি থাকার পূর্বশর্ত তখন আর থাকবে না, তবে অনেকেই আর এটা বাড়ানোর ঝামেলায় যায় না, তার আগেই নাগরিকত্ব নিয়ে নেয়। 
    কিন্তু সেসব তো পরের কথা। বকেয়া অতগুলো সুইস ফ্রাংক মাসিক ব্যাটা গাপ করে দিল, ভাবলেই উনি মুষড়ে পড়েন। 
    নতুন মনিব ভারতীয়। পটেল। তার দুটো ইণ্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট আছে, লোক দরকার বলে সে আরবাইটসামটকে জানিয়েছিল, লোক পেয়ে সে স্বস্তি পেয়েছে। এখন আর গোল্ডিজিকে লুকিয়ে টেবিলের নীচে থাকতে হচ্ছে না। পটেল ঘর দিয়েছে। একটা ঘরে ছজন মত লোক থাকে। তার ভাড়া পটেল কেটে নেবে বেতন থেকে, খাবার খরচ বাবদও কিছু কাটবে। লিখিত কনট্র্যাক্ট। সবরকমের বীমা, আয়কর দিয়ে কেটেকুটে বেতন মন্দ নয়। বছরে একমাস ছুটি এবং সপ্তাহে দেড়দিন করে ছুটি।
    গোল্ডিজি প্ল্যান করলেন ছুটিতে দেশে যাবেন। 
    কয়েক সপ্তাহ পরেই আরবাইসামট থেকে তলব। আইনি কীসব ব্যাপারে তলব। ঘরপোড়া গরুর সিঁদুরে মেঘ দেখলে যা যা হয় ওঁর তাই হলো, পেটগুড়গুড়, ঘন ঘন পাতলা বাহ্যি। কিন্তু যেতে তো হবেই।
    নির্দিষ্ট সময়ে সেই দপ্তরে পৌঁছনোর একটু পরেই তাঁ পূর্ববর্তী মনিবেরও আগমন ঘটল। সে অবশ্য একা আসে নি, সঙ্গে দুতিনজন স্যাঙাৎ নিয়ে এসেছে, যাদের দুজন গোল্ডিজির পূর্ব পরিচিত। এদের একদন সেই ফর্সা ওয়েটার, অন্যজন ঐ রেস্টুরেন্টেই কাজ করত। 
    যা বোঝা গেল, আজ বিচারের দিন।
    কোর্ট রুম কেমন দেখতে হয়, তা হিন্দি সিনেমা দেখে দেখে গোল্ডিজির নখদর্পনে। দুদিকে দুটো কাঠগড়া থাকে, একটা ডায়াসের ওপর জজের চেয়ার, তার হাতে মাঝারি মাপের হাতুড়ি থাকা আবশ্যিক, কালো কোট পরা বা সিল্কের কালো আলখাল্লা পরা দুজন উকিল থাকতে হবে। দর্শক, বাদী বিবাদীদের দলবল দর্শকাসনে বসে থাকে।
    আর ধর্মগ্রন্থ থাকতেই হবে। গীতাটাই বেশি পপুলার। ওটা হাতে নিয়ে, "ম্যাঁয় জো কহুঙ্গা সচ কহুঙ্গা, সচ কে সিবা কুছ নেহি কহুঙ্গা " টাইপের ওথ নিয়ে ডায়ালগবাজি শুরু হবার কথা। মাঝে মধ্যে বেশি চেঁচামিচি হলে জজ হাতুড়িটাকে টেবিলে দামদাম করে পিটিয়ে "অর্ডার অর্ডার" করবে, একদম শেষে রায় দেবে। সিম্পুল।
    এখানে জজ পুলিশ উকিল কিছুই নেই। ঐ অফিসেরই একটা কোণে চেয়ারে সোফায় ঘেঁষাঘেঁষি করে বসল দুই পক্ষ এবং আরবাইটসামটের দুজন চাকুরে।
    প্রাক্তন মনিব ভাল করে গুছিয়ে জার্মান বলতে পারে না, তাই সঙ্গে ইন্টারপ্রেটর এনেছে। এ সেই তিন নম্বর লোক গোল্ডিজি যাকে চিনতে পারেন নি।
    প্রথমেই গিম্ করে বোমা পড়ার মত বয়ান দিল প্রাক্তন মালিক।
    গোল্ডি হার্নে নামক এই লোকটাকে সে লাইফে এই প্রথম দেখছে। চেনে না যাকে, তাকে সে কাজে বহাল করেছিল, এসব আবার কী কথা!
  • যোষিতা | ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:২৩741676
  • গোল্ডিজি ভয় যেমন পাচ্ছিলেন, তেমনি রাগও হচ্ছিল ঐ প্রাক্তন মনিবের ওপর। ভয়টার পেছনে যুক্তি খাড়া করলেন যে, তাঁর যাবতীয় বক্তব্যই যদি মিথ্যে প্রমাণিত হয়, তাহলে তো চাকরি ওয়ার্কপার্মিট সমস্ত বাতিল হবেই, এমন কি এরা ওঁকে জেল জরিমানা ডিপোর্টেশন আরও কী কী করবে তার ইয়ত্তা নেই!
    এ সবই অবশ্য গোল্ডিজির কল্পনা। ভারতীয়রা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধরে আনতে বললে বেঁধে আনার পক্ষপাতী। আগেই অনেক কিছু বেশি বেশি ভেবে রেখে ভয়ের পাহাড় বানিয়ে রাখে। মূলতঃ এগুলো মধ্যবিত্তদের মানসিকতা, গোল্ডিজির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবার কথা নয়, এরকম একজন ডেয়ার ডেভিল লোক হুটহাট ঘাবড়ে গেলে তীরে এসে তরী ডুবেও যেতে পারে।
    ওদিকে মনিব পার্টির সঙ্গে সরকারের লোকেরা কথা বলছে শান্ত ধীর ভাবে। ধমক ধামক হুংকার চেঁচামিচি কিছুই হচ্ছে না।
    মনিব অস্বীকার করলেও, তার হাবে ভাবে, তার সঙ্গী স্যাঙাৎদের বডি ল্যাংগুয়েজ থেকে এটুকু ভালই বোঝা যাচ্ছিল যে গোল্ডি তাদের অপরিচিত নয়।
    মোট কথা সেদিন অমীমাংসিত রয়ে গেল সমস্যাটা। জল আরও গড়াবার পূর্ব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ঘন্টাখানেকের এই টাইমস্লট ফুরোতেই "যাও সবে নিজ নিজ কাজে" স্টাইলে যে যার কাজে ফিরে গেল।
    এর পরে গোল্ডিজিকে দীর্ঘদিন ঐ আরবাইটসামট থেকে কেও ডাকে টাকে নি। গোল্ডিজিও ঐ বকেয়া বেতনের আশা ত্যাগ করাই শ্রেয় মনে করলেন।
    এদিকে নতুন মনিবের রূপ একটু একটু করে প্রকাশিত হচ্ছে। এর ব্যবহার আগেরটার চেয়েও খারাপ। মাইনে দিচ্ছে, দিতে সে বাধ্য যেহেতু, কিন্তু সবসময় দাবড়ায়, খিস্তি করে, তেড়ে মারতে আসে, মারে না অবশ্য। মেজাজ তিরিক্ষে, থালা বাসন দুমদাম ছুঁড়ে মারে, রেস্টুরেন্ট বেচে দেবে বলে ভয় দেখায়। তখন গোল্ডিজি ও অন্য চাকরদের সিরিয়াস মুখে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকার নিয়ম। চেঁচামেচি শেষ হলে বোঝা যায় মালিকের রাগ পড়েছে। এগুলো প্রায়ই রাতের শেষ কাস্টমার চলে যাবার পরে হয়ে থাকে। বিজনেস কেন ভালো হচ্ছে না, সেই রাগে মালিক তার চাকরদের ওপর এরকম করে।
    কিন্তু ব্যবসা তো চমৎকার চলছে। দেড়শো জনের বসবার ব্যবস্থা যে রেস্টুরেন্টে, সেটা সারাক্ষণ হাউজফুল থাকার কথা নয়। ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের ব্যব্সার মধ্যে সীজনাল কিছু ফ্যাকটর থাকে। সামারে সামলানো যায় না কাজের চাপ। কিন্তু সেসব তো পরের কথা। সামার আসতে তখন বেশি দেরি নেই, মালিক তাড়া দিলো কাজে, বাসের ব্যব্সা আসছে, যাও যাও জলদি কাম করো, কামচোরদের নিয়ে আর পারা গেল না।
    রেস্টুরেন্ট দোতলায়, রাস্তার ওপরেই একটা সরু সিঁড়ি বেয়ে রেস্টুরেন্টে উঠতে হয়। নীচে একটা মাঝারি ভ্যান এসে দাঁড়িয়েছে, মাল এসে গেছে।
    পটেল তাড়া দিল, যাও যাও সামান ওপরে নিয়ে এসো।

    এক মিনিট গোল্ডিজি!
    আপনার কথা একবর্ণও পরিষ্কার হচ্ছে না। বাসের ব্যবসাটা আবার কোথা থেকে এলো? একবার বলছেন বাস, তারপর বলছেন ভ্যান, কিন্তু ব্যবসাটাতো রেস্টুরেন্টের, তাই নয় কি?
    আপনি একটু গুছিয়ে ধীরে সুস্থে বলুন।

    আরেবাবা, ঐ বাসের ব্যবসা আর রেস্টুরেন্টের ব্যবসা একই। বাসের ব্যবসায় লাভ বেশি অনেক।

    আমি বাধা দিতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম। বাস ইজ ইকুয়ালটু রেস্টুরেন্টের ব্যবসা কেমন করে হয় সেই কনফিউশন রিজলভ করার জন্য একটু ধৈর্য ধরেই শুনি নাহয়।

    ভ্যান ভর্তি করে ময়দা, চাল, ডাল ইত্যাদি জিনিস বস্তা ভরে ভরে আসে। একটা দুটো বস্তা নয়। বিশ কিলোর দুটো আটার বস্তা দুই দিকের কাঁধে ব্যালেন্স করে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠাতে হচ্ছিল। একবার নয়, বারংবার। চালের বস্তাও ঐরকম। গোটা তিনেকবার বস্তা ওঠানোর পরে গোল্ডিজির পিঠে কাঁধে যখন আরও বস্তা চাপিয়ে দিল গাড়ির খালাসি, গোল্ডিজি আর ব্যালেন্স রাখতে পারছিলেন না। হাঁটুর হাড়ে যেন কাঁটা বিঁধল, এইরকম অনুভূতি হলো, আটদশ ধাপ সিঁড়ি উঠে পড়ার পরে মনে হলো ব্যালেন্স হারিয়ে ময়দার বস্তাগুলো একদিকে কাৎ হয়ে যাচ্ছে, তবু পা ফসকাননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ব্যালেন্স রাখার চেষ্টা করলেও হাঁটু মুচড়ে গেল, হাতের মুঠো নিমেষে আলগা হয়ে সমস্ত বস্তা ছিটকে পড়ে যাচ্ছে নীচে, মালিক হায় হায় করে দোতলা থেকে চিৎকার করছে, বেশি জোরে নয়, শত হলেও রাস্তায় লোকজন আছে তারা দেখতে শুনতে পাবে, তাই মডারেট আর্তনাদ মালিকের। পা দুটো মুহূর্তের মধ্যে বেঁকে মুচড়ে ভাঁজ হয়ে গেল। সিড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ার মুহূর্তে গোল্ডিজি জ্ঞান হারালেন।

     
  • | ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:১৪741679
  • sad
    একসাথে পুরোটা পড়লাম। এটাকেও মাঝপথে ফেলে পালাবেন না যেন। 
  • যোষিতা | ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:৫৭741680
  • কর্মরত অবস্থায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে, দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় কর্মজনিত দুর্ঘটনা বীমা Berufsunfallversicherung. এটার প্রিমিয়াম গোল্ডিজির বেতন থেকে কাটা হয়েছে। ফলতঃ তড়িঘড়ি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে ওঁকে স্থানান্তরিত করা হলো জুরিখের বিখ্যাত প্রাইভেট হাসপাতালে যেখানে দুনিয়ার ধনীতম ব্যক্তিরা হাড়গোড়ের কঠিনতম সমস্যার জন্য গাঁটের কড়ি খরচ করে চিকিৎসার জন্য আসে। অলিম্পিকের অ্যাথলেটদের জন্যও এই হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। 
    টানা দুমাস সেখানে থাকতে হয়েছিল তাঁকে সেখানে, তাঁর এই দুমাসের বেতন দেবার দায়িত্বও বহন করল বীমা কোম্পানী। হাঁটুর মালাইচাকি গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছল, অস্ত্রোপচার চিকিৎসা ফিজিওথেরাপি ইত্যাদির পরে গোল্ডিজি যখন সুস্থ হয়ে রিলিজড হলেন, তিনি তখন অন্য মানুষ। দুমাসে চমৎকার জার্মান ভাষা চর্চা হয়েছে। আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। বিশ্রাম, চিকিৎসা ও পুষ্টিকর সুষম আহারের ফলে দীর্ঘদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। 
    সবসময় মনের মধ্যে যে ভয় বাস করত, সেটাও অনেক কম। 
    উনি আবার কাজে জয়েন করলেন।
    এই দুমাসে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে আরবাইটসামটে। গোল্ডিজি চিকিৎসাধীন থাকায় ওঁকে তারা ঘাঁটায় নি।
    তবে সুস্থ হয়ে ফিরে উনি খোঁজ নিতে গেলেন সেই দপ্তরে।
    যা জানা গেল, তা তিনটি বাক্যে সীমিত। আগের মনিবের বক্তব্যের অসংগতির কারনে তার মিথ্যা ভাষণ ধরা পড়ায় সে দোষ স্বীকার করেছে। এরজন্য তার বিশাল ফাইন হয়েছে, সেটা সে কিস্তিতে শোধ করবে সরকারকে। গোল্ডিজির বকেয়ে বেতনের ব্যাপারেও সে প্রথমে অস্বীকার করেছিল, কিন্তু প্রমাণ দেখাতে না পারায় তাকে সমস্ত বকেয়া বেতন নিয়ম মেনে বিবিধ ডিডাকশানের পর গোল্ডিজির ব্যাংকে জমা করবার আদেশ হয়েছে।
    এতো মানে যাকে বলে ডবল গুড নিউজ!
    গোল্ডিজি তাঁর ব্যাংক ডিটেইলস ঐ দপ্তরে জানিয়ে এলেন।
    ঠ্যালার নাম বাবাজি পদ্ধতির আশ্রয় নেবার ফলে শেষমেশ  পুরো বকেয়া অর্থই চুক্তিমত ফেরৎ পেলেন কয়েকটা কিস্তিতে।
    এই অবধি বলে হাসিমুখে তাকালেন গোল্ডিজি। সে হাসি বিজয়ীর হাসি। আইন যদি আরও কড়া পদক্ষেপ নিত, তাহলে ঐ লোকটির ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হয়ে যেত। যদিও তা হয় নি।
    উনি বললেন, তাহলেই বুঝুন, এদেশের আইন কত ভাল। কত মানবদরদী।
    আমি শয়তানের উকিল সেজে মিচকেমি করলাম — সেতো বটেই। তবে একটা প্রশ্ন, যদি আপনি টানা দুবছর বেকার থাকার পরে আরবাইটসামটে গিয়ে আপনার পরিস্থিতি জানাতেন, তখন কি ওরা আপনার পার্মিট, চাকরি, এসবের ব্যবস্থা করে দিয়ে আপনার স্টেটাস ইল্লিগাল থেকে লিগালে বদলে দিত?
    — হে হে, কী যে বলেন! তা কেন করবে?
    — কেন করবে না?
    — আহা, আপনি বুঝতে পারছেন না কেন, দুবছর কেউ বেকার হয়ে থাকবে কী করে? কে চালাবে তার খরচ?
    — বেশ। দুবছরটা কমিয়ে একবছর করে দিলাম, তবে প্রশ্নটা একই রইল। এবার বলুন।
    — একবছরও সাস্টেন করা মুশকিল।
    — তাহলে আরও কমাচ্ছি, ছমাস? আচ্ছা তিনমাস করে দিচ্ছি, এবার বলুন।
    — আপ কহনা কেয়া চাতে হেঁ?
    — চিন্তা করুন। চিন্তা করুন। ভেবে বলুন আপনার ওপরে আইন এত দরদ কেন দেখালো? আপনার মুখ দেখে?
     
  • যোষিতা | ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:০৪741681
  • হাতে একসঙ্গে প্রচুর কাঁচা টাকা এসে পড়ায় অনেকেরই মাথা ঘুরে যায়। বেশ কয়েকমাসের রোজগার এবং বকেয়া বেতনের অর্থে ব্যাংক ব্যালেন্স ফুলে ফেঁপে উঠেছে। কয়েকটা খেপে বিভিন্ন দালালি সংস্থার মাধ্যমে চড়া ফি দিয়ে দেশে প্রায় পুরোটাই পাঠিয়ে দিয়ে তবে নিশ্চিন্ত হলেন তিনি। দেশে ব্যাংকের টাকায় কতরকমের স্কীম আছে, কত সুদ দেয়। টাকা বেড়ে ওঠে। এখানে তো সুদ টুদের বালাই নেই। তারপরে ছুটি নিয়ে দেশে গেলেন। মাঝখানে কতগুলো বছর কেটে গিয়েছে। কেরালায় অনেকগুলো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যতই বিদেশবাসের চাকচিক্য থাকুক না কেন চেহারায়, কেরালার এয়ারপোর্টের কাস্টমস ঠিক বুঝে ফেলে যে কারা শ্রমিক শ্রেণীর লোক। তাদের ব্যাগেজ নিয়ে ঝামেলা তো করবেই, এমনকি ইমিগ্রেশনেও আলাদা করে প্রশ্ন করে, কোথা থেকে আসছ, ঐ দেশে কী করো, পকেটে বিদেশি মুদ্রা আছে কিনা। কাস্টমসেও এদের বেছে বেছে নাজেহাল করে, বিদেশিমুদ্রা কেড়ে নিয়ে তবে গ্রীন চ্যানেল দিয়ে বের হতে দেয়। 
    ওসব মাশুল দিয়েও মন খুশি থাকে ঘরে ফেরার আনন্দে। সুটকেস ভরে থাকে নানান সস্তা দামী উপহারে বা সুযোগ বুঝে বেচে দেবার মত সুন্দর লোভনীয় সামগ্রীতে।
    মেয়ে বড়ো হয়ে গেছে। ছেলে বাবাকে পেয়ে অনেকটাই সুস্থ আচরণ করছে। বৌ এরই মধ্যে জার্মানি থেকে পাঠানো টাকা জমিয়ে সেই দিয়ে বাড়িটার অনেক সংস্কার করেছে। বাড়ির পাশে যে ফাঁকা জমিটা পড়েছিল, সেটা নাকি বিক্রি হবে এমন খবর পেয়ে বৌ সেই জমিটুকু কিনবার আগ্রহ দেখিয়েছে। গোল্ডিজি শেষের দিকে যে মোটা অঙ্কের অর্থ পাঠিয়েছেন, সেটা দিয়ে ঐ জমি অনায়াসে কিনে ফেলা যাবে। এখন শুধু ওঁর মতামতের অপেক্ষা।
    গোল্ডিজি সানন্দে মত দিলেন। বৌকে বললেন, তুমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ওটা কিনে ফেল।
    ওঁর আরও ইচ্ছে ভবিষ্যতে একটা বুকশপ খোলার। বাজারের দিকে মেইন রোডের ওপর যদি কোনও দোকান বিক্রি টিক্রি হয়, খবর নিতে বললেন বৌকে। 
    সংসারে সুখ উথলে উঠছে। ওদের কাছে নিজের কষ্টের কথা কখনই ফাঁস করবেন না তিনি। এখন থেকে প্রত্যেক বছর একবার করে দেশে যাবেন সেই প্রতিশ্রুতি দিলেন।
    বৌ ইদানীং কবিতা লিখছেন। সেই সব কবিতা স্থানীয় পত্র পত্রিকায় একটা দুটো ছেপেছে। 
    অর্ধেক ছুটি কেরালায় কাটিয়ে দেখা করতে গেলেন মায়ের কাছে পুনেতে। বিবাহিতা বোনেরাও সেখানে এসে হাজির হলো। সবার উপহার আছে। সবাই কত আদর যত্ন করছে। মায়ের জন্য কিছু টাকা এনেছেন। মা আনন্দে কেঁদেই চলেছে। বোনেরা কে কত বেশি আপ্যায়ন করবে সেই নিয়ে হুড়োহুড়ি প্রতিযেগিতা লেগে গিয়েছে।
    স্বপ্নের মত কেটে গেল ছুটির দিনগুলো।
    আবার ফিরে আসা, আবার কাজের চাপ, পটেলের ধমক, রুমমেটদের সঙ্গে বসে গভীর রাতে অল্প করে এক দু ঢোঁক হুইস্কি, ছোটখাট ছুটি পেলে একটু কাছে পিঠে বেড়াতে যাওয়া, কিংবা সপ্তাহের যে বরাদ্দ দেড়দিনের অবসর, সেই সময়েও গোপনে অনয কোনও রেস্টুরেন্টে ব্ল্যাকে কাজ করে কিছু ক্যাশ টাকা রোজগার। এইভাবেই চলছিল দিন মোটামুটি নির্বিঘ্নে।
  • যোষিতা | ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৭741682
  • বাসের ব্যবসাটা কী এবং কেন সবচেয়ে বেশি লাভজনক, সেটা ক্লিয়ার করে দেবার সময় এসেছে। গোল্ডিজির সঙ্গে পরিচয় না হলে এই ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করা অসম্ভব ছিল। 
    আমার কৈশোর বয়স থেকেই এক আধজন চেনা পরিচিত আত্মীয় বা বল্ধুবান্ধবদের পরিবারের লোকজনকে ইয়োরোপ টুর করতে যেতে দেখেছি। সত্তরের দশকের শেষে পরিষ্কার মনে আছে মাথা পিছু পঞ্চাশ হাজার মত খরচ করে ইয়েরোপের প্যাকেজ টুর করানোর ব্যবস্থা ছিল। মেইনল্যান্ড ইয়োরেপের পাঁচসাতটা দেশে ঝটিকা সফর। পুরোটাই টুরিস্ট বাসে। নব্বইয়ের দশকে ইউরোস্টার টানেল ব্রিটেনের সঙ্গে মূল ইয়োরোপকে জুড়ে দিল অবিচ্ছিন্নভাবে। তখন এই টুর অপারেটরদের রমরমা আরও বাড়ল। লন্ডনটা হাব হয়ে গেল। ভারত বা দুবাই বা অন্য দেশ থেকে ইয়েরোপে বেড়াতে আসবার জন্য তখন লন্ডনে পৌঁছলেই হলো। তারপর বাসে করে গোটা পশ্চিম ইয়োরোপের বাছা বাছা দর্শনীয় স্পটে তারা নিয়ে যাবে। লাক্সারি বাস। ফ্রান্স থেকে সুইটজারল্যান্ডে ঢুকে লাঞ্চের টাইমে ধরা যাক পটেলের রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়াবে। মেনু আগে থেকেই ফিক্সড। বুফে সিস্টেমে হুড়োহুড়ি করে ভাত রুটি নুডলস ভাজাভুজি ডাল তরকারি চাটনি পাঁপড় চিকেন স্যালাদ যে যতটা পারল প্লেটে তুলে নিয়ে খাবে। ধাক্কাধাক্কি হবেই। যে যত আগে গিয়ে বেশি বেশি ভালো আইটেম তুলে নিতে পারবে, সে ভালটুকু পাবে। মিনিট পঁয়তাল্লিশ মত বাস দাঁড়ায়, তারপরে টুর অপারেটরের লোক গুণে গুণে এদের বাসে তুলে আবার রওনা দেবে রাতে যে শহরে তারা থাকবে সেই অভিমুখে। সেই শহরেও ডিনারের জন্য অনুরূপ কোনও ইল্ডিয়ীন রেস্টুরেন্টের সঙ্গে চুক্তি করা থাকে। এই পুরো লেনদেনটা হয় ব্ল্যাকে। কাগজে কলমে এইসমস্ত বাসের খদ্দেরদের প্যাকেজের লেনদেন ট্যাক্স অফিসকে জানানো হয় না। রেস্টুরেন্টের সাধারণ মেনুকার্ডের খাবার এরা খায়ও না। ওটা অন্য ডীল। সুইটজারল্যান্ডকে জবরদস্তি করে শেংগেন জোনে ঢোকানোর পরে বাসের উপদ্রব প্রচণ্ড বেড়ে গেল। গোল্ডিজিরা বাস সামলাতে হিমশিম খেতে লাগলেন। এদিকে মালিকের আনন্দ দেখে কে! যত বেশি বাস তত বেশি লাভ। এমনও হয়েছে যে দিনে চারপাঁচটা কি ছটা বাসকে খাওয়াতে হয়েছে। 
    অত খাবার তো একদিনে রাঁধা সম্ভব নয়। তাই বাসের সীজন শুরু হবার তিন চারমাস আগে থেকেই জোর কদমে রান্না শুরু হয়ে যায়।
    তবে এরও একটা নেগেটিব দিক আছে। স্যানিটারিবাবুদের আগমন হুট করে কবে ঘটবে, সেই ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকে মালিক।
  • যোষিতা | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:২২741703
  • গোল্ডিজির গল্প আপাতত স্থগিত রেখে আমার সঙ্গে গোল্ডিজির কীভাবে কখন আলাপ এবং বন্ধুত্ব হয়েছিল সেইটে বলে নেওয়া দরকার।
    এ জিনিস বলতে হলে আমার সুইটজারল্যান্ড যাত্রা কেমন করে হয়েছিল সেটা বলা জরুরি। সেই কাহিনি হয় একটু দীর্ঘ হতে পারে, তবে পটভূমিকাটা জানালে বুঝতে সুবিধে হবে। 
    সেল্ফ রেফারেন্সিং কে দেবার মত অবস্থানে থাকে, বা দেওয়া উচিত না অনুচিত, এসব ব্যাপারে আমার ফান্ডা কম। অতদূর লেখাপড়া আমি করি নি।
    যাইহোক, ভেঙে যাওয়া সোভিয়েত দেশ থেকে প্রথাগত শিক্ষার ইতি করে কোলকাতায় ফিরে বেশ কয়েকটা চাকরি করবার পরে আইটি নামক ইন্ডাস্ট্রিতে একটা নামকরা কোম্পানীতে ঢুকবার পরে ভেবেছিলাম পায়ের নীচে জমি পেয়েছি। বিদেশ ব্যাপারটা কেমন হয়, বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব সম্পর্কে অল্প বিস্তর ধারণা ছাত্রাবস্থাতেই হয়ে গেছল। তাই বিদেশে গিয়ে সেটল করবার কোনও উচ্চাকাঙ্খা বা লোভ আমার ছিল না।
    কিন্তু বিবিধ পরিস্থিতির প্রকোপে কোলকাতায় বাস করা প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে চলে গেছল।  এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে খুঁজতে দেখলাম চোখের সামনেই আইটির কর্মীরা হুটহাট বিদেশে যাচ্ছে প্রজেক্টের কাজ নিয়ে। নিশ্চয় এতে পয়সা বেশি পায়, কেউ ফিরে আসে, কেউ ফেরে না।
    সদ্য অনেক ঝড় ঝাপটা কাটিয়ে মোটামুটি স্থিতিশীল যে জমিটাকে মনে করেছিলাম পায়ের নীচে রয়েছে, সেটাতেও মৃদু কম্পন কখনও কখনও অনুভব করেছি। টাকার লেভে নয়, জাস্ট প্রাণে বেঁচে থাকার ইচ্ছেয় চেষ্টা করছিলাম দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবার, আর লড়াই করে করে প্রত্যেকটা দিন সারভাইভ করা যাচ্ছে না। মৃত্যুভয় জিনিসটা হয়ত একটা সময়ের পরে তেমন বেশি অ্যাড্রিনালিনের ক্ষরণ ঘটায় না, কিন্তু তিলে তিলে প্রতিক্ষণে অসম্মাণ এবং বিরুদ্ধ পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করতে করতে আদতে পাচ্ছি টা কী? ঐ পরিমানে শক্তিক্ষয় এবং মনের ওপরে যে চাপ পড়ছে, আমি কি সত্যিই তা ডিজার্ভ করি? খামোখা কোলকাতায় জীবনটা নষ্ট না করে একটা এমন পরিবেশে গিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতেই পারি যেখানে শান্তিতে শ্বাস নিতে পারব। মৃত্যুভয় তাড়া করবে না, বিদেশ তো অচেনা নয়, মোটামুটি চেনা, বাকি জীবনটুকু যদি অতি সাধারণ ভাবে শান্তিতে কাটানোর উপায় থাকে সেসবখানে, তবে চেষ্টা করতে ক্ষতি কোথায়?
    উঁহু, সুইটজারল্যাণ্ডের কথা আমি কস্মিনকালেও ভাবি নি।
    তখন তো আইটিতে বিশাল ক্রেজ চলছে আমেরিকা যাবার। দলে দলে শত সেনা চলেছে আমেরিকা পানে।
    আমেরিকার প্রজেক্টে কে কেমন করে ঢুকবে সেই নিয়ে বিশাল লবিবাজি চলছে কোম্পানীতে। তার একটু পরের ধাপে ইংলন্ড বা আয়ারল্যান্ড। কখনও সখনও জার্মানি। একেবারে কাছেপিঠের জন্য সিঙ্গাপুর সান্ত্বনা পুরস্কারের সামিল।
    কোম্পানীতে আমার ব্যক্তিগত অতীত অচিরেই কেমন করে যেন শব্দের গতিবেগে প্রচারিত হয়ে গেল।
    মেয়েটার একটা পাস্ট আছে। মেয়েটা অ্যাভেইলেবল। নানান জনে ইশারা ইঙ্গিত শুরু করেছিল। কেউ কেউ আমার বাড়িতেও আসতে চাইত। মনে করত, একবার বাড়ি আসতে পারলেই শুয়ে পড়তে আর কতক্ষণ। হ্যাঁ। ভারতবর্ষে কর্মক্ষেত্রে, কর্পোরেট অফিসে বাঙালি পুরুষ কোলিগরা, সিনিয়ররা এরকমই হয়।
    আমাকে এরা বিদেশের প্রজেক্টে পাঠাবে না, চাপে রাখবে, দুর্ব্যবহার করবে, কতক্ষণে ভেঙে পড়ে আত্মসমর্পন করি সেই চেষ্টা চালাবে। মানুষ কেমন হতে পারে, তা জানার জন্য একেবারে ক্ষমতাহীন হওয়াটা বড্ড জরুরি।
    আমি নিজে নিজেই ইন্টানেট ঘেঁটে আমেরিকার কোম্পানীগুলোতে জব অ্যাপ্লিকেশন করছিলাম। কিছু আবার এজেন্সীও ছিল।
    হঠাৎ হঠাৎ ইন্টারভিউয়ের ডাক পড়ত। টেলিফোনে ইন্টারভিউ। গভীর রাতে সেসব কল আসত।
    ইংরিজি সে সময়ে আমি খুবই কম জানতাম, উচ্চ মাধ্যমিকের সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজের পরে আর ইংরিজিতে কিছুই পড়ি নি। দীর্ঘকাল ইংরিজি শুনিও নি। অনেক শব্দ জানি না। আমেরিকান উচ্চারণ বুঝতেও সমস্যা হতো।
    গোটা দুই তিন ইন্টারভিউ এর পরে পাসপোর্ট নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছিল, রিনিউ করা এবং আরও কিছু জটিলতা ছিল। সেই সময়ে পাসপোর্ট অফিসের অভিজ্ঞতা আমাকে আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে বলল — ওরে, তুই পালা। এখানে জাস্ট মরে যাবি। শিগ্গিরি পালা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন