আমার ব্যক্তিগত মত হল আজ থেকে একশ' বছর আগের ভারতের রাষ্ট্রনায়কদের অমন পাইকারি হারে 'শুবা' বলা ছেলেমানষি হবে। তিনজনের রাষ্ট্রচিন্তার কথা বলছি। রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজি এবং নেতাজি সুভাষ।
সেসব দিনে টেলিভিশন ইন্টারনেট কিছুই ছিল না। নীলছবি দেখাও দুর্লভ ছিল।
আজ যেমন ঘরে বসে চাইলেই ইউক্রেন বা মণিপুরের দুর্দশা স্পষ্ট দেখতে পাই তখন তো আউসভিত্সের ভয়ংকর ঘটনা ইউরোপের মহাশক্তিরাও তেমন বুঝতে পারে নি।
আর ওই তিনজনেরই কলোনিয়াল ভারতে বসে আধুনিক গণতন্ত্রের স্বরূপ নিয়ে খুব স্পষ্ট ধারণা ছিল বলে মনে হয় না। তার একটা কারণ হতে পারে ব্রিটিশের নিজের দেশে ডেমোক্র্যাসি, উপনিবেশে অন্য চেহারা।
ফ্যাসিবাদের বিকরাল রূপ তখনও দুনিয়া দেখে নি, খালি ওদের তিনজনকে বকলে ধম্মে সইবে ?
গোড়ায় ওরা তিনজনই ইতালিতে মুসোলিনির আতিথেয়তা এবং বাগ্মিতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনজনেই ভেবেছিলেন অর্থনৈতিক পতন এবং রাজনৈতিক মাৎস্যন্যায়ের মাঝে এই একনায়কত্ব ওদের দেশে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
খেয়াল করুন, হিটলার ইলেকশনে জিতে এসেছিলেন। মুসোলিনী 'মার্চ টু রোম' বলে আধা ক্যুদেতায়।
আবার বলশেভিকরা মাইনরিটি হয়েও ভোটে জিতে নয় , অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন।
তিনটে ক্ষেত্রেই আধুনিক গণতন্ত্রের গঙ্গাযাত্রা হল।
সবচেয়ে আগে মোহমুক্ত হলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথমে রাশিয়ায় গিয়ে কন্ডাক্টেড ট্যুরে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যে জনতার অধিকার তাঁকে মুগ্ধ করল। যদিও রাশিয়ার চিঠির শেষ প্যারায় টোটালিটেরিয়ান সিস্টেমের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ পায়।
তবে ফেরার আগে 'ইজভেস্তিয়া' পত্রিকায় দেওয়া ইন্টারভিউতে কড়া সমলোচনা স্তালিন প্রকাশিত হতে দেন নি। ১৯৮৮ তে গর্বাচভের সময় বেরোয়।
আবিসিনিয়ার পরই রবীন্দ্রনাথ মুসোলিনির স্বতঃস্ফুর্ত সমালোচনা করেন। আফ্রিকা কবিতা লেখেন।
এর পরে বার্লিনে পাঠরত নীতিন্দ্রনাথকে চিঠিতেও উনি নাজি ফ্যাসিস্তদের ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। শুধু তাই নয়, অহিংসার পুজারী রবীন্দ্রনাথ রুজভেল্ট -চার্চিলকে চিঠি লিখে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে অনুরোধ করেন।
গান্ধীজি নিজের অহিংসার লাইনে কন্সিসিটেন্ট। উনি প্রবল হিংসার মোকাবিলাতেও খালি নৈতিক দিকের উপর জোর দেন।
সুভাষ নিজের ট্যাক্টিক্যাল লাইনে অনঢ়। একদিকে বন্ধু ইহুদী পরিবারকে চটপট আমেরিকায় পালিয়ে যেতে বললেন। অন্যদিকে মেইন ক্যাম্ফে ভারতের বিরুদ্ধে অপমানজনক বক্তব্যের প্রতিবাদ করলেও ওখানকার ইহুদী নিধন নিয়ে চুপ করে রইলেন, ওটা ওদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার!