এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • সত্যজিৎ রায় সমীপেষু (৩ ) – সপ্তম ইন্দ্রিয়

    Binary লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১৭ মে ২০২২ | ১৭২১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৪ জন)
  • ডেনমার্কে প্রথম যখন যাই , সেটা ২০০১ সাল । প্রথম তিন সপ্তাহ অপিসের ছত্রছায়ায় ছিলাম, তারপরে আমরা একটা একবেডরুম-প্লাস-লিভিং রুমের ফ্ল্যাট বাড়িতে উঠেগেলাম  ভাড়ানিয়ে।  সে অ্যাপারমেন্টটা কোপেনহেগেন ডাউনটাউনের কাছাকাছি অপেক্ষাকৃত পুরোনো পাড়ায়।  বিল্ডিংটাও পুরোনো, মূলতঃ কাঠের, উঁচু কাঠের ছাদ, পুরোনো ইউরোপীয় সিনেমায় যেরকম দেখা যায়, সেরকম পাল্লা দেওয়া জানালা , পাল্লাগুলো কাঠের ফ্রেমের ওপরে কাঁচ বসানো। জানালার নীচে হটপ্লেট মার্কা ইলেট্রিক্যাল হিটার। আমরা থাকতাম দোতালায় , চিলেকোঠা বাদ্দিলে বাড়িটা ছিল তিনতলা।  কাছেই একটা গির্জা ছিল।  সেখানথেকে সকাল আর সন্ধ্যে বেলা ঘন্টা শোনা যেত। শহরের মাঝখানে হলেও বড় রাস্তা থেকে একটু ভেতরে বলে একটু নিরিবিলি মতো ছিল জায়গাটা।  জানালদিয়ে মুখ বাড়ালে পঞ্চাশ মিটার মত দূরে বড় রাস্তার মোড়ে একটা পাব ছিল, তাতে সপ্তাহের শেষের রাত গুলোতে জোর হৈহল্লা চলত আর পরের দিন সকালে ট্যাংকার এসে পাইপে করে পাবে-র  কন্টেনারে ড্রাফট বিয়ার সাপ্লাই করত।  বড় রাস্তার শেষ প্রান্তে, মানে আমাদের বাড়িথেকে আধাকিলোমিটার মত হেঁটে একটা খুব বড় চত্বর, যার পোশাকি নাম কংগেন্স নিউট্রভ, সেখানে গ্রীষ্মকালে ফুলের বাগান আর কেয়ারী করা ঘাসের লন , আর শীতকালে আইস স্কেটিং রিঙ্ক । ডেন্মার্ক একটি  অতি মনোরম দেশ।  গ্রীষ্মকালে মিঠে রোদেলা দুপুরে কংগেন্স নিউট্ৰভে বেঞ্চিতে হাজারো টুরিস্ট , হটডগের ঠেলা গাড়ি থেকে ভাজা মাংসের সুগন্ধ , কিয়স্কের সাইডওয়াকে ধোঁয়া উঠা হটচকোলেটে হাতে মানুষের গুলতানি, গিটার বা স্যাক্সোফোন হাতে বাজনদার এইসব মিলে একটা মৌজি পরিবেশ।  

    যাইহোক , যে কথা বলছিলাম।  আমি আর সহধর্মিনী মিলে মাঝে মাঝে কংগেন্স নিউট্ৰভে একটা ছোট্ট রেস্টুরেন্টের সামনের জানালার ধারের টেবিলে বসে স্যান্ডুইচ খেতাম।  বিশেষ করে ছুটির দিনে।  তারপরে বাঁদিকের রাস্তা ধরে নিউহ্যাভেন ওয়াটার ফ্রন্ট ধরে হাঁটতাম।  পর পর লাক্সারি ইয়ট বা ক্রুজ জাহাজ নোঙ্গর করা থাকত।  জেটির ধার দিয়ে হরেক রকম ফেরিওয়ালা হাঁকাহাঁকি করত , ফুর্তিবাজ মানুষের ছোট ছোট জটলায় অট্টহাসি  শুনতে খারাপ লাগত না।  

    আর কোনো কোনো শনিবারে কংগেন্স নিউট্ৰভ থেকে একটা গলি মত রাস্তায একটা পাকিস্তানী দোকান থেকে দেশি মসলা পাতি, সবজি (পটল বেগুন এইসব আর কি) ফলমূল বাজার করতাম। মাঝে মাঝে ওখানে গরম সিঙ্গারা বা জিলিপিও পাওয়া যেত। হিন্দি সিনেমার ডিভিডি ভিসিডি-ও পাওয়া যেত সেই দোকানে। পাকিস্তানী মিঞা-র দোকান ছাড়াও সেই গলিতে কিছু নতুন/পুরোনো ইলেক্ট্রনিক্স জিনিষের দোকান ছিল।  পাঠকগণ মনে রাখবেন সেই সময় এন্টারটেইনমেন্ট বলতে ডিভিডি ভিসিডির রমরমা। ঘরে ঘরে পিকচার টিউবওয়ালা ঢাউস ঢাউস টিভি যার পুঁচকে পুঁচকে স্ক্রিন। মোবাইলফোনে শুধু ফোন-ই করা যায়।  ট্যাব ইত্যাদি বস্তু বাজারে আসতে  বহু দেরি।  অফিস ছাড়া বাড়িতে ইন্টারনেট কানেকশন অতি বিরল ও মহার্ঘ্য। এমনকি ছবিও রিলক্যামেরায় ছত্রিশ এক্সপোজারে তুলতে হয় , ডিজিটাল ক্যামেরা টেকনোলজি হামাগুড়ির পর্যায়ে ।  তো, আমি ওই গলির একটা দুটো ইলেক্ট্রনিক্স দোকানে মাঝে মাঝে ঢুঁ মারতাম। বাজার থেকে কম দামে কিছু দাঁওমারা যায় কিনা যাচাই করতে।  একটা ক্যামকর্ডার কেনার শখ ছিল প্রধানত।  আর একটা দোকানে অপটিক্যাল যন্ত্রপাতি বিক্রি করত।  সেখানে যেতাম, পকেট আর শখের সাথে সমতা রেখে টেলিস্কোপের খোঁজকরতে। সেই দোকানে মাঝে মাঝে একজন বয়স্ক মানুষকে একটা চেয়ারে বসে থাকতে দেখতাম।  একটা পুরোনো ধূসর শ্যুট , কালো টাই, প্রশস্ত কপাল, বয়স অনুমানিক পঁচাত্তর হবে।  ডেনিশদের তুলনায় চোখ নাক অত চোখাচোখা  নয়।  একটা ওয়াকিং স্টিকের ওপরে ভরদিয়ে প্রায় নির্বাক বসে থাকতে দেখেছি অনেকদিন।

    একদিন, সেটা শনিবার-ই হবে, ঐরকম দুপুরের দিকে দোকানে ঢুকেছি। একটা সেলেস্ট্রন একশ পঞ্চাশ মিলিমিটারের রিফ্র্যাক্টিং টেলিস্কোপ নাড়াচাড়া করছি, সেই বুড়োটা চেয়ার থেকে উঠে গুটিগুটি আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো
    -- তুমি কি অ্যাস্ট্রোনমির ছাত্র ? নাকি শখের ?
    পরিষ্কার ইংরেজি।  ডেনিশরা ইংরেজি বললে যেরকম সোজা সাপ্টা কথা বলে সেই রকম।
    -- আমি শখের।
    -- বা: বা: ভেরিগুড। শখের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আমার বেশ লাগে।
    -- হ্যাঁ , ওই আর কি , একটা ভাল অব্জারভিং টেলিস্কোপ কেনার খুব শখ কিন্ত দামে পোষাচ্ছে না।
    -- রুনদেতাম গেছো ? ** রুনদেতাম কোপেনহেগেন অবসার্ভেটরি
    -- হ্যাঁ  গেছি তো
    এইরকম কিছু এটা সেটা কথার পর আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে, -
     -- আমার কাছে টেলিস্কোপের চেয়েও অবাক জিনিষ আছে, দেখবে নাকি ?
    আমার মনে হল এইরকম যেচে পড়া ফেরিওয়ালা আমি আগে দেখেছি।  ব্যাংকের দাওয়ায় বসে থাকা এলআইসি এজেন্ট , পোস্টাপিসের বেঞ্চিতে বসে থাকা এনেসসি এজেন্ট , ট্রেনের টিকিটের লাইনে রিজারর্ভেশন দালাল ইত্যাদি ইত্যাদি।  সরাসরি বুড়োকে না করে দিতে পারতাম, কিন্তু কেন জানি একটা কৌতূহল হল।  বুড়োর চোখমুখ বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক দালাল বা মুরগি খোঁজা টাইপ নয়।  কোথাও একটা লুকোনো আভিজাত্য আছে।  আমি হ্যাঁ বলাতে , আমাকে হাতছানি দিয়ে পাশের কফি শপের টেবিলে বসতে বলে, বলল , পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছে।
    সেদিন আমার সাথে বৌ ছিল না , তাই রক্ষে, নইলে এইসব সিচুয়েশনে নির্ঘাত আমায় ঘেঁটি ধরে বাড়ির পথ ধরতে বলত।  আমি কিন্তু গেলাম, আর সত্যি দেখি বুড়োটা পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটা মাঝারি সাইজের ব্রিফকেস নিয়ে হাজির। ভেতরে থেকে যেটা  বের হল, সেটা এই ২০২২ তে এসে বলতে পারতাম ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট , কিন্তু সেই ২০০১ এ মনে হয়েছিল বড়সড়  ভিউ মাস্টার।  সেই যে ছোটবেলার খেলনা , ভিউ মাস্টারে চোখ রেখে মজার ছবি দেখা  যেত , সেই রকম।  অবিশ্যি এইটা আকারে অনেক বড়, এখনকার ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট-এর চেয়েও।  আর তাছাড়া ঘরের কোনায় রাখার জন্য চারটে সিগন্যাল পোস্ট সঙ্গে পনেরো ষোলোটা ডিভিডি তাতে বিভিন্ন বিষয়ের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ফিল্ম। সেই ২০০১ সালে ব্যাপারটা খুবই আকর্ষণীয় আর উত্তেজক লাগল আমার কাছে।  বুড়ো সাহেব ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে কিছু জ্ঞান দিয়ে  বললো, এটা নাকি সাধারন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি টেকনোলজি হেডসেট থেকে আলাদা। কথাটা এমনভাবে বলল, মনে হল হীরের সাথে জিরের তুলনা করছে । কেন, সেটা নাকি ব্যবহার না করলে বোঝা যাবে না।  আর স্বচ্ছতা অ্যাডজাস্ট করার একটা বোতাম , সেটা নাকি খুবই সেনসেটিভ , সাবধানে ব্যবহার করতে হবে।  

    সেই ২০০১ সালে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়েই ধারণা ক-অক্ষর গোমাংশ তার  আবার  হিরে আর জিরে।  নিয়ে নিলাম।  এক হাজার ডেনিস মুদ্রা গুনাগার দিতে হল (ডলারে দুশোর মত)  , বুড়ো সাহেব একটুও দরদামে রাজি হল না। বলে নাকি এই দাম কাঁচা বাদাম।

    ***
    পরবর্তী কাজ হল বাড়ি এসে আপাতত বৌ এর কাছ থেকে যন্ত্রটা লুকিয়ে রাখা।  নইলে এইসব ছাইপাঁশের জন্য সারা সপ্তাহের বাজার খরচ ব্যয় করেছি শুনলে সারা সপ্তাহ হরিমটর। বৌ বসার ঘরে ফোনে ব্যস্ত ছিল, ফাঁক পেয়ে আমার অফিস ডেস্কের ভেতরে চালান করে দিলাম ব্রিফকেসটা।  পুরো জেমস বন্ড সিনেমার স্টাইলে। তার আগে দেখলাম যন্তরটার ওপরে লেখা আছে , টেলি(প)স্কোপ।  

    এরপরে কাজ হল, বৌয়ের চোখে ধুলো দিয়ে ব্যবহার করে দেখা । পুরো একমাস সুযোগ হল না।  অফিস বাড়ি আর উইকেন্ডে-বাজার নিয়ে কেটে গেল।  তারপর পঞ্চম সপ্তাহে সহধর্মিনী ভর্তি হলেন ডেনিস ক্লাসে। শনিবারের সকালে দুঘন্টার ফাঁকা সময় হাতে এল।  টেলি(প)স্কোপ-এর চারটে সিগন্যাল পোস্ট বসলাম ঘরের চার কোনায়।  হেডসেট কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট করে, আন্টার্টিকা লেখা  ডিভিডি চাপলাম কম্পিউটারের ডিভিডি প্লেয়ারে।  তারপরে হেডসেট মাথায় দিয়ে মৌজ করে চেয়ারে বসলাম। ন্যাটিজিওর এন্টার্টিকা ভিডিও।  হেডসেট-এ চোখ রাখলে বাকি দুনিয়া গায়েব হয়ে যাবে। খালি আন্টার্কটিকার তিন ডায়ামেনশন ছবি।  সামনে,  দুপাশে , পেছনে। সঙ্গে স্টিরিওফোনিক ন্যারেশন। এখন যাদের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শিরস্ত্রনের সাথে পরিচয় আছে, তাদের কাছে এসব অবাক করার মতো কিছুই নয় , বরং এখন অনেক বেশী ক্লারিটি, অনেক বেশি বাস্তবধর্মী ছবি দেখা যায়।  কিন্তু আমি বলছি ২০০১ সালের কথা।  আমার মোটামুটি বিস্ময়ে হতবাক অবস্থা।  

    আসল ব্যাপারটা হল একটু পরে।  কতক্ষন দেখেছি মনে নেই।  এর মধ্যে ছবিটা আরেকটু পরিষ্কার করার জন্য ক্লারিটি বোতামে হালকা চাপ  দিয়েছি। হঠাৎ খুব ঠান্ডা লাগতে শুরু করল। আমি ঘরের ভেতর একটা লাল উলের সোয়েটার পরে ছিলাম। মনে হল খালি পায়ের তলায় বরফ , পা ডুবে যাচ্ছে । আমার সামনে অন্তহীন বরফ ভাসা  সমুদ্র। দাঁড়িয়ে আছি।  তাল রাখতে না পেরে বসে পড়লাম। মনে হল পাশের একটা বরফের দেওয়ালে হাত আটকে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখি চার ফুট মত  নীচে সমুদ্রের জল যেখানে পাড়ে মিশেছে সেখানে আন্টার্টিক সিন্ধুঘোটকের পাল ,আমার থেকে কুড়ি পঁচিশ ফুট দূরে। প্রায় দিগন্তে সূর্য।  অনেক দূরে একটা জাহাজ।  কোনো লাক্সরি ক্রুজ মনে হচ্ছে এত দূর থেকে। কিন্তু হাইপোথার্মিয়া ক্ৰমশঃ আমায় শরীর জমিয়ে দিচ্ছে। জ্ঞান  হারাচ্ছি।

    বৌয়ের প্রচন্ড ঠেলায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম।  তার আগেই বৌ মাথা থেকে হেডসেট-টা খুলে নিয়েছে। ওর চোখে মুখে রাগ , বিস্ময় কৌতূহল। দশ মিনিট ধরে নাকি বেল বাজাচ্ছে, আমি খুলছিনা দেখে , ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে খুলে, দ্যাখে, আমি মাথায় কিম্ভূত কি সব পরে চেয়ারে বসে গোঁ গোঁ করছি।  বাধ্য হয়ে সবিস্তারে সব বলতে হলো। প্রথমত: আমার মানসিক অবস্থা ঠিক আছে কিনা তাই নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করলেন। তারপরের প্রস্তাব হল, যেখান থেকে কিনেছি সেখানে যেন বিদেয় করা হয়। এর পরে আর তর্ক করার প্রশ্ন ওঠে না।  পরের শনিবারে আবার গেলাম সেই টেলিস্কোপের দোকানে। বুড়োটা নেই।  দোকানের লোকজন বললো বেশ কিছুদিন দেখছে না লোকটাকে।  এরপর দুতিন শনিবার গিয়েও খোঁজ না পেয়ে এক সহস্র ডেনিস মুদ্রা ফিরে  পাওয়ার আশা ছেড়েই দিলাম। এরপরেও অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে  দু-তিনবার যন্ত্রটা ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি।  হয় ডিভিডি এরর হয়েছে বা শিরস্ত্রাণ আর ঘরের কোনার সিগনাল পোস্ট অ্যালাইনমেন্ট কাজ করেনি। তারপর অনেক দিন অব্যবহার-এ পরেই ছিল।  দুবছর পরে বাড়ি বদলানোর সময় রিসাইকেল বিন -এ ফেলে দিয়ে এলাম অন্য জঞ্জালের সাথে।

    ***
    বছর তিনেক  পরে অফিসের ইন্টারনেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ এক নিউজিল্যান্ডিও টুরিস্টের আন্টার্টিকা ক্রউজ ভ্রমণের বর্ণনা পড়ে শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।  সেই টুরিস্ট লিখেছেন , আন্টার্টিকা ভ্রমণের তৃতীয়দিন বিকেলর দিকে জাহাজের ডেকে-এ দাঁড়িয়ে আছেন।  জাহাজ বোভেট দ্বীপের দক্ষিন উপকূল থেকে আধা কিলোমিটার দূর দিয়ে যাচ্ছে।  মূলত উপকূলবর্তী সিন্ধুঘোটকের পাল দেখার উদ্দেশ্য।  এই দ্বীপে কোনো মানুষ থাকার কথা নয়।  প্রথমত: জায়গাটা খুবই রিমোট , আর কোনো দেশের কোনো গবেষণা কেন্দ্র-ও নেই। কিন্তু তিনি স্পষ্ট দেখেছেন , পাড়ের কাছে একজন মানুষ।  লাল রঙের পোশাক পরা , এটাও উনি লিখেছেন।  যদিও অতদূর থেকে ঠিক নিশ্চিত নন তিনি।  তাছাড়া ক্যামেরা তাক করার আগেই মানুষটিকে আর দেখতে পাননি তিনি।

    সেই ভ্রমণ বর্ণনার তারিখ তেসরা মার্চ ২০০১।  ঠিক যেদিন আমি আমার পড়ার ঘরে শিরস্ত্রাণ মাথায় দিয়ে বসে ছিলাম।

    যেদিন নিউজিন্যান্ডীয় টুরিস্টের ভ্রমণ বর্ণনা পড়লাম, সেদিন রাতে প্রায় প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছি, হঠাৎ একটা কথা মনেপড়ে  ধড়মড়িয়ে উঠে বসতে  হল।  তেসরা মার্চ ২০০১ এর দিন দুই পরে একদিন বাঁপায়ের বুড়ো আঙুলে প্রচন্ড ব্যাথা হয়েছিল।  ডেনিস ডাক্তারবাবু দেখে প্রথমে বললেন ফ্রস্ট বাইট। তারপর  মার্চ মাসে বরফ ছাড়া কিকরে ফ্রস্ট বাইট হবে ব্যাখ্যা করতে না পেরে বলেছিলেন পুরোনো কোনো চোট-ও হতে পারে।  সেটা অবশ্য এমনিই সেরে গেছিল।

    ** উপসংহার
    আমার বন্ধু সুমিত কোপেনহেগেন উনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছিল সেই সময়। একদিন তার ল্যাবে গেছি দেখা করতে। ঢোকার মুখে ইউনিভার্সিটির দিকপালদের  ছবি।  প্রথম ছবিটাই ডেনমার্কের কালজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী নীলস বোর -এর। ১৯২২ সালে পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পান। ১৯৬২ সালে পরলোক গমন করেন।

    আরে !!!  এনাকে তো আমি চিনি।  এনার  কাছথেকেই তো টেলি(প)স্কোপ পেয়েছিলাম। বিদ্যুতের মত মাথায় খেলে গেল, যন্ত্রটার নামের আসল মানে - টেলিপোর্টালস্কোপ।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ১৭ মে ২০২২ | ১৭২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ১৭ মে ২০২২ ০৯:৪৩507750
  • আরেহ ব্যপক ব্যপক। হেব্বি পছন্দ হল এইটা। খানিকটা ন্যাড়াদা টাইপ। 
    অনেকদিন বাদে লিখলে। 
  • Binary | ১৭ মে ২০২২ ১০:২৫507755
  • wink
  • dc | 182.65.***.*** | ১৭ মে ২০২২ ১০:৩৪507756
  • দুর্দান্ত! এই সুযোগে নিলস বোরের সাথে এক ঝলক দেখাও হয়ে গেল, সে কি কম কথা? 
  • dc | 182.65.***.*** | ১৭ মে ২০২২ ১০:৩৬507757
  • এই সিরিজের পার্ট ওয়ান কোথায়? টই এর নামে ২ দেখতে পাচ্ছি। 
  • dc | 182.65.***.*** | ১৭ মে ২০২২ ১১:০৩507760
  • ধন্যবাদ। 
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:b0d9:dffb:bf89:***:*** | ১৭ মে ২০২২ ১৯:৪৮507787
  • বাঃ !!
  • Binary | ১৭ মে ২০২২ ২৩:৪১507794
  • angel
  • যোষিতা | ১৮ মে ২০২২ ০০:১১507795
  • একটু প্রেডিক্টেবল কিন্তু খাসা এবং সংযমও প্রশংসনীয়। অন্য কেও হলে টেলিপস্কোপ বারংবার ব্যবহার করে আরও আরও রোমাঞ্চকর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লেবু কচলানো কেস করে দিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন