সেই কত, কত্তো জন্ম আগে, কথা দিয়েছিলে-একদিন, অনেক অনেক চাঁদ পেরিয়ে-
দুজনে বসব পাশাপাশি, বাঁশিলইয়ের কূলে,
কত সূর্য, কত তারা, কত রক্ত হারিয়ে।
কথা ছিল, দুজনে বসব পাশাপাশি,
কেউ থাকবে না চারিধারে, নির্জন মালভূমি
আকাশে-বাতাসে ভাসবে লুকোনো যত হাসি,
ছলছলে কান্নার সুখে বাজবে ঝুমঝুমি।
তানপুরার জুড়ির তার যখন নেমে যাবে, থেমে যাবে
আস্তে আস্তে, ধীরে ধীরে চুপচাপ টুপটাপ রাত্তির
ছেয়ে, চৈতালি সুগন্ধী মহুয়া-মাতাল চাঁদ উঠবে,
গান গাইব আমি, জল কাঁপবে, বুক-গলা থিরথির।
বেহাগের ছুটের সুরেরা এসে বসবে, তিলক-কামোদে
গান্ধার, মধ্যমে বিছানো আসনে; অলকচূর্ণ বেয়ে
শিরশিরে বাসন্তী বাতাস-অন্যমনা স্নেহে, আমোদে,
তোমার আঙুল,কপালে উড়ো চুল দেবে সরিয়ে।
তোমার বাঁশি বাজাবে বাগেশ্রী, মা ধা নি ধা নি,
ঝিঁঝিঁর সেতার দেবে ঝংকার; জোনাকীর টিপ
পরা লাল সব পাথর-আমি, তোমার অন্যজন্মের রানী,
কাঁধে রাখব মাথা, গায়ে পদ্মকাঁটা, বুকের ভেতর ঢিপঢিপ।
সিংভূমি রিমিঝিমি হাওয়া, আকাশে রোহিণী, স্বাতী,
অরুন্ধতী-নাক্ষত্র আশীর্বাণী ঝরিবে অনিবার, শুভলগ্ন;
পিছনে পড়ে রইবে-যত ব্যথা, ক্ষত, ব্যাক্তিগত লাভক্ষতি,
একসাথে বসে দেখব - তারাদের মৃত্যু, পুষ্পবৃষ্টি, নবজন্ম।
সেসব কথার কী হল, বলো-সেইসব কানে কানে বলা
ফিসফিসে, ঘন নিঃশ্বাস মেশা, আতপ্ত, সুরভিত কথা-
ভুলে গিয়েছ, না? আহা, সেসব দিন কবে আসবে গো?
আমাদের কিন্নরজন্মে এসব অপূর্ণ আশা, অব্যক্ত ব্যাকুলতা... গন্ধর্বগন্ধে আকুল যত গোপন ব্যথা...
লবণাক্ত স্বাদে ভরে যায় মুখগহ্বর।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।