আলোচনাটা ডেলিকেটলি হ্যান্ডল না করতে পারলে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যাবে, কোনও লাভ তো হবেই না, ঝগড়ায় পৌঁছে গেলে কেস ফারাক্কা অবধিও গড়াতে পারে। এ ধরণের পরিস্থিতিতে আমি আগেও পড়েছি। আমাদের দুজনের মাতৃভাষা এক হলেও, দেশ যেমন আলাদা, তেমনি ভাবনা চিন্তার মধ্যেও বেশ তফাৎ আছে।
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা মনে যাই ভাবুক, মুখে প্রকাশ করবার সময় অনেক ঢেকেঢুকে বলে। বিশেষ করে মেয়েদের সমান সমান ভাবে কি না, সে ব্যাপারে মুখে খুবই ফরোয়ার্ড। ততদিন অবধি বাংলাদেশিদের যতটা চিনেছিলাম, তারা অনেকটাই চাঁচাছোলা ভাষায় কথা বলে এবং মেয়েদের সমানাধিকার জীবনের সবকটা ক্ষেত্রে দেবার ব্যাপারে অনিশ্চিত। বেশি রেগে গেলে ফারাক্কার জলবণ্টননীতিতে বাংলাদেশের ওপর ইন্ডিয়া কী পরিমান খচরামি করছে, তাদের ঘন ঘন বন্যার জন্য ইন্ডিয়া কতটা দায়ি, সেই সমস্ত অপরাধের বোঝা আমাকে নিজের কাঁধে নিতে হবে। আমি যথেষ্ট টায়ার্ড। ঘুম পাচ্ছে, কিন্তু লোভও রয়েছে, যদি লাস্ট মোমেন্টে পাইলট হয়ে টুপাইস কামাতে পারি, তাই লোকটাকে একটু বাজিয়ে নেবার অভিপ্রায়ে বললাম, বসুন বসুন, আমি এক মিনিটের মধ্যে আসছি।
ইউনিভার্সিটি হোটেলের বেশ ওপরের তলার প্রকাণ্ড করিডোরের একপ্রান্তে বসবার ব্যবস্থা। সিনিয়র সেই ভাইটি সেখানে বসে রইলেন, আমি দৌড়ে গিয়ে ঘর থেকে এক বোতল মদ ও দুটি গ্লাস নিয়ে এসে ভালোমানুষের মতো টেবিলের ওপর রাখলাম।
প্রথম গ্লাসটি খাবার সময় বেশি কথা বলা যায় না। ভোদকা শরীরে প্রবেশ করবার সময় গলায় একটু ধাক্কা তো লাগে, তখন চুপচাপ খেতে হয়। কথা ফোটে একটু পরে। সেসময়ে জানতাম ভোদকা খেলে লোকে মন খুলে গল্প করে।
কিছুক্ষণ কথা বলার পরে বোঝা গেল, ওনার হাতে তেমন ক্ষমতা নেই যাতে করে আমাকে পাইলট বানানো যায়। উনি নিজেই তো পাইলট, এই বিজনেসের সামান্য একজন বোড়ে, রাজা মন্ত্রী ঘোড়া এমনি নৌকোর লেভেলে হলেও হতো, এক্ষেত্রে ওসব রিকুয়েস্ট করা মানে সময় নষ্ট করা।
তবে কথা বলবার জন্য লোকটির সঙ্গ মন্দ নয়। মদ যে খেতে পারছি, এবং একা একা লুকিয়ে খেতে হচ্ছে না, সেটাই তো দারুণ একটা ব্যাপার। যে শহরে থাকতাম সেখানে বয়ফ্রেন্ডের শাসনে জীবন ওষ্ঠাগত। আমি সেই লোকটির সঙ্গে আনন্দে গল্প করতে লাগলাম। সেই আলোচনায় আমার বয়ফ্রেন্ডের কথাও উঠল, অল্প নিন্দে মন্দও হলো, এবং আমার বয়ফ্রেন্ড বাংলাদেশি জেনে তিনিও আমাকে কিছুটা হলেও বন্ধুত্বের চোখে দেখলেন, নিজের জীবনের কথাও টুকটাক শেয়ার করে ফেল্লেন।
সে রাতের আড্ডায় উনি বলেছিলেন যে লন্ডনে গেলে বাংলাদেশিরা অনেকেই বাংলাদেশ সেন্টারে থাকে। আগে থেকে চিঠির মাধ্যমে খবর দিয়ে যেতে হয়, খরচ নগন্য, এবং ঠিকানা পেম্ব্রীজ গার্ডেন্স বলে একটা জায়গায়। উনি বাড়ির নম্বরটা মনে করতে পারেন নি, কখনও বলছেন একুশ নম্বর বাড়ি তো কখনও চব্বিশ নম্বর। তবে বাংলাদেশি ছাড়া ওরা বাইরের দেশের কারোকে থাকতে দেয় না। মেয়েদেরতো থাকার কোনও স্কোপই নেই।
নেশা চড়লেও আমি ব্যাকগ্রাউন্ডে ভেবে যাচ্ছি থাকার জায়গা একটা লাগবে, জাস্ট রাতটুকুর জন্য। চেষ্টা করলে কি শুধু রাতগুলোর জন্য জায়গা জোগাড় করা যাবে না? এয়ারপোর্ট? রেলস্টেশন? ফুটপাথ?