এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ফেরার

    JAYASHREE KONAR লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ | ১০৪২ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)
  • হেমন্তের হিমহিম হাওয়া কেমন একটা ঝিমধরা  আলসেমি মাখিয়ে রাখে সকালগুলোতে। ধুলো আর কুয়াশা হাত ধরাধরি করে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে সূর্যকে। এমন ম্লান দিনগুলোয় বেজায় মনখারাপ হয়ে থাকে নীরার। ডা: নির্ঝরিণী মুখার্জী।  শহরের প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন মনোবিদ। কফির কড়া ধোঁয়ায় মেজাজটাকে সেঁকে নিতে নিতে সে চোখ বুলিয়ে নিলো সাক্ষাৎপ্রার্থী তালিকায়। নাতিদীর্ঘ তালিকায় পাঁচটি মাত্র নাম।ধীরেসুস্থে তাদের মানসিক আর শারীরিক ওষুধপথ্যের নিদান দিলো। ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে যাবার আগে অর্ক একটা চিরকুট হাতে ঢুকল।  অর্ক হলো দিনের শিফ্টের রিসেপশনিস্ট। খুবই দক্ষ আপ্যায়ণকারী, ঝকঝকে তরুণ। সুপ্রভাতের পর্ব মিটিয়ে জানালো 
    - ম্যাডাম, মিস্টার জনাথন এসেছিলেন আজ। গতসপ্তাহে আপনার কাছে  কাউন্সেলিং সেশন ছিল।  দেখা করতে চাইলেননা,  শুধু এই চিঠিখানি রেখে গেছেন। 
    - মিস্টার জনাথন।  হুম।  
    খানিকক্ষণ ভ্রু কুঁচকে চিন্তা করলো নীরা।  মনে পড়লো।  এসেছিলো বটে জনাথন  দিন কয়েক আগে। হ্যালুসিনেশনের ঘটনা।  সে নাকি ভবিষ্যতের মানুষ।  সমান্তরাল ভুবন থেকে টাইম ট্রাভেল করতে করতে এসে পড়েছে। গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্সের মতো কূট তত্ত্বের কচকচি শুনেছিলো নীরা পেশাদারি ধৈর্যের সঙ্গে। মৃদু হেসে নীরা অর্ককে বললো 
    - আচ্ছা, রেখে যান।  দেখে নেবো। 
    হাত বাড়িয়ে চিরকুটটা নিলো নীরা। মাথা নেড়ে চলে গেলো অর্ক।  
    জনাথনের ঘটনাটা আরো একটা কারনে নাড়িয়ে দিয়েছিলো নীরার মন। এখনো নীরা মনে করতে পারে সেদিনের কথোপকথন। 
    - বলুন মিস্টার জনাথন, আপনার আর কী মনে হয় ?
    - বড্ড ভয় হচ্ছে ম্যাডাম, যদি ফিরে যাবার ফর্মুলাটা সত্যি আর মনে না পড়ে !
    - ভয় নেই, ঠিকই মনে পড়বে !
    অভ্যস্ত ভঙ্গীতে অসত্য আশ্বাস দিয়েছিলো নীরা। 
    - আর মনে না পড়লেই বা কী মিস্টার জনাথন ? আমাদের এই দুনিয়া কি খুবই খারাপ?
    - আমার পার্টনার আর আমার তিনমাসের ছেলেটা ! তারা যে অপেক্ষা করে আছে ! এর মধ্যেই তো সাতটা মাস  কেটে গেছে, মানে ওদের হিসেবে বছর নয়েক।  
    বিড়বিড় করে কীযেন  হিসেবে ডুবে গেলো জনাথন।  আর চমকে উঠেছিল নীরা। জনাথন কী সূত্র ভুলেছে সেকথা তুচ্ছ কিন্তু স্বাভাবিক চেতনার  এই প্রান্তিক অবস্থানেও সে ভোলেনি তার আপনজনদের কথা।  জাগতিক মায়ার দোহাই দিয়ে অস্বীকার করেনি তার দায়িত্ব। জরৎকারু মুনি হোক কিম্বা শাক্য সিদ্ধার্থ কত অবলীলায় ত্যাগ করেছেন স্ত্রী সন্তানকে বোধ আর বোধির টানে। জিষ্ণুওতো  একবারের জন্য তাকায়নি পেছন ফিরে নীরার দিকে ।  
    - ম্যাডাম, ফর্মুলাটা যে আমায় মনে করতেই হবে !
    সম্বিৎ ফেরে নীরার। 
    - হ্যাঁ , নিশ্চয়ই।  আপনি এই ওষুধগুলো নিয়ম করে খান এক সপ্তাহ।  আর রিলাক্স করুন একটু।   
        খচ খচ  করে কয়েকটা দুশ্চিন্তা কমানোর আর ঘুমের ওষুধ লিখলো নীরা। 
    - মিস্টার জনাথন, আপনি সামনের সপ্তাহে আরেকবার আসবেন দয়া করে। আজ আর নয়।  
    বিদায় জানিয়ে চলে গিয়েছিলো জনাথন।  
    বুক খালি করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো  নীরা।  আলগোছে  তুলে নিলো চিরকুটখানি।  বিস্ময়ের হিলহিলে স্রোত বয়ে গেলো তার মেরুদন্ড বেয়ে।  এও কী সম্ভব ! জীবনের পাকদণ্ডী বেয়ে উঠতে উঠতে জিষ্ণুকে সে কবেই পেছনে ফেলে এসেছে অথবা জিষ্ণু তাকে  ! জিষ্ণু রসায়নে চোখ  ধাঁধানো ফল করার পর মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়য়ের গন্ডী টপকে পারি জমিয়েছে বিদেশে। 
     নীরা তখন সবে স্নাতক। নীরার হাজার  অনুরোধ উপরোধ এমনকি তার  দু’মাস অন্তঃসত্ত্বা হবার খবরও আটকাতে  পারেনি  জিষ্ণুকে। অনাগত সেই সন্তানের আর পৃথিবীর আলো দেখা হয়নি।  নীরাও আস্তে আস্তে গুছিয়ে নিয়েছে তার একার জীবন।  কিন্তু জনাথন কেমন করে জানতে পারলো সেকথা !
    এই তো! সে স্পষ্ট করে লিখে গেছে 
    - ম্যাডাম, ধন্যবাদ। আমি ফর্মুলাটা মনে করতে পেরেছি।  ফিরে যাচ্ছি আমার জায়গায়। যাবার আগে আপনাকে একটা উপহার দিয়ে যাচ্ছি ।   ডা: জিষ্ণু বসুর ঠিকানা আর যোগাযোগ নম্বর। এই লিখে গেলাম। ইচ্ছে হলে যোগাযোগ করবেন। বিদায়। 
    নিজেকে শান্ত করলো নীরা। মহাবিশ্ব , আলোকবর্ষ পেরিয়ে যদি ফিরে আসা যায় তাহলে দুএকটা সমুদ্র আর গিরিখাত পেরিয়েও ফিরে আসা যায়। জিষ্ণু ফিরে আসবেনা বলেই গিয়েছে হয়তো।  যদিবা সে ফিরেও আসে তাদের সেই সন্তান ! ধীরে ধীরে ভবিষ্যৎ মানুষের চিঠিটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করলো নীরা। জানলা খুলে টুকরোগুলো উড়িয়ে দিলো ঘোলাটে আকাশের বুকে। জনাথনের মতো ফিরে আসতে আর কতজনই বা চায় ? জিষ্ণুরা  চিরকাল মুক্তি চেয়েছে।  তাই আজ মুঠো খুলে মুক্তিই দিলো নীরা।   নারীরা যে মুক্তিও দেয় !
    ----

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বুড়ো হাবড়া | 42.***.*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৩০501826
  • বেশ লেখা । 
    "- মিস্টার জনাথন।  হুম।  " আমার মনে হয় এ লাইনটা হয়ত না থাকলেও চলত I আর কারো ঠিকানা খোঁজার জন্য কল্পবিজ্ঞানের চরিত্রের দরকার ছিল কি ? অনেক সময় নিতান্ত কাকতলীয়ভাবে মিলে যায় হারিয়ে যাওয়া কারও ঠিকানা ৷  কোনো কমন ফ্রেন্ডের সূত্রে বা ইত্যাদি I আসলে টাইম ট্রাভেল ব্যাপারটা আত্মস্থ করতে একটু অসুবিধা হয় , সেইজন্যই বলছি ।
  • JAYASHREE KONAR | ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৪০501827
  • যথার্থ বলেছেন। তবে ঐ বৃষ্টি ভেজা দিনে চেপে রাখা অভিমান আর আঙুল কিলবিল করলে  মা হয় আর কী ! খেরোর খাতা ভরে ওঠে।
  • dc | 122.164.***.*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৪৮501828
  • দারুন ভালো। 
  • বুড়ো হাবড়া | 42.***.*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ ২২:২৭501829
  • আমরা অনেক কাল্পনিক ঘটনাক্রম ভেবে রাখি,  ফিরে এলে কীভাবে ফেরাব সেই নিয়ে, যাদের জন্য অভিমান তারা অবশ্য স্রেফ ভুলে যায় ৷ 
     
     বাই দা ওয়ে, আপনি আঙুল নিসপিস করার কথা বলতে চাইছেন সম্ভবত ।
  • bhanga gala | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০০:১৮501834
  • ধুসস্ হেইডা আবার অ্যাকটা লিখা হইল । রাগ অভিমানের পালা হইল মাত্তর ৷ ল্যাখিকার স্যাই তিনি যদি ফ্যারেন কুনো সময়  তাইলে ল্যাখিকার লাথি খাইবেন .. এইটুকুন কইবার লাইগ্যা অ্যাত্তোবড় লিখা ৷
  • bhanga gala | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০০:২৪501836
  • জোকস অ্যপার্ট, বেশ ভালই লিখেছেন ৷
  • bhanga gala | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০০:৩৭501838
  • অ্যাপার্ট*
  • JAYASHREE KONAR | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:৫৩501839
  • হে হে,,,, ঠিক ই বলেছেন আপনারা, চড়, লাথি এসব প্রয়োগের জন্য নিসপিস করা  আমার মনের বিকৃতিই এই ভাট উদ্গারণ করেছে বোধহয় .....
  • অন্ধকারে কিছুদিন | 42.***.*** | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০২:১৩501840
  • এহ্ গান্ধীর দেশে, বুদ্ধের দেশে জন্মে চড়, লাথি !! ছ্যা ছ্যা ! মধুর করে ডেকে এনে একদিন বিষ খাইয়ে দিন ।
  • JAYASHREE KONAR | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:০৩501841
  • @ অন্ধকারে কিছুদিন , ভালো বাতলেছেন।.. .গরলে সরল সমাধান !
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন