বেচারা ঈশ্বর! সর্বশক্তিমান অথচ একা, একাকিত্বের উত্তম ও একমাত্র উদাহরণ। ঘর নেই, বাড়ি নেই, আত্মীয় নেই, পরিজন নেই- আছে কেবল দায়িত্ব, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের দায়িত্ব। জীব-অনুজীব-জড় পদার্থের হিসেব-নিকেশ; পাপ-পুণ্যের। নেই কোন বিশ্রাম। ঐশী ক্ষমতার বলে নিজের শ্রান্তিকে দূরীভূত করার এক অনন্য গুণ আছে বলেই তিনি ঈশ্বর, আর ঠিক তাই তিনি সদা জাগরুক বিশ্রামহীন ক্লান্ত পথিক। যার কোন গন্তব্য নেই, নেই কোন শুরু। কেমন অদ্ভুত ব্যাপার! বৃত্তাকারে বৃত্তবন্দি! সর্বত্র তার জয়জয়কার অথচ নিজের সৃষ্ট স্বর্গ-নরকের সুখ কিংবা যন্ত্রণা ভোগ করার নেই কোনো অধিকার। এ যেন বিশাল অট্টালিকার নির্মাণ শ্রমিক; নিজের সৃষ্ট কর্মের সৌন্দর্য ভোগ করার অধিকার রয়েছে, ফল ভোগের নয়!
হায় ঈশ্বর যদিও গীতায় তিনি স্পষ্ট উচ্চারণ করেছেন যে তিনি ফল ভোগের নিমিত্তে কর্ম করেন না এবং ঐ সকল কর্মীকে তিনি সর্বোত্তম বলে স্বীকার করেন যারা নিষ্কাম কর্মী। আদতে কোন কর্মই কি নিষ্কাম হতে পারে? ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হেতু স্বীকার করছি তিনি কেবল কর্ম করেন সৃষ্টির রক্ষার্থে, কেবল নিষ্কাম কর্ম করে থাকেন। কিন্তু জীবাত্মা কখনো কি নিষ্কামী হতে পারে? নিষ্কাম কর্মের শপথই তো এক ধরনের কামনা, মোক্ষ লাভের কামনা, মুক্তির মার্গ , পরমাত্মার সাথে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
তাহলে শূন্য বলে কি কিছু আদতে সম্ভব? সৃষ্টির মধ্যে নিজের বহিঃপ্রকাশের তত্ত্ব আবার পরমাত্মার স্বাতন্ত্র্য- এ তোমার কি রূপ লীলা প্রভু!
ঈশ্বর নিজেই সবচেয়ে বড় নাস্তিক, কারণ তিনি নিজের সৃষ্টিতে বিশ্বাস করেন না!