
Goutam Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোননির্জনতা কাটিয়ে ফের মেতে উঠুক শিক্ষাঙ্গন
ভাইরাসের আতঙ্কে আর কতদিন গৃহবন্দী থাকবে ছাত্রসমাজ?
করোনা ভাইরাস এক বছরেরও কিছু সময়কাল প্রায় গোটা বিশ্বকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে রেখেছে। গত বছর যখন যাব যাব করছে শীত, ঋতুর হিসেবে বসন্ত ছিল সমাগত, গাছে গাছে এসেছিল নতুন কুঁড়ি, নতুন পাতা। উদাসী হাওয়া বইছিল উত্তরের মাঠঘাট-বনজঙ্গল-পাহাড় জুড়ে, ঠিক তখন থেকেই এই ভাইরাসের আতঙ্কে একপ্রকার গৃহবন্দি মানবসমাজ তথা ছাত্রসমাজ। একটাই বার্তা ছিল এই ভাইরাস মোকাবিলা করতে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকতে হবে এবং মানসিকভাবে জোটবদ্ধ হয়ে যথাসম্ভব পৃথক থাকতে হবে। না হলে একে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলো একযোগে জোরকদমে এই ভাইরাস প্রতিরোধে প্রচার চালিয়ে গেছে এবং যথাসাধ্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। আমাদেরও সচেতন থাকা এবং আলাদা থাকা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। বহু বেসরকারি ও বহুজাতিক সংস্থা তাদের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিল। এর ফলে কর্মব্যস্ত জীবনে এসেছিল নিরবচ্ছিন্ন অবসর যাপনের সুযোগ। বঙ্গসমাজ অখণ্ড অবসর যাপনের উপায় খুঁজতে ছিল দ্বিধাবিভক্ত। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় শিশু-কিশোরদেরও একপ্রকার বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত ছিল বাড়িতে সর্বদা অতন্দ্র প্রহরায় অন লাইনে পড়াশোনার কড়া নির্দেশ। আলাদা থাকার সুযোগ করে দিতেই বিভিন্ন রাজ্য সরকারের মতো আমাদের রাজ্যেও বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু পড়াশোনা বন্ধের কথাটা বলা হয় নি। অন লাইন ক্লাশের মাধ্যমে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত অনলাইন পড়াশোনার নতুন ধারণা এসেছিল। কিন্তু পরিকল্পনা এবং বাস্তবতার মধ্যে ছিল আকাশ জমিন ফারাক। একটু পর্যালোচনা করা যাক।
শিক্ষাক্ষেত্রে পরিকল্পনা মাফিক পঠন পাঠন জারি হোক
অতিমারি পরিস্থিতিতে পঠন পাঠন সংক্রান্ত পরিকল্পিত নীতি নির্ধারণ করার বাস্তবতাকে এখন আর উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। লকডাউন শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের মার্চ মাসে। লেখাটা যখন লিখছি তখন ২০২১ এর মে মাস। এই এক বছরে তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। দূর্ভাগ্য সমস্যার সমাধান তো হয়ই নি, বরং বেড়েছে উত্তরোত্তর। কোভিডে একের পর এক আক্রান্ত হয়েছে মানুষ। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। কোভিড হাসপাতালে তিলধারণের জায়গা ছিল না এবং এখনও নেই। সেফ হোম খোলা হয়েছিল। সেখানেও মানুষের ভিড়। তারপর শুরু হয়েছিল বিধিনিষেদের পালা। মাস্ক ব্যবহার, ঘন ঘন হাত ধুয়ে নেওয়া। তার মধ্যেই স্কুলগুলিতে তালা ঝুলেছিল। ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি থেকে বেরনো বারণ। ক্লাসরুমে জমে গিয়েছিল ধূলোর আস্তরণ। স্কুলচত্বরে জন্ম নিয়েছিল আগাছারা। মাঝেমধ্যে স্কুলে ফিরেছেন শিক্ষক শিক্ষিকারা সামাজিক অ-শিক্ষা সম্পর্কিত সরকারী কাজে। তাঁদের মনের মধ্যেও জমাট বেঁধেছিল একরাশ মেঘ। সেই মেঘের দিকে তাকিয়ে আনমনা ছিলেন তাঁরাও। টানা ভেবে গিয়েছেন কখন, কতক্ষণে, কতদিনে শেষ হবে এই দুরবস্থা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে খুলল স্কুল। প্রথম দফার করোনা পরবর্তী নব্য স্বাভাবিকতায় বিধিনিষেধ মেনে খুলল স্কুল। কিন্তু সে শিক্ষাঙ্গন যেন সদ্যোজাত শিশু। হবে নাই বা কেন? নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই হইহই করে স্কুলে এল, অনেকে আবার আতঙ্কের জেরে এবং সুযোগসন্ধানীরা স্কুলমুখো হল না তখনও। আরও কয়েকদিন দেখে নেওয়ার অপেক্ষায় রইলেন একশ্রেণীর অভিভাবক। এর মধ্যেই স্বাস্থ্য দফতর জানিয়ে দিল ভয়ের কিছু নেই, শুধু মানতে হবে বিধিনিষেধ। বিধিনিষেধ মেনে শুরুও হল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস। কোথাও কোথাও ছাত্রছাত্রীরা ব্যাপক পরিমাণ ভিড় করল। কোথাও আবার হাজিরার সংখ্যা ছিল কম। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করল। স্কুলে স্কুলে বাড়তে শুরু করল ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। কিন্তু বিধি বাম। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার দ্বিতীয় দফার আক্রমণ। আবার বন্ধ হল পঠন পাঠন। এবং কি আশ্চর্য্য, বিধানসভা ভোটের কর্মযজ্ঞ চলে এলে সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হল শিক্ষাব্যাবস্থা। এমনকি সরকারের শিক্ষাদপ্তর অন লাইন ক্লাশের কোন বার্তাও দিল না এই দফায়। আবারও বন্ধ হয়ে গেল শিক্ষাঙ্গন গরমের ছুটি এগিয়ে আনার নামে।
অতিমারি পরিস্থিতিতে শিক্ষার অধিকার আইন ভুলুন্ঠিত
ধীরে ধীরে প্রায় সব বাঁধনই খুলে গেল। অফিস কাছারি, দোকান বাজার, সিনেমা, রঙ্গমঞ্চ, বাস, ট্রেন, মেলা, উৎসব, এমনকি ভোট। খুলল না কেবল ইস্কুল। পঠনপাঠন ছাড়া অন্যান্য সব কাজ চলেছে। শিক্ষকদের কাজ ছিল মাসে দুই তিন দিন গিয়ে মিড-ডে মিলের সামগ্রী অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া, শিক্ষাবর্ষ শেষে নতুন ভর্তি ইত্যাদিতে যুক্ত থাকা। কিন্তু যে কাজের জন্য স্কুল তা সম্পূর্ণই বন্ধ৷ স্থানীয় এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্ষেপ করে বলছিলেন নবম শ্রেণির ছাত্রদের রেজিষ্ট্রেশন উপলক্ষে ছেলেদের খোঁজে ইস্কুলের পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে গিয়ে জানা গেছে অনেকেই বাইরে কাজ করতে চলে গেছে বাবা, কাকা, দাদাদের হাত ধরে। বেশ কিছু নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অভিভাবকের বক্তব্য ঘরে থেকে কী করবে? ইস্কুল নেই, লেখাপড়া নেই, ছেলে পাওয়া গেল, বিয়ে দিয়ে দিলাম। জাতিধর্ম নির্বিশেষে স্কুল বন্ধ থাকার মোক্ষম প্রভাব মেয়েদের জন্য বিয়ে আর ছেলেদের জন্য খাটতে যাওয়া। বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্যে ঘর হতে শুধু দুই পা ফেললেই এই পরিস্থিতি, কিন্তু ইস্কুল খোলা নিয়ে কোনও কথা নেই। শিক্ষার অধিকার আইন বলে একটি জবরদস্ত আইন এ দেশে স্কুল শিক্ষায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছিল। বর্তমানে অতিমারি পরিস্থিতিতে সেটি সম্পূর্ণ ভূলুণ্ঠিত।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য কেন রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকারের তালিকায় আসবে না?
অতিমারির সন্ত্রস্ত পরিবেশে প্রথম দফার লকডাউনে বন্দি সময়ের বাঁধন শিথিল হতে না হতেই দেশ জুড়ে বিভিন্ন দাবিতে মানুষ পথে নেমেছিলেন। দেশের একটি অংশে লাখো লাখো কৃষক তাঁদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছেন। চাকরির নিরাপত্তার দাবিতেও মানুষ পথে নেমেছেন। কেবল ‘ইস্কুল খোলো' বলে কোনও আন্দোলন হয় নি। কেন হয় নি তার কারণ বোধহয় সমাজ, রাষ্ট্র, নেতা-মন্ত্রী কর্মিবৃন্দের কাছে অজানা নয়। বাচ্চারা বাচ্চাই, মানুষ নয়। তাদের ভোট নেই এবং তারা নিজেরা দাবি তুলতে পারে না। তাই তাদের শিক্ষা নিয়ে মাথাব্যথা নেই, স্বাস্থ্য নিয়ে মাথাব্যথা নেই। স্বাস্থ্যের মতোই শিক্ষা কোনও অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে না। পড়ে না বলেই অতিমারি ও লকডাউনেই শুধু নয়, তথাকথিত সব সামাজিক প্রয়োজনেই সব থেকে আগে উৎসর্গ করা হচ্ছে ইস্কুলটাকে। রাজনৈতিক দলের সভা থেকে শুরু করে পুজো, যাত্রাপালা, মায় পুলিশ ক্যাম্প পর্যন্ত সবরকম দরকারে ইস্কুল তো আছে। ভারতের শিশুদের স্বার্থের প্রতি, তাদের অধিকারের দিকে দৃষ্টিপাত না করে কাল্পনিক ভারতমাতার আরাধনার চেয়ে বড় প্রবঞ্চনা এবং আত্মপ্রবঞ্চনা আর কী হতে পারে?
স্মার্ট ফোন, নিয়মিত রিচার্জ কি সত্যিই অলীক স্বপ্ন?
আশি ভাগ ছেলেমেয়েই অনলাইন ক্লাসের বাইরে। অতিমারি পরিস্থিতিতে শিক্ষা সংক্রান্ত আলোচনা শুধু অনলাইন বা দূরদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষাতেই কেন্দ্রীভূত। এটা কিন্তু সকলেই জানেন যে, এই সুবিধা অধিকাংশ পরিবারে নেই৷ এই অনলাইন ও অফলাইনের খেলাতেই আবারও শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাট বৈষম্য এসে গেল। কেন জানি না, রাষ্ট্র এটাই ধরে নিয়েছে যে, ইস্কুল এক ধরনের বড় মাপের কোচিং ক্লাস মাত্র। কয়েকটি বিষয় গিলিয়ে দিলেই যথেষ্ট। শিক্ষার অধিকার আইন প্রান্তিক বালিকাটিকেও স্কুলে আনার জন্য গোটা ব্যবস্থাকে উদ্যমী করেছিল, কিন্তু সরকারি স্কুলের পরিসরটুকুও যখন রইল না, তখন কিসের অধিকার? যেখানে আর্থিক অনটনে শিশুটিকেও উপার্জনে নামতে হচ্ছে সেখানে স্মার্ট ফোন, তার নিয়মিত রিচার্জ, এ সব অলীক স্বপ্ন নয় কি? আমি যে গ্রামীণ স্কুলে কর্মরত সেখানে গ্রামে অভিভাবকের সঙ্গে দেখা হলে একটাই প্রশ্ন করেছেন এবং করছেন কবে স্কুল খুলবে? বহু পরিবারেই মা-বাবা দু’জনেই কাজে যান, বাড়িতে দেখিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। ছেলেমেয়েরা চূড়ান্ত অনিয়মে এ দিক ও দিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে ইস্কুলের আশেপাশে ম্লানমুখে কিছু ছেলেমেয়ে ঘুরে বেড়ায়। অত্যন্ত গরীব। পরিবার দিন আনে, দিন খায়। তাদের জন্যই স্কুল। কিন্তু তাদেরই আজ প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিছু কাগুজে কাজ চলছে যেখানে ছাত্রছাত্রীরা পরিসংখ্যানমাত্র। এ রাজ্যে স্কুলশিক্ষা প্রধানত সরকারি স্কুলের উপর নির্ভরশীল। এটাও সত্য যে, নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদেরই এখানে সংখ্যাধিক্য। স্কুলের পড়াশোনার উপরেই এদের শিক্ষা টিকে আছে, পাঠ্য বিষয় আয়ত্ত করার জন্য স্কুল ছাড়া এদের গতি নেই। নিয়মিত স্কুলে আসায় পড়াশোনার সঙ্গে যে সম্পর্ক তৈরি হয় সেটি নষ্ট হয়ে গেছে।
বিদ্যালয়ে উপস্থিতির ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশিকা প্রয়োজন
টিউশন এমনিতেই স্কুলশিক্ষার কোনও বিকল্প নয়, তার উপর লকডাউনের আর্থিক পরিস্থিতি টিউশনের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করছে। এই শিক্ষাবর্ষ সম্পূর্ণ নিষ্ফলা। কেবল তা-ই নয়, আগের পড়াগুলো ভুলিয়ে দেওয়ার পক্ষেও যথেষ্ট। ধাপে ধাপে শিক্ষার যে গতি, তা বাধাপ্রাপ্ত হলে আবার মন বসানো যথেষ্ট কঠিন। সমাজকর্তাদের চোখে শিক্ষকরা বহুকাল আগেই জাতির কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন। এই বিপর্যয়ের দিনেও কাজ করার সুযোগ ছিল প্রচুর। প্রয়োজন ছিল একটু চিন্তাভাবনার। সরকারকেও অত ভাবতে হত না, কেবল শিক্ষকদের এবং সমাজের অন্যদের কাছে জানতে চাইলেই তাঁরা পথ বাতলে দিতেন। এককালের সমাজবন্ধু শিক্ষকের লড়তে না পারার কোনও কারণ ছিল না, যদি তাঁর ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেত। তা তো হলই না, উপরন্তু, অভিযোগ, বসে বসে মাইনে নিচ্ছে। আবার এটাও বাস্তবতা শিক্ষক-শিক্ষিকারা আছেন, অথচ ছাত্র নেই। বস্তুত এক শ্রেণীর মিডিয়ার প্রভাবে শিক্ষকদের সঙ্গে সমাজের একটা অস্পৃশ্য-প্রায় বিচ্ছিন্নতা গড়ে দেওয়ার চমৎকার ব্যবস্থা চলছে যার ফল হতে পারে সুদূরপ্রসারী। অবশ্যই ইস্কুল খোলার মধ্যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা আছেই। কিন্তু চিন্তা-ভাবনা করলে, উদ্যোগী হলে, এ বাধা দূর করা নিশ্চয়ই সম্ভব। সরকার কঠোর নির্দেশ জারি করুক ৭৫ শতাংশ উপস্থিত না থাকলে ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, সংখ্যালঘু ভাতা ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা পাবে না। বিদ্যালয়ে ছাত্র- ছাত্রীদের উপস্থিতি সুনিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল পরিকল্পনা করুক। ডি আই অফিসে ছাত্র- ছাত্রীদের শ্রেণী অনুযায়ী উপস্থিতির তথ্য প্রতি মাসে ওষুধ এবং মিড ডে মিলের মত পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হোক। শিক্ষকেরা তো চেযার টেবিল বেঞ্চকে পড়াবেন না?
বিদ্যালয়স্তরে সচেতনতাই এখন পরম বন্ধু
স্কুল খুলুক। কঠোরভাবে মেনে চলা হোক কোভিড বিধিনিষেধ। স্কুল শুরু হওয়ার আগেই সব স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করুক। অভিভাবকদের জানানো হোক যাতে অসুস্থ অবস্থায় কোনও পড়ুয়াকে স্কুলে পাঠানো না হয়। ছাত্রছাত্রীকে স্কুলে পাঠানোর আগে কী কী করতে হবে তা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ সব অভিভাবককে জানিয়ে দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে স্কুলগুলিতে তৈরি হোক সচেতনতা আর সাবধানতার বিশেষ ব্যবস্থা। স্কুল শুরু হওয়ার আগেই প্রত্যেকটি স্কুলের ক্লাসরুম থেকে শুরু করে শৌচাগার স্যানিটাইজ করা হোক নিয়মিত। স্কুলচত্বর দূষণমুক্ত করার জন্য জঞ্জাল পুড়িয়ে দেওয়া হোক। স্কুলে রাখা হোক স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। যেখান থেকে হাত দূষণমুক্ত করে নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা প্রবেশ করতে পারবে স্কুলে। সেই সঙ্গেই স্কুলে রাখা হোক মাস্ক। কেউ মাস্ক ছাড়া স্কুলে প্রবেশ করলে যাতে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক সরবরাহ করা যায়। এত কিছুর পরেও পরিস্থিতি যে পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে তা বলা যাবে না। একটা বড় অংশের ছাত্রছাত্রী মাস্ক ছাড়াই স্কুলে আসবে। দল বেঁধে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাবে তাদের। স্যানিটাইজারের ধারেকাছে আসবে না বহু পড়ুয়া। শহর থেকে শুরু করে গ্রামের একাধিক স্কুলে এমনই ছবি দেখা যাবে। তাই শিক্ষাঙ্গন খুললেও, আবারও স্কুলের ঘণ্টা শুনে মন উদ্বেল হলেও, দেখা হলেও বন্ধুদের সঙ্গে সরকারি নির্দেশিকা মানতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আবারও খারাপ হতে পারে। সচেতনতাই এখন সবচেয়ে বড় বন্ধু। সাবধানতার বিধিনিষেধ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে সবাইকেই। আপাতত আমাদের যেটা ঠিক করতে হবে তা হল এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করব, না কি স্রোতে গা ভাসিয়ে দেব?
জয়ন্ত ভট্টাচার্য | 117.2.***.*** | ২৯ মে ২০২১ ০৯:২৪106542একেবারেই বাস্তব কথা। কিন্তু পথ এবং পন্থা নিয়ে সম্পূর্ণ একমত ন।।
আন্তর্জাতিক ও আন্তঃরাজ্য যাতায়াতের ওপর বিধিনিষেধ এনে বাকি সব কিছু স্বাভাবিক করা হোক।
অনলাইন এডুকেশনের ভাঁওতাবাজি বন্ধ হোক।
dc | 122.174.***.*** | ২৯ মে ২০২১ ১০:০০106553অনলাইন শিক্ষা এখন বিশেষ জরুরি হয়ে উঠেছে। অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে কিভাবে এডুকেশান সার্ভিস ডেলিভারি করা যায় সে নিয়ে প্রচুর চিন্তাভাবনাও হচ্ছে। আমার মেয়ে আর তার বন্ধুরা গত বছর থেকে মাইক্রোসফট টিম এ পড়াশোনা করছে। গত বছর ওদের স্কুল থেকে টিম এর লাইসেন্স নিয়েছে, এখন ওদের সব ক্লাসই টিম এ হয়। সব স্টুডেন্টরা সকালবেলা অনলাইন হয়, তারপর ক্লাস চলে। চেন্নাইতে প্রাইভেট টিউটররাও বেশীর ভাগ জুম বা গুগল মিটস এ ক্লাস নিচ্ছেন, পেমেন্ট হচ্ছে গুগল পে র মাধ্যমে বা অনলাইন ট্রান্সফার।
চেন্নাইয়ে কিছু স্কুল, যেমন পদ্ম শেষাদ্রি (PSBB) এন্ড টু এন্ড অনলাইন পড়াশোনা চালু করছে, অর্থাত ক্লাস থেকে শুরু করে বইপত্র সব অনলাইন হবে, পরীক্ষা, ইভ্যালুয়েশান ইত্যাদিও অনলাইন হবে, রিপোর্ট কার্ডও পেরেন্টদের ইমেল করে দেওয়া হবে। আরও কিছু স্কুলে এরকম সিস্টেম তৈরি হচ্ছে।
এ তো হলো প্রাইভেট স্কুলগুলোর কথা। তামিল নাড়ু সরকারও অনলাইন পড়াশোনার ওপর জোর দিচ্ছে। এ বছর তামিল নাড়ুর রাজ্য বাজেটে সবথেকে বেশী অ্যালোকেশান পেয়েছে এডুকেশান ডিপার্টমেন্ট, প্রায় ৩৫ হাজার কোটি। তামিল নাড়ু সরকার অনলাইন এডুকেশান পোর্টাল বানানোর কথা ভাবছে, যেখানে টিচাররা ছাত্রদের ইভ্যালুয়েট করবে, আবার ছাত্ররাও টিচারদের ইভ্যালুয়েট করবে, আর পুরো বছরের শিক্ষা অনলাইনে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
অনলাইন শিক্ষা হল ন্যাকড়া জড়িয়ে চোদার মতন। দুপক্ষই প্রচুর গা ঘামাবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হবে না। তার থেকে টেক্সট বই পড়ে নিলেই বেটার কাজ হয়। কিন্তু, ঐ যে কিছু একটা হচ্ছে দেখাতে হবে, সেইজন্য এইটা চালিয়ে যাওয়া। বছরের শেষে একটা অ্যানালিটিকাল প্রশ্ন বা একটা কড়া ভাইভা নিয়ে ক্লাসের বেশিরভাগের হাল যা বোঝা যাচ্ছে, অফ লাইন পড়ানো হলে তারা পাশ করত না। ক্রমশঃ পরীক্ষার মান কমিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আল্টিমেটলি জিনিসটা ঐ ধোঁকার টাটি হচ্ছে। বিশ্বাস না হলে ছাত্র ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে দেখতে পারেন।
এর পাশাপাশি আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে। অনলাইন পড়ানোর মাধ্যমে বিভিন্ন শর্ট কোর্স, মাইক্রো ক্রেডিট কোর্স, ইত্যাদি উঠে আসছে, পৃথিবীর যেকোনও প্রান্তের থেকে ছেলেমেয়েরা সেই কোর্সগুলো করে নিজেদের ক্রেডিট কমপ্লিট করতে পারে। এর ফলে মিক্স অ্যান্ড মাচ করে বাজারে তৎক্ষণাৎ ডিমান্ড আছে এরকম কিছু সাবজেক্ট খাবলা খাবলা পড়ে কোর্স কমপ্লিট করার প্রবণতা বাড়ছে। এর ফলে মূল বিষয়ে সার্বিক এক্সপোজার সেইভাবে হচ্ছে না। ঐ স্পেশালাইজড টেকনলজি যখন উঠে যাবে, তখন এদের চাকরি পাওয়ার প্রভূত সমস্যা হবে। যেটা কোর বিষয়গুলো ভালো করে পড়লে হত না। কোর থেকে যে ভিত হত তার উপর দাঁড়িয়ে স্পেশালাইজড বিভিন্ন বিষয় সহজে শিখে নেওয়া যেত।
dc | 122.174.***.*** | ২৯ মে ২০২১ ১১:১৩106556কিছুটা দ্বিমত আছে :-)
অনলাইনে পড়াশোনা অনেকদিন ধরেই হচ্ছে। নানারকম মডেলও আছে, মুক, ফ্লিপড ক্লাসরুম ইত্যাদি, সেসবের নানা সমস্যাও আছে, সেই সমস্যা কাটানোর জন্যও পরীক্ষানিরিক্ষা চলছে। আসলে যেকোন নতুন জিনিষেই প্রথমে সমস্যা হয়, পরে আস্তে আস্তে সেটা ইভলভ করে সাধারনের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। অনলাইন শিক্ষাও সেরকম। কোভিড না হলেও অনলাইনে শিক্ষার প্রসার আস্তে আস্তে বাড়ছিলই, বহু ইউনিভার্সিটি অনলাইন কোর্স চালু করছিল, মাঝখানে কোভিড হয়ে সেটা আরও দ্রুত হয়েছে। আগামী তিন চার বছরে পৃথিবী হয়তো কোভিড সমস্যা কাটিয়ে উঠবে, কিন্তু তার পর যে নিউ নর্মাল তৈরি হবে সেখানে অনলাইন সার্ভিস ডেলিভারির গুরুত্ব অনেকটা বাড়বে। সেজন্যই অনেক দেশেই অনলাইন পড়াশোনার ইকোসিস্টেম তৈরি হচ্ছে, আমাদের দেশেও বেশ কিছু রাজ্যে এই কাজ শুরু হয়ে গেছে।
আর অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে খাবলা খাবলা পড়ে কাজ পেয়ে যাওয়া যায়, এটাও বোধায় পুরো ঠিক না। অন্তত একজনকে জানি যে অনলাইনে ডেটা অ্যানালিসিস, মেশিন লার্নিং ইত্যাদি কোর্স করে এখন অনলাইনেই কাজ করছে, ইনকামও খারাপ করছে না। অনলাইনে স্পেশালাইজড ট্রেনিং পাওয়া যায় এরকম অনেক কোর্স আছে, সেগুলোর ডিম্যান্ডও ভালোরকম আছে।
"ঐ স্পেশালাইজড টেকনলজি যখন উঠে যাবে, তখন এদের চাকরি পাওয়ার প্রভূত সমস্যা হবে" - এরকম হওয়ার সম্ভাবনা কম। ইন্টারনেটে নানারকম সার্ভিস ডেলিভারি উঠে যাবে, এরকম মনে হয়না। বরং বাড়ার সম্ভাবনা বেশী।
dc | 122.174.***.*** | ২৯ মে ২০২১ ১১:৩০106557"বছরের শেষে একটা অ্যানালিটিকাল প্রশ্ন বা একটা কড়া ভাইভা নিয়ে ক্লাসের বেশিরভাগের হাল যা বোঝা যাচ্ছে, অফ লাইন পড়ানো হলে তারা পাশ করত না" - এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। সারা বছর পড়িয়ে বছরের শেষে একটা পরীক্ষা, এই মডেলটা একেবারেই উপযোগী না। কিন্তু অনেক জায়গাতেই চিন্তাভাবনা চলছে পুরো বছর ধরে কন্টিনুয়া ইভ্যালুয়েশান করার। শিক্ষকরা একেকটা সাবজেক্ট পড়াবেন, এক বা দুমাস পরপর অনলাইন পরীক্ষা নেবেন, নম্বর দেবেন। আগের বছর থেকে আমার মেয়ের স্কুলেও এরকম সিস্টেম শুরু হয়েছে, তবে তার কিছু ত্রুটিও লক্ষ করেছি। আমার মতে পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখা, স্টুডেন্টদের ইভ্যালুয়েট করা, এই পুরো সিস্টেমটা অনলাইন হওয়া উচিত। চেন্নাইয়ের PSBB স্কুলে পুরো অনলাইন ব্যবস্থা চালু করছে শুনেছি। দেখা যাক সিস্টেমটা কেমন এগোয়।
Goutam Chakraborty | ২৯ মে ২০২১ ২৩:৫৬106604হায়ার সোসাইটিতে অনলাইন টিচিং সম্পর্কে আপনাদের মতামতে সমৃদ্ধ হলাম। যদিও কিছু কিছু বিষয়ে একটু খটকা আছে পদ্ধতি প্রকরণের প্রশ্নে। তথাপি অত্যন্ত মূল্যবান মতামত। কিন্তু আমাদের রাজ্যে আমরা যারা নিম্ন মেধা দের নিয়ে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী কথিত তেলেভাজা বা ফুচকার দোকান দেবার লক্ষ্যে লালিত ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কাজ কারবার করি তাদের প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া যায় কি করে যদি কোনো পথ দেখাতে পারেন তাহলে বিষয়টা নিয়ে আলোকপাত করতে পারি। অর্থাৎ রাজ্যে আমরা যারা বাধ্য হয়ে নিম্ন মেধার চাষ করছি সেটাকে একটু উর্বর ফলন যোগ্য কিভাবে করা যায় দিশা চাচ্ছি।