ভালো লেখা। প্রশ্নটি খুব প্রাসঙ্গিক - মধ্যযুগ কেন অন্ধকারের যুগ বলে চিহ্নিত ? এটা পুরোপুরি ইউরোপীয় নির্মান। ভারতীয় উপমহাদেশে মধ্যযুগ উৎকর্ষের তুঙ্গে। খারাপ ভালো দিক সব যুগেই আছে। কাজেই অস্পৃশ্যতা বা বর্ণভেদ কি মুসলমানেদের রাজশক্তির অপব্যবহার দিয়ে এই যুগকে কালীমালিপ্ত করাটা ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্র। ইউরোপিয় সভ্যতা প্রাচ্যের চেয়ে উন্নত এই মিথ্যাকে মান্যতা দেবার অপচেষ্টা। নইলে প্রাচ্য গোটা মধ্যযুগ ধরে, এমনকি তারও আগে থেকে ইউরোপে, মশলা, সুগন্ধী, কাপড়, তামাক, চিনি নিয়ে ব্যবসা করতো কি ভাবে ? শূন্য, আলজেব্রা, জ্যামিতি, বারুদ, কাগজ, ইস্পাত (যাতে মরচে ধরে না) পোড়ানো ইঁট এসব তো প্রাচ্যের দান। মহেঞ্জদরো-হরপ্পার যুগে ইউরোপ নেহাৎ গ্রাম ছিলো।
তবে একটা তথ্য মনে হয় ঠিক নয়। "ব্রাহ্মণের ছেলে, ক্ষত্রিয়ের ছেলে কি বৈশ্যের ছেলে এরূপ কথা পল্লীগীতিকা বি রূপকথায় আদৌ নাই। " এটি ঠিক নয়। মঙ্গলকাব্যে, রূপকথায়, লোককথায় এর ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে। রাজপুত্র, বেনের পো আর রাজপুরোহিতের ছেলে একসাথে অভিযানে যাচ্ছে - এমন তো আছেই। বরং "হিন্দু" বলে কোন বর্গ ছিলো না। যারা মুসলমান নয়, তারা ব্রাহ্মণ, ক্ষেত্রি, বেনে, তিলি তিসি, কৈবর্ত, ডোম, শবর, বুনো যাই হোকনা কেন - সকলেই "হিন্দু" এই ধারনাটি আদৌ ছিলো না। যবনদের সাথে "জলচল" যেমন ছিলো না, তেমনই সমাজে এক বর্ণের সাথে অন্য বর্ণেরও জলচল ছিলো না। ব্রাহ্মণ-ডোমণী প্রেম বা ঐজাতীয় অসবর্ণ সম্পর্ক ব্যাতিক্রম ছিলো বলেই সাহিত্যে স্থান পেয়েছে। এই সমসময়ের সিনেমায় বড়লোক ছেলে/মেয়ের সাথে গরীবের ছেলে/মেয়ের প্রেমই তো প্রায় একমাত্র উপজীব্য। সেও ব্যতিক্রম বলেই। ভীমের হিড়িম্বা বিয়ে নিয়ে প্রচুর মাথা ঘামাতে হয়েছে, এবং বিয়েটা পান্ডবদের স্বার্থরক্ষার কারনেই হয়েছে। অর্জুনের নাগকন্যা উলুপী বা পার্বত্য উপজাতি কন্যা চিত্রাঙ্গদাকে বিয়ে কি আদৌ বিয়ে ? দ্রৌপদী কোনকালে এদের কাউকে (হিড়িম্বা, উলুপী, চিত্রাঙ্গদা) সতীন বলে ধরেনই নি। তার কাছে একমাত্র সতীন সুভদ্রা। তার প্রমাণ মহাভারতে সুভদ্রাকে বিয়ের পর অর্জুন-দ্রৌপদীর ঝগড়া।
কাজেই জাতপাতের বিষয়টি আগে ছিলো না এটা সত্য নয়।
চৈতন্য মিঞাপুরে জন্মেছিলেন? তাজ্জব কি বাত! এক প্রভুপাদ ছাড়া এ কথা তো আর কেউ বলেননি। তবে কি নতুন গবেষণায় প্রমাণিত হল?
ওই মধ্যযুগেই হর্ষবর্ধন ছিলেন যার রাজ্য দেখে হিউ এন সাং ভারত দেখে উলুটপুলুট হয়েছিলেন। নালন্দা /বিক্রমশীলা এই সময়কারই তো। বাংলার গর্ব পাল সাম্রাজ্যও এই সময়কার ।দক্ষিনের বৈভবশালী চোল সাম্রাজ্য যারা মালদ্বীপ , ইন্দোনেশিয়া ,মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশে ভারতীয় ইনফ্লুয়েন্স ছড়িয়েছিল ( কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাম্রাজ্য বিস্তার করে )সেও তো মধ্যযুগে যার প্রাভাব আজও রায়ে গেছে ।থাইল্যানডেও ও ভারতীয় প্রভাব এই সময়ই ছড়ায় (সুখও থাই পিরিয়ড )--ভারতীয় প্রভাবে আঙ্কোর ওয়াটও তৈরী হয় এইসময় .
মোটামুটি ভারতীয় সভ্যতা বলে যা কিছুর জন্য আজ গর্ব করি বেশিরভাগই তো মধ্যযুগের ( গান্ধার শিল্পের মত্ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া )।বাকি থাকে পুষ্পক রথ , এরোপ্লেন ,রকেট ইত্যাদি যেগুলো সুদূর অতীত কালে হয়েছিল :):)
দু:খিত ভুল পেজ e পোস্ট
@এলেবেলে আপনি পড়েছেন। ধন্যবাদ।
আমি একটু আধটু পড়াশোনা করি। সমাজকর্মের অবসরে পথে ঘাটে সুযোগ পেলেই পড়ি।
দীনেশচন্দ্র সেনের 'বৃহৎবঙ্গ' বইটি এভাবেই পড়া।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৯৮ পাতা দেখুন।
সেখানে আছে মেঞাপুর।
আসলে মিঞাপুর।
হ্যাঁ মিঞাপুর তো জানি। আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে নদীয়ার তদানীন্তন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কেদারনাথ দত্ত নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে এবং সরকারি নথিপত্রে বদল ঘটিয়ে মুসলমান অধ্যুষিত মিঞাপুরকে ‘মায়াপুর’-এ বদলে ফেলেন - জানি সেটাও। কিন্তু চৈতন্য কি সেখানে জন্মেছিলেন? আমার প্রশ্ন এইটুকুই ছিল। আপনি যে পড়েন এবং পড়ানও, সেটা জানি।
বৃহৎ বঙ্গ
৬৯৮
জগন্নাথ মিশ্র বল্লাল রাজার বাড়ীর নিকট বাস করিয়াছিলেন—ইহা তখন নবদ্বীপের
দক্ষিণ সীমায় অবস্থিত ছিল, এবং এই স্থানটি সম্ভবতঃ নগরের শ্রেষ্ঠ স্থান ছিল ।
মুসলমানেরা এই স্থান অধিকার করার পর এই স্থানের নাম দিয়াছিল “মেঞাপুর,
অনেক মুসলমান এখানে বাস করিয়াছিলেন। মহাপ্রভুর জন্মস্থানটিকে মুসলমানী নামেঅ অভিহিতকরিতে ভক্তচরিতকারেরা স্বভাবতঃই কুণ্ঠাবােধ করিতেন। সুতরাং বৃন্দাবন দাস, মুরারি গুপ্ত প্রভৃতি আদি-লেখকেরা পল্লীর নাম উল্লেখ না করিয়া মহাপ্রভুর জন্মস্থান শুধু
নবদ্বীপ বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু পরবর্তী লেখকেরা (তন্মধ্যে ভক্তিরত্নাকর-রচয়িতা
নরহরি চক্রবর্তীর নাম উল্লেখযােগ্য) “মেঞাপুর” শব্দটি হিন্দুভাবাপন্ন করিয়া উহাকে“ মায়াপুর” নাম দিয়াছেন। কিন্তু প্রাচীন মুসলমানদের দলিলপত্রে এবং চলিতকথায়
মিঞাপুর বা যেঞাপুর নাম এখনও প্রচলিত দেখা যায় । প্রায় দুইশত বৎসর পূর্বহ হইতেহিন্দুরা উহাকে মায়াপুর নামে অভিহিত করিয়া আসিয়াছেন। নবদ্বীপে দ্বিতীয়
মায়াপুর নাই। যেখানে বহু শতাব্দীর পূৰ্ব্ব হইতে রামচন্দ্রের পূজা হইত এবং রামেরর রথোৎসবঅনুষ্ঠিত হইত সেখানে বাঙ্গলার কোন প্রতাপশালী ব্যক্তি রামচন্দ্রের একটিম মন্দিরনির্মাণ করিয়াছিলেন। উহা ঠিকই করিয়াছিলেন, যেহেতু ঐ স্থানটি রামের লীলার
একটি প্রাচীন তীর্থ ছিল। সেই মন্দির এখন নদীগর্ভে কিন্তু, সেই রামচন্দ্রের মন্দির কখনই চৈতন্যমন্দির হইতে পারে না, এবং সে স্থানের নামও মায়াপুর নহে। জোর
করিয়া কেহ কেহ নিজেরা উহার নাম ‘মায়াপুর’ দিয়াছেন ।
জানতাম নরহরি চক্রবর্তীর ভক্তিরত্নাকরের উল্লেখ হবেই হবে। কারণ কেদারনাথ দত্ত শুধু মিঞাপুরকে 'মায়াপুর'-ই বানাননি, সুচতুরভাবে ওই মায়াপুরকে চৈতন্য জন্মস্থান বলে প্রচারও করতে থাকেন।প্রামাণ্য নথি হিসেবে কেদারনাথ তুলে ধরেন প্রায় দেড়শো বছর আগে রচিত বৃন্দাবনবাসী নরহরি চক্রবর্তীর ‘ভক্তিরত্নাকর’ গ্রন্থটিকে। ততদিনে চৈতন্যের জন্মভিটে গঙ্গাগর্ভে বিলীন। ফলে তিনি চৈতন্যকালীন নবদ্বীপের একটি কাল্পনিক চিত্র আঁকেন, চৈতন্য জন্মস্থানের নামকরণ করেন ‘মায়াপুর’ এবং তার চারদিকে নয়টি দ্বীপের কল্পনা করে ‘নবদ্বীপ’ নামের নতুন ব্যাখ্যা দেন।
চৈতন্য জন্মস্থান হিসেবে ‘মায়াপুর তত্ত্ব’ প্রতিষ্ঠা করতে কেদারনাথ দত্ত এই ‘ভক্তিরত্নাকর’-এর আশ্রয় নেন। চাকরি ছেড়ে তিনি ভক্তিবিনোদ ঠাকুর নামে সন্ন্যাসী হন। ১৯১৮-তে অর্থাৎ তাঁর মৃত্যুর চার বছর পর তাঁর পুত্র ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী মায়াপুরে ‘শ্রীচৈতন্য মঠ’ স্থাপন করলে কেদারনাথের প্রচারে ভক্তিবাদের সরকারি সিলমোহর পড়ে।
বর্তমান মায়াপুর পরবর্তীকালের নির্মাণ।
প্রথমে নরহরি চক্রবর্তী ও পরে কেদার দত্ত। অন্তত একশো দশ বছর আগের নির্মাণ।