এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • নাট্যভাবনা : মহেশ এলকুঞ্চওয়ার

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    নাটক | ১৭ মার্চ ২০২১ | ২৫৬৪ বার পঠিত
  • [ মুম্বইয়ের নাট্যজগতে ষাটের দশক থেকেই যাঁরা স্বতন্ত্র নাট্যরচনা ও পরিচালনা করেছেন তাঁদের মধ্যে একাশি বছরের মহেশ এলকুঞ্চওয়ার সমকালীন বামপন্থার টেমপ্লেট নাটকের বাইরে স্বতন্ত্র নাট্যভাষার জন্যে বিশিষ্ট। ওঁর বহু নাটক মূল মারাঠি, হিন্দি এবং ইংরেজিতে অনূদিত এবং অভিনীত হয়েছে। কিছু নাটক সমান্তরাল ধারার সিনেমা হয়েছে। যেমন আক্রোশ, পার্টি, বাস্তুপুরুষ, হোলি এবং অপর্ণা সেন নির্দেশিত ও শাবানা আজমি, লিলেট দুবে, অপর্ণা অভিনীত “সোনাটা” (in English) ইত্যাদি। ভুষিত হয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে। এই প্রবন্ধটিতে উনি নাট্যকার এবং নির্দেশকের ভূমিকা নিয়ে ওঁর উপলব্ধি এবং সোচ্চার রাজনৈতিক নাটকে কেন ওঁর অনীহা এসব স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন। ইংরেজি থেকে এই অনুবাদকর্মটি এর আগে ‘যাপনচিত্র’ পত্রিকার বিশেষ নাট্যসংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। ]

    নাট্যভাবনা
    মহেশ এলকুঞ্চওয়ার

    এতগুলো বছর কেটে যাওয়ার পর আজ আমার প্রত্যয় হয়েছে যে নাটককে ‘সাহিত্য’ ও ‘অভিনয়যোগ্য লেখা’ বলে ভাগাভাগি করার মধ্যে একেবারে গোড়ায় গলদ রয়েছে। সত্যি কথাটা হল লেখাটি যদি অভিনয়যোগ্য হয় তবে তা অবশ্যই সাহিত্য হয়ে উঠবে। আর যদি ওটি অভিনয়ের উপযুক্ত না হয় তাহলে তা যত সুন্দর বা ‘সাহিত্যিক’ ভাষায় লেখা হোক না কেন – নাটকীয়তার কথা ছেড়েই দিন—তা কখনই সাহিত্যপদবাচ্য হবে না; হবে একঘেয়ে অতিরঞ্জনে ভরা। (হিন্দিতে অমন রচনা গণ্ডায় গন্ডায় আছে)

    নাটকের ব্যাকরণ যে কাহিনীর ব্যাকরণের থেকে আলাদা তা সচেতন পাঠক নাটক পড়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখেন। কাজেই উনি কেবল সেই নাট্যরচনাকেই সাহিত্য হিসেবে পাঠ করেন যা অভিনয়যোগ্যতা নিয়ে তাঁর চোখে ধরা দেয়। নাটকের একটি প্রাথমিক নিয়ম হল যে যা কিছু মঞ্চে অভিনয়ের বা নাট্যপরিবেশনের প্রেক্ষিতে অপ্রাসঙ্গিক এবং অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয় তা অচিরেই পচা, অসুন্দর এবং পরজীবী হয়ে যায়। একটি দৃশ্য হোক বা একটি চরিত্র, একটি ডায়লগ বা ডায়লগের একটি পংক্তি — প্রত্যেককেই নাট্যরচনাটিতে নীচের সবগুলো কাজ, না হোক অন্ততঃ একটি, করতেই হবে।

    সেগুলো হলঃ নাট্যক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দৃশ্যটিকে এবং ক্রমশঃ গোটা রচনাটিকে মূর্ত করে তোলা, চরিত্রগুলোর কোন নতুন দিক বা মাত্রাকে প্রকাশ করা, নাট্যপরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তাতে নতুন মাত্রা যোগ করা। সুতরাং নাটকের স্ক্রিপ্টটি যদি অপ্রয়োজনীয় এবং অদরকারী মাল দিয়ে ঠাসা হয় যার প্রয়োজন কেবলমাত্র ‘নাট্যসৌন্দর্য’ বিষয়ে ভুল ধারণার অধীন হয়ে স্ক্রিপ্টটিকে সাজিয়েগুজিয়ে তোলা, তাহলে পাঠক সে’জাতীয় রচনাকে কদাপি ‘সাহিত্য’ বলে মানতে চাইবেন না। এর বিপরীতে, এমন অনেক নাট্যরচনা আছে যা হয়ত সাহিত্য শব্দের গতানুগতিক অর্থে ঠিক ‘সাহিত্য’ বলে গণ্য হবে না, কিন্তু নাটকের নিজস্ব ব্যাকরণ মেনে চলার ফলে তা সাহিত্যিক মূল্য আদায় করে অন্ততঃ নাট্যসাহিত্য হিসেবেই পাঠযোগ্য হয়। ইদানীং আমরা “ওয়েটিং ফর গোদো” এবং “চেয়ার” এর মত রচনাকে নাটক এবং সাহিত্যের সমকালীন ক্লাসিক, দু’ভাবেই পাঠ করি। যে কোন নাট্যরচনার প্রথম এবং অন্তিম শর্ত হল ‘অভিনয়যোগ্য’ হয়ে ওঠা। দুটো কোন আলাদা ব্যাপার নয়। একটি ধারণার সঙ্গেই অপরটি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে। ও দুটো আসলে এক এবং অভিন্ন।

    ***********

    ষাটের দশকের শেষভাগে, মানে আমি যখন নাটক লিখতে শুরু করেছিলাম, তখন নাটকে পরীক্ষানিরীক্ষা আর বিদ্রোহ একই ধরা হত। এই ‘এক্সপেরিমেন্ট’ এবং ‘রেবেলিয়ন’ এর অভিন্নতার ধারণা এমন মাথায় চেপে বসেছিল যে যদি কেউ প্রথাগত শৈলীতে, মানে তার হাতের কাছে যা ফর্ম রয়েছে, কোন নাটক লিখত তো তৎক্ষণাৎ সেটিকে নাক সিঁটকে নাকচ করে ‘সনাতনপন্থী’ বা পিছিয়ে-পড়া তকমা সেঁটে দেওয়া হত – যেন বিদ্রোহ না করে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্ভব নয়। বেশ, বিদ্রোহটি কার বিরুদ্ধে? চটজলদি একটা ধোঁয়াশাভরা উত্তর আসত — ট্র্যাডিশনের বা ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে। তাই যদি হয় তো আগে আমাদের বুঝতে হবে এই ‘ঐতিহ্য’ ব্যাপারটা কি, কোন ঐতিহ্য? তবে তো ওর বিরুদ্ধে দাঁড়াব!

    এখানে আমি ‘ট্র্যাডিশন’ বা ঐতিহ্য শব্দটি শুধুমাত্র ‘নাটকীয় ঐতিহ্য’র সীমিত অর্থে ব্যবহার না করে বরং জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ছড়িয়ে থাকা যে সর্বব্যাপী ট্র্যাডিশন -- সম্পূর্ণ জীবনযাপন পদ্ধতির ঐতিহ্য, যে ঐতিহ্য একটি বিশিষ্ট জনগোষ্ঠীর জীবনে ছেয়ে থাকে — তার কথা বলতে চেয়েছি। ঐতিহ্যকে অবশ্যই সামাজিক আচারব্যবহার বা প্রথার সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। আচারব্যবহার ফুরিয়ে যায়, প্রথা যায় বদলে। কিন্তু ঐতিহ্য গড়ে তোলে সেই গতিময়ী জীবনীশক্তি যা একটি বহতা জনগোষ্ঠীর ‘নদীত্ব’ কে বাঁচিয়ে রাখে।

    যদি আমরা আমাদের বিদ্রোহকে কোন নাটকীয় পুরনো পদ্ধতি বা ট্র্যাডিশনের বিরোধিতার লক্ষ্যে সীমিত রাখি, তাহলে সেটা এমন একটা ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে হোক যাকে বহতা-জীবন নিজেই খারিজ করে দিয়েছে। কারণ নাট্য-ঐতিহ্যও শেষ বিচারে কোন নির্দিষ্ট জীবনযাত্রারই অংশ, তার মধ্যেই জন্মেছে এবং বিকশিত হয়েছে। অতএব, এভাবে বিদ্রোহ ঘোষণার আগে আমাদের উচিত সেইসব ঐতিহ্যকে ভাল করে অধ্যয়ন করা এবং পূর্বাগ্রহ-রহিত হয়ে তাকে খোলা চোখে গভীরভাবে দেখা এবং বোঝা।

    ঐতিহ্যই হোক বা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, কোনটাই হঠাৎ করে শূন্য বা অচল অবস্থায় গজিয়ে ওঠে না। একটি বিদ্রোহের পেছনে একটা তাত্ত্বিক অবস্থান অবশ্যই থাকে এবং তা জীবন নিয়ে কিছু মৌলিক অন্বেষণের ফলস্বরূপ জন্মায়। যদি আমরা কেন এবং কিসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছি তা বোঝার জন্যে কোন সচেতন প্রয়াস এবং নিরন্তর বুদ্ধিদীপ্ত অধ্যবসায় না থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই অগভীর ও অল্পায়ু, এবং অচিরেই কিছু ফ্যাঁতফোঁত করে কোন ছাপ না রেখে মিলিয়ে যাবে।

    যখন আমি ভারতীয় থিয়েটারের পরিদৃশ্যকে বিশ্লেষণ করতে বসি, তখন একবারও মনে হয় না যে এই ‘বিদ্রোহ’ আসলে কোন অতৃপ্ত মেটাফিজিক্যাল তৃষ্ণা বা জীবন নিয়ে সচেতন তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ফল। আমাদের সমস্ত বিদ্রোহ আসলে কিছু সমকালীন নির্দিষ্ট থিয়েটারি স্টাইল বা শৈলীর বিরুদ্ধে এবং তা কিছুদিন শূন্যে গর্জন করে মিলিয়ে যায়। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে এইসব বিদ্রোহ এবং পরীক্ষানিরীক্ষা গোড়ায় চোখ ধাঁধিয়ে দেয়; কিন্তু অধিকাংশ সময় এরা রংমশালের মত জ্বলে উঠে অল্পক্ষণেই ফুরিয়ে যায়। এদের না আছে অতীত, না ভবিষ্যৎ। ফলে, তারা আমাদের শিল্পে কোন স্থায়ী ছাপ রেখে যায় না। আমি যখন ট্র্যাডিশন বা ঐতিহ্যের কথা বলি, তখন কয়েকশ’ বছর আগে কী ছিল আদৌ তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমরা কখনই কোন ঐতিহ্যকে সবশুদ্ধ আঁকড়ে ধরি নে, কারণ ঐতিহ্য বদলাতে থাকে, বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নতুন নতুন রূপ গ্রহণ করতে থাকে। এটা ঘটে কারণ সমঝদারেরা সবসময় ঐতিহ্যের পচে যাওয়া অংশটা ফেলে দিয়ে তার শাঁসটুকু গ্রহণ করে। যদি কখনও ট্র্যাডিশনের বা ঐতিহ্যের সার এবং আধুনিকতার শক্তি মিলিত হয় তখন পরীক্ষানিরীক্ষার খেলা একটি নিশ্চিত উদ্দেশ্য এবং অভিমুখে অগ্রসর হয়; নইলে ক্ষণিকত্ব এবং সীমাবদ্ধতাই তার নিয়তি।

    আমি কি নিজের ঐতিহ্য নিয়ে সচেতনতাকেই দেশজ সংস্কৃতি বলে চালানোর চেষ্টা করছি? আমার তা মনে হয় না। যদি আমরা ‘দেশজ’ শব্দটির অর্থ একটু সম্প্রসারিত করি তাহলে এটা সম্ভব হতে পারে। ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য লাগাতার নানারকম বাহ্যিক এবং ভিন্ন শক্তির প্রভাবে এতবার প্রমাণিত হয়েছে, ভেঙেছে, এবং নতুন করে নিজেকে গড়েছে যে আজকে এর ঠিক কোনখানটা ‘দেশজ’ তা বলা কঠিন। আমরা যদি মনোযোগ দিয়ে ভারত ইতিহাসের পর্যালোচনা করি তো দেখব যে বাহ্যিক প্রভাবকে নিজের আবশ্যকতা অনুযায়ী স্বীকার করা, গ্রহণ করা এবং আত্তীকৃত করার এক অপূর্ব প্রতিভা ভারতের রয়েছে। আজকে এই ভুমন্ডলীকরণের (গ্লোবালাইজেশনের) জোয়ারে নিজেদের ‘কোয়ারান্টাইন’ করে স্বেচ্ছাবন্দীত্বের ঘেরাটোপে আটকে রাখা নিতান্তই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই আজকে শুধুমাত্র ভারতীয় ঐতিহ্য নিয়ে কচকচির মধ্যে নিজেদের আটকে না রেখে যদি একটু খোলামন একটু উদারতা দেখিয়ে আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের সামনের সারিতে জায়গা করে নিতে পারি, তাহলে বোধহয় আমাদের সৃষ্টিশীলতার শরীর একটু পুষ্টি অর্জন করবে।

    আমরা বিশ্বের প্রভাব এবং ঐতিহ্যকে কেন ঠেকাতে চাই? নিজেদের উপর আস্থা একটু কম বলে কি? আমি পাশ্চাত্ত্য প্রভাব নিয়ে এতটুকু চিন্তিত নই, কারণ নিজের ভারতীয়ত্ব নিয়ে আমি নিঃসংশয়। তাই আমি ওদের থেকে যখন যা দরকার বেছে নিয়ে আত্মসাৎ করে নেব। জ্ঞান, শিল্পকলা এবং নানান সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় সম্পদের উপর কোন একটি দেশের বা জনগোষ্ঠীর একচেটিয়া অধিকার থাকতে পারে না। ওই ভান্ডার সবার জন্যে উন্মুক্ত। আমার মনে হয় ‘দেশজ’ শব্দটির সংকীর্ণ অর্থ আঁকড়ে নিজেদের বিকাশের রাস্তা অবরুদ্ধ করা অত্যন্ত বিপৎজনক। আর আমাদের যদি নিজেদের দেশজ ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলতেই হয়, তো শুরু করতে হবে “আ নো ভদ্রাঃ ক্রতবো ইয়ন্তু বিশ্বতঃ” থেকে। (আসুক বিশ্বের সমস্ত প্রান্ত থেকে মহান চিন্তারাজি)

    ********************

    আমার কখনও কখনও মনে হয় এই যে আমাদের সমস্ত শিল্পকৃতি থেকে একটা নির্দিষ্ট বাঁধাধরা অর্থ বের করার অভ্যেস, এটাই হয়তো শিল্পবস্তুটির রসাস্বাদনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের সমস্ত শিল্পসৃষ্টির গোড়ায় “মননের” ধোঁয়া দিয়ে তাকে “বুঝতে” হয় এবং তারপর তার বিশ্লেষণ ও বর্গীকরণ করতে হয় (যা আবার আরেকটি মগজভিত্তিক কাজ), নইলে মনেই হয় না যে কোন শিল্পকলার স্বাদ পেলাম। যতক্ষণ না একটি শিল্পসৃষ্টিকে বুদ্ধির বিশ্লেষণে বুঝছি, তাকে তালিকাভুক্ত করে কোন একটা ছাঁচে ফেলছি, ততক্ষণ আমাদের শান্তি নেই। এই পদ্ধতিতে কোন একটি শিল্পবস্তুর অর্থ আমাদের কখনও ধরা দেয়, কিন্তু একটি নাটক দেখার এবং তার রসাস্বাদনের আনন্দ থেকে আমরা চিরতরে বঞ্চিত হই। অর্থ না হয় খুঁজে পাওয়া গেল, কিন্তু ওই খুঁজতে গিয়ে ‘অনুভব’এর আনন্দটি হাতের ফাঁক দিয়ে পিছলে গেল। কীভাবে গ্রেস এর কবিতার মাধুর্যের ব্যাখ্যা করব? (বলা হয় যে ওই কম্মটি একটি পাঠ্যবইয়ে করা হয়েছে। শিক্ষক মশায়ের জন্যে আমার শুভেচ্ছা রইল!)

    শব্দের অর্থের বাইরে অনেক কিছু অধরা রয়ে যায়। যদি আমরা তাদের অনুভবে ধরতে চাই তাহলে বুদ্ধিবৃত্তি বা মননের তলোয়ারটিকে খাপে পুরে ফেলে কবিতার শরণাগত হতে হবে। এম ভি ধোন্দ কবি মার্ডেকরের কাব্যের ব্যাখ্যায় কিছু প্রকরণের সাহায্য নিয়েছেন। আমার মনে হয় সেগুলো গ্রে’র কবিতা বুঝতে সহায়ক হবে না। কিছু নাটকও ওই রকম। বেকেটের নাটকের অন্তর্নিহিত মননশীলতা নিয়ে বেশি কচকচি করা থেকে বিরত হলে আমাদের কাছে উদ্বেগ-আশংকা ভরা এমন এক বিশাল দুনিয়া উন্মুক্ত হবে যা সংজ্ঞার এবং সময়ের ধরাছোঁয়ার বাইরে। নাট্যরচনার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। দুর্ভাগ্যবশতঃ কিছু নাট্যকার তাঁর রচনাকে জোর করে একমাত্রিক বানিয়ে রাখেন। লেখার শুরুতেই নাটকটির অর্থ নির্ধারণ করে তিনি নিজেই নাটকটির তাৎকালিক অনুভবকে ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা রুদ্ধ করে ফেলেন।

    এই পূর্ব-নির্ধারিত একমাত্রিকতার পথে চলার একটি পদ্ধতি হল শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার। বিশিষ্ট অর্থটি বারবার বলা, আরও অনেক শব্দ যুগিয়ে ব্যাখ্যা করা, নজরটান দেওয়া। তারপর শব্দলহরীর এই বিপুল কোলাহলে অনুভবের কন্ঠস্বরটি চাপা পড়ে, ক্রমশঃ মৃদু হয় এবং মরে যায়। একটি নাট্যলেখনকে গোড়া থেকেই অমন একমাত্রায় বেঁধে দিলে তাতে একাধিক সাব-টেক্সট বা উপকাহিনীর অস্তিত্বের প্রশ্নই ওঠে না। নাটককে বোঝার প্রক্রিয়াটিকে সরল করে আমরা তাকে একমাত্রিক করার প্রয়াসে লেগে থাকি, আর তার ফলে হারিয়ে ফেলি একটি মূল্যবান জিনিস --- নাটকের পাঠের মধ্যে অন্তর্লীন শূন্যস্থানটুকু। এই শূন্য জায়গাটি পূর্ণ হতে পারে অসংখ্য অনুভবের সম্ভাবনায়, যে সম্ভাবনাকে খুঁজে বার করা এবং তাকে নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে মূর্ত করে স্থানটিকে পূর্ণ করা একজন অভিনেতার দায়িত্ব। ওই শূন্যস্থানের মাঝে লুকিয়ে থাকা এক বা একাধিক সাব-টেক্সটকে বের করে সামনে উপস্থিত করাই তো একজন খাঁটি অভিনেতার আসল কাজ। যিনি অমন নাটক লিখতে পারেন তিনি নিঃসন্দেহে একজন প্রথম শ্রেণীর নাট্যকার।

    একসময় আমি আমার অভিনেতাদের প্রতি বেশ কড়া মনোভাব পোষণ করতাম, কারণ তারা তাদের চরিত্রকে আত্মস্থ করতে পারছিল না। দেখলাম, ওরা কেবল ছাপা লাইনগুলোকে নিজেদের কিছু বস্তাপচা থিয়েটারি ট্রিক্স এবং অতিরঞ্জিত হাত-পা নাড়ার ভঙ্গিমায় রূপ দিতে চেষ্টা করছিল। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম যে এর জন্যে ওরা নয় আমি দায়ী; অন্ততঃ আশিংক ভাবে। অভিনেতারা তো অভিনেতাই হবে; তারা অভিনয় করতেই চায়। যদি নাট্যকার নাটকে তাদের জন্যে খোলা জায়গা না ছাড়ে, এবং অতিরিক্ত বাচাল নাট্যলেখন তাদের নিজের মত করে ব্যাখ্যা করার সুযোগ না দেয় — তাহলে অভিনেতাকে দোষ দিয়ে কী লাভ? একজন নাট্যকারকে তার অভিনেতাদের উপর নির্ভর করতে শিখতে হবে, তাদের ঘাড়ে দায়িত্ব চাপাতে হবে এবং তাকে অকথিত নৈঃশব্দের দুনিয়ায় ডুব দিয়ে খোঁজাখুঁজির জায়গা ছেড়ে দিয়ে সরে আসতে হবে।

    *********************

    থিয়েটারের মতাদর্শ নিয়ে কথা বলার ব্যাপারে আমিই বোধহয় সবচেয়ে অনুপযুক্ত। আমি একেবারে মতাদর্শচালিত প্রাণী নই। আমার চরিত্রের এই বিশেষ খামতির জন্যে বহুবার আমাকে বন্ধুদের কটুকাটব্য শুনতে হয়েছে। আমি নাকি অবক্ষয়ী আত্মসুখী, নিজেকে নিয়ে তৃপ্ত এক নার্সিসাস, ঝানু প্রতিক্রিয়াশীল, এবং আরও একগাদা বিশেষণের সমষ্টি। এসব বলার উদ্দেশ্য ছিল আমার মধ্যে এক লজ্জা, এক অপরাধবোধ জাগিয়ে তোলা। আমার অপরাধ – আমি ব্যক্তিমানুষের ব্যথা ও গোপন যন্ত্রণা নিয়ে লিখতাম। আমি দায় স্বীকার করে অপরাধবোধে গ্রসিত হওয়ার চেষ্টা করতাম, ব্যর্থ হতাম, এবং তার জন্যে আরও লজ্জিত হতাম। ওই সময়ে, যখন গোটা পরিবেশে জাঁকিয়ে বসেছে আদর্শবাদ এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে নিবেদিতপ্রাণ মানুষেরা, আমি নিজেকে পেতাম মুষ্টিমেয় অল্পসংখ্যকের দলে যাদের বলা হত “আত্মকেন্দ্রিক বুর্জোয়া”। কিন্তু ব্যাপারটা আমার ও বন্ধুদের মধ্যে যে বিরাট ফাঁক বা ব্যবধান সৃষ্টি করল তা বড্ড যন্ত্রণাদায়ক।

    আমার এমন কিছু বন্ধু ছিল যাদের পরিচয়ে কোন খামতি ছিল না, সততা ছিল প্রশ্নাতীত, প্রত্যয় ছিল দৃঢ় ,তাই তারা ছিল আমার গভীর শ্রদ্ধার পাত্র। আর ঈর্ষাও হত, দুনিয়া-বদলে-দেবে এমন বিশ্বাসে তাদের অটুট আস্থা দেখে। আমি তাদের প্রশংসক ছিলাম, শ্রদ্ধাও করতাম, কিন্তু তারা যে ধরণের থিয়েটার করত তা নিয়ে, দুঃখের সঙ্গে বলছি, আমার কিঞ্চিৎ সংশয় ছিল — এবং এর উল্টোটাও সত্যি। আমাদের দু’ধরণের থিয়েটারের মধ্যে কোন মিলনভূমি ছিল না। একই সঙ্গে, এটাও বুঝতে পারি নি যে কেন আমরা অমন দুই বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে, একে অপরকে বোঝার বা একে অন্যের থিয়েটারের ভূমিকাটি বোঝার, সত্যি বলতে কোন চেষ্টাই হয় নি।আমি যদি আমার গজদন্তমিনারের চুড়োয় বসেছিলাম তো ওরাও ওদের অভেদ্য দুর্গে আশ্রয় নিয়েছিল। সহমর্মিতার বদলে দেখা দিল কেবল ব্যঙ্গ এবং একে অন্যের প্রতি এক অন্ধ গোঁড়ামি মেশা অবজ্ঞা; আসলে সহমর্মিতার দিকে কেউ এক কদমও বাড়াই নি। বুঝতে পারলাম অনেক দেরিতে যে আমরা বড্ড খুঁতখুঁতে এবং সংকীর্ণমনা হয়ে পড়েছিলাম, তাই অন্যকে তার নিজস্ব ঢঙে কাজ করার স্বাধীনতাটুকুও দিতে চাইছিলাম না। আমি ও আমার বন্ধুরা তখন বুঝিনি যে আমাদের দুই ভিন্ন অবস্থানের মূলে আসল কারণ হল যে আমরা আলাদা মানুষ, এবং জীবন ও থিয়েটারের ব্যাপারে আমাদের উদ্দেশ্যও আলাদা। আমি ভাবতাম আগে যে সমাজে বাস করি তার প্রেক্ষিতে নিজেকে এবং আমার মত যারা আছে তাদের তলিয়ে বুঝি, তারপর ‘বৃহত্তর সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইস্যুগুলো’ নিয়ে কাজ করা যাবে। কিন্তু বন্ধুরা চাইত এই সমাজকেই আমূল পালটে আরও উন্নত সমাজ গড়তে। আমাদের ভাবনা বইছিল দুই ভিন্ন খাতে, আমরা শুনছিলাম অন্যরকম মাদলের বোল, তাই ফুটে উঠেছিল আমাদের দু’ধরণের থিয়েটারে। কিন্তু কেন কোন একটি ভাবনা/অবস্থান/থিয়েটারকে অনেক বেশি সঠিক/ বেশি নৈতিক এবং উচিত বলতে হবে তা আজও বোধগম্য হল না। থিয়েটারে উঁচুনিচু শ্রেণীবিভাগ কি আদৌ জরুরী? যাঁরা থিয়েটারকে সমাজবদলের ঘটক বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চান, নিশ্চয়ই করতে পারেন; এটি সম্পূর্ণ বৈধ। কিন্তু ওটি করার সময় তাঁরা যেন খেয়াল রাখেন যে থিয়েটার নানা লোকের কাছে নানারকম অর্থ বা তাৎপর্য নিয়ে আসে। এর কাজটি বহুমাত্রিক এবং এটি সমাজের এক ব্যাপক অংশের আশা-আকাঙ্খা পূরণে সক্ষম। সৌভাগ্যবশতঃ আমি কিছু চমৎকার মতাদর্শভিত্তিক থিয়েটার দেখেছি যাতে শিল্প এবং আদর্শ সামঞ্জস্য রেখে এমন তাল মিলিয়ে চলেছে যে অভুতপূর্ব স্বাদু রসায়ন তৈরি হয়েছে। কানহাইয়ালাল হলেন তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু এমন নাটকও দেখেছি যেখানে শিল্প ও আদর্শ শুধু যে গুঁতোগুঁতি করছে তাই নয়, শিল্পকে এমন অবহেলা করা হয়েছে যে ফল হয়েছে ভয়ানক। আমি এখন এই শেষের ধরণের থিয়েটার নিয়ে কিছু মন্তব্য করতে চাই এবং এর সম্ভাব্য বিপদ বা গাড্ডার দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

    এই থিয়েটার, বেশিরভাগ সময়, নাটকে মানবজীবনের অনুভব ও অভিজ্ঞতার তত্ত্বতালাশকে রাজনৈতিক শ্লোগানের মোড়কে না এলে খারিজ করে দেয়। আবেগের প্রকাশ নিষিদ্ধ; তবে আবেগ তখনই স্বীকৃতি এবং মর্যাদা পায় যখন তা শুধু ওই থিয়েটারের ঘোষিত উদ্দেশ্যের প্রতি নিবেদিত হয়। অস্পষ্ট অস্থির আবেগ এবং অন্ধ ক্রোধ মূল সমস্যাটিকে তুলে ধরার বদলে ফিকে করে দেয়। সমস্যার প্রতি স্পষ্ট অভিমুখের বদলে আমরা শুনি দাঁত- কিচকিচ অপভাষা। এভাবে শিল্পসুষমা বলি চড়ে, কারণ শিল্প হয়ে গেছে নোংরা গালাগাল। আমরা যদি শিল্প ও নন্দনতত্ত্বের মৌলিক নিয়মগুলোকে এড়িয়ে চলি (‘এলিটিসিজম’ বা কুলীন মানসিকতার অভিযোগ সত্ত্বেও বলছি), তাহলে শুধু একধরণের মধ্যমেধার বদলে আর এক ধরণের মধ্যমেধার চর্চাই সার হবে। কথিত হাতিয়ারটি হবে ভোঁতা, কারণ যোদ্ধাটি হয় অক্ষম, জানেনা কীভাবে একে ব্যবহার করতে হয় , অথবা লড়াইয়ের ফলাফল নিয়ে তিনি চরম উদাসীন। তাই পুরো প্রয়াসটাই আত্মঘাতী প্রহসনে শেষ হয়। ‘অদৃশ্য অদেখা শত্রুর’ বিরুদ্ধে ওই একঘেয়ে স্থুল আত্মগর্বী হুংকার শেষমেশ একটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবহীন নাটকীয় বক্তব্যে পর্যবসিত হয়। তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক কাজ/বিশ্লেষণএর জায়গা নেয় বিপ্লবমুখর জীর্ণ উদ্গার এবং বস্তাপচা রচনা। এক স্থিরচিত্ত সমাহিত উপলব্ধির বদলে পাই শব্দের কচকচি যার এলোমেলো যদৃচ্ছ ব্যবহারে নাটকটি শক্তি এবং তাৎপর্য হারিয়ে অথর্ব হয়ে পড়ে। আধিব্যাধি নির্মূল করার সৎ ইচ্ছা থেকে তৈরি কোন নাটক এভাবেই চুপসে গিয়ে একটি আবেগসর্বস্ব অতিনাটকীয় থিয়েটারের চেহারা নেয়, ফলতঃ নেতিবাচক হয়ে দাঁড়ায়। একমাত্রিক চিন্তার যূপকাষ্ঠে বলি চড়ে নাটকের বহুস্তরীয় রূপ এবং মানবজীবনের অতল গভীরতা। এগুলো হল একধরণের ফাঁদ; এতে থিয়েটার পা ফেলবে যদি সৃষ্টিশীল বোধবুদ্ধিকে থিয়েটারের সঙ্গে সম্পর্কহীন বাহ্যিক কিছু ভাবনার চাপে ঝাপসা করে দেওয়া হয়। আদর্শের পেছনে চলতে গিয়ে মানবজীবনের গভীর অনুভবের সামনে দরজা আটকে দেওয়া উচিৎ নয়। মানুষের ব্যক্তিগত, গোপন এবং আধ্যাত্মিক বা দার্শনিক দিকগুলো যেন তাৎকালিক সমষ্টিগত রাজনৈতিক দাবির ছায়ায় ঢেকে না যায়।

    কানহাইয়ালালের থিয়েটারের কথা আগেই বলেছি; তা হল থিয়েটারের এমন এক উজ্বল উদ্ধার যেখানে শিল্প ও মতাদর্শের রসায়ন জারিত হয়েছে প্রযত্ন, সমঝদারি এবং শিল্পের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার সংমিশ্রণে। মতাদর্শগত থিয়েটারের রয়েছে এক পূর্ব-নির্ধারিত গন্তব্য; সেখানে পৌঁছে যাবার পর তার আর এমন কিছুই দেবার থাকে না যা মনের মধ্যে অনুরণিত হতে থাকবে। মঞ্জিল ঠিক হওয়ার পর এই থিয়েটার নাট্যকারের কাছে বাঁধাপথে সেখানে ঠিকমত পৌঁছে দেওয়ার কাজ ছাড়া আর কিছুই আশা করে না। যাহোক, আমি একজন লেখক হিসেবে এসব করতে অপারগ। আমার কারণগুলো এবার বলছি।

    আমি যখন লিখি, তখন আমার পাঠক বা দর্শকের কাছ থেকে একান্তই ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া আশা করি, আদৌ বাঁধা বুলি শুনতে চাই নে। জানি, সেগুলো জীবন সম্বন্ধে পূর্বকল্পিত কোন ছকে ফেলা ধারণা থেকে জন্মেছে। যদিও জীবনযাত্রার বিভিন্ন পর্বে আমি কোন কোন মতাদর্শের কাছাকাছি এসেছি, কিন্তু সবসময়ই মনে হয়েছে যে কোন মতাদর্শই সমগ্র জীবনের চেয়ে বড় নয়। থিয়েটার যদি আমার জন্যে হাতিয়ার না হয়ে নিজেকে প্রকাশের মাধ্যম হয়, আমার লেখায় ফুটে উঠবে আমার নিজস্ব অনুভবের জীবনের ছবি, মতাদর্শের ফর্মুলায় বাঁধা জীবন নয়। আয়োনেস্কো যেমন বলেছেন, “শিল্প যদি কেবল মতাদর্শ ছাড়া আর কিছু না হয়, তাহলে তা হবে মাত্রাছাড়া, বাচাল এবং যে আদর্শের বড়াই করছে তার থেকে খাটো”। একজন সৎ লেখক নিজের একান্ত গোপন ব্যক্তিগত তাগিদে লেখেন। সেটি আসলে বুদ্ধিগ্রাহ্য দুনিয়ার ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাই এর অনেকটাই বিষয়ীগত বা ভাবগত। আশা করা হয় যে পাঠক বা দর্শক ব্যাপারটিকে সেভাবেই নেবে।

    আমার দৈনন্দিন জীবনে আমি এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিই যা আসলে রাজনৈতিক। এটা অবশ্যম্ভাবী, কারণ আমাদের অস্তিত্বের প্রতিটি মুহুর্ত রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত। আমি আমার কেনাকাটি আমেরিকায় করব কি ভারতে — এটাও একটা রাজনৈতিক নির্ণয়। তবে পরিস্থিতি বদলে গেলে এই নির্ণয়গুলোও বদলে যায়। সে যাই হোক, একজন যখন লিখতে বসে, সে তখন এসব পেছনে ফেলে জীবনের অপরিবর্তনীয় মৌলিক সত্যগুলোকে ছোঁবার চেষ্টা করে। মতাদর্শ ব্যাপারটা মন্দ নয়। এগুলো কখনও কখনও মুক্তির স্বাদ দেয় এবং কোন কোন সময়ে সমাজকে বদলে দেয় বটে। কিন্তু কোন ধর্ম, কোন মতাদর্শ বা কোন রাজনৈতিক কার্যক্রম আজ পর্য্যন্ত মানুষকে পূর্ণ সুখ বা মুক্তির আনন্দ দিতে পারে নি। কোন মতাদর্শই আমাদের ‘জীবন-যন্ত্রণা, মৃত্যুভয় এবং পরমকে জানার তৃষ্ণা’ থেকে মুক্তি দিতে পারে না।

    শিল্প চেষ্টা করে ধরাছোঁয়ার বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে যেতে, এবং তাৎকালিকতার গভীরে সদা স্পন্দমান নামহীন সংজ্ঞাহীন অরূপ বাস্তবতার খোঁজে যাত্রা করতে। এ কখনই রূঢ় আদর্শগত বাস্তবতার নিগড়ে বাঁধা থাকতে পারে না। লেখক যখন লেখে, সে নির্মাণ করে এক ভাবনাসঞ্জাত চরিত্রকে, যে চরিত্রটি তার অনুভবের জগতের কেব্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে। তাই একজন মানুষের ব্যক্তিগত ব্যথা-বেদনা এবং বিশাল জনসমষ্টির দুঃখ-যন্ত্রণা – দুইই সমান গুরুত্বপূর্ণ; এবং সহজেই এই যন্ত্রণা সার্বজনীন হয়ে যেতে পারে ।

    *******************************

    দেখছি, মহারাষ্ট্রে দর্শকের একাংশ থিয়েটারে কবিতার অস্তিত্ব নিয়ে অদ্ভুতভাবে বিরূপ; ওঁরা যেই থিয়েটারে কবিতার গন্ধ পাচ্ছেন অমনই সাততাড়াতাড়ি তাতে ‘সাহিত্যিক’ লেবেল সেঁটে দিচ্ছেন। এই অভিধাটি থিয়েটারে প্রায় গালি-পদবাচ্য; এর মানে করা হয়েছে বাগাড়ম্বর, অনাটকীয়, অতি-নাটকীয় এবং স্যুডো বা নকলনবিশ। এটার কারণ হল লোকজনের থিয়েটারে কবিতার ভূমিকা নিয়ে কোন স্পষ্ট ধারণা নেই এবং এটাকে তারা গুলিয়ে ফেলে কাব্যিক-বর্ণনার সঙ্গে। থিয়েটারে কবিতা হল একেবারে অন্য জিনিস; এ কখনই সাহিত্যিক বা আলংকারিক নয় — যারা আপত্তি করছেন তারা যদি এর মানে তাই বুঝে থাকেন। অত্যন্ত বস্তাপচা বা সাদামাটা বিরল কিছু ডায়লগ বা নীরব মুহুর্ত, কিংবা দৃশ্যের মাধ্যমেও এই কাব্য নির্মিত হতে পারে। নিজের রচনা থেকেই কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। ‘রক্তপুষ্প’ নাটকের একটি দৃশ্যে, যেখানে রাজা একটি ফুলকে ছিঁড়ে ফুলের গঠন এবং উপাদান নিয়ে প্রায় নৈর্ব্যক্তিক ক্লিনিক্যাল বর্ণনা দিচ্ছেন – সেটি একটি কাব্যসুষমায় ভরা মুহুর্ত। ‘ওল্ড স্টোন ম্যানসন ‘ নাটকে যেখানে বাহিনী (বৌদি—মারাঠি) স্বামীর একঘেয়ে প্যাচাল শুনতে শুনতে গয়না পরে সেজে উঠছে – সেটাও অমনই এক কবিতা । ‘সোনাটা’ নাটকে অরুণার মাথায় দোলনের ওড়না পরিয়ে দেওয়া আর একটি। এখানে কোন সাহিত্যিক ভাষা ব্যবহার করা হয় নি, না তো কাব্যসৃষ্টি করতে অযথা একগাদা শব্দ খরচ করা হয়েছে। থিয়েটারে কাব্যের নির্মাণ সাধারণতঃ দৃশ্য ও ধ্বনির স্পেস বা নিজস্ব স্থান কীভাবে ব্যবহার করা হল তার উপর নির্ভর করে। অভিনেতারা তাদের সংবেদনশীল বোধের মাধ্যমে হয় একে আরও উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যান, অথবা এই মুহুর্তগুলিকে মেলোড্রামার পর্যায়ে নামিয়ে এনে নষ্ট করে ফেলেন। সাহিত্যিক কাব্যশৈলীতে লেখা একটি নাটক যেমন থিয়েটারে কবিতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হতে পারে, তেমনই সাহিত্যিক অলংকার ছাড়া আপাত নিরাভরণ একটি নাট্যরচনাও বিশেষ নাটকীয় পরিস্থিতির জোরে কাব্যসুষমায় মন্ডিত হয়ে উঠতে পারে। “ওয়েটিং ফর গোডো” এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ভাবছি, কখনও গোটা টেক্সট বা রচনাটিই কাব্যিক হতে পারে কি? নাটকে তো কিছু মুহুর্ত বা দৃশ্য কাব্য হয়ে ওঠে; কিন্তু সেটুকুই তার শিল্পের জাদুতে গোটা টেক্সটকেই কাব্যের আভায় আলোকিত করে।

    থিয়েটারে এই ধরণের কাব্যকে খারিজ করার পেছনে রয়েছে অকৃত্রিম আবেগ, গভীর অনুভূতি এবং আবেগের উন্মুক্ত প্রকাশের মুখোমুখি না হওয়ার ইচ্ছে। এই দর্শকেরা সীটে বসে ছটফট করে আর এ’জাতীয় কাব্যকে নান্দনিক যুক্তিতে নাকচ করে দেয়, যদিও আসল কারণটা হচ্ছে চোখের উপর চাপ না নিতে পারা। এটা দেখা -- কেউ তার আত্মাকে নগ্ন করে মেলে ধরছে — সবসময় বড্ড অস্বস্তিকর । ফলে ‘কাব্য’কে ‘সাহিত্যিক’ বলে গুলিয়ে ফেলে খারিজ করা বিনা উপায় কি !

    কখনও কখনও নাট্যকার এর জন্যে কিছু চিত্রকল্পের বা ‘ইমেজে’র সাহায্য নিয়ে থাকেন। এই চিত্রকল্পগুলো তাঁর রচনায় ফিরে ফিরে আসে এবং তাতে এক গভীর কাব্যময় অনুভূতি এনে দেয়। টি এস এলিয়টকে উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারছি নাঃ “এই চিত্রকল্পগুলো তার (লেখকের) আশৈশব সমগ্র জীবনের সংবেদনশীলতার ফসল। একটি পাখির গান, একটি মাছের লাফিয়ে ওঠা ---- এজাতীয় স্মৃতিগুলোর প্রতীকাত্মক মূল্য থাকতেই পারে, কিন্তু সেটা কিসের তা আমরা বলতে পারি না, কারণ তারা উঠে এসেছে অনুভবের এমন গহন থেকে যেখানে উঁকি মারা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়” ( তির্য্যক অক্ষর আমার—এলকুঞ্চওয়ার )।

    এই সেই এলিয়ট কথিত ‘অনুভবের গহন’ যা নাটককে কাব্যসুষমায় মন্ডিত করে। যে দর্শক এর সুর শুনতে পায় না, সে এর মূল রসাস্বাদন থেকে বঞ্চিত রয়ে যায়।

    একজন নাট্যকার তাঁর রচনায় কবিতা সৃষ্টির জন্যে অন্য অনেক পদ্ধতি বা টেকনিকের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। একটি হল কাহিনীর বর্ণনাত্মক পদ্ধতিকে নাটকীয় পদ্ধতির মধ্যে মিলিয়ে দেওয়া (চেখভ এটি আকছার করে থাকেন)। এভাবে একে আরও বিস্তৃত করে লেখক নাট্যক্রিয়াকে চরিত্রগুলোর আভ্যন্তরীণ পটভূমিতে পৌঁছে দেন, পরিহার করেন তার বাহ্যিক দিকটি।

    মূল সমস্যা হল থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত সবাই --- লেখক, অভিনেতা, দর্শক — যেন শব্দকে আস্বাদন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। শব্দের প্রয়োগ নিষিদ্ধ, এটা ঠিক আধুনিক নয়, এ হল নিকৃষ্ট শিল্প! ভাবি, এসব ওই আঙ্গিক -অভিনয় প্রধান বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ থিয়েটারের ফলশ্রুতি কিনা!

    মিলারের ভাষায় যা ‘লেখকের সৃষ্টির আনন্দ, তার রচনায় বাগ্মিতার উজ্বল ছটা’ – তা যেন ইদানীংকালের ‘ভিস্যুয়াল থিয়েটার’ বা ‘নাটক হবে দৃশ্যকাব্য’ গোছের প্রচারের ঠেলায় থিয়েটার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এতে যেমন ওদের ক্ষতি, তেমনই সামগ্রিকভাবে থিয়েটারেরও। বেশ; তাহলে উইলিয়ামস, লোরকা এবং স্ট্রিণ্ডবার্গের নাটক নিয়ে কিম কর্তব্যম? সেদিন গিরিশ কারনাড়ের ‘ ফ্লাওয়ার্স’ দেখলাম। আধুনিকের দল নাক কুঁচকেছিলেন। কিন্তু আমি খুব উপভোগ করেছি --- কী ভাষা! এত ভাল লেখা! এমন করে বলা! আর বিশেষ করে বলার ব্যাপার হল লেখাটা যখন ঘরে বসে পড়েছিলাম তখন আহামরি কিছু মনে হয় নি। কিন্তু (পূর্বানুমানের সম্ভাবনা সত্ত্বেও) যেই দেখতে গেলাম, সেটি থিয়েটারের পটভূমিতে আলোয় আলো হয়ে উঠলো, এবং তর্কাতীতভাবে প্রমাণ করে দিল যে এই হচ্ছে খাঁটি থিয়েটার, আর কিছু নয়। যদি বলি -- একটি সুলিখিত এবং সুপঠিত রচনাও বৈধ নাটকীয় অনুভূতির স্বাদ এনে দিতে পারে, লোকে পাত্তা দেবে না। একটি গুরুত্বপূর্ণ নাট্যধারাকে জঞ্জালবোধে ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে। হয়তো কিছু লোক আগে থেকেই কিছু গেড়ে বসা ধারণা নিয়ে থিয়েটার হলে ঢোকে, যেমন --- কোনটা ভাল থিয়েটার, কোনটা মন্দ; কোনটা আধুনিক, কোনটা নয়। এভাবে এরা কিছু খুপরি বানায় এবং যে নাটক খাপে খাপ হল না তার থেকে চোখ বুঁজে ফেলে।

    *************

    থিয়েটারের সবচেয়ে গৌরবময় মুহুর্ত হল যখন রিহার্সাল শুরু হয়। সেই ক্ষণ, যখন নাটকের সঙ্গে যুক্ত সবাই একটা দমবন্ধ গোপন স্থানে নিজেদের আবেগ-অনুভুতি নিয়ে আবদ্ধ হয়; এই সেই স্থান, যেখানে সবাই মুখোশ খুলে ফেলতে বাধ্য হয়, নিজেদের দুর্বলতাকে উন্মুক্ত করে মেলে ধরে, আর মিলিত হয় --- নাট্যরচনাটিকে, নিজেকে এবং একে অপরকে হাতড়ে খুঁজে চলার এক যন্ত্রণাদীর্ণ আনন্দযাত্রায়। এই হল আসল সম্মেলন, যার জন্যে আমরা হা-পিত্যেশ করে অপেক্ষায় থাকি – এক সৃজনশীল মিলন। এই সেই সময়, যখন সবাই মিলে একসাথে ঘেন্না করি, ভালবাসি আর হতাশ হই, আমাদের সব আড়াল ঘুচে যায়। এই সেই মুহুর্ত যখন প্রকৃত মানবিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় -- আমাদের উগ্রভাবে সামলে রাখা ব্যক্তিগত স্বাধীন জীবনে যা বিরল, যা বাতিল। কিন্তু যে মুহুর্তে নাটকটি মঞ্চে আরম্ভ হয়, ওই ম্যাজিক উপে যায়। শুরু হয় হাততালি, অভিবাদন আর তারিফের পালা; কিন্তু এসব হল ফাউ। একজন শিল্পী, যে যাত্রা করেছে অন্তর্মনের জগতে এবং খুঁজে বেড়াচ্ছে খাঁটি মানবিক সম্পর্ক, তার কাছে এসব তুচ্ছ।

    ****************

    প্রায় তিনদশক ধরে আমি নাট্যসমালোচনার অধ্যয়ন করছি এবং তা আমার চিন্তাকে স্পষ্ট রূপ দিতে অনেকখানি সাহায্য করেছে। আমি হয়ত এখানে ওখানে কিছু শব্দ বা শব্দবন্ধ বিভিন্ন সমালোচকের লেখা থেকে ধার করেছি। কিন্তু আমাকে যারা সমৃদ্ধ করেছে আজ তাদের উৎসমুখ মনে করতে পারছি না, তাই এখানে তাদের সবার নাম উল্লেখ করতে আমি অপারগ। এখানে আমি তাদের সবার কাছে ঋণ স্বীকার করলাম।

    (শেষ)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • PT | 203.***.*** | ১৮ মার্চ ২০২১ ০৯:৩৫733754
  • RR
    বহু বছর আগে নব্বই এর দশকে পুণেতে একটি নাট্যোৎসব হয়। সেখানে বেশ কয়েকটি মারাঠি নাটকের মারাঠি এবং তার বাংলা সংস্করণ পর পর অভিনীত হয়। আমার যত দূর মনে পড়ছে সেখানে মহেশের একটি নাটক অভিনয় করে সোহাগ সেনের নাট্যদল "অনসম্বল"। নাটকের নাম কিছুতেই মনে আসছে না [Vāḍā Cirebandī(The Old-Stone Mansion, 1985); বাংলায় "উত্তরাধিকার"??]। কিন্তু মনে আছে যে সেটা কোন পড়তি এক্কান্নবর্তি বনেদী পরিবারের কাহিনী ছিল। তার একটি দৃশ্যের অসাধারণ অভিনয় এখনো মনে আছে। এক্জন মধ্যবয়সী মহিলা চরিত্র বংশানুক্রমে প্রাপ্ত গহনা পরে পূর্বপুরুষদের উপস্থিতি ও স্পর্শ অনুভব করছে। পবতে সেই নাটকের কতগুলো অভিনয় হয়েছিল কে জানে।
     

  • Ranjan Roy | ১৮ মার্চ ২০২১ ১৫:১০733755
  • ওয়াহ পিটি ওয়াহ !


    ওই নাটকটি, মারাঠিতে "ওয়াড়া চিরেবন্দী' , হিন্দিতে "পঞ্ছি  এয়সে আতী হ্যায়" কোলকাতার নান্দীকার উৎসবে শ্রীরাম লাগু নিয়ে এসেছিলেন।  সঙ্গে বোধহয় উত্তরা বাওকর বা বিজয়া মেহতা ঠিক মনে নেই। 


    এঁর নামকরা সাতটি নাটকের ইংরেজি অনুবাদের সংগ্রহটি,  বোধহয় সীগালের, ব্রহ্মপুরে বিকাশের( স্প্যানিশ কবিতার অনুবাদক) কাছে রাখা আছে। কখনও পড়তে চাইলে বলবেন, ঘরে পৌঁছে দেবে।

  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 14.14.***.*** | ১৮ মার্চ ২০২১ ১৫:৪৪733756
  • এই আলোচনা টার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

  • Ranjan Roy | ১৮ মার্চ ২০২১ ১৫:৪৮733757
  • থেংকু বোধি। 


    কয়েকবছর ধরে ভাবছিলাম এর অনুবাদ করে বন্ধু ও যাঁরা নাটকের রসিয়া তাঁদের মধ্যে ছড়িয়ে দেব। 


    প্রথমে "যাপনচিত্র', তারপরে ভাবলাম গুরুতে অনেক রসিয়া আছেন। এই আর কি!

  • b | 14.139.***.*** | ১৮ মার্চ ২০২১ ১৬:৫১733758
  • রঞ্জনদাকে ধন্যবাদ। নাটকগুলোর বাংলা পাওয়া যায়? আসলে ভারতীয় ভাষার অনুবাদ ইনজিরিতে  পোত্তে ইচ্ছে করে না। 

  • Ranjan Roy | ১৮ মার্চ ২০২১ ১৯:৫৪733759
  • সত্যি কথা, খোঁজ করছি।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন