এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বাঘ ও সেতার ঃ- সত্যজিতের কেরামতি  

    Arkarup Gangopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২৯৫০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • নির্ঘাত ভাবছেন এমন উদ্ভট ক্যাপশনের অর্থ কী?

    নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে বাঘের সঙ্গে সেতারের কী সম্পর্ক থাকতে পারে? আমাদের শরীর-মন একটির আওয়াজ শুনলে অসাড় হয়ে যায় ভয়ে, অন্যটির সুরে ছন্দে তৃপ্ত হয়। এদের মধ্যে সম্পর্ক আসে কোত্থেকে? আপাত দৃষ্টিতে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও এক আশ্চর্য মিল দেখিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় ।

    আজ সে কথাই বলবো।

    প্রথমে আসি সেতারের কথায়; বহুপরিচিত এই ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রটির সুর মূলত লিরিক্যাল বা গীতল। তাই এর সঙ্গে রোম্যান্টিকতা জড়িয়ে আছে - কিন্তু সবক্ষেত্রে নয়! মূলত মধুর সুরের কারবার করলেও সেতারের সুরের সঙ্গে গাম্ভীর্যের সম্বন্ধও প্রবল, কিছু ক্ষেত্রে।

    ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ধারায় সেতার বাদনের মূলত দুটি ঘরানা বা স্কুল প্রচলিত - বীণকার ঘরানা এবং গায়কি ঘরানা। প্রথম ঘরানা মূলত ধ্রুপদের অনুসারী, দ্বিতীয় ঘরানা খেয়ালের; বীণকার ঘরানা ধীরে সুস্থে আলাপ করে এবং যন্ত্রের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যকে বাজনার আলাপে পুরোমাত্রায় এক্সপ্লয়েট করে। তারের ওপর এই বিশেষ শৈলীর কারণে বলা হয় তন্ত্রকারী (তন্ত্রী = তার)। ধ্রুপদের অনুসারী বলে এই ঘরানার বাদনশৈলীতে মন্দ্র সপ্তক বা বেস অক্টেভের প্রয়োগ হয় বেশি এবং সেতারে সেই গম্ভীর ধ্বনি আনতে দুটি বিশেষ তার বসানো হয়ে থাকে । এই তার দুটিকে বলা হয় খরজ এবং খরজ পঞ্চম (অতি মন্দ্র সপ্তকের সা এবং পা)। সেতারের অন্যান্য তারগুলির আওয়াজ তুলনায় চড়া হওয়ায় দুয়ের সম্মিলনে বীণকার ঘরানার সেতারের আওয়াজ অনেকটাই আলাদা। গায়কি ঘরানা কন্ঠ সঙ্গীতের অনুসারী , মানুষের গলায় সুর লাগানোর পদ্ধতিকে এই সেতারে আনবার চেষ্টা করেন বাদক, খেয়াল গায়নে মন্দ্র সপ্তক বেশি ব্যবহার হয়না তাই এঁদের খরজের তারের প্রয়োজন হয়না। সেতার যন্ত্রের তিন দিকপাল রবিশঙ্কর, বিলায়েত খাঁ এবং নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় এই দুই ঘরানারই প্রতিনিধি; রবিশঙ্কর বীণকার ঘরানার, বিলায়েত ইমদাদখানি ঘরানার (গায়কি অঙ্গ নামটি তাঁরই দেওয়া) এবং নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত বীণকার ঘরের হলেও গায়কি ঘরানার কিছু অঙ্গ নিজের বাদনে প্রয়োগ করেছেন। প্রসঙ্গত তিনজনই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন সফলভাবে।

    হয়তো অনেকে আন্দাজ করতে পেরেছেন লিঙ্কটা কোনখানে। সেতারের খরজ অঙ্গ ! রবিশঙ্কর বা নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় দুজনেই খরজ অঙ্গের দক্ষ শিল্পী; কোনো রাগ রূপায়ণের আলাপ বা জোড় পর্যায়ে খরজের গম্ভীর ধ্বনিতে সুরের বিস্তার এক অপূর্ব রসের জন্ম দেয়, রসিক শ্রোতা মাত্রেই একথা জানেন। কিন্তু তাকে যে পর্দায় বাঘের ডাকের বিকল্প করে ব্যবহার করা যায়, একথা কেউ ভাবেননি। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে রবিশঙ্কর খরজের আলাপ করেছেন দুটি জায়গায়, 'অপরাজিতে' হরিহরের গঙ্গার ঘাটে অজ্ঞান হওয়ায় দৃশ্যে এবং 'অপুর সংসারে' অপর্ণার মৃত্যুর পর অপুর শোকার্ত শয্যাশায়ী মুহূর্তে, বিলায়েত খাঁর সঙ্গীত পরিচালনায় 'জলসাঘরে' অনেক জায়গায় সুরবাহারে খরজ অঙ্গ বেজেছে। এইসব মুহূর্ত নিঃসন্দেহে শটের মেজাজ, আবহ বজায় রেখেছে কিন্তু মূলত সেটা মুড নির্ভর এবং মানুষের মনের অবস্থা ব্যক্ত করার জন্য। 'হীরক রাজার দেশে' -তে যেখানে সত্যজিৎ একটি বিশেষ গানের জন্য সেতারের খরজের ব্যবহার করেন, সেখানে মানুষের মনের ভাবের পাশাপাশি একটি হিংস্র পশুর অবস্থানকে চিহ্নিত করাও দরকার হয়ে পড়ে।

    বুঝলেন, কোন গান?

    আমরা বলছি 'পায়ে পড়ি বাঘমামা'-র কথা। রাজকোষ থেকে হীরে চুরি করতে এসে আচমকা বাঘের মুখোমুখি পড়ে গিয়ে চূড়ান্ত নার্ভাস হয়েও গুপি-বাঘা কাজ করতে সক্ষম হয়, গানটা সেই কারণেই গাওয়া যাতে বাঘ নড়তে না পারে। এবার এই অবস্থায় গুপির মনে যে ভীতি তাকে রূপায়িত করতেই গানটির গঠন অন্যরকম। গুপি বাঘা সিরিজের সব গানই মোটামুটি সহজ সুরের ওপর। কিন্তু 'পায়ে পড়ি বাঘমামা' একেবারে রাগভিত্তিক, 'পুরিয়া ধানেশ্রী' এবং 'শ্রী' - খুব কাছাকাছি দুটি রাগের আদল এই গানে পাওয়া যায়। গানের বাণীর মাঝখানে মাঝখানে খরজের তারে বাঘের ডাকের আর্টিস্টিক মেটাফর সত্যজিতের সঙ্গীতবোধের পরিণতির কথা বলে। কোনো সেতারবাদক খরজের তারের এমন ব্যবহার ভাবতে পারেন না, কিন্তু শব্দ নিয়ে কী খেলা করা যায় তা শুধু এই খরজের তারের প্রয়োগ দিয়ে সত্যজিৎ বুঝিয়ে দিয়েছেন।

    আরেকটি বিষয় বলা যায়, এই রাগভিত্তিক গানের মধ্যেও সত্যজিতের বাহাদুরি লুকিয়ে আছে; পুরিয়া ধানেশ্রী বা শ্রী দুটিই বেশ গম্ভীর প্রকৃতির রাগ, পরিস্থিতির সঙ্গে তাই এই সুর ভীষণ ভালো খাপ খেয়ে যায় এবং গানে গুপির গলায় (আসলে অনুপ ঘোষালের) একটু তান শুনতে পাওয়া যায় - সেটা কিন্তু শুধুমাত্র ওস্তাদি দেখানো নয়; আসলে ভয়ে গলা কেঁপে যাওয়ার মেটাফরকেও সত্যজিৎ দেখিয়েছেন, কাজেই সিরিয়াসনেসের মধ্যেও রসিকতার ছোঁয়া দিতে ভোলেননি। যাই হোক, খরজের তারে বাঘের ডাকের প্রকাশ ভোলা যায় না। গানটি ইউটিউবে গিয়ে শুনে আসতে পারেন । ইন্টারল্যুডে যে গম্ভীর বাঘের মতো আওয়াজ শুনবেন বা বহুবার শুনেছেন সেটা আসলে সেতারের তার, আর এমনই প্রয়োগ যা সেতারবাদকরা চট করে ভাববেন না !
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Gopa Mukhopadhyay | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:২৫97353
  • বাঘ  ও সেতার -খুবই ভালো লাগল ঘ্ন

  • Guruchandali | 136.228.***.*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:৩৪97519
  • যাঁরা খেরোর খাতায় নতুন লেখালিখি করছেন, গুরুচণ্ডা৯-র টেকনিকাল ফীচারগুলো তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা করার জন্য আগামী শনিবার ভারতীয় সময় রাত ৮-১০টা আমরা একটা ওয়েবিনার করছি গুগল মীট-এ। ইচ্ছে আছে আগামী কয়েক সপ্তাহ জুড়ে প্রতি শনিবার ঐ নির্দিষ্ট সময়ে ওয়েবিনার করার। আপনাদের কী কী অসুবিধে হচ্ছে লিখতে বা একটা সামাজিক মাধ্যম হিসেবে গুরুচণ্ডালির পূর্ণ স্দ্ব্যবহার করতে, সেটাও আমরা নোট করব, যাতে এটাকে আরও উন্নত করা যায়, প্রযুক্তিগতভাবে। সম্ভব হলে থাকবেন। শনিবার রাত আটটায় নিচের লিংকে ক্লিক করেই মীটিং এ জয়েন করা যাবে। 


     https://meet.google.com/ydz-ekww-see

  • π | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:১৩97534
  • @আরকারুপ  ( গুগল পদ্ধতিতে দেখি কিছুতেই ট্যাগ হয়না, উলটে নিজের থেকে নাম বাংলা করে দেয় !! তাও এই বিকট বানানে )।  জানিনা, অর্করূপবাবু নোটি পাবেন কিনা। 


    লেখাটা বেশ ইন্টারেস্টিং তো !  গানগুলোর ইউটিউব লিঙ্ক ও সংগে দিয়ে দিলে  পড়ার মাঝে মাঝে বাজিয়ে বাজিয়ে শুনলে আরও ভাল বোঝা যেত।  বিভিন্ন ঘরানার সেতারের নমুনা দিয়েও।  খুঁজে খুঁজে অবশ্য শোনাই যায়। 


    'সেতার বাদনের মূলত দুটি ঘরানা বা স্কুল প্রচলিত - বীণকার ঘরানা এবং গায়কি ঘরানা । প্রথম ঘরানা মূলত ধ্রুপদের অনুসারী , দ্বিতীয় ঘরানা খেয়ালের ; বীণকার ঘরানা ধীরে সুস্থে আলাপ করে এবং যন্ত্রের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যকে বাজনার আলাপে পুরোমাত্রায় এক্সপ্লয়েট করে। তারের ওপর এই বিশেষ শৈলীর কারণে বলা হয় তন্ত্রকারী (তন্ত্রী = তার)। ধ্রুপদের অনুসারী বলে এই ঘরানার বাদনশৈলীতে মন্দ্র সপ্তক বা বেস অক্টেভের প্রয়োগ হয় বেশি এবং সেতারে সেই গম্ভীর ধ্বনি আনতে দুটি বিশেষ তার বসানো হয়ে থাকে । এই তার দুটিকে বলা হয় খরজ এবং খরজ পঞ্চম (অতি মন্দ্র সপ্তকের সা এবং পা ) । সেতারের অন্যান্য তারগুলির আওয়াজ তুলনায় চড়া হওয়ায় দুয়ের সম্মিলনে বীণকার ঘরানার সেতারের আওয়াজ অনেকটাই আলাদা। গায়কি ঘরানা কন্ঠ সঙ্গীতের অনুসারী , মানুষের গলায় সুর লাগানোর পদ্ধতিকে এই সেতারে আনবার চেষ্টা করেন বাদক , খেয়াল গায়নে মন্দ্র সপ্তক বেশি ব্যবহার হয়না তাই এঁদের খরজের তারের প্রয়োজন হয়না। '


    এটা পড়ে দু'তিনটে প্রশ্ন মনে হল । খেয়াল আর ধ্রুপদ দুইই তো গাওয়া হয়। তাহলে খেয়ালের সংগেই কণ্ঠসংগীত আসোসিয়েট করা কেন ?


    আর সেতারের থেকেও বেশি কথা বলে বলে মনে হয় সারেঙ্গি, এস্রাজ, বেহালা শুনলে। কেন মনে হয়, এর সঙ্গে মন্দ্র, তারসপ্তকের প্রয়োগ,  তারের আওয়াজ , সম্পর্ক নিশ্চয় আছে, থাকলে সেনিয়েও যদি লেখেন। 

  • সম্বিৎ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:২৩97542
  • বিষয়টা ইন্টারেস্টিং। 


    (নিখিল বন্দোপাধ্যায় সত্যজিতের সঙ্গে কোন ছবিতে কাজ করেছেন?)


    সেতারে "গায়কী অঙ্গ" এই কথা বোধহয় বিলায়েত খাঁ সাহেব প্রথম প্রকাশ্যে বলেন। হয়ত ওনাদের ঘরে, মানে ইমদাদ খাঁ সাহেবের ঘরে, কথাটা চালু ছিল। সাধারণের মধ্যে চালু করেন বিলায়েত খাঁ সাহেব। তখন এই নিয়ে বেশ ঘোঁটও পাকিয়েছিল। শুনে রবিশঙ্কর বলেছিলেন, "তাহলে আমরা কী বাজাই? ঢোলক অঙ্গ?"


    তা যাক, আসল কথা হল সেতারে বাঘের ডাক। প্রথম খটকা - "পায়ে পড়ি বাঘমামা"-য় কি সেতার বেজেছে? আমার তো শুনে বীণা মনে হল। ওই টিম্বার সেতার থেকে বের করা যায় বলে মনে হয়না।


    তবে সেতারের তার থেকে ইন্টারেস্টিং আওয়াজ বের করা পুরনো কায়দা। দেবাশিস দাশগুপ্তর লেখায় পড়েছিলাম, অনুপম ঘটকের পরিচালনার রেকর্ডিঙে লক্ষণ ভট্টাচার্য সেতারে অদ্ভুত একটা আওয়াজ বের করছেন। অনুপম ঘটক জিগেস করলেন, "ওটা কী করছেন?" ভদ্রলোক বলেছিলেন, "সকালের রাগে গান তো, তাই তালে তালে কাক ডাকিয়েছি।" দেবাশিসবাবু লিখেছেন, ঠিক কাকের ডাক না হলেও, খরজের তারে  তৈরি আওয়াজ একটা মাহোল তৈরি করেছিল। 


    পরে কিশোরকুমারের "এই যে নদী" শুনতে গিয়ে সেতারে এক ঝাঁক কাকের ডাক শুনলাম। গানের একদম শুরুতে, প্রথম পাঁচ সেকেন্ড শুনুন। শুনতে পাবেন।

  • কী চাপ ! | 115.114.***.*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৩২97543
  • আরে ওটা কাক নয়, নদীর জলস্রোতের শব্দ।

  • সম্বিৎ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:০০97545
  • ঠিক আছে, তাই সই - জলস্রোতের আওয়াজ। 

  • অর্করূপ গঙ্গোপাধ্যায় | 45.64.***.*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৫২97561
  • সম্বিৎবাবুর প্রশ্নের উত্তরে বলি - অবশ্যই সেতার বেজেছে , আলাদা গঠনের সেতার। দু ধরনের সেতার হয় মূলত। খরজ পঞ্চম সেতার এবং গান্ধার পঞ্চম সেতার , এখানে খরজ পঞ্চম সেতার (রবিশঙ্কর , নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ) ব্যবহার হয়েছে ; মাইহার ঘরানা যেহেতু ধ্রুপদী আলাপের অনুসারী তাই ধ্রপদী মন্দ্র সপ্তকের আওয়াজ তাঁরা সেতারে আনতে চেয়েছিলেন এবং সুরবাহারের তারদুটিকেই সেতার এনে বসান , ফলে আওয়াজের সেই গম্ভীর আওয়াজ আনতে কোনো অসুবিধা হয়না । 


    নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় "দ্য ইনার আই" তথ্যচিত্রের জন্য কোমল ঋষভ আশাবরী বাজিয়েছিলেন , তথ্যচিত্রের শেষের দিকে শুনতে পাবেন । 

  • Arkarup Gangopadhyay | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:০৫97563
  • আরেকজন প্রশ্ন করেছেন শুধু খেয়ালের সঙ্গে কেন গায়কি অঙ্গকে অ্যাসোসিয়েট করা হয় , আসলে যেকোনো যন্ত্র (বিশেষ করে ধ্রুপদী বাদ্যযন্ত্র) মাত্রই সে মানুষের গলার মাইমেসিস করে। আলাদা করে গায়কি অঙ্গ বলে সত্যি কিছু হয়না , কারণ বীণায় যে আলাপ বাজে তা কণ্ঠেরই অনুসারী । তবে ডিস্টিঙ্গুইশ করার সুবিধার জন্য ওঁদের সেতারের স্টাইলকে গায়কি স্টাইল বলা হয় । 


    দ্বিতীয় যে প্রশ্ন করেছেন যে , সেতারের থেকেও সারেঙ্গি , এস্রাজ , বেহালা বেশি কথা বলে - একদম ঠিক ! কারণ সেগুলি বোয়িং ; সেতার , সরোদ  প্লাকিং - কিন্তু এক্ষেত্রে সারেঙ্গি বা এস্রাজ ব্যবহার করলে গানের প্রতি সুবিচার করা হোতো না কারণ ওই যন্ত্রে খরজের তারের মন্দ্রধ্বনি নেই । রণধীর রায় এস্রাজে পঞ্চমের তার লাগালেও খরজের তারে আলাপ করেননি কখনো । তাছাড়া সেতার প্লাক করে বা টোকা দিয়ে বাজানো হলেও আঙুল দিয়ে টেনে বা মীড় দিয়ে ভোকাল এফেক্ট আনা হয় , এই সুবিধা খরজের তারে সবথেকে বেশি । খরজের তার খুব মোটা , ফলে একটা টোকা পড়লে তার রেশ থাকে অনেকক্ষণ এবং ফলে ভোকাল এফেক্ট আনা সোজা তবে পরিশ্রম এবং সাধনাসাপেক্ষ। রবিশঙ্করের প্রথম যৌবনের বাজনায় ,  নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলাপের খরজ অংশ শুনে দেখবেন , ভোকাল এফেক্ট বুঝতে কোনো অসুবিধা হবে না। 

  • সম্বিৎ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৩৮97585
    • অর্করূপ গঙ্গোপাধ্যায় | 45.64.227.82 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৫২97561
    • সম্বিৎবাবুর প্রশ্নের উত্তরে বলি - অবশ্যই সেতার বেজেছে , আলাদা গঠনের সেতার। দু ধরনের সেতার হয় মূলত। খরজ পঞ্চম সেতার এবং গান্ধার পঞ্চম সেতার , এখানে খরজ পঞ্চম সেতার (রবিশঙ্কর , নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ) ব্যবহার হয়েছে ; মাইহার ঘরানা যেহেতু ধ্রুপদী আলাপের অনুসারী তাই ধ্রপদী মন্দ্র সপ্তকের আওয়াজ তাঁরা সেতারে আনতে চেয়েছিলেন এবং সুরবাহারের তারদুটিকেই সেতার এনে বসান , ফলে আওয়াজের সেই গম্ভীর আওয়াজ আনতে কোনো অসুবিধা হয়না । 

     
    দুঃখিত, মানতে পারলাম না। কোন ধরণের সেতার থেকেই এই টিম্বার বেরোন সম্ভব নয়, যদি না ইলেক্ট্রনিকালি পোস্ট-প্রসেস করে টিম্বার বদল করা হয়। সাতের দশকে ভারতে সে সুযোগ ছিলনা।
     
    এখানে বীণা আর তালবাদ্য হিসেবে মৃদঙ্গম ব্যবহার করা হয়েছে। বীণার অনেক রকমফের হয় - রুদ্রবীণা, সরস্বতীবীণা, বিচিত্রবীণা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি কানে শুনে বীণার আওয়াজের তফাত করতে পারিনা। এখানে কোন বীণা বেজেছে বলতে পারব না। কিন্তু সরস্বতীবীণার কনসার্টের ক্লিপ শুনলে গানের বাদ্যর সঙ্গে টোনাল কোয়ালিটির সাযুজ্য খুঁজে পাবেন। তবে আপনি যদি সেতার শোনাতে পারেন যেখানে এই টিম্বার বেরিয়েছে, অন্য কোন প্রমাণ না থাকায় আপনার কথা মেনে নেব। আমি আমার কানে শোনার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। 
     
     
  • Arkarup Gangopadhyay | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:১৭97591


  • দুটি বাজনা রইলো, রবিশঙ্করের নটভৈরব এবং নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের চারুকেশি , দুজনেই শুরু করেছেন খরজ আলাপ দিয়ে। মন দিয়ে শুনুন , আওয়াজের সাদৃশ্য বোঝার চেষ্টা করুন , আমি নিজে সেতার বাজাই এবং একই ঘরানায় শিক্ষা পেয়েছি , খরজ আলাপ অত্যন্ত প্রয় অঙ্গ এবং তারের সেই টিম্বার প্রতিদিনই বার হয়। কাজেই এই আওয়াজ আমার পরিচিত। তাছাড়া টেকনিক্যালি বীণার স্কেল বেশ নিচু , পায়ে পড়ি বাঘমামা গানটি বেজেছে ডি স্কেলে , অত উঁচুতে বীণা প্রথমত চড়ানো যায় না , গেলেও যে আওয়াজ বেরোবে তা শুনতে অত্যন্ত শ্রুতিক্টু লাগবে। কিন্তু সেতার ডি স্কেলে ভালোই বাজে , এবং সেতারের গঠনের জন্যই তাতে খরজের তার ওই স্কেলে চড়াতে অসুবিধা হয়না। প্রসঙ্গত নিখিলবাবুর বাজনার লিঙ্কটিও খুললে শুনবেন তিনি ডি স্কেলেই বেঁধেছেন , এবং তাতে শুরুতে খরজ কীরকম বেজেছে শুনে আশা করি বুঝবেন। রবিশঙ্করের রেকর্ডটি অবশ্য সি স্কেলে , তাতে কিছু অসুবিধা নেই। 


    আপনি বক্তব্য নাই মানতে পারেন , কিন্তু প্রতিদিনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এর সত্যতা যাচাই করে চলেছে । 

  • Arkarup Gangopadhyay | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:২২97592
  • রবিশঙ্করের রেকর্ডটিতে - প্রথম সাতাশ সেকেন্ড 


    নিখিল ব্যানার্জির রেকর্ডটিতে - প্রথম দেড় মিনিট। 

  • Arkarup Gangopadhyay | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৪:০৪97598


  • যদি আরও প্রমাণ চান , তাই এদুটিও দিলাম। এতে সেতারে খরজের টিম্বারের আরও ভালো বুঝতে পারবেন । নিখিল ব্যানার্জির বাজনাটিতে ৯ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড থেকে শুনতে শুরু করুন। রবিশঙ্করের বাজনাটিতে ৭ মিনিট থেকে। আশা করি চারখানি প্রমাণের পর সংশয় দূর হবে। প্রসঙ্গত , রবিশঙ্করের এই রেকর্ডটি পুরিয়া ধানেশ্রী রাগের অর্থাৎ যে সুরে সত্যজিৎ আমাদের আলোচ্য গানটি বেঁধেছিলেন , কাজেই খরজের চলনে মিলও পেয়ে যাবেন।   

  • সম্বিৎ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:৫৬97694
  • আমি সত্যজিতের ওপর তিনটে বইয়ে খুঁজলাম যদি এই ব্যাপারে কোন দিশা পাওয়া যায়। পেলাম না।


    ভিডিওগুলোর জন্যে ধন্যবাদ। আমার বক্তব্য তাও একই রইল। দেশি প্লাকড স্ট্রিং ইন্সট্রুমেন্টের প্রায় সবেতেই অতি-উদারায় এই নাদ বের করা যায়। সরোদেও পাওয়া যাবে। আমার বক্তব্য সেটায় ছিল না। এই নিচু নোটের ব্যাপার ফিজিক্সের হিসেবে ফ্রিকোয়েন্সির এলাকা। আমি বলছিলাম টোনাল কোয়ালিটি সম্বন্ধে, যেটা ফিজিক্সের হিসেবে কতগুলো হারমোনিক্স, ওভারটোন লাগছে তার ওপর নির্ভর করে। (তিরিশ বছরের পুরনো ফিজিক্সের ফান্ডা, আশা করি বেসিক ফিজিক্স এখনও বদলে যায়নি)। স্পেক্ট্রোমিটারে না ফেললে সেটা বিচার করার একমাত্র উপায় কান। সেই বিচারে আমি এখনও বীণার দিকে ভোট দেব। তবে এ নিয়ে তর্ক করে লাভ নেই। লেটস এগ্রি টু ডিজেগ্রি। বরং আপনার বাজনার ডিজিটাল কপি থাকলে শুনতে আগ্রহী।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন