ওসব আষাঢ়ে গল্প : সৈয়দ তৌশিফ আহমেদ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বলবই | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২০৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
মানুষ আসলে বড্ডই বিভ্রান্ত।
সে চায় তার জীবন হবে চেনা ছকের, পরিচিত গন্তব্যের। দিনযাপন চলবে প্রত্যাশিত ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করেই; নিশ্চিন্ততার অভিমুখ বরাবর। অথচ অপ্রত্যাশিতের উপর তার ভীষণ লোভ। সীমিত ক্ষমতা নিয়েও বাধ্য গণ্ডির মধ্যে সে যেমন দাপিয়ে বেড়াতে চায় নিজ ঐশ্বর্যে, আবার তেমনি নতুন এবং অপরিচিতের প্রতিও তার জন্মান্তরের ছোঁকছোঁকানি। মানুষ চায় তার প্রেডিক্টেবল জীবনে মাঝেমধ্যে ঝোড়ো হাওয়ার মত এক ঝলক আনপ্রেডিক্টেবিলিটি ঢুকে তাকে কাঁচা সুখ দিয়ে যাক। বিপদ বাঁচিয়ে সে চেখে নেবে স্বাদ, দুলিয়ে নেবে ভিতর বাহির। আপাদমস্তক রোমাঞ্চ জাগিয়ে তারপর না হয় দিব্যি ঢুকে পড়া যাবে নিশ্চিন্ততার চিরকেলে আস্তানায়।
হন্য : সৈয়দ তৌশিফ আহমেদ
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ১৬২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
প্রশ্নটা হল, কিভাবে নিকেশ করবে আমায় ? গলা টিপে শ্বাসরোধের সাবেকি পন্থায়? আমার কুতকুতে চোখগুলো কি তখন বল্লমে গাঁথা শুয়োরের মতো ঠিকরে বেড়িয়ে আসবে ? মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বিস্ফারিত দৃষ্টি প্রাণপণে ধরে রাখতে চাইবে আততায়ীর শেষ ছবি? নাকি মরবো খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো দীর্ঘ যন্ত্রণাময় কদর্য কায়দায়? কাটা পাঁঠার মতো জগঝম্প জুড়ে, শ্বেত পাথরের তেলা মেঝেয় বমি -পায়খানায় একাকার হয়ে ? আর নাকি প্রকাশ্য রাস্তায় পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জের গরম বুলেট ফুঁড়ে দিয়ে যাবে মগজ? কিছু রক্তমাখা ঘিলু ছিটকে গিয়ে লাগবে কি কোন বেনামী ল্যাম্পপোস্টের গায়ে? কে জানে হয়তো দু একটা অশ্লীল স্মৃতিও তখন গড়িয়ে নামলো পোস্টের গা থেকে। আমার পড়ে থাকা নিথর লাশের দিকে চেয়ে রাস্তার লোক কি চমকাবে খুব? খুব ? বোধহয় পুরনো প্রফেসিকে সমর্থন জানিয়ে বলে উঠবে, – এ তো জানাই ছিল! আজ নয়তো কাল এটা হওয়ারই কথা! বেশ হয়েছে শালা!
নজরুল এসেছিলেন নিতান্ত এক দগ্ধ সময়ে : সৈয়দ তৌশিফ আহমেদ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ২৫ মে ২০২৪ | ১৮২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
প্রতিকূলতার মুখে দাঁড়িয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবনা যেভাবে প্রত্যাঘাত করেছে, সেটাকেই নজরুল শব্দের স্বচ্ছন্দ গতিতে রূপান্তর ঘটিয়ে গেছেন বরাবর, কিছুটা একবগগা এবং ছেলেমানুষের মতই। গূঢ় দর্শন তাঁর লেখার বাঁধনহারা উচ্ছলতায় খাদ মেশায় নি কখনও, তেমনই পুনরাবৃত্তিও পিছু ছাড়েনি। নজরুল ঠিক এখানেই স্বেচ্ছাচারী অসংযমী অসচেতন, এবং তাঁর সৃষ্টির অনেকাংশই গভীর ভাবলোকে অনুত্তীর্ণ। তবে ওই ঐচ্ছিক খামতিগুলোই কি তাঁকে অনন্য করেনি? তিনি তো একাই হয়ে উঠেছেন একটা ঘরানার আদি ও অন্ত। পূর্ব ও উত্তরসূরি না থাকা এক অদ্বিতীয় ধারা। এমনই এক তেজস্ক্রিয়তা, অর্ধ জীবনকালের সূত্র মেনে যার ফুরিয়ে যাওয়াটা নির্ধারিত। সেই ফুরিয়ে যাওয়াতেও অবশ্য তাঁর মস্ত সাফল্য।
ক্রসরোড : সৈয়দ তৌশিফ আহমেদ
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | ৯২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
ইরফান যখন কলেজ ওয়েব সাইটের ব্যাক এন্ডে SQL Injection পাঠিয়ে তাদের ডেটাবেস থেকে রমিলার নাম্বার তুলে এনেছিল, তখন ওর বয়স মোটে সতেরো। কম্পিউটার সায়েন্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র। স্নাতকের তৃতীয় বছরে বাংলার এক নামজাদা দৈনিক পত্রিকার ওয়েবসাইট হ্যাক করেছিল সে। আর মাস্টার্সের দ্বিতীয় বছরে একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল উপমহাদেশের দুঁদে কোডারদের।
কিছু মানুষ থাকে এরকম, এক একটা বৃত্তি যেন ছেলেখেলা হয়ে ওঠে তাদের কাছে। ইরফান তাদেরই প্রতিনিধি। চাকরি ওর পেশা নয়, একটা মুখোশ মাত্র। বাকি সময়টা সে তার রাজারহাটের স্টুডিও ফ্ল্যাটে ফ্রিল্যান্সিং করে। হ্যাকিং সংক্রান্তই নানাবিধ কাজ। ডার্ক ওয়েবে 'লিকড' হওয়া ইনফরমেশন সরিয়ে ফেলা থেকে স্ক্যামারদের চক্কর থেকে বের করে আনা, এমনকি চাইল্ড পর্ণ ওয়েবসাইট সম্পূর্ণ নির্মূল করা পর্যন্ত। এছাড়া বড় বড় বিদেশী সংস্থা ‘বাগ বাউন্টি প্রোগ্রাম’, ‘পেনিট্রেশন টেস্টিং’ এর কাজে ইরফানদের মতন হ্যাকারদের সাথে চুক্তি করে। বৈধ কাজ, তবে আয়ের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রাখতে হয় অবৈধ খাতে। ট্যাক্সের ভয়ে নয়, বেনামী থাকার সতর্কতায়। ডিজিটাল দুনিয়াতে কে কাকে কিভাবে নজরে রাখছে একথা বলা প্রায় অসম্ভব। অজ্ঞাতকুলশীল থাকাটাই একজন হ্যাকারের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং আবশ্যিক শর্তও।