ভিস্যুয়াল কোটেশন এবং সত্যজিতের ছবি : দেবরাজ গোস্বামী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৫ অক্টোবর ২০২০ | ৩৬৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
শিল্পকলার অন্য ক্ষেত্রে, মানে ছবি আঁকা, মূর্তি গড়া বা চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে যদি কেউ এই ধরনের রেফারেন্স বা কোটেশন ব্যবহার করেন তাহলে কি সেটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে গন্য হবে ? আমার উত্তর হচ্ছে ‘না’। যদি কোন শিল্পী তাঁর পূর্বজ আরেকজন শিল্পীর কোন আইকনিক কাজকে অন্য ভাবে অন্য কনটেক্সটে বা অন্য মাধ্যমে ব্যবহার করে আলাদা কোন বার্তা দিতে চান, তাহলে সেটাও শিল্পের একটা ভ্যালিড পদ্ধতি বলেই ধরে নিতে হবে । এই পদ্ধতিতে সাধারণত শিল্পী তাঁর রেফারেন্স সোর্সকে গোপন রাখতে চান না বরং সেটাকেই তাঁর নিজস্ব সৃষ্টির একটা এন্ট্রি পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করবার চেষ্টা করেন । এ বিষয়ে সেরা উদাহরণ হচ্ছে পিকাসোর পঞ্চাশের দশকের বেশ কিছু ছবি, যেখানে তিনি ভেলাস্কেথ, গোইয়া, এদুয়ার মানে প্রমুখ শিল্পীর আঁকা কিছু বিখ্যাত মাস্টারপিস ছবির পুনর্নির্মাণ করেছিলেন ।
শিল্পকলার তাত্ত্বিক ভাগাভাগি থেকে দেশভাগের শিল্প : দেবরাজ গোস্বামী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : শিল্পকলা | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৭৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
দেশভাগ বিষয়টি কোনো রাতারাতি ঘটে যাওয়া আকস্মিক ঘটনা নয়, অনেকদিন ধরেই একটু একটু করে তার প্রেক্ষিত তৈরি করা হয়েছিল – ঠিক সেইরকমই, সেই সময়ের ভারতীয় শিল্পীদের কাজে তার যে প্রতিফলন রয়েছে তাও ঠিক একদিনের ঘটনা নয়। .... আশ্চর্যের ব্যাপার হল, বাংলার নাটক, সাহিত্য, ফটোগ্রাফি এবং চলচ্চিত্রের মধ্যে দেশভাগের বিষয়টির যে জোরালো উপস্থিতি, তা কিন্তু চিত্রকরদের কাজের মধ্যে নেই। দেশ ভাগ হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ বাস্তু হারিয়ে শেষ সম্বল নিয়ে এপার বাংলায় চলে আসছে – এমন দৃশ্য আমরা সমকালীন ফোটোগ্রাফ এবং কিছু পরে নির্মিত চলচ্চিত্রে দেখতে পেলেও খুব কম শিল্পীই এই বিষয় নিয়ে সরাসরি ছবি এঁকেছেন। চিত্রকলা এমনই এক দৃশ্যভাষা, যেখানে কেবলমাত্র চোখে দেখা দৃশ্যের একটা চটজলদি ডকুমেন্টেশন করে দিলেই চলে না, শিল্পীর নিজস্ব ভাবনা, মনন এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষণ কাজের অঙ্গ হয়ে যায়। চলচ্চিত্রের মত ন্যারেটিভ মিডিয়াম নয় বলেই, চিত্রকলার ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং যথেষ্ট ম্যাচিওরিটি দাবি করে। ফলে চিত্রকরদের কাজে আমরা দেশভাগ যতটা পেয়েছি, তার থেকে অনেক বেশি পেয়েছি তার রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতের অনুসন্ধান। ....
বিসর্জনের চিত্রকলা : দেবরাজ গোস্বামী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : ছবিছাব্বা | ১৬ অক্টোবর ২০২১ | ৩০৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
প্রথম দর্শনে ছবিটি দেখে মনে হয়, এ যেন আফ্রিকার আদিম অরণ্যের গভীরে, কোন নরখাদক আদিম উপজাতির উৎসবের ছবি। তারপর, রাতের বেলায় জঙ্গলের মধ্যে, মশালের আলো এবং ধোঁয়ায় মিছিলের কয়েকজনের কাঁধে প্রকাণ্ড কালী-প্রতিমাটি দেখে বোঝা যায় – এ ছবি, এদেশের তো বটেই, একেবারে বাংলার দৃশ্য। কালীর দুই হাতে ঝুলে থাকা দু’টি মুণ্ডু এবং মশালের আলোর পিছনে প্রতিমার বিরাট ছায়া যেন ছবিটিকে রহস্যময়তার সঙ্গে সঙ্গে ভীতিপ্রদও করে তোলে। ছবিটিতে আঁকিয়ের নিজের অবস্থানও বেশ রহস্যময়। দৃশ্যটি দেখে মনে হয়, শিল্পী যেন গাছপালার ফাঁক দিয়ে, নিজেকে যথাসম্ভব গোপন রেখে, দৃশ্যটি দেখছেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলায় আফ্রিকার আদিম অরণ্যে অ্যাডভেঞ্চারের যেসব কিশোর-পাঠ্য গল্প উপন্যাস প্রকাশিত হত, তার অলঙ্করণের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে স্যাল্টিকভের আঁকা ছবির আশ্চর্য মিল। কৈশোরে এইসব গল্পে আফ্রিকার আদিম উপজাতিদের যে রোমাঞ্চকর কাহিনী পড়ে আমরা শিহরিত হয়েছি, স্যাল্টিকভের ছবিতে আমাদের কয়েক প্রজন্ম আগের পূর্বপুরুষদেরই সেইভাবে চিত্রিত হতে দেখা যায়। এইটাই মানব সভ্যতার বিরাট আয়রনি।