দেশভাগঃ পশ্চিম বঙ্গের মুসলমান এবং ধারাবাহিক অবক্ষয় - প্রথম পর্ব : দেবব্রত চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ জুন ২০১৬ | ৩৭৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
তত্ত্বগতভাবে ভারতের সংবিধান অনুযায়ী সমস্ত নাগরিক আইনের চোখে এক হলেও মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই তাত্বিক অবস্থান বাস্তব অর্থে যে ভিন্ন ছিল তা প্রমাণিত হয় সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে । মুসলমানদের যেন ধরেই নেওয়া হয়েছে যে তারা এদেশীয় নন । তাদের আনুগত্য বিষয়ে সদা সন্দিহান মনোবৃত্তির ফলে ভারতের ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস মুসলমানদের জন্য প্রায় নিষিদ্ধ ***(পাদটীকা ) । ভারতের এবং পশ্চিমবঙ্গের সরকারী অ্যাডমিনস্ট্রেসানের উচ্চ পদে মুসলমান সংখ্যা অতি নগণ্য । শিক্ষা ক্ষেত্রের উচ্চ পদে মুসলমান অবর্তমান । ভারতীয় রেলে যত সংখ্যক মুসলমান কর্মরত তার ৯৭ % চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা ঐতিহাসিক সময় থেকে হিন্দুদের তুলনায় সম্পদে, রাজনৈতিক ক্ষমতায় এবং শিক্ষায় পিছিয়ে থেকেছে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে হিন্দুরা ছিল জমিদার আর মুসলমানেরা রায়ত এবং ভাগচাষী । কেবলমাত্র ১৯২০ থেকে ১৯৪৭ এর সময়ে অবিভক্ত বাঙলায় মুসলমান মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী হিন্দুদের কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে দাঁড় করাতে পেরেছিল । মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত কেন্দ্র এবং ব্রিটিশ প্রবর্তিত কিছু সংরক্ষণের সুবিধা ,সাথে মুসলিম লীগের রাজনীতি তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতার কিছুটা পুনর্বিন্যাস করতে সক্ষম হয়েছিল , কিন্তু দেশ ভাগের পরে সমস্ত প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতৃত্বের এবং শিক্ষিত মুসলমান সম্প্রদায়ের দেশত্যাগের সাথে সাথে স্বাধীন সেকুলার ভারতবর্ষে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের পরিবর্তে চলে আসে জাতির ভিত্তিতে সংরক্ষণ ।
শাশ্বতী ঘোষ এবং তাহাদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি : দেবব্রত চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ১৮০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
সমাজের বিবর্তনের সাথে সাথে মৃত্যুদণ্ডের গুরুত্ব ক্রমশ কমেছে,এমনকি তথাকথিত বর্বর সমাজও উপলব্ধি করছে মৃত্যুদণ্ড কোন সমাধান নয়। যে হত্যা বা ধর্ষণ তাৎক্ষনিক উত্তেজনায় অথবা পরিকল্পনার ফল হিসাবে ঘটে গেছে তা পাল্টা হত্যা বা ধর্ষণের মাধ্যমে পরিপূরণ করা অবাস্তব। মৃত্যুদণ্ড অপরাধীর প্রকৃত কোন সাজা বা আদৌ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়। অনুশোচনার,পরিবর্তনের ক্ষেত্র এক লহমায় ছিনিয়ে নেওয়া,প্রতিশোধ পরিপূরণ মাত্র। বর্বর সমাজ তাদের অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত জ্ঞানে ক্রমে মৃত্যুদণ্ডের অসারতা থেকে সরে এসেছে ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির রাস্তায়। এ কোন গোবর খেয়ে বা পুরোহিত দক্ষিণায় প্রায়শ্চিত্ত করে পাপস্খালনের তঞ্চকতা নয় বরং ক্ষতিপূরনের পরিমাণ এতো বেশী যা অপরাধীকে সারা জীবন ধরে শোধ করতে হবে এবং প্রত্যহ তার অপরাধের গভীরতা তাকে স্মরণ করাবে।
রোজাভা বিপ্লব আপনাকে স্বাগত জানায় : দেবব্রত চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ | ১৭০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কুর্দ ভাসায় ‘রোজাভা’ শব্দটির অর্থ ‘পশ্চিম’। টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল,কুর্দিস্তানের পশ্চিমে,সিরিয়ার উত্তরে এবং তুরস্কের সীমানায় আবদুল্লা অচালানের ‘ডেমোক্র্যাটিক কনফেডেরালিস্ম’ বা রাষ্ট্র বিহীন গণতন্ত্রের তত্বের ভিত্তিতে রোজাভা গড়ে তুলছে এক অভূতপূর্ব গণতন্ত্রের মডেল। আইসিস মানেই যখন চরম পরধর্ম অসুহস্নিতা তখন রোজাভা সব ধর্মের মানুষের জন্য এক খোলা বাতাস। আইসিস মানেই যখন নারী গৃহবন্দী, বোরখা বন্দী,ইতিহাস বিহীন,রাজনীতি বিহীন এক সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র। ইসলামিক স্টেট এ বিধর্মী হলে যখন গন ধর্ষণ আইনসম্মত,যৌনদাসী নিয়মানুগ তখন রোজাভায় বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ এবং বলপূর্বক বিবাহ আইনত নিসিদ্ধ্ব। আইসিস মানেই যখন চরম মধ্যযুগীয় পুরুষ আধিপত্য তখন রোজাভা প্রতিটি সংস্থায় তা রাজনৈতিক পার্টিই হোক বা মিউনিসিপ্যালিটি ৪০% নারী কোটা বাধ্যতামূলক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে ভেঙ্গে দিচ্ছে হাজারো বছরের পুরুষ প্রাধান্য। প্রতিটি সংস্থা রোজাভা পরিচালনা করছেন যৌথ নেতৃত্বের ভিত্তিতে। কো প্রেসিডেন্ট, কো মেয়র, কো চেয়ারম্যান - এক জন পুরুষ হলে অন্যজন মহিলা হতে বাধ্য। মহিলারা অংশ নিচ্ছেন সমাজের সর্ব ক্ষেত্রে এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় আমরা কিছুদিন যাবত যে সমস্ত মহিলা যোদ্ধাদের ছবি দেখছি তারা সবাই এই রোজাভার মহিলা যোদ্ধাবাহিনী YPJ এর সদস্য।
রোজাভা বিপ্লব এবং তাদের বৈকল্পিক শিক্ষা ব্যবস্থা : ইয়াসিন দুমান (অনুবাদঃ দেবব্রত চক্রবর্তী )
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ | ৬৫৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩২
রোজাভাঃ টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে,সিরিয়ার উত্তরে এবং তুরস্কের সীমান্তে আবদুল্লা অচালানের রাষ্ট্রবিহীন গণতন্ত্র তত্ত্বের ভিত্তিতে গত ৬-৭ বছর ধরে যে অভূতপূর্ব গণতান্ত্রিক পরীক্ষা এবং এক বৈকল্পিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে সে সম্বন্ধে ইতিপূর্বে গুরুর ব্লগে দুটি পর্বে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। আগের লেখাটির সময়সীমা ছিল ২০১২ সালের রোজাভা বিপ্লব শুরু হওয়ার সময় পর্যন্ত – রোজাভা বিষয়ক তৃতীয় পর্ব প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে এবং রোজাভার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগের সূত্রে কেবল মাত্র গুরুচন্ডা৯-র পাঠকদের উদ্দেশ্যে ইস্তাম্বুল থেকে রোজাভার ‘বৈকল্পিক’ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একটি লেখা পাঠিয়েছেন ‘ইয়াসিন দুমান’। ইয়াসিন দুমান বর্তমানে ইস্তাম্বুলে পি এইচ ডি ছাত্র, কুর্দিশ অ্যাক্টিভিস্ট এবং রোজাভার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত – ইয়াসিন দুমানের লেখাটির অনুবাদ,লেখক পরিচিতি এবং ফুটনোট সহযোগে রইল আপনাদের উদ্দেশ্যে -পাঠক যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন রাখেন ( ইংরাজিতে রাখলে আমাকে কষ্ট করে অনুবাদ করতে হয়না) তাহলে লেখক যথাসম্ভব উত্তর দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা যারা আমাদের বর্তমান সময়ের এই অসাধারণ উচ্চাভিলাষী সামাজিক পরীক্ষা নিরীক্ষা বিষয়ে আগ্রহী তারা এই সূত্রে রোজাভার সাথে একটি প্রত্যক্ষ যোগাযোগ,মত বিনিময় গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশা রাখি।
আক্রান্ত জনতার মিডিয়া : দেবব্রত চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ অক্টোবর ২০১৬ | ১৬৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
যেখানে প্রথাগত সাংবাদিকতা ব্যর্থ,যুদ্ধের ময়দানে অনুপস্থিত, নির্দিষ্ট মিডিয়া হাউসের রাজনৈতিক অবস্থান অনুযায়ী খবরকে বিকৃত উপায়ে পরিবেশন করতে বাধ্য,সেখানে স্বাধীন আমজনতার সাংবাদিকতা এখন ভবিষ্যতের নূতন প্রহরী। নাজি জের্ফের মত এই সমস্ত স্বাধীন দেশপ্রেমী সাংবাদিকরা সংবাদের দুনিয়ায় গণতন্ত্র বজায় রাখছেন। রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রবিরোধীদের ভূমিকার তদন্তমূলক প্রতিবেদন প্রস্তুত করছেন। সরকার এবং বিদ্রোহীরা যাতে গণতান্ত্রিক অবস্থান বজায় রাখে এবং আরও স্বছ ভাবে কাজ করতে বাধ্য হয় তার জন্য নিরলস কাজ করছেন। আর মধ্য প্রাচ্যের এই নূতন মিডিয়ার দুনিয়ায় নাজি জের্ফ এক অনবদ্য ব্যক্তিত্ব। আজকের দুনিয়া যেখানে জনসেবা ক্রমশ ক্ষীয়মাণ এবং সাংবাদিকতার চরিত্র পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে দ্রুত,সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের এই সমস্ত স্বাধীন নাগরিক সাংবাদিকদের গ্রুপ, ক্রমে আরও বেশি বিশ্বস্ত, বেশি নিরপেক্ষ এবং প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক মতামত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ক্রমশ নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছেন। অন্তত মধ্যপ্রাচ্যে নাগরিক সাংবাদিকতা প্রথাগত মিডিয়ার জায়গা সক্ষম ভাবে প্রতিস্থাপিত করতে সক্ষম হয়েছে। নাগরিক সাংবাদিকতার এই হটাৎ বিস্ফোরণ সাময়িক কোন ঘটনা নয় বরং এইটাই ভবিষ্যতের ছবি হতে চলেছে। নাজি জের্ফ যেমন বলেছিলেন “To defeat us, they would have to shut down the Internet. And they can’t do that because all of them use the Internet.”