নিয়ন বাতি : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ১৭০৮ বার পঠিত
কমল বলে, “এই বাড়ি আপনাদের কাছ থেকে আমি কিনে নেব। দেখবেন আমি কেমন যত্ন করে রাখব। নতুন বাঁধন দেব, ভাঙ্গা ইঁট বদলাব, চুনকাম করব।”
মজিবুল মাথা নেড়ে হাসে, বলে, “এমনই হবার কথা ছিল, কমলবাবু।”
রেজওয়ানা বোঝে না মজিবুল কী বলতে চায়। তারপর কমল বলে, “কাল শুক্রবার। ছুটির দিন। আমার একটা অনুরোধ রাখুন আপনারা। আজ রাতে আপনারা এখানে থেকে যান। রাতের খাবার তৈরি। মনে করুন আপনারা আজ স্বাধীন, বেড়াতে এসেছেন আপনাদের শহরেরই আর এক প্রান্তে এক হোটেলে।” রেজওয়ানা কমলের দিকে তাকায়, একটা সন্ধ্যায় কমলের মুখটা মনে হয় বয়সে ভারাক্রান্ত হয়ে গেছে।
এমন ভাবে জীবনকে দেখা যেতে পারে, ভাবে রেজওয়ানা, এভাবেও বেঁচে থাকা যায়। দুজনে যে কখন কমলের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করল তারা নিজেরাই জানল না। সন্ধ্যাতারা কখন ডুবে গেছে। রেজওয়ানা কবির আর ড্রাইভার সেলিমকে ফোন করে খবরটা জানিয়ে দিল।
অবাধ অভীপ্সা : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ২৮ মে ২০২১ | ২৮৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এর এক সপ্তাহ পরে ক-র বাড়ি গিয়েছিলাম। ওনার স্ত্রী, যিনি আমাকে নিকট আত্মীয় ও আপনজনের মতো দেখতেন, তাঁকে বললাম হোমিওপ্যাথির বাক্সদুটো দেখব। উনি বাক্স নিয়ে এলে পরে ডালা খুলে দেখলাম এখনো প্রতিটি বাক্সে দুটো করে চিরকুট রয়ে গেছে। চারটে চিরকুটেই লেখা ‘বিয়ে নয়’। ক-র দর্শন নিয়ে যে গবেষণা বন্ধ করেছি তা নিয়ে আর ক্ষোভ হল না, ভাবলাম ক আসলে ভাল দার্শনিক ছিলেনই না। উনি বলতেন স্বাধীন চিন্তা ও অদৃষ্টবাদ দুটিই বিভ্রম, কিন্তু সেটা যে বিভ্রম নয় তা প্রমাণ করতেই হয়তো আমি রেবাকে বিয়ে করেছিলাম। আমার স্বাধীন চিন্তাকে প্রতিষ্ঠা করতে যে আমি যে এটা করব সেটা ওনার বোঝা উচিত ছিল। ক নিজের দর্শনে বিশ্বাস না করে নিম্নমানের এক পদ্ধতিতে আমাকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন, যৌন-নিপীড়করা বোধহয় তাদের বৌদ্ধিক দর্শন জীবনে আরোপ করতে পারে না। ফিরে এসে রেবাকে কথাটা বলতে ও বলল, “তাহলে ক সবকটা চিরকুটে ‘বিয়ে’ লিখলে তুমি আমাকে বিয়ে করতে না – শুধুমাত্র তোমার স্বাধীন ইচ্ছার তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে?”
উত্তরকালের অপেক্ষায় : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৩ মে ২০২২ | ২০৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
শৈশবের ক্ষণস্থায়ী চিত্রণ, দুরন্ত বালকের দৌরাত্ম্য, মা-বাবার স্নেহ, গ্রামের শীতের সকাল, পল-অনুপল কৈশোরের স্মৃতি, প্রথম প্রেমের ব্যর্থতা, অসংখ্য ভুল সিদ্ধান্তের আবছায়া জাল হাতের মুঠোর আঙুলের ফাঁক দিয়ে অন্তর্হিত হয়ে যায়। এরপর আসে যুদ্ধের স্মৃতি, অসিতোপলের নির্দেশে সে দিতার কাছ থেকে একটি ঘড়ি নিয়ে এসেছিল, সেই ঘড়িটি চিতাদের বিরুদ্ধে সমতলের মানুষকে জয়ী হতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এর সঙ্গে একটা বেদনাবোধ জড়িয়ে আছে। রাতের ধাবমান ট্রেনের কাচের জানালায় বৃষ্টির জল ঝরে পড়ে। জানালায় মুখ লাগিয়ে পড়তে চায় সে না-থামা স্টেশনের ঝাপসা নামফলক, স্মৃতির স্টেশন থাকে থামতে দেয় না। ট্রেন থামানোর সুযোগ থাকলে সে নেমে সঙ্কেত বদলে দিত, এই লাইনে তার ভ্রমণ করার কথা নয়। এক অসীম ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
বেলার বেতার : দীপেন ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১০ নভেম্বর ২০২৩ | ১৪৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
সারাদিন অপেক্ষা করে নওশাদ, কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। রাতে ঘুম ভেঙে গেলে নওশাদের মনে পড়ে তার কী করা উচিত, সে রেডিওর ডায়াল ঘুরিয়ে ১২০ কিলোহার্টজ বেছে নেয়। তারপর কয়েকবার “নওশাদ বলছি” বলে। ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগে রেডিও প্রাণ পায়। বেলার কন্ঠ, “আপনি সেন্ট্রাল রোডের পেছনের বাড়িগুলির মধ্য দিয়ে কাঁটাবন পার হবেন। আজিমপুর দিয়ে লালবাগে ঢুকবেন। নদী আপনাকে সাঁতরে পার হতে হবে রাতে।” নওশাদ রুদ্ধশ্বাসে বলে, “তারপর?” আবার সারাদিন নিস্তব্ধতা। সন্ধ্যায় নওশাদ ৮০ কিলোহার্টজে বার্তা পাঠায়, “নদীর ওপাড়ে কি প্রতিরোধ কমিটির কেউ থাকবে?” ভোরে বেলার কন্ঠ ভেসে আসে, “না আপনাকে ধলেশ্বরী পর্যন্ত হেঁটে আসতে হবে, আমি সেখানেই আছি।”