কানন দেবী : কল্লোল লাহিড়ি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৮ আগস্ট ২০১৬ | ১৪৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
ভয় পেয়ে গিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটা। অনেক লোকের মাঝে তাকে সকাল থেকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। এই পাড়াতে, এইরকম বাড়িতে আগে কোনোদিন আসেনি সে। তার বাড়ির লোকেরাও কোনোদিন আসেনি। তাকে আসতে দিতেও মন চায়নি তাদের। প্রায় জোর করেই চলে এসেছে ছোট্ট মেয়েটি। কারণ সে জানে তার ওপর এবার সংসারের অনেকটা দায়িত্ত্ব। কিছুদিন আগেই বাবা মারা গেছেন। মাকে সঙ্গে নিয়ে তাকে উঠে আসতে হয়েছে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানে সারাদিন, সারা রাত অমানুষিক পরিশ্রম করেও বাড়ির লোকের মন পায়নি তারা। চলে আসতে হয়েছে সেই অপমানকর আশ্রয় থেকেও। মায়ের সেই দুঃখ ছোট্ট মেয়েটি ভুলতে পারেনি কোনোদিন। ভুলতে পারেনি পড়শিদের সেই কানা-ঘুষো। আসলেই যাকে বাবা বলে ডাকতো, আদতে সেই কি ছিল তার বাবা? নাকি মায়ের অন্য কেউ...? লজ্জায় রাঙা হয়ে যেত ছোট্ট সেই মেয়েটার মুখ। দারিদ্র্য ছিল। কিন্তু দারিদ্র্যের সাথে সম্মানবোধ ছিল খুব তীব্র। ছোট্ট মেয়েটা মনে মনে পণ করেছিল আর যাইহোক দিদি, মা, এই সংসারটাকে সে কোনোদিন ভেসে যেতে দেবে না। সবাই যাতে দুবেলা খাবার পায়, পড়ার কাপড় পায়, মাথা গোঁজার জায়গা পায়, সন্মানের সাথে জীবন নির্বাহ করতে পারে তার জন্য ছোট্ট মেয়েটা নিজের সমস্ত শখ, আহ্লাদ, নিজের ছোটবেলাটা বিসর্জন দিয়ে একলা একলা প্রতীক্ষা করছে। অনেক আলো, অনেক যন্ত্রপাতি আর বেশ কিছু রঙ-চঙে মানুষের মাঝে। মনে হচ্ছে আজ তার অগ্নি পরীক্ষা। হ্যাঁ, এই ছোট্ট বয়সেই।