অনেকদিন থেকেই একটা দ্বন্দ্বে আছি, সময় কি মানুষকে প্রভাবিত করে, নাকি মানুষ সময়কে প্রভাবিত করে? সমঝদাররা বলেন, সময় তার নিজের নিয়মে চলে, নিজের ছন্দে চলে, সে কারোর ওপর নির্ভরশীল নয়, সোজা কথায় সময় কারও ধার ধারে না। কথাটা আপাতবিচারে ঠিকই। সময়কে তো কেউ সৃষ্টি বা নির্মাণ করেনি, আবার কারও ক্ষমতা নেই তার গতি রুদ্ধ করার এবং তাকে ধ্বংস করার। সময় আদি অন্তহীন। তার কোনো সামগ্রিক মাপজোকও করা যায় না। যদিও আমরা প্রায় সব ক্ষেত্রেই সময়কে মাপি ... ...
(এই প্রতিবেদনটি আমি লিখেছিলাম ২০১৮ সালে ‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের ৫২তম সংখ্যার সম্পাদকীয়তে। আজ অনেকদিন পরে লেখাটি পড়ে মনে হলো, এই সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি আজও সমান প্রাসঙ্গিক। আর তাই আমার ‘গুরুচন্ডা৯’র বন্ধুদের পড়ার জন্য পুনঃপ্রকাশ করলাম।)সদ্য প্রয়াত কবি বিকাশকুমার সরকারের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ পরিচয়ের কোনো সুযোগ অতীতে হয়নি। আর তাঁর অকাল প্রয়াণের দরুণ ভবিষ্যতেও সেই সম্ভাবনা থাকল না। তবে তিনি আমার বন্ধু ছিলেন, কেননা তিনি কবিতা লিখতেন ... ...
প্রচলিত একটি ধাঁধা এবং সেই ধাঁধার সমাধান, আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু তাসত্ত্বেও যেহেতু আমরা একে অন্যকে ততটা বুদ্ধিদীপ্ত বলে মনে করি না, তাই সুযোগ পেলেই নিজেকে যথেষ্ট চালাক প্রতিপন্ন করার জন্য সাদা কাগজে কলম দিয়ে একটা ছোট সরলরেখা টেনে বা মেঝেতে চক দিয়ে অনুরূপ রেখা টেনে প্রশ্ন করি, বলুন তো এই রেখাটির বিন্দুমাত্র অঙ্গহানি না করে কীভাবে রেখাটিকে ছোট করা যায়? যাকে প্রশ্নটা করা হলো, তিনি যদি মোটামুটি অভিনয়কলা রপ্ত করে থাকেন, তাহলে প্রথমটা না জানার ভান করে বিস্ময় প্রকাশ করবেন। তাই তো, তাই তো, এটা কী করে সম্ভব! তারপর কিছুক্ষণ বগল চুলকে সমাধান বের করার ভঙ্গিতে বলবেন, ধরে ... ...
এখন চৈত্রমাস। বাংলা বছরের শেষ মাস। অর্থাৎ ১৪২৯ শেষ হতে আর হাতে গোণা মাত্র কয়েকটি দিন। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ১৪৩০। আবার একটা নতুন বছর। নতুন বছরের প্রথম দিনে অর্থাৎ ১লা বৈশাখে আমরা কাছে থাকা আপনজনের সাথে মুখোমুখি দেখা হলেই উচ্চারণ করব ‘শুভ নববর্ষ’। তারপর বয়স ও র্ষ সম্মানের বিচারে জুড়ে দিয়ে শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা, প্রীতি, স্নেহ, ভালোবাসা ইত্যাদি। যাদের সাথে মুখোমুখি দেখা হবে না এবং যারা কাছে আদৌ থাকে না, তাদেরকে ‘শুভ নববর্ষ’র সঙ্গে যাবতীয় অনুষঙ্গ পাঠিয়ে দেব ফোন, হোয়াটস অ্যাপ, মেসেঞ্জার, ট্যুইটর, ফেসবুক এবং আরও অনেক অনেক প্রযুক্তিগত কৌশলের মাধ্যমে। বেশ কিছুদিন আগে অবশ্য এতসব কিছু আমাদের জীবনে ছিল ... ...
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে আজকের প্রজন্ম যেসব অভূতপূর্ব সুযোগ ও সুবিধে অনায়াসে আয়ত্ত্ব করে তার ব্যবহার করতে পারছে, আমাদের কৈশোর, প্রথম যৌবন, এমনকি উত্তর যৌবনেও তা ছিল না। সেই সময় আমাদের অনেক কিছুই ছিল না – যেমন টিভি ছিল না, ডিভিডি ছিল না, মোবাইল ফোন ছিল না, কমপিউটার ছিল না। এবং আরও অনেক অনেক কিছুই ছিল না। তবে রেডিও ছিল, তাতেই আমরা খবর শুনতাম, গান শুনতাম, নাটক শুনতাম, খেলার ধারাবিবরণী শুনতাম। দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য চিঠি লিখতাম। সিনেমা দেখার জন্য যেতাম সিনেমাহলে, খেলা দেখার জন্য মাঠে ময়দানে। বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের গান শোনার সুযোগ ঘটত বিভিন্ন উপলক্ষ্যে আয়োজিত জলসায়। আর ... ...
আমার সম্পাদিত ‘কালিমাটি’ পত্রিকার ১০৮তম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল বিগত ২০২২ সালে। এই সংখ্যার বিষয় ছিল ভন্ডামি । সঠিক জানা নেই, এর আগে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে বাংলায় কোনো পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল কিনা! তবে বিষয়টি যে নিতান্তই প্রাচীন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।অনুমান করা যেতে পারে, মানবসভ্যতার সূত্রপাতের সঙ্গে সঙ্গেই সভ্যতার পাশাপাশি অংকুরিত হয়েছিল ভন্ডামির ভাবনা। তারপর সভ্যতা বিকাশের ক্রমধারায় ভন্ডামিরও ক্রমবিকাশ ঘটেছে। এবং আজ এই একবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে পৌঁছে একথা বলা সম্ভবত অত্যুক্তি হবে না যে, বর্তমান মানবসভ্যতা এবং মানবজীবনে ভন্ডামি ছড়িয়ে ও জড়িয়ে আছে সংপৃক্তভাবে। ব্যতিক্রমী কিছু মানুষের কথা অবশ্যই শ্রদ্ধায় স্মরণে রাখা আমাদের কর্তব্য, নতুবা প্রায় প্রতিটি মানুষই এই ... ...
বিস্ময়! খুব ছোট্ট শব্দ। কিন্তু শব্দটি যে কতটা গভীর ও ব্যাপক, তা আমরা মাঝে মাঝেই বিস্মৃত হই। এবং ইদানীংকালে নতুন ও নতুনতর প্রজন্মের কাছে শব্দটির গরিমা যে ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। কখনও কখনও মনে হয়, আর কিছুদিন পর শব্দটিকে হয়তো বাতিল কাগজের ঝুড়িতে পাচার করে দেওয়া হবে। কেননা, আজকের ছেলেমেয়েরা কোনো ব্যাপারেই আর তেমন ভাবে বিস্মিত হচ্ছে না। বিস্ময়ের ঘনত্ব ও আপেক্ষিক গুরুত্ব দ্রুত কমে যাচ্ছে তাদের কাছে। আমরা, মানে তথাকথিত প্রবীণরা, ইদানীং যখন কোনো ব্যাপারে বা বিষয়ে বিস্মিত হই বা অবাক হই, তখন নবীনরা প্রায় ধমক দিয়েই বলে – ‘এতে এ্যাতো অবাক হওয়ার কী আছে? যত ... ...