আমার শহরের শেষ দেবদূত মানুষটি চলে গেলেন। শহরটি একেবারে নি:শ্ব হয়ে গেল। মনে রাখার মতো আর কেউ থাকল না। তিনি ময়েনউদ্দিন স্যার। আমার হাই স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক। ক্লাশে ঢুকেই বলতেন, এক চাইতে ১০ নম্বর অংকগুলো করো। অথবা চোখের সঙ্গে ক্যামেরার ছবিসহযোগে তুলনা করো। তারপর তিনি বসতেন চেয়ারে। সামনে টেবিল। বসে বসে নিমিশে তিনি ডুব দিতেন অন্য কোনো জগতে। কখনো তিনি মিটি মিটি হাসছেন। কখনো গম্ভীর হচ্ছেন। কখনোবা গভীর বিষাদ তার মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা ১ চাইতে ১০ নম্বর অঙ্ক করতে করতে, চোখের সঙ্গে ক্যামেরার তুলনা আঁকতে আঁকতে সেই মুখের নানা ভঙ্গিমায় এসে থেমে যেতাম। আমার পাশ থেকে আলী কদর খান কনক বলে উঠত, ... ...
আমার বন্ধু প্রতীক সাইফুল। কবিতা লিখত। গল্পও লিখেছে বেশ কিছু। কোনো বই নেই। ঢাকার চারুকলা থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রী পাশ করেছিল। আমাদের মধ্যে প্রতীকই প্রকৃত লেখক হয়ে উঠেছিল। ওর বাবা ছিল কবি। নাট্যকার। কালিবাড়ির পুকুরের উপর ছিল ওদের বাসা। সামনে ছিল কবির চেম্বার। ছিল মৌমাছির চাক। বাবুই পাখির ঘর। পাখির পালক। কয়েকটা মানিপ্লান্ট। আর বিড়াল। কয়েকটি ক্যাশ বই। তাতে লেখা নাক্সভমিকা আর নানারকম পদ্য। ওদের বাড়ির বারান্দা থেকে বড়শি পেতে মাঝে মাঝে পুকুর থেকে মাছ ধরেছি।। এই চেম্বারে বর্ণির বাওড় থেকে আবুল হাসান এসে বসে থাকতেন। সদ্য লেখা কবিতা শোনাতেন। পরে রাজা যায় আসে, পৃথক পালঙ্ক, যে তুমি হরণ করো নামে তাঁর তিনটি কবিতার ... ...
১. আমার দাদু সুচিত্রা সেনকে চুরি করে এনেছিলেন কলকাতা থেকে সাইকেলের রডে বসিয়ে। গ্রামের মানুষ দেখে অবাক। গালে হাত দিয়ে বলে, ওম্মা, এ তো দেখি দেবী সরেস্বতি। দাদুর মা ঠাকুরুনটি ছিলেন বেশ বুদ্ধিমতি। তিনি ঘোমটা সামান্য নামিয়ে বললেন, সরেস্বতি হইবে ক্যান। এই হইল গে পরী। চ্যাত ভ্যাত দেখলি ঘাড় মটকে দিতি পারে। এই হেতু সেকালে সুচিত্রা সেনকে নিয়ে আর কেউ কৌতুহলী হয়নি। সুচিত্রা সেন দাদুর বাড়িতে থাকল কি গেল সেটা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা ছিল না। পরবর্তীকালে এই বিষয়ে কেউ কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। কোনো প্রামাণ্য সূত্রও রেখে যায়নি। গেলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে যেসব সিনেমায় সুচিত্রা সেনকে দেখি, সেই সুচিত্রা আসল সুচিত্রা ... ...