পরেরদিন বিকেলে সাবু লর্ডসের মোড় হয়ে ঘুরে আসে। সেখানে তখন লোকের মাথা লোকে খাচ্ছে। লোকে এগ্রোল খাচ্ছে। লোকে মোগলাই খাচ্ছে। একটা বেলুন হাওয়ায় গোঁত্তা খেতে খেতে ভেসে গেল থানার ওদিকে। একদল কলেজের দাদাদিদি প্রচণ্ড হাসতে হাসতে টালিগঞ্জের দিকে চলে গেল। তারা কারো দিকে তাকাচ্ছেই না। তাদের হাসিগুলো মেঘের মত ভেসে রইল এবং একটা বাচ্চা সেটা লাফিয়ে ছুতেই সেটা তার হাতে চলে এলো। তার সাথে ছিল তার বাবা আর মা। তারা হাসির শব্দে ফিরে তাকিয়ে দেখে একটা আধটেকো লোক রাস্তা পার হয়ে হাসি হাসি মুখে তাদের দিকেই আসছে। বাবাটা এই আগন্তুককে চিনল কিনা বোঝা গেলনা, কিন্তু তার আগেই আরেকটা ভিড়ের ঢেউ ... ...
দেখতে দেখতে পুজো এসে যায়। ষষ্ঠীর রাতে ধীরুকাকা এসে বলল বাড়ি খালি করে দিতে হবে। নতুন ভাড়াটে আসবে। মা অনেক কান্নাকাটি করল। মাঝরাতের দিকে একটা ঠেলা এসে দাঁড়াল বাড়ির সামনে। বাড়ির পাশের কাশফুলের ঝোপ সেই প্রথম চাঁদের আলোয় দেখে সাবু। গেলবারের ঘোর বর্ষায় ধীরুকাকা পরপর ইট পেতেছিল বাঁধানো রাস্তা অব্ধি। ঝুরো ঝুরো নীলচে আলোয় সেগুলো মনে হয় কেউ আলপনা এঁকেছে বুঝি। ঠেলাওয়ালা বলে দুগগা বলে চলুন দিদি।ঠেলার উপর সংসার, তার উপরে সাবু। আকাশে আলগোছে চাঁদ। বাতাসে রাতজাগা শিউলির গন্ধ।সেইরাতে কোনওরকমে একটা বাড়ি জোগাড় হল। একচালা, আধভাঙ্গা। মাটির বাড়িতে আলো নেই। পুঁটুলি করা জামাকাপড় বাসনকোসনের উপরেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল সাবু। ঘুম ভাঙল ঢাকের শব্দে। নতুন ... ...
এদিকে বারুদ-বারুদ গন্ধ নিয়ে শরত আসে। চুপিচুপি মা-কাকিমারা আলোচনা করে। কারা যেন দেশের শত্রু। সাবু ভাবে মহিষাসুরের কথা, মা-দুর্গার কথা। পাশের পাড়ার সরোজদা মহালয়ার আগের দিন বিকেলে যুগবাণী ক্লাবের দিক থেকে ফিরছিল পড়া সেরে। পরেরদিন সবার ঘুম ভাঙল ওর মায়ের কান্নাকাটিতে। তারপর থেকে সন্ধে নামলে কেউ আর সচরাচর বাড়ি থেকে বেরোয়না। নিঝুম সন্ধ্যার আবহে দূরে কাদের বাড়ি থেকে মহিষাসুর-মর্দিনী ভেসে আসে।এর মধ্যেই একদিন হীরু এসে বলল, ‘জানিস আমি আর দাদাভাই এবার একটা পত্রিকা বার করব পুজোর আগে। তুই লিখবি?’হীরুর সাথে সাবুর আলাপ হয়েছিল গলফক্লাবে। দুজনেই গিয়েছিল সাহেবদের ফেলে দেওয়া গলফবলের সন্ধানে। মনে আছে সেদিন হীরু একটা পেয়েছিল, কিন্তু সাবু পায়নি। ... ...
এটা ছোটদের গল্প নয়। এটা একজন ছোট্ট মানুষের গল্প। নাম তার সাবু। আর এ এমন এক সময়ের গল্প যেখানে এখনো অজস্র পায়ে থিতলান কদমফুল পড়ে ছড়িয়ে আছে এখানে সেখানে। সাবু তখনো আকাশে ওড়েনি। একটা শিমূলগাছ পুঁতেছিল ২ বছর আগে। তার কথা বলার সময় আসেনি এখনো।সাবুদের একঘরে জীবনের পায়খানাটা একটু দূরে। জামাপ্যান্ট খুলে ২ মিনিট দৌড়ে একটা ইটের ঢিবি ৩ লাফে পেরিয়ে হ্যাঁচকা টানে আধভাঙ্গা দরজা খুলে ঝুলপড়া বাংলা পায়খানা। দৌড়ের সময় ঘাড়টা একটু ডানদিকে উপরে বাঁকিয়ে দেখে নিতে হয় উপরে ঝুমুর দেখছে কিনা।তবে ভিতর ঢুকে গেলে নিশ্চিন্দি। সাবু আকাশপাতাল ভাবে - বহুদূর থেকে ছুটে এসে প্রচণ্ড গতিতে বল ছুঁড়ে দিয়েছে ... ...