ছুটতে ছুটতে বাসের দরজার হাতলে হাত পেয়ে গেল স্মিতা। পাদানিতে পা রেখে আস্তে ছুঁড়ে দিল নিজেকে ভেতরে। জানলা থেকে রে রে করে ওঠা মুখগুলো এবার সোচ্চার, " এমনি করে কেউ ওঠে? বাড়িতে কেউ নেই নাকি?" মাথা নিচু করে সামনের দিকে এগিয়ে যায় স্মিতা। ড্রাইভারের পেছনের দরজায় হেলান দিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতে নিতে ভাবে, ভাগ্যিস। এই বাসটা মিস করলে আধঘন্টা দেরি হত। আর তাহলে সন্ধ্যা প্রতি আধঘন্টায় পঁচিশ টাকা বেশি নিয়েও নিত। ওইটা কাল মিতুলের টিফিন খরচ। ব্যালেন্স করেই তো চলছে। বাসের হাতল ধরে ব্যালেন্স তার মাসের পয়সার ব্যালেন্ ... ...
আস্তে আস্তে চায়ের কাপে যত্নে চিনি গোলে মল্লিকা। শ্বশুর মশাই দিনের শুরুর চা তার হাতে খেয়ে শান্তি পান। কোনোদিন মুখে কিছু বলেন নি। ভাল হয়েছে টুকুও না। কিন্তু মল্লিকা জানে। চা জলখাবার বাইরের দালানে পাঠিয়ে দিয়ে যত্নে গরম তেলে রাঁধুনী ফোড়ন ছাড়ে সে। আজ যেন তার সব কাজ নিখুঁত হয়। ভারি সতর্ক সে। আজ সে শেষবারের মত এই কাজগুলো করছে যেন। প্রত্যেকে যেন কাল বলে, আহা মেজবঊ সুক্তো রাঁধত বইকি। এক চিলতে হাসি খেলে যায় তার মুখে। ঠানদিদি নিজের হাতে ধরে ধরে রান্না শিখিয়েছিল তাকে বিয়ের দুমাস আগে থেকে। বরাবরের মেধাবী মল ... ...
ভূতচতুর্দশী
অমিত বাড়িতে ঢুকে বাজারের ব্যাগটা নামিয়ে বারান্দায় বসল। এবার এক কাপ চা আর খবরের কাগজ। এই পুজো গন্ডার দিনে বাজার করা যে কি চাপের। এপার বাঙলার লোকজন কাল লক্ষীপুজো করবে। বাজারে ভীড় ভর্তি। আয়েশ করে চেয়ারে বসতে না বসতেই রান্নাঘর থেকে বাসন্তীর আর্তনাদ ভেসে আসে, "দাদা আ আ, চোদ্দ শাক কই?!!!"
এই রে! তালেগোলে ওটাই তো ভুলে গেছি, ভাবে অমিত। বলে, " নেই রে। বাজারে নেই। সব জায়গায় ফ্ল্যাট উঠে গিয়ে আর শাক পাওয়া যায় না। তুই ওই ধনেপাতা চোদ্দটা নিয়ে নে না!"
কোমরে হাত দিয়ে বাসন্তী বাইর ... ...
মেয়েটা বড় হয়ে গিয়ে বেশ সুবিধে হয়েছে। "চল মাম্মা, আজ সিনেমা" বলে দুজনেই দুজনকে বুঝিয়ে টুক করে ঘরের পাশের থিয়েটারে চলে যাওয়া যাচ্ছে।
আজও গেলাম। বিশাল ভরদ্বাজের "পটাকা"। এবার আমি এই ভদ্রলোকের সিনেমাটিক ব্যাপারটার বেশ বড়সড় ফ্যান। এমনকি " মটরু কে বিজলী কা মনডোলা"ও আমার দারুণ লেগেছিল। একটা দেশি, স্ট্রীট থিয়েটার ব্যাপার থাকে।একটা "Willing suspension of disbelief" ঘিরে ফেলে।
এই সিনেমাতেও তাই! প্রথমেই মনে হয়, দুই বোন এত লড়াই কেন করে। যত সিনেমা এগোয়, কেন করে ভুলে গিয়ে, এবার কি করবে ভাব ... ...
দেখে এলাম। "সঞ্জু"। প্রত্যাশামত বলতেই পারি, কারণ আমার রাজকুমার হিরাণীর সব ছবিই অতিসরলীকৃত লাগে। এ ছবি সে ব্যাপারে যারে কয় G.O.A.T. মানে সেরার সেরা আরকি!
প্রচুর প্রশ্ন নিয়ে থিয়েটার থেকে ফিরলাম। সুনীল দত্ত কি ভগবান ছিলেন? দোষে গুণে মানুষ হতে শুনেছি, এতো বাবা বাবা নয়, আইডিয়াল নিশ্চয়। নার্গিসের যেকটি সিনেমা দেখেছি তাতে অতি অভিনয় চোখে লাগেনি, তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এরকম মেলোড্রামাটিক ছিলেন? সঞ্জয় দত্ত এর বড় হওয়া টওয়া তো শুনলাম হস্টেলে। মানে সিনেমায় তাই বলল। তা সেকি যথেষ্ট পালিশওয়ালা স্কুল নয়? ... ...
"জল দাও। জলদি জল দাও।" এক গ্লাস ভর্তি জল এগিয়ে দিতেই নি:শ্বেসে শেষ করে ফেলল সুজন। তারপর ঘাড় হেলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। হেসে ফেলে বললাম, " গেছে তো? এবারেও?"।
ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়তে পড়তে বলল, "কতবার বলেছি, আমাকে যেতে বোলো না। আমার দ্বারা হয় না। আমি খুব একটা কম রোজগার তো করি না। চাকরী কেন করতে হবে? দিনকাল।বদলেছে, ফ্রীল্যান্স করে তো ইচ্ছেমত বাঁচা যায়। তুমি তো করছো চাকরী।কেন যে জোর করো!"
আমি হেসে বললাম, " আমি ই কি সব নাকি? তোমার মা চান এইটুকু তুমি করো। আমার সাথে থাকো বলে এ ... ...
ইপ্সিতা বলল, রিভিউ লেখ। আমি বললাম, আমি কি সিনেমা বুঝি নাকি? ইপ্সিতা বলল, যা দেখে ভাল লাগল তাই লেখ। আমি বললাম, তবে তাই হোক।
সিনেমা র নাম, রেনবো জেলি। ইউটিউবে ট্রেলার দেখেই বড্ড ভাল লাগল। তাই রিলিজ করার পরের দিনই আমার চারবছুরের কন্যে সহ আমি হলমুখী।
টাইটেল কার্ড। দুর্দান্ত ঝকঝকে। উজ্জ্বল রঙ কিন্তু স্বপ্নের মত। রূপকথা শুরু সেখান থেকেই। শুরুতেই ট্রিবিউট লীলা মজুমদারকে। বিভিন্ন টেকনিক্যাল টার্ম এর বাংলা পরিভাষা চোখ টানল। এডিটিং এর বাংলা বুনোট। বেশ। শুরু হোক তবে।
ঘোঁতন। এমন একটা বয়স ... ...
আবার একটা বাজে দিন। তবে এবার লোকজন আর ছেড়ে দেবে না। আজ পালানোটা খুব দরকার। আজ আবার রেজাল্ট বেরোবে। আমি জানি, আবার ফেল করবো। আর সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে বিয়ে করে শুরু হয়ে যাবে। কেন রে বাবা, বিয়েটা কি করে সমাধান হয়।
আমি মাধ্যমিকটা ভালই পাস করে গেছিলাম। ভালই মানে এক চান্সে। আমার রেজাল্ট কোনো কালে " ভাল" ছিল না। একবারে পাস করায় বাড়ির সবাই খুশী হয়েছিল। আমার তারপর পড়াশুনো মাথায় ঢুকছে না। মানে ইচ্ছে করছে না ও বলা যায়। আমি গান গাই ভাল। আমি রান্না করি দারুণ। আমি দেখতেও বেশ। সবাই আরেকবার ফিরে তাকাত ... ...
চায়ের কাপটা টেবিলে নামিয়ে আশেপাশে ফোনটা খুঁজছিল অদিতি। সকালের নিয়ম করে মন ভাল করানো মেসেজের আশায়। তখনই চোখ পড়ল কাকটার দিকে। বারান্দার সামনে জামরুল গাছটায় বসে যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এই মফস্বলে এখনো গাছ, ফুল, পাখি, পুকুর সব বেঁচে আছে। সকালে বাড়ির সামনের গাছে কাক বসাতেও আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু অদিতি একটু থমকে গেল পাখিটার তাকানোর ভঙ্গীতে। যেন একচোখ জিজ্ঞাসা নিয়ে গম্ভীর তাকানো।
উড়েও গেল না। তাকিয়েই রইল অদিতির দিকে।
-"হ্যাঁ গো, চা দিলে?"
সম্বিত ফিরল ঘর থেকে প্রবালের ডাক ... ...
এমন কত হয়
__
তিন নম্বর ঘুঁষিটা মারার আগে সব রাগটা মনে মনে এক করে আনতে হল। নইলে এত জোরে মারতে পারত না। ছিটকে পড়ে যাওয়ার আগে ছেলেটা একটা আওয়াজ করে উঠেছিল। মাথার মধ্যে হাজার একটা রাগ গুটিশুটি মেরে বসে আছে তার। বাবা অনুরাগের ছোঁয়া দেখে নাম রেখেছিল, তাপস। নিজের নামটা মনে আসতেই রাগটা গনগন করে ওঠে মাথায় আবার। এই হতচ্ছাড়া গুন্ডাগুলো তার থেকে অনেক বেশি তৈরি হয়ে এসেছে। শুধু নেহাত বোনটার মুখ মনে করে সে লড়ে যাচ্ছে। আজ বাড়ি ফিরে ওটাকেও পালিশ করতে হবে। এসব আপদ জোটে কি করে কে জানে। ... ...