এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • এই শহরতলী .......

    Binary
    অন্যান্য | ২১ জানুয়ারি ২০০৯ | ১২৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Binary | 70.64.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০০৯ ০৯:৪১409086
  • এটা কোনো আগের লেখা মফ:স্বলের সিক্যুয়েল-টিক্যুয়েল নয়। এটা সুধুই একটা পুকুরের গল্প। বা তাও নয়। এটা একটা মেয়ের গল্প, তার একলা জানালার চৌখুপির গল্প। বা তাও নয়। এটা একটা জীবনের গল্প, একদিনের-প্রতিদিনের। না তাও ঠিক হল না। কিছু অকিঞ্চিৎকর মানুষের গল্প, হয়তো। কলকাতার কাছাকাছি, আগাছায় ভরা রেললাইন, স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, মরচেধরা লেবেল ক্রশিং, লেবেল ক্রশিং-এর ধারের চা-দোকানের ঝুপরি, বন্ধহওয়া কাঁচ'কলের জংধরা গেট, খোলা নর্দমার ডাঁশ মশার পন্‌পন, ঘাসওঠা কাদাজল মাখা উঠোন-আক্‌তি খোলা জায়গা, যার নাম 'নেতাজী ময়দান', সেখানে ডিসেম্বরের ধোঁয়াশা ভরা সন্ধ্যায় ম্যারাপখাটিয়ে,নিয়নের আলোয় হয় অষ্টপ্রহর হরিনাম সংকীর্তন, এখানেই হয়তো তাদের দিনগত আহার-নিদ্রা-সংগম। বোজা পুকুরে, ঘেঁষ আর শুঁড়কি ফেলা জমিতে, বা পুকুরের ধার ঘেঁষে উঁচু জমিতে তাদের কোঠা বাড়ি, টালিরচালের বাড়ি দখলের জমিতে, অথবা পয়সাওয়ালা বড় চাকুরে/ব্যবসাদার-এর সাদা-হলুদ-লাল র-ংএর বেমানান অট্টালিকা।

    পুকুরটা সেই জীবনের সাক্ষি গোপাল। পুকুরটা বড়। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নিয়ে প্রায় দেড়খানা ফুটবল মাঠের সমান। পুকুরটা আর তার আশেপাশের পাড়ার নাম সেনবাগান। কে জানে কেন এরকম নাম, কবেই বা হয়েছিলো এরকম ? পুকুরটার পূবদিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া কাঁচ'কলের দেওয়াল। দেওয়ালে গায়ে নোনাধরা ইঁট আর বটগাছের চারা। উত্তরদিকে পুকুরের ধার ঘেঁষে এট্টুখানি চওড়া রাস্তা, দুনম্বর রেলগেট থেকে চলে গেছে বিটি রোড। এই রাস্তার দুধারে ড্রেন, মাশার চাষ হয় সেখানে। ড্রেনের ওপর বাঁশের পাটাতন পাতা পান-বিড়ি সিগারেট আর রেডিও-ঘড়ি-প্রেসারকুকার সারাই-এর দোকান। ঘিঞ্জি রাস্তায় মাঝে মাঝে যায়-আসে ক্যান্টনমেন্ট রুটের প্রাইভেট বাস। সরু রাস্তায় মুষকো বাসকে রাস্তাদিতে, পথচারিদের নেমে যেতে হয় প্রায় নর্দমায়। বাস চলে ২কিমি গতিতে। সেটা যত বেশী না ভীড় বাঁচাতে, তার চেয়ে-ও বেশী প্যাসেঞ্জারের আশায়। পুকুরের দক্ষিণ পশ্চিম পাড় এখানে-ওখানে সিমেন্ট করা। ভাঙ্গাচোরা সিঁড়ি নেমে গেছে জলে। পুকুরের ধার দিয়ে বারোফুটিয়া রাস্তা। খোয়া ঢালা। পিচ হয় নিয়ম করে, তবে ছয়মাসের বেশী অবশিষ্ট থাকেনা। রিক্সা চলে সেখানে, আর দুটো টিউওয়েল। রাস্তার ধারে ধারে নতুন পুরোনো পাকাবাড়ী। একতলা বা দোতলা বা তিনতলা। রাস্তার দিকে সস্তা গ্রিলের গেট।

    পুকুরের দক্ষিন পারে তিনতলা বাড়ীর দোতালায় ভাড়া থাকে সুমনা আর তার বর। সুমনা-র বিয়ে হয়েছে ভালবেসে। বরটা তার সওদাগরি কোম্পানীর কারখানায় সামান্য উঁচুদরের চাকুরে। সুক্ষ্মদরে বিচার করলে অবশ্য কেরানীর বেশী কিছু নয়। তার ভাবখানা যেন কেউকেটা মতন। তার আপিশের ভাগ্য যেন লেখা আছে তার-ই হাতের মুঠোয়। তাই সেই 'একশো বারো' টাকা মাইনেতে দিবারাত্র আপিশের গোলামি খেটে যায় সে। পুর্বরাগ পর্বে ইডেনে বা বালিগঞ্জলেকের ঘন অন্ধকার মাখা বেঞ্চে বসে, পুলিশের চোখ এড়িয়ে সুমনার নরম-ভেজাভেজা ঠোঁটে চুমু দিতে দিতে সে বলেছিলো অফুরান সময় একসাথে কাটানোর কথা। সেকথা সে ভুলে গেছে কবেই । বা ভোলে-ও নি হয়তো। অপিশের গোলামি আর সুমনার জন্য সময় কাটাকুটি হয়ে যাচ্ছে বারবার। সুমনা বসে থাকে জানালায়। পুকুরের ধারে একটা কদমগাছ রাস্তা পেড়িয়ে ঝুঁকে এসেছে জানালর গ্রিলে। জানালার নীচে পুকুরের ধারে টিউওয়েল। লুঙ্গি আর ময়লা সার্ট পরা 'ভারী' টিনের বাঁকে করে জল নেয় টিউওয়েল থেকে। পুকুরের জলে বাসনধোয় ঠিকে কাজের লোকেরা। গুমোট দুপুরে কাপড় কাচে ঘাটের ভাঙা সিমেন্টের চাঙড়ে। বর্ষায় পুকুর প্রায় উপচে ওঠে জল। ঘাটের সিঁড়ি চলে যায় জলের তলায়। জলের ধারে মুখ বাড়িয়ে থাকে হেলে সাপ। বাসনধোয়া এঁটোকাঁটার আসায়। পাশের বাড়ীর প্রৌড় নন্দিবাবু-র ছেড়েরাখা লুংগি-তে লুকিয়ে থাকে হেলে সাপ, নন্দিবাবু তখন বুকজলে দাঁড়িয়ে নিমের দাঁতন করছিলেন। তারপর নন্দিবাবুর ভ্যাবাচ্যাকা মুখ আর লুঙ্গি ঝাড়ার বিচিত্র কায়দায়, হেসেকুটোপাটি হয় সুমনা, জানালা থেকে। রান্নাঘরে বাসনের ঠুংঠাং কাজের মাসিএল বোধহয়, একা কোথায় আর ? গরমের গুমোট দুপুরে, রেললাইনের ধারের বস্তির ছেলেপিলেরা ঝুপুস ডুবে থাকে জলে। জলের ধারের অশ্বত্থ গাছের ডাল থেকে ঝপাং লাফায় জলছিটিয়ে। কালোকুলো রোগারোগা, নেংটি পরা ছেলেদের হিহিহাসি আর মুখখিস্তির ফুর্তি শুনতে শুনতে সুমনার একা একা লাগেনা আর। বিকেলের দিকে, আকাশ ঘন করে ঝড় আসে। ঝড়ের তোড়ে ধুলো ওড়ে, ব্‌ষ্টি আসে ঝাঁপিয়ে, ধুলো আর ব্‌ষ্টিতে ঝাপসা হয়ে যায় পুকুরের পাড়। ব্‌ষ্টি থামলে সন্ধ্যা নামে ঝিঁঝি-ঁর ডাকে। ভেজাভেজা বাল্ব জ্বলে কাঁচ'কলের গায়। সুমনার কান খাড়া শোনে রিক্সার ক্যাঁচকোঁচ। বর আসবে এখুনি । অপেক্ষায় অপেক্ষায় সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়। হ্যাঁ বর আসে, নিশুতি রাতে, পাড়া যখন ঘুমিয়ে পরেছে। কাজের শেষে, অপিশ উদ্ধার করে। তারপর, রাতের খওয়ার শেষে, বিছানায় আবেশে, শরীরে শরীরে ঘনিষ্ঠ হতে হতে, সুমনা ভাবে, রবিবারের আর কত দেরি ?

    কাজলদা। নন্দিবাড়িতে আশ্রিত। রোগাসোগা মধ্যবয়সী বেকার। বি এ পাশদিয়ে মারোয়ারি গদিতে খাতা লেখা থেকে বে-আইনি ওষুধের সেলসম্যানগিরি সব কাজেই অভিজ্ঞ। তবে আসলে অলস প্রক্‌তির। উপস্থিত কিছুই করেন না। একার জীবন চালাতেই হিম্‌সিম। প্রৌড় নন্দিবাবু, সম্পর্কে ওঁর গ্রামতুতো মামা হন। উঠোনে ইঁটের গাথনি আর দর্মার ছাদ দিয়ে ঘর বানিয়ে কাজলদা-কে থাকতে দিয়েছেন। এর বেশী কিছু নয়। ভাত জোটে মাঝেমধ্যে। কিন্তু কাজলদার সুধু ভাতে চলেনা, সিগারেটের নেশা, তরলের-ও। বিলিতি-র পয়সানেই তাই চোলাই। মেয়েমানুষের ইচ্ছা-ও আছে, পয়সা নেই। তাই এর-ওর মাথায় হাত বোলানো। মানে জকমারা। বন্ধুর-বন্ধুর-বন্ধুর সোদপুরের বাড়িতে, ইলেকট্রিসিটি বিল জমাদেওয়ার নামে, টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া। আরো কোনো এক অল্প পরিচিতের ছাদেরপাখা সারাই করার নামে, লোহার দরে বেচে দিয়ে আসা। এরকম করেই চলে কাজলদার আজ-কাল-পরশু। বি এ পাশের গুমড় আছে অবশ্য বারোয়ানা। চোলাইয়ের ঠেকে রিক্সাচালক হরি-মধু আর রংএর মিস্ত্রি গুলে দের মনুষ্য প্রজাতির মনে করেন না । নীলগলাবন্ধনির খাটিয়ে কাজের লোকেদের ঘামের গন্ধে সরগরম চোলাইয়ের ঠেকে বিমর্ষ বসে থাকেন কাজলদা। ভাবেন শ্রেনী বৈষম্য। অনেক রাতে, বেসামাল পায়ে বসেন পুকুরের ধারের সিঁড়িতে। ঘোলা হয়ে ওঠা মগজের ঠেলায় হেঁড়ে গলায় গান ধরেন, 'কেন যামিনী না যেতে, জাগালে না'। সুমনা রাত জাগা চোখে শোনে। সুমনা জানে কাজলদার দর্মার ছাদের ঘরে, একটা পুরোনো এস্রাজ আছে। নন্দিবাড়ীর বউ তাকে বলেছে। কালেভদ্রে সেটা বাজান কাজলদা। বাজনার হাতটা তার মিষ্টি।

    স্বপন ডাক্তার। বছর পঁয়তাল্লিশের, এম বি বি এস। পাড়ার ডাক্তার। বাবু নন, সুধু-ই ডাক্তার, সর্দি-কাশি-পাতলাপায়খানা-অম্বলের। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে তাঁর পৈত্‌ক বাড়ি-কাম-ডিস্পেনসারি। ই এস আই প্রেস্কিপশন লেখা তাঁর প্রধান কাজ। ছুটির দরখাস্ত আর ফিট সার্টিফিকেটে দস্তখত করা তাঁর অন্য প্রধান কাজ। বেওয়ারিস সারমেয়-এর দৌলতে, জলাতঙ্কের ওষুধের ব্যবসা-ও করছেন আজকাল। সকালের ডিস্পেনসারি শেষ করে, গামছাপরে, তেলের শিশি আর লাইফবয় সাবানের কৌটো হাতে পুকুরে যান স্নানে। পাতলা হয়ে যাওয়া কোঁকড়া চুলে, ঘষে ঘষে মাখেন প্যারাসুট নারকেল তেল। নাতিদীর্ঘ শরীরে আর ভুঁড়িতে লাইফ বয় সাবান। তিন চারটে ডুব দিয়ে বাড়ী ফিরে পোনামাছের ঝোল। সন্ধ্যায় আবার সেই তেঁতুলকাঠের ডিস্পেন্সারির টেবিল। রাতে যৌবন উত্তীর্ন বউ-এর সঙ্গে ভাগাভাগি বিছানা। রাত-বিরেতে মাঝেসাঝে কল আসে এবাড়ি সেবাড়ি থেকে। বর্ষায় ম্যালেরিয়া আর টাইফয়েড বাড়লে। সেদিন সুমনার সারাদিন-ই মাথা ঝিম্‌ঝিম। ওর বর ফেরে সেই নিশুতি রাতে। সুমনা তখন শরীরের অসোয়াস্তিতে বিছানায়। ব্যস্তসমস্ত ওর বর ডেকে আনে স্বপন ডাক্তারকে। সুমনার চোখের তলা আর নাড়ী দেখে, দুচারটে পরীক্ষার কথা বলে ফিরে যান ডাক্তার। বাড়ী ঢোকার আগে পুকুরের সিঁড়িতে ঝুম বসে থাকেন কিছুক্ষন। সুমনা সন্তানসম্ভবা। কিছুদিন পর ওদের দোতালার গ্রিলে ঝুলবে ছোট্ট ছোট্ট ব্যবহার্য্য। তাঁর নিজের বাড়ীর গ্রিলটা কতদিন খালি আছে, খালি-ই থাকবে।

    ঝর্নাদি। একটু গলিতে ঢুকে, তিনইঞ্চি ইঁটের গাথনির দুঘরের বাড়ী ঝর্নাদির। বাড়ীটা হয়েছে দুবছর। ইঁটের দেওয়ালে পলেস্তারা নেই। মেঝেতে ইঁট পাতা। নীচু জমি বলে, বর্ষায় জল হয় বাড়ীর চারপাশে। তখন রাস্তা থেকে বাঁশের সাঁকোতে ঢুকতে হয় বাড়ীতে। জানালা বসানো হয়নি এখোনো। শীতে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখতে হয় উত্তরের হাওয়া। ঘরের ভেতরে ইঁটদিয়ে উঁচুকরা পুরোনো খাট, খাটটা, ঝর্নাদির ভেঙ্গে যাওয়া বিয়ের উত্তরাধিকার। রংওঠা স্টীলের আলমারি, এটাও সেই বিয়ের, যৌতুকি। কাঠের কুলুঙ্গিতে, শনি-অন্নপুর্না-লক্ষী-কালী-র ফটো। শেষহয়ে যাওয়া দেশলাই-এর বাক্সে গোঁজা পুড়েযাওয়া ধুপকাঠি, ছাই, শুকনো জবা ফুলের মালা দুচারটে। ঘরের ভেতর আড়াআড়ি টানানো, নাইলনের দড়িতে, গাম্‌ছা, শাড়ি, ব্লাউজ, সায়া, ছেলেমেয়ের স্কুলের জামা-প্যান্ট-স্কার্ট-ইজের, অনেকবার কাচায় রংওঠা। মাটিতে একটা জলচৌকিতে ছেঁড়াছেঁড়া মলাটের বই খাতা। জলে ভেজা পেনের কালিতে গোটা গোটা করে লেখা 'শুভদীপ রায়-চতুর্থ শ্রেনী-ক' বা 'শর্মিষ্ঠা রায়-পঞ্চম শ্রেনী-ক'। ঝর্নাদি একা। একটা-একটা ছেলে মেয়ে। তারা দশ-এগারো বছর। স্কুলে যায়। ঝর্নাদি পেডলার। পন্য তার, রান্নার গ্যাসের ওভেন পরিস্কার করার আজব সল্যিউশন। মিউরিয়াটিক অ্যাসিড আর অন্যান্য ক্ষারজাতীয় ক্যমিকাল্‌স মিশিয়ে তৈরী হয়। প্লাস্টিকের বোতোলে ভরা হয়, লেবেল-ও লাগান হয় আজগুবি। তারপর, ঝর্নাদির মতো পেডলারদের ব্যাগে ভরে পাঠানো হয় গ্রামেগঞ্জে বিক্রির জন্য। আর গ্যাস ওভেনের পাইপ আর নামী গ্যাস কোম্পানীর নকল বার্নার। ঝর্নাদিদের কাছে থাকে নামী গ্যাস কোম্পানীর ভুয়ো পরিচয়পত্র। হাড়ভাঙ্গা খাটুনি সারাদিন। ভারীব্যাগ কাঁধে নিয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটা গ্রামের পথে। অনর্গল কথায় মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা। সারাদিনের কাজের শেষে কমিশন মেলে বিক্রিবাটার। ছেলেমেয়েদের স্কুলের খরচ জুটেযায় এইভাবে। প্রতিদিন সন্ধ্যারাতে, সারাদিনের খাটুনির শেষে, বাড়ী ফিরে পুকুরে গা ধুতে যায় ঝর্নাদি। সুমনা দেখে জানালা থেকে। ঝর্নাদি-কে দেখে ইর্ষা হয় তার। এবারে তাকে চাকরি খুঁজতে হবে। বাড়ীর কাছেই 'অরবিন্দ বিদ্যাপীঠ'। বিটি পাশ-তো করা-ই আছে।

    .....

  • Arijit | 61.95.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০০৯ ০৯:৫৭409091
  • ওয়াহ। চেনা পুকুর, চেনা মাঠ, চেনা পাড়া, চেনা ছবি। ইদানিং বরং সব অচেনা হয়ে গেছে আশেপাশে:-(
  • siki | 122.16.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০০৯ ১৩:২৬409092
  • মনে হচ্ছে গতজন্মের স্মৃতি, আস্তে আস্তে, আবছা আবছা ফিরে আসছে, অথচ পুরোটা আসছে না।

    আরও হবে তো?
  • Samran | 119.15.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০০৯ ১৪:১২409093
  • হোক..
  • r | 198.96.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০০৯ ১৪:৪০409094
  • বা:!
  • Riju | 121.24.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০০৯ ১৫:০৩409095
  • চেনা দু:খ চেনা সুখ চেনা চেনা হাসিমুখ চেনা আলো চেনা অন্ধকার...

    বাইনারিদার লেখাটাকে ছুঁলে আমার শহর টাকে দেখতে পাই
  • lcm | 69.236.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০০৯ ১৫:২৩409096
  • বাইনারি-র লেখায় ছোটখাটো ডিটেইল্‌স্‌ গুলো এত জীবন্ত!
  • arjo | 168.26.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০০৯ ২১:২১409097
  • ব্যপক হয়েছে।
  • sayan | 115.108.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০০৯ ২২:১১409098
  • অ্যাদ্দিন পরে গুরু খুলে এই স্মৃতিতর্পণ পড়ে মন জুড়িয়ে গেল। কেন যে এত ভালো এই নস্টালজিয়া .....
  • Hukomukho | 198.184.***.*** | ২২ জানুয়ারি ২০০৯ ০০:০৭409087
  • ভারি চমৎকার লেখা বাইনারি, মন ভরে গেল। পান্‌সি থামালে চলবে না কিন্তু।
  • ranjan roy | 122.168.***.*** | ২২ জানুয়ারি ২০০৯ ২৩:৫৪409088
  • ক্যা বাত, বাইনারি! ক্যা বাত্‌?
  • r | 125.18.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০০৯ ১৮:৩৯409089
  • কি হল?
  • Binary | 70.64.***.*** | ২৯ এপ্রিল ২০০৯ ০৮:৫৬409090
  • পর্ব ২ --- http://tinyurl.com/dj34pr
    --------------------------------------

    পর্ব ৩ --- হিথায় তুকে মনাইছে না গো
    ---------------------------------------

    প্রায় সাড়েতিন বছর পরে দেশে ফিরছিলো সুমনারা। অতিথি হয়ে। ছুটি কাটতে। আগেও এসেছে এরকম। প্রতিবারই নিজেকে অনেকটা ত্রিশঙ্কু হয়ে ঝুলে থাকার মত লাগে । সুমনার মেয়েটা গুছিয়ে কথা বলতে শিখেছে পশ্চিমী দেশে, পায়ে-পায়ে-চলা থেকে দৌড়ানো-ঝাঁপানো-ট্রাইসাইকেল-হুলাহুপ সব পশ্চিমী দেশে। বাড়ীতে, 'মাঁ আঁ আঁ খিঁদে পেয়েছে' আর ক্ষুদে স্কুলের সাহেব-মেম বাচ্চাদের সঙ্গে টেবিল এটিকেট। শীতে ফোমের ওভারল আর গরমে শোল্ডার স্ট্র্যাপ সুতির জামা। গরমকালে ঝকঝকে রোদ আর নাতিশীতোষ্ণ হাওয়ার আমেজ। সবুজ ঘাসের লন আর অফুরন্ত দৌড়ঝাঁপের সরঞ্জাম। বাতাসে কালি নেই, কয়লার ধুলো নেই, কার্বোন-মনোক্সাইড নেই, সালফার-ডাই-অক্সাইডস নেই। চানঘরের দেওয়ালে শ্যওলা নেই, জলে আয়রন নেই। নোনাধরা দেওয়াল নেই, পা ভাঁজ করে উবু হয়ে মলত্যাগ করা নেই। পিন ফোটানো রক্তচোষা মশা নেই, ঘিনঘিনে মাছি নেই। খালি নেই আর নেই। নেই আর নেই-এর মাঝে বড় হওয়া মেয়েটা, দেশের হাওয়া কি সেটা বুঝতে শেখেনি। আগেরবার দেশে আসার সময়, মেয়েটা 'মা দ অ অ ল (জল)' বা 'ঘু উ উ উ ম' এসব-এর মধ্যে-ই আটকে ছিলো,ওর মৌমাসির মেয়েটা বা জেঠুর হাদুষ্টু ছেলেটার সঙ্গে একটু লাফালাফি আর কথায় কথায় ভ্যাঁ করা ছাড়া। মশার কামড়ে ফুলে যাওয়া হাতে-পায়ে ওডোমাসের টিউব শেষ করতে হয়েছে রাত-দিন। বা দেওয়ালের কাঠের সুইচবোর্ডে গুডনাইটের ফাইল। যে কদিন ছিলো, জমা হয়েছে বিসলারির বোতোল, আধা পশ্চিমী পেট কে সচল রাখার জন্য। মশা আর গরমে দিব্যি হুটোপাটি করেছে, দেশের বাচ্চারা, সুমনার মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে তাড়াতাড়ি।

    তারপর সাড়েতিন বছর। আংরেজ উড়োজাহাজ সংস্থার বিশাল সাত-ছয়-সাত, দক্ষিনী শহরের মাটি ছুঁলো রাতে। দেশে ফেরার এই হ্যাপা। ক্ষেপে ক্ষেপে চলা। বসে বসে ক্লান্ত হয়ে পড়া এয়ারপোর্ট-এয়ারপোর্টে। দেশে ফিরেও, কোলকাতা ফিরতে অপেক্ষা কোরে থাকা রাতভোর। আবার উড়োজাহাজ ইত্যাদি ইত্যাদি। এবারে দক্ষিণের এই শহর হয়ে যাওয়া অবশ্য অন্য কারণে। পশ্চিমে ফিরে, দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হয়ে থাকার ছাড়পত্র মিলবে এই শহরে, দুতাবাসে। আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা। ছাড়পত্র নিয়ে, কোলকাতায় গিয়ে একমাস ছুটি কাটানো, তারপর আবার ফেরা (ফেরা !!!)। বিমানঘাঁটি থেকে ট্যাক্সি নেয় ওরা, হোটেলে যাবে। তেলকালি মাখা ডিকিতে ঠেসেঠুসে ঢোকানো হয় ২৮ ইঞ্চির ঢাউস চারটে সুটকেস, সুটকেসের ভেতরে লাইটার,ঘড়ি, সস্তা বিদেশি ক্যামেরা, পা পরিস্কার করার মেশিন, চুল শোকানোর মেশিন, সাটিনের বিছানার চাদর, চকোলেট-চকোলেট-চকোলেট। উপহার আর জনপ্রিয়তা বিলি করা হবে এসব দিয়ে। বুড়োটে ড্রাইভার, দড়ি দিয়ে বাঁধে গাড়ির ডিকি। নভেম্বরের-ও ঝপ্পস গরম, ড্রাইভার ভদ্রলোকের নোংরা জামার কলার, উল্টে পেছনে ফেলা,ধুলো-গরম-ঘামে কালচে। সুমনার মেয়েটা হাঁ করে দ্যাখে দড়ি বাঁধা গাড়ির ডিকি, হাতের পুচকি তালুর পেছনদিয়ে কপালের চুল থেকে গড়িয়ে আসা ঘাম মোছে, একটা হাঁচি দেয়, ছোট্টো কপাল কুঁচকে থাকে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বিরক্তি, ভাললাগছে না ওর। আগে থেকে বুক করা যে গেস্ট হাউসে ওঠে ওরা, সেটার গেটে গোলাক্‌তি হলুদ আলো। গাড়িরাখার উঠোনের মত জায়গা, মোজেক-ধুলো-কাদা, সস্তা ফুলের টবে ফুল ছাড়া মরা গাছ। পলিশ করা রিসেপ্‌শনের টেবিলে ধুলোর আস্তরণ। পনেরো-ষোলো বছরের চাকরটার গায়ে কোঁচকানো ময়লা মেরুন রাঙা ইউনিফর্ম। অ্যালুমিনিয়ামের কয়রা তালা লাগানো যে ঘরটা ওদের জন্য বরাদ্দ হলো, সেটার রংওঠা দেয়ালে আবার যেমন-তেমন করে ঘিয়ে রংএরপ্রোলেপ। দেওয়ালে বাহারে আলোর শেড, কিন্তু আলো এতই কম, ভালো করে চারিদিক দেখা যায় না। বাথরুমে, বাহারে আয়না, দাগধরা। পিতলের গরমজল-ঠান্ডাজলের কল, কিন্তু জল নেই। অ্যালুমিনিয়ামের বালতিতে তোলা জল আর মগ। রংচংএ বিছানার চাদেরে, আগের কোনো অতিথি-র রতিচিহ্ন। সারাঘরে ধুলোধুলো গন্ধে দম আটকে আসে।

    পরদিন, দুতাবাসের কাজসেরে বিকালে আবার উড়োজাহাজ। দমদম এয়ারপোর্ট। সেই কালিঝুলি মাখা ডিজেলের ট্যাক্সি। ভিআইপি রোডের খানাখন্দ, পানায় ভরা কেষ্টপুর খাল, তার পাশে হঠাৎ গজানো সুপারমার্কেট-মল। সুমনার মেয়েটা অবাক চোখে জানালা দিয়ে দ্যাখে, এখানে গাড়ি চলে গাড়ির গায়ে গায়ে, যথেচ্ছ কানফাটানো হর্ন বাজে। অটোরিক্সা চলে, ধোঁয়ায় কালি ওড়ে। কালকে এয়ারপোর্ট থেকে বেরোনো হাঁচিটা এখন চেপে বসেছে ওর, নাকদিয়ে জল পড়ে, ছোট্টো গাল লাল, সর্দিতে আর জেটল্যাগের ক্লান্তিতে। তারপর, রাতে দিদার বাড়িতে, চানটান করে, মশারি টাঙ্গানো বিছানায় শুয়ে, সুমনাকে জড়িয়ে ধরে, কাঁদো কাঁদো গলায় বলে , --- 'মাম্মি, অ্যায়াম হোমসিক, লেট্‌স গোব্যাক টু আওয়ার হোম'

    ***
    সুমনাদের বাড়ির সামনের বাপিদারা থাকত, কম্পাউন্ডার বাবুদের বাড়ির পাশের বাড়িতে। সুমনা যখন স্কুলে পড়ে, উঁচু ক্লাশে, তখন বাপিদার, ইউনিভার্সিটি ছেড়ে চাকুরিতে ঢোকার কথা। কিন্তু, বাপিদার মাথার ছিট্‌গুলো বড় বেশী বেগড়বাই করাতে, কলেজ-টলেজের গন্ডী পেরোনো হয়নি বাপিদার। ওদের বাড়ির পাশের যে 'স্মার্ট ধৌতাবাস',সেখানে বিলটিল লেখার কাজ করত বাপিদা। হিসাব-টিসাব ঠিকঠাক-ই রাখত। এমনিতে, প্রায় মৌনিব্রত, ঝাঁকড়া চুলের বাপিদাকে দেখলে বা দুচারটে জোরকরে কথা বলিয়ে নেবার সময়, কোনোকিছু আল্টুসাল্টু মনে হত না। তবে মাঝে মাঝে দোকান থেকে ধাঁ করে বেরিয়ে যেত বাপিদা, হন্‌হনিয়ে হেঁটে চক্কর মারত, কাঠগোলা-র মোড় হয়ে মিত্তিরবাড়ি, জগৎডাক্তারের বাড়ি হয়ে রিক্সাস্ট্যান্ড পজ্জন্ত। হেঁটে যেত, হেঁটেই যেত, একবার আপে একবার ডাউনে। একবার, শীতের সেই এক অলস দুপুরে, ভাললাগা বারান্দার সেই আড্ডা থেকে, সুমনারা দেখেছিলো, বাপিদা হাঁটছে, অবিরাম। একটি অপরিচিত পরিবার, ধুতিপরা বাবা, মাথায় ঘোমটাটানা মা, একজন হাফপ্যান্ট, অন্যজন ফুলপ্যান্ট পরা দুটো ছেলে, কাঠগোলার রাস্তায় বাপিদার সামনা-সামনি। পরিবারটি কোনো বাড়ীর খোঁজ করছিলো মনে হয়। দুপুর বেলা, পাড়ার দোকনগুলো ঝাঁপটানা, করিমের মুদি দোকান-ও, রাস্তায় লোকজন-ও ত্যামোন নেই, তো বাপিদা-কে সামনে পেয়ে ধুতিপরা বাবা জিজ্ঞাসা করে,
    ---- 'জিষ্ণু, মৌলানা আজাদ কলেজে পড়ে, ওদের বাড়ীটা কোথায় বলতে পারেন, একশোতিপ্পান্ন-র এ ?'
    মাথানিচু করা হনহনিয়ে হন্টনরত বাপিদা, হঠাৎ থেমে যায়। মাথা নীচু-ই থাকে। তারপর, একহাত শক্ত করে রাখে পকেটে, আর ডানহাতটা দমদেওয়া পুতুলের মত উপরে তোলে, তর্জনী সোজাকরে, সামনে নিরুদ্দেশের কোনোদিকে দেখিয়ে বলে,
    ---- 'হুই সো ও ও ও ও জা'
    তারপর ঐ ভাবেই, তর্জনী উপরেতোলা, মাথানীচু, বাঁহাত পকেটে করে প্রস্তর মূর্তি-র মত দাঁড়িয়ে থাকে। ধুতিপড়া বাবা, ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে, একবার জিগায়, --- 'কোথায় বললেন ?' প্রস্তর মূর্তি ভাবলেশহীন। ধুতিপড়া বাবা, ক্যাবলার দ্‌ষ্টি দিয়ে এদিক ওদিক তাকায়, আর এরপর করিম, দোকান থেকে বেরিয়ে এসে, -- ,'ও কিছু না, একটু ছিট আছে, জিষ্ণুদের বাড়ি সামানের .....' ইত্যাদি বলে বুঝিয়ে দেয়। আর প্রস্তর মূর্তিকে সরিয়ে নিয়ে আসে রাস্তার মাঝখান থেকে।

    একবার বাপিদা, সম্পূর্ণ মুন্ডিত মস্তকে বাড়ী ঢোকাতে, ওর বাবা, কাকা, বৌদি শুধোয়,
    --- 'ন্যাড়া হয়ে এলি কেন ? তোর কে মরেছে ?'
    উত্তরে বাপিদা বলেছিলো
    --- 'রোজ রোজ চুলকাটার পয়সা চাইলে তোমরা গুচ্ছের খিচমিচ করো, তাই ন্যাড়া হয়ে এলাম, ল্যাঠা চুকলো !'

    এবারে দেশে এসে সুমনা শোনে, বাপিদা একদম ভালো হয়ে গেছে। চিকিৎসা করিয়েছে ভাল। আটাপাড়ায় কর্পোরেশন স্কুলে চাকরি পেয়েছে। পঞ্চাশের এপাসের বয়সে বিয়ে-ও করেছে গেল বছর। পাড়ার সকলে নেমতন্ন খেয়ে এসেছে, বাপিদার বিয়েতে। মনটা কেন যেন খুব ভাল হয়ে যায় খবরটা শুনে। বারান্দা থেকে দ্যাখে, বাপিদাদের বাড়ীটা অল্প হলেও মেরামত হয়েছে, রং হয়েছে, নেমপ্লেটে, বাপিদার দাদার নাম 'রুদ্রেন্দু হালদার'-এর নীচে নীল হরপে লেখা বাপিদার নাম-ও,'ক্‌ষ্ণেন্দু হালদার'।

    ***
    তখন একটা মাতাল যেত পচা ময়রার দোকানের সামনে দিয়ে। প্রায় রোজই, টাইম বেঁধে, রাত সাড়ে এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে। যে সে মাতাল নয়, রবি ঠাকুরের গান জানে, বা 'ঝুমা চুমা দে দে .....'। বারান্দার ধারের জানালার খরখরি দিয়ে দেখতো সুমনা। জগৎ ডাক্তারের ডিস্পেনসারির পেছনের, নাপিত বাড়ীর, অমিত, লক্কা, শঙ্কর অনেক রাতপজ্জন্ত আড্ডা দিতো ধৌতাবাসের রোয়াকে। রোজ-ই মাতালটাকে ধরে ফুর্তি করত ওরা। 'একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত গান গা তো', বললে মাতাল গান ধরত, 'ঝুম্মা চুম্মা দে দে ......' তারপর, 'ধুর ব্যাটা এবারে হিন্দী গান গা' বললে, গাইত, 'আকাশ ভরা, সুজ্জো তা আ আ রা আ আ .....'। রকে-ই সেঁটে ছিলো ওদের সকাল বিকেল রাত্রি। কান বন্ধ করে যাতায়াত করতে হত রোয়াকের সামনে দিয়ে, ওরা থাকলে। ববিনদার বৌ, শালুকবাহু স্লিভলেস ব্লাউজে অফিশে বেরোলে, অবধারিত রোয়াক থেকে আওয়াজ উঠতো, 'উ : কি গরম ......' , শম্পা, সাইকেলে যেত টিউশানপড়তে, রোয়াকের সামনে শুনতে হত, 'অলিম্পিক এসে গেল রে এ এ এ'

    রোয়াকটা এখন খালি। এবারে, পাড়ার ইউনাইটেড ব্যাঙ্কে, মায়ের ফিক্সড ডেপোজিট উইথড্র করতে গিয়ে দেখা হলো, শঙ্করের সাথে। টাকা তুলবে বলে টোকেন নিয়ে বসে আছে বেঞ্চিতে। কানের উপর পাক ধরেছে চুলে, সামান্য। গাল ভরা, ঈষ্‌ৎ চকচকে, বেশবাসে পরিচ্ছন্নতা। ফক্কুরি চাউনি শান্ত হয়ে গেছে। আগে, ইচ্ছা করেই এড়িয়ে চলত ওদের। আজ কেন মনে হল একটু হাসল সুমনা, শঙ্কর-ও। কাজ করছে শঙ্কর। ব্যাঙ্কলোন নিয়ে ছোটোখাটো ওয়েলডি-ংএর ব্যাবসা সুরু করেছে, ছোটো ব্যাবসা, লাভ পরিমিত, লোকসান নেই।

    এটাও আবার, আরেকটা, মন ভালকরে দেওয়া খবর। হাল্কা করা।

    ***
    আত্মীয় পরিজন নেমন্তন্ন, সকাল দুপুর আইঢাই খাওয়া। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে কয়েকটা আড্ডার বিকেল। আইনক্সে সিনেমা। প্যান্টালুনসে সালোয়ার কামিজ, নিজের জন্য, মেয়ের জন্য-ও। একটা-দুটো বীয়ার পার্টি সমবয়সীদের সাথে। মা-কে নিয়ে দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় মঠ। ফুরিয়ে গেল একমাস। প্রথম কয়েকদিন কান্নাকাটি করার পর, জ্বর, পেট খারাপে ভোগার পর, ওর মেয়েটা ভালই ছিলো। খুড়াতো, মাসাতো ভাইবোনদের সাথে মিশেছে অনর্গল। বিজাতীয় খুনসুটিতে হোঁচোট খেয়েছে, বিজাতীয় বাংলায় সক্কলের ঠাট্টা শুনেছে। পায়খানা-য় না গিয়ে গিয়ে, পেট ফুলিয়ে ডাক্তারের কাছে নিতে হয়েছে। বারান্দায় মাকড়সা দেখে চিল চিৎকার জুড়েছে। উঠোনের চৌবাচ্চায় তেলাপিয়া মাছ দেখে হাততালি দিয়েছে। ঘরমোছার মাসির সাথে গপ্প করেছে, যতক্ষন কাজ না শেষ হয়। গ্রিলের ফাঁকদিয়ে আসা রোদবারান্দায় চড়াই পাখিকে মুড়ি খাইয়েছে।

    দমদম এয়ারপোর্টের ট্যার্ম্যাক থেকে দিল্লির বিমান ট্যাক্সিওয়ে দিয়ে রানওয়ের দিয়ে নাক ঘোরালে, ইউন্ডোশেড তুলে, নিয়ন আলোর, 'নেতাজী সুভাষচন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর' লেখাটা একবার দ্যাখে সুমনা। মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে ওর সীটে। কেন মনে হয়, 'মাম্মি, অ্যায়াম হোমসিক, লেট্‌স গোব্যাক টু আওয়ার হোম', প্রতিবার-ই, বারবার-ই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন