এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • খড়কুটো পাখীর পালক ধূলিকণা হয়ে ওঠা গল্পেরা

    Tim
    অন্যান্য | ২৭ আগস্ট ২০০৭ | ৪১১৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tim | 173.163.***.*** | ১১ মে ২০১১ ০৭:২০392428
  • প্রবীরবাবু একদিন জানতে পারলেন, তিনি আসলে একটা পেরেক। তিনি একাই নন, তাঁর পুত্র বিশাখ, কন্যা প্রিয়া, স্ত্রী অনিমা.... এঁরাও সকলেই একেকটা পেরেক। সকলকেই অবিকল একরকম দেখতে। সকলেই একটা দরজার কব্জায়, ধাতব পাতের গর্তে আটকে আছেন। গেঁথে আছেন বললেও হয়।

    আত্মপরিচয় পেয়ে একটু অবাকই হলেন প্রবীর। নিজের কোনো কোনো কাজে যে সামান্য সন্দেহ হয়নি তাঁর, তা নয়। তবে চিরকাল সেসব তুচ্ছ ঘটনা অগ্রাহ্য করে এসেছেন। গত সপ্তাহে একবার হঠাৎ মাথায় প্রচন্ড চোট পেয়েছিলেন, মনে হয়েছিলো বুঝি মরেই যাবেন। মরেননি যে, সেটা দেখাই যাচ্ছে। বরং বেশ ঝরঝরে লাগছে তারপর থেকেই।

    সবাই জীবদ্দশায় নিজেকে চিনতে পারেনা। যারা পারে তাদের কেউ কেউ খুশি হয়, কেউ কেউ দু:খ পায়। প্রবীরবাবু খুশিই হলেন। বা, হয়ত স্বস্তি পেলেন। বাড়ির বাকিরাও খুব একটা অখুশি ছিলোনা নিজেদের পেরেকত্ব নিয়ে।

    তারপর সব সয়ে এলো। পেরেকদের কাজ বলতে তেমন কিছুই নেই। আত্মরক্ষা ছাড়া। তার অনেকটাও আগে থেকেই করে দেওয়া। কখনও হয়ত শরীর খারাপ হলো, অমনি কেউ আলগা হয়ে যাবে। তখন কয়েকদিনের মধ্যেই কেউ এসে এক ঘায়ে তাকে সুস্থ করে দিতো। বাকি সময় তেলটেল দিয়ে দিব্যি চকচকে পরিষ্কার রাখা হতো তাদের।

    পেরেকের জীবনে প্রেম অতি ভয়ানক ব্যাপার। তখন তাদের রঙ কেমন ঘোলাটে হয়ে ওঠে। কখনও বা মরচে পড়তে থাকে। এমনিতে পড়ার কথা নয় কিন্তু, সবই স্টিলের পেরেক, রীতিমত তেল চুকচুকে করে রাখা। আসলে প্রেমে পড়লে এমন হতো। প্রিয়ার প্রেম হলো উল্টোদিকের খাটের পায়ায় যে পেরেকটা সামান্য উঠে আছে, তার সাথে। নাম অসীম। একটু বখাটে, কিন্তু বেশ বুদ্ধিমান পেরেক অসীম।

    প্রেমে পড়লেই যে পেরেকদের কাছে সেটা ভালো ব্যাপার তা কিন্তু না। কখনও কখনও দুজনে একসাথেই প্রেমে পড়ে, কখনও সখনও একা একা কেউ। সেসব ক্ষেত্রে মরচে ধরা পেরেকটাকে দূর করে দেওয়া হয়। তার ঠাঁই হয় আস্তাকুঁড়ে। মনের দু:খে আরো মরচে পড়ে সে পেরেক গুঁড়ো হয়ে যায়। কদাচিৎ অবশ্য মিলনান্ত কিছু ঘটেও যায়। দুজনেই প্রেমে পড়লো, দুজনেই আস্তাকুঁড়ে, তারপর সেখান থেকে পালিয়ে নিজেদের সংসার। এরকম খুব বেশি ঘটেনা, যাদের ঘটে, তাদের নিয়ে অন্য পেরেকেরা কবিতা লেখে।

    প্রেমে পড়ার অসুবিধের জন্য অনেকে জন্মানো মাত্রই সংসার ফেঁদে নেয়। সকলেই একসাথে জন্মেছে, তবু তাদের মধ্যে নানান সম্পর্ক। এই যেমন প্রবীরবাবুর সংসার। স্বাভাবিকভাবে সংসার পাতার এত অনিশ্চয়তা আছে বলেই পেরেকদের সমাজে এই ব্যবস্থার চল।

    কোনো ভালো জিনিসই বেশিদিন স্থায়ী হয়না। প্রবীরবাবুর শান্তির সংসারেও খারাপ দিন এলো। ক্রমশ বাদামী হয়ে ওঠা প্রিয়াকে একদিন হেঁচড়ে বের করে সরিয়ে দেওয়া হলো। তার জায়গায় বসানো হলো এক নাক-উঁচু ঝগড়ুটে পেরেক। একেবারে একরকম ভেবেই তাকে আনা হয়েছিলো, কিন্তু সে আসলে সামান্য ফ্যাকাসে ছিলো, তার তার খুব অহঙ্কার।

    প্রবীরবাবু, অনিমা আর বিশাখ ভাবলেন, ওঁরা প্রতিবাদ করবেন। পেরেকেরা সহজেই প্রতিবাদ করতে পারে। একে অপরের কথা খুব করে ভাবলে, আত্মীয়তার যে স্বাভাবিক মমত্ববোধ, সেটা বেড়ে উঠতে দিলেই তারা আধার থেকে আস্তে আস্তে আলগা হয়ে আসে। এক্ষেত্রেও তাই হলো। প্রতিদিন একটু করে ক্ষয়ে যেতে যেতে প্রবীরবাবুর পরিবার দরজা থেকে খুলে আসতে লাগলো।

    ব্যাপারটা জানাজানি হয়েছিলো কিকরে, সেটা বোঝা যায়নি। তবে নতুন আসা ফিকা ( এই নামেই ডাকা হতো নতুন পেরেককে) বলে দিয়ে থাকতে পারে। আত্মগর্বে ফিকা সব সময় চকচক করতো। গলা উঁচিয়ে দেখাতে চাইতো, সে কত ভালো মানের পেরেক।

    তো, একদিন এক একটা প্রচন্ড ঘায়ে প্রবীরবাবুদের আবার ভালো করে গেঁথে দেওয়া হলো। কিন্তু এতে দুটো জিনিস হলো। ইচ্ছের বিরুদ্ধে ওদের আঘাত করা হচ্ছিলো বলে কেউ কেউ একটু বেঁকে কাঠের পুরোনো গর্তে গিয়ে ঢুকলো না। তাদের পুরোনো গর্তে ঘুণপোকা বাসা করলো। আবার কেউ কেউ জেদ করে শক্ত হয়ে রইলো। তাদের ওপর উপর্যুপরি আঘাত করায় তারা দরজার অন্যপ্রান্ত দিয়ে বিপজ্জনকভাবে বেরিয়ে রইলো। মোটকথা তিনটে পেরেকই নিজের নিজের মত করে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলো, খানিকটা সফলও হলো।

    কয়েকদিনের মধ্যেই একজনের হাত কেটে রক্তারক্তি হওয়ায় প্রথমে বিশাখকে টেনে বের করে ঘাড় মটকে ফেলে দেওয়া হলো। তার জায়গায় এলো আরেক নব্যযুবক, বশংবদ, ধামাধরা পেরেক।

    মনের দু:খে প্রবীরবাবু আর অনিমা অপেক্ষায় রইলেন। ততদিনে ঘুণে দরজার ভেতরটা ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে রোজ একটু একটু করে। কাঠ খাওয়ার আওয়াজ দিনের ব্যস্ত সময়ে শোনা যেতনা, কিন্তু রাত নামলেই সেই আওয়াজ অতি ধীর, নিশ্চিত মৃত্যুর মত করে এগিয়ে আসতো।

    নতুন পেরেক দুজন এসব বুঝতো না। ওরা এসবে আমল দিতোনা, নাকি ঘড়ির শব্দের সাথে মিলিয়ে নিজে নিজে কোনো একটা ব্যাখ্যা করে নিতো, জানা যায়না।

    তারপর একদিন কব্জার কাছটা আলগা হয়ে দরজাটা ঝুলে পড়লো। এবারেও জোর করে, আঘাত করে দরজাটা সারিয়ে ফেলার চেষ্টা হলো খুব, কিন্তু ততদিনে দরজাটা ঘুণে একেবারেই খেয়ে ফেলেছে।

    দরজাসমেত প্রবীরবাবু আর অনিমা যখন আস্তাকুঁড়ে গেলেন, ততদিনে ওঁদের দুজনেই মরচে পড়ে অপূর্ব সুন্দর দেখতে হয়েছেন। সত্যিকারের প্রেম এসেছিলো, অবশেষে ওঁদের জীবনে।
  • M | 59.93.***.*** | ১১ মে ২০১১ ১৬:২৩392429
  • হুম্ম, বেশ!! কিন্তু টিম্ভাইয়ের ক্ষী হয়েচে?ক্যামন একটা রাগী মনখারাপ টাইপ ব্যাপার য্যানো।
  • Nina | 12.149.***.*** | ১১ মে ২০১১ ২১:২৭392430
  • বাপরে টিম্ভাই--বড্ড শক্ত পেরেক--
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন