এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • যে ইতিহাস লেখা হয় নি

    Rumjhum Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৩ মার্চ ২০১৯ | ২৫০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Rumjhum Bhattacharya | ২৩ মার্চ ২০১৯ ১৯:১৫382992
  • পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতবর্ষ বহু শতাব্দী জুড়ে বিশ্বের দরবারে তার ধর্ম নিরপেক্ষ  ও সহনশীল ভাবমূর্তির জন্য  সুপরিচিত। খুব সম্প্রতিকালে দেশের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নবাদী শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠায় সেই ভাবমুর্তি আজ অনেকটাই মলিন।দেশ শুধু কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা কোন স্থিতি মাত্র নয়। উপমহাদেশ ভারতবর্ষ আসলে জনগণের ভারত। স্বাধীনতার বাহাত্তর বছর পেরিয়ে, সেই জনগণের ভারত  আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের দোরগড়ায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ কিনা ভারতের আম জনতা সতেরোতম বার নিজেদের মুল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ভারতবর্ষের ভাগ্যবিধাতার ভূমিকা পালন করতে চলেছে। প্রশ্ন ওঠে  যে গণ ভোট অনুষ্ঠিত হতে চলেছে তাতে "গণ" নিজের দায়িত্ব সম্বন্ধে কতটা সচেতন? আজও যে দেশে সবার জন্য উন্নতমানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা সরকার করে উঠত  পারেনি সে দেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই গণ যথেষ্ট দায়িত্বশীল হতে পারবেন কি! বিশেষতঃ সাম্প্রতিক কালের কিছু গণ আচরণ যে কোন চিন্তাশীল ও মননশীল মানুষের মনে এই চিন্তা খুঁচিয়ে তুলতে বাধ্য। এই ধরণের আচরণের প্রেক্ষিত কি, কেনই বা সমস্ত সমাজ এমনকি যাঁরা তথাকথিত শিক্ষিত তাঁদের অনেকাংশের মধ্যেও এই গণ আচরণ বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারল এই সব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে প্রয়োজন গভীর সমাজ মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আজকের সমাজ যুক্তি, বা মুল্যবোধের থেকেও বিশ্বাসের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করছে। যেহেতু বিশ্বাস অনেকাংশে কল্পনাশ্রিত ও লব্ধ তাই বাস্তবের সঙ্গে তার ফারাক থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
     যে বিশ্বাসের বাস্তবের সঙ্গে ফারাক যত বেশি তা তত ভ্রান্ত হতে বাধ্য। বিশ্বাস যখন মনের ভিতর গেঁড়ে বসে তখন সেই বিশ্বাসের চালিকাশক্তি ব্যাক্তির আচরণের ওপর কি প্রভাব ফেলতে পারে তা অনুমানযোগ্য। আর যদি ভ্রান্ত বিশ্বাস জনমানসে গেঁড়ে বসে এবং প্রধান চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করে তখন সেই গণআচরণ  সভ্যতার পরিপন্থী হবে তা নিয়ে দ্বিমত থাকে না। মধ্যযুগীয় বিভিন্ন কু সংস্কারের ও বর্বর আচরণের ভিত্তি ছিল বিভিন্ন লব্ধ বিশ্বাস। ইতিহাস তার সাক্ষ্য বয়ে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নতদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পিছনেও এমন ভ্রান্ত বিশ্বাস চালিকাশক্তির কাজ করেছে যা পক্ষান্তরে গণতন্ত্রের গলা টিপে মেরে জন্ম দিয়েছে ফ্যাসিবাদী শক্তির। এই অবস্থার দায়িত্ব 'গণ' অস্বীকার করতে পারে না। কারণ ভ্রান্ত বিশ্বাস যখন জনমানসে সঞ্চারিত হয় এবং সমূহের   বিভ্রান্তি প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে দেখা দেয় তখন সে দেশ, সে সমাজ যুক্তির ধার ধারে না। এমন গণ বিভ্রান্ত্রির( collective delusion)  স্বরূপ বিচার না করলে ইতিহাসের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে ভারাতবাসীকে। ঠিক কেমনটা হয় এই গণ বিভ্রান্তি? মূলত তিন ধরণের বিভ্রান্তি জনমানসে বিপুল প্রভাব ফেলতে পারে। প্রথমত শ্রেষ্ঠত্বের ভ্রান্তি (delusion of grandeur) মানে ক্ষমতার দিক থেকে, সম্প্রদায়গত ভাবে আমি বা আমরা শ্রেষ্ঠ, আমার জাতি শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে।কিন্তু যিনি বা যাঁরা আপনাদের এমন বিশ্বাসে প্রলুব্ধ করছেন  তাঁরা কি তার জন্য বাস্তবে যা যা করণীয় তা করবার চেষ্টা করছেন? আমাদের দেশের আসল সমস্যা তো ধর্মীয় সংকট নয় আমাদের দেশের সমস্যা দারিদ্র, অশিক্ষা, অস্বাস্থ্য। কাজেই যখন সে সব থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে জনমানসে এমন বিভ্রান্তি ছড়ানো হয় যে প্রতিবেশি দেশের জন্য আমাদের বিকাশের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমরা শ্রেষ্ঠত্ব লাভে অসমর্থ হচ্ছি আর জনগণ এমন বিভ্রান্তির শিকার হন তখন সভ্যতার সংকট দেখা দিতে বাধ্য। ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে আমরা তলিয়ে যাই সেই আদিম যুগের যুদ্ধরত  আদিবাসী গোষ্ঠীর সার্বভৌম রাজনীতিতে। এমন শ্রেষ্ঠত্ব দাবীর পিছনে আসলে কাজ করে চূড়ান্ত নার্সিসিটিক মনোভাব, আমার মতই শ্রেষ্ঠ আর আমার মতের বিরুদ্ধাচরণ মানেই আমাকে অপদস্ত করার চেষ্টা যা প্রতিহত করার জন্য যে কোন রকম হিংসার আশ্রয় নিতে হবে, এমন আচরণ আসলে শ্রেষ্ঠত্বের বিভ্রান্তি চালিত এক রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি, নিজেদের অপ্রতুলতা ঢাকা দেওয়ার এক অপচেষ্টামাত্র। দ্বিতীয়ত এই বিভ্রান্তির সূত্র ধরে জন্ম নেয় আর এক ভ্রান্ত বিশ্বাস, আমাদের কেউ ভয়ানক ক্ষতি করতে চাইছে (Delusion of persecution) এই দুই ভ্রান্ত বিশ্বাস যেন দুই ভাই হাত ধরাধরি করে চলছে। আমি শ্রেষ্ঠ তবে কেন আমাকে অমান্য করা তার মানে কোন দুষ্টু চক্র আমাকে অপদস্ত করার চেষ্টা করে চলেছে কোন মাওবাদী শক্তি না হলে জাতীয়তাবাদের পরিপন্থী কোন অশুভ শক্তি। জনগণ আবার ঠকল। আবার ভ্রান্ত বিশ্বাসের কবলে পড়ল। পরিসংখ্যান বিচার করে দেখুন আতঙ্কবাদীর আঘাতে মৃত্যু নিঃসন্দেহে দুঃখজনক কিন্তু আমাদের দেশে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি  মানুষ মরছে বিনা চিকিৎসায়, অনাহারে।  ভারতের জনগণকে চিনে নিতে হবে আসল শত্রু। এক্ষেত্রে গণ-র দায়িত্ব অপরিসীম। দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে, অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, এমন ভাবনা যখন মনের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে দিচ্ছে তখন যদি বোঝানো হয়, এই দুর্দশার জন্য দায়ী যাদের ভোট দিয়ে এনেছি তারা নয়, আসলে দায়ী অন্য সম্প্রদায় যারা সংখ্যায় নগন্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য অনাহার এসব নয় আমাদের উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে আছে ওই ওদের জন্য। তাহলে কোথায় যেন আত্মগ্লানির হাত থেকে বাঁচার পথ বেরিয়ে আসে। ভোট বিফলে যায় নি। হতাশার বোঝা ঘৃণায় বদলে গেল। ওদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেকে বেশ হাল্কা লাগে। হিংসার রাজনীতির জন্ম হয়। মেরুকরণের গোড়াপত্তন করে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়া যায় কিন্তু ভুললে চলবে না সেই বিষ বৃক্ষের ফল নিজেরদেরকেই ভোগ করতে হবে। এরপর জন্মায় আরেক ভ্রান্ত বিশ্বাস। আমার দেশের দুরবস্থার জন্য আমরা নই আসলে সংখ্যা লঘিষ্ট যারা তারা দায়ী তখন আত্মগ্লানি নয় হিংসার মতো আদিম আনন্দে আপ্লুত হওয়া গেল। যুক্তি নয় এক গভীর বিশ্বাস মনের মধ্যে জায়গা করে নিল। যে বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করা মানে দেশদ্রোহী হওয়া। এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের জেরে জনগণ বাস্তব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে হিংসাত্মক মনোভাবের শিকার হচ্ছে। আর এইখানেই ফুটে উঠছে তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। এহেন ভ্রান্ত বিশ্বাস যখন গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জনমানসে চারিত হয় তখন জন্ম নেয় ফ্যাসিবাদ। ইতিহাস সাক্ষী জার্মানিতে, রাশিয়ায়, তুরকিস্থানে, বিভিন্ন সময়ে বার বার এই ঘটনা ঘটেছে। এইভাবেই জনমানস মানবিকতার স্তর থেকে পতিত হয়  জাতীয়তাবাদী চরমপন্থায়।বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে চলছে এই অন্ধ ভ্রান্ত বিশ্বাসের যুগ। আর সেই বিশ্বাসের পালে হাওয়া দিচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি, গণমাধ্যম, সস্তার প্রচার। তাই ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রাক্কালে ভারতবাসীর  আত্মবিশ্লেষণ প্রয়োজন। ভ্রান্ত বিশ্বাসগুলি যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দেশের জনমানসকে বিভিন্ন সময়ে আচ্ছন্ন করেছে ফলত কলঙ্কিত ইতিহাসের জন্ম হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, যে ইতিহাস লেখা হয়নি আম ভারতীয় সে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কতটা দায়িত্বশীল হতে পারবেন?
  • Rumjhum Bhattacharya | ২৩ মার্চ ২০১৯ ১৯:১৫382991
  • পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতবর্ষ বহু শতাব্দী জুড়ে বিশ্বের দরবারে তার ধর্ম নিরপেক্ষ  ও সহনশীল ভাবমূর্তির জন্য  সুপরিচিত। খুব সম্প্রতিকালে দেশের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নবাদী শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠায় সেই ভাবমুর্তি আজ অনেকটাই মলিন।দেশ শুধু কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা কোন স্থিতি মাত্র নয়। উপমহাদেশ ভারতবর্ষ আসলে জনগণের ভারত। স্বাধীনতার বাহাত্তর বছর পেরিয়ে, সেই জনগণের ভারত  আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের দোরগড়ায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ কিনা ভারতের আম জনতা সতেরোতম বার নিজেদের মুল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ভারতবর্ষের ভাগ্যবিধাতার ভূমিকা পালন করতে চলেছে। প্রশ্ন ওঠে  যে গণ ভোট অনুষ্ঠিত হতে চলেছে তাতে "গণ" নিজের দায়িত্ব সম্বন্ধে কতটা সচেতন? আজও যে দেশে সবার জন্য উন্নতমানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা সরকার করে উঠত  পারেনি সে দেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই গণ যথেষ্ট দায়িত্বশীল হতে পারবেন কি! বিশেষতঃ সাম্প্রতিক কালের কিছু গণ আচরণ যে কোন চিন্তাশীল ও মননশীল মানুষের মনে এই চিন্তা খুঁচিয়ে তুলতে বাধ্য। এই ধরণের আচরণের প্রেক্ষিত কি, কেনই বা সমস্ত সমাজ এমনকি যাঁরা তথাকথিত শিক্ষিত তাঁদের অনেকাংশের মধ্যেও এই গণ আচরণ বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারল এই সব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে প্রয়োজন গভীর সমাজ মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আজকের সমাজ যুক্তি, বা মুল্যবোধের থেকেও বিশ্বাসের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করছে। যেহেতু বিশ্বাস অনেকাংশে কল্পনাশ্রিত ও লব্ধ তাই বাস্তবের সঙ্গে তার ফারাক থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
     যে বিশ্বাসের বাস্তবের সঙ্গে ফারাক যত বেশি তা তত ভ্রান্ত হতে বাধ্য। বিশ্বাস যখন মনের ভিতর গেঁড়ে বসে তখন সেই বিশ্বাসের চালিকাশক্তি ব্যাক্তির আচরণের ওপর কি প্রভাব ফেলতে পারে তা অনুমানযোগ্য। আর যদি ভ্রান্ত বিশ্বাস জনমানসে গেঁড়ে বসে এবং প্রধান চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করে তখন সেই গণআচরণ  সভ্যতার পরিপন্থী হবে তা নিয়ে দ্বিমত থাকে না। মধ্যযুগীয় বিভিন্ন কু সংস্কারের ও বর্বর আচরণের ভিত্তি ছিল বিভিন্ন লব্ধ বিশ্বাস। ইতিহাস তার সাক্ষ্য বয়ে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নতদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পিছনেও এমন ভ্রান্ত বিশ্বাস চালিকাশক্তির কাজ করেছে যা পক্ষান্তরে গণতন্ত্রের গলা টিপে মেরে জন্ম দিয়েছে ফ্যাসিবাদী শক্তির। এই অবস্থার দায়িত্ব 'গণ' অস্বীকার করতে পারে না। কারণ ভ্রান্ত বিশ্বাস যখন জনমানসে সঞ্চারিত হয় এবং সমূহের   বিভ্রান্তি প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে দেখা দেয় তখন সে দেশ, সে সমাজ যুক্তির ধার ধারে না। এমন গণ বিভ্রান্ত্রির( collective delusion)  স্বরূপ বিচার না করলে ইতিহাসের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে ভারাতবাসীকে। ঠিক কেমনটা হয় এই গণ বিভ্রান্তি? মূলত তিন ধরণের বিভ্রান্তি জনমানসে বিপুল প্রভাব ফেলতে পারে। প্রথমত শ্রেষ্ঠত্বের ভ্রান্তি (delusion of grandeur) মানে ক্ষমতার দিক থেকে, সম্প্রদায়গত ভাবে আমি বা আমরা শ্রেষ্ঠ, আমার জাতি শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে।কিন্তু যিনি বা যাঁরা আপনাদের এমন বিশ্বাসে প্রলুব্ধ করছেন  তাঁরা কি তার জন্য বাস্তবে যা যা করণীয় তা করবার চেষ্টা করছেন? আমাদের দেশের আসল সমস্যা তো ধর্মীয় সংকট নয় আমাদের দেশের সমস্যা দারিদ্র, অশিক্ষা, অস্বাস্থ্য। কাজেই যখন সে সব থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে জনমানসে এমন বিভ্রান্তি ছড়ানো হয় যে প্রতিবেশি দেশের জন্য আমাদের বিকাশের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমরা শ্রেষ্ঠত্ব লাভে অসমর্থ হচ্ছি আর জনগণ এমন বিভ্রান্তির শিকার হন তখন সভ্যতার সংকট দেখা দিতে বাধ্য। ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে আমরা তলিয়ে যাই সেই আদিম যুগের যুদ্ধরত  আদিবাসী গোষ্ঠীর সার্বভৌম রাজনীতিতে। এমন শ্রেষ্ঠত্ব দাবীর পিছনে আসলে কাজ করে চূড়ান্ত নার্সিসিটিক মনোভাব, আমার মতই শ্রেষ্ঠ আর আমার মতের বিরুদ্ধাচরণ মানেই আমাকে অপদস্ত করার চেষ্টা যা প্রতিহত করার জন্য যে কোন রকম হিংসার আশ্রয় নিতে হবে, এমন আচরণ আসলে শ্রেষ্ঠত্বের বিভ্রান্তি চালিত এক রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি, নিজেদের অপ্রতুলতা ঢাকা দেওয়ার এক অপচেষ্টামাত্র। দ্বিতীয়ত এই বিভ্রান্তির সূত্র ধরে জন্ম নেয় আর এক ভ্রান্ত বিশ্বাস, আমাদের কেউ ভয়ানক ক্ষতি করতে চাইছে (Delusion of persecution) এই দুই ভ্রান্ত বিশ্বাস যেন দুই ভাই হাত ধরাধরি করে চলছে। আমি শ্রেষ্ঠ তবে কেন আমাকে অমান্য করা তার মানে কোন দুষ্টু চক্র আমাকে অপদস্ত করার চেষ্টা করে চলেছে কোন মাওবাদী শক্তি না হলে জাতীয়তাবাদের পরিপন্থী কোন অশুভ শক্তি। জনগণ আবার ঠকল। আবার ভ্রান্ত বিশ্বাসের কবলে পড়ল। পরিসংখ্যান বিচার করে দেখুন আতঙ্কবাদীর আঘাতে মৃত্যু নিঃসন্দেহে দুঃখজনক কিন্তু আমাদের দেশে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি  মানুষ মরছে বিনা চিকিৎসায়, অনাহারে।  ভারতের জনগণকে চিনে নিতে হবে আসল শত্রু। এক্ষেত্রে গণ-র দায়িত্ব অপরিসীম। দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে, অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, এমন ভাবনা যখন মনের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে দিচ্ছে তখন যদি বোঝানো হয়, এই দুর্দশার জন্য দায়ী যাদের ভোট দিয়ে এনেছি তারা নয়, আসলে দায়ী অন্য সম্প্রদায় যারা সংখ্যায় নগন্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য অনাহার এসব নয় আমাদের উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে আছে ওই ওদের জন্য। তাহলে কোথায় যেন আত্মগ্লানির হাত থেকে বাঁচার পথ বেরিয়ে আসে। ভোট বিফলে যায় নি। হতাশার বোঝা ঘৃণায় বদলে গেল। ওদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেকে বেশ হাল্কা লাগে। হিংসার রাজনীতির জন্ম হয়। মেরুকরণের গোড়াপত্তন করে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়া যায় কিন্তু ভুললে চলবে না সেই বিষ বৃক্ষের ফল নিজেরদেরকেই ভোগ করতে হবে। এরপর জন্মায় আরেক ভ্রান্ত বিশ্বাস। আমার দেশের দুরবস্থার জন্য আমরা নই আসলে সংখ্যা লঘিষ্ট যারা তারা দায়ী তখন আত্মগ্লানি নয় হিংসার মতো আদিম আনন্দে আপ্লুত হওয়া গেল। যুক্তি নয় এক গভীর বিশ্বাস মনের মধ্যে জায়গা করে নিল। যে বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করা মানে দেশদ্রোহী হওয়া। এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের জেরে জনগণ বাস্তব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে হিংসাত্মক মনোভাবের শিকার হচ্ছে। আর এইখানেই ফুটে উঠছে তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। এহেন ভ্রান্ত বিশ্বাস যখন গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জনমানসে চারিত হয় তখন জন্ম নেয় ফ্যাসিবাদ। ইতিহাস সাক্ষী জার্মানিতে, রাশিয়ায়, তুরকিস্থানে, বিভিন্ন সময়ে বার বার এই ঘটনা ঘটেছে। এইভাবেই জনমানস মানবিকতার স্তর থেকে পতিত হয়  জাতীয়তাবাদী চরমপন্থায়।বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে চলছে এই অন্ধ ভ্রান্ত বিশ্বাসের যুগ। আর সেই বিশ্বাসের পালে হাওয়া দিচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি, গণমাধ্যম, সস্তার প্রচার। তাই ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রাক্কালে ভারতবাসীর  আত্মবিশ্লেষণ প্রয়োজন। ভ্রান্ত বিশ্বাসগুলি যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দেশের জনমানসকে বিভিন্ন সময়ে আচ্ছন্ন করেছে ফলত কলঙ্কিত ইতিহাসের জন্ম হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, যে ইতিহাস লেখা হয়নি আম ভারতীয় সে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কতটা দায়িত্বশীল হতে পারবেন?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন