এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  সিনেমা

  • কাশ্মীরের সিনেমা

    সৈকত
    সিনেমা | ০৮ এপ্রিল ২০১৯ | ১২৩৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সৈকত | ***:*** | ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৫:১০382882
  • যা দিনকাল,বুক বাজানো দেশভক্তি আর দৃঢ়মুষ্টির দমননীতি, কাশ্মীরের ভাগ্যে আপাততঃ এই। এতে অবশ্য যারা ক্ষমতায় তাদের বিশেষ কিছু যায় আসে না, যতদিন মিডিয়া আর ন্যারিটিভকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে, ততদিন এই চলবে, পরে না হয় আবার ঘুরে যাওয়া যাবে। কারণ নিজেদের ভোটটা ধরতে হবে।

    এসবই জানা কথা।

    তাহলে উপায়টা কি ? নীচু স্বরে কথাগুলো বলে যাওয়ার চেষ্টা করা ? সেখানকার ক্ষতগুলোকে , দ্বন্দগুলোকে দেখানো আর শোনানো, সিনেমা যেভাবে পারে, সেভাবে অন্তত ? মাল্টিপ্লেক্সকেই নয় ব্যবহার করে, ইণ্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমা বলে একটা কিছু অল্প হলেও যখন এদেশে তৈরী হয়েছে, সেই ধারাকে ব্যবহার করে আর সেন্সরের সাথে ঝামেলায় না গিয়ে অথচ বলার কথাগুলোকে প্রকাশ করে? একটা হল, একটা শো আর গোটা কুড়ি দর্শকের বেশী না পাওয়া গেলেও, তাও সিনেমা যতখানি পারে, সেভাবে বলে যাওয়া ?
  • সৈকত | ***:*** | ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৫:৪৬382883
  • 'হামিদ' নামে সিনেমাটি আমি দেখতে পাইনি। মাস খানেক আগে ইন্টারনেটে বিবিধ নিউজ সাইটেই আমি সিনেমাটি সম্বন্ধে পড়ি, দেখার ইচ্ছেও হয় কিন্তু ধারেকাছে কোন হলেই সিনেমাটিকে পাইনা। অতএব দেখা হয়নি। কিন্তু সিনেমাটির গল্পটি আমাকে টানে। গল্পটি হামিদ নামে আট বছরের এক বালককে নিয়ে যার বাবা হারিয়ে গেছে, কাশ্মীরের শত সহস্র বাবার মতই যে একজন। এ তো কাশ্মীরের এক সাধারণ বাস্তব, মেনে নেওয়া বাস্তব হয়তবা, তাদের অপেক্ষায় থেকে যাওয়া তাদের পরিবারের লোকেদের কাছে, অথবা স্ত্রীদের কাছেও, যারা নিজেরাও জেনে উঠতে পারেনা, যে লোকটি বেঁচে আছে না মরে গেছে, অথচ সেই দোটানা নিয়ে দিন কাটানো, এই রকম সাধারণ বাস্তব যেমন হয়, সেরকমই। মনে হয়েছিল, ঐ জায়গার এই দৈনন্দিন বাস্তব যদি সিনেমাটির একটি মূলসূত্র হয়, তাহলে অন্য দিকটি হল, হামিদ তার বাবাকে খুঁজতে গিয়ে যে অব্স্থার সাম্নে পড়ে। হামিদের মা বলেছিল যে তার বাবা, আল্লাহর কাছে চলে গেছে, কেউ একজন বলেছিল, একটা নম্বরে ফোন করলে (৭৮৬), ভগবানের সাথে কথা বল যায়। হামিদ ফোনও করে এবং উল্টোদিকে এক আর্মি জওয়ানের সাথে তার কথা শুরু হয়।

    আমি সিনেমাটির এইটুকুই জানি, অন্তত যা পড়েছিলাম সেখান থেকে এইটুকুই মনে আছে। জওয়ানটিও ডিস্টার্ব্ড, একটি এনকাউন্টারের মত ঘটানায় জড়িয়ে পড়ে, মানসিক্ভাবে ব্যতিবস্ত, তাকে যা করতে বলা হচ্ছে আর সে যা ভাবছে করা উচিত বলে, আদৌ ঠিক করছে কিনা, সেই নিয়ে দ্বিখণ্ডিত সে। অন্তত, সৈন্যরাও যে পাথরপ্রতিম নয়, দোটানা যে তাদের মধ্যেও আছে, বাস্তব আর সরকারি নির্দেশ যা অস্বীকার করে, সেসব এর ফাটল সিনেমা বা গল্প ছাড়া আর কোথায়ই বা পাওয়া যাবে।

    এই দুটি যদি সিনেমাটির বক্তব্য হয়, তাহলে আরও একটি বক্তব্য থেকে যায়। সেটাই হয় প্রধান, সিনেমাটিম্দেখলে হয় আমার কাছে সেটি স্পষ্ট হত, যে কথা বলাটা জরুরী। সময়টা এমনই যে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরা সেই কথা বলার জায়্গাটা হারিয়ে ফেলেছে, প্রায় পুরোপুরি, ফলে এক্জন সিনেমা নির্দেশককে একটা গল্প তৈরী করতে হচ্ছে, একটি শিশু বা পরবর্তী প্রজন্মের সাথেই রাষ্ট্রের কথাবার্তার জায়গাটা খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু কথা বলতে গেলে, ঘুরিয়ে না বললে যেন আর স্পষ্টই করা যাবে না।
  • সৈকত | ***:*** | ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:১২382884
  • ফলে এটা আপতিক নয় যে 'নো ফাদার্স ইন কাশ্মীর' নামে সিনেমাটিতেও নূর নামে কিশোরী মেয়েটি, লন্ডন থেকে কাশ্মীরে আসবে এবং শেষ পর্যন্ত তার বাবাকে খোঁজাকে কেন্দ্র করেই কাশ্মীরের অতীত আর বর্তমানের বাস্তবের, নিরতিশয় বাস্তবের মুখোমুখি হবে। কারণ, মানুষের হারিয়ে যাওয়া, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের হারিয়ে যাওয়া আর কিশোরদের দৈনন্দিনের আতঙ্কের মধ্যেই থাকাটা কাশ্মীরের দৈনন্দিন্দের সাধারণ বাস্তব। নূরের বাবা লন্ডনেই পড়শোনা করত, আরও দুই বন্ধু ছিল একই সাথে, নব্বইয়ের দশকে তিনজনেই চলে আসবে কাশ্মীরে, স্বাধীনতার লড়াই করতে। তার মধ্যে একজন ছিল আর্শিদ, যে এখনও বেঁচে আছে। কিন্তু নূরের বাবা আর মজিদ নামে যে ছেলেটির সাথে নূরের আলাপ হবে, তার বাবাও, তিন বন্ধুর মধ্যে এই দুজনকেই ঐ সময়েই পুলিশ-মিলিটারি তুলে নিয়ে যাবে, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আর্শিদই তাদের নাম বলে দিয়েছিল পুলিশকে। তারপর পিঠে গুলি খেয়ে ঐ দু'জনের মাটির তলায় কোন কবরে জায়গা হয়েছে। নূর তো মজিদকে নিয়ে সারওয়ানের দিকে চলে যাবে, জঙ্গলের মধ্যে, পাকিস্তান সীমার কাছাকাছি কারণ আর্শিদ বলেছিল ঐখানেই কোথাও তার বাবার কবর আছে। রাত হয়ে গিয়ে খুঁজে না পেয়ে, পরের দিন ভোরবেলা সেখানেই তো মাটির তলা থেকে কঙ্কাল আর হাড়গোড়ও নূর ঠিকই পেয়ে যাবে; সিনেমার প্রয়োজনে ঠিক নয়, বাস্তবই এইরকম, কত যে কবর এইভাবে ছড়িয়ে আছে কাশ্মীর জুড়ে তার আর খতিয়ান কতখানি !!
  • সৈকত | ***:*** | ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:০২382885
  • মিলিটারি বুট আর যুদ্ধ পরিস্থিতি যদি কাশ্মীরের স্থির সত্য হয়, অন্তত গত তিরিশ বছর ধরে, স্বাধীনতাস্পৃহাও তো সেরকমই সত্য সেখানকার মানুষের কাছে। কিন্তু সেই ইচ্ছেটার মধ্যেও কি পরিবর্তন আসেনি, সময়ের সাথে সাথে, বিশ্ব পরিস্থিতি যেভাবে বদলে গেছে তার মত করেই ? আর্শিদ (চরিত্রায়নে, অশ্বিন কুমার) সেরকমই এক চরিত্র, যার মধ্যে এই বদলে যাওয়াটা ফুটে ওঠে। এক আর্মি মেজর যখন মারধর করতে করতে তাকে বলে যে বিদেশ থেকে কেন সে এখানে চলে এসেছিল, স্বাধীনতার কথা বলে তাকে গালিই দেয়, তখ্ন আর্শিদ বলেছিল, ঠিক সেই কারণেই সে কাশ্মীরে এসেছিলে যে কারণে গান্ধী বা নেহেরু বিলেতে পড়াশোনা করে দেশে চলে এসেছিল, স্বাধীনতার জন্যই !! কিন্তু আর্শিদ বদলে গেছে এই জন্য যে সে ইসলামপন্থী হয়ে পড়েছে। সিনেমাটিতে যে দৃশ্যে আর্শিদকে পথম দেখা যায়, সেখানে নূরের মা তাকে জীন্স বলে সম্বোধন করতে থাকে।নূরের মাও তাকে চিনত, সেই লণ্ডনের দিনগুলো থেকে, কিন্তু আর্শিদ চায়না যে ঐ জীন্স নামে তাকে আর ডাকা হোক। সেই তার অতীতকে কিছুটা অস্বীকার করতে চায়, স্বাধীনতা সম্বন্ধে তার ধারণাটা বদলে গেছে বলেই। নূরের দাদু আব্দুল রশিদকে (চরিত্রায়ণে, কূলভূষণ খারবান্দা, অনায়াস সিদ্ধি যাঁর) সে বলে যে তাঁদের যে জীবনবোধ যা সুফি ভাবধারাকেন্দ্রিক, সেটাকে সে অস্বীকার করে, নিয়ন্ত্রিত ইসলামী পথ অনুসরণ না করলে, স্বাধীনতার জন্য চেষ্টা করে লাভ নেই, কারণ ঐ স্বাধীনতার কোনো দৃঢ় ভূমি নেই, পাপের পথেই ঐ স্বাধীনতা মানুষকে নিয়ে যাবে !! আব্দুল রশিদও মেনে নেয় না আর্শিদের যুক্তি, পেট্রো ডলার আর মাদ্রাসা দিয়ে স্বাধীনতার ইচ্ছে যে ভুল পথে চলে যাচ্ছে, বৃদ্ধ আব্দুল রশিদের সেই ছিল বক্তব্য। দু'তিনটে ডায়্লগ দুজনের মধ্যে, দ্বন্দটা প্রকাশ করার জন্য, এও এক বাস্তব নিশ্চয় কাশ্মীরবাসীদের, পথ না পেয়ে আর লড়তে লড়তে কতদিকে যে ছড়িয়ে যাবে আত্মপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা সেসবই বর্তমান কিছুটা জানে আর অজানা যা কিছু রয়ে গেছে ভবিষ্যতের জন্য।
  • সিকি | ***:*** | ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:১৬382886
  • দেখার ইচ্ছে জন্মাল। খুঁজতে হবে - টরেন্ট নিশ্চয়ই মিলবে।
  • S | ***:*** | ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৫৯382887
  • উইকিতে কালকে দেখলাম লিখেছে ৭ লক্ষ বক্স অফিস কালেকশান। অথচ উড়ির কালেকশন দেখে দেশোপ্রেমের আন্দাজ পাওয়া যায়। আমি উড়ি দেখেছি, অতিব খাজা একটা সিনেমা।
  • গৰু | 2402:3a80:a7a:32aa:e603:29b6:fad1:***:*** | ২৪ মার্চ ২০২১ ০১:০৯733779
  • যাঁরা হামিদ দেখতে চান, তাদের জন্যে:




    এছাড়া নেটফলিক্সেও আছে।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন