এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বাঙালী | ***:*** | ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ১২:৩৭382863
  • *আকবরের বাঙালিবার্বালিকাপ্রেম*
    - শ্রী গজানন নস্কর
    .
    ওয়ান্স আপন আ টাইম ফার ফার অ্যাওয়ে.... এক দেশে আকবর নামে এক লোক বাস করিতেন। তিনি দিল্লী বোর্ডের ছিলেন বলিয়া শোনা যায়। বাল্যকাল হইতেই তিনি ক্যালেন্ডার ভালোবাসিতেন। ছোটবেলায় ক্যালেন্ডার পরিয়া থাকিতেন, ক্যালেন্ডার জড়াইয়া ঘুমাইতেন। দুঃখ পাইলে "হা ক্যালেন্ডার, ও ক্যালেন্ডার" বলিয়া কাঁদিতেন।
    সেবার 963 হিজরি। মরুদস্যুর পলায়ণের 963 বর্ষপূর্তি। আকবর সেইবার রাজা হইলেন। তিনি মরুদস্যুর ভক্ত ছিলেন, ফলতঃ হিজরি ক্যালেন্ডার ধরিয়া কোনরূপে মনোকষ্টে কালাতিপাত করিতেন।
    এমতাবস্থায় কোন এক বসন্তসন্ধ‍্যায় বাংলা বোর্ডের এক ডাগর তরুণী দিল্লী বোর্ডে পৌঁছিল। আমরা এখন সকলেই জানি, দিল্লিবোর্ড কিরূপে বাংলাবোর্ডের তরুণীদিগকে পটাইয়া লয়। এখন জানিলাম সেই আকবরের সময় হইতেই এইরূপ চলিতেছে। আপনারা অবশ্যই জিজ্ঞাসা করিবেন না যে এইটি কোথা হইতে পাইলাম, কারণ আর সকলেই ভুল, আকবর ঠিক ইহা স্বতঃসিদ্ধ।
    তো তরুণীকে দেখিয়া আকবরের চিত্ত চঞ্চল হইল। তিনি ক্যালেন্ডার ভুলিয়া আনমনা হইলেন। আবুল ফজল চক্ষু টিপিয়া কহিলেন, "... বঙ্গের বধু বুকভরা মধু জল লয়ে যায় ঘাটে..." ... ইহাতে আকবর প্রেমজ্বরে মৃতপ্রায় হইলেন। বধুবক্ষের মধু তিনি বড় ভালোবাসিতেন। তখন সভাসদেরা শলা করিতে বসিল যে কি প্রকারে আকবরকে বাঁচানো সম্ভব।
    মানসিং কহিলেন, কন্যাকে পত্র লিখা হউক।
    আবুল ফজল কহিলেন, সে পত্র অভিনব হওয়া চাই। বঙ্গালি মছলি খাতা। ঝট করে মধু নেহি দেতা। বহুত মুখ করতা।
    তখন বীরবল কহিলেন, বাদশার বড় ক্যালেন্ডারের সখ। উহাকে ক্যালেন্ডার দেওয়া হউক।

    চতুর্দিকে খোঁজ খোঁজ রব পড়িয়া গেল। গোটা ভারতে তখন প্রায় তিনশোরকম ক্যালেন্ডার। ইহার বিষয়ে জানিতে ডক্টর শৈল আহুজার সাথে যোগাযোগ করিতে পারেন। ভদ্রমহিলা আকবরের শাসনামলের কিছু পরে জবাহরলাল নেহুরু নামক পাঠশালায় এই সম্পর্কিত একখানি বড়সড় বক্তৃতা দিয়াছিলেন। কিন্তু বাংলাবোর্ডের কন্যাকে পটাইতে দিল্লীবোর্ডের আকবর কোনই রিস্ক লইলেন না। তাছাড়া ডক্টর আহুজার বাম না ডান ইহা নিশ্চিত না হইলে লিবারালগণের পুর্বপুরুষ হিসাবে আকবর নিশ্চিত হইতে পারেন নাই যে মহিলা বাল জানেন কি না। অতএব তিনি সমস্ত ক্যালেন্ডার ফেলিয়া বঙ্গাব্দকে ধরিলেন। আপনারা ইহাকে অদ্ভুত মনে করিতে পারেন, ভাবিতে পারেন যে তাহার যোদ্ধা মিত্রগণের আলাদা আলাদা ক্যালেন্ডার থাকা সত্ত্বেও তাহা ফেলিয়া ম্যালেরিয়াজর্জর এই বঙ্গীয় ক্যালেন্ডার কেন তিনি পছন্দ করিলেন, কিন্তু হে পাঠক, আপনি হয় প্রেম করুন, অথবা লিবারাল হউন। আপনার বুঝিতে কোনরূপ সমস্যা হইবে না।
    তো সেই সহজবোধ্য লিবার্বালিয় হিসাবে দেখা গেল 1556 খ্রীষ্টাব্দ হইতেছে 963 হিজরি। আবার পরম করুণাময় আল্লাহর এমনই লীলা যে সেইবার বঙ্গাব্দও 963... মনের মিল হইলে কতকিই না ঘটে।
    সমস্যা হইল তারপর।
    নিন্দুক কহিল, "জাঁহাপনা, নতুন ক্যালেন্ডার তো হইল। ইহা তবে শূন্য বা এক হইতে শুরু হউক?"
    জাঁহাপন মূর্খ ছিলেন। তাহার হুক্কাবরদার কহিল, "না, আমরা পয়গম্বরের পলায়নের পবিত্র দিনকে অস্বীকার করিতে পারিনা। উহা 963 হইতেই শুরু হইবে।"
    নিন্দুক কহিল, "তবে তো উহা হিজরিই রহিল। বঙ্গাব্দ হইল কি প্রকারে? জাঁহাপনা তবে আর কি করিলেন?"
    হুক্কাবরদার কহিল, "তুমি বাল জানো হে প্রগলভ।"
    নিন্দুক কহিল, "তা না হয় বাল জানিলাম। কিন্তু আপনার ও বঙ্গবালিকার মিলনে যে উত্তরপুরুষরা আসিবে তারা যখন আপনাকে বঙ্গাব্দের পিতা বানাইবে, তখন যদি কেহ প্রশ্ন তোলে যে আপনি পুরা জম্বুদ্বীপে বঙ্গাব্দেরই পিতৃত্ব বরণ করিলেন কেন?"
    হুক্কাবরদার কহিলেন, "প্রশ্নকারীরা বাল জানে।"
    নিন্দুক কহিল, "আহা বাল জানুক আর যাই করুক, উহারা দিব্যি সূর্যসিদ্ধান্ত নামক একখানা স্ক্রিপ্ট তো নামাইয়াছে। তাহা দিয়া উহারা দিব্যি বর্ষ গণনা করিয়াও থাকে পুর্ব হইতেই। সেইটাকে বাল বলিয়া উড়াইতে প্রেমরূপ ভিট কি যথেষ্ট হইবে?"
    বীরবল নিন্দুককে আড়ালে ডাকিয়া কহিলেন, "দেখো বাবা নিন্দুক, ইহা হইতেছে গভীর প্রেমের ব্যাপার। আর প্রেম সততই অন্ধ। সেই প্রেমের বলেই জাঁহাপনা বঙ্গাব্দের পিতা হইবেন। দ্বীন ই ইলাহির মত প্রকৃষ্ট বালরচনার পর ইহা তারিখ ই ইলাহি নামক অপর উন্নততর বাল। সব মিলিয়া বালফ্রন্টও বলিতে পারো। বাদবাকি সব ভুলিয়া কূটপ্রশ্ন না তুলিতে তুমি দুইটি আকবরি মোহর নাও না কেন?"
    .
    এইভাবে সকল বিতর্কের নিষ্পত্তি হইয়াছিল। আমরা জানি না যে বাংলাবোর্ডের ডাগর তরুণী দিল্লীবোর্ডের আকবরের ঘরে যাইয়াছিল কিনা, তবে তাহার বর্তমান উত্তরপুরুষদের বঙ্গাব্দ লইয়া অন্ধ দখলপ্রয়াস দেখিয়া স্পষ্ট প্রতীত হয় যে প্রেমক্যালেন্ডারখানি অবশ্যই লিখিত হইয়াছিল।
    যদিও অত্যন্ত সহজ হিসাবে আমরা বুঝি যে কেহ কোন ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করিলে সেইকালের কোন নির্দিষ্ট ঘটনা অনুযায়ী শুরু করিয়া থাকেন, সেই হিসাবে বঙ্গাব্দের শুরু হইবার 594 খ্রীষ্টাব্দ। যেহেতু ইহা চান্দ্র ক্যালেন্ডার নহে তাই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হইতে দশ বারোদিন প্রতিবছর ঘাটতি হইবারও সম্ভাবনা নাই, ফলতঃ খুব সহজেই বঙ্গাব্দের হিসাব বঙ্গেই মেলা সম্ভব, এমনকি ঐতিহাসিকগণের একাংশ প্রমাণ দেখাইয়াছেনও। কিন্তু তাহাতে আকবরের প্রেমাস্পদা সেই লিবার্বালিকার উত্তরপুরুষগণ মানিবে কেন?

    অতএব, আকবরকে বাঙালি কনকর্ড জিনসের লুঙ্গি পরাইয়া বঙ্গাব্দের পিতৃপদে প্রশ্নহীন স্থান দেওয়াই বাঙালীর কর্তব্য বলিয়া দিকে দিকে ঘোষিত হইল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন