এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সুভাষ চন্দ্র বসু -- একটি নির্মোহ ব

    Ishan
    অন্যান্য | ২৭ এপ্রিল ২০১৯ | ৮৯০৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রঞ্জন | ***:*** | ৩০ মে ২০১৯ ১৪:২৫382697
  • @অর্জুন ।
    এখন দিল্লি-গুড়গাঁওয়ে আটমাস থাকি, চারমাস ছত্তিশগড়ের ভিলাইয়ে।
    কখনও দিল্লি আসলে বোলো , দ্যাখা করে আড্ডা দেব । আমার নম্বর ঃ ৮৫৮৩০৪১৩৯৫।

    টই দারুণ চলছে।
  • এলেবেলে | ***:*** | ৩০ মে ২০১৯ ১৯:০৮382698
  • যাঁরা গুলিয়ে ফেলছেন তাঁদের জন্য :

    পঞ্চ 'ম' কার --- আদিতে মদ্য-মাংস-মুদ্রা-মৎস্য-মৈথুন, অন্তে মদন-মুকুল-মমতা-মোদী-মালিয়া।

    ষড়রিপু --- আদিতে কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ-মাৎসর্য, অন্তে আরাবুল-অনুব্রত-লক্ষণ-রেজ্জাক-মুকুল-মনিরুল।

    টই আর অন্য রাস্তায় নিয়ে যাবেন না। @অর্জুন অভিষেক (রঞ্জনবাবুর মতো আমারও একই অনুরোধ 'অর্জুন' বা 'অভিষেক' কী লিখব ঠিক করে দেবেন) চেষ্টা করব আজ রাতে বা কাল লেখার।
  • Ishan | ***:*** | ৩০ মে ২০১৯ ১৯:৩৪382699
  • হ্যাঁ, লেখা হয়নি। এক এক করে উত্তর দিই। বইপত্তর নেই, সবই স্মৃতি থেকে রেফারেন্সহীনভাবে লেখা। এক আধটা ভুল হতে পারে।

    ১/৬। কংগ্রেস কেন ফজলুল হককে মুসলিম লিগের দিকে ঠেকে দিয়েছিল, নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে ব্যাপারটা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নীতি বা নীতিহীনতার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ ছিল। কংগ্রেস কোথাও জোট সরকার গঠন করেনি। এমনকি যুক্তপ্রদেশে মুসলিম লিগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে যাবার পরে, কংগ্রেস যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল, তারা মুসলিম লিগকে বাদ দিয়েই সরকার গড়বে দাবী করে। সিন্ধ এবং আসামেও কংগ্রেস কোনো জোট করেনি। মৌলানা এবং আংশিকভাবে প্যাটেলের এতে সমর্থন ছিল। বিড়লারও ছিল দেখাই যায়। বাকিটা অন্দাজের বিষয়।
    সুভাষ এই সিদ্ধান্তগুলির সময় দেশে ছিলেন না। কিন্তু বিরোধী ছিলেন শোনা যায়, আন্দাজও করা যায়। কারণ সভাপতি হবার পরে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধারাবাহিকভাবে বিরোধিতা করেছেন। সিদ্ধান্ত ওল্টানোরও চেষ্টা করেছেন।

    ২। ৩৮ এর নির্বাচন। হ্যাঁ, ওটা একরকম করে মনোনয়নই ছিল।

    ৪। সুভাষ যদি অতই বামপন্থী, তো মনোনয়নটা হল কেন? কারণ ৩৮ সালে পরিস্থিতি ঘোরালো ছিল। সমাজতন্ত্রী ঘরানা ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছিল। জনসমর্থন পাচ্ছিল। এর আগের বছর সভাপতি ছিলেন জওহরলাল নেহরু। সেই সময়ের অবস্থানের ভিত্তিতে তিনি সুভাষের কয়েক ডিগ্রি বেশি বাঁয়ে ছিলেন। দেশ স্বাধীন হলে সব বড় শিল্প অধিগ্রহণ করে নেওয়া হবে বলে দাবী করেছিলেন। তাতে শিল্পমহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। অনেক পরে অবশ্য দেখা যায়, নেহরু এই র‌্যাডিক্যালিজম পরিত্যাগ করে পথে এসেছেন।

    সেই মুউর্তে সুভাষকে বেছে নেবার দুটো কারণ ছিল বলে আন্দাজ করা যায়। ক। সুভাষের জনপ্রিয়তা কংগ্রেসের কাজে লাগবে এবং একই সঙ্গে সুভাষও নেহরুর মতো 'পথে' আসবেন। খ। সুভাষের নীতি বাঁ দিক ঘেঁষা হলেও নেহরুর মতো র‌্যাডিকাল ছিলনা। অতএব সুভাষ তুলনামূলকভাবে বেশি গ্রহণযোগ্য ছিলেন।

    ২/৩/৫। সুভাষের বামপন্থাটি কী ছিল? ৩৮ এ সভাপতির ভাষণে সুভাষ সরাসরি লেনিনকে কোট করে বলেছিলেন, যে, ভারতের স্বাধীনতাযুদ্ধর যুদ্ধ আসলে বৃটেনেরও শরমিকশ্রেণীর মুক্তির লড়াই। তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীনতার দাবীতে একেবারেই আপোষহীন ছিলেন ( যে কারণে পরে জার্মানি যাত্রা ইত্যাদি)। জমিদারি তুলে দেবার কথাও ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু একই সঙ্গে, সেই বক্তৃতায়, এবং পরেও, কংগ্রেসকে কেবলমাত্র বামপন্থী আদর্শের অভিমুখে চালিত করতে চাননি। তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল, কংগ্রেস নানা মতবাদের একটি ছাতা। সেখানে সিএসপি থাকবে আবার ডান্পন্থীরাও থাকবেন। এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে শিল্পপতিদেরও প্রয়োজন, যেমন প্রয়োজন শ্রমিককৃষকেরও।

    এই অবস্থানকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। অনেক কমিউনিস্টই এটাকে শ্রেণী সমন্বয়ের রাজনীতি বলবেন। উল্টোদিকে এটাকে নয়াগণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টও বলা যেতে পারে। নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব কথাটা তখনও চালু হয়নি, কিন্তু পরের দশকে মাও-সে-তুং অবিকল একই লাইন নিয়েছিলেন। মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক-জাতীয় বুর্জোয়াদের জোট চেয়েছিলেন।

    এই দুটোর মধ্যে যাইই হোক, বিষয়টা নীতিগতভাবে গান্ধির বেশি পছন্দ হবারই কথা। মানে নেহরুর নীতির তুলনায়। প্রাথমিকভাবে হয়েওছিল। কিন্তু গোল বাধে সম্পূর্ণ স্বরাজ এবং সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে। সুভাষ এই দুটো জায়গায় আপোষ করেঅনি। পন্থ প্রস্তাবে সুভাষ আপোষ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ স্বরাজের দাবীকে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। ফলে সুভাষ এবং নেহরুর অবস্থানের মধ্যে দুটো তফাতই তাঁদের কার্যপরম্পরার পার্থক্য গড়ে দেয়। ক। নেহরু প্রচন্ড কপিবুক বামপন্থী ছিলেন, কিন্তু সুভাষ তুলনায় কম র‌্যাডিকাল এবং যুক্তফ্রন্টপন্থী। খ। নেহরু অলিখিত আপোষ করতেন, যার সীমানা অনেকদূর যায় (মাথা মোড়াতেও কোনো অসুবিধে ছিলনা -- এইরকমও পড়তে পারেন)। সুভাষের আপোষ প্রকাশ্য এবং নির্দিষ্ট ইস্যুভিত্তিক ছিল। তার বাইরে তিনি এগোননি।

    বাকি রইল ফ্যাসিবাদ সম্পর্কে সুভাষের অবস্থান। জার্মানি এবং ব্রিটেনের দ্বন্দ্বকে স্পষ্টই তিনি দুই সাম্রাজ্যবাদীর যুদ্ধ হিসেবে দেখেছিলেন। যে যুদ্ধকে কাজে লাগানোই যায়। স্পষ্টতই সোভিয়েত যুদ্ধে নামার আগে পর্যন্ত সকলেই তাই ভাবতেন। অবস্থান যখন বদলায়, তখন সুভাষ কমিট করে ফেলেছেন। আর পিছিয়ে আসার উপায় ছিলনা। তবে মনে রাখতে হবে তিনি সোভিয়েতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই চলেছিলেন দীর্ঘদিন। আজাদ-হিন্দ সরকারকে সোভিয়েতও স্বীকৃতি দিয়েছিল। (খুব সম্ভবত সেটাই তাঁর কাল হয়। কোনো প্রমাণ নেই, কিন্তু এখনও পর্যন্ত এটা হবার সম্ভাবনা খুব প্রবল, যে সুভাষ তথাকথিত শেষ যাত্রায় সোভিয়েত গিয়েছিলেন।)
  • অর্জুন | ***:*** | ৩০ মে ২০১৯ ২২:৩০382700
  • @রঞ্জন-দা, Number Noted । দিল্লী আমারও প্রিয় ও পুরনো জায়গা। ছোটবেলা থেকে যাচ্ছি এবং পরবর্তীকালে পড়াশোনা ও চাকরী সূত্রে কিছু বছর ছিলাম। গুরগাঁও'তে ('গুরুগ্রাম হবার এক যুগেরও আগে) কয়েকমাস থাকার অভিজ্ঞতা আছে, তবে তখন Gurgaon was in the making। সে শহর এখন একেবারে অন্যরকম। ইফকো চৌকের পরে রিকশা ছাড়া আর কিছু যেত না।

    জুনে প্রায় চার বছর বাদে দিল্লী আসার প্ল্যান আছে। অবশ্যই যোগাযোগ হবে।

    এই তো Ishaan র লেখা পড়েছে। গ্রেট ।
  • অর্জুন | ***:*** | ৩১ মে ২০১৯ ০২:০০382701
  • কাঁটাছেঁড়া সকলকে নিয়েই করা হচ্ছে কিন্তু যে ব্যক্তিটিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশী করা দরকার ছিল তাকে এক পক্ষীয় বাঙালী অবিরত পুজো করে গেল আর আরেক পক্ষ চুপ রইল- সে হল অরবিন্দ ঘোষ।

    লোকটা আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে একশো বছর ভেস্তে দিল স্রেফ জেলের কষ্ট সহ্য করতে পারবে না বলে। অথচ কতগুলো ছেলে, ছোকরা ওর জন্যে ফাঁসল। উটপটাং অধ্যাত্মবাদ টাদ দিয়ে গা ঢাকা দিয়ে রইল দিব্যি বাকী ৪০ বছর।
  • এলেবেলে | ***:*** | ৩১ মে ২০১৯ ১২:২১382702
  • ১. বাসন্তী দেবী - চিত্তরঞ্জনের পুতুল কিস্‌সা — ১৯২১ এর ১৭ নভেম্বর প্রিন্স অফ ওয়েলস বোম্বেতে আসলেন। ওই দিনই কংগ্রেস সারা দেশে হরতাল ডাকল। খিলাফতিদের সহায়তায় কলকাতাতেও হরতাল যথেষ্ট সফল হল। বাংলার কংগ্রেস কর্মীরা উৎসাহের আতিশয্যে আইন অমান্য করতে চাইলেন। চিত্তরঞ্জন তাদের দৌড় জানতেন ভালোভাবেই। তাই ছোট ছোট দলে আইন অমান্য করার কথা বললেন যাতে সাপও মরে অথচ লাঠি না ভাঙে। প্রথমে পাঠালেন পুত্র চিররঞ্জনকে। তাঁর গ্রেফতারির পর তুরুপের তাস হিসাবে বাসন্তী দেবীকে। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে রাতে ছেড়ে দিল। কংগ্রেস কর্মীরা এবার দলে দলে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নিয়ে গ্রেফতার বরণ করল। সব চলল ছক অনুযায়ী।

    ২. বাসন্তী দেবী - রাবড়ি দেবী কিস্‌সা — ১৯২২ সালের মে মাসে বাংলা কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন স্থির হল চট্টগ্রামে। ওইখানেই চিত্তরঞ্জনের বড় সাধের 'আইনসভায় যোগ দেওয়ার প্রস্তাব' পাশ হওয়ার কথা। চিত্তরঞ্জন তখন জেলে। অতএব ওই সম্মেলনের সভাপতি হলেন বাসন্তী দেবী। সভাপতির ভাষণ তৈরি করে দিলেন চিত্তরঞ্জন-এর অনুগামী হেমন্ত সরকার। সব চলল ছক অনুযায়ী, এবারও।

    ৩. বাসন্তী দেবী - সোনিয়া লাও দেশ বাঁচাও কিস্‌সা — সুভাষের শিলং থেকে ১৯২৭ সালের ৩০ জুন বাসন্তী দেবীকে লেখা চিঠি “আমি কলকাতায় আপনাকে যে প্রশ্ন করিয়াছিলাম তার মীমাংসা হইয়া গিয়াছে। তার মীমাংসা এই যে আপনি যদি আমাদের নেতৃত্বের ভার গ্রহণ না করেন তবে বাংলাদেশে এমন কেহ নাই যাঁকে আমরা অন্তরের সহিত নেতা বা নেত্রী বলিয়া গ্রহণ করিতে পারি”। বাসন্তী দেবী রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ সুভাষের তাঁকে ওই বছরের নভেম্বর মাসে ১, ১৫, ২০ এবং ২৪ তারিখে পরপর চিঠি। শেষে বাসন্তী দেবীর সমর্থন আদায়। সব চলল ছক অনুযায়ী, আবারও।

    'এলেবেলে যেন একটু ডেভিলস অ্যাডভোকেট হয়ে লড়ে যাচ্ছে'!
  • এলেবেলে | ***:*** | ৩১ মে ২০১৯ ২৩:২০382703
  • ঈশান, আপনার দীর্ঘ-প্রতিক্ষিত উত্তরের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি যেভাবে উত্তরগুলো দিয়েছেন তা আমি বুঝতে পারলেও অন্য সবাই না-ও বুঝতে পারেন। যেহেতু অনেকগুলো প্রশ্ন এবং তার উত্তরও যথেষ্ট বড় তাই আলোচনার সুবিধার জন্য আমি আরেকবার প্রশ্নোত্তরগুলো নিজের মতো সাজিয়ে দিচ্ছি। আপনার উত্তর তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে থাকছে।

    আমার প্রশ্ন ছিল ১) কংগ্রেস কেন ফজলুল হককে মুসলিম লিগের দিকে ঠেলে দিয়েছিল? সুভাষ কি সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন?
    ৬) সাম্প্রদায়িকতার ঘরানাকে তিনি আদৌ ভাঙতে আগ্রহী হয়েছিলেন কি?

    ঈশানের উত্তর [১/৬। কংগ্রেস কেন ফজলুল হককে মুসলিম লিগের দিকে ঠেকে দিয়েছিল, নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে ব্যাপারটা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নীতি বা নীতিহীনতার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ ছিল। কংগ্রেস কোথাও জোট সরকার গঠন করেনি। এমনকি যুক্তপ্রদেশে মুসলিম লিগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে যাবার পরে, কংগ্রেস যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল, তারা মুসলিম লিগকে বাদ দিয়েই সরকার গড়বে দাবী করে। সিন্ধ এবং আসামেও কংগ্রেস কোনো জোট করেনি। মৌলানা এবং আংশিকভাবে প্যাটেলের এতে সমর্থন ছিল। বিড়লারও ছিল দেখাই যায়। বাকিটা অন্দাজের বিষয়।
    সুভাষ এই সিদ্ধান্তগুলির সময় দেশে ছিলেন না। কিন্তু বিরোধী ছিলেন শোনা যায়, আন্দাজও করা যায়। কারণ সভাপতি হবার পরে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধারাবাহিকভাবে বিরোধিতা করেছেন। সিদ্ধান্ত ওল্টানোরও চেষ্টা করেছেন।]

    আমার ব্যাখ্যা --- ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাশ হল ভারত সরকার আইন। কংগ্রেস-মুসলিম লিগ প্রাথমিক গাঁইগুঁই করলেও তারা যে এই আইন মেনে নির্বাচনে লড়বে তা ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করল। ১৯৩৭ এ প্রাদেশিক সভার নির্বাচনে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি বা কেপিপি অসম্ভব ভালো ফল করল। আইনসভায় কংগ্রেস পেল ৫৩ জন সদস্য। কেপিপি কৃষক প্রজাসত্ব আইনের সংস্কারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চাইল। কংগ্রেস তাতে ঘোর আপত্তি জানিয়ে রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিকে সর্বোচ্চ প্রাথমিকতা দিতে বলল। কিন্তু এই ব্যাপারে ছোটলাট ভেটো দিলে মন্ত্রিসভার পতনের আশঙ্কায় কেপিপি রাজি হল না। সুযোগ বুঝে মুসলিম লিগ সমর্থন জানাল। প্রজাসত্ব আইনের সংশোধনীর ফলে জমিদারদের খাজনা বৃদ্ধি দশ বছরের জন্য স্থগিত রাখা হল। রায়ত পেল জমি বিক্রি ও হস্তান্তরের অধিকার। আর বাংলায় পাকাপাকি আসন পাতার সুযোগ পেল মুসলিম লিগ। পরবর্তীতে আমরা দেখতে পাব সুভাষের সভাপতিত্বে হরিপুরা কংগ্রেসে 'হিংসায় বিশ্বাসী' রাজবন্দীদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করার বিরোধিতা করে প্রস্তাব পাশ হচ্ছে!

    শুধু এতেই ক্ষান্ত হলেন না সুভাষ। সভাপতি হিসাবে তাঁর 'কৃতিত্ব' প্রমাণ করে গান্ধীর নয়নের মণি হওয়ার আপ্রাণ আকাঙ্ক্ষায় তিনি সমস্ত নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিলেন। সভাপতির পদে বসেই সুভাষ গঠন করে ফেললেন অসমে কংগ্রেস মন্ত্রিসভা। তিনি নিজে গেলেন অসমে, দল ভাঙালেন ব্যাপকভাবে, বাধ্য হয়ে কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রী (তখনকার দিনে প্রধানমন্ত্রী) শাহদুল্লা পদত্যাগ করলেন। এই সুযোগে ওই আসনে বসলেন গোপীনাথ বরদলৈ। সুমিত সরকার 'মডার্ন ইন্ডিয়া'-য় লিখছেন "In September 1938, a Congress ministry was established in Assam through somewhat sordid assembly manoeuvres and floor-crossings in which, interestingly enough, the Left President of the Congress, Subhas Bose, played a prominent role".

    এহ বাহ্য, একই কায়দায় সুভাষ বাংলার মন্ত্রিসভাও দখল করতে চাইলেন। ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮এ কুমারটুলি পার্কে সুভাষ বললেন সরকার বিরোধীর সংখ্যা ৫৩ থেকে ১১১ হয়েছে। কিন্তু গান্ধী সরকার ভাঙতে রাজি হলেন না। ফলে সে যাত্রা রক্ষা পেল কেপিপি-মুসলিম লিগ মন্ত্রিসভা। ওই ১৯৩৮এই কমিউনিস্টদের শ্রেণিসংগ্রামের আদর্শকে নিন্দা করে ভুলাভাই দেশাই প্রস্তাব উত্থাপন করলেন, সমর্থন করলেন গান্ধী। আর 'বামপন্থী' সুভাষ? চুপটি করে বসে রইলেন ভালো ছেলের মতো! পট্টভি সীতারামাইয়া 'ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ইতিহাস', ২য় খণ্ডতে লিখলেন “সুভাষবাবু কংগ্রেসের মধ্যে কথা-না-কওয়া প্রেসিডেন্টদের মধ্যে অন্যতম। পুরো বছর সভাপতিত্বের মধ্যে তিনি কতবার ওয়ার্কিং কমিটির সভায় কথা বলেছেন তা আঙুলে গুনে বলা যায়”। একই অভিযোগ করলেন সেন্ট্রাল প্রভিন্সের মারাঠি মুখ্যমন্ত্রী এন বি খারে। ওয়ার্কিং কমিটিতে সুভাষের সামনে এন বি খারেকে হটিয়ে রবিশঙ্কর শুক্লকে যখন মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসালেন গান্ধী, তখন খারে সুভাষকে 'গান্ধীর পুতুল' ছাড়া আর কিছু বলতে পারেননি।

    কোথায় ধারাবাহিকভাবে বিরোধিতা? কোথায় সিদ্ধান্ত ওল্টানোর চেষ্টা? কোন অংশে তিনি গান্ধীর ক্রীড়নক অন্যান্য সভাপতির থেকে আলাদা? আপাতত এইটুকু। বাকি প্রসঙ্গ পরে, এবং সে সব প্রসঙ্গও খুব সুখপ্রদ নয়। গুরু যাঁর চিত্তরঞ্জন, তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হবেন না তো কে হবেন? ধুরন্ধর কৌশলী হবেন না তো কে হবেন? ক্ষমতার জন্য সীমাহীন আপস করবেন না তো কে করবেন?
  • অর্জুন | ***:*** | ০১ জুন ২০১৯ ০০:৩৭382704
  • 'উনিশ শতকের একদম প্রথম থেকে বাংলার ইতিহাসকে দেখলে দেখা যাবে একটা জাতির অস্মিতা বা আইডেন্টিটি গড়ে ওঠারও সূচনা অধ্যায়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সেই অস্মিতায় ঔপনিবেশিকতার প্রভাব অনস্বীকার্য। নবজাগরণ হয়েছিল কি হয়নি, সেই সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করেই ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছিল আমাদের জাতীয় আইডেন্টিটি। স্বাভাবিক নিয়মে এই সংস্কৃতির ধারক ছিলেন পুরুষ এবং কিছুকাল পরে তাদের ইচ্ছেয় এবং হাত ধরেই বেরিয়ে এসেছিল মেয়েরা। পুরুষদের সাহচর্যে ও পরিচয়ে তৈরি হয়েছিল তাদেরও পরিচয়। সেই মেয়েরাই এগিয়ে এসে তৈরি করেছিলেন মেয়েদের পথ চলার পথটি। মেয়েদের এই নিজস্ব আইডেন্টিটি তৈরির কাজে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা এক সবিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। অবশ্যই সে পরিবারের পুরুষদের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতায়। তারা স্বামীর সঙ্গে ময়দানে ঘোড়া ছোটাল, স্বামীর কর্মস্থলে গেল, কালাপানি পেরিয়ে বিলেতে পৌঁছল, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের নিজেদের পোশাক তৈরি করল, রান্নার বই লেখা, পত্রিকা সম্পাদনা, সাহিত্যচর্চা, সঙ্গীত, নৃত্য, নাট্য প্রায় সবেতেই নিজেদের মেলে ছড়িয়ে দিয়েছিল। নারী সম্পর্কে মূল্যবোধের চূড়ান্ত সেই অবক্ষয়ের দিনে যখন সে শুধুই পুরুষদের ভোগ সামগ্রী ও ভাতকাপড় দিয়ে পোষা জীব, সেই সময়ে সমাজে মেয়েদের এই স্বতন্ত্র পরিচয় তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করেছিল । তৈরি হয়েছিল নিজেদের স্পেস। কিন্তু তাদের পরিচয় বলয় স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধূ, নাতনি ইত্যকার পারিবারিক পরিচয়ের উর্ধে যেতে পারেনি। এই পারিবারিক নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই একটা সীমিত স্পেস তৈরি করে চলছিল তাদের জীবন। তার কারণ মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাদের পেশা নিয়ে নারী স্বাধীনতা আন্দোলন রত পুরুষেরাও সেই সময়ে চিন্তা করেননি। জীবনচর্যার নান্দনিক সৌন্দর্যের দিকটা চর্চার মধ্যেই নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিলেন।'

    @এলেবেলে, আপনি হঠাৎ বাসন্তী দেবীকে নিয়ে পড়লেন বলে গুরুচন্ডা৯তেই আমার লেখার একটি অংশ তুলে দিলাম। এখানে 'ঠাকুরবাড়ি'র সঙ্গে 'দাশবাড়ি'ও জুড়ে দেওয়া যেতে পারে।

    তাই 'বাসন্তী দেবী - চিত্তরঞ্জনের পুতুল কিস্‌সা' কিনা জানিনা কিন্তু 'পুরুষদের সাহচর্যে ও পরিচয়ে তৈরি হয়েছিল তাদেরও পরিচয়। ' এর ব্যতিক্রম হওয়া ছিল অসম্ভব। যদি বাসন্তী দেবীর একদম সম বয়সী সরোজিনী নাইডু বা তার থেকে বিশ বাইশ বছরের বড় কবি তরু দত্তের কথাও ধরি তাহলেও তাদের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত পিতৃদেবদের একটি বিশাল ভূমিকা ছিল এ বিষয়ে।

    'নারী সম্পর্কে মূল্যবোধের চূড়ান্ত সেই অবক্ষয়ের দিনে যখন সে শুধুই পুরুষদের ভোগ সামগ্রী ও ভাতকাপড় দিয়ে পোষা জীব'

    এবং
    ' তাদের পরিচয় বলয় স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধূ, নাতনি ইত্যকার পারিবারিক পরিচয়ের উর্ধে যেতে পারেনি। পারিবারিক নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই একটা সীমিত স্পেস তৈরি করে চলছিল তাদের জীবন' (দুটো উদ্ধৃতিই আমার লেখা থেকে )

    হঠাৎ সেই তমসা থেকে বের করে তাদের রাতারাতি কল্পনা চাওলা বানানোর আশ্চর্য প্রদীপের ফর্মুলা কিছু ছিল না।

    আমার একটা লেখা 'কবি পত্নী ও আচার্য পত্নী' লিখেছিলাম 'যশোরের ফুলতলির ভবতারিণীর (রায়চৌধুরী) জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মৃণালিনী দেবীতে উত্তরণ ঘটল। কিন্তু ঢাকার তেলিরবাগের বা কলকাতার অবলা দাশের লেডি অবলাতে বাঁধা পড়ে গেলেন। '

    এই পরিচয়ও খুব ফেলনার নয়। চিত্তরঞ্জনের প্রয়াণের পরে সুভাষচন্দ্র, যতীন্দ্রমোহনের মধ্যে যে বাসন্তী দেবীকে নিয়ে টানাটানি হচ্ছে তাতে রাজনীতির আঙিনায় তার প্রাসঙ্গিকতাকে দৃঢ় করছে।

    তার সমসাময়িক সেলিব্রিটি সরোজিনী নাইডু'র চাইতে বাসন্তী দেবীদের সংগ্রাম অনেক বেশী ছিল।
  • Ishan | ***:*** | ০১ জুন ২০১৯ ০৭:৫৩382705
  • "কেপিপি কৃষক প্রজাসত্ব আইনের সংস্কারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চাইল। কংগ্রেস তাতে ঘোর আপত্তি জানিয়ে রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিকে সর্বোচ্চ প্রাথমিকতা দিতে বলল। কিন্তু এই ব্যাপারে ছোটলাট ভেটো দিলে মন্ত্রিসভার পতনের আশঙ্কায় কেপিপি রাজি হল না। সুযোগ বুঝে মুসলিম লিগ সমর্থন জানাল।"
    এরকম স্থানীয় স্তরে কেপিপিকে সমর্থন না জানানোর সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্তটা ছিল হাইকম্যান্ডের স্তরে। সর্বভারতীয়ভাবেই কংগ্রেস সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যে, কোনো কোয়ালিশন সরকারে যাবেনা। অবিভক্ত ভারতের সর্বত্র তাই হয়। এমনকি যুক্তপ্রদেশে মুসলিম লিগের সঙ্গে যৌথভাবে লড়ার পরও কংগ্রেস তাদের সঙ্গে যৌথভাবে সরকার গড়তে অস্বীকার করে। মুসলিম লিগ বস্তুত এটাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেই দেখেছিল। আসাম, সিন্ধ এবং বাংলায়ও কংগ্রেস ওই নীতি অনুসারেই কোনো কোয়ালিশন গড়েনি। বাংলায় আলাদা করে কোনো ইস্যুভিত্তিক কারণে কেপিপির সঙ্গে সরকার গড়েনি, এমন একেবারেই নয়। এবং এই সিদ্ধান্তে গান্ধির পুরো সমর্থন ছিল।

    সুভাষ সভাপতি হয়েই এই সিদ্ধান্তটি উল্টে দেবার চেষ্টা করেন। আসামে, সিন্ধে এবং বাংলায়। এটা গান্ধির এবং মৌলানার, কোনো-কোনো ক্ষেত্রে প্যাটেলেরও ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছিল। ফলে গান্ধিজির প্রিয়পাত্র হবার চেষ্টার প্রশ্নই নেই। থাকলে চেষ্টাটাই করতেননা। এবং মনে রাখতে হবে ওয়ার্কিং কমিটিতে তখন গান্ধি-প্যাটেলের প্রায় একাধিপত্য। ফলে সুভাষকে কৌশলী হতেই হয়েছিল। আসামের ক্ষেত্রে প্যাটেলকে তিনি সঙ্গে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে গান্ধি শুরুতে নিমরাজি হলেও পরে বিড়লার পরামর্শে বেঁকে বসেন। ফলে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এবং এই নিয়েই সুভাষের সঙ্গে তাঁর তিক্ততা বাড়তে শুরু করে।

    এর থেকে তিনটি জিনিস বোঝা যায়।
    ১। ওয়ার্কিং কমিটিতে যথেষ্ট মতবিরোধ ছিল। গান্ধি-সুভাষের চিঠি চালাচালিতে তার যথেষ্ট রেফারেন্স আছে। সুভাষ গিয়ে চুপ করে বসে থাকতেন এমন মোটেই না। কংগ্রেস সরকারি ভাবে সুভাষকে অপদার্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল। পন্থ প্রস্তাবেও তাই বলা হয়েছিল। কংগ্রেসের স্বীকৃত ইতিহাসেও যে তেমনই লেখা থাকবে তাতে আশ্চর্য কিছু নেই।**

    ২। সরকার-ভাঙা ইত্যাদি গান্ধিকে তুষ্ট করার জন্য নয়। বিগত বছরের গান্ধির সমর্থনধন্য সিদ্ধান্তকেই সুভাষ ওল্টানোর চেষ্টা করেছিলেন।

    ৩ । অতি অবশ্যই সুভাষ নিজের ইচ্ছামতো সমস্ত প্রস্তাব পাশ করাতে পারেননি ওয়ার্কিং কমিটিতে। কারণ ওয়ার্কিং কমিটিটি সুভাষের নিজের ছিলনা। তিনি মিলেমিশেই চলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও বিরোধ হয়। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে আস্ত ওয়ার্কিং কমিটির পদত্যাগ, ব্ল্যাকমেলিং ইত্যাদি। যার শুরু হয়েছিল ওই সরকার-ভাঙা সংক্রান্ত মতবিরোধ দিয়েই। যেটা শেষমেশ গান্ধিকে চ্যালেঞ্জ করায় পৌঁছয়। গান্ধির কথায় হ্যাঁহ্যা করে চলা বা তুষ্ট করতে চাওয়া একজন লোক হঠাৎ বছর গড়ানোর আগেই তাঁকেই চ্যালেঞ্জ করে বসছেন, ফিকশন হিসেবেও এ বেশ অলীক।

    এবার কথা হল, কী ছিল ওই সরকার ভাঙা ইত্যাদির উদ্দেশ্য। গান্ধির বা মৌলানার সঙ্গে কেন এই নিয়ে মতবিরোধ? আসামে ফ্লোর কো-অর্ডিনেশন, সিন্ধের বা বাংলার চেষ্টা, এগুলো দুমদাম খেলাধুলো একেবারেই নয়। যথেষ্ট ধারাবাহিক নীতিগত ব্যাপার। সুভাষ-গান্ধি-প্যাটেলের চিঠিচাপাটিতে এর বিশদ বিবরণ আছে। সুভাষ 'কমিউনাল' সরকারগুলিকে ফেলে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চেয়েছিলেন। বিবাদের সময় বারবার এই কথাটি গান্ধিকে লিখেছেন সুভাষ। তুষ্ট করার কোনো চেষ্টা করেননি। গান্ধি তুষ্ট হনওনি। কারণ সাপ্রদায়িকতার প্রশ্নে দুজনের মধ্যে তফাত ছিল। সুভাষ আজকের অর্থে 'সেকুলার' ছিলেন। সে সময় 'কমিউনাল' শব্দটিকে 'কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড; থেকে শুরু করে সর্বত্র খুব সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক বিভাজন যেমন সেকুলাররা নিন্দার চোখে দেখেন, সেভাবে একেবারেই নয়। গান্ধিও সম্ভবত কমিউনাল শব্দটিকে নিন্দাজনক মনে করতেননা। সুভাষের্ লেখাতেই প্রথম দেখি শব্দটির নিন্দার্থে প্রয়োগ। ফলে সুভাষের সব কাজ ঠিক নাই হতে পারে, কিন্তু সে সব কাজকর্মের ধারাবাহিক সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী অভিমুখ নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। (আমি চিঠি-চাপাটি তুলে দিতে পারি দরকার হলে, দেখে দেখে টাইপ করা কঠিন বলে এখন আর দিলামনা)।

    -------------
    ** ঘটনাচক্রে কংগ্রেসের ওই ইতিহাস যিনি লিখেছেন, তিনিই আবার সুভাষের কাছে সভাপতি নির্বাচনে পরাজিত হন। ফলত একজন চুপ করে বসে থাকা হ্যাঁহ্যাঁ করে ঘাড়-নাড়া নেতা হঠাৎ গান্ধিকে চ্যালেঞ্জ করে বসলেন এব্ং হারিয়েও দিলেন এই অবিশ্বাস্য ব্যাপার কীকরে ঘটল তিনি ব্যখ্যা করেননি। সুভাষ হ্যাঁ-হ্যাঁ করে প্রিয়পাত্রই যদি হবেন তো এত বিরোধিতাটা কীসের? সে কি আকাশ থেকে পড়ল? আরও মজার, এই হ্যাঁ হ্যাঁ করার কথাকথিত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করছেন পরাস্ত প্রার্থী, যিনি আসলে প্রার্থী নন, আসল প্রার্থী, গান্ধির ঘোষণামতে গান্ধি নিজেই। আর সীতারামাইয়া হ্যাঁ হ্যাঁ করা নন, হ্যাঁহ্যাঁ করা হলেন সুভাষ, এ খুবই অলীক প্রস্তাবনা।
  • এলেবেলে | ***:*** | ০১ জুন ২০১৯ ১১:৩৯382593
  • অর্জুন

    টই নেতাজিকে নিয়ে, বাসন্তী দেবীকে নিয়ে নয়। তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নিটোল বৃত্তের অজস্র বিন্দুর মধ্যে একটি বিন্দু মাত্র, কাজেই তিনি বড় বা ছোট বিন্দু কি না তা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। চিত্তরঞ্জনের সময় থেকেই বাংলা কংগ্রেসের অন্যতম চালিকাশক্তি বিগ ফাইভ, বাসন্তী দেবী নন। তবে কংগ্রেস নেতা-কর্মিবৃন্দের কাছে যেটুকু সম্মান তিনি পেয়েছেন তা ওই চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী হিসেবেই, বাসন্তী দেবী হিসেবে নন।

    ঈশানকে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব আজ বা কাল এবং অনুরোধ করব তিনি যেন এই আলোচনাকে কখনোই কাটাকুটি-খেলা হিসেবে বিবেচনা না করেন। সামান্য মতের আদানপ্রদান বা দৃষ্টিভঙ্গীর হেরফের হিসেবে মনে করলেই ঠিক হবে।
  • এলেবেলে | ***:*** | ০১ জুন ২০১৯ ২৩:০৫382594
  • ঈশান

    আপাতত কেপিপিতে থাকছি, পরে অন্য প্রসঙ্গে যাব। বাংলায় কিন্তু কেপিপি সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জায়গায় ছিল না। সরকার গড়তে গেলে তাদের কোয়ালিশন করতেই হত এবং যেহেতু হক স্বয়ং মুসলিম লিগের খাজা নাজিমুদ্দিনকে হারিয়েছিলেন, সেহেতু স্বাভাবিক মিত্র হিসেবে তিনি প্রথমে কংগ্রেসকেই চেয়েছিলেন। কংগ্রেস কিন্তু না করেনি বরং শর্ত চাপিয়েছিল (যা আগেই উল্লেখ করেছি)। এমনকি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে সুভাষ সর্বভারতীয় সভাপতি জওহরলালের হস্তক্ষেপও প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। অর্থাৎ সেই সময়ে তিনি দেশেই ছিলেন এবং কোয়ালিশন সরকার না গঠন করতে পেরে তিনি ডালহৌসিতে চলে যান। সেখান থেকেই পরবর্তী কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার লক্ষ্যে ছক সাজাতে শুরু করেন। এই পর্বটা পরে বিস্তারিত লিখছি।

    আর হ্যাঁ, সীতারামাইয়াকে প্রামাণ্য ধরার দরকার নেই কিন্তু বি এন খারে ভুল কিছু বলেননি এবং সুমিত সরকার অসম সম্পর্কে দায় সুভাষের ঘাড়েই চাপিয়েছেন।
  • রঞ্জন | ***:*** | ০২ জুন ২০১৯ ১৬:০৬382595
  • ওই সময়টা নিয়ে (যে কোন ঐতিহাসিক সময় নিয়েই) আমার পু*জি খুব ভাসাভাসা এবং কিছু অ্যানেকডোটাল । তাই অর্জুন, এলেবেলে এবং ঈশানের লেখাগুলো হাঁ করে গিলছি, এবং বোঝার চেষ্টা করছি।
    আচ্ছা, সুভাষ সাম্প্রদায়িক দল কাকে ভাবছিলেন? মুসলিম লিগকে? নিশচয়ই কেপিপিকে নয় ? এ প্রসংগে অবিভক্ত বঙ্গে খাজা নাজিমুদ্দিন, সোহরাওয়ার্দি এবং বোকাইনগরীর ভূমিকা নিয়ে দু'পয়সা হোক।
    অ্যানেকডোটঃ আমার দাদু ফজলুল হকের মহাজনের বকেয়া ঋণ মাপের সিদ্ধান্তের সালিশি বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়ে ( উকিল হিসেবে ভাল প্র্যাকটিস ছিল না ) একটি ট্যাঁকঘড়ি সরকারের থেকে পুরষ্কার পান। সেটা আমি দেখেছি।
    যদিও এই প্রক্রিয়ায় উনি নিজের বেয়াই জ্ঞান দাস পরিবারের খাতকদের ঋণ মাপ করিয়ে দেওয়ায় দুই পরিবারে অনেকদিন মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল। ঃ)))
  • এলেবেলে | ***:*** | ০২ জুন ২০১৯ ২২:৪৫382596
  • রঞ্জনবাবু

    আমার চরিত্রের সবচেয়ে বড় দোষ এই যে আমি কাউকে অকারণে তেল মারতে পারি না। কারণেও পারি না! সত্যি কথা বলতে যখন প্রথম গুরুর সাইটে আসি তখন মুগ্ধ বিস্ময়ে আপনার-কল্লোলবাবুর-পিটির-শিবাংশুবাবুর-Bর বিশ্লেষণগুলো পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে খ, ইন্দ্রনীলবাবু, সৈকতবাবু, র২হ এঁদের লেখাও পড়েছি গোগ্রাসে। সেই আপনি যদি আমার লেখা 'হাঁ করে গেলেন' তাহলে লজ্জার সীমা থাকবে না।

    ফজলুল হকের অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বিবরণ পড়েছি তপন রায়চৌধুরীর 'বাঙালনামা'-য়। কাজেই কংগ্রেস নিজের পায়ে কুড়ুলই শুধু মারেনি, বাঙালিকে নিঃস্ব অসহায় আত্মসমর্পণের দিকে কয়েক কদম এগিয়েও দিয়েছে। এই ইতিহাসকে ক্ষমা করা যায় না। নেহরু না হয় বাংলা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না, কিন্তু বাঙালির 'আইকন' সুভাষ তাঁর দায়িত্ব এড়াতে পারেন?

    বর্তমান প্রেক্ষিতে যেখানে বিজেপি নেতাজি সেন্টিমেন্ট নিয়ে নেমেছে সেখানে এই ডিসকোর্স খুব জরুরি। বাঙালি সুভাষ, বাঙালির সুভাষ শুধু বাঙালি বলে ছিটকে গেলেন রাজনীতির মূল স্রোত থেকে অথচ তিনি নাকি চরম র‍্যাডিক্যাল, চরম বামপন্থী - এই সরল একবগ্গা ন্যারেটিভের পুনর্নিমাণ খুবই সঙ্গত বলে আমার ধারণা। নেহাতই পাঠক হিসেবে থাকতে চেয়ে এখানে বিস্তর লেখালেখি করতে হচ্ছে এটা আমার বিলকুল না-পসন্দ। আপনারাও যদি দু-চার কথা লেখেন তবে বড্ড ভালো হয়। এদিকে নির্বাচনী টইগুলোতে লিখতে গিয়ে এখানে আর লেখা হচ্ছে না। হয়তো আজ আর পারব না। তবে কাল সব বাদ দিয়ে এখানে আগে লেখার চেষ্টা করব। এ তো কাটাকুটি খেলা নয়, একটা সময়কে বিভিন্ন দিক থেকে জানতে চাওয়া। এই আর কি।
  • রঞ্জন | ***:*** | ০২ জুন ২০১৯ ২২:৫৯382597
  • এলেবেলে,
    আপনার উদ্দেশ্য সাধু। এটা একটা ভাল ডিস্কোর্স হচ্ছে। চলুক।
    আমার বাবার পারসেপশন ছিল কৃষক প্রজা পার্টি সে সময়ের হিসেবে সেকুলার ছিল, মুসলিম জনতার মধ্যে মুসলিম লিগের অ্যান্টি ডোট হিসেবে কাজ করত। আর বলতেন ন্যাপ পার্টির নেতা মৌলানা ভাসানীর কথা ।
    যদিও মা নাক সিঁটকাতেন-- হ, গরুর গাড়িতে ছইয়ের নিচে আরামে শুইয়া মিটিং করতে জায় মৌলানা। পরনে দামি সিল্কের লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি। হে নাকি শ্রমিক কৃষকের নেতা ! আর দূরের গাঁও থেইক্যা সব চিঁড়া মুড়ি বাইন্ধ্যা রওনা দিছে--ভাসনের মৌলানার বক্তৃতা শুনতে হইব।
    সে যাক গে , টই মূল আলোচনায় ফিরুক।
  • এলেবেলে | ***:*** | ০৩ জুন ২০১৯ ১২:০২382598
  • ঈশান যেহেতু কেপিপি-কংগ্রেস কোয়ালিশনে সুভাষের দায় বা দায়িত্ব নিয়ে এখনও অবধি নতুন কিছু লেখেননি, তাই আপাতত ওই প্রসঙ্গ ছেড়ে দিয়ে পরের প্রসঙ্গে যাচ্ছি।

    আমার প্রশ্ন : ৪) র‍্যাডিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গী [সুভাষের] দক্ষিণপন্থী নেতৃত্বের জানা সত্ত্বেও তিনি ৩৮এ সভাপতি হলেন কেন?

    ঈশানের উত্তর : [কারণ ৩৮ সালে পরিস্থিতি ঘোরালো ছিল। সমাজতন্ত্রী ঘরানা ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছিল। জনসমর্থন পাচ্ছিল। এর আগের বছর সভাপতি ছিলেন জওহরলাল নেহরু। সেই সময়ের অবস্থানের ভিত্তিতে তিনি সুভাষের কয়েক ডিগ্রি বেশি বাঁয়ে ছিলেন। দেশ স্বাধীন হলে সব বড় শিল্প অধিগ্রহণ করে নেওয়া হবে বলে দাবী করেছিলেন। তাতে শিল্পমহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। অনেক পরে অবশ্য দেখা যায়, নেহরু এই র্যাবডিক্যালিজম পরিত্যাগ করে পথে এসেছেন। সেই মুউর্তে সুভাষকে বেছে নেবার দুটো কারণ ছিল বলে আন্দাজ করা যায়। ক। সুভাষের জনপ্রিয়তা কংগ্রেসের কাজে লাগবে এবং একই সঙ্গে সুভাষও নেহরুর মতো 'পথে' আসবেন। খ। সুভাষের নীতি বাঁ দিক ঘেঁষা হলেও নেহরুর মতো র্যািডিকাল ছিলনা। অতএব সুভাষ তুলনামূলকভাবে বেশি গ্রহণযোগ্য ছিলেন।]

    আমার ব্যাখ্যা : সুভাষ কতটা র‍্যাডিক্যাল, কতটা বামপন্থী, কতটা সুযোগসন্ধানী --- ফ্যাসিজমের প্রতি অত্যধিক আকৃষ্ট সুভাষ ইতালিতে যখন যান তখন তাঁকে ইতালি সরকারের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এমনকি স্বয়ং মুসোলিনির সঙ্গেও তাঁর আলাপ-আলোচনা হয়েছিল বেশ কয়েকবার। একই সঙ্গে তাঁর বলশেভিক বিরোধিতার নজিরও স্পষ্ট। ৪ এপ্রিল ১৯২৭ বর্মার জেল থেকে শরৎ বসুকে লেখা চিঠিতে সুভাষ জানান ‘যদি আমার বলশেভিক এজেন্ট হবার ইচ্ছে থাকত, তবে আমি সরকার বলা মাত্রই প্রথম জাহাজে ইউরোপ যাত্রা করতাম। সেখানে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের পর বলশেভিক দলে মিশে সমগ্র জগতে এক বিরাট বিদ্রোহ ঘোষণা করার উদ্দেশ্যে প্যারিস থেকে লেনিনগ্রাদ পর্যন্ত ছোটাছুটি করতাম, কিন্তু আমার সেরকম কোন ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা নেই’।

    সুভাষের গান্ধী-বিরোধিতার চলিত ভাষ্য --- ১৯৩৩ এর মে মাসে গান্ধী যখন আইন অমান্য স্থগিত রাখছেন সুভাষ তখন ভিয়েনায়। বিঠলভাই প্যাটেলও তখন স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য ভিয়েনায়। সেখান থেকে তাঁরা দুজনে মিলে ‘বসু-প্যাটেল ইস্তেহার’ নামক বিবৃতিতে গান্ধীর নেতৃত্বের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। এর পরে ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত 'ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল'-এর ছত্রে ছত্রে প্রকাশিত গান্ধীর প্রতি তাঁর চরম অনাস্থা। সুভাষ যে গান্ধীর নেতৃত্ব মানছেন না বরং নিজেকে 'বিকল্প' নেতা হিসাবে গ্রহণযোগ্য করতে চাইছেন তার সুপরিকল্পিত চাল আমরা পরবর্তীতে দেখতে পাব। এও দেখতে পাব নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য কীভাবে তাঁর বলশেভিক বিরোধিতা, নেহরু বিরোধিতা এবং গান্ধী বিরোধিতা - সবই স্রেফ হাওয়ায় উবে যাচ্ছে!
  • এলেবেলে | ***:*** | ০৩ জুন ২০১৯ ১২:২৯382599
  • সুভাষের 'বামপন্থী' ইমেজে তৈরি করা --- ১৯৩৪ সালের মে মাসে নরেন্দ্র দেবের সভাপতিত্বে পাটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে তৈরি হল কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি। ১৯৩৪ এই নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা জুটে গেলেন সোশ্যালিস্টদের সঙ্গে। সুভাষ বুঝতে পারলেন গান্ধীকে নেতৃত্ব থেকে হটাতে গেলে কংগ্রেসের মধ্যে থেকে কাজ করা এই মানুষগুলোর সমর্থন তাঁকে তাঁর ইচ্ছাপূরণের কাজে সহায়তা করতে পারে। তিনি রাতারাতি ভোলবদল করলেন। ইতোমধ্যে নিজেকে ‘সোশ্যালিস্ট’ হিসেবে পরিচিত করা জওহরলালের পালের হাওয়া কাড়তে ১৯৩৫ সালের ১৫ মার্চ ইউনাইটেড প্রেসের কাছে এক বিবৃতিতে সুভাষ ভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টির ‘অপ্রতিরোধ্য ভূমিকা গ্রহণ’-এর কথা বললেন।

    সুভাষের জওহরলালের 'বন্ধু' ইমেজ তৈরি করা --- ভিয়েনায় বসে সুভাষ জানতে পারলেন যে জওহরলালের পরবর্তী কংগ্রেস সভাপতির পদ পাকা। তখন নিজে থেকেই জওহরলালের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাই শুধু করলেন না, 'ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল'-এ লেখা জওহরলাল সম্পর্কিত সমস্ত বিরূপ মন্তব্য ভুলে গিয়ে তাঁকে ‘দাদার মতো’ সম্মান দিতে শুরু করলেন! এর মধ্যে সুভাষ ভিয়েনাতে ব্রিটিশ কনসালের চিঠি পেলেন, যে চিঠিতে দেশে ফিরলেই তাঁকে গ্রেফতারের কথা জানানো হল। জওহরলালকে সেই চিঠির একটা কপি পাঠিয়ে তাঁর নির্দেশের অপেক্ষা করতে লাগলেন। তিনি খুব ভালোভাবেই জানতেন জওহরলাল তাঁকে বারণ করতে পারবেন না, আবার যদি বারণ না শুনে সুভাষ দেশে ফেরা মাত্র গ্রেফতার হন তো তার দায়িত্ব চাপবে জওহরলাল-এর ওপরেই। সোজা কথায় উইন-উইন সিচ্যুয়েশন! দেশে ফেরার আগে আরও একটা কাজ করলেন তিনি। যে সুভাষ দু’বছর আগেও ভারতে সমাজতন্ত্র গ্রহণীয় হতে পারেন না বলেছিলেন, সেই একই সুভাষ রাতারাতি এক বিবৃতিতে নিজেকে ‘সমাজতন্ত্রী’ বলে পরিচয় দিয়ে ধনতন্ত্রকে প্রচণ্ড আক্রমণ করলেন। ১৯৩৬এর ৮ এপ্রিল বোম্বে পৌঁছনো মাত্র তিনি গ্রেফতার হলেন। অসুস্থতার কারণে সরকার তাঁকে কার্শিয়াং-এ শরৎ বসুর বাড়িতে গৃহবন্দী করল। এর মধ্যে প্রত্যাশা মতোই ডিসেম্বরের ফৈজাবাদ কংগ্রেসে জওহরলাল সভাপতি হলেন। ভিয়েনা থেকে এক ঢিলে তাঁর দু পাখি মারার কাজ সাঙ্গ হল। এবার ডালহৌসিতে বসে তিনি শুরু করলেন তাঁর তিন নম্বর তথা আসল পাখি মারার কাজ!

    এর মধ্যে ইতিহাসে 'ঘটল' কিছু পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ঘটনা। ১৯৩৪ এই গান্ধী কংগ্রেসের সদস্যপদ ছেড়েছেন, কিন্তু কংগ্রেস চলছে তাঁর অঙ্গুলিহেলনে। সমাজবাদীদের ঠেকাতে তিনি ১৯৩৬এ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে প্রথমে 'উপহার' দিলেন ‘সমাজবাদী’ জওহরলালকে। মার্চ ১৯৩৬এ সভাপতির ভাষণে জওহরলাল বামপন্থার তুবড়ি ছোটালেন, কাজে কী করলেন সবাই জানেন! ২০ এপ্রিল ঠাকুরদাসকে বিড়লা লিখলেন 'Mahatmaji kept his promise ... he saw that no new commitments were made. Jawaharlalji's speech in a way was thrown into the wastepaper basket ... Jawaharlalji seems to be like a typical English democrat ... out for giving expression to his ideology, but he realizes that action is impossible and so does not press for it ... things are moving in the right direction'. প্রত্যুত্তরে ঠাকুরদাস ২৩ এপ্রিল লিখলেন - 'I never had any doubt about the bonafides of J., only I feel that a good deal of nursing will have to be done to keep J. on the right rails all through.'

    এইবার গান্ধী মাঠে নামলেন জওহরলালকে ঠাকুদাস কথিত 'a good deal of nursing' শেখাতে যাতে জওহর চিরদিনের মতো 'on the right rails' থাকেন। গান্ধী-প্রদর্শিত পথে ১৯৩৬ সালের ২৯ জুন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সাত সদস্য - রাজেন্দ্রপ্রসাদ, রাজাগোপালাচারি, দৌলতরাম, যমুনালাল বাজাজ, প্যাটেল, কৃপালিনী এবং এস বি দেব পদত্যাগ করলেন। জওহরলাল দৌড়লেন গান্ধীর কাছে। গান্ধীর নিজের তৈরি করা সমস্যা খুব সহজেই মিটিয়ে দিলেন গান্ধী আর সমাজতন্ত্রের ‘ভূত’ জওহরলাল-এর মাথা থেকে চিরদিনের মতো বিদায় নিল।
  • এলেবেলে | ***:*** | ০৩ জুন ২০১৯ ১২:৪১382600
  • জওহরলালের 'অপারেশন' শেষ করে গান্ধী এবার নামলেন সুভাষ-বধ পালায়।

    সুভাষ তখন বাংলা কংগ্রেসের হাল ছেড়ে ডালহৌসিতে বসে তাঁর তৃতীয় পাখিটি মারার প্ল্যান ছকছেন। এই সময়ে সুভাষের মতিগতির খবর নিতে ডালহৌসিতে গান্ধী দূত হিসাবে পাঠালেন মিস শ্লেডকে। সুভাষ শ্লেডের কাছে ঝেড়ে কাশলেন না। বরং তাঁকে অনুরোধ করলেন গান্ধী যেন পরবর্তী এ আই সি সি র সভা কলকাতাতে করেন - সেই খবরটা তাঁকে পৌঁছে দিতে। সমাজবাদী-কমিউনিস্টদের ঠেকাতে গান্ধীর তখন সুভাষকে বাগে আনা প্রয়োজন। তাই গান্ধী রাজি হলেন। কলকাতাতেই ঠিক হল বৈঠক এবং গান্ধী-সুভাষ একান্তে কথা বললেন শরৎ বসুর বাড়িতে। সেখানে গান্ধী-সুভাষ 'রফা'-র কাজ সম্পূর্ণ হল। রফা কীভাবে হল তা দেখতে এবার পাতা উল্টানো দেখা যাক সুভাষের তৎকালীন পার্শ্বচর নরেন্দ্রনারায়ণ চক্রবর্তীর ‘নেতাজী:সঙ্গ ও প্রসঙ্গ’ প্রথম খণ্ডর।

    "১৮ই নভেম্বর নেতা [সুভাষ] চলে গেলেন ইউরোপে। যাবার আগের দিন রাত্র আবার এসেছিলেন। তখন আমি অনেকটা ভালো। সেইদিনই নেতার মুখে শুনলাম গান্ধীজির সঙ্গে ওর আলোচনার কথা।
    গান্ধীজি প্রথমে বলেন “বিপ্লবীদের সংস্রব তোমাকে ত্যাগ করতে হবে।” প্রত্যুত্তরে নেতা বলেছিলেন “না।”
    গান্ধী এটা আশা করেননি। বিস্ময় জেগেছিল ওঁর কণ্ঠে আর চোখেও। জিজ্ঞেস করেছিলেন “কেন?”
    “তাহলে সকলের আগে আপনার সংস্রব আমায় ছাড়তে হবে বলে”। উচ্চ হাসিতে ঘর ফেটে পড়বার উপক্রম হয়েছিল। হাসি স্তিমিত করে বলেছিলেন গান্ধী “আমি কি বিপ্লবী?”
    “সবচেয়ে বড় আর বিপজ্জনক”।
    “কিন্তু আমি তো হিংসায় বিশ্বাস করি নে”।
    “কেউই আর করে না”।

    এমনকি যে সুভাষ এতদিন মন্ত্রিসভায় যোগদানের বিষয়ে ঘোর বিরোধী ছিলেন সেই সুভাষ গান্ধীর সামনে ডিগবাজি খেয়ে বললেন, “মন্ত্রীত্ব যখন স্বীকার করা হয়েছেই, চেষ্টা করতে হবে যাতে বাকি প্রদেশগুলোতে কংগ্রেসী মন্ত্রীত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলায় হয়তো হবে না। কিন্তু আসামে? ওখানে তো কঠিন নয়। (তদেব)
  • এলেবেলে | ***:*** | ০৩ জুন ২০১৯ ২০:০৪382601
  • আজ ১২.০২এ করা আমার পোস্টে ঈশানের মন্তব্য কপি-পেস্ট করতে গিয়ে ভুলবশত 'র‍্যাডিক্যাল' শব্দটি সর্বত্র 'র্যািডিকাল' হয়ে গেছে। দুঃখিত।

    আমার দ্বিতীয় প্রশ্নের একটি অংশ ছিল : 'একই সঙ্গে তাঁর একটি র‍্যাডিক্যাল বাম ঘরানার আদর্শও ছিল’। কীসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে আসছেন? সুভাষ বামবিরোধিতার একাধিক নজির রেখেছেন যেখানে।

    ঈশানের উত্তর : [৩৮ এ সভাপতির ভাষণে সুভাষ সরাসরি লেনিনকে কোট করে বলেছিলেন, যে, ভারতের স্বাধীনতাযুদ্ধর যুদ্ধ আসলে বৃটেনেরও শ্রমিকশ্রেণীর মুক্তির লড়াই। তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীনতার দাবীতে একেবারেই আপোষহীন ছিলেন ( যে কারণে পরে জার্মানি যাত্রা ইত্যাদি)। জমিদারি তুলে দেবার কথাও ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু একই সঙ্গে, সেই বক্তৃতায়, এবং পরেও, কংগ্রেসকে কেবলমাত্র বামপন্থী আদর্শের অভিমুখে চালিত করতে চাননি। তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল, কংগ্রেস নানা মতবাদের একটি ছাতা। সেখানে সিএসপি থাকবে আবার ডানপন্থীরাও থাকবেন। এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে শিল্পপতিদেরও প্রয়োজন, যেমন প্রয়োজন শ্রমিককৃষকেরও। এই দুটোর মধ্যে যাইই হোক, বিষয়টা নীতিগতভাবে গান্ধির বেশি পছন্দ হবারই কথা। মানে নেহরুর নীতির তুলনায়। প্রাথমিকভাবে হয়েওছিল। কিন্তু গোল বাধে সম্পূর্ণ স্বরাজ এবং সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে। সুভাষ এই দুটো জায়গায় আপোষ করেননি। পন্থ প্রস্তাবে সুভাষ আপোষ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ স্বরাজের দাবীকে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। ফলে সুভাষ এবং নেহরুর অবস্থানের মধ্যে দুটো তফাতই তাঁদের কার্যপরম্পরার পার্থক্য গড়ে দেয়। ক। নেহরু প্রচন্ড কপিবুক বামপন্থী ছিলেন, কিন্তু সুভাষ তুলনায় কম র‍্যাডিকাল এবং যুক্তফ্রন্টপন্থী। খ। নেহরু অলিখিত আপোষ করতেন, যার সীমানা অনেকদূর যায় (মাথা মোড়াতেও কোনো অসুবিধে ছিলনা -- এইরকমও পড়তে পারেন)। সুভাষের আপোষ প্রকাশ্য এবং নির্দিষ্ট ইস্যুভিত্তিক ছিল। তার বাইরে তিনি এগোননি।]

    আমার ব্যাখ্যা : এর পূর্ববর্তী পর্যায়েই আমরা দেখেছি সুভাষ সভাপতি হওয়ার আগেই বাংলায় কংগ্রেসের মন্ত্রিসভা করতে ইচ্ছুক ('বাংলায় হয়তো হবে না' বললেও হওয়ানোর ইচ্ছে আছে ষোলো আনার ওপর আঠেরো আনা! এবং সেখানে 'সাম্প্রদায়িক' শক্তিকে রোখার কোনও গভীর প্রণোদনা নেই, বরং ক্ষমতা বিস্তারের আকাঙ্ক্ষাই প্রকট, ইচ্ছুক অসমেও (যা তিনি করেওছিলেন)।

    আমরা এ-ও দেখেছি নেহরু কতটা 'কপিবুক বামপন্থী' (!) এবং সেই বহু-চর্চিত 'কপিবুক বামপন্থা' কত সহজে নতি স্বীকার করতে পারে। দেশের সাধারণ মানুষ হয়তো বোঝেননি, কিন্তু গান্ধী-ঠাকুরদাস-বিড়লার এই সিংহ চর্মাবৃত গর্দভটিকে চিনতে বিন্দুমাত্র ভুল হয়নি। আমরা কীভাবে ফ্যাসিবাদে অনুরক্ত সুভাষ কোন পরিস্থিতিতে কেন রাতারাতি 'বামপন্থা'র মুখোশটি পরে নিলেন দেখেছি তা-ও। একই সাথে তাঁর গান্ধী-বিরোধিতাও যে উধাও হয়ে গেছে তা দেখতেও বোধ হয় ভুলিনি। এবার সভাপতির ভাষণ প্রসঙ্গ।

    এখন সুভাষের হরিপুরা ভাষণটি ওই নেহরুর ভাষণের মতোই তুবড়ি ছোটানোর মতো মনে হলেও, তা যে প্রকৃতপক্ষে শূন্যগর্ভ আস্ফালন ছাড়া আর কিছুই ছিল না (সে তিনি সরাসরি লেনিনকে কোট করুন বা না করুন) তা স্পষ্ট হবে হরিপুরা কংগ্রেসে গৃহীত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পাশের দিকে চোখ রাখলেই। হরিপুরা কংগ্রেসে প্রস্তাব পাশ হল - ১. কংগ্রেস 'হিংসায় বিশ্বাসী' রাজবন্দীদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করার বিরোধী। ২. কিষাণ সভার আন্দোলনকে খর্ব করতে সিদ্ধান্ত হল কংগ্রেসই হচ্ছে কৃষকদের প্রধান সংগঠন। তাই সমস্ত কৃষক সংগঠনের কাজ হবে স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসকে সাহায্য করা। ৩. দেশীয় রাজ্যগুলোতে কংগ্রেস কমিটিগুলো কংগ্রেসের নামে কোনও আন্দোলন চালাতে পারবে না। ৪. ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কে সভাপতির ভাষণে খোদ সুভাষ বললেন “... ইহাদের [বিরোধী চিন্তাধারার সংগঠন] উচিত কংগ্রেসী আদর্শ ও কর্মপদ্ধতির দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়া এবং কংগ্রেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় কাজ করা। ইহা সুনিশ্চিত করার জন্যে বহুসংখ্যক কংগ্রেস কর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন ও কৃষক সংগঠনগুলিতে অংশগ্রহণ করা উচিত”। মানে গোদা বাংলায় নিজেদের লোক শ্রমিক সংগঠনগুলোতে ঢুকিয়ে তা কব্জা করে নেওয়া! অস্যার্থ, কৃষক-শ্রমিক-দেশীয় রাজ্যে সীমাহীন শোষণ-রাজবন্দীদের মুক্তি সঅব এক ঝটকায় শেষ!!

    বাকি রইল দেশি শিল্পপতিদের স্বার্থরক্ষা। যিনি গদিতে বসেছেন গান্ধীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি তাঁদের স্বার্থরক্ষা করবেন না তা হয় নাকি? সুতরাং ১৯৩৭এ বেঙ্গল মিলে ধর্মঘট, পরের বছর মার্টিন বার্ন-এর কুলটি এবং হিরাপুরে ধর্মঘট, তার পরের বছর ডিগবয়ে ধর্মঘট নিয়ে তিনি নীরবতা বজায় রাখলেন। তাঁর নাকের ডগা দিয়ে দিব্যি পাশ হয়ে গেল বোম্বে ট্রেড ডিসপিউটস অ্যাক্ট। ষোলো কলা পূর্ণ হল!

    আপাতত আর লিখছি না।
  • সমুদ্র সেনগুপ্ত | ***:*** | ০৮ জুন ২০১৯ ২২:৪৩382602
  • Netaji trade union leader (1)

    ১৯০৬ সালের ১৫ই জানুয়ারি স্থাপিত হয় বাঙালি জমিদারদের দ্বারা তৈরি করা বঙ্গলক্ষী কটন মিলস। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের দেশাত্মবোধ এর জোয়ারে তৈরি হওয়া এই প্রতিষ্ঠান দেশ জুড়ে "স্বদেশী" ও বয়কট" আন্দোলনের স্রোতে ভাসতে ভাসতে কি ভাবে মুনাফার পাহাড় গড়লো দেখা যাক।

    সাল ও শেয়ার হোল্ডারদের ডিভিডেন্ড এর পরিমান: ১৯১৭ - ২%; ১৯১৮ - ১০%; ১৯১৯ - ২০%; ১৯২০ - ২৫% [সূত্র: ১]। তাই এটা কোনও আশ্চর্যের বিষয় নয় যে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক জমিদার ও নব্য শিল্পপতিরা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ভাবে স্বদেশী আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছিলেন যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল আন্দোলনকে আর্থিক সাহায্য দান [সূত্র: ২]

    বিশেষ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এর পরিভাষায় মুৎসুদ্দি পুঁজি ও সামন্তপ্রভু পরিবর্তিত হচ্ছিল "জাতীয়" পুঁজিপতিতে যারা সংগ্রামে অবতীর্ণ সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির বিরুদ্ধে।

    বঙ্গলক্ষীর দু বছর বাদে কুষ্টিয়া তে মোহন চক্রবর্তী নামের জমিদার ও অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এর উদ্যোগে তৈরি হয় মোহিনী কটন মিলস। ডিরেক্টারদের মধ্যে ছিলেন মুক্তাগাছার জমিদার জগৎ কিশোর আচার্য চৌধুরী ও কবি রবীন্দ্রনাথ [সূত্র: ৩]

    জুলাই, ১৯২৯ সালে সুভাষ চন্দ্র বোস এর সাথে এক আলাপচারিতার পরে ঘনস্যামদাস বিড়লা তার বন্ধু পুরুষোত্তম দাস ঠাকুরকে জানাচ্ছেন, "আমার মনে হয় যদি ঠিকমতভাবে সামলানো যায় তাহলে মিস্টার সুভাষ বোসের ওপর ভরসা রাখা যাবে যে উনি টাটা আয়রন এন্ড স্টিল ওয়ার্কস কে যথাযথভাবে সাহায্য করতে পারবেন" [সূত্র: ৪]

    টাটা আয়রন এন্ড স্টিল এর বীভৎস কাহিনী আরেকদিন বলা যাবে। আজ মোহিনী কটন মিলস এর গল্পে ফিরে আসা যাক।।বেশিরভাগ মজুর ছিলেন আশেপাশের গ্রাম বাংলা থেকে আসা গরিব হিন্দু ও মুসলিম। বেঙ্গল লেবার পার্টির উদ্যোগে ১৯৩৬ সালে তৈরি হয় টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন অফ কুষ্টিয়া।

    ১৯৩৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিল কর্তৃপক্ষ একটি শিফট বন্ধ করে দিলে প্রায় ১০০০ শ্রমিক ছাঁটাই হয়। এর ফলে শ্রমিক অসন্তোষের সূত্রপাত। বেঙ্গল প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির কার্যনির্বাহী সমিতি একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষ এর কাছে এই অসন্তোষ বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়। বিপিসিসি সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বোস ব্যক্তিগতভাবে খেদ প্রকাশ করেন যে সম্পুর্ন ভাবে ভারতীয় মালিকানাধীন, পরিচালিত একটি শিল্পে এমন অবস্থা চলতে পারে এবং উভয়পক্ষের কাছে আর্জি জানান দ্রুত অচলাবস্থা অবসানের। তিনি জনগণের কাছেও আবেদন জানান শ্রমিকদের পাশে থাকতে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে একটা সমঝোতা হয়। [সূত্রঃ ৫]

    আবার আগস্ট, ১৯৩৯ সালে মিল মালিক ও টেক্সটাইল ইউনিয়নের মধ্যে সংঘর্ষ হয় শিফট C বন্ধ করা নিয়ে। আগস্ট, সেপ্টেম্বর দু মাস চলার পরে আস্তে আস্তে স্ট্রাইক এর তীব্রতা কমে আসে। ৫ই অক্টোবর আবার কারখানা খুলে যায় কিন্ত দুটি শিফট এ।

    মিল ম্যানেজমেন্ট একটি লিখিত বিবৃতিতে খেদ প্রকাশ করে বলে যে যদিও সুভাষ বসু প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে বর্তমানে চালু কাজের সময় ১৮ ঘন্টা কে তিনটি ছয় ঘন্টার শিফটে ভাগ করে দিতে তবুও ভবিষ্যৎ শ্রমিক অসম্মতির কথা ভেবে কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারলেন না। [সূত্র: ৬]

    সুভাষ বসু নিজে এক লিখিত বিবৃতিতে শ্রমিকদের অনুরোধ জানান যে তারা যেন বর্তমান পরিস্থিতিতে এই "অবশ্যম্ভাবী" অবস্থান মেনে নেয়। C শিফট তুলে দেওয়ার ফলে যে শ্রমিকরা কাজ হারালেন তারা আর কোনোদিন কাজ ফিরে পেলেন না। [সূত্র: ৭]

    ১৯৩৯ সালের সরকারি গোপন রিপোর্ট বলছে "কংগ্রেস হাইকম্যান্ড যেখানে আর্থিক অনুকূল্যের জন্য বৃহৎ ভারতীয় শিল্পপতিদের ওপর নির্ভরশীল, বোস (সুভাষ চন্দ্র বসু) সেখানে মূলতঃ বাঙালি ব্যবসাদার, দিল্লি বেসড সামান্য অবাঙালি শিল্পপতিদের আর্থিক সাহায্য ও পূর্বাঞ্চলীয় বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীদের থেকে ভালো লেবার রিলেশনের বিনিময়ে পাওয়া "প্রটেকশন মানি" এর ওপর নির্ভরশীল" [সূত্র: ৮]

    কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসার পরে নিজের গঠিত ফরোয়ার্ড ব্লক এর জন্যও সুভাষ বোস মোহিনী কটন মিলস এর ধনভান্ডার এর আনুকূল্য চেয়েছেন বারেবারে। [সূত্র: ৯]। আন্দাজ করা শক্ত নয় যে ওপরে উল্লেখিত ধর্মঘটের সমাধানে তার ভূমিকা স্মরণ করে কৃতজ্ঞ মোহিনী কটন মিলস কখনোই সুভাষকে খালি হাতে ফেরায় নি।

    ভারতের রাজনীতি তার জন্মকাল থেকে জমিদার শিল্পপতিদের স্পন্সরশিপ পেয়ে এসেছে। জগমোহন ডালমিয়া বা ললিত মোদির ক্রিকেট জগতের স্পন্সরশিপ জোগাড় করার চিত্তাকর্ষক কাহিনীর থেকে সেটা কিছু কম নয়।

    দেশপ্রেম, ক্রিকেট ও বলিউড - আমাদের অস্মিতার এই হোলি ত্রিনিটির কারিগর এই স্পনসরদের আসুন একবার কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করি।

    ১:অমিত ভট্টাচার্য: স্বদেশী এন্টারপ্রাইজ ইন বেঙ্গল পৃষ্টা ৩৮
    ২: চিত্তব্রত পালিত: গ্রোথ অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ইন বেঙ্গল, পৃষ্টা ৫০-৫১
    ৩: অমিত ভট্টাচার্য, প্রাগুক্ত পৃষ্টা ৪২
    ৪: ঠাকুরদাস পেপার্স ফাইল নং ৪২
    ৫: রত্না ঘোষ: নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস এন্ড ইন্ডিয়ান ফ্রিডম স্ট্রাগল পৃষ্টা ১৯৬ (দি এডভান্স)
    ৬: প্রাগুক্ত (আনন্দবাজার পত্রিকা ২২.১১.৩৯)
    ৭: প্রাগুক্ত: পৃষ্টা ১৯৭
    ৮: টমলিসন: দি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস এন্ড রাজ (স্যার জন ইয়ার্ট: রিভিউ অফ কংগ্রেস ফিনান্সিয়াল রিসোর্স)
    ৯: গৌর অধিকারী: নেতাজি
  • Ishan | ***:*** | ০৯ জুন ২০১৯ ০৬:৪০382604
  • প্রথমে একটি অপ্রাসঙ্গিক কিন্তু জরুরি কথা।

    ১৯৩৯ এর গোয়েন্দা দপ্তরের এই রিপোর্টের রেফারেন্সটি সর্বত্র পাই, কিন্তু আসল ডকুমেন্টটা হাতে পেলাম না। টমলিনসনেও নেই। সমুদ্রবাবু খোঁজ পেলে একটু জানাবেন।

    এবার কাজের কথা।

    সমুদ্রবাবু যে কটি তথ্য দিয়েছেন, প্রতিটি ঠিক। কিন্তু যে সিদ্ধান্তে এসেছেন সেটি সমস্যাজনক। প্রথমে যেখান থেকে সমুদ্রবাবু সুভাষের ফিনান্সের বিষয়টি তুলেছেন তার পুরোটা কোট করি।

    "Even Bose’s financial resources were independent of those of the ‘Gandhians’. The main sources of funds open to the ‘right-wing’ leaders were donations from Indian businessmen negotiated by Patel, Desai, Bajaj and G. D. Birla. There was also the capital and interest on Mrtain special appeal funds and the loans that could be raised on them. Nehru had no independent resources; he was completely dependent on the ‘Gandhians’ for money. Bose’s sources of income were smaller, but they were genuinely his own. He could rely on payments for favours shown to Bengali businessmen by the Bengal P.C.C. and the Calcutta. The Indian National Congress and the Raj Corporation (as long as he controlled these bodies) and on ‘protection money’ from large industrial magnates in Bengal, Bihar, Assam and Orissa, given in return for good labour relations. He also had support from a group of non-Bengali businessmen, headed by the Delhi mill- owner Shankar Lai, and could use the funds of the Tropical Insurance Company (of which he and his brothers were directors and Shankar Lai Managing Director) to stabilise his finances. From these sources Bose managed to raise Rs 50,000 simply for the expenses of his dele- gates and canvassers at Tripuri."

    এখানে গান্ধি-প্যাটেলের পক্ষের চারজন মধ্যস্থতাকারীর নাম করা হয়েছে। প্যাটেল নিজে, বিড়লা, দেশাই এবং বাজাজ। এই তালিকায় ১৯৩৯ সালেও টাটা পুরোপুরি ঢোকেননি, কিন্তু কিছু পরেই ঢুকে পড়বেন। তাই আমি টাটাকেও ধরলাম।

    উল্টো দিকে সুভাষের বাংলার ব্যবসায়ী। কিছু অবাঙালি ব্যবসায়ী এবং বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের কিছু বিজনেস ম্যাগনেট'। এই একই জিনিস নিয়ে লিখতে গিয়ে মিহির বোস 'ছোটো ব্যবসায়ী' বা ছোঁটো পু`জি শব্দটি উলেখ করেছেন। উপরেই লিখেছি আসল ডকুমেন্টটি আমি দেখিনি, শুধুই রেফারেন্স, তাই আসল জায়গায় ইন্টারপ্রিটেশনহীন ভাবে কী লেখা ছিল জানতে পারলে ভালো হত। সুভাষ পক্ষের 'বিজনেস ম্যাগনেট'দের নাম জানতে পারলেও। কারণ বাংলায় তখন সর্বোচ্চ স্তরের ম্যাগনেট তিনজন। বিড়লা, গোয়েঙ্কা, এবং নলিনীরঞ্জন সরকার। এঁরা কেউই সুভাষ পক্ষে ছিলেন না।

    তা যাই হোক, নাম যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, গান্ধিপক্ষে বিড়লা, বাজাজ এবং পরবর্তীতে টাটা। সুভাষ পক্ষে শঙ্কর লাল, ট্রপিকাল ইনসিউরেন্স কোম্পানি এবং কিছু স্থানীয় বিজনেস ম্যাগনেট, যাঁদের স্বার্থ সুভাষ রক্ষা করেছিলেন। এই দুটো নামের তালিকাই যদি আলাদা করে দেখা যায়, তাহলেই শ্রেণীগত চরিত্রের পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। সে সময় ব্রিটিশ শাসিত ভারতের বৃহৎ শিল্পপতিদের দুটি গোষ্ঠী ছিল। একটি বোম্বে গোষ্ঠী, যার মাথায় ছিলেন টাটা, যারা ব্রিটিহ অনুগত। অন্যটির মাথায় ছিলেন বিড়লা, যাঁরা নানা কারণে ব্রিটিহ আনুকূল্য সেভাবে পাননি। এই দুটি বৃহৎ এবং পরবর্তীতে একচেটিয়া হয়ে ওঠা গোষ্টী ছিল গান্ধি-প্যাটেলের দিকে। উল্টোদিকে যাদের নাম পাবেন, যেমন শঙ্কর লাল, তাঁরা স্থানীয় স্তরে ম্যাগনেট হতেই পারেন ( বা নাও পারেন), কিন্তু তুলনামূলক বিচারে চুনোপুঁটি।

    ফলে সুভাষ নিঃসন্দেহে পুঁজিপতিদের সাহায্য নিয়েছিলেন, একথা যেমন ঠিক, কিন্তু টাটা-বিড়লার একচেটিয়া পুঁজির প্রতিনিধিত্ব করা থেকে বহু দূরে ছিলেন। মার্কসীয় নামকরণ যদি ধার করা যায়। গান্ধি ছিলেন একচেটিয়া পুঁজির আনুকূল্য ধন্য, সুভাষ ছোটো পুঁজির। বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এই পার্থক্যটি উড়িয়ে দিয়ে মুড়ি মিছরি এক দর করে দেওয়া খুবই সমস্যাজনক ব্যাপার। এতে বাস্তবতাটি উল্টে যায়।
  • Ishan | ***:*** | ০৯ জুন ২০১৯ ০৮:২৭382605
  • এ তো গেল অর্থনীতি। রাজনীতির ক্ষেত্রে এর প্রভাব কেমন ছিল? সামগ্রিকভাবে রাজনীতিটিই বা কেমন ছিল? এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই সুভাষ-গান্ধি দ্বন্দ্ব মতাদর্শগতভাবে কংগ্রেস নির্বাচনে বাম-ডান দ্বন্দ্ব হিসেবেই প্রকাশিত হয়েছিল। মেরুকরণ হয়েছিল বাম-ডানের। এর অজস্র সাক্ষ্য আছে। আপাত টমলিনসনের বইটিই খোলা আছে, সেখান থেকেই কোট করিঃ "All over India the delegate elections and the Presidential election was fought out in ideological terms - 'righ'’ versus 'left', 'pro-Federation' versus 'anti-Federation', 'pro-Ministry' versus 'anti-Ministry'. By the time of the Presidential election on January 29th, almost every national, provincial and local Congress leader had taken a public stand one way or the other; the only prominent Congressmen who had not declared his interest was Jawaharlal Nehru."

    কাজেই রাজনৈতিক মেরুকরণটি নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশই নেই। যেটুকু প্রশ্ন থাকতে পারে, এই "বাম" বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে, সুভাষ যার মুখ হয়ে উঠেছিলেন? ছোটো হোক, বড় হোক, পুঁজিপতিদের আনুকূল্য নিয়ে ঠিক কী ধরণের "বামপন্থা"র চর্চা হচ্ছিল? বস্তুত এই ব্যাপারে সুভাষ কিছু গোপন রেখেছিলেন এমন না। সভাপতির ভাষণে একদিকে যেমন তিনি লেনিন কোট করেছিলেন, অন্যদিকে খুব স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, যে, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামই এই মুহূর্তের প্রধান কাজ। তখন বলা হল সম্পূর্ণ স্বরাজ। এবং এটা শুধু শ্রমিক কৃষক বা বামপন্থীদের কাজ নয়। পুঁজিপতিদেরও এতে অংশগ্রহণ করার দরকার আছে। এবং সেই কারণেই কংগ্রেসে বাম ও ডান দুই গোষ্ঠীরই থাকার প্রয়োজন আছে। অর্থাৎ তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে 'জাতীয় স্বার্থে' ডান-বাম, শ্রমিক-কৃষক-পুঁজিপতিদের যুক্তফ্রন্ট চেয়েছিলেন। বামপন্থী এমনকি কমিউনিস্টদের পক্ষেও এই অবস্থান খুব ব্যতিক্রমী কিছু না। এর এক দশকের মধ্যেই মাও-সে-তুং খুব কাছাকাছি লাইন নিয়েই চিনে নয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটান। তার বিশদে আর গেলামনা।

    এর উল্টোদিকে কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থীদের লাইন কী ছিল? বৃহৎ একচেটিয়া পুঁজিপতিদের লাইন অনুসারী। ব্রিটিশ ভারতবর্ষে টাটা দীর্ঘদিন পর্যন্ত সরাসরি ব্রিটিশ অনুগামী ছিলেন। কংগ্রেস ক্ষমতার কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা দেখা দেবার পরে তবেই তিনি চেম্বার অফ কমার্সে যোগ দেন এবং ক্রমে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেন। টাটা চিরকালই ব্রিটিশ আনুকূল্যও পেয়ে এসেছেন। উল্টোদিকে বিড়লা, যা দেখা যায়, কংগ্রেসকে দেখতেন ব্রিটিশের সঙ্গে দর-কষাকষির অস্ত্র হিসেবে। এঁরা কেউই সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে আগ্রহী ছিলেননা। ৩৮-৩৯ এ কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থীদের লাইনও তাইই ছিল। যে মূল লাইনটি নিয়ে বাম ও ডানদের ভাগাভাগি হয়ে যায়, তা হল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা।

    অর্থাৎ, সেই সময়ে সুভাষের বামপন্থার মূল অ্যাজেন্ডা ছিল সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা। এই প্রশ্নে তিনি ছোটো পুঁজিপতিদের সঙ্গে কিছু আপোষ করেছিলেন তো বটেই। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে যুদ্ধে অনাগ্রহী একচেটিয়া পুঁজি এবং তৎসংলগ্ন কংগ্রেসি দক্ষিণপন্থার সঙ্গে এই লাইনের তীব্র বিরোধিতা ছিল। দুটো এক তো একেবারেই নয়। বরং একেবারেই আলাদা।
  • এলেবেলে | ***:*** | ০৯ জুন ২০১৯ ১০:১৩382606
  • বাঃ, সুভাষের ফান্ডিং প্রসঙ্গটা এসে গেল না চাইতেই।

    কিন্তু ঈশান, ইহা ভালো হইতেছে না! কেবলমাত্র নামজাদা লোকেরা লিখিলেই আপুনি অত্র পদধূলি দিতেছেন, এলেবেলে লিখিলে নহে!! বিষয়টি কিঞ্চিৎ ভাবিয়া দেখিবেন!!!
  • সমুদ্র সেনগুপ্ত | ***:*** | ১০ জুন ২০১৯ ২৩:০৮382607
  • Netaji: Head of Azad Sarkar

    ◆পটভূমি◆
    প্রথম বিশ্ব মহাযুদ্ধের সময় বার্লিন কমিটি, জার্মান ও টার্কিশ প্রতিনিধি নিয়ে "কাবুল মিশন" তৈরি কটন কিছু ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী। এর নেতৃত্বে ছিলেন প্রখ্যাত মার্ক্সিস্ট বিপ্লবী রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ। নভেম্বর বিপ্লবে অনুপ্রাণিত হয়ে ইনি রাশিয়া তে গিয়ে ট্রটস্কি এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। ডিসেম্বর ১,১৯১৫ সালে কাবুল এ অস্থায়ী ভারত সরকার বা The Provisional Government of India স্থাপিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আফগানিস্তান, রাশিয়া, চীন ও জাপানের সমর্থন আদায় করা।

    এই সরকার এর সদস্যরা ছিলেন: মহেন্দ্রপ্রতাপ (রাষ্ট্রপতি); মৌলানা বরকতউল্লাহ (প্রধানমন্ত্রী); দেওবন্দী মৌলবী উবায়দুল্লাহ সিন্ধি (গৃহমন্ত্রী); মৌলবী বশির (সমর মন্ত্রী); চম্পকরাম পিল্লাই (বিদেশমন্ত্রী) ইত্যাদি।

    ১৯১৯ সালে আফগান আমির ব্রিটিশ সরকারের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেন ফলে সরকার আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য হয়।

    এর পরে ১৯৪২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর, সতীশ সামন্ত এর নেতৃত্বে এই বাংলার মাটিতে তৈরি হয় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার।

    এর অনেক পরে অক্টোবর ২১, ১৯৪৩ সালে "মুক্ত ভারতের অস্থায়ী সরকার" বা "Provisional Government of Free India" বা "আর্জি হুকুমতে আজাদ হিন্দ"সরকার গঠিত হয়। এই সরকারকেই কেউ কেউ ভারতের প্রথম স্বাধীন সরকার বলতে চাইছেন।

    রোমে জাপান, ইতালি ও সুভাষ বোসের এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে এই "স্বাধীন" সরকার গঠন এর আইডিয়াটা প্রথম তোলেন বিখ্যাত ফ্যাসিস্ট মুসোলিনি। তার ভাষায় "প্রতি-সরকার" বা কাউন্টার গভর্নমেন্ট। টেলিগ্রাম করে জানানোর পরে এই আইডিয়াটা আরেক বিখ্যাত ফ্যাসিস্ট গোয়েবলস এর বিশেষ পছন্দ হয় নি।

    ওনার ভাষায় "We don't like this idea very much, since we do not think the time has yet come for such a political manoeuvre. It does appear though that the Japanese are very eager for some such step. However, emigre governments must not live too long in a vacuum. Unless they have some actuality to support them, they only exist in the realm of theory"

    গোয়েবলস এর ডায়েরির এই লাইনগুলি থেকে স্পষ্ট যে জাপান খুব উৎসাহী ছিল। [সূত্রঃ ১]

    এই আজাদ হিন্দ সরকার নাকি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী প্রকৃত সরকার। তার মূল কারণ দুটি। প্রথমত: আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিলাভ। জাপান, জার্মান, ইতালি, ফিলিপিন্স, বার্মা ও ক্রোয়েশিয়া এই কটি দেশ স্বীকৃতি দিয়ে ছিল। নামগুলো লক্ষ্য করার মতো।

    দ্বিতীয়তঃ স্বাধীন সরকার গঠনের অন্যতম শর্ত হল স্বাধীন ভূখণ্ড। সেটাও জুটে গেছিল। শহীদ ও স্বরাজ দ্বীপ। পতাকা, ডাকটিকিট ছাপা, নোট ছাপা - এসব তো পকেটে পয়সা থাকলেই হয়।

    ◆"স্বাধীন" ভুখন্ড জোগাড় এর ইতিহাস◆
    ফেব্রুয়ারি ১৯৪২ সালে মালয় ও সিঙ্গাপুরে ব্রিটিশ বাহিনী জাপানের হাতে অসম্মানজনক ভাবে পরাজিত হয়। জাপানি ইমপিরিয়াল ফোর্সের হাতে দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ২৭,০০০ অধিবাসীকে ফেলে রেখে ব্রিটিশরা মূল ভূখণ্ডে পালায়। জাপান বাহিনী ২৩শে মার্চ, ১৯৪২ সালে পোর্ট ব্লেয়ার দখল করে। [সূত্রঃ ২]

    ২৬ শে মার্চ , ১৯৪২ পোর্ট ব্লেয়ারের পতন হয়। তখন ভারতীয়দের বলা হয় রাসবিহারী বসুর ইন্ডিপেনেডেন্স লীগে জয়েন করে বৃটিশ বিরোধি মিলিশিয়া ও পিস কমিটি তৈরী করতে। এই পিস কমিটিতে ছিলেন মূলতঃ স্থানীয় বুদ্ধিজীবীরা (ডাক্তার, অফিসিয়াল ইত্যাদি)। ডঃ দিওয়ান সিং এর নেতা ছিলেন। পরবর্তী কয়েকমাস এরা স্থানীয় মানুষজনের দুর্দশা কমানোর জন্য জাপানিদের সাথে যথা সম্ভব সহযোগিতা করে। [সূত্রঃ ৩]

    কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি। অক্টোবর ১৯৪২ এ নিকবরীদের দিয়ে ফোর্সড লেবার হিসেবে লাম্বা লাইনে রানওয়ে তৈরি করানো হয় সেই কুখ্যাত "ডেথ রেলওয়ের অনুকরণে। যে রানওয়েতে কিছুদিন বাদে নেতাজির প্লেন অবতরণ করবে যাতে তিনি ভারতের "স্বাধীন" অংশ সার্ভে করতে পারেন। [সূত্রঃ ৪]

    তারপরে "স্পাই" বদনাম দিয়ে মাস এরেস্ট করে সেলুলার জেলে ঢোকানো হয় প্রায় তিনশ মানুষ কে। সঙ্গে অত্যাচার ফ্রি। এদের ৭ জন কে গুলি করে মারা হয় যাদের মধ্যে ছিলেন নারায়ণ রাও, সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ, ইট্টার সিং, ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট, সুবেদার সুবে সিং, মিলিটারি পুলিশ এবং ডাঃ সুরেন্দ্র নাগ।

    আদতে এই মিলিশিয়াকে জোর করা হয়েছিল, স্থানীয় মেয়েদের জাপানী সেনাদের জন্য কম্ফোর্ট গার্ল হিসাবে তুলে দিতে। আর মিলিটারির জন্য স্থানীয়দের শ্রমদান বাধ্যতা মূলক করতে। ফলে লীগের কিছু মেম্বার বিদ্রোহ করে এবং তাদের জাপানী সেনারা মেরে ফেলে। তাদের মধ্যে ইন্ডিপেন্ডেন্সে লীগের নেতা ড: দিওয়ান সিং ও ছিলেন। যাকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মেরেছিল জাপানী সেনারা। কারন তিনি স্থানীয় মেয়েদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন। [সূত্রঃ ৫]

    ◆সরকার গঠন◆
    ২১শে অক্টোবর, ১৯৪৩ সালে অস্থায়ী সরকার (The Provisional Government of Free India) গঠিত হয়। আরেকটি নাম আর্জি হুকুমতে হিন্দ। নেতাজি এই সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, সমরমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী ঘোষিত হন। বিখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন (পরে কর্নেল) ডাঃ লক্ষী স্বামীনাথন মহিলা দপ্তর বিষয়ক মন্ত্রী হন।

    মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যরা হলেন: শ্রী এস এ আইয়ার (তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক); লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরে মেজর জেনারেল এ সি চ্যাটার্জি (বিত্ত মন্ত্রক)। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে :লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরে মেজর জেনারেল) আজিজ আহমেদ; লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরে কর্নেল) এন সি ভগত; লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরে মেজর জেনারেল ও চিফ অফ জেনারেল স্টাফ) জে কে ভোঁসলে; লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরে কর্নেল গুইজরা সিং; লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরে মেজর জেনারেল) এম জেড কিয়ানী; লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরে কর্নেল) এহসান কাদির; লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরে মেজর জেনারেল শাহনওয়াজ খান; ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পরে মেজর জেনারেল) লগানাথন।

    শ্রী এ এন সহায় মন্ত্রী পদমর্যাদার সচিব। সর্বশ্রী করিম গনি, দেবনাথ দাস, ডি এম খান, এ ইয়েলাপ্পা, জে থিবী এবং সর্দার ইসার সিং উপদেষ্টামণ্ডলী তে এবং শ্রী এ এন সরকার আইনি পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত হন। [সূত্রঃ ৬]

    প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে নেতাজিকে ক্রমাগত জেনারেল তোজোকে খোঁচাতে হত যাতে জাপানের হাতে পতন হওয়া আন্দামান ও নিকোবরে নেতাজির প্রশাসন চালু হয় এবং পরবর্তীতে প্রশাসনের অন্তত কিছু অংশ যাতে "ভারতীয়" তত্ত্বাবধানে থাকে।

    যখন সেই "স্বাধীনতা" লাভ হল তখন তার সাথে সিরিয়াস ক্যাভিয়েট ছিল। নেতাজি নিজে জাপানি প্রশাসনের প্রধান এডমিরাল ইসিকাওয়ার সাথে টেবিলের উল্টোদিকে বসে রচনা করেছিলেন জাপানি স্বার্থ কে মাথায় রেখে, বলা যায় করতে বাধ্য হয়েছিলেন। "শহীদ" ও "স্বরাজ" দ্বীপে আজাদ ভারত সরকার চলছে এই ঘটনাটির সামরিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও মনোবৈজ্ঞানিক অভিঘাত সম্পর্কে নেতাজির চেয়ে ভালো কেউ জানতেন না। [সূত্রঃ ৭]

    ৫ই নভেম্বর, ১৯৪৩ সালে নেতাজি জাপানের পার্লামেন্ট "ডায়েট"কে সম্বোধিত করেন। তার বক্তব্যের শেষে জাপানি প্রধানমন্ত্রী হিদেকি তোজো ঘোষণা করেন যে জাপান ওই দ্বীপ দুটি অস্থায়ী সরকার কে হস্তান্তর করবে।

    ২৬শে নভেম্বর, ১৯৪৩ সালে সিঙ্গাপুরে নেতাজি গণমাধ্যমের কাছে ঘোষণা করেন যে অস্থায়ী সরকার আন্দামান কে "শহীদ" ও নিকোবর কে "স্বরাজ" দ্বীপ নামে নামাঙ্কিত করছে। এইভাবে অস্থায়ী সরকার প্রথমবার তার নিজস্ব ভূখণ্ডের অধিকারী হয়।

    ২৯শে ডিসেম্বর, ১৯৪৩ সালে নেতাজি আন্দামানে আসেন। ৩০ তারিখে ত্রিবর্ন পতাকা উত্তোলন করেন ও সেলুলার জেল পরিদর্শন করেন। [সূত্রঃ ৮]

    কেমন স্বাধীন ভুখন্ড:-
    তার সাধের স্বরাজ ও শহীদ দ্বীপে নেতাজি আর পা দেন নি কোনো দিন। সেই প্রথম। সেই শেষ। সেলুলার জেলে বন্দী ভারতীয় দেশপ্রেমিক দের দুর্দশার কথা স্হানীয় জনগণ তাকে জানানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন, কারণ জাপানিরা তার কাছে ওদের ঘেঁষতে দেয় নি। নেতাজিও বাড়তি উদ্যোগ নেন নি। ব্যস্ত মানুষ ছিলেন। [সূত্রঃ ৯]

    ৬ই জানুয়ারি, ১৯৪৪ সালে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেব নেতাজি মেজর জেনারেল (তখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল) লগানাথন কে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের গভর্নর (চিফ কমিশনার) পদে নিযুক্ত করেন। [সূত্রঃ ১০]

    ২২শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৪ তিনি আরো চার জন আইএনএ অফিসার অর্থাৎ মেজর মনসুর আলি আলভি, সুবেদার লেফটেন্যান্ট মহম্মদ ইকবাল, লেফটেন্যান্ট সুবা সিং এবং স্টেনো শ্রীনিবাসন কে সঙ্গে নিয়ে পোর্ট ব্লেয়ারের লামবালাইন এয়ারপোর্ট এ নামেন। ২১শে মার্চ, ১৯৪৪ তারিখে এবার্ডিন বাজারের গুরুদ্বার এর কাছে সিভিল এডমিনিষ্ট্রেশনের হেড কোয়ার্টার স্থাপিত হয়। [সূত্রঃ ১১]

    তার ১৫ই মার্চ, ১৯৪৪ সালে নেতাজিকে পাঠানো প্রতিবেদনে জেনারেল লগানাথন ২১শে ফেব্রুয়ারি অস্থায়ী সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার কথা জানান এবং তার পরের শনিবার বার্মার আরাকান সেক্টরে বিজয় উপলক্ষ্যে মিছিলের কথাও জানান।

    একই প্রতিবেদনে তিনি বিভিন্ন সরবরাহ যেমন ওষুধপত্র, কাগজপত্র, কাটলারির সরবরাহের ঘাটতির কথা জানান। "সবরকমের খাবারদাবারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জনগণের জন্য সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ডিসেন্ত্রী এপিডেমিকের মোকাবিলা করার ওষুধেরও প্রয়োজন।"

    ২১শে জুন, ১৯৪৪ সালে নেতাজি লগানাথন কে লেখেন, " আমি তোমার সাথে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সহমত যে পুলিশ পাওয়ার ছাড়া তুমি অধিবাসী জনগণের চোখে কোনো মর্যাদা পাবে না। তুমি কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারো যে প্রশাসনের হস্তান্তর প্রক্রিয়ার প্রোগ্রেস নিয়ে আমি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট।"[সূত্রঃ ১২]

    আন্দামান নিকবরের "স্বাধীন" সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি অনুধাবন করতে গেলে কেবল নেতাজি নয়, মেজর জেনারেল আর্কট দোরাইস্বামী লগানাথন চরিত্রটিকে একটু জানা দরকার।

    তার সহকর্মীর ভাষায়, "এই লাইনগুলি লিখতে বসে আমার মনে পড়ছে তার দীর্ঘ অনুপ্রেরণা জাগানো ব্যক্তিত্বের কথা, সাহসে ভরপুর, আত্মত্যাগে টগবগে, রসিক, বুদ্ধিমান, ডিউটি থেকে কখনও পিছু না হটা। এই মহান মানুষটি তার ভগ্নস্বাস্থ্য (ক্রনিক আলসারের রুগী) স্বত্বেও সবচেয়ে কঠিন দ্বায়িত্ব, আন্দামান নিকোবর এর গভর্নর এর ভার গ্রহণ করেছিলেন।

    সহকর্মী আরো লিখছেন, "ভগ্নস্বাস্থ্য ও জাপানি ফোর্সের অসহযোগিতার জন্য তার কাজ কঠিন থেকে কঠিনতর হওয়া সত্ত্বেও তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। এর পরে তিনি নেতাজির রেঙ্গুন থেকে প্রস্থানের পর বার্মা কম্যান্ডের জি ও সি হিসেবে কাজ করেন।" [সূত্রঃ ১৩]

    যুদ্ধের পর লগানাথন কবুল করে যে তাকে জাপানিরা কেবল মাত্র "শিক্ষা দপ্তর"টি স্বাধীন ভাবে চালাতে দিয়ে ছিল। পুলিশ সহ বাকি সব কিছুই জাপ নিয়ন্ত্রণ এ ছিল।

    এই "স্বাধীন" সরকারের শাসনকালেই ঘটে Homfreyganj গণহত্যা। ৩০ সে জানুয়ারি, ১৯৪৪ সালে ৪৪ জন অসামরিক মানুষ কে গুপ্তচর সন্দেহে জাপরা গুলি করে মারে। এদের অনেকেই ছিলেন ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেস লীগ এর সদস্য। [সূত্রঃ ১৪]

    ২রা অক্টোবর, ১৯৪৪ সালে কর্নেল লগানাথন ভগ্ন হৃদয় ও ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে মেজর আলভীকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে পোর্ট ব্লেয়ার ছাড়েন আর কোনোদিন ফিরে আসেন নি।

    ৭ই অক্টোবর, ১৯৪৫ সালে জাপ ভাইস এডমিরাল হারা তেইজো এবং মেজর জেনারেল তামেনোরি সাতো ব্রিটিশ ও ভারতীয় সেনার ১১৬তম ইন্ডিয়ান ইনফ্যান্ত্রী ব্রিগেড এর কাছে পোর্ট ব্লেয়ার এ আত্মসমর্পণ করেন ও দ্বীপের "স্বাধীন" সরকারের পতন ঘটে। [সূত্রঃ ১৫]

    এই সরকার এর রাজত্বকালে জাপ দখলদারির ফলে মোটামুটি ২০০০ নাগরিক মারা যায়, শ পাঁচেক এর ওপর অত্যাচারিত হন। [সূত্রঃ ১৬]

    তথ্যের আলোতে বিচার করতেই হবে দেশের প্রথম স্বাধীন সরকার কতটা স্বাধীন ছিল এবং অক্ষশক্তি যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করতো তাহলে ভারত কতটা স্বাধীন থাকতে পারতো।

    তথ্যসূত্রঃ
    ০১: রোমেন হেইজ: বোস ইন নাৎসি জার্মানি
    ০২: সি. শ্রীনিবাসন, অর্গানাইজার, ৩১শে ডিসেম্বর, ২০১৮
    ০৩: আর ভি আর মুর্থি: আন্দামান এন্ড নিকোবার আইল্যান্ডস: এ সাগা অফ ফ্রিডম স্ট্রাগল পৃষ্টা ১৫৩
    ০৪: শ্রীনিবাসন, প্রাগুক্ত;
    ০৫: মুর্থি, প্রাগুক্ত, পৃষ্টা ১৫৪
    ০৬: কর্নেল গুরবক্স সিং ধিলন, দি লাস্ট স্ট্র দ্যাট ব্রোক দা ব্যাক অফ ব্রিটিশ এম্পায়ার, ১লা জানুয়ারি, ১৯৭১;
    ০৭: ভি সুদর্শন, দ্যা হিন্দু, ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫
    ০৮: শ্রীনিবাসন, প্রাগুক্ত;
    ০৯: মুর্থি, প্রাগুক্ত, পৃষ্টা ১৫৫
    ১০: শ্রীনিবাসন, প্রাগুক্ত;
    ১১: সরকারি ওয়েবসাইট;
    ১২: শ্রীনিবাসন, প্রাগুক্ত;
    ১৩: গুরুবক্স সিং ধিলন, প্রাগুক্ত;
    ১৪: মুর্থি, প্রাগুক্ত, পৃষ্টা ১১৫
    ১৫: সরকারি ওয়েবসাইট;
    ১৬: মুর্থি, প্রাগুক্ত
  • এলেবেলে | ***:*** | ১০ জুন ২০১৯ ২৩:৫৮382608
  • সমুদ্র সেনগুপ্ত ধন্যবাদ। খুবই সুলিখিত তথ্যপূর্ণ লেখা যা নেতাজি সম্পর্কে বাঙালি তথা ভারতবাসীকে নির্মোহ মূল্যায়নে উৎসাহী করবে। এইবার আপনি যদি নেতাজি বা সুভাষ ও ভারতের বড় পুঁজিপতিদের সম্পর্ক নিয়ে কিছু লেখেন তবে তাঁর শ্রমিকবিরোধী মনোভাবটা স্পষ্ট হবে বলে আমার ধারণা। সাথে সাথে তিনি যে কত বড় 'বামপন্থী' ছিলেন সেই বেলুনটাও চুপসে দেওয়া প্রয়োজন।
  • | ***:*** | ২৯ জুলাই ২০১৯ ১৮:০৬382609
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন