এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কাতাকুতু | ***:*** | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৩২380806
  • মাধ্যমিক পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ। অমলেন্দু স্যার সবাইকে কি ভাবে ফর্ম ফিলাপ করতে হবে সেটা বলার পরে আমরা সবাই ফর্ম ফিলাপ করবো। স্যার বল্লেন প্রথম লাইনে সবাই নিজের নাম লেখো। ফর্ম ফিলাপটা একটা পরীক্ষার মতই আমার কাছে। আমি সোমনাথ কে গুঁতো মেরে বলি," দেখা না কি লিখলি"! সোমনাথ রেগে যায়। বলে, নিজের নামটা লিখবি সেটাও নিজে লিখতে পারছিসনা। সেটাও দেখাতে হবে!

    স্যার এবার সব বেঞ্চে গিয়ে দেখে নিলেন সবাই নিজের নামটা সঠিক ভাবে লিখেছে কিনা। ততক্ষনে আমার বুদ্ধি খুলে গেছে , আমি সঠিক জায়্গায় আমার নাম লিখে বসে আছি। এক্কেবারে ১০ এ ১০!

    দ্বিতীয় লাইনে বাবার নাম। স্যার এবার সব্বাইকে সতর্ক করে দিলেন বাবার নাম লেখার সময়, বাবার নামের আগে কেউ যেনো "শ্রী" , "শ্রীযুক্ত" না লেখে। শুধু বাবার নাম। আমার তখন ফ্লো এসে গেছে! সোমনাথ কে আর বিরক্ত করছি না।

    হঠাৎ একটা গুড়ুম করে কিলের আওয়াজ, আর সোমনাথের গগনভেদী চিৎকার। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে প্রশ্ন করে, " স্যার আপনি আমায় মারলেন কেনো?"

    হারামজাদা তোদের যে আমি পই পই করে বারন করলুম বাবার নামের আগে কেউ " শ্রী বা "শ্রীযুক্ত" লিখবি না। তা তুই এর মধ্যেই বাবর নামের আগে "শ্রী" লিখে ফেলেছিস?

    পিঠ ডলতে ডলতে সোমনাথ বলে কি করবো স্যার? বাবার নাম তো " শ্রীপতি'!

    স্যার একটু সামলে নিয়ে বলেন, সেটা আমায় আগে বলবিতো!

    কিছু স্যার আবার "টার্গেট" ছাত্রদের "টোপ" দিয়ে পেটাতেন।

    ক্লাসের ফার্স্ট বয় জয়ন্তকে প্রশ্ন জিগ্গেস করলেন " উত্তর প্রদেশ ভারতের কোন দিকে?

    উত্তর দিকে।
    ঠিক আছে, বোসে পড়।

    মধ্যপ্রদেশ ভারতের কোন দিকে রে দেবাশীষ?

    দেবা উত্তর দিলো মধ্যেখানে স্যার।
    বোসে পড়।

    স্যর এবার হাঁটা শুরু করেছেন শেষ বেঞ্চের দিকে।

    আমি যথা সম্ভব স্যারের সাথে আই কন্ট্যাক্ট না রাখার চেস্টা করছি। স্যার শেষমেষ আমার কাছে দাঁড়িয়ে পড়লেন।

    এবার তুই বল। পশ্চিমব্ঙ্গ ভারতের কোন দিকে?

    আমি উত্তর দেবার আগেই স্যার পেটাতে শুরু করলেন। আমি কি উত্তর দেবো স্যার জানেন। তাই আগে থেকেই পিটিয়ে নিলেন। এতটাই কনফিডেন্ট থাকতেন কিছু ছাত্রদের ওপোর।

    শুধু স্যাররা পেটাতেন এমন নয়। অশোকের বাবা যেমন রেজাল্ট বেরনোর দিন যদি না থাকতে পারতেন, তাই আগের দিন রাতে পিটিয়ে রাখতেন। রেজাল্ট কি হবে ওনার জানা।

    আমাদের ছোটোবেলায় এমনি কারনে, অকারনে আমরা বহু মার খেয়েছি স্যার, বাবা,কাকা, দাদাদের কাছ থেকে।

    মা' রা খুব সচারাচর উগ্রপন্থা নিতেন না খুব বাধ্য না হলে। তবে যেটা নিতেন তার চেয়ে অনেক সস্তায় প্রটিন ছিলো দু/চারটে চড় বা কিল। প্রতি পাড়ায় বা ফ্যামিলিতে দুর সম্পর্কের দু এক পিস ভালো ছেলে/মেয়ে থাকতো, তাদের জন্ম হোয়েছিলো শুধুমাত্র আমাদের অপদস্থ করার জন্যই বোধায়। কথায় বার্তায় তাদের সাথে আমাদের তুলনা করে আমাদের প্রেস্টিজের "ওয়াট" লাগালেও , "হাম নেহি শুধরেঙ্গে" মনোভাবের জোরে সব রকম প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতাম।

    আমার এক দুর সম্প্র্কীয় মাসীর ছেলে, সে শুধু পরীক্ষায় প্রথম হোতো তা নয়, সে আবার ইংলিশ মিডিয়ামে পড়তো। ইংরাজীতে ভূগোল, ইতিহাস পড়া ছাড়াও ইংরাজীতে কথা বলতে এমনকি ইংরাজীতে গালাগালিও দিতে পারতো। আপদে বিপদে তারা না থাকলেও, পরীক্ষার রেজাল্ট বেরনোর পরে আমাদের বাড়ীতে মাসী তার ছেলের বহুমুখী প্রতিভা, আর আমার বহুমুখী ব্যাথর্তা নিয়ে আলোচনা করে যৎপরনাস্তি প্রীত হতেন।

    আমি সেই সময় লজ্জায়, ভয়ে বাথরুমে থাকাই শ্রেয় মনে করতাম। তখন কিন্তু বাঙালী বাথরুমে "কমোড" প্রবেশ করেনি।বাথরুমে এই দীর্ঘক্ষন বসে থাকার কষ্ট শুধু মাত্র আমার মতো বহুমুখী ব্যার্থ পড়ুয়ারাই অনুধাবন করতে পারবে।

    মাকে বহুবার বলে ছিলাম, " মা, যে সমস্ত আত্মীয়রা জন্মদিনে, বা দূর্গা পুজোতে কোনো রকম গিফ্ট দেয়্না, তাদের কোনো রকম সাংবিধানিক অধিকার নেই পরীক্ষার পরে তাদের রেজাল্ট জানার"।

    আমাদের দেশে কোন মা, বাবা তাদের সন্তানদের কথা প্রাধান্য দিয়েছে! সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা।আমার সব লাস্ট বেঞ্চের বন্ধুদের মধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার ভয়, কেবলমাত্র প্রদীপ ছাড়া। আমরা যখন গাতিয়ে মুখস্থ করে চলেছি ভুগোল,বিঙ্গান, অঙ্ক, ইতিহাস তখন প্রদীপ, “চেগুয়ে ভারা” পড়ছে। সব দিক থেকে প্রদীপ আমাদের চাইতে আলাদা। ওর কাছেই প্রথম শুনি, “ বুর্জুয়া, শাষক শ্রেনী, শোষক শ্রেনী, সাম্রাজ্যবাদ, কমরেড ইত্যাদি শব্দ গুলো।

    আঁকিয়ে বলতে যখন শুধু পাড়ার গনুদা আর ছানুদাকে জানতাম, তখন প্রদীপের মুখে শুনি প্রথম পিকাসো, ভ্যান গখ এদের নাম। ছানুদা, গনুদানারা নাকি যা চোখ দিয়ে দেখে, সেটাই আঁকে। আর ওনারা চোখ দিয়ে দেখে আর মাথা খাটিয়ে আঁকে।

    আমি বলি, তুই পরীক্ষার সময় এখন এই সমস্ত পড়ছিস? পরীক্ষায় ফেল করলে?
    পরীক্ষা তো আর অলিম্পিক নয়, যে প্রতি চার বছরে এক বার আসবে! সামনের বছর আবার পরীক্ষা দেবো!
    আমরা সবাই জানি, প্রাদীপ অন্য ধরনের ছেলে। লাস্ট বেঞ্চে বসার ছেলে নয়। সব বন্ধুরা মিলে বলি, তুই মন দিয়ে পড়লে কিন্তু অভীকদার চেয়েও বেশী নম্বর নিয়ে পাশ করবি?

    প্রদীপ বলে, তারপরে অভীক্দার মতো IIT থেকে পাশ করে আঙুলে গোমেদ, পোখরাজ, বাড়ীতে কোনো “বাবার” ছবিতে মালা দিয়ে পুজো আর রাত্রে ইসাব্গুল খেয়ে ঘুমোতে জাবো? ধুর ধুর আমার জন্য ঐ জীবন নয়।

    মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ। রেজাল্ট বেরোবে কিছুদিনের মধ্যে। এর মধ্যে প্রদীপ এক্দিন আমায় বলে চল!

    কোথায় গড়িয়াহাট?

    ধুর, হিমালয়! কিছুদিনের জন্য হারিয়ে যাই চল।

    এমনই সব অবাস্তব প্রস্তাব ওর মনেই দানা বাঁধতো। কি করে বোঝাই ঐ বয়সে অতো দুর যেতে পারি কখনো? আমি হিমালয়ের কথা চিন্তা করে মনে মনে ঠান্ডায় কেঁপে উঠি। কৌপিন পরে’ মাdhuকরী’! না না অসম্ভব। নানান অজুহাত দেখাই।

    মনে মনে চিন্তা করে নিয়েছি, পাশ করলে কলকাতা আর ফেল করলে পার্মানেন্টলি হিমালয়!

    হিমালয় যাতে দুষিত না হয়, তার জন্য কিনা জানিনা, তবে আমি এক বারে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে গেলাম। আর আমার পাশ করার খবর শুনে আমার সেই মাসী বলে, “ মাধ্যমিক পরীক্ষার যা স্ট্যান্ডার্ড, তাতে নাকি এবার থেকে সব গরু, গাধা গুলো পাশ করে যাবে।

    এই সমস্ত ঘটনা বহু বছর আগে। এখন আমরা সবাই সমজদার আর শেয়ানা। সবাই বদলে গেছি। কোথায় যেন এক চোরাগোপ্তা কম্পিটিশান। চা খাবার পরে, সবাই পকেট থেকে আগে ভাগে টাকা দিয়ে দেয়।এখন আর কেউ বলেনা, “ আগের বারে আমি চায়ের দাম দিয়েছিলাম, এইবার তুই দে! “ কোনো natun জামা পরলে, কেউ ধার করে জামা পরতে চায় না। এখন আর কোনো বন্ধু হঠাৎ এসে হারিয়ে যাবার প্রস্তাব আনে না।

    তখন মাত্র দু এক জনের ঘড়ি ছিলো, কিন্তু সময় ছিলো সবার কাছে। এখন সবার কাছে ঘড়ি, কিন্তু সময় নেই কারোর কাছে। তাই ভাবি

    যদি কোনো ভাবে ভাগ্য ফিরে পাই…

    জীবনের ঐ সব দুর্লভ সময় ফিরে পাই...

    চল আবার বসি ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে

    যদি ঐ সব পুরনো বন্ধু আবার নতুন করে ফিরে পাই....!!
  • aranya | ***:*** | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৭380807
  • নস্টালজিক করে দিলেন
  • বিপ্লব রহমান | ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:২৪380808
  • বৃষ্টির দিনে ছুটির পর স্কুল মাঠে কাঁদাপানি মাখামাখি হয়ে ফুটবল খেলতাম। হাঁটুপানিতে ডুবে যেত ঢাকা, নর্দমার পানিতে সব ছয়লাব। সেই নোংরা জলপানি ভেঙে দলবেঁধে সবাই ভিজে ভিজে বাসায় ফিরতাম। সে এক থ্রিল!

    এখন মনে হয় গত জন্মের স্মৃতি। _____
  • শঙ্খ | ***:*** | ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:১১380809
  • বাহ
  • কাতাকুতু | ***:*** | ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪৪380810
  • স্কুলের আরো কিছু ঘটনা আসুক এই পাতায়
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন