এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা

    ন্যাড়া লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ | ৩৩৬০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ন্যাড়া | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:৪২380693
  • গেল উইকেন্ডে এখানে খুব ঝড়জল হল। পুরো খিচুড়ি-পাঁপড়ভাজা ওয়েদার, আজকাল যাকে আবগারি ওয়েদার বলে। দুটো বই আয়েস করে তারিয়ে তারিয়ে আবার পড়ে ফেললাম। মহেন্দ্রনাথ দত্তর "কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা" আর অরুণ নাগের "চিত্রিত পদ্মে"। চিত্রিত পদ্মর কথা পরে বলা যাবে, মহেন্দ্র দত্তর বইটার কথা বলি। মহেন্দ্র দত্তর মুখ্য পরিচয় এখন দাঁড়িয়েছে স্বামী বিবেকানন্দর মেজ ভাই। নিজে ব্যারিস্টারি পড়তে বিলেত গেছিলেন। শেষ অব্দি হননি অবশ্য। অনেক দেশ ঘুরেছেন। নানান বিষয়ে গভীর পড়াশুনো করেছিলেন। আধ্যাত্মিকতার চর্চা করেছিলেন হাতেকলমে। অনেক অনেক বই লিখেছিলেন। কাজেই বিবেকানন্দর পরিচয়ের বাইরেও স্বক্ষমতায় নিজের পরিচয় হতে পারত।

    মহন্দ্রনাথ দত্ত ১৯২৯ সালে "কলিকাতার পুরাতন কথা" নামে কতকগুলো ভাষণ দেন। সেগুলোই বাড়িয়ে-টাড়িয়ে "কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা" নামের বইয়ে দাঁড়ায়। যদিও বইটার প্রথম প্রকাশ অনেক পরে - ১৯৭৩-এ। আমার কাছে দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৭৫-এর। মনে হয় এর আগে অন্য কোন প্রকাশকের ঘরে হয়ত বেরিয়েছিল। ১৯২৯-এ লেখা বই ১৯৭৩-এর আগে প্রকাশ হবে না, এ ভাবতে খটকা লাগছে।

    মহেন্দ্র দত্তর জন্ম ১৮৬৯-এ, মৃত্যু ১৯৫৬-এ। কাজেই উনি যখন "আমার শৈশব" বলছেন, তখন ধরে নিতে হবে সেটা ঊনবিংশ শতকের সাতের দশক। বাংলাদেশে পণ-প্রথার ইতিহাসটি ওনার বয়ানে শুনুন - "... আমার শৈশব হইতে দেখিয়াছি মেয়ের সংখ্যা বাড়িল এবং ছেলের সংখ্যা কমিল। এই জন্য ছেলের বাপ কনের বাপের কাছ থেকে কিছু পাইতে আশা করিল। কিন্তু এর ঠিক পূর্বে কনের বাপ কিছু পাইত। ইহাকে পণ বলে।" - পৃঃ ৬৫, বিবাহের আনুষ্ঠানিক প্রথা। এ কি সত্যি? মানে, ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধ অব্দি ছেলের বাপকে পণ দিতে হত কলকেতা শহরে? ঐতিহাসিক ও সমাজতাত্বিকরা এ সম্বন্ধে কী বলছেন?

    বিয়ের কথা যখন এল, তখন খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারটাও দেখা যাক। এই আমাদের জীবদ্দশাতেই তো ভিয়েন বসিয়ে খাওয়ান থেকে সার্বজনীন কেটারারের হাতে যজ্ঞিবাড়ির খাদ্যাখাদ্য সঁপে দেওয়া থেকে যত্ত উচ্চুন্ডে খাবারে আয়োজন - সবই দেখা হল। মহেন্দ্র দত্ত ঊনবিংশ শতাব্দির শেষার্ধে বিয়ে ইত্যাদি অনুষ্ঠানে কীরকম খাওয়ান হত - সে বিষয়ে লিখেছেন "লোক খাওয়ানো" প্রবন্ধে। প্রথমে বড় লুচি আর নুনবিহীন কুমড়োর ছক্কা। এই আলুনি কুমড়োর ছক্কার স্বাদের যা প্রশংসা করেছেন, তাতে অন্য সব খাবারের স্বাদ ফিকে হয়ে আসে। আসত কলাপাতায়। কলাপাতার কোণে নুন। এরপর আসত খুরি-সরা। সরাতে আসত কচুরি, নিমকি, খাজা, চৌকো গজা, মতিচুর। কড়াইডালের পুরে আদা, মৌরী দিয়ে কচুরি হত। খাজা ছিল খাবারের প্রধান অঙ্গ। খুরিতে থাকত চার রকমের সন্দেশ। এরপরে ক্ষীর, দৈ দেওয়া হত। ১৮৭৩-৭৪ নাগাদ থেকে রসগোল্লা আর তিলকুট চালু হয়। রাবড়িও পরের ব্যাপার। লক্ষ্ণৌ থেকে আমদানী। বিখ্যাত ছিল পেনেটির গুপো সন্দেশ। আর খাজা দিয়ে ক্ষীর খাওয়া হত। কী বুঝছেন? আজকাল তিলকুটও দেখা যায়না, মতিচুরও। আমাদের বাড়িতে একজন মিষ্টিওলা আসত। সে অনেকদিন। আমার জন্মের আগে থেকে। তিনি তিলকুট, চন্দ্রপুলি ইত্যাদি অধুনালুপ্ত সব মিষ্টি আনতেন, এবং অতি উৎকৃষ্ট। সিমলেপাড়ার মিষ্টি খেয়ে বড় হয়েছি। কাজেই মিষ্টির গুণাগুণ বিচারে নো চালাকি। এই প্রসঙ্গে মহেন্দ্র দত্ত সিমলে পাড়া কী করে মিষ্টির আদত ঠেক হয়ে উঠল, সে সম্বন্ধেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

    "চাকরদের গোঁফ কামান" প্রবন্ধে লিখছেন বাড়ির পরিচারক-পরিচারিকাদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক হত, কাকা-জ্যাঠা বলে ডাকা হত। বাড়ির বৃদ্ধা ঝির মৃত্যুতে তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী মহেন্দ্র দত্ত নিজে কাঁধ দিয়ে, দাহ করে, শ্রাদ্ধ করে, কাঙালীভোজন করিয়েছিলেন।

    দুটো প্রবন্ধ আমার বিশেষ ভাল লেগেছে। "মনসাপূজা ও নাগপঞ্চমী" আর "মহিষাসুর বধ"। প্রাচীন ইতিহাস আর পুরাণের গল্প-টল্পকে যুক্তির বিন্যাসে ফেলে এক অসাধারণ ইন্টেলেকচুয়াল (বাংলায় বৌদ্ধিক মানে কি ইন্টেলেকচুয়াল?) প্রবন্ধ। সেরকমই "দুর্গাপূজা" প্রবন্ধটি। কী লিখছেন দেখুন - "বাংলাদেশে প্রচলিত যে সব দুর্গাপূজার গল্প পাওয়া যায় তাহাতে রাবণ বধার্থে রামচন্দ্র দুর্গাপূজা করিয়াছিলেন। ইহা রামায়ণ বা অন্য কোথাও নাই। কথক ও তৎশ্রেণীর লোক আধুনিক যুগে এইসব রচনা করিয়াছেন। প্রথম প্রশ্ন হইতেছে যে, চন্ডীগ্রন্থ কবে রচিত হইল? মধুকৈটভ বধের পঞ্চম শ্লোকে আছে 'ব্হূবুঃ শত্রুশে ভূপাঃ কোলাবিধ্বংসিনস্তদা।' কোলা মানে - শুকর খায়না এমন যবনরা আসিয়া আক্রমণ করিল। ইহা হইতে বোধ হইতেছে যে, মুশলমান আক্রমোনের প্রারম্ভেই এই গ্রন্থ প্রণয়ন করা হয়।" পৃঃ ১২৫। আমার কথা হল, এগুলো কী সত্যি। মানে এর কী ইন্ডিপেন্ডেন্ট করোবরেশন আছে? কারণ এখনও তো কাগজ-রেডিও-টিভি উচ্চৈঃস্বরে "অকালবোধন" বলে নিনাদ করে যায়। সে যাই হোক, প্রবন্ধগুলোর থেকে দুটো জিনিস পরিষ্কার হয়ে যায় - ভদ্রলোক পড়াশুনো করা সংস্কারহীন অ্যানালিটিকাল মনের অধিকারী ছিলেন এবং বাংলাটা চমৎকার লিখতেন।
  • dc | ***:*** | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৩০380694
  • আমার একটা টাইম মেশিন থাকলে নানান যুগের খাবার খেয়ে বেড়াতাম। বিয়েবাড়ির খাবার, মোগলাই খানা, সব চেখে দেখতাম।
  • | ***:*** | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৩৫380695
  • এই বইটার কথা রঙ্গন বলেছিল। দেখি তো খুঁজে সফট কপি পাই কিনা।
  • | ***:*** | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:৩৬380697
  • থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু
    বেশ ঝকঝকে পিডিএফ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন