এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ইন্ডাষ্ট্রি – অ্যাকাডেমিয়া সম্পর্ক প্রসঙ্গে দুই-চার কথা

    সুকান্ত ঘোষ
    অন্যান্য | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ | ৮৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুকান্ত ঘোষ | ***:*** | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:১২380557
  • শনিবার সকাল নিজেকে প্রশ্ন করার জন্য খুব ভালো – বিশেষ করে এমন প্রশ্ন যেগুলি আপনাকে সারা সপ্তাহে ধরে খুচখাচ করে বিঁধছিল বা কোন ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াই দুম করে ঘুম থেকে উঠে মনে হল আপনার দিব্যজ্ঞান হয়ে গ্যাছে এবং ভারতের মূল সমস্যা আপনি প্রায় ধরে ফেলেছেন, কাউকে শুধু এবার শোনানোর অপেক্ষায়! এই সব দিব্যজ্ঞানে সাধারণত অনুঘটকের কাজ করে দাম্পত্য জীবনে নিপীড়নের আধিভৌতিক অবচেতন, কানের কাছে ঘ্যান-ঘ্যান, ‘দুঃ শালা – সব ছেড়ে দেব’ এই বাক্য বন্ধের প্রি-কারসার, কনস্টিপেশন এবং রাতে ভালো ঘুম না হওয়া।

    এমনি এক সকালে, যেখানে আমি উপরে যে কোন একটি দ্বারাই প্রভাবিত হতে পারি ভাবতে ভাবতে, একটু খানি খোলা জানালা দিয়ে ঘরে কুয়াশা ঢোকা দেখতে দেখতে বেশ গভীর ভাবেই ভাবছিলাম – গালভরা ‘নেটওয়ার্কিং’ ডিনারে ওই রেশমী কাবাবের পিস গুলো ওতো না খেলেই হত! নাকি শালা ক্যাপসিগামের সাথে গাঁথা পনিরের টুকরো গুলো খেয়েই এই অস্বস্তি! নাকি তার পরের ‘মেথি’র রুটি-টাই কাল করল! আমি রাগ ডাইভার্ট করছি – করার প্রাণপন চেষ্টা করছি টেকনিক্যালিটিতে!

    ভারতে ওই “ইন্ডাষ্ট্রী-ইউনির্ভাসিটি” সম্পর্কের কি আদৌ দরকার আছে? এটা নিয়েই একটা গাবদা প্রবন্ধ ফেঁদে ফেলা যায়। এই লেখার খাতিরে ধরে নেওয়া যাক, যে ভাই, হ্যাঁ, বলছি তো যে প্রয়োজনীয়তা আছে। শোনো নি দেশের প্রধানরা কি বলছেন? এবার বলে ফেলি যে, আমি যে সুইপিং স্টেটমেন্ট গুলি দেব, তা পুরো পুরোই আমার নিজের মতামত। যদি কেউ উদাহরণ দিয়ে বা যুক্তি দিয়ে দ্বিমত হন, তা হলে তো খুবই ভালো। আমি নিজের মতামত রিভিজিট করব। আর সত্যি বলতে কি ভারতে এই “ইন্ডাষ্ট্রী-ইউনির্ভাসিটি” সম্পর্ক নিয়ে আমার মতামত ভুল প্রমাণিত হলে বা আমার নিজের অভিজ্ঞতা বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখা গেলে, আমি নিজে খুবই খুশী হব।

    কিছুদিন আগে আমাকে বলা হল যে ভাই তুমি আমাদের কোম্পানিকে (ওয়েল এ্যান্ড গ্যাস সেক্টর) একটু রিপ্রেজেন্ট করে এস না পুণেতে ন্যাশানাল কেমিক্যাল ল্যাব এ গিয়ে। বলাই বাহুল্য আমি আগে কোন দিক ‘এন সি এল’ এ যাই নি – যদিও ওদের কাজ কর্ম সমন্ধে খুচরো ধারণা আছে, এবং আমাদের কোম্পানির বেশ কিছু প্রোজেক্ট চলছে ওদের সাথে। আমি আমার কোম্পানির রিকোয়েষ্টকারীকে বললাম, “দাদা, আমি কি যোগ্য ব্যক্তি?” বলা হল – “তুমিই যোগ্য ব্যক্তি। তোমার সাথে আমাদের এক বেসিক সায়েন্সের রিসার্চারও যাক”। প্রসঙ্গত বলে নেওয়া যাক – আমি তো ইঞ্জিনিয়ার। আর ইঞ্জিনিয়াররা কি প্রকৃত অর্থে ‘রিসার্চার’ হয়, সেই প্রকৃত সারসের মত! যারা ‘দি বিগ ব্যাং থিওরি’ সিরিজটা দেখেন, তাঁরা মনে করতে পারবেন যে শেলডন-কে (থিওরিটিক্যাল ফিজিসিস্ট) কেউ একবার ভুল করে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ বলায় কি বিশাল ইন্সাল্টেড হয়েছিল সে। বারবার বলছিল “ইউ বেটার টেক এই ব্যাক” – ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি নিজেও অবশ্য মাঝে মাঝে ভাবি, সত্যিই কি ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ জিনিসটা সোনার পাথরবাটি টাইপের – অন্তত ভারতীয় অ্যাকাডেমিক কনসেপ্টে! আমার নিজের মতামত, ভারতে “ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ” (মানে ইউনিভার্সিটিতে আর কি) জিনিসটা খুব একটা আবেদন রাখে না গ্লোবাল কনটেক্সটে।

    ঘটনা হয়েছে কি, ভারত সরকারের পি এম ও অফিস থেকে ডাইরেক্টিভ এসেছে নাকি যে সি এস আই আর (CSIR) ল্যাবগুলিকে আরো বেশী করে ইন্ডাষ্ট্রী-র সাথে মাখামাখি করতে হবে।। সি এস আই আর এর ডিজি নাকি উঠে পড়ে লেগেছেন যে সিরিজ অব ইন্ডাষ্ট্রী মীট করতে হবে। তা এন সি এল দিয়ে শুরু। আর এন সি এল বলে স্বভাবতই কেমেষ্ট্রি সাইড দিয়েই শুরু হবে। ডাকা হয়েছে পেট্রোক্যেমিক্যাল, বাল্ক ক্যেমিক্যাল, ফারমাসিউটিক্যাল, এগ্রোক্যেমিক্যাল, ডাই এ্যান্ড পিগমেন্ট, ফাইন ক্যেমিক্যাল, স্পেশালিটি এ্যান্ড পারফরমেন্স ক্যেমিক্যাল, পলিমার, স্মল এ্যান্ড মিডিয়াম ইন্ডাষ্ট্রি। তা হলে আমার অবস্থান কি? আমি হলাম গিয়ে সর্বঘটে কাঁঠালি কলা – কারণ আমি মেটিরিয়্যালস অ্যান্ড করোশনের (Materials & Corrosion) লোক। আমার সাবজেক্ট সব জায়গায় আছে – সেই নিয়ে পরে কোনদিন লিখবক্ষণ। মনে রাখবেন, করোশন (ক্ষয়) হল গিয়ে অমর অক্ষয়। ক্ষয় জিনিসের হবেই – আপনি আটকাতে পারবেন না, কারণ থার্মোডায়নামিক সূত্র মেনে যে কোন ধাতুই তার লোয়েষ্ট এনার্জী লেভেলে যাবে, মানে আকরিক হবার চেষ্টা করবে। সেই আকরিক যেখান থেকে আপনি শক্তি-টক্তি প্রয়োগ করে পরিশোধনের দ্বারা ধাতু বানিয়েছেন। ফলতঃ ধাতু সেই বাড়তি শক্তি ত্যাগ করে নিজের ‘মাদার নাচারের’ কাছে ফিরে যেতে চাইবে। এই হল গিয়ে করোশনের ফান্ডা – এক সেমিষ্টারের ক্লাস খতম। সমালোচকরা প্রশ্ন ছুঁড়বেন, ভাই করোশন যদি থামাতেই না পারবে, তাহলে তুমি কি ছিঁড়ছ! ভ্যালিড প্রশ্ন - করোশন ইঞ্জিনিয়ারের মূল কাজ হল, ওই ক্ষয়-কে যতটা ধীর গতিতে পরিণত করা যায়। অনেকটা সেই যৌনক্ষমতা প্রলম্বিত করার ঔষধের মত – যা হবার শেষে তা হবেই, অনিবার্য – কেবল যতটা টেনে খেলা যায় আর কি! ব্যাস আরেক সেমিষ্টারের ফান্ডা একলাইনে চলে এল! বললে হয়ত বিশ্বাস করবেন না, এই আমাদের বিষয়টা যে কোন উন্নত দেশের জি ডি পি –র প্রায় ৩-৪% কন্ট্রিবিউট করে। মানে cost of corrosion is about 3-4 % of a country’s GDP। আমেরিকা-কে ধরলে, ২০০৪ সালের হিসাবে এই ক্ষয় জাত খরচের পরিমাণ প্রায় ২৭৬ বিলিয়ন ডলার! এবার ভাবুন, যদি মাথা বা পিছন খাটিয়ে আপনি এর ১০% ও সেভ করতে পারেন তা হলে আপনার কন্ট্রিবিউশন দেশের ইকনমিতে হবে প্রায় ২৮ বিলিয়ণ ডলার (এক লক্ষ নিরানব্বই হাজার কোটি টাকা!) – ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন? আমাদের অবস্থা ডাক্তারদের মত – আপনাদের ভালোবাসার লোক না হলেও, আমরা আছি এবং থাকব! আর একটা ব্যাপার, ভারতে হোক বা ভারতের বাইরে, একটা সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা সব ইন্ডাষ্ট্রি ফেস করছে তা হল ওই ইনফ্রাস্ট্রাকচার মেনটেন করা। মানে ধরুণ একটা কারখানা বা ইন্ডাষ্ট্রী তৈরী হয়েছিল ২০-২৫ বছর আগে – তার মাল পত্র এবার ডিজাইন লাইফ শেষ হয়ে গ্যাছে, জিনিস টুপটাপ করে ক্ষয়ে ঝরে পড়ার মত! এবার আপনি করবেন কি? পুরো জিনিস কি পাল্টে দেবেন? না, পারবেন না – কারণ আপনার হাতে অতো পয়সা নেই! আপনি তখন আমাদের মত পাবলিককে ডেকে বলবেন, ভাই, আরো কিছুদিন মালটা চালানো যায় না? একটু দেখুন না, যেন চালাতে গিয়ে ভেঙে না পড়ে। কারণ ভেঙে পড়লে, আপনার এবং আপনার সাথে আরো অনেক দুর্ভাগার বাঁশ! মনে আছে, ভুপাল গ্যাস দুর্ঘটনা? তা মোদ্দা কথা, আমার সাবজেক্ট হল সর্বঘটে কাঁঠালি কলা।

    এন সি এল ডাইরেক্টরের কাছ থেকে মেল পেলাম যে খোলা টেবিল আলোচনা হবে, ইন্ডাষ্ট্রি ধরে ধরে একে একে। এবং সি এস আই আর কি ভাবে সাহায্য করতে পারে সেই নি ইন্ডাষ্ট্রির প্রস্তাব। আয়োজক কমিটিতে আরো আছে অন্য সি এস আই আর ল্যাবের ডাইরেক্টাররা। আলোচনা শুরু হল – আলোচনা শুরু হতে না হতেই ট্যেকনিক্যাল দিক থেকে ঘুরে গিয়ে একটু চলে গেল ‘এনভায়রনমেন্ট পলিসি-তে’। স্মল এ্যান্ড মিডিয়াম ইন্ডাষ্ট্রির প্রতিনিধিরা “চায়না আমাদের খেয়ে ফেলল” বলে কোলাহল শুরু করে দিল। বলতে লাগল, আমাদের দেশের পরিবেশ পলিসি নাকি এতই স্ট্রিক্ট যে নতুন ক্যেমিক্যাল বানাতে গেলেই আটকে যাচ্ছে! আর সব পলিসি মেনে ক্যেমিক্যাল বানাতে গেলে যা খরচা হচ্ছে, তাতে করে চায়না ক্যেমিক্যালের সাথে কম্পিটিশনে আর পারা যাচ্ছে না! একজন তো প্রায় আমাদের ক্লাস টুয়েলেভে যা যা ক্যেমিক্যালের নাম শুনেছিলাম তার প্রতি টনের ভারতীয় উৎপাদন খরচা আর চীনের কি দামে বিক্রি করছে তা গড় গড় করে বলে গেল! আমি হাঁ করে শুনছি। এন সি এল এর অনেকে চীনে কোনদিন যায় নি – তারাও জ্ঞান দিচ্ছে, আবার যারা গ্যাছে তারাও জ্ঞান দিচ্ছে! আমি নিজে মাঝে মাঝে এখন চীনে যাই – আমি মনে করছি আমার কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর আছে – কিন্তু এখানে বলা যাবে না! হয়ত বলা যেত, কে আর আটকাচ্ছে! কিন্তু মোদীর বড় ছবি ঝোলা ঘরেতে সে সব বলে আর ঘাঁটাতে চাইলাম না। ক্যেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রির অনেকেই চীন যায় ঘনঘন – তারা বলছে এটা করলে হত, ওটা করলে হত। এন সি এল ডাইরেক্টর বলছে, সবই তো শুনছি, তা আমরা কি ভাবে এই ব্যাপারে আপনাদের সাহায্য করতে পারি? ইন্ডাষ্ট্রির সব হই হই করে উঠল, আপনারা পলিসি পাল্টাতে হেল্প করুন। সরকারের কাছে গিয়ে পলিসি একটু নরম করতে বলুন, না হলে আমরা মরে যাব। এন সি এল এর সিনিয়ার রিসার্চার বলে উঠল, এটা তো ঠিক আমাদের কোর এরিয়া নয়। সি এস আই আর এর ডি জি বললেন, ঠিক আছে আমাদের দিল্লির সাথে ভালো সম্পর্ক এবং প্রভাব ও আছে এই সব ব্যাপারে, দেখছি কি করা যায়। অ্যাকশান আইটেম লিপিবব্ধ হল খাতায় – পলিসি নিয়ে ভাবতে হবে। এর পর একজন ইন্ডাষ্ট্রি থেকে বলে উঠলেন, আমি সামারাইজ করছি কেন চীন আমাদের বিট দিতে পারছে। চীনে প্রথমে ওরা জোর দিয়েছিল ক্যেমিক্যাল বিজনেস যেন তেন প্রকারে ছড়াতে – এমনকি ওরা স্ট্র্যাটিজিক ভাবে এমন কিছু র-স্টক এমন ভাবে ব্যবহার করতে শুরু করে যে ‘বায়ার’ চীনে ওদের প্ল্যান্ট স্থাপন করে ফেলে। ওই বেয়ারের কাছে নাকি এক স্পেশাল ক্যেমিক্যাল এর পেটেন্ট ছিল তখনো। মোদ্দা কথা হচ্ছে, আগে নিজেরা সাফিসিয়েন্ট এবং তার পরে নেট ওয়ার্ক ছড়াবার পর, পলিসি নিয়ে ডিটেলসে ঢোকে। আমাদের তুলনায় ভারতে কিছু বানাবার আগেই পলিসি নিয়ে হইচই! ইন্ডাষ্ট্রি চাইছে তাদের কিছু ফ্রীডম দেওয়া হোক ট্রাই করতে। আরেক জন উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল, আরে আমরা সোডিয়াম সায়ানাইড দুম করে বন্ধ করে দিলাম – একবার ভেবে দেখলেন না, তা হলে ওর ডেরিভেটিভ গুলো কোথা থেকে আসবে! আপনারা তো না বুঝেই পুরো সাইকেলটাই ডিস্টার্ব করে দিলেন! এক প্রাক্তন এন সি এল ডাইরেক্টর একটু স্মার্ট ভাবে আলোচনার চেষ্টা করছিলেন – “আচ্ছা তোমরা বল, তোমাদের ক্যেমিক্যাল বেশী দাম কেন? লেবার তো আমাদের এখানে চীনের থেকেও শস্তা। তাহলে কি টেকনলজি? নাকি এফিসেইয়েন্সি”? বোঝা গেল তার পরের আলোচনায় মূল ফ্যাক্টর গুলি হচ্ছে – পলিসি, অটোমেশন, স্কেল অব ম্যানুফ্যাকচারিং, র-মেটেরিয়াল অ্যাভেলেবিলিটি।

    এবার এল পলিমার ইন্ডাষ্টি – উনাদের প্রতিনিধি নিজে বহুকাল আগে এন সি এল থেকেও পি এইচ ডি করেছেন। তিনি বললেন, “আপনার কি জানেন যে সরকার হঠ করে পি ভি সি (PVC) এর উপর ব্যান আনছে? এর জন্য এক বিশাল পি ভি সি ইন্ডাষ্ট্রি প্রায় থমকে গ্যাছে”? যা বুঝলাম তাতে করে ‘লেড’ স্টেবিলাইজার ব্যবহার নিয়ে নাকি এই ঘোটলা টা হয়েছে। লেড তো পরিবেশের জন্য খারাপ। এটা দেখলাম কেউ অস্বীকার করছে না – কিন্তু প্রশ্ন এল, আরে ভাই এক পরিবর্ত ব্যবহার তো দুম করে আর করা যায় না! একটু তো টাইম লাগবে! এন সি এল কি হেল্প করতে পারে না নতুন স্টেবিলাইজার (বা অনুরূপ) কিছু আবিষ্কার করতে? আমার মনে পড়ে গেল, সেই এভিয়েশন ইন্ডাষ্ট্রিতে অ্যালুমিনিয়াম কোটিং করার জন্য আগে ক্রোমেট-কনভারশন ব্যবহার করা হত। কিন্তু তাতে হেক্সাভেলেন্ট ক্রোমিয়াম ব্যবহার হত যা টক্সিক। কিন্তু দুম করে তো আর ক্রোমেট কনভারশান ব্যবাহার হয় নি! একটা রিসার্চ পিরিওড ছিল – অনেক অনেক ইউনিভার্সিটি এবং রিসার্চ ল্যাব সেই নিয়ে কাজ করত। আর এখানে, পরিবর্ত পাবার আগেই ব্যান! তারপর আরো আলোচনা হল যে ফালতু মিডিয়া হাইপ নিয়ে – মানে প্লাষ্টিক থেকে কি কি টক্সিক জিনিস বেরোয় তা আন-সায়েন্টিফিক ভাবে পাবলিকের কাছে প্রেজেন্ট করা হচ্ছে। কোন এক প্লাষ্টিক থেকে নাকি বেঞ্জিন লীচ করছে! প্রতিনিধি বললেন, বাইরের সায়েন্সের লোকেরা হাসছে – “যে এই তোমাদের দেশের সচেতনতা? এই প্লাষ্টীক থেকে বেঞ্জিন!” আমাদের সায়েন্সের ক্রেডিটিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন এল ডি জি এর কাছ থেকে, “তা সি এস আর আর এই ব্যাপারে কি করতে পারে”? প্রস্তাব হল যে, মিডিয়া এমন যদি কিছু ফালতু সার্কাস শুরু করে, তাহলে কে সরকারের তরফ থেকে সি এস আই আর বা অন্য কেউ ভালো করে মিডিয়া রিলিজ করে প্রকৃত সত্যটা পাবলিককে বলে! আমার নিজের ভালো লাগল প্রস্তাব। সি এস আই আর এর কাছ থেকে প্রশ্ন এল, এই কাজের জন্য ফান্ডিং কে দেবে? পলিমার ইন্ডাষ্ট্রি কি ফান্ডিং-এ রাজী হবে? প্রতিনিধি বললেন, “দেখুন, আমাদের ফান্ডিং দিতে অসুবিধা নেই – ইন ফ্যাক্ট এই নিয়ে আমরা ভেবেছি। কিন্তু ব্যাপার হল – যদি পাবলিক জানতে পারে যে, এই সব কাজের জন্য ফান্ডিং এসেছে প্লাষ্টিক কোম্পানির কাছ থেকে, তা হলে পাবলিক অন্য ভাবে নেবে ব্যাপারটা”। ঠিক হল যে, যদি এমন ফালতু মিডিয়া রিলিজ যা আন-সায়েণ্টিফিক তা যদি কারো নজরে পরে, তা হলে সি এস আই আর –কে জানাতে, ওরা চেষ্টা করবে কিছু করার।

    তারপর এগ্রোকেমিক্যাল – তারা বলল দেখুন আমাদের বেসিক রিসার্চ থেকে প্রোডাক্ট এই জিনিসটার টাইম লাইন দুই মাস বা দুই বছর নয় – আমাদের লেগে যায় প্রায় দশ বছর। তা এই টাইম লাইনটা নিজেই একটা বাধা। তারপরে তারা বলল যে, সি এস আর আর এর সাথে প্রোজেক্ট করতে গেলে সবসময় ইনফরমেশন সবটা শেয়ার করতে যায় না রিসার্চার-রা। এবার প্রশ্ন হল – যদি সব ইনফরমেশন শেয়ার ই না করা হয়, তা হলে ল্যাবের আবিষ্কার থেকে মার্কেটে জিনিসটা আনা যাবে কি করে? এই প্রশ্নের সাথে সাথে আলোচনা বেশ একটা ইনস্টারেষ্টিং মোড় নিল – কারণ আমার নিজের মনে হয় এটা একটা বিশাল ইমপরটেন্ট ব্যাপারটা ইন্ডাষ্ট্রি-ইউনিভার্সিটী রিলেশানের জন্য।

    কি ভাবে এক ল্যাবের আবিষ্কার-কে পরিণত করা যাবে ইন্ডাষ্ট্রিয়াল স্কেলে? আমার নিজের মতে এই জায়গাতে ভারত বড় মার খায়। ইমপরটেন্ট পয়েন্টগুলি হল – ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি (আই পি), ফান্ডিং, কমন-ইন্টারেষ্ট ইত্যাদি। আমাদের ভারতীয় রিসার্চ ল্যাব বা ইউনিভার্সিটি এর লোকেদের আই পি জিনিসটা নিয়ে আইডিয়া খুব কম। পেটেন্ট নিয়ে বেসিক ফান্ডাটাও নেই – ফ্রীডম অব প্র্যাক্টিস কাকে বলে তাও অনেকে জানে না। না জানাটা বিশেষ কোন অপরাধ নয় – কিন্তু দীর্ঘদিন না জেনে থাকা, বিশেষ করে যখন, সেটা তোমার কাজে ইমপ্যাক্ট করছে – তখন না জানা একটা হালকা অপরাধ বৈকি! দ্বিতীয় প্রশ্ন হল – ল্যাবে আবিষ্কার করলেই তো হবে না! তা থেকে ফরমুলেশন-টা কে বানাবে? ফরমুলেশন জিনিসটা একটু দেখে নেওয়া যাক – ধরুণ এই যে কাপড় কাচার সার্ফ এক্সেল ব্যবহার করছেন, তাতে অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট মাত্র ৭-৮% - তাহলে বাকিটা কি? আপনি ল্যাবে ওই অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট আবিষ্কার করেছেন – এবার তার একটা ক্যারিয়ার দরকার, পেনিট্রেশন পাওয়ার দরকার। এই সব মিলিয়েই হল ফরমুলেশন – সেটা করা কমার্শিয়াল কোম্পানির রিসার্চ ল্যাবের স্ট্রেন্থ। তো এই ল্যাব থেকে ইন্ডাষ্ট্রি জার্নিটা ইমপরটেন্ট। তার জন্য প্রথমে আপনার চাই এক পাইলট প্ল্যান্ট – ব্যাচ প্রোডাকশন – তার পর লার্জ স্কেল ইন্ডাষ্ট্রিয়াল প্রোডাকশন। তো পাইলট প্ল্যান্টের পয়সা কে দেবে? সি এস আর আর এর কাছে অতো টাকা নেই – আর না আছে ছোট ইন্ডাষ্ট্রির কাছে! প্রশ্ন এল – সরকার কেন সাহায্য করবে না এই সব ক্ষেত্রে? আর যদিওবা কোন ছোট ইন্ড্রাষ্টি ফান্ডিং করতে রাজী হয়, তা হলে তারা কেমন করে টাকা দেবে সি এস আর আই কে? কারণ ধরুণ পাইলট প্ল্যান্ট করতে ২০ কোটি টাকা লাগল – এবার পাইলট প্ল্যান্টের সাফাল্য এল না! সি এস আই আর এর তো কিছু হবে না – কিন্তু ওই ছোট কোম্পানিটি শেষ হইয়ে যাবে। তাই বেশির ভাগ স্মল-মিডিয়াম ইন্ডাষ্ট্রি রয়েলিটি বেসিস এ ফাণ্ডিং এর প্রশ্ন তুলল। যদি ল্যাবের আবিষ্কার বাণিজ্যিক প্রোডাক্টে পরিনত হয়, তা হলে ওই কোম্পানীর রয়েলিটি দিতে কোন অসুবিধা নেই, কিন্তু আপ-ফ্রন্ট পেমেন্ট করার ক্ষমতা স্মল-মিডিয়াম ইন্ডাষ্ট্রির নেই।

    এবার প্রশ্ন হল – একজন সি এস আর এর রিসার্চারের কি স্বার্থ আছে ল্যাব থেকে ইন্ডাষ্ট্রিতে প্রোডাক্টে কনভার্ট করা নিয়ে মাথা ঘামাতে? বিশেষ করে যেখানে তার প্রমোশন হয় মূলত পাবলিশড লিটারেচারের বা ছাত্রের ভিত্তিতে? আমাদের কোন ন্যাশানাল ল্যাবের বড় থেকে ছোট রিসার্চারের কারোর কি পারফরমেন্স মাপা হয় সে ইন্ডাষ্ট্রি থেকে কত ফান্ডিং আনছে বা ইন্ডাষ্ট্রির সাথে কত কাজ করছে তার ভিত্তিতে? কারো কি অ্যাপ্রেজালে কে পি আই (KPI) থাকে যে এই এই টাইমলাইনের মধ্যে তোমাকে ল্যাব থেকে গিয়ে ইন্ডাষ্ট্রিতে ট্রানজিশান হচ্ছে এমন কতক বিষয় দেখাতে হবে? আমার মনে হয় না এমন ভাবে আমাদের ন্যাশানাল ল্যাব বা প্রফেসরদের মাপা হয়! আর তা যদি না হয়, তা হলে এই সব ইন্ডাষ্ট্রি-ইউনিভার্সিটি ঘাঁটাঘাঁটি ওই পেপার ওয়ার্ক বা রুমের মিটিং হয়েই থেকে যাবে। কোন কোন রিসার্চারের ইন্টারেষ্ট থাকবে ইন্ডাষ্ট্রির সাথে কাজ করার – আমি সেই বিষয়ে নিশ্চিত। কিন্তু পারসোন্যাল ইন্টারেষ্ট দিয়ে দেশের আউটলুক চেঞ্জ করা যায় না! তার জন্য চাই পলিসি – এটা দেখতে হবে রিসার্চারের এবং ইন্ডাষ্ট্রি, উভয়েরই যেন উইন উইন সিচ্যুয়েশন হয়।

    এর মাঝে লালজামা পরা একজন হাত তুলল – কথা বার্তা শুরু করলে বোঝা গেল তার সাথে এন সি এল-এর অনেক দিনের সম্পর্ক, মানে প্রায় ২০-২৫ বছরের, সে এক মিডিয়াম কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিকে প্রতিনিধিত্ব করছে। বলল, “ইফ ইউ অ্যালাও মি স্যার টু সে” – দিয়ে কারো অ্যালাওয়ের অপেক্ষা না করেই কি সব বলতে শুরু করল। তার কিছু কিছু কথার মধ্যে বেশ যুক্তি ছিল, কিন্তু এতো বেশী ভাঁট বকছিল যে, তার যুক্তির কথাও অযুক্তি দ্বারা চাপা পরে যাচ্ছিল। তার মোদ্দা কথা হল – এন সি এল এর কাজই হচ্ছে ফালতু পেপার পাবলিস করা, নানা ফালতু জার্নালে। কারণ তাতে করে প্রোমশন হয়। সে বলল, “ইফ ইউ অ্যালাও নি স্যার টু আস্ক” – দিয়ে আবার অ্যালাও এর অপেক্ষা না করেই ডাইরেক্ট জিজ্ঞেস করল ডাইরেক্টরকে – “স্যার, বলতে পারেন আপনার রিসার্চার আমাকে হেল্প করবে কেন? আমাকে হেল্প করে তো সে প্রমোশন পাবে না”! জটিল কেস – তার মোদ্দা কথা হল – পেপার-টেপার জাতীয় তামাশা বন্ধ করে শুধু টেকনলজি ট্রান্সফার দিয়ে প্রোমশন ইত্যাদি মাপকাঠি ঠিক করতে হবে। ভালো যুক্তি – কিন্তু ভারতে এটা রাডিক্যাল ভাবনা। তাকে অনেক কষ্ট করে বোঝানো হল যে পেপার, পেটেন্ট এর সাথে ইন্ডাষ্ট্রিতে কাজ করা – এমন একটা সহাবস্থান হতেই পারে।

    সেই লাল জামা থামলে এবার উঠল লিলেন এর সাদা জামা পরা এক লোক বলতে। বোঝা গেল সেও ওই পুরানো নেটওয়ার্কের লোক – এবং আজকাল তার ফ্যামিলি স্পেশাল কেমিক্যালসে বেশ নাম করেছে এবং বিদেশেও নাকি তাদের বিস্তার হয়েছে আজকাল। আমার হালকা খিদে পাচ্ছিল এবার, তাই এই লোক যখন বলল যে, আমার মাত্র দুটি কথা বলার আছে – আমি খুবই আপ্লুত হলাম। কিন্তু তখন কি আর জানতাম যে ওর দুমিনিট হল গিয়ে ভারতীয় দুমিনিট। বিগ্রেডে সভা করে যেমন ভাবে গ্যাট চুক্তি নিয়ে বিশাল বিশাল ভাঁট মারা হত – তেমন ভাবেই এই সাদা জামা শুরু করল – এবার কেস হল, এর কথার মধ্যেও বেশ ভালো যুক্তি আছে। সে বলল, “আপনাদের রিসার্চারদের সাথে কথা বললেই কেবল নেগেটিভ জিনিস দিয়ে মিটিং ভরে ওঠে। কি ভাবে করতে পারব সেই আলোচনার থেকে – কেন এই কাজটা হতে পারে না সেই নিয়ে বেশী নাড়াচাড়া। হোয়াট দ্যা হেল! আমার বাবা বলেছিল, আরে ফেল করব তো কি হয়েছে – দেখি না চেষ্টা করে। বাবা বেশ কয়েকবার ফেল করেছিল, কিন্তু তাতে থেকে গেলে তো আজকে আর আমাদের এই বিজনেস হত না। বাবা বলত – চলো এটা করি। কিভাবে করতে পারব, সেই আলোচনায় মন দিই চলো”। আমার পি কে ব্যানার্জির পেপ-টক মনে পড়ে যাচ্ছে – কলকাতায় বড় ম্যাচের আগে। শেষ হচ্ছে না ভাটানো – এমন সময় বলল, “আপনারা নিশ্চয়ই ফ্রনহপার ইনষ্টিটিউটের নাম শুনেছেন – তাদের মোটো-টা কি সেটা আমি আপনাদের পড়ে শোনাবো, প্রিন্ট নিয়ে এসেছি”। সেই স্টেটমেন্ট পড়ার পর তবে উনার শান্তি হল – তাও ডাইরেক্টর ডিনারের টাইম মনে ক্রিয়ে দেবার পর। আবার একবার প্রমাণ হল যে – পকেটে পয়সা থাকলে বেশীক্ষণ ভাট বকারও অধিকার পাওয়া যায়!

    এন সি এল এর যে ব্যাপারটা দেখে আমার ভালো লাগল তা হচ্ছে ওই পাশেই আছে তাদের ইনোভেশন সেন্টার। মানে সেখানে বেশ কিছু স্টার্ট আপ এবং ইনোভেটিভ আইডিয়াকে ম্যাচিউর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ সন্দেহ নেই – তেমনি দু-চারটে স্টার্ট-আপ কোম্পানীর লোকজন এসেছিল এই মিটিং তে। মেডিক্যাল ডিভাইস নিয়ে কাজ করার প্রবলেম জানতে পারলাম – গত বছর পর্যন্ত নাকি ভারতে মেডিক্যাল ডিভাইস নিয়ে প্রযুক্ত ভালো কোন স্ট্যান্ডার্ড-ই ছিল না! সেই ডিভাইস্টা বাজারে ছাড়তে গেলে যে কি ঠিক করতে হবে, তাই বুঝতে পারছিল না সেই ছোট কোম্পানীটি। তা এখন নাকি সি এস আর আই এর সহায়তায়, একটা বিদেশী স্ট্যান্ডার্ড-কে ধরপাকড় করে ভারতীয় স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত করা হয়েছে। এবং এমন কাজে নাকি সি এস আই আর এর পর থেকে সাহায্য করার জন্য তৈরী। সি এস আর আই এ নিজের একটা শাখা থাকা উচিত কিনা যেখানে শুদু স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে নাড়াঘাঁটা হবে – এমন আলোচনায় হল। আবার চলে এল পলিসির কথা – অনেক কিছু জিনিস মার্কেটে ছাড়ার পারমিশান পেতে হলে নাকি দেখাতে হয় সেই কোম্পানীর বাজারে থাকার পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। তা এমন স্টার্ট আপের ক্ষেত্রে সেটা অনেক সময় প্রবলেমেটিক হয়ে যায়। ফলতঃ বাজারে আস্তে দেরী এবং অ্যাডভান্টেজ হাতছাড়া কমপিটিং অন্য বাজারী কোম্পানীর সাথে।

    ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার হল – এই ছোট কোম্পানীর ইনকিউবেশনের ব্যাপারে দেখলাম একজন এন সি এল এর কর্তা খুবই উৎসাহী – কারণ যানা গেল, ওর আন্ডারেই এই ইনোভেশন সেন্টারটা পরে। তা যেটা বলতে চাইছি – ঠিক মত KPI দেওয়া গেলে দেখা যাবে এমন অনেক রিসার্চারই ইন্টারেষ্ট নিয়ে কাজ করবে ইন্ডাষ্ট্রির সাথে। কিন্তু তাদেরও তো কেরিয়ার-এর জন্য কিছু রিটার্ণ পেতে হবে! এবং এই রিটার্ণ পাওয়াটা খারাপ কিছু নয় – বরং আমি বলবে, সাফ্যলের জন্য এক প্রয়োজনীয় সোপান।

    কিন্তু যেটা আমার একটু অবাক লাগল – সেই সন্ধ্যের বেশীর ভাগ আলোচনাটা হল স্মল-মিডিয়াম ইন্ডাষ্ট্রি নিয়ে। এরা খুব জরুরী দেশের ইকনমি এবং চাকুরী প্রদানের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ এদের নিজেদের রিসার্চ ফান্ডিং করার পয়সা নেই। এবং রিসার্চ ভালো ভাবে করিয়ে নেবে ল্যাব থেকে, এদের এমন লোকও নেই বেশী। ফলে বেশীর ভাগ সময় হয় কি এরা সরকারী ফান্ডিং এর উপর নির্ভর করে চলে। ফান্ডিং কে দিচ্ছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ন রিসার্চে কেমন চলবে সেটা বোঝার জন্য – কোন ইন্ডাষ্ট্রি যদি সরকারী ফান্ডিং এর উপর নির্ভর করে কেবল, তাহলে সে রিসার্চকে ঠিক মত পুশ করতে পারবে না। আমি যদি সি এস আই আর কে পয়সাই না দিই – তা হলে আমি জোর করে কিছু ডেলিভারী করার জন্য তাগাদা দিতে পারি না! সেটাই অনেকে বললেন। সি এস আই আর এর মূল ভাব যেটা পেলাম, তা হলে তোমরা এসে বল কি প্রবলেম আছে তোমাদের, আমরা সলভ করে দেব। শুনতে খুব ভালো সন্দেহ নেই – কিন্তু পদ্ধতিতে এক কমপ্লিসেন্সি তৈরী হয়। কেন শুধুই ইন্ডাষ্ট্রি এসে বলবে – সি এস আই আর কেন নিজেরা গিয়ে ইন্ডাষ্ট্রিকে সমস্যার সমাধান দেবে না? আমি শেষে এটা একটু ব্যাখ্য করব। সরকার নিজেও এই ব্যাপারে কিছু জিনিস ফোর্স করতে পারে বছরের পর বছর নিজেদের কমফোর্ট জোনের ভিতর ঢুকে থাকা সিনিয়র প্রোফেসর বা রিসার্চারদের। আমি কিছুদিন আগে চীনে গিয়ে বেজিং ইউনিভার্সিটি ওব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মেটিরিয়্যালাস ডিপার্মেন্টের হেডের সাথে আলোচনা করছিলাম। উনি প্রথমে আমাকে ইউনির্ভাসিটির কার্ডটা দিলেন আর তারপর আর একটা কার্ড দিলেন যেটাতে লেখা তিনি সি ই ও একটা টেষ্টিং ল্যাবের। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটাতে কি কোন কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেষ্ট নেই? উনি ব্যাখা করে বললেন না নেই – আসলে চীন সরকার চায় যে এমন সিনিয়ার প্রোফেসররা নিজেদের জ্ঞান এমন ভাবে প্রদান করুক যেন দেশের ইন্ডাষ্ট্রি এর থেকে উপকার পায়। প্রচুর টাকা দিয়েছে সরকার ল্যাব প্রতিষ্টা করার জন্য – উনাদের মত অভিজ্ঞ লোকেরা গাইড করেন সেই সব ল্যাব। আমার শুনে খুব ভালো লাগল। জানি না ভারতে এমন কিছু হয় কিনা!

    আমার যেটা মনে হয় আজ কাল ভারতীয় ইউনির্ভাসিটির সাথে কাজ করতে গিয়ে সেটা এবার সংক্ষেপে বলি। তার আগে বলে নিই – আমার এই দেখা ইঞ্জিনিয়ারিং-রিসার্চ পারস্পেক্টিভ থেকে – কারণ এদের সাথেই আমি কাজ করি। হয়ত বেসিক-সায়েন্সের রিসার্চে কিছু পার্থক্য থাকবে। কিন্তু আমার কমন সেন্স বলে – আমি যা লিখব, তার অনেকটাই উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

    ১। মানসিকতা

    আমার মনে হয় যেটার প্রতি আমাদের সব চেয়ে নজর দেওয়া দরকার। ইন্ডাষ্ট্রির সাথে কাজ করার জন্য এক ধরণের মানসিকতার দরকার হয়, সেটা সবার মধ্যে থাকে না। মানে ওই ব্লু-স্কাই রিসার্চের সাথে অ্যাপ্লায়েড রিসার্চের পার্থক্য আর কি। অবশ্যই উভয় ধরণের রিসার্চেরই দরকার আছে, সেই নিয়ে তর্ক করছি না। আমি যেটা বলতে চাইছি যে, যাতে যার ইন্টারেষ্ট – সেটা যত আগে আইডেন্টিফাই করা যাবে, ততই ভালো। জোর করে ফোর্স ফিটিং করে কিছু লাভ নেই – তাতে আখেরে কিছু বেরোয় না শেষ পর্যন্ত। সবচেয়ে যেটা ভালো হয়, তা হলে আমাদের ইউনির্ভাসিটিতে যদি মিশ্রণ থাকে দুই ধরণের প্রোজেক্টের। এর ব্যাপারে আই আই টি (বা অনেকটা আই আই এস সি) কিন্তু অন্য ন্যাশানাল ল্যাবের থেকে এগিয়ে বলেই আমার ধারনা। ইয়ং জেনারেশন প্রফেসরেরা অনেকেই খুব ভালো কাজ করছেন – অনেকে ইন্ডাষ্ট্রি থেকে ফান্ডিং আনছেন। মানে আমাদের ইউনির্ভাসিটি গুলির মানসিকতা পরিবর্তন হচ্ছে ধীরে ধীরে – আসা রাখব যেন এই পরিবর্তন আরো তাড়াতাড়ি হয়।

    ২। অ্যাকাউন্টেবেলিটি এবং প্রোফেশনালিটি

    বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ইউনির্ভাসিটি যখন কাজ করে ইন্ডাষ্ট্রির জন্য, তখন এই অ্যাকাউন্টেবেলিটির অভাব প্রকট হয়ে পড়ে। যেই রিসার্চ গ্রুপকে ফান্ড দিয়ে কাজ শুরু করেছি, তাদের কাছ থেকে একটা আপডেট পেতে ঘাম ছুটে যায়! টাইম লাইন – অন টাইম ডেলিভারী কি জিনিস তা কেউ জানেই না! বা জানলেও, সেটা মেনে চলে রিসার্চ করে না। মানে কোন প্রফেশন্যালিটি নেই! এর মূলে আছে সরকারী ফান্ডের উপর মূলত নির্ভর করে রিসার্চ করে যাওয়া। আগে যেমন বলছিলাম, সত্যিকারের ইন্ডাষ্ট্রি-ইউনিভার্সিটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে গেলে ওই সরকারী ফান্ড থেকে টাকা পেয়ে স্মল এবং মিডিয়াম ইন্ডাষ্ট্রিকে সাহায্য করছি, এই মানসিকতা থেকে বেরোতে হবে। ভারতীয় প্রাইভেট কোম্পানী এবং আজ কাল ভারতে গড়ে ওঠা পৃথিবীর প্রায় সমস্ত বড় মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানীগুলিকে টার্গেট করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, কোন প্রাইভেট বা মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানী ল্যাবেতে খেলে বেড়াবার জন্য ফান্ড দেবে না! তাদের ডেলিভারী চাই, সমস্যার সমাধান চাই – যা তাদের ব্যাবসার লাভের মুখ দেখাবে। আর এটাও মনে রাখতে হবে যে, বেশীর ভাগ মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানীগুলির কাছে তাদের ব্যাবসায় লাভই হচ্ছে শেষ কথা! তাই ভারত থেকে আমরা যদি কম টাকায় কোয়ালিটি রিসার্চ ডেলিভারী করতে পারি, তা হলে ওই কোম্পানী গুলির কোন কারনই নেই আমাদের ফান্ড না করার! কিন্তু ওই যে, ডেলিভারী দেখাতে হবে। এক মাল্টিন্যাশানাল বা ভারতীয় প্রাইভেট কোম্পানীর রিসার্চার হয়ে যদি আমাকে বার বার গিয়ে ন্যাশানাল ল্যাব বা ইউনিভার্সিটিতে স্পুন ফিডিং করতে হয়, তাহলে সেটা বেশীদিন সাসটেনেব্যাল হবে না বলেই আমার মনে হয়। আমি যদি সব কিছুই ডিটেলসে বলে দেব, তা হলে আমি তো অন্য কোন একটা কমার্শিয়াল ল্যাব থেকেই কাজ হাসিল করে নিতে পারব। অন্তত তারা আমার সাথে প্রফেশ্যানাল ব্যবহার এবং ডেলিভারী দেবে। তাই আমার মনে হয়, ইউনির্ভাসিটি বা ন্যাশানাল ল্যাব থেকে একটা প্রচেষ্টা দরকার ইন্ডাষ্ট্রিকে বোঝার। আমরা ইন্ডাষ্ট্রি থেকে চেষ্টা করব আমাদের চ্যালেঞ্জ গুলো বলার – কিন্তু ইউনির্ভাসিটি বা ল্যাব থেকে প্রপোজ্যাল আসুক আমাদের সাথে রিসার্চের! আমি দশটা প্রপোজ্যাল থেকে বেছে নিয়ে ফান্ড করব। একটা প্রতিযোগিতার মনোভাব আনতে হবে – মানে কম্পিট করে ফান্ডিং আনতে হবে নিজের ল্যাবে। ওরা দেবে, আর আমরা তারপর নেব – এটার পরিবর্তন দরকার।

    ৩) ল্যাব সেফটি

    কিছুদিন আগে আই আই এস সি-এর এরোস্পেস ডিপারমেন্টের প্রোপালশন ল্যাবে হাইড্রোজেন সিলিন্ডার ফেটে দুই গবেষক মারা যায়। খুবই দুঃখের ঘটনা – কিন্তু ফেটেছে বলে নয়, আমি অবাক হয়ে যাই যে না ফেটে এমন অনেক অনেক ল্যাব চলছে কি করে! বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ইউনিভার্সিটির বা ন্যাশানাল ল্যাব গুলিতে সেফটি সচেতনতা প্রায় শূন্য। উই আর রাইডিং আওয়ার লাক ইন মেনি মেনি কেসেস। আমাদের মত কোম্পানী থেকে কোন ল্যাবে প্রোজেক্ট শুরু করার আগে আমাদের সেই ল্যাবের সেফটি রিভিউ করতে হয়। আমার সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল আমার ছাত্র অবস্থায় – আই আই টি কানপুরে – জেনেরাল মোটরস থেকে এসেছে পাওডার মেটালার্জী ল্যাব ভিজিট করতে যেটা দোতলায়। এবার সেই বিদেশী আমাদের প্রফেসর করে জিজ্ঞেস করল – যে আচ্ছা এই ল্যাবের এমারজেন্সী এক্সিট কোথায়? আমার স্যার সেই প্রথম শুনল এমন প্রশ্ন। কিছু ক্ষণ ভেবে বললেন, ওই যে কাঁচের জানালাটা দেখছেন, এমারজেন্সী হলে আমার ছাত্ররা ওটা ভেঙে ঝাঁপ দেবে। সেই জেনেরাল মোটরসের লোক হাঁ – বলল, কিন্তু দোতলা থেকে ছাত্র ঝাঁপ দিলে ওরা আহত হয়ে যাবে তো! স্যার এবার খুব বিরক্ত – বললেন, আপনি চিন্তা করবেন না, ওই যে জানালার পাশের আমগাছটা আছে, সেটা দিয়ে নাহয় ওরা নেমে যাবে। ওই ল্যাবে আমি ১৪০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড টেম্পারেচারে ফার্নেসে সিন্টারিং করতাম হাইড্রোজেনের উপস্থিতিতে – জানতামই না কি হতে পারে এদিক ওদিক হলে। এখন হলে আর ওই ল্যাবে ভয়ে ঢুকতামই না! আমি দেখেছি প্যান্টের পকেটে করে জনতা হাইড্রোফ্লুরিক অ্যাসিডের প্লাস্টিক ছোট বোতল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ল্যাবে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস নিয়ে কাজ করছে কোন সেফটি মেজার না নিয়েই!

    ৩) টেকনো-ইকনমিক্স

    বহু বাঘা বাঘা ভারতীয় প্রোফেসরকে দেখেছি যাঁদের ইন্ডাষ্ট্রির টেকনো-ইকনোমিক্স কনসেপ্টটা নিয়ে কোন ধারণাই নেই! বিশাল ভালো আইডিয়া আছে – কিন্তু কোম্পানী স্পনসর করছে না রিসার্চ, এই নিয়ে আক্ষেপ দেখেছি অনেক। আরে প্রায় সব ইন্ডাষ্ট্রির কোম্পানীরই আল্টিমেট লক্ষ্য হল – ব্যবসা থেকে লাভ করা। তাই যদি লাভ করতে না পারে, এমন কনসেপ্ট নিয়ে উৎসাহ দেখাবে না ইন্ডাষ্ট্রি সেটা খুব একটা আশ্চর্য্যে নয়। আমি আগে তেল ব্যবসা নিয়ে অন্য জায়গায় লিখেছি – এই যে পৃথিবীতে তেল শেষ হয়ে যাচ্ছে এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। আমরা মাটির নীচের থেকে মাত্র ৪০% মত তেল তুলতে পেরেছি – বাকি ৬০% মাটির নীচেই রয়ে গ্যাছে কারণ ওটা তোলা ইকনমিক নয়! এমন উদাহরণ প্রত্যেক ইন্ডাষ্ট্রিতেই আছে। তাই যারা ইন্ডাষ্ট্রির সাথে কাজ করতে চান এমন রিসার্চারদের ভালো হবে তাঁরা যদি সেই ইন্ডাষ্ট্রি টেকনো-ইকনমিস্কটা ভালো করে বোঝার চেষ্টা করেন। এটা অবশ্য শুধু ভারতের সমস্যা নয় – প্রায় গোটা পৃথিবীতেই একই গল্প। ইন্ডাষ্ট্রিকে রিটার্ণ অন ইনভেসমেন্ট পেতে হবে - তাই তারা যে কোন প্রোজেক্ট নামাবার আগে আঁক কষে - "ভ্যালু ইনভেসমেন্ট রেটিও" (VIR), "নেট প্রেজেন্ট ভ্যালু" (NPV) এই সব হাবিজাবি জিনিস নিয়ে। সব দিক থেকে মাল উতরালে তবেই টাকা ঢালবে।

    8) উপস্থাপন এবং অ্যাটিচুড

    লিখতে খারাপ লাগছে – কিন্তু ভারতের প্রিমিয়ার ইনস্টিটিউট গুলির সিনিয়ার প্রফেসর বা রিসার্চারদের অ্যাটিচুড বেশ বাজে। আপনি যদি কোন প্রোজেক্টের কাছে দেখা করতে যান, তা হলে যেন মনে হবে আপনার সাথে দেখা করে আপনাকে কৃতার্থ করে দিয়েছে! অবশ্যি ব্যতিক্রম আছে – কিন্তু মেজরিটি এমন। এমনকি মিটিং-তেও খুব নাক উঁচু ভাব। আসলে সিনিয়র প্রোফেসরদের তো কোন ইনসেন্টিভ ই নেই ইন্ডাষ্ট্রির সাথে কাজ করার জন্য! এটা পালটানো দরকার। দ্বিতীয়ত, আমাদের অনেক ব্রিলিয়ান্ট রিসার্চার একটা ভালো করে স্টোরি বলতে পারে না প্রেজেন্টেশনের সময়। রিসার্চ ভালোভাবে প্রেজেন্ট করার গুরুত্ব ভারতে আন্ডার-এষ্টিমেটেড! কনফারেন্সে এক ভারতীয় প্রোফেসর এবং এক বিদেশী প্রোফেসরের প্রেজেন্টেশনের মধ্যে তুলনা করলেই অনেক সময় চোখে পড়ে ব্যাপারটা। বাইরের সাথে কম্পিট করে প্রোজেক্ট আনতে গেলে ভালো করে কাজ প্রেজেন্ট করতে হবে। কারণ প্রোজেক্ট ফান্ডিং এর ডিসিসন যাঁরা নেন, তারা অনেকে সময় ওই সাবজেক্ট গভীরে খুব ভালো ভাবে নাও বুঝতে পারেন। কিন্তু তাঁরা এটা বেশ বোঝেন যে তাদের বিজনেস এর থেকে কি উপকার পেতে পারে।

    ৫) ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও ইক্যুইপমেন্ট

    ভালো রিসার্চের জন্য অবশ্যই এই দুটি আবশ্যিক শর্ত – তা সে আপনি ব্লু-স্কাই আর ডাইরেক্ট ইন্ড্রাষ্ট্রি প্রবলেম, যাই নিয়েই নাড়াচাড়া করুণ না কেন। সেই জন্য আমি আর এটা নিয়ে বেশী কিছু লিখছি না – কারণ আমি এখানে ধরে নিয়েছি যে রিসার্চ ল্যাবে যা জিনিসপত্র আছে সেই দিয়েই আমি প্রোজেক্ট নামাতে পারব। অর্থাৎ, আমি সেটা নিয়েই আলোচনা করতে চেয়েছি, যেটা আমাদের কন্ট্রোলে। ফাণ্ডিং অনেক সময় কেবল মাত্র নিজের হাতে থাকে না।

    আর একটা জিনিস আমি ধরি নি - বড় বড় কর্পোরেট কিছু কিছু টাকা ঢালে 'স্যোসাল রেসপন্সেবেলিটি', যে দেশে ল্যাব বানিয়েছে তাদের আসে পাশের ইকোসিষ্টেমে এর সব এর জন্য। অ্যাকাডেমিয়ার অনেক লোক ভাবেন - "এই তো আমরা বড় ইন্ডাষ্ট্রির সাথে কোলাবোরেশনে প্রো্যেক্ট করছি, কে বলে আমাদের অ্যাপ্লায়েড দিক ভালো নয়?" তাঁরা অনেক সময় টেরও পান না - ওই প্রোজেক্ট এর ফান্ডিংটা চ্যারিটি মানি টাইপের। সেই রিসার্চ কাজে লাগাবার জন্য ইন্ডাষ্ট্রির বিশেষ কোন মাথাব্যাথ্যা থাকে না!

    ইন্ডাষ্ট্রি – ইউনির্ভাসিটি মিথোজীবিতা জরুরী। তবে ভারতে আমাদের অনেকটা পথ পেরোতে হবে এখনো এই সম্পর্কের ফুল-পোটেনশিয়াল পেতে হলে।
  • সুকি | ***:*** | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:১৪380558
  • এই সব বিষয় সাধারণত বিপ-দার এলাকা। তবুও আমাদের মত পাতি পাবলিকদেরও তো কিছু মতামত থাকে - সেটাই লিখে ফেললাম।
  • T | ***:*** | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:১০380559
  • সুকির সমস্ত পয়েন্টেই একমত। অভিজ্ঞতাও অধিকাংশই মিলে যাচ্চে।
  • amit | ***:*** | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:৪৯380560
  • সুকির সাথে একমত। তিন নম্বর পয়েন্ট টাতে একটু বলার আছে।
    সেফটি সচেনতা শুধু ল্যাবে নয়, আমার নিজের অভিজ্ঞতা হলো ইন্ডিয়াতে অয়েল এন্ড গ্যাস ইন্ডাস্ট্রি লেভেল এও খুব ই বাজে, অন্তত সরকারি পিএসইউ গুলোতে। আরো খারাপ হলো কোনো এক্সিডেন্ট হলে সরকারি স্তরে সেটা চেপে যাওয়ার মানিসিকতা। আমার নিজের দেখা, একই ধরণের এক্সিডেন্ট পর পর হয়েছে রিফাইনারি তে, কারণ আগের এক্সিডেন্ট এর রূট কাউসে এনালাইসিস অদৌ করাই হয়নি বা চেপে যাওয়া হয়েছে কাওকে বাঁচাতে। লোকের জানাই ছিলোনা কিভাবে এড়ানো যায়। আরো যেটা হয় সেফটি রেকর্ড বাঁচাতে, সেটা হলো কন্ট্রাক্টর লেবর দের কোনো এক্সিডেন্ট হলে সেটা কোম্পানি রেকর্ড এ দেখানোই হয়না। তারা জাস্ট এক্সিস্ট করে না।

    ইন্ডিয়াতে ১৯৯০ থেকে ২০০০, এই পিরিয়ড এ অন্তত তিনটে মেজর স্কেল এক্সিডেন্ট হয়েছে যেগুলোতে ডেথ কাউন্ট 20- এর বেশি (ভোপাল গ্যাস ডিসাস্টার নয়, ওটা আরো আগের , ১৯৮৪ এ)। দুর্ভাগ্যক্রমে তার মধ্যে একটা প্রায় আমার চোখের সামনে ঘটে। কিন্তু আজকে কোনো ইন্টারন্যাশনাল লেসন্স learnt ডাটাবেস এ সেগুলোর ডিটেলস পাওয়া যায়না। পাওয়ারফুল ব্যুরোক্রেসি সব ঢেকে দেয়।

    আমার দেখা ঘটনাটি যার সময়ে ঘটে, তার গায়ে বিন্দুমাত্র আঁচ ও পড়েনি। তিনি প্রমোশন পেয়ে টপ মোস্ট লেভেল এ পৌঁছন এবং retire করে রিলায়েন্স জামনগরে এডভিসর হিসেবে জয়েন করেন। বোঝাই যায় কতটা ওপরে তার টিকি বাধা ছিল। আজকে যখন ডিপ ওয়াটার হরাইজন নিয়ে মুভি দেখি, আমার সেই ঘটনাটা মনে পড়ে।
  • সুকি | ***:*** | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:৫১380561
  • অমিতাভদা,
    খুব খাঁটি কথা বলেছ। ভারতে ইন্ডাষ্ট্রিতে সেফটি নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভালো! বেসিক এফর্টটুকু দিতে চায় না কেউ!
  • রিভু | ***:*** | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:০০380562
  • ভালো লিখেছেন। আচ্ছা ভারতে কি প্রজেক্ট থেকে পিআই রা টাকা পয়সা পান? কি রকম পার্সেন্টে? ইন্ডাস্ট্রি / গভর্নমেন্ট এই ব্যাপারে কি কিছু হেরফের হয়?
  • pi | ***:*** | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৩৩380563
  • পি আই কী টাকা পাবেন? মানে গ্রান্টের টাকা তো প্রোজেক্ট স্টাফের আর রিসার্চের জন্য থাকে। সরকারি বলছি। সরকারি চাকরি করলে নিতে পারার কথাও না মন্র হয়।
    আয়ুশের গ্রান্ট স্কিমে কিছু টাকা দেওয়ার প্রভিশন দেখেছিলাম মনে হয়, সেও বোধহয় ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিসার্চার হলে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন