এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অর্জুন অভিষেক | ***:*** | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:১৫377860
  • সরলা দেবী চৌধুরাণীঃ ভারতীয় নারীর স্বাধীন আইডেন্টিটির প্রথম প্রতীক

    উনিশ শতকের একদম প্রথম থেকে বাংলার ইতিহাসকে দেখলে দেখা যাবে একটা জাতির অস্মিতা বা আইডেন্টিটি গড়ে ওঠারও সূচনা অধ্যায়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সেই অস্মিতায় ঔপনিবেশিকতার প্রভাব অনস্বীকার্য। নবজাগরণ হয়েছিল কি হয়নি, সেই সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করেই ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছিল আমাদের জাতীয় আইডেন্টিটি। স্বাভাবিক নিয়মে এই সংস্কৃতির ধারক ছিলেন পুরুষ এবং কিছুকাল পরে তাদের ইচ্ছেয় এবং হাত ধরেই বেরিয়ে এসেছিল মেয়েরা। পুরুষদের সাহচর্যে ও পরিচয়ে তৈরি হয়েছিল তাদেরও পরিচয়। সেই মেয়েরাই এগিয়ে এসে তৈরি করেছিলেন মেয়েদের পথ চলার পথটি। মেয়েদের এই নিজস্ব আইডেন্টিটি তৈরির কাজে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা এক সবিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। অবশ্যই সে পরিবারের পুরুষদের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতায়। তারা স্বামীর সঙ্গে ময়দানে ঘোড়া ছোটাল, স্বামীর কর্মস্থলে গেল, কালাপানি পেরিয়ে বিলেতে পৌঁছল, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের নিজেদের পোশাক তৈরি করল, রান্নার বই লেখা, পত্রিকা সম্পাদনা, সাহিত্যচর্চা, সঙ্গীত, নৃত্য, নাট্য প্রায় সবেতেই নিজেদের মেলে ছড়িয়ে দিয়েছিল। নারী সম্পর্কে মূল্যবোধের চূড়ান্ত সেই অবক্ষয়ের দিনে যখন সে শুধুই পুরুষদের ভোগ সামগ্রী ও ভাতকাপড় দিয়ে পোষা জীব, সেই সময়ে সমাজে মেয়েদের এই স্বতন্ত্র পরিচয় তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করেছিল । তৈরি হয়েছিল নিজেদের স্পেস। কিন্তু তাদের পরিচয় বলয় স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধূ, নাতনি ইত্যকার পারিবারিক পরিচয়ের উর্ধে যেতে পারেনি। এই পারিবারিক নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই একটা সীমিত স্পেস তৈরি করে চলছিল তাদের জীবন। তার কারণ মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাদের পেশা নিয়ে নারী স্বাধীনতা আন্দোলন রত পুরুষেরাও সেই সময়ে চিন্তা করেননি। জীবনচর্যার নান্দনিক সৌন্দর্যের দিকটা চর্চার মধ্যেই নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিলেন।

    এই নারী স্বাধীনতার প্রাথমিক পর্যায়ে এবং ঠাকুরবাড়িরই একজন হয়ে নিজস্ব বৈচিত্রে এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব হলেন সরলা দেবী চৌধুরানী। তিনি ওই অভিজাত পারিবারিক বেষ্টনীতে জন্মে, প্রতিপালিত হয়েও সেই পারিবারিক সীমারেখার বাইরে গিয়ে নিজের আলাদা আইডেন্টিটি সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন।তার পরিচয়ও ওই পরিবারের সঙ্গে বিশেষ ভাবে যুক্ত হয়েও, উনি নিজেকে ভেঙে, গড়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। চেহারায়, পোশাকে, ব্যক্তিত্বে এবং তার কাজে সকলের থেকে ব্যতিক্রমী ছিলেন। স্বাধীন জীবিকা, রাজনীতিতে তিনি নিজেকে ওতপ্রেতভাবে জড়িয়ে দিয়েছিলেন যে সব ক্ষেত্রে মহিলারা তখনও যাবার কথা ভাবেনও নি। আর সেসবের জন্যে তাকে কারো স্ত্রী বা অন্য পরিচয়ের বিশেষ প্রয়োজন হয়নি।

    সেই সঙ্গে বাংলা তো বটেই সরলাকে ভারতীয় নারীর স্বাধীন অস্মিতার প্রথম প্রতীক বললেও অত্যুক্তি হবেনা। তিনি আমাদের চোখে পড়েছেন কিন্তু তার রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আমাদের চোখ এড়িয়ে গেছে। এবং একটি অতি বিখ্যাত পরিবারে জন্মানোর দরুন আরো অনেকের মাঝে, যার অধিকাংশই কৃতি পুরুষ, তার ভূমিকা কখনই প্রকট হয়ে ওঠেনি।
    সরলা দেবী বা সরলা ঘোষাল বলাই ভাল উনবিংশ ও বিংশ শতকের কালপর্বে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ভূমিকা নিয়েছিলেন। সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সে বৈপ্লবিক বললে ভুল হবেনা।

    জন্মেছিলেন মামাবাড়ি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে আজকের দিনে আজ থেকে ঠিক ১৪৬ বছর আগে (৯ সেপ্টেম্বর ১৮৭২)। মা স্বর্ণকুমারী ছিলেন সে যুগের সফলতম লেখিকাদের একজন। বাবা জানকীনাথ ঘোষালও ছিলেন খুব স্বাধীন ব্যক্তিত্ব। কৃষ্ণনগরের জয়রামপুরের এক ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন জানকীনাথ। দেবেন্দ্রনাথ তাকে জামাতা রূপে গ্রহণ করতে ইচ্ছে প্রকাশ করলে তিনি বাড়ির সম্পূর্ণ অমতে রাজী হয়ে যান। নিজে পিরালী না হয়ে পিরালী ব্রাহ্মণ বংশে বিবাহ করবার দরুন তাকে পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্ছিত হতে হয়। কিছুদিন ব্যবসা করে তিনি তখনকার বড়লোক শ্বশুরের জামাতার মত বিলেতে গিয়ে ‘বার-অ্যাট-ল’ হয়ে ফেরেন এবং আইনী পেশায় পসার বাড়লেই, ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য জামাতাদের মত শ্বশুর গৃহে না থেকে নিজে বাড়ি নির্মাণ করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পৃথকভাবে বসবাস শুরু করেন। জানকীনাথ জাতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ‘মহাত্মা’ হবার অনেক আগে, তার প্রাথমিক কলকাতা বাস পর্বের ঠিকানা ছিল ঘোষাল বাড়ি।

    সরলার ছোটবেলা জোড়াসাঁকোয় মামাবাড়িতে আরও অনেক মামাতো, মাসতুতো ভাই, বোনেদের মত এক উৎকৃষ্ট সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক পরিবেশে। সকলের প্রিয় ‘রবি মামা’ বাড়ির সব সৃষ্টিশীলতার কেন্দ্রবিন্দু । বাড়ি থেকে সম্পাদিত হচ্ছে গোটা তিন, চার পত্রিকা, সেসব সম্পাদনার দায়িত্ব তার দুই মামা, এক মামী ও মায়ের। মেজমামা প্রথম ভারতীয় সিবিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন নারী স্বাধীনতার অন্যতম পথিকৃৎ। বহির্জগতে মেয়েদের অবাদ বিচরণের স্বপ্ন দেখতেন। মেজমামী জ্ঞানদানন্দিনী সেই স্বপ্ন অনেকটা পূরণ করেছিলেন, তৈরি করছিলেন মেয়েদের পোশাক, বিন্যাস। চিন্তা করে দেখলে সেই সময়ে ঠাকুরবাড়ির সবচেয়ে Accomplished মহিলা সরলার জননী স্বর্ণকুমারী। বিখ্যাত লেখিকা, সাহিত্যের প্রায় সবক্ষেত্রে বিচরণ করেছেন, আত্মমগ্ন হয়ে অক্লান্ত ভাবে লেখালেখি করেতেন। তাই শিশু সন্তানদের দিকে ফিরে তাকাবার সময় ও ইচ্ছে কোনোটাই তার ছিল না। বুক ভরা অভিমান নিয়ে সরলার ছেলেবেলা কেটেছিল। অন্য বাড়ি থেকে আসা তার মামীরা সন্তানদের স্নেহ ভালবাসায় আঁকড়ে রাখত, কিন্তু তার মা সেসবের ধার দিয়েও যাননি। বাড়িতে দাসীদের কাছেই দায়িত্ব ছিল তাদের চার ভাইবোনের। সরলার নিজের কথায় ঠাকুরবাড়ির রূপের মাপকাঠিতে তিনি ছিলেন অনেকটা পিছিয়ে। তাই কারো নজরে পড়েননি তিনি। প্রথম নজরে পড়লেন তেরো বছর বয়েসে বেথুন থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে যখন বেথুন কলেজে ঢুকলেন। ওই পরিবারে মেয়েদের এই প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রেও তিনি ব্যতিক্রম। এন্ট্রান্সে ইতিহাসে তিনি মেয়েদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন। ইতিহাসের প্রশ্ন পত্রে মেকলের লেখা ‘লর্ড ক্লাইভ’ বইয়ের ওপর ক্লাইভের বাংলা বিজয় সম্বন্ধে একটা প্রশ্ন এসেছিল। সরলা, মেকলের বাঙালি চরিত্র বর্ণনায় যে দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছিল তা তুলে ধরে তীব্র প্রতিবাদ করে এ ব্যাপারে তার বিপরীত মতামত সুন্দর যুক্তি ও তথ্য দিয়ে সাজিয়ে উত্তর লিখেছিল। ওই বালিকা বয়েসেই স্বাধীন চিন্তার পরিচয় দিয়েছিল সরলা। এর পরে বেথুন কলেজ থেকে ইংরেজিতে সাম্মানিক নিয়ে বি এ পাশ করলেন মাত্র আঠেরো বছর বয়েসে। পেলেন পদ্মাবতী স্বর্ণপদক। মেয়েদের মধ্যে এই পদক তিনিই প্রথম পেলেন।
    এর পর থেকেই একটু একটু করে নিজেকে মেলে ধরলেন সরলা। সঙ্গে ছিল যেমন জেদ তেমনি খামখেয়ালিপনা। আর্টস নিয়ে পড়লেন। কলেজে রেগুলার সায়েন্স কোর্সে মেয়েরা পড়ত না। সরলা রোজ ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনে সান্ধ্য ফিজিক্স ক্লাসে যাওয়া শুরু করলেন, সঙ্গে অগ্রজ জ্যোৎস্নানাথ ঘোষাল ও মামাতো দাদা সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

    সরলার সবচেয়ে বড় উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব জীবিকা অর্জনের কথা ভাবা। এর আগে মেয়েরা যতই বিলেতে যান, গাড়ি চালান, লেখালেখি করুন আর কঠিন পরীক্ষায় বসার কথা ভাবুন, জীবিকা অর্জনের কথা তাদের চিন্তায় স্থান পেত না। ঠাকুরবাড়ির সর্বময় কর্তা অটোক্র্যাট দেবেন্দ্রনাথও সরলার স্বাধীন সত্ত্বায় বাধা দিতে পারেননি। দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের সময় সরলার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় মহীশূরের দেওয়ান নরসিংহ আয়েঙ্গারের। সরলার ব্যক্তিত্ব ও ভাষা ব্যুৎপত্তিতে মুগ্ধ হয়ে তিনি তাকে মহীশূরের মহারানী গার্লস কলেজে সুপারিনটেনডেন্টের পদে আহ্বান জানান। সরলা সাগ্রহে গ্রহণ করেন সেই চাকরী। বাধা কি আসেনি? নিশ্চয় এসেছিল। ঠাকুরবাড়িতেও অতদুরে চাকরি করতে যাওয়া নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিল। গ্রাহ্য করেননি কিছু কোনোদিন । যেটা করতে চেয়েছেন, সেটাই করেছেন।
    মায়ের সম্পাদিত ‘ভারতী’ পত্রিকার সঙ্গে সরলা ও দিদি হিরন্ময়ী জুড়ে ছিলেন সেই বালিকা বয়েস থেকে। তারপর এল পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব। ‘ভারতী’ যে শুধুই ঠাকুরবাড়ির পত্রিকা হয়ে থাকেনি তার কৃতিত্ব সরলার। ‘ভারতী’তেই আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তার ‘বড়দিদি’ গল্পের মাধ্যমে। লেখকদের পারিশ্রমিক দেবার প্রচলনও তিনি শুরু করেছিলেন। ‘ভারতী’ র জন্যে প্রায় জোর করে রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিলেন ‘চিরকুমার সভা’। ‘ভারতী’ তার এতটাই ভালবাসার জায়গা ছিল যে পরে পঞ্জাবে চলে গেলেও তার সম্পাদনা ও পরিচালনের জন্যে তিনি কলকাতায় ছুটে আসতেন।

    বাড়ীর সব মেয়েদের মত সরলারও ছোটবেলায় পিয়ানো বাজাতে লিখেছিলেন। পিয়ানোয় চমৎকার সব Piece রচনা করতেন। সেই ভাবেই মামা রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গানে সুর দেন সরলা। ‘সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে’ গানটার পিয়ানো রুপ দিয়েছিলেন তিনি। খুঁতখুঁতে রবীন্দ্রনাথও খুসী হয়ে ভাগ্নীকে ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’র পিয়ানো রুপ দিতে বলেন। তখন সুফি গান মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজে কতটা প্রচলিত ছিল? দাদামশায়কে হাফিজের একটি
    প্রিয় সুফি কবিতায় সুর দিয়েও মুগ্ধ করেন। গান ও সুর সংগ্রহ একটা সময়ে নেশার মত পেয়ে বসেছিল তাকে। বাংলার বাউল গান, মহীশূরে থাকতে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকী সুর একটা খাতায় লিখে তিনি রবীন্দ্রনাথকে উপহার দেন এবং তার থেকে রবীন্দ্রনাথ অনেক গানে সুর দিয়েছিলেন। ‘বন্দেমাতরম’ এর সুরও মামা, ভাগ্নী দুজনে মিলে বসিয়েছিলেন। এছাড়াও নানা দেশাত্ববোধক গান সরলা লিখে সুর দিয়েছেন। ১৯০১ র কংগ্রেস অধিবেশনের অনুষ্ঠান তার গান দিয়েই শুরু হয়েছিল। গানের প্রতিভা খুঁজে বেড়াতেন সরলা। অমিয়া ঠাকুর ও ঢাকার রানু সোম (প্রতিভা বসু) কে আবিষ্কার করে রবীন্দ্রনাথের কাছে হাজির করেন তিনিই।

    সরলার কাজের ব্যপ্তি বেশ বিস্ময় জাগায় এবং খুব ছোট পরিসরে তাকে নিয়ে লেখা বেশ কঠিন। শিল্প, সাহিত্যের নানা দিকে মহিলারা তখন নিজেদের মেলে ধরলেও, সক্রিয় রাজনীতিতে তাদের দেখা যেত না। স্বদেশীয়ানায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন সরলা এবং ১৯০৫ বঙ্গভঙ্গের পূর্বে। বাঙালী যুবকদের একত্রিত করে শুরু করলেন ‘বীরাষ্টমী’ ব্রত, পরের বছর ‘শিবাজী উৎসব’ ‘প্রতাপাদিত্য’ উৎসব। সাহসিকতা ও তেজস্বিতা ছিল তার খুব পছন্দের। স্বদেশী বস্ত্র বিক্রির জন্যে মানিকতলায় খুললেন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। এই হস্তশিল্পের কাজে নিয়োগ করলেন দুঃস্থ বিধবা মহিলাদের। পরবর্তীকালে দুঃস্থ বাঙালি মেয়েদের অর্থ রোজগারের জন্যে তিনি কৃষ্ণভামিনী দাসের প্রতিষ্ঠিত ‘ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল’র সঙ্গেও বিশেষ ভাবে যুক্ত হন। তার এই স্বদেশী কর্মকাণ্ড কেন্দ্র করেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথের অন্যতম তীব্র সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন সরলা। গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ যখন সমর্থন করেননি, সরলা তখন ছিলেন ওই আন্দোলনে গান্ধীর ডান হাত। অনেক পরে সরলার শান্তিনিকেতনে অতিথি রূপে আগমনে রবীন্দ্রনাথ সন্ত্রস্ত ছিলেন।

    সরলার কাজে বিবেকানন্দও মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং কিছুকাল বিবেকানন্দ ও নিবেদিতার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে উঠেছিলেন সরলা। এর আগে ঠাকুর পরিবারের কেউ দক্ষিণেশ্বর, বেলুড়ের পথ মাড়াননি। ভাবেনওনি। সরলা সব কিছুতেই ব্যতিক্রমী। যা তাকে আকর্ষণ করবে, তিনি তাকেই গ্রহণ করবেন আবার উৎসাহ হারালেই বর্জন করতে সময় লাগত না। বিবেকানন্দ ও নিবেদিতার বিদেশ সফরে, নিবেদিতা তাকে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ সম্পর্কে পরিহাসচ্ছলে একটা উক্তি এই সম্পর্কের সমাপতন ঘটায়। সরলাও ফিরে তাকাননি।

    যে যুগে মেয়েদের ষোল বছর পূর্ণ হবার আগেই বিবাহ হয়ে যেত, সেই সময়ে সরলা বিবাহ করেন তেত্রিশ বছর বয়েসে। তার পাণিপ্রার্থী সংখ্যাও বেশ কৌতূহলের। গোপালকৃষ্ণ গোখলে নাকি তার একজন suitor ছিলেন। দুজনেই দুজনার অ্যাডমায়ারার ছিলেন। লেখক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরলার বিবাহ প্রায় ঠিক হয়েও প্রভাতকুমারের মায়ের তীব্র আপত্তিতে বিবাহ বন্ধ হয়। সরলার সঙ্গে বিবাহ হল পঞ্জাবের ‘হিন্দুস্থান’ পত্রিকার সম্পাদক ও সমাজকর্মী রামভজ দত্ত চৌধুরীর। এ ছিল আন্তঃপ্রাদেশিক বিবাহ। রামভজকে বর্ণনা করা হয় ‘Ultra Indian nationalist’ বলে। বিবাহের পরে লাহোরে গিয়ে সরলা নিজেকে স্বদেশী আন্দোলনে আরও মেলে ধরেন। তাদের এক পুত্র দীপক।

    ১৯২১ এ অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে গান্ধী পঞ্জাবে এলে সরলা ছিলেন তার পঞ্জাব সফরের সফরসঙ্গী। শুধু সফরসঙ্গীই নয়, দুজনেই ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন এবং এই সম্পর্ক গান্ধী পরিবার ও আশ্রমে তীব্র বিতর্ক শুরু করে, এই দাবী স্বয়ং মহাত্মার পৌত্র সুলেখক রাজমোহন গান্ধীর। গান্ধী দাবী করেছিলেন সরলার সঙ্গে তার ‘spiritual marriage’ হয়ে গেছে।

    ১৯২৩ এ মুসৌরীতে স্বামীর মৃত্যুর পরে সরলা সপুত্রক কিছুদিন আমেদাবাদে গান্ধী আশ্রমে বসবাসও করেন। পরে কলকাতায় চলে আসেন। স্বাধীন ভাবে কাজের ব্যপ্তি না পেলে সরলা কোথাও মন বসাতে পারতেন না। রাজনৈতিকভাবে প্রথম পর্বে সশস্ত্র আন্দোলনের পূর্ণ সমর্থক সরলা, গান্ধীর অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। সেকি অনেকটা গান্ধীর প্রতি তার ব্যক্তিগত অনুরাগ থেকে? তবে আরও কিছু পরে এই অহিংস নীতি তাকে নিরাশ করেছিল। রাজনীতিতেই উৎসাহ হারান। হঠাৎই এই কর্মময়ীর জীবনে আসে ধর্মচর্চা ও অধ্যাত্ব সাধনা। বিজয়কৃষ্ণ দেববর্মা নামক এক গুরুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে দীক্ষা নেন। হয়ত ক্লান্তি, একাকীত্ব ও ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের টানাপোড়েন তার মধ্যে নৈরাশ্য গ্রাস করেছিল।

    প্রবল প্রাণপ্রাচুর্য নিয়ে সবকাজে passionately মেতে যাওয়া সরলাকে তার শেষের আট বছর আর মেলানো যায়না।

    সারাজীবন অক্লান্ত ভাবে লেখালেখিও করেছেন তিনি। নিজের পত্রিকা ‘ভারতী’ ‘মাসিক বসুমতী’, ‘প্রবাসী’ ‘মডার্ন রিভিউ’ ‘হিন্দুস্তান’ এ এবং ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে বেরিয়েছিল তার আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’। ‘জীবনের ঝরাপাতা’ সাহিত্যিক মহলেও সমাদৃত হয়েছিল।

    নিজস্ব অস্মিতা ও স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের জোরে মহিলাদের সমাজে প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

    শুনে অনেকে হাসতেও পারেন কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী থেকে জয়ললিতা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি মায়াবতী, সরলা দেবী চৌধুরানী তাদের প্রথম প্রতীক।
  • এলেবেলে | ***:*** | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:৩৫377866
  • তথ্যবহুল, সুলিখিত এবং সুখপাঠ্য। একটানে পড়ে ফেললাম। শুধু সরলা-বিবেকানন্দ পর্বে কিছু তথ্যভ্রান্তি থেকে গেছে।

    ২৪ এপ্রিল ১৮৯৭ বিবেকানন্দ সরলা দেবীকে লিখেছিলেন ‘যদি আপনার ন্যায় তেজস্বিনী বিদুষী বেদান্তজ্ঞা কেউ এই সময় ইংলণ্ডে যান, আমি নিশ্চিত বলিতেছি, এক এক বৎসরে অন্ততঃ দশ হাজার নরনারী ভারতের ধর্ম গ্রহণ করিয়া কৃতার্থ হইবে। ... যদি আপনার ন্যায় কেউ যান তো ইংলন্ড তোলপাড় হইয়া যাইতে পারে, আমেরিকা কা কথা’। এই উক্তির ঠিক দু’বছর পরে সরলা ঘোষাল লিখলেন স্বামীজিরা রামকৃষ্ণের ভজনা বন্ধ করার শর্তে তিনি নিজে, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ব্রাহ্মসমাজের আরও অনেকেই বিবেকানন্দের সাথে যোগ দিতে পারেন।

    ১৮৯৯ সালের ৮ এপ্রিল নিবেদিতা মিস জোসেফিন ম্যাকলাউডকে জানালেন — Then he (Vivekanada) told me of a letter from Sarola saying that she and Suren regarded these things in the right light - but if he would only sweep away the worship of Ramakrishna all the others would join him too — for they loved their country and would be glad to help us all (Letters, Vol 1, p. 108). কিন্তু সরলা-সুরেন্দ্রর প্রস্তাবের সঙ্গে আপস করতে বিবেকানন্দ আদপেই রাজি ছিলেন না। তীব্র বিদ্রূপবানে বিদ্ধ করে বিবেকানন্দ ঐ বছরের ১৬ই এপ্রিল সরলাকে লিখলেন — আপনার পত্রে সাতিশয় আনন্দ লাভ করিলাম। যদি আমার বা আমার গুরুভ্রাতাদিগের কোনও একটি বিশেষ আদরের বস্তু ত্যাগ করিলে অনেক শুদ্ধসত্ত্ব এবং যথার্থ স্বদেশহিতৈষী মহাত্মা আমাদের কার্যে সহায় হন, তাহা হইলে সে ত্যাগে আমাদের মুহূর্তমাত্র বিলম্ব হইবে না বা এক ফোঁটাও চক্ষের জল পড়িবে না জানিবেন এবং কার্যকালে দেখিবেন। তবে এতদিন কাহাকেও তো দেখি নাই, সে প্রকার সহায়তায় অগ্রসর। দু-এক জন আমাদের hobby-র (খেয়ালের) জায়গায় তাঁহাদের hobby বসাইতে চাহিয়াছেন, এই পর্যন্ত। যদি যথার্থ স্বদেশের বা মনুষ্যকুলের কল্যাণ হয়, শ্রীগুরুর পূজা ছাড়া কি কথা, কোন উৎকট পাপ করিয়া খ্রীষ্টীয়ানদের অনন্ত নরক-ভোগ করিতেও প্রস্তুত আছি, জানিবেন। তবে মানুষ দেখিতে দেখিতে বৃদ্ধ হতে চলিলাম। এ সংসার বড়ই কঠিন স্থান। গ্রীক দার্শনিকের লণ্ঠন হাতে করিয়া অনেক দিন হইতেই বেড়াইতেছি।
    … তারপর যে-সকল দেশহিতৈষী মহাত্মা গুরুপূজাটি ছাড়লেই আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন, তাঁদের সম্বন্ধেও আমার এতটুকু খুঁত আছে। বলি, এ দেশের জন্য বুক ধড়ফড়, কলিজা ছেঁড়-ছেঁড়, প্রাণ যায়-যায়, কণ্ঠে ঘড়-ঘড় ইত্যাদি — আর একটি ঠাকুরেই সব বন্ধ করে দিলে?
    এই যে প্রবল তরঙ্গশালিনী নদী, যার বেগে পাহাড়-পর্বত যেন ভেসে যায়, একটি ঠাকুরে একেবারে হিমালয়ে ফিরিয় দিলে! বলি, ও-রকম দেশ-হিতৈষিতাতে কি বড় কাজ হবে মনে করেন, বা ও-রকম সহায়তায় বড় বিশেষ উপকার হতে পারে? আপনারা জানেন, আমি তো কিছুই বুঝিতে পারি না। তৃষ্ণার্তের এত জলের বিচার, ক্ষুধায় মৃতপ্রায়ের এত অন্নবিচার, এত নাক সিটকানো? কে জানে কার কি গতিমতি! আমার যেন মনে হয়, ও-সব লোক গ্লাসকেসের ভিতর ভাল; কাজের সময় যত ওরা পিছনে থাকে, ততই কল্যাণ।
    … আমি তো জানি। তবে আমার সব ভুল হতে পারে, ঠাকুরের আঁটিটি গলায় আটকে যদি সব মারা যায় তো না হয় আঁটিটি ছাড়িয়া দেওয়া যায়। যাহা হউক, এ সম্বন্ধে আপনাদের সঙ্গে অনেক কথা কহিবার অত্যন্ত আকাঙ্ক্ষা রহিল।
    এ সকল কথা কহিবার জন্য রোগ, শোক, মৃত্যু সকলেই আমায় এ পর্যন্ত সময় দিয়াছেন, বিশ্বাস — এখনও দিবেন (৪২৫ সংখ্যক পত্র, বাণী ও রচনা, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৩৯)।

    বলা বাহুল্য, সেই যে তার ছিঁড়ে গিয়েছিল বিবেকানন্দের জীবদ্দশায় তা আর জোড়া লাগেনি।

    বছর পাঁচেক আগে গাঙচিল থেকে বেরিয়েছিল পার্থজিৎ গঙ্গোপাধায়ের 'ঠাকুরবাড়ির সরলা ও স্বামী বিবেকানন্দ'। আগ্রহীরা বইটা দেখতে পারেন।
  • অর্জুন অভিষেক | ***:*** | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৫377867
  • ধন্যবাদ। অত্যন্ত মূল্যবান তথ্য সংযোজন।

    পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় খুব ভাল কাজ করছেন। অনেক বিষয়ের ওপর সম্পাদনা করেছেন, লিখেছেন।

    সরলা দেবীর ব্যাপারে যে বিষয়টা আমায় ভাবিয়েছিল তা হল নারী স্বাধীনতার মধ্যে মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও জীবিকা অর্জনের দিকটা তার কাছে গুরুত্ব পেয়েছিল এবং মহিলা হয়েও সম্পূর্ণ ভাবে 'আপন খেয়ালে চলেন রাজা' মনভাবে জীবন কাটানো। নিজেকে ঠাকুর বাড়ির গন্ডি থেকে বের করে বহির্বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করাও কৃতিত্বের দাবী রাখে।

    আর এ ক্ষেত্রে তিনি সরোজিনী নাইডুর পূর্বসুরী।

    শ্রীমতী নাইডুর চেয়ে তার অবদান বেশী।
  • সমুদ্র সেনগুপ্ত | ***:*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২২:২৫377868
  • সরলা দেবী ও বিবেকানন্দ নিয়ে খুব সুন্দর আলোচনা রয়েছে তুহীনশুভ্র ভট্যাচার্জ এর "রবীন্দ্রনাথ চাইলেও বিবেকানন্দ মেসেন নি" বই টা তে (কারিগর প্রকাশনা)।

    সরলাদেবী ললিত লবঙ্গ লতিকা মার্কা বাঙালি যুবক দের শরীর চর্চা এর জন্য ব্যায়ামাগার স্থাপন করেন। আবার পরে ছিঁচ কাঁদুনে, "আমার কি হবে গো" মার্কা মেয়েদের জন্য স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে ১৯১০ সাল নাগাদ ভারতীয় মহিলা মন্ডল স্থাপন করেন।

    ন্যাকা ছেলে ও মেয়েদের দু চক্ষে দেখতে পারতেন না। তাই বোধহয় পাঞ্জাব তনয় কে জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

    বাঙালি নারীবাদীরা সার্ত্রে এর গার্ল ফ্রেন্ড আর কলনতাই নিয়ে মাতামাতি করে। সরলা দেবীর মতো মানুষ কে নতুন করে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য অর্জুন কে অজস্র ধন্যবাদ।

    এই রকম সংক্ষিপ্ত, টানটান গদ্যে তথ্যবহুল লেখা আরো চাই শ্রীমান অর্জুন এর কাছ থেকে।
  • Du | ***:*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২২:৫৬377869
  • অনেক অজানা কথা জানা গেল। খুবই ভালো লাগল লেখা ও আলোচনা।
  • অর্জুন অভিষেক | ***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:০৩377870
  • @ সমুদ্র-দা, @><Du

    লেখা পড়ে মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ দুজনকেই। এই ধরণের বিষয় ও লেখায় উৎসাহ এখন কম তবে ইতিহাসে কিছু অধ্যায় ও মানুষকে ফিরে দেখতে ইচ্ছে করে।

    এই লেখাটা একটা সামান্য খসড়া।

    সমুদ্রদা আরেকটা বইয়ের নামোল্লেখ করেলন।

    সরলা দেবীর স্বামী রামভজ দত্ত চৌধুরীকে নিয়ে কোনো তথ্য পাইনি। ১৯০৫- ১৯২৩ এই দীর্ঘ আঠেরো বছর সরলা দেবীর পঞ্জাব বাস পর্বের কথাও কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা। রামভজ 'Hindustan' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করতেন। Fabian socialist Beatrice Webb র ডায়রিতে তাকে 'Ultra-nationalist' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ওই পর্বটা না জানলে তার কর্মকাণ্ডের পরিধি সম্পূর্ণ জানা হবেনা।
  • এলেবেলে | ***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:৪১377871
  • রামভজ দত্ত চৌধুরীর সাথে সরলা দেবীর ঘটনাবহুল বিবাহের বর্ণনা আছে 'জীবনের ঝরাপাতা'তেই। এই পাঞ্জাবী ব্রাহ্মণের সাথে তাঁর বিয়ে হয় বৈদ্যনাথ ধামে, বিয়ের পর তিনি লাহোরে যান এবং চোদ্দ মাস পরে তাঁদের সন্তান দীপক জন্মায়। রামভজ ১৯২৩এ কার্বাঙ্কলে মারা যান। তিনি ছিলেন লালা লাজপত রায়ের ডানহাত।

    দীপক সবরমতী আশ্রমে পড়াশোনা করলেও অদ্ভুতভাবে সরলার আত্মস্মৃতিতে গান্ধীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়নি। অথচ গান্ধী ১৯২০র ডিসেম্বরে সরলাকে চিঠিতে লিখেছিলেন — I have been analyzing my love for you. I have reached a definition of spiritual [marriage]. It is a partnership between two persons of the opposite sex where the physical is wholly absent. It is therefore possible between brother and sister, father and daughter. It is possible only between two brahmacharis in thought, word and deed.
  • এলেবেলে | ***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:৫০377872
  • এ বিষয়ে আরও পড়ার জন্য যে বইগুলো দরকার তার মধ্যে এগুলো আমার সংগ্রহে আছে —

    ১. নিবেদিতা ও রবীন্দ্রনাথ এক বিতর্কিত সম্পর্কের উন্মোচন - দেবাঞ্জন সেনগুপ্ত, গাঙচিল, ২০০৬
    ২. নিবেদিতা ও জগদীশচন্দ্র এক অচেনা সম্পর্কের সন্ধান - দেবাঞ্জন সেনগুপ্ত, গাঙচিল, ২০১০
    ৩. রবীন্দ্রনাথ চাইলেও বিবেকানন্দ মেশেননি - তুহিনশুভ্র ভট্টাচার্য, কারিগর, ২০১২
    ৪. প্রসঙ্গ রামকৃষ্ণ ও রবীন্দ্রনাথ - বিজন ঘোষাল, পত্রলেখা, ২০১৩
    ৫. ঠাকুরবাড়ির সরলা ও স্বামী বিবেকানন্দ - পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, গাঙচিল, ২০১৩
  • অর্জুন অভিষেক | ***:*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২৭377861
  • @এলেবেলে, প্রথমেই আপনাকে সরলা দেবীর বিষয়ে Bibliography র জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। দেবাঞ্জন সেনগুপ্তের দুটো বইই আমার পড়া। খুব গভীর বিশ্লেষণ থাকে লেখায়। নিবেদিতা ও তার ভূমিকা নূতন ভাবে উঠে এসেছে তার গবেষণায়।

    রামভজ দত্ত চৌধুরী, পঞ্জাবে লালা লাজপত রাইয়ের একনিষ্ঠ ভক্ত সঙ্গী সেটা জানতাম। 'জীবনের ঝরাপাতা' য় সরলা দেবীর তার বিবাহের বর্ণনা দিয়েছেন এবং সেখানেই বইটা শেষ হচ্ছে কিন্তু রামভজের রাজনৈতিক কার্যকলাপের বিবরণ সেটায় নেই।

    একদম শেষে যিনি অনেকগুলো লিঙ্ক দিলেন (আপনাকেও ধন্যবাদ), সেটা থেকে একটা ছোট অংশ তুলে দিচ্ছি।

    "পণ্ডিত রামভজ তাঁহার উর্দু সাপ্তাহিক ‘হিন্দুস্থান’ এর সম্পাদন ভার ছাড়িয়া দিতে বাধ্য হইয়াছিলেন, শ্রীযুক্তা সরলা দেবী চৌধুরানী স্বামীর সে ভার স্বহস্তে লইয়া অত্যন্ত প্রকাশ করা যোগ্যতার সহিত ‘হিন্দুস্থান’ সম্পাদন করিয়াছিলেন। ‘হিন্দুস্থান’ এর ইংরেজি সংখ্যা প্রকাশ করা আর এক গৌরবেরময় কীর্তি।"

    তার মানে 'হিন্দুস্থান' মূলত উর্দু দৈনিক ছিল। সেটার ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশ করে সরলা দেবী তা জাতীয় স্তরে রিডারশিপ বাড়াতে চেয়েছিলেন। এর পূর্বে 'ভারতী'র সম্পাদিকা ছিলেন তিনি, সেই পত্রিকাকেও ঠাকুরবাড়ির চৌহদ্দি থেকে বের করে আনার কৃতিত্ব তাঁর।

    এই 'হিন্দুস্থান' পত্রিকার পুরো আর্কাইভাল ইতিহাস ঘাঁটলে কোলোনিয়াল ইতিহাসের ন্যাশনললিস্টিক জার্নালিজমের ভূমিকা জানা যাবে।

    আরেকটা ব্যাপার, সরলা ঘোষাল ছিলেন, হয়ত 'দেবী'ও লিখতেন। কিন্তু পরে Dutt Choudhry না লিখে একদম বাঙালী কায়দায় 'দেবী চৌধুরানী' লিখতেন সরলা, সে হয়ত তার বাঙ্গালিনী পরিচয় জিইয়ে রাখতে।

    এটাও বেশ স্বতন্ত্র।
  • স্বাতী রায় | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:৫৬377862
  • এই লেখা এবং আলোচনা দুই ই খুব ভালো লাগল।

    আমার কেমন ধারণা সরলা তাঁর স্বাধীনচেতা স্বভাবটি অনেকাংশে মা স্বর্ণকুমারী'র থেকে পেয়েছিলেন।

    সরলাকেই না দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তরবারীর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে মহীশুরে পাঠিয়েছিলেন, এটা কি ঠিক?
  • অর্জুন অভিষেক | ***:*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:৫১377863
  • ধন্যবাদ @স্বাতী রায়

    স্বর্ণকুমারী দেবীকে নিয়ে তার জন্মদিন ৩রা জুলাই আমার ফেসবুকে লিখেছিলাম। সেই লেখা লিখতে গিয়ে তার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য ঘাঁটতে গিয়ে দেখলাম তিনিও নিরলস ভাবে সাহিত্যচর্চা করে গেছেন। মহিলাদের মধ্যে প্রথম তো বটেই, নারী- পুরুষ উভয়কে ধরলে তিনি চতুর্থ লেখক যিনি বাংলায় বিজ্ঞান নিয়ে প্রবন্ধ রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথের পূর্বে তিনি গীতিনাটিকা রচনা করেছিলেন। সেই গীতিনাটিকার নাম 'বসন্ত উৎসব'।

    সরলা ঘোষাল সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছেয় মহীশুরে চাকরি করতে যান। আমি জানতাম তিনি অধ্যাপিকা ছিলেন, তথ্য ঘেঁটে দেখলাম মহীশূরের দেওয়ান নরসিংহ আয়েঙ্গারের সরলার ব্যক্তিত্ব ও ভাষা ব্যুৎপত্তিতে মুগ্ধ হয়ে তাকে মহীশূরের মহারানী গার্লস কলেজের সুপারিনটেনডেন্ট পদে নিযুক্ত করেন। তার এই অত দূরে চাকরি করতে যাওয়া নিয়ে ঠাকুর পরিবারেও সকলে সম্মতি দেননি। রবীন্দ্রনাথ খুসী হননি।

    আর একটা ব্যাপার, ওই পরিবারে সকলে যেমন রবীন্দ্রনাথকে আঁকড়ে নিজের পরিচয় তৈরি করতে ব্যস্ত ছিলেন, সরলা একেবারে তার ব্যতিক্রম। বরং জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে তার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রবল মতবিরোধ হওয়ায় দুজনেই দুজনের থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের বিশ্বব্যাপী খ্যাতির মধ্যগগনে সরলা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।

    রামভজ দত্ত চৌধুরীকে 'খাপখোলা তরবারী' র সঙ্গে তুলনা করা হত।
  • -- | ***:*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২২:৩৩377864
  • https://m.facebook.com/ashok.choudhary.14473

    এই প্রোফাইলে একটা বইয়ের উল্লেখ আছে। রামভজ দত্ত চৌধুরীর উপর। অনেক তথ্যও আছে।
  • অর্জুন অভিষেক | ***:*** | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩৩377865
  • ধন্যবাদ। এই অশোক চৌধুরী ত মনে হচ্ছে রামভজ দত্ত চৌধুরীর বংশধর!
  • Chhaya Burui Bayen | 2409:4060:2180:29a2::17ce:***:*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:২৬735007
  • লেখনীটি তথ্য বহুল পড়ে সমৃদ্ধ হলাম। কিছু তথ্য সংযোজন করলাম-১৯১৯ সনের  এপ্রিলে জালিয়ানওয়ালাবাগের  নির্মম প্রতিবাদে পঞ্জাব সহসারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠল। রামভজ চৌধুরী কারারুদধ হলেন।এই সময়ে গান্ধীর খানি আন্দোলন ও সত্য গ্র হের আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। 
  • শ্রুবাবতী চক্রবর্তী | 2405:201:8005:5142:f8e0:893a:4cb:***:*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:০৩735008
  • সরলা দেবী প্রতিভা সোমকে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে  পরিচিত করান - এ তথ্যটি কোথায় পেয়েছেন জানানো  যায় কি? প্রতিভা বসুর " জীবনের জলছবি" তে তিনি লিখছেন দিলূীপকুমার রায়েরর চিঠি  থেকে রবীন্দ্রনাথ প্রতিভা  সোমপর কথা জেনেছিলেন। দার্জিলিংয়ে একসময়ে প্রতিভা ছিলেন তাঁর কাকার কাছে। সেসময় দার্রজিলিংয়ে রবীন্দ্রনাথও ছিলেন। চিঠি পাঠিয়ে কবি  প্রতিভাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। প্রতিভা তাঁর কাকাকে সঙ্গে নিয়ে কবির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন