এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আমরা কিভাবে ভাষা শিখি: কিছু নিউরোলজিকাল আলোচনা

    Sumit Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৩ জুন ২০১৮ | ২৪৬৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sumit Roy | ০৩ জুন ২০১৮ ১৩:৩৬375650
  • শব্দের ব্যবহার মানুষ বা প্রাণীজগতের অন্যান্য জীব সকলের জন্যই যোগাযোগের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত প্রক্রিয়া। প্রাণীরা খাদ্য, বিপদ এবং নিজেদের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করার জন্য তাদের ভোকালাইজেশন ব্যবহার করে, অন্যদেরকে ডাকে। আর প্রাণীজগতে এই ভোকালাইজেশন শব্দ দিয়ে তৈরি সামান্য সংখ্যক ভোক্যাবুলারির উপর নির্ভরশীল। এদের ক্ষেত্রে কোন নবজাতককে প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য খুব দ্রুত প্রস্তুত হতে হয়, বেঁচে থাকার জন্য তাদের কাছে এটা খুব জরুরি। অন্যদিকে মানুষের কথাগুলো খুব জটিল, আর তাই কার্যকরীভাবে এগুলোকে ব্যবহার করার জন্য জন্মের পর গভীরভাবে শিক্ষার প্রয়োজন হয়।

    মানুষ জীবনের প্রথম পর্যায়ে প্রথম ভাষা শেখে যাকে ফার্স্ট ল্যাংগুয়েজ একুইজিশন বলা হয়। এটা পরবর্তীতে অন্য ভাষা শেখা বা সেকন্ড ল্যাংগুয়েজ একুইজিশন থেকে ভিন্ন। আর এটার জন্য দরকার হয় একটি সাধারণ কার্যকরী মস্তিষ্ক এবং শ্রবণ ব্যবস্থার। দেখা যায় ভাষা শিক্ষার জন্য শ্রবণ ব্যবস্থা আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেসব শিশু তাদের শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলে তাদের স্পোকেন ল্যাংগুয়েজে সমস্যায় ভোগে কারণ তারা তাদের নিজেদের কথাকেই শুনতে পারে না, যেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অডিটরি ফিডব্যাক।

    সম্প্রতি, বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকগণ মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো আবিষ্কার করছেন যেগুলো ভাষার সাথে সম্পর্কিত তথ্যগুলোর প্রক্রিয়াকরণের সাথে জড়িত। এই স্থানগুলোর একটি বিশাল ল্যাংগুয়েজ নেটওয়ার্কের মধ্যে পড়ে, যাদের মধ্যে রয়েছে ব্রকা (Broca's area), ভেরনিক (Wernicke's area), মিডল টেম্পোরাল, ইনফেরিয়র পেরিয়েটাল এবং এংগুলার জাইরাস। মস্তিষ্কের এই স্থানগুলোর বিভিন্নতা আমাদেরকে পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দেয় ভাষা প্রক্রিয়াকরণ কতখানি জটিল।

    ফাংশনাল লেভেলে কোন ভাষাকে ডিকোড করা বা ভাষার সংকেতকে বোঝার জন্য ভাঙ্গার কাজটার সূচনা হয় কান থেকে, যেখানে শব্দগুলো আমাদের অডিটরি নার্ভ বা শ্রবণমূলক স্নায়ুতে এসে জমা হয় এবং এরপর একে অডিটরি কর্টেক্সে পাঠিয়ে দেয় যেখানে নিউরোনগুলো সেই সিগনাল থেকে অডিটরি অবজেক্টগুলোকে বের করে নেয়।

    এভাবে শব্দ শোনা এবং কর্টেক্সে শব্দের বিশ্লেষণের পর, মস্তিষ্কের বাম গোলার্ধে থাকা টেম্পোরো-ফ্রন্টাল নেটওয়ার্কে গিয়ে শব্দগুলোর সিনটাক্টিক এবং সেমেন্টিক আইডেন্টিফিকেশন হবে। সিনটাক্টিক আইডেন্টিফিকেশন এর কাজ হচ্ছে বাক্যের স্ট্রাকচার বা গঠন বোঝা, আর সিমেন্টিক আইডেন্টিফিকেশনের কাজ হচ্ছে শব্দগুলো একত্রে বসে যে অর্থ তৈরি করে সেটাকে বোঝা। এগুলো একত্রে মিলে শব্দগুলো কী অর্থ প্রকাশ করছে, এবং একত্রে বসে কী অর্থ প্রকাশ করছে সেই সম্পর্কে নির্দেশ দান করে। এরপরের ধাপটি হচ্ছে সেন্টেন্স লেভেল এনালাইসিস, যেটা অনেকগুলো বাক্যকে মিলে একটি সামষ্টিক অর্থ তৈরিতে সাহায্য করে, যা হয় মস্তিষ্কের ডান গোলার্ধে টেম্পোরো-ফ্রন্টাল নেটওয়ার্কে।

    এই সমগ্র প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা এতটাই যে, এর কারণে মানব মস্তিষ্ক সহজেই কোন নয়সি বা কোলাহলপূর্ণ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে সঠিকভাবে সম্পূর্ণ শব্দ বা বাক্যাংশকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। আর মস্তিষ্কের এই বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাই ধরিয়ে দেয় যে মানব মস্তিষ্ক এবং ক্ষমতাশালী সুপারকম্পিউটার কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ।

    *কেন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নতুন ভাষা শেখা তুলনামূলক ভাবে কঠিন? 

    গত দশকের আগ পর্যন্ত খুব কম গবেষণাই হয়েছে যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের ভাষা শিক্ষার মধ্যকার তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু আধুনিক ইমেজিং এবং ইলেকট্রোসেফালোগ্রাফির দয়ায় এই কাজটি করা সম্ভব হয়েছে।

    সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলো আমাদেরকে দেখায় যে শিশুদের মস্তিষ্ক খুবই ফ্লেক্সিবল বা নমনীয় হয়, যার ফলে তারা যে পরিবেশেই থাকবে, সেই পরিবেশের ভাষা শিখতেই সক্ষম হয়। এছাড়া, তারা ঠিক যা শুনছে বা ভাষার যে লেখাগুলো দেখছে হুবহু সেটাই তারা শিখে ফেলতে পারে। মস্তিষ্কের এই নমনীয়তাই যে কোন স্পিচ কোডকে ভেঙ্গে অর্থ উদ্ধার করার ক্ষমতা প্রদান করে, যা শিশুর বড় হবার সাথে সাথে কমতে থাকে। মস্তিষ্কের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের নাম হচ্ছে নিউরোপ্লাস্টিসিটি। সোজা বাংলায় বললে এর অর্থ হল মস্তিষ্কের পরিবর্তিত হবার ক্ষমতা, নতুন নতুন নিউরাল কানেকশন তৈরির ক্ষমতা। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই ক্ষমতা কম থাকে বলে তাদের জন্য নতুন ভাষা শেখা কঠিন হয়ে যায়।

    শিশুর মস্তিষ্কের পূর্ণতাপ্রাপ্তির সাথে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলে মায়েলিনেশন (myelination) প্রক্রিয়াও চলতে থাকে, যাতে করে নিউরনাল যোগাযোগগুলো দ্রুত গতিতে ঘটতে পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এটা যেমন মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে ডেটা ট্রান্সফারের গতিকে বাড়িয়ে দেয়, তেমনি আবার মনে করা হয় যে এটা মস্তিষ্কের কগনিটিভ ফাংশন ও মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটিকেও কমিয়ে দেয়। আর এর কারণেই আস্তে আস্তে এডাল্টদের নতুন ভাষা শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়।

    বিজ্ঞানীরা এও বিশ্বাস করেন যে, সাত থেকে আট বছর বয়স এর মধ্যে দ্বিতীয় ভাষা বা সেকন্ড ল্যাংগুয়েজেও অনর্গল কথা বলতে শিখে ফেলতে পারে, তাও খাটি উচ্চারণ সহ। যাই হোক, এই বয়সের পর নতুন ভাষা শিক্ষার হার কমতে থাকে, এবং উচ্চারণ শেখাটাও কঠিন হতে থাকে।

    *কেন কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে তাড়াতাড়ি ভাষা শিকে ফেলতে পারে?

    এটা খুব পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে যে, বিদেশী ভাষা শেখার ক্ষেত্রে ফাস্ট লার্নার এবং স্লো লার্নারদের মাঝে কিছু এনাটমিকাল ব্রেইন ডিফারেন্স আছে। একই ভাষায় কথা বলে এরকম একটি দলকে বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীগণ দেখেন, এই বিভিন্ন ব্যক্তির মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু জায়গার পার্থক্যগুলো মানুষের দ্বিতীয় ভাষা শিখবার সামর্থ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। যেমন, গবেষণায় এই পার্থক্যগুলো ঘেটেই সিদ্ধান্ত টানা হয় যে, অডিটরি কর্টেক্স এর আকার ও গঠন মানুষের ধ্বনিগত শিক্ষার সামর্থ দান করে, আবার অডিটরি কর্টেক্স আর পেরিয়েটাল অঞ্চলের কিছু নির্দিষ্ট স্থান আমাদেরকে স্পিচ সাউন্ড বোঝার সামর্থ দান করে।

    যাই হোক, এখনও এটা পরিষ্কার নয় যে শিশুদের মধ্যে মস্তিষ্কের এই গঠনগত এবং সংযোগগত তারতম্য তাদের প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিদেশী ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলে কিনা, কিন্তু কোন কোন বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন শিশুদের এরকম পার্থক্য বড় হবার পর বিদেশী ভাষা শিক্ষায় প্রভাব ফেলে।

    *নেটিভ ল্যাংগুয়েজ বা প্রথম ভাষা এবং দ্বিতীয় ভাষার সাথে জড়িত মস্তিষ্কের অংশ: কিভাবে এরা কাজ করে, আর এরা কোথায় থাকে? 

    কোন ভাষার নেটিভ স্পিকার আর নন নেটিভ স্পিকারের সেই ভাষা ব্যবহার করার সময় এদের মস্তিষ্কের কোন কোন স্থান সক্রিয় থাকে তা মস্তিষ্কের ফাংশনাল ইমেজিং এর মাধ্যমে ধরা পড়ে। ভাষা শিক্ষার জন্য সুপেরিয়র টেম্পোরাল জাইরাস একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। একজন নেটিভ স্পিকারের ক্ষেত্রে (যার প্রথম ভাষাই ছিল সেই ভাষা) মস্তিষ্কের এই অংশটি স্বয়ক্রীয়ভাবে শব্দ চয়ন এবং ফ্রেজ স্ট্রাকচার বা বাক্যাংশের গঠন তৈরির কাজের সাথে জড়িত থাকে। নেটিভ স্পিকারদের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলটি নন-নেটিভ স্পিকারদের তুলনায় (যাদের কাছে সেই ভাষাটি সেকন্ড ল্যাংগুয়েজ, বয়স বাড়ার পরে যারা সেই ভাষাটি শিখেছে) অনেক কম সক্রীয়।

    সেকন্ড ল্যাংগুয়েজ লার্নারদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ককে দ্বিতীয় ভাষাটি ডিকোড করতে অনেক বেশি বেগ পেতে হয়, অনেক বেশি রিসোর্সের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে নতুন ভাষার সাথে মানিয়ে নেবার জন্য ও সেই ভাষার শব্দ ও বাক্যগুলোকে বোঝার চেষ্টা করার জন্য মস্তিষ্কের ইনফেরিয়র ফ্রন্টাল জাইরাস অংশটি সক্রীয় হয়। 

    ভাষা শিক্ষা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে অচেতনভাবেই তথ্যগুলো মস্তিষ্কে জমা হয় এবং মানুষ সঠিকভাবে ভাষাটি বলার ও লেখার ক্ষমতা অর্জন করে। আবার ভাষা শিক্ষা জ্ঞান অর্জনের একটি সচেতন প্রক্রিয়া এবং এর জন্য সেই ব্যক্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণেরও দরকার হয়।

    একজন নেটিভ স্পিকার যোগাযোগের জন্য সচেতন প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে না বললেই চলে, তিনি আপনা আপনিই সেই ভাষায় অনর্গলভাবে নিজের চিন্তা ভাবনা প্রকাশ করতে পারেন, এবং তার কথাগুলো একে অপরের সাথে সংগতিপূর্ণও হয়ে থাকে। অন্যদিকে বিদেশী ভাষার ফ্রেজ বা বাক্যাংশগুলো তৈরি করতে হলে, প্রথমে মস্তিষ্কের অসচেতন প্রক্রিয়া উদ্দীপিত হয়, আর তারপর মস্তিষ্কের সচেতন কৌশলকে ব্যবহার করা হয় বাক্যটির ভুল শোধরানোর জন্য। এটা পরিষ্কার যে, কোন ভাষার জন্য এই সচেতন প্রক্রিয়া একটা কষ্টকর বিষয়, এরজন্য শ্রম ও সময় উভয়েরুই প্রয়োজন হয়। আর তাই, নন নেটিভ স্পিকারদের জন্য নেটিভ স্পিকারদের মত সেই ভাষায় অনর্গল কথা বলা কঠিন হয়। 

    যদিও নতুন বিষয় শেখার সাথে সাথে মস্তিষ্ক পরিবর্তিত হয়, এটাও আমাদের জানা উচিৎ যে, ভাষা শেখার ক্ষেতে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। শিশুর সামাজিক আচরণ এবং তার নতুন ভাষার ধারণা ও শব্দ শেখার ক্ষমতার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণার বৈজ্ঞানিক উপাত্ত এই অনুকল্পটির সত্যতাকে নিশ্চিত করেছে। অটিজম এর ক্ষেত্রে শিশু ভাষাকে এনকোড করার মত প্রয়োজনীয় সামাজিক মিথস্ক্রিয়া তৈরি করতে সক্ষম হয়না, আর তাই তাকে অনর্গল ও শুদ্ধভাবে কথা বলতে কষ্ট করতে হয়।

    *শেষ কথা

    মানুষ কিভাবে ভাষা শেখে এব্যাপারে উপরের কথাগুলোই শেষ নয়। নিউরোলিঙ্গুইস্টিক্সের গবেষণায় আমরা আপাতত জানতে পারছি যে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোন কোন অংশ জড়িত থাকে, কিভাবে ভাষাগত বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ কাজ করে, যেমন বাম ফ্রন্টাল কর্টেক্স এর ব্রকা এর অঞ্চল ভোকাল ও সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে প্যাটার্ন তৈরির সাথে সম্পর্কিত, বাম টেম্পোরাল কর্টেক্স এর ভেরনিকের অঞ্চল ভাষা বোঝার সাথে জড়িত। কিন্তু এখনও চলার অনেক পথই বাকি, আরও অনেক গবেষণা দরকার। অনেক কিছু জানার জন্যই ইনভেসিভ উপায় অবলম্বন বেটার অপশন হতে পারত, যার অর্থ হচ্ছে মস্তিষ্কের ক্ষতি করে মস্তিষ্কের ব্যাপারে জানা, কিন্তু এভাবে গবেষণা করা অনৈতিক।

    তবে fMRI ও PET এর মত টেকনোলজিগুলো আমাদের সেই অভাবের কিছুটা পুরণ করতে পারছে বিভিন্ন রকমের নিউরোইমেজিং স্টাডির মাধ্যমে। আর এগুলোর মধ্য থেকে আমরা জানতে পারছি যে ভাষা শিক্ষা সম্পর্কিত পুরনো যে মডেল ও তত্ত্বগুলো আছে সেগুলোর অনেকগুলোই সঠিক। নিউরোলজিকাল গবেষণার মাধ্যমে যেসব তাত্ত্বিক মডেল সত্য প্রমাণিত হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকটি কয়েকটি হচ্ছে: ভাষা শিক্ষায় ব্যক্তির কগনিটিভ, এফেক্টিভ, সাইকোমোটর এর অঞ্চল- সবগুলোই কাজ করে; অর্থ সন্ধানের জন্য মানুষের মস্তিষ্ক প্যাটার্নের খোঁজ করে; মানুষের আবেগ ভাষার শিক্ষা, মরে রাখা ও মনে করাকে প্রভাবিত করে; পূর্ব অভিজ্ঞতা সবসময়ই নতুন নতুন শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে; মস্তিষ্কের ওয়ার্কিং মেমরির ক্ষমতা সীমাবদ্ধ; লেকচার শোনার মাধ্যমে শিক্ষণকে অল্পমাত্রায় ধরে রাখা যায়, বরং যা শিখেছি তা ধরে রাখার জন্য চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; ভাষা শেখার জন্য কেবল মাত্র একা একা চর্চা করাই যথেষ্ট নয়; প্রত্যেকটি মস্তিষ্কই অনন্য... ইত্যাদি।

    এভাবেই ভাষা শিক্ষা নিয়ে পূর্বে যে বিভিন্ন ভাষাতাত্ত্বিকগণ, বিশেষ করে সাইকোলিঙ্গুইস্টিক বা মনোভাষাবিদগণ বিভিন্ন তত্ত্ব ও মডেল দাঁড়া করিয়েছিলেন, সেগুলো সঠিক কিনা তা বের করা বর্তমান বিজ্ঞানীদের অন্যতম কাজ, আর যত দিন যাচ্ছে এইসব এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে সেই মডেলগুলোকে ভেরিফাই করার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার হচ্ছে। তাই মানুষ কিভাবে ভাষা শেখে এই ব্যাপারে আরও গভীর অন্তর্দৃষ্টির জন্য এই নিউরোলিঙ্গুইস্টিক্সের পাশাপাশি বিভিন্ন সাইকোলিংগুইস্টিক্সের তত্ত্বগুলোকেও জানা যেতে পারে। অন্য কোনদিন এগুলোকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। আপাতত এইটুকুই...

    তথ্যসূত্র:

    Casey BJ, Giedd JN, & Thomas KM (2000). Structural and functional brain development and its relation to cognitive development. Biological psychology, 54 (1-3), 241-57 PMID: 11035225
    Dehaene-Lambertz G, Dehaene S, & Hertz-Pannier L (2002). Functional neuroimaging of speech perception in infants. Science (New York, N.Y.), 298 (5600), 2013-5 PMID: 12471265
    Friederici AD (2002). Towards a neural basis of auditory sentence processing. Trends in cognitive sciences, 6 (2), 78-84 PMID: 15866191
    Golestani N, Molko N, Dehaene S, LeBihan D, & Pallier C (2007). Brain structure predicts the learning of foreign speech sounds. Cerebral cortex (New York, N.Y. : 1991), 17 (3), 575-82 PMID: 16603709
    Kuhl PK, Tsao FM, & Liu HM (2003). Foreign-language experience in infancy: effects of short-term exposure and social interaction on phonetic learning. Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America, 100 (15), 9096-101 PMID: 12861072
    Newport, E. (1990). Maturational Constraints on Language Learning Cognitive Science, 14 (1), 11-28 DOI: 10.1207/s15516709cog1401_2
    Paus T (2005). Mapping brain maturation and cognitive development during adolescence. Trends in cognitive sciences, 9 (2), 60-8 PMID: 15668098
    Petitto LA, & Marentette PF (1991). Babbling in the manual mode: evidence for the ontogeny of language. Science (New York, N.Y.), 251 (5000), 1493-6 PMID: 2006424
    Rodriguez-Fornells, A., Cunillera, T., Mestres-Misse, A., & de Diego-Balaguer, R. (2009). Neurophysiological mechanisms involved in language learning in adults Philosophical Transactions of the Royal Society B: Biological Sciences, 364 (1536), 3711-3735 DOI: 10.1098/rstb.2009.0130
    Rüschemeyer SA, Fiebach CJ, Kempe V, & Friederici AD (2005). Processing lexical semantic and syntactic information in first and second language: fMRI evidence from German and Russian. Human brain mapping, 25 (2), 266-86 PMID: 15849713
  • pinaki | 90.254.***.*** | ০৩ জুন ২০১৮ ২৩:১৪375651
  • ইন্টারেস্টিং। গত পাঁচ বছর ধরে সুইডিশ শেখার জন্য লড়ে যাচ্ছি। মানে খুব সিরিয়াসলি লড়ে যাচ্ছি বললে ভুল হবে। কিন্তু কিছু চেষ্টা জারি আছে। অথচ বউ আর মেয়ে মোটামুটি একবছরের মধ্যে কাজ চালানোর মত, এবং এখন প্রায় অনর্গল সুইডিশ বলতে পারে। মেয়ে তো বোধহয় স্বপ্নটপ্নও সুইডিশেই দেখে। কিন্তু আমার ব্যার্থতার জন্য এতকাল নিজেকেই দায়ী করে এসেছি। বউ এবং মেয়েরও তাই মত। এবার বলতে আসলে এই প্রবন্ধটা ধরিয়ে দেব। একটা প্রিন্ট নিতে হবে আজই। :-P
  • Sumit Roy | ০৪ জুন ২০১৮ ০০:৫৮375652
  • হাহাহা... এই প্রবন্ধ তাদেরকে হতাশ করতে পারে। এরপর মনে মনে আমাকে গালমন্দ না করলেই হয় :p
  • paps | ***:*** | ০৮ জুন ২০১৮ ০৩:২৪375653
  • তুললাম
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন