এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • গোরা নকশাল

    দীপক
    বইপত্তর | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ১০১১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপক | 57.15.***.*** | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৩:৩৯374010
  • *গোরা নকশাল*
    -কল্লোল লাহিড়ী
    প্রকাশনা-গুরুচন্ডালি
    দাম-60/- ডিসকাউন্ট ছাড়া
    বইমেলায় স্টল নং-204এ

    আমি, যে কখনো দিন বদলের স্বপ্ন দেখি না সে লিখবে এই বইয়ের রিভিউ? তবে কি- বইয়ের রিভিউ হয়। অনুভূতির না। গোরা নকশাল এক টুকরো অনুভূতি, আবেগের নাম যা আমার পাড়ার খোঁড়া নির্মল কাকুর বাঁ পায়ের নিচের শূন্যতা থেকে ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার ফুটপাথে পথবাসী 'নাগরিকদের' কাঁথা কম্বল বাঁচিয়ে- মাড়িয়ে চলার মধ্যে। ছোটবেলার বাউরিদের ছেলে মনসার সাথে সচেতনভাবে না মেশা থেকে সিটি সেন্টারে মাল্টিপ্লেক্সে বসে 'কালবেলা' দেখে জিবে চুক চুক আওয়াজ করার মধ্যে। যারা এখনো পথে নেমে একটু আধটু লড়াইটা করে, কোথায় কোন ছত্তিশগড়ের লড়াই টেনে এখানে যানজট ঘটায় তাঁদের প্রতি তীব্র কঠিন দৃষ্টির মধ্যে।

    আর এই বইয়ের কথা কি বলবো? লেখক কি মরমী ভাষায় যে লিখেছেন বইটা, না পড়লে বোঝা যাবে না। মৃত্যুর এরকমও বর্ণনা হয়! হারিয়ে যাওয়ার ভাষা, যন্ত্রণার ভাষা বুঝি এরকম হয়! কালি ফটকার সাইজের এই বইটা বুকের মধ্যে আদতে পেটো সেঁধিয়ে দিল। লেখক এই বইয়ের মধ্যেই অনেক প্রশ্ন, অনেক আশা বুনে রেখেছেন। তিনিতো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন দিন বদলের স্বপ্ন এখনো দেখা যায়। যে দেশে, এক শতাংশ মানুষের হাতে দেশের তিয়াত্তর শতাংশ সম্পদ, সেখানে বুকের 'দুম দুম দ্রিম দ্রিম' বন্ধ হতে দেওয়া এখনো চলে না। যেখানে এখনো ধর্ম নামক আটার গুলি খাইয়ে মানুষকে 'মোরগ' করে রাখা হয় আর লাভের গুুুড়টুকু দিয়ে দেওয়া হয় কর্পোরেট অধিপতিদের, সেখানে "স্বপ্নের রাষ্ট্র গড়ার জিয়ন কাঠিকে" তো বাঁচিয়ে রাখতেই হয়।

    লেখকের গল্প বলার সাবলীল অথচ হৃদপিন্ডে হাতুড়ি মারা এপ্রোচ প্রশংসনীয়। উনি আসলে কোন এক সন্ধ্যায় আরাম কেদারায় বসে এক গল্পের আসরে দুলকি চালে বলে চললেন ওনার টুকরো টুকরো গল্প। অযথা পুলিশের নকশালকে তাড়া করার রুদ্ধশ্বাস বর্ণনা, গার্লফ্রেন্ডের বাড়িতে নকশালের আশ্রয় নেওয়া, রাত্রে পুলিশের সার্চলাইট এ সব ক্লিশে গল্প থেকে বইকে ভারমুক্ত রেখেছেন তিনি।অগণিত গোরা নকশাল, সুশান্ত যারা দিব্যি পড়াশুনো করে সুট বুট বাবু হয়ে বসে থাকতে পারতো, অথচ যারা অঝোরে ঝরে গেল অথবা কানা খোঁড়া হয়ে আমাদের মাঝে অবজ্ঞায় বেঁচে রইলো, সময়ের অতলে হারিয়ে গেল, কেউ জানলো না তাঁদের কথা, তাদের নিয়ে এই লেখার জন্য লেখককে কুর্নিশ জানাই। প্রচ্ছদ আর ভূমিকাও অসাধারণ আর উপযুক্ত।

    তবে লেখক যতই ডিসক্লেমার দিন না কেনো সব চরিত্র কাল্পনিক, আমি আপনি ঠিকই জানি গোরা নকশাল সত্যি। প্রিয়াংশু, সুশান্ত, অমিয়া, আনন্দী সকলই সত্যি। হরি মিত্র সত্যি। ঠিক যেমন সত্যি 'দুবেলা দু মুঠো ভাতের' চাহিদা। চাহিদা 'পরার কাপড়ের', 'মাথা গোঁজার ঠাঁই' এর। 'প্রাথমিক শিক্ষার অধিকারটুকুর' এখনো অধরা থাকা।

    তবে একটাই আক্ষেপ রয়ে গেল, এ লেখা আর একটু দীর্ঘায়িত হবার সুযোগ ছিল না কি? কল্লোলবাবু আরো কিছু গল্প ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করতেই পারতেন।টুকনুর রিফিউজি জীবন সেওতো বেশ অনন্যসুন্দর ভাবে বর্ণনা করছিলেন লেখক। তবে সব কেন এত স্বল্প? কে জানে হয়তো পাঠকের এই আশ না মেটার আক্ষেপেই লেখকের সাফল্য।
  • রুকু | 11.187.***.*** | ১৭ মার্চ ২০১৮ ১৪:৪৬374011
  • গোরা নকশাল”
    অঙ্কুরিত বীজের উষ্ণ উন্মেষ!
    একটি সাদা পায়রা। উড়তে চাইছে। পাখা দুটি শূন্যে মেলেছে। মেলেছে ঠিকই কিন্তু পা কোথায় ? পায়রার পা খুঁজতে কী বোর্ডের সাথে আমার চশমার সংঘর্ষ হয়ে যায়।
    আমি দেখি পায়রার পায়ের নীচে কালো জল । নাকি অসংখ্য কালো আইনের মৃত্যুজাল! কিম্বা নির্যাতনে ঢলে পড়া সেই তাদের শুকিয়ে যাওয়া রক্তকণা ! খরখরে। ক্রমশ উর্বর। বীজ বপনের প্রায়লগ্ন। এরকমই ত শুনেছিলাম সেই শিশুকালে। এক কিশোর নকশালের লাশ পুকুরের পাড়ে পেয়েছিলো যারা তারা তার পাদুটো খুঁজে পায়নিকো। তবু বলেছিলো, ভুলবো না ।
    সায়ন কর ভৌমিকের এই প্রচ্ছদ আমাকে অনেকগুলো মাস সেই তাদের নিয়ে অনেক সত্যি গল্পে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
    সেই ! সেই তারা। যারা লাল লাল বই পড়ত । লুকিয়ে রাখত । আমার মা যেমন কোরাআন শরীফের লাল গেলাফের আচ্ছাদনে লুকিয়ে রেখেছিল কতগুল লাল বই! আমি বার বার প্রচ্ছদে পা খুঁজি । নকশালের পা। আমার মামাতো ভাই দুলাল সিকদারের ফর্সা ফেটে যাওয়া রক্তাক্ত পা। বংশধারা মেনে তার বাবা ছিল চেয়ারম্যান। মামা ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু তারা খচিত সেনা কর্মকর্তা। ভবিষ্যৎ বাঁধা ছিল সোনারূপার পুঞ্জিতে। পড়াশুনা শেষে তবু দুলাল নকশালই হলো। হা কপাল! কিম্বা ছিঃ । কেউ কেউ তবু বলে, লাল সেলাম। কমরেড।
    ফায়ার নাকি রিট্রিট !
    অনেক পরে যখন ভেঙ্গেচুরে হারিয়ে যেতে বসেছিল নকশালরা, কমরেড দুলাল ফিরে এসেছিল। রিট্রিট। সে এক অন্য গল্প। আমি বড় হতে হতে ভেবেছি, ভাগ্যিস, এই ভুল পর্বের শেষ হলো। বেশ হলো। ওদের ভুলে আমরা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছি। তবু মায়া লেগে থাকত ভুল কি শুদ্ধের জটিল হিসেবখাতায়। “গোরা নকশাল” সেই মায়াকে জাগিয়ে তুলেছে।
    বইটির প্রচ্ছদ কেবল দেখে গেছি । প্রচ্ছদ দেখে যে গল্পগুলো নিজেই বানিয়েছি তা বানাতে গিয়ে বুকের ভেতর খিঁচ ধরেছে বার বার। পায়রার পা দুটো যে দেখতে পাচ্ছি না ভালো করে। তবে কি উড়তে পারেনি পাখিটি ? কি সে আটকালো ? কে আটকে দিলো এই উড়াল ? নড়াইলের কোনো এক গ্রামের ইশকুলে রক্ষিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে বন্দি হয়েছিল কিছু নকশাল। নির্যতনের এক পর্যায়ে একজন কিশোর নকশাল রক্তাক্তমুখে রক্ষিবাহিনীর কম্যান্ডোকে বলেছিল, জয় হবেই।
    কোনো এক ভোরে সেই কিশোরের লাশ পাওয়া গেছিল এক পুকুরে। পাদুটো জলজ শ্যাওলা কাদা জলে ডোবা। কেউ কেউ বলে, পা ছিলনা। পা গেলো কোথায় ? ভাসতে ভাসতে সেই কথা আমাদের বাসায়ও পৌঁছে গেছিল। আমাদের বাসা তখন নকশালের বাসা নামে ব্রাত্য। আত্মীয়রা থুঃ ফেলে। ভয়ে , ঘৃণায়। খেলার মাঠে আমাকে কেউ “নকশালের বোন নাস্তিইইইইক” বললে আমি ধুমে মারামারি করি। গালি দিই। মার খাই। আবার মারি। কোথাও কি আমিও টুকনু ছিলাম ?
    বাংলাদেশে গুরুচণ্ডা৯র পাঠানো “গোরা নকশাল” বইটি সাথে সাথেই শেষ। ওরা সান্ত্বনা দেয়, অর্ডার গেছে ডজনখানেকের। আমার সাথে দুটি লিটল পত্রিকার দুজন সম্পাদক ছিল। ওরা জানে আমার বই খুঁজে পড়ার ইতিহাস। জটজলদি ওরাও দুটি “গোরা নকশাল” ধরে রাখার অর্ডার দিয়ে রাখল।
    ঘরে এসে হাঁটি , ঘুরি ফিরি , আমেরিকা থেকে ভাই সম্পাদনা শেখায়, ভয়ে ভয়ে শিখি। কিন্তু মন তো ভোলে না। গোরা নকশাল আমার চাইইই চাই। টুং করে বুকের ভেতর ভেসে ওঠে টুকনু। আরে আমিও তো টুকনুর বোন। ঠুলির সাথে পয়সা কুড়াতো ভাই। দিদি না হয় পিডিএফই কুড়াবে !
    পড়তে পড়তে আমি কতবার কাঁদলাম। কাঁদলাম কারণ ইদানীং আমি নিজেকে বদলে নেবো ভেবে স্মৃতির গলিগুলো মুছে দিতে চাইছিলাম। চাইছিলাম সহজ সরল জীবনে কিছু গেরো ফেলে নিজেকে জটিলকুটিল করে তুলতে। পারলাম না।
    গোরা নকশাল পড়তে পড়তে মনে পড়ে গেলো, রাত দুপুরে পুলিশের উৎপাতের সেই ঘটনাগুলো। আমাকে চকোলেট টফি দিয়ে দাদা কোথায় জানানোর সেই নকল আদুরে চ্যাটচেটে প্রশ্নগুলো। কোরআন শরীফের লাল সাটিনের গেলাফ খুলে কতগুলো লাল বই বের করে পুলিশকাকুদের মুখব্যাদান, ছি ছি আপনারা দেখি একেবারেই নাস্তিক! পবিত্র কোরাআনের সাথে কেউ এই বই রাখে! তওবা তওবা ! আমি আজোও জানিনা ওজনদার একটি পিস্তল মা কেমন করে কখন, পুলিশের সার্চ করে রাখা আমার পুতুলের বাক্সে লুকিয়ে ফেলেছিল।
    কল্লোল লাহিড়ীর গোরা নকশাল পড়তে পড়তে মনে হলো, এক অন্তর্ভেদি সময়ের অন্ধ গলিতে দাঁড়িয়ে অঙ্কুরোদগমের উষ্ণ শব্দধ্বনি শুনতে পেলাম। আচ্ছে আছে। রক্তবীজের ঝাড় নিঃশেষ হয়নিকো। সময়ের কাঁটা ঠিকঠিক মিলে গেলেই লেখকের গোরা নকশাল আমার দুলালদা হয়ে, মেধাবী সুশান্ত নড়াইলের নাম না জানা কিশোর হয়ে ভেসে আসবেই।
    গেলো বিকেলে "বাংলাদেশের নকশাল আন্দোলনের নারী" বইটি পড়ছিলাম। শিউরে উঠছিলাম সাতাশ নম্বর বেঙ্গলের ঠান্ডা পাঠকক্ষে। যারা কবরে গিয়েছে,আগুনে পুড়েছে, যারা নিজেকে সজ্ঞানে হারিয়ে লুকিয়ে আছে সময়ের আড়ালআবডালে, দেশে বিদেশের সেই সব নকশালদের লালা সেলাম। ভুল কি শুদ্ধ আজও জানিনা। শুধু জানি, মানুষকে ভালোবেসে ওরা লড়েছিলো। দিতে চেয়েছিল এক অভিন্ন সাম্যভূমি।
    কল্লোল লাহিড়ীর বইটি উড়ুক। ভাসুক।
    আমার বাপি লিখেছিলেন, -- সুকান্ত সে দামাল ছেলে পথ হারিয়ে ফেরে, মরল ছেলে কাদের তরে কে বলো তা জানে!”
    আমার মা প্রতিবাদ করেছিলেন, পথ কেনো হারাবে ? আর কাদের জন্যে ছেলেরা মরল একদিন ঠিকই পৃথিবী জানবে। তুমি হতাশ কবিতা লিখো না তো! লেখক এক দিয়া জ্বালিয়ে দিলো।
    পথ দীর্ঘ। সময় অনন্ত। আর পৃথিবী বৃত্তাকার। কিছুই হারায় না। তাই গোরা নকশালরা ফিরে ফিরে আসে। আসবেই। তাদের আনার জন্যে রয়েছেন, কল্লোল লাহিড়ী , প্রকাশক গুরুচন্ডা৯ আর কিছু মায়াময় মানুষ। ধন্যবাদ সবাইকে।

    গোরা নকশাল নিয়ে লিখলেন রুখসানা কাজল :)
  • aranya | 83.16.***.*** | ১৮ মার্চ ২০১৮ ০২:০৮374012
  • তাই কও, পড়তে পড়তে ভাবছিলাম বাচ্চা রুকু বোধহয় জাতিস্মর, পূর্বজন্মের কথা লিখছে :-)

    রুখসানা-র পাঠ প্রতিক্রিয়াটি অনবদ্য। বাংলাদেশের নকশাল আন্দোলন সম্বন্ধে আরো জানতে ইচ্ছে করে। ধর্ম একটা বড় বাধা, ওপার বাংলায়, সেখানকার নকশাল-দের লড়াই হয়ত আরো কঠিন ছিল
  • pi | ***:*** | ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:০৭374013
  • "দুই দশক, দুই সময়। মাতাল ঝড়ের পর অপার নিস্তব্ধতা। বীরেন চাটুজ্যের আগুনে কবিতার সিঁড়ি বেয়ে সুমনের গান। শান দেওয়া কাস্তের ধার কমতে থাকা, কমতে দ্যাখা.. ভুলতে চাওয়া সত্তর, ভুলে যাওয়া নব্বই। দুই দশক, দুই সময়.... গোরা নকশাল, অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত।

    -কল্লোল লাহিড়ী ও শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য, দুই লেখকের সঙ্গে ফেলে আসা দিনগুলোর চারণে মৈনাক সেনগুপ্ত..

    ২৩শে নভেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যেয়
    আরশির আড্ডা জমজমাট !

    এলে ভালো লাগবেই ..."

    আরশি,18 জনক রোড, কোলকাতা 29 (লেক মলের পাশের রাস্তা)

    লিখেছেন Anasuya Gupta
  • pi | ***:*** | ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ১১:২৭374014
  • "#চিন্তাসূত্র-১ ( একটা বই)
    ----------------------------------
    ( কর্ণ, জ্যেষ্ঠ,
    এখুনি জানলাম, আজ তোমার জন্মদিন।
    আর কিই বা দিতে পারি, আপন মনের ক্ষত ছাড়া?
    এ লেখা, তোমারই থাক)

    কিছু কিছু বই থাকে যেগুলো টেবিলের নিচে পড়ে থাকে অবহেলায়। লুকিয়ে থাকে আলমারির পেছন দিকের ঘুপচিতে। হারিয়ে যায়, পাতা ছোঁয়ারও আগে।
    আমার বাড়িটা ক্রমশ বই আর বইয়ের স্তুপে পরিণত হচ্ছে দিন কে দিন। আমি পড়ি যতো, কিনি বোধহয় তার চাইতেও ঢের ঢের বেশি।
    নিজের জীবন যখন যাপন শুরু করেছিলাম বছর দশেক আগে, তখন সাজিয়ে রাখতাম সব। তারপর পুরোটাই কেমন জানি লেবড়ে গেলো হঠাৎ।
    এখন আমার টেবিল, চেয়ার, আলমারি, কুলুঙ্গি, সবখানে ঠাঁসা শুধু বই।
    ভালোই হয়েছে একদিক থেকে।
    হঠাৎ দুপুরে কিম্বা পাগলাটে রাতে এসব হাঁটকাই আমি। খুঁজে বের করি অনাস্বাদিত রোমাঞ্চ। মলাট সরিয়ে নাক ডোবাই পাতাতে। গন্ধ ভেসে আসে ছাপাখানার আবছা। আমি বই পড়ি না। প্রথমেই পড়তে নেই এসব। পড়ে ফেললেই সবটা মাটি। তার চাইতে হাতে নিয়ে চোখ বুজে ভাবতে মজা বেশি।

    অনাঘ্রাতা কাহিনীর আবেশ।

    বই পড়তে হয় তারও কিছু খানিকটা পরে। যত্নে ওল্টাতে হয় পাতা। তর্জনী ছোঁয়াতে হয় আলতো। বইয়ের মলাটে যেন ভাঁজ না পড়ে দৈনন্দনিতার। মলাট যেন সর্বদা থাকে টগবগে।
    এ রোগ আমার চির কালের।

    এক্কেবারে ছোটো ছিলাম যখন আমি, যখন আমার দপ্তরে কেবল রবিনসন ক্রুসো, ট্যুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি আর সুকুমার উপেন্দ্র রচনাবলী, তখনও আমি বই পড়তাম বালিশ আর গুটলি পাকানো গেঞ্জির ঠেকনা দিয়ে। বইয়ের মেরুদন্ড খাটের ওপর রাখা। ডান মলাটের নিচে বালিশ। বাম মলাটের নিচে গোঁজড়ানো গেঞ্জি। দুলে দুলে পড়তাম রামায়ণের মতো।
    তারপর বাবার বোধহয় মায়া হলো। দোকান থেকে গীতাপাঠের স্ট্যান্ড কিনে দিলো একটা। সেই থেকে আমি স্ট্যান্ডে রেখেই বই পড়ি। এখন অবশ্য স্ট্যান্ড নেই আর। এখন আবার গেঞ্জি-বালিশ ফেরৎ এসেছে স্বমহিমায়।

    ইদানিং আমার হাতে অনেক সময়। আমি বেশ বুঝতে পারছি, লেখা আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছে। একটা সময় ছিলো যখন সকালবিকেল রাতনিশুত জেগে কেবল লিখেছি লিখেছি আর লিখেছি। ভূতগ্রস্তের মতো চলেছে আঙুল কি-বোর্ডে ঝিম ধরিয়ে।
    তারপর ক্রমশ ক্লান্তি ঘিরে ধরলো আমাকে। একঘেঁয়েমির ক্লান্তি। একই রকমের বাক্য বিন্যাস, একই ধারার শব্দবন্ধ, বেকার লাগলো বড্ডো। আমি ধারা পাল্টালাম। আমি রূপকথা লিখলাম, গল্প লিখলাম, লিখলাম গোটা দুই আস্ত উপন্যাস। যত লিখলাম, তত ছটফটানি বাড়লো কেবলই। আমি গৎ পাল্টালাম। চেনা গন্ডীর স্বাচ্ছন্দ্য আমার শ্বাসবায়ু ভারী করে তুলছিলো ক্রমশ।
    আমি জানতাম...আমি ঠিক জেনে যেতাম লেখারও আগে, বাক্য কোথায় মোড় নেবে আচমকা, পাঠক কোনখানটা পড়ে বলবে--" হেব্বি লিখেছো ভাই..."
    এই স্বাচ্ছন্দ্যটাই বড়ো একঘেঁয়ে। বড়ো আড়ম্বরময় দৈন্য। ফোঁপরা। অন্তঃসারশূণ্য। এতে অ্যাডভেঞ্চার নেই কোনো। নেই নতুন সৃষ্টির উল্লসিত দীর্ঘশ্বাস।
    চেনা। চেনা। চেনা।
    সবটাই বড্ডো চেনা।
    চেনা হাততালি। চেনা তিরস্কার। চেনা প্রশস্তি।

    গল্প চাইলে তো অনেকই লেখা যায় জীবনটা জুড়ে পাতা এবং পাতা। গল্পের অভাবটা কোথায় জগতে? এই যে এখন রাত এবং ভোরের সঙ্গম, ওই যে অনুধাবনাতীত শব্দে, আর অচেনা একটা সুরে গান বাজছে দূরে মাইকে...আজ বোধহয় ছট..ছট তো দেখি নি আগে। জানতামও না। ছট হোক বা না হোক, ভোর রাতে এই দূর থেকে ভেসে আসা সুর, বড্ডো আনমনা করে দেয় সত্ত্বাকে।
    মনে হয় বালিশ জড়িয়ে হারিয়ে যাই ভাবনাতে। ফিরে যাই বাড়ি। কিম্বা যাই অভিযানে। ঘোড়া ছোটাই কল্পনার এলোমেলো। খেই থাকবে না তাতে এতটুকু। থাকবে না পারম্পর্য্য নীতি।
    আপন কথা, কার-ই বা নিয়ম মেনে এগোয়।

    এই আমি চোখ বুজলাম।
    কী দেখতে পাচ্ছি?
    ঝকঝকে তিনকোণা একটা তুষার শৃঙ্গ। তার ডান দিকের ঢালটা আবছা। তুষার ঝড় অথবা চির-কুয়াশা ঢেকে রেখেছে ওখানটাতে।
    এই পাহাড়টার নাম কে-টু। কারাকোরামের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম। এটার ছবি দেখেছিলাম পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলায় সেই কবে কোন দিনে। পশ্চিম ঢালে মরণফাঁদ পাতা সযতনে। মারা গেছে কতশত বুক চিতানো অভিযাত্রীর দল। গাঁথা থেকে গ্যাছে বরফে। গোঁফে, চুলে, চোখের পাতায় জমাট বেঁধেছে তুষার কুঁচি। অবিকৃত বীর-দেহ।
    স্বপ্ন দেখতাম বড়ো হয়ে ওইখানে উঠবো আমি।
    উঠবো ওই পশ্চিম ঢাল বেয়ে। ম'রে গেলে ম'রে যাবো। কিন্তু ট্রাই নেবো একটা।
    মানস ছবির ওই তুষারাবৃত দিকটাই আমার কল্পনাতে "পশ্চিম ঢাল"।
    যেখানে যেতে পারে না কেউ, সেখানেই তো রহস্য। তাই বোধকরি মানসপট ওখানে কুয়াশাচ্ছন্নতা এঁকেছে জোরালো।

    বড়ো তো হলাম।
    হলো না কিছুই।
    বড়ো হওয়া আদতে একটা প্রসেস মাত্র। কালের চাকার নিয়ম মাফিক গড়িয়ে চলা।
    খোকা হামা টানে, খোকা "আয় আয় চাঁদমামা" বলে, খোকা ইস্কুলে যায়, খোকা বই পড়ে, খোকা আপিস ঠ্যালে, খোকা বেডসোরে ভোগে, খোকা মরে যায়।
    এইইই তো।
    ব্যাস।
    আর তো সেরমটা কিছ্ছুটি নেই।
    মাঝখান থেকে আমরা বোকার মতো কিছু স্বপ্ন দেখতে শিখি। অভিযাত্রীর স্বপ্নপূরণ হয় না আর কিছুতেই।
    যে এভারেস্টে চড়ে তারও হয় না, যে "বাড়ি-আপিস-বাড়ি" খেলে, তারও হয় না।
    স্বপ্ন থাকে অধরাই। বড়ো হওয়ার স্বপ্ন।
    বড়ো হয়ে বাজিমাতের স্বপ্ন।

    এসব নিয়ে তো গল্প লেখাই যায়। লিখেওছি তো কতো। লিখেওছি তো এতদিন। লিখলামও তো আজও ...এই যে।
    তাতে কী এমন ঘোড়ার ডিমটা হলো শুনি?
    যে লেখা একবার লিখেছি, সে পথে আবার হাঁটলে চর্বিতচর্বণই বেরোবে কলমে।
    আবার শুনবো চেনা গতের হাততালি। পরিচিত বাহবা।
    এতে গরিমার হাতছানি থাকলেও, শান্তির আবেশ নেই আত্মার।

    এসব এড়াতেই আমি তাই এখন কেবলই পড়ি। কিম্বা শুয়ে থাকি একলাটি।
    এভাবেই সেদিন পড়ে ফেললাম, বছর খানিক আগে কেনা "গোরা নকশাল"।
    গুরুচন্ডালী পাবলিকেশন থেকে বেরোনো চটি একটা বই। পাতার সংখ্যা ৬৪ । দাম ৬০ টাকা। টেন পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট ধরলে আরোই কম।
    লিখেছেন কল্লোল লাহিড়ী।
    নামেই-- আন্দাজ অনেকখানির।
    নকশাল নিয়ে লেখা।
    কিন্তু শুধু কি তাই?
    গোরা নকশালের প্রতিটা পাতায় আছে বাড়ি ফেরার ছুটি, লালচে ভাতের ঘ্রাণ, ভোর উনুনের ধোঁয়া, শীতের লেপের ওম, শৈশবের অপাপবিদ্ধতা। আর রয়েছে দগদগে একটা প্রশ্ন।
    সামান্য তো একটা চাওয়া।
    সকলের জন্যভাত কাপড় বাড়ি।
    সেটাও সত্যি হলো না কেন?

    কল্লোল, বয়সে হয়তো কাছাকাছিই হবেন আপনি। আপনি কি জানেন, আপনার এ বইটা বড়ো অনাদরে হারিয়ে যাচ্ছে আড়ালে। এ বই চোখের জলে গরম ক'রে পড়তে হয় আদরে। এ বই ছুঁয়ে রাখতে হয় ভালোবেসে।
    আমার যদি ক্ষমতা থাকতো, সকল বন্ধুকে একটা করে কপি দিতাম যত্নে। অ্যাতো সহজ সরল সোজা সাপ্টা উপলব্ধির ছবি আঁকা বড়ো কঠিন।
    আপনি পেরেছেন।
    আপনাকে সাধুবাদ।
    সঙ্গে একখানি প্রশ্ন।
    যদি এ লেখা আপনি পড়েন, তবে উত্তরটা জানাবেন আমায়? প্লিজ?

    আচ্ছা কল্লোল,
    সুযোগ পেলে আবার একই পথে আপনি হাঁটবেন? আঁকবেন একই ছবি অন্য কলমে?

    ধরুন...ধরুন কেউ আপনাকে বললো, --
    " এ লেখাটাই বড়ো করো হে। নতুন করে ধরো। উপন্যাস করো বৃহদাকার। অথবা ছোটোগল্পে ভাঙো পাঁচটা।"

    করবেন?
    বহু ব্যবহারে এই সযতনের ছবিগুলো মলিন হয়ে যাবে না তখন?

    আমি জানি কল্লোল আপনি করবেন না এরকমটা। করবেন না বলেই আপনি অ্যাতো কম লেখেন।

    বেশি লেখাটাই অপরাধ। বেশি লেখাটা বড়ো কদর্যতা। যাঁরা যাঁরা সে মোহে পা দিয়েছেন, তাঁরা সকলেই নাম কুড়িয়েছেন অনেক। কিন্তু বোধকরি, কল্পনাকে প্রথমবার স্পর্শ করতে পারার শিহরণটা হারিয়েছেন অনেকটাই। হারিয়েছেন, ধোঁয়াটে মনের আঙিনায় কঞ্চি হাতে একলা ঘুরে বেড়ানোর আরাম।

    ভালো থাকুন কল্লোল।
    গোরা নকশাল এর জন্য আমার ধন্যবাদ নেবেন।"

    লিখলেন, সব্যসাচী সেনগুপ্ত।

    বইটি এখানে পাবেন,

    আর কলেজস্ট্রীটের দেজ দে বুক স্টোর, ধ্যানবিন্দু, উবুদশ, লেক মলের কাছে জনক রোডের আরশি তে।
    আজ সন্ধে ছ'টা থেকে আরশিতে লেখকের সংগে পাঠকের কথোপকথন, সবার আমন্ত্রণ!
  • pi | ***:*** | ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ১১:৩৭374015
  • name: Ti mail: country:

    IP Address : 18.37.233.107 (*) Date:30 Mar 2018 -- 03:37 PM

    যে জন্য এখানে আসা, সেটা তো বলাই হয়ে উঠল না।
    আপনাদের কল্লোল লাহিড়ী-র গোরা নকশাল লেখাটি অসম্ভব ভাল লেগেছে আমার।
    বইটা পড়বার সময় মনে হচ্ছিল যেন ঘটনাগুলো আমার চোখের সামনে ঘটছে, সব যেন দেখতে পাচ্ছি। মুড়ির বাটি থেকে দেওয়ালের রংচটা খসে পড়া চামড়া পর্যন্ত... সব দেখতে পাচ্ছি। যেন আমিও সেই জায়গাতেই থাকি, আমিও তাঁদেরই একজন।
    খুব একটা সাজিয়ে-গুছিয়ে আমি বলতে পারি না। পারলে হয়তো আরও কিছু লিখতে পারতাম এই "গোরা নকশাল" নিয়ে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন