এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  ছবি

  • বাঙালীর কার্টুনচর্চা

    খাতাঞ্চী
    ছবি | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ২০৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ঋতুপর্ণ বসু | 132.172.***.*** | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২৩:৫০373966
  • রেবতীভূষণ ঘোষ
    ------------------

    -------------------
    ‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন’ কথাটি সত্য হলেও বহু ক্ষেত্রে আত্মবিস্মৃত হিসাবে কুখ্যাত, আমরা আমাদের ‘রতন’দের ঠিক চিনে উঠতে পারি না, বা চিনলেও সঠিক মর্যাদা দিয়ে উঠতে পারি না, ফলে প্রতিভার যাবতীয় বিচ্ছুরণ সত্ত্বেও তাঁরা থেকে যান অবহেলিত।

    এমনই একজন শিল্পী রেবতীভূষণ ঘোষ, শিল্পের নানা মাধ্যমে অনায়াস বিচরন সত্ত্বেও যাঁর পরিচিতি মূলত কার্টুনিস্ট হিসাবে।
    কলকাতার কাছেই বালি অঞ্চলের ছোট্ট ‘রতনমনি’ বা রেবতীভূষণের ছিল ছবি আঁকার শখ। নিজেদের গাছগাছালি ভরা বিশাল বাড়ি হোক বা কলকাতায় সিমলা অঞ্চলে মামাবাড়ি - ছোট্ট রতন মেঝেতে চকখড়ি ঘষে ঘষে এঁকে ফেলত মাঠঘাট, গাছপালা, নদীনালা, হাঁসচরা পুকুর, নীলচে পাহাড় বা দুই রাজার যুদ্ধ। উত্তরপাড়া কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় রতনের কলমে ধরা পড়ল রাগী অধ্যাপকের মুখ। তবে নিজের প্রতিকৃতি দেখে রসবোধসম্পন্ন অধ্যাপক তাকে আরো আঁকার উৎসাহ দিলেন। রেবতীভূষণ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আঁকা ছবি দেখতেন, তবে খুব ভালো লগত ‘সচিত্র শিশির’ পত্রিকায় বিনয় বসুর কার্টুন। রিপন কলেজে সংস্কৃত নিয়ে অনার্স পড়ার সময় রেবতীভূষণ পেয়েছিলেন প্রথিতয্শা অধ্যাপকদের সান্নিধ্য, সেইসঙ্গে বহু কার্টুনের বইতে সমৃদ্ধ কলেজের বিশাল লাইব্ররি। ঘন ঘন লাইব্ররিতে যাতায়াত করার সুবাদে নিবিড়ভাবে পরিচিতি ঘটল ডেভিড লো, উইন্ডহ্যাম রবিনসন, স্ট্রুব, সাপাজু ইত্যাদি প্রবাদপ্রতিম কার্টুনিস্টদের কাজের সাথে। সাথে চলল নিজেস্ব কার্টুনচর্চা।
    রিপন কলেজের ম্যাগাজিনে রেবতীভূষণ প্রথম যে কার্টুনটি ছাপা হয় তার নাম ‘ত্র্যহস্পর্শ’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তিন নায়ক হিটলার, মুসোলিনি ও স্টালিনকে নিয়ে তরুণ কার্টুনিস্টের নিজস্ব অবলোকন। প্রায় সাথে সাথেই তখনকার বহুল প্রচারিত সাময়িক পত্রিকা ‘সচিত্র ভারত’ এর প্রথম পাতায় তার কার্টুনের আত্মপ্রকাশ ঘটল। কার্টুনটির নাম ছিল ‘স্বরাজ সাধন’ — শোষিত মানুষের উপর শোষক ধনবানের চিরন্তন পীড়ন।
    ইতিমধ্যে স্নাতক রেবতীভূষণ ‘বার্মা শেল’ কোম্পানির চাকরীতে যোগদান করেছেন – সেইসঙ্গে অব্যাহত রয়েছে স্কেচ, পোট্রেট, প্রাকৃতিক দৃশ্যপট আঁকার অভ্যাস – কখনও কখনও তা ছাপাও হচ্ছিল নানা পত্রিকায়। পিতৃবিয়োগের ফলে মানসিকভাবে খানিকটা আশ্রয়্চ্যুত রেবতীভূষণ- পিতৃপ্রতীম কোন শিক্ষাগুরুর সান্নিধ্য খুঁজছিলেন। অবচেতনে রবীন্দ্রভাবনা থেকেই মনে এলো শিল্পাচার্য্য অবনীন্দ্রনাথের কথা। রবীন্দ্রনাথ লোকান্তরিত হয়েছেন তার ঠিক একবছর আগে, ১৯৪১ সালে। ঘটনাচক্রে অবনীন্দ্রনাথও তখন জোড়াসাঁকোর পাট উঠিয়ে বালির খুব কাছে বরানগরের ‘গুপ্তনিবাস’এ বসবাস করছিলেন। একদিন রেবতীভূষণ গুটিগুটি পায়ে সেখানে হাজির হলেন। রেবতীভূষণের আঁকা স্কেচের খাতা উল্টেপাল্টে দেখে অবনীন্দ্রনাথ খুশি হয়েছিলেন, তাঁর একটা প্রতিকৃতিতে অটোগ্রাফ দিতে গিয়ে লিখলেন ‘বুড়ো আর্টিস্ট ধরা পড়লো ছোকরা আর্টিস্টের ফাঁদে।’ এই সাহচর্য্য ছিল তরুণ শিল্পী যশপ্রার্থী রেবতীভূষণের জীবনে টার্ননিং পয়েন্ট।
    পরবর্তী ন’বছর এই প্রসিদ্ধ শিল্পগুরুর কাছ থেকে মূল্যবান প্রকরনগত শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন। ‘ওয়াস’ পদ্ধতিতে অবনীন্দ্রনাথ একাধিকবার ছবি এঁকে দেখিয়েছেন রেবতীভূষণকে, এমনকি তার কব্জি ধরে কাগজের উপর পেন্সিলের চাপ বেশি কম করে ড্রয়িংয়ের হালকা গভীর রূপ বুঝিয়ে দিতেন। স্বয়ং অবনীন্দ্রনাথের কাছে ‘কুইক আর্টিস্টের’ শিরোপা পাওয়া রেবতীভূষণ, চিনা শিল্পীদের মত সাবলীল তুলির গতি ও উচ্ছাসকে ধরার প্রয়াস করেছেন। সেইসঙ্গে চলেছে ব্যক্তি, বস্তু বা নিসর্গকে নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণের দীক্ষা। রেবতীভূষণের জলরঙে আঁকা ছবি তিনি মাঝেমাঝে জলে ডুবিয়ে মুছে আসা অস্পষ্টতাকে আবার ফুটিয়ে তুলতেন।
    ১৯৪৫-৪৬ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় রেবতীভূষণের ক্যারিকেচার প্রকাশিত হল। ব্যাঙ্গাত্মক রেখায় ধরা দিলেন ফুটবলার ল্যাংচা মিত্র। এই বছরেই ‘হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড’এ বেশ কিছু কার্টুন বের হল। এরপর আনন্দবাজার ও দেশ পত্রিকায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতে লাগল তার কার্টুন ও অলংকরণ। ‘দেশ’এ অবনীন্দ্রনাথের লেখাকে অলংকৃত করার বিরল সৌভাগ্য তাঁর হয়েছিল – স্নেহধন্য রেবতীভূষণকে তাঁর গুরু দেখিয়েছিলেন ‘চাঁইবুড়ো’ চরিত্রটির স্কেচ।
    ‘দেশ’ পত্রিকায় শচীন করের ‘ট্রামে বাসে’ ফিচারটির নিয়মিত অলংকরণশিল্পী হয়ে উঠেছিলেন ধীরে ধীরে। ‘সচিত্র ভারত’এ, ‘মাননীয়েষু’ নামে ফিচার করেছেন – পঞ্চাশএর দশকে ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় করেন ‘ব্যঙ্গ বৈঠক’ – ছড়া ও কার্টুন সহযোগে বিশ্বপরিক্রমার ব্যঙ্গ রূপ।
    একথা মনে রাখতে হবে যে এইসময়ে বাংলা প্রকাশনার অলংকরণের জগতে শৈল চক্রবর্তী ও রাজনৈতিক কার্টুন জগতে পিসিয়েল (প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী) বিরাজ করছেন স্বমহিমায়। কিন্তু এই দুই দিকপাল শিল্পীর পাশাপাশি রেবতীভূষণও ধীরে ধীরে নিজেস্ব স্বাতন্ত্র্য ও শৈলী নির্মান করেছিলেন, এবং তা নিজগুনে জনপ্রিয় হয়েছিল।
    প্রথমদিকে একটু মোটা রেখায় কার্টুন করলেও ধীরে ধীরে তুলির টানে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর হয়ে এল এবং সেই তুলির টানে অলংকৃত চরিত্রদের রাগ, বিরাগ, আনন্দ, বিষাদ চিত্রায়িত হল অনবদ্যভাবে।
    ছোটদের জন্য তার অপূর্ব নির্মান ছিল সচিত্র ছড়া। তুলির টানেই ছড়াটি লেখা ও তুলির টানেই ছবি। প্রকাশক বা সম্পাদক লেখা ছবি সমেত পুরো বস্তুটি ব্লক করিয়ে নির্দ্বিধায় ছেপে দিতেন। এমন জিনিস আর কেউ অনুরূপ সফলতার সাথে করতে পারেননি।
    চাকরি ও কার্টুন একসাথে চলছে। এঁকে চলেছেন মাতৃভূমি, অচলপত্র, শনিবারের চিঠি, উল্টোরথ, দৈনিক বসুমতি, যুগান্তর, সত্যযুগ, কৃষক, জলসা, বসুধরা, বেতার জগৎ, সিনেমা জগৎ, অমৃত, শারদীয়া যুগান্তর, শারদীয়া আনন্দবাজার, নবকল্লোল, ইত্যাদি পত্রপত্রিকায়। একসময় বার্মা শেলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দিলেন। পরে ধর্মঘটে যোগ দিয়ে সেকথা সাহসভরে স্বীকার করার খেসারত হিসাবে তাঁকে চাকরিটা খোয়াতে হয়। ব্যাস, তখন থেকেই পুরোপুরি পেশাদার বনে গেলেন।
    পঞ্চাশের দশক থেকেই তাঁর কার্টুন শংকরস্ উইকলিতে ছাপা হয়ে চলেছিল। এবার সেখানে আরো বেশি সময় দিতে লাগলেন। ছোটদের পত্রিকা যেমন মৌচাক, শিশুসাথী, রংমশাল, শুকতারা, শিশুমহল, ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর সেই ছড়া-কার্টুন-এর অনবদ্য যুগলবন্দীও থামেনি। রবিবারের আনন্দবাজারের ছোটদের পাততাড়িতে নিয়মিত আঁকা দিতেন। প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদাকে কমিক্সে রূপ দেবার ব্যাপারে অগ্রগন্য ভূমিকা নিয়েছিলেন রেবতীভূষণ। বসুমতীতে বেরিয়েছিল ‘পিন্টু’ বলে একটা কার্টুন স্ট্রিপ।
    ১৯৬৫এ বিখ্যাত কার্টুনিস্ট ও ‘শংকরস্ উইকলি’র সম্পাদক শংকার পিল্লাইএর ডাকে দিল্লি চলে গেলেন। নেহেরুর অকৃত্রিম সহযোগিতায় শংকর দিল্লীর বাহাদুর শা জাফর মর্গে স্থাপন করেন Children’s Book Trust বা CBT'র কার্যালয়। রেবতীভূষণ সেখানে যোগ দিলেন সিনিয়ার আর্টিস্ট হিসাবে। CBT জ্ঞান বিজ্ঞান ও সাহিত্যের নানা বই ছোটদের জন্যে প্রকাশ করে। CBTর বহু বইয়ের অলঙ্করণ-এ রয়েছে তাঁর তুলির স্পর্শ়
    দিল্লিতে ন্যাশনাল হেরাল্ড, হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, পাইওনিয়ার, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, দিল্লি স্টেটসম্যান কাগজে কার্টুন করেন তিনি। U.B.S., Franc Brothers, Hemkunt Press এইসব সর্বভারতীয় প্রকাশন সংস্থার হয়েও কাজ করেন।
    বাংলা অ্যানিমিশানের এর ক্ষেত্রেও রেবতীভূষণের বিরাট অবদান আছে। নিউ থিয়েটার্স চলচ্চিত্রের প্রযোজক বি এন সরকার তাঁকে আমন্ত্রণ জানালেন বাংলা ভাষার সর্বপ্রথম অ্যানিমিশান ছবি ‘মিচকে পটাশ’এর চরিত্রায়ন করতে। আর সেখানেই ওয়াল্ট ডিসনির মিকি মাউসের আদলে রেবতীভূষণ আঁকলেন ছটফটে নেংটি ইঁদুর ছানার কান্ডকারখানা। স্বল্প সময়ের সেই ছবির গল্প লিখেছিলেন নামকরা শিশুসাহিত্যিক সুনির্মল বসু। স্বনামধন্য শৈল চক্রবর্তী ও গনেশ পাইনও যুক্ত ছিলেন এই প্রকল্পের সঙ্গে। ছবিটি ১৯৫১তে মুক্তি পেয়েছিল চিত্র, প্রাচী, ও পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রযোজনায় স্বাস্থ সচেতনতা সম্পর্কিত অ্যানিম্যেশান্ ছবি ‘কুইন অ্যানোফিলিস’ও তিনি নির্মান করেন।
    ৫০-৬০এর দশকে উল্টোরথ, সিনেমা জগৎ, ইত্যাদি পত্রিকার পাতায় দেখা মিলত রেবতীভূষণের নানা কার্টুন ও ক্যারিকেচারের। উত্তমকুমার ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর করা কার্টুন ফীচার এখনো বহু প্রাচীন পাঠকের স্মৃতিতে অম্লান। ভানু বন্দোপাধ্যায় ও জহর গাঙ্গুলি অভিনিত ‘চাটুজ্জ্যে বাঁড়ুজ্যে’ ওপেনিং ক্রেডিটএর নামলিপি ও ইলাস্ট্রেশন করেছিলেন় (১৯৫৫)।
    চিলড্রেনস বুক ট্রাস্টের সাথে তাঁর চুক্তি ছিল দু'বছরের। চুক্তির মেয়াদ শেষ হবার পর যখন কলকাতায় ফিরে আসবেন কিনা ভাবছেন, তখন প্রবাদপ্রতিম কার্টুনিস্ট শৈল চক্রবর্তী তাকে বলেন, ‘দ্যাখো দিল্লি হচ্ছে দেশের রাজধানী, এখানে কাজের সুযোগ অনেক বেশি। তোমার নিজের উপর আস্থা থাকলে আর কিসের ভয়? কাজের অভাব হবে না।’ দিল্লিতে রেবতীভূষণ দীর্ঘ দু'দশকের বেশি প্রবাস জীবন কাটিয়ে বালিতে নিজের পৈত্রিক বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। শৈল চক্রবর্তীর মতই তিনি ফ্রিলান্সিং করেই সুন্দরভাবে নিজের পরিবারকে প্রতিপালন করেছিলেন - এবং তাঁর তিন ছেলের প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত, যশস্বী ও সুপ্রতিষ্ঠিত।
    রেবতীভূষণ সান্নিধ্য পেয়েছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলি, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, দিপ্তেন্দ্র কুমার সান্যাল, দাদাঠাকুর, পঙ্কজ মল্লিক, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, প্রবোধকুমার সান্যাল, নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়, পুর্নেদু পত্রী, কার্টুনিস্ট প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ি বা পিসিয়েল, পি। সি। সরকার (সিনিয়র), এমন আরো অনেকের।

    নন্দলাল বসুর উপদেশ ছিল ‘খারাপ কাগজে কখনো ছবি আঁকবে না’ প্রায়শই যা অবহেলিত হয়েছে। সৃষ্টির তাড়নায় তিনি ধোপার বিল, ট্রেনের টিকিট, সাধারণ কাগজে কার্টুন করেছেন। ফলে সময়ের সাথে সাথে কাগজটি বিবর্ণ ও ভঙ্গুর হয়ে সংরক্ষণের অযোগ্য হয়েছে।
    সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ তাঁকে দর্শকের চোখে জনপ্রিয় হবার জন্য ছবিতে গতিময়তা আনার কথা বলতেন। রাজশেখর বসু তাঁকে বলেছিলেন, ‘এইযে আপনি ছবিটবি আঁকছেন – পারিশ্রমিক পাচ্ছেন?’ কারণ শিল্পীর প্রাপ্য পারিশ্রমিক না দেবার একটা ব্যাপার তখনো ছিল, এখনো আছে।

    চটযলদি পোট্রেট আঁকায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। একেবারে সামনে থেকে মহাত্মা গান্ধী, বড়ে গোলাম আলি, আমীর খান, সীমান্ত গান্ধী, পেলে, ইউরি গ্যাগারিন, ভালেন্তিনা তেরেসকোভা, মহম্মদ আলি, অক্টাভিও পাজ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, প্রভৃতি ব্যক্তিত্বের প্রতিকৃতি এঁকে তাঁদের দিয়ে সইও করিয়ে নিয়েছিলেন। সেই সংগ্রহ নিয়ে একটা প্রদর্শনীও হয়েছিল় তাঁর নিজের ভাষায়, ‘Caricature মানে এক কথায় বলি, — ‘Abstraction of Human Physiognomy – সেই Abstraction যে যত successfully করতে পারবে সেই তত ভালো Caricaturist হবে। এবার হয় কি লোকটা যত বেশি celebrity মানে নামকরা হয়- international recognition থাকে, Abstractionএর সুবিধা হয় – যেমন বার্নার্ড শ’ বা হিটলার। (দেবাশিষ দেবের সাথে সাক্ষাৎকার — বিষয় কার্টুন পত্রিকা, ২০০৮)
    প্রখ্যাত শিল্পী দেবাশিষ দেব প্রায়ই চলে যেতেন তাঁর প্রকৃতির সান্নিধ্যযুক্ত বালির বাড়িতে। দীর্ঘ সাক্ষাৎকার ও জীবনচর্চার ডকুমেন্টেশান ধরা থাকত হান্ডিক্যামে। এইরকম আলাপচারিতায় পেইন্টার আর কার্টুনিস্টের মধ্যে তফাত বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘একজন কার্টুনিস্ট ইচ্ছা করলেই চারটে পেইন্টিং করে ফেলতে পারবে, কিন্তু একজন পেইন্টার কার্টুন করতে পারবে না। আমি নন্দলালের মত হতে পারব কিন্তু নন্দলাল আমার মত হতে পারবে না়’ ‘আমি কার্টুন করতে করতে ফাইন আর্টসে গেছি, আবার ফিরে এসেছি।’
    রেবতীভূষণের সবচেয়ে নজড়কারা কাজ বা Hallmark of excellence হল তাঁর অ্যানিমাল ড্রয়িং। তাঁর রেখায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে পশুপাখিদের চলমান জগত। পঞ্চতন্ত্র, হিতোপদেশ বা ঈশপের গল্পের কুশীলবরা বেশিরভাগই পশুপাখি হলেও তাদের রাগ, বেদনা, আনন্দ, মানুষের মতই ফুটে উঠেছে কয়েকটি রেখার আঁচড়ে় কার্টুনিস্ট কুট্টির মতে অ্যানিমাল ড্রয়িংএর ক্ষেত্রে ‘Revoti was as great as Disney.’ খরগোশের ছটফটানি, শেয়ালের মিচকামি, হাতির গদাইলস্করি, বাঁদরের বাঁদরামি, আর বাঘ সিংহের রাজকীয় মেজাজ তার তুলিতে বাঙ্ময় হয়ে উঠেছিল।
    অশির দশকের প্রথমদিকে ভুটানের রাজার আমন্ত্রণে থিম্পুর রাজপ্রাসাদে ছিলেন কিছুকাল় পেয়েছিলেন রয়াল আর্টিস্টের মর্যাদা। সেইসময়ে তাঁর জলরঙের নিসর্গচিত্রে ধরা পড়েছিল পাহাড়ের প্রকৃতি।
    রবীন্দ্র অনুরাগী রেবতীভূষণ রীতিমত মনোযোগ দিয়ে গান শিখেছিলেন সুবিনয় রায় ও অশোকতরু বান্দ্যোপাধায়ের কাছে। ছিল ধ্রুপদী সঙ্গীতের তালিমও। ফুটবলে হাফব্যাক খেলেছেন বালি ব্যারাকপুর সংঘের হয়ে। কাবাডিও ভলিবলে সমান দক্ষ ছিলেন। রেবতীভূষণ আশি বছরেও গঙ্গায় সাঁতার দিতেন অক্লেশে। ছোটদের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘ডাইভদাদু’ হিসাবে। পক্ষীপ্রেমিক এই কার্টুনিস্টএর সবুজ ঘেরা কলতানমুখরিত বাড়িতে তাকে ঘিরে থাকত পালকে ঢাকা বন্ধুরা।

    দীর্ঘ প্রবাসের পর বাংলায় ফিরে অবশ্য তথাকথিত মূলস্রোতের বহুল প্রচারিত কোন কাগজে বা পত্রপত্রিকায় তাঁর কাজ যে সাদরে গৃহীত হয়েছিল, তা নয়। সময়ের সাথে সাথে মানুষের বিনোদনের কনসেপ্ট বদলে গিয়েছিল। বেশ কয়েকবার দূরদর্শনে তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, সেখানে আলাপচারিতায় অকপটে ব্যক্ত করেছিলেন তাঁর নিজের কথা ও শিল্পভাবনা। ১৯৯৭এ রঙ্গ বঙ্গ রসিকেষু পত্রিকা তাকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছিল সম্পাদক বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায় অক্লান্ত উৎসাহ ও প্রচেষ্টায়। ১৯৯৮ সালে আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসে হয় তার একক প্রদর্শনী। ২০০১ সালে ওনার আশি বছরের জন্মদিনে পালিত হয়েছিল জীবনানন্দ সভাঘরে – ওই পত্রিকার তরফে- উদ্দ্যোক্তাদের অন্যতম বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়় তাঁর অনেক চিত্র ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সংগ্রহ করেছিল, উদ্দেশ্য তাঁর চিত্রকল্প ও জীবন নিয়ে বই প্রকাশ করা। নানান আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সেগুলির ভবিষ্যত অজ্ঞাত।
    মৃত্যুর একসপ্তাহ আগেও ২৩শে ডিসেম্বর ২০০৭ সালে বালি সাধারণ গ্রন্থাগারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শিল্প শিবিরে হাজির হয়ে ক্ষিপ্রহস্তে তুলির বলিষ্ঠ টানে এঁকে ফেললেন দুএকটি ছবি। গতিময় সেই ছবিতে জরার কোন চিহ্ন নেই।
    না, তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলি একত্র করে কোন বই এখনো প্রকাশ করা হয়নি। প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছিলেন বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায় ২০০৮ সালে তাঁর সম্পাদিত বিষয় কার্টুন পত্রিকায় বিশেষ রেবতীভূষণ সংখ্যা প্রকাশ করে। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টাতেই চোখের আড়ালে চলে যাওয়া বহু কার্টুন পুনরুদ্ধার হয়েছে ও রেবতীভূষণ সম্পর্কিত একটি তথ্যভান্ডার গড়ে উঠেছে।

    "শিল্পের যা কিছু সবই আমায় আকৃষ্ট করে ---- তা শুধু কার্টুন নয়। আমি নানা ছবি এঁকেছি বিশেষতঃ প্রকৃতিকে উপলব্ধি করে। ভাস্কর্যেও হাত মকশো করেছি। সব মিলিয়ে আর্টিস্ট হবার চেষ্টা করেছি। "
    রেবতীভূষনের এই কথিটির মধ‍্যেই লুকিয়ে আছে ওনার জীবনদর্শনের নির্যাস।
    ------------------------------------

    <
    <
  • খাতাঞ্চী | 132.172.***.*** | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২৩:৫১373969
  • খাতাঞ্চী | 132.172.***.*** | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২৩:৫২373971
  • খাতাঞ্চী | 132.172.***.*** | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২৩:৫২373970
  • খাতাঞ্চী | 132.172.***.*** | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২৩:৫৩373972
  • pi | 24.139.***.*** | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৯:০৭373973
  • বাহ ! দারুণ টই !

    ঋতুপর্ণবাবু ব্লগে এনিয়ে একটা সিরিজ চালু করুন না?
  • ঋতুপর্ণ বসু - কার্টুন দল | 233.226.***.*** | ০৫ মার্চ ২০১৮ ১৭:২১373974
  • এখন 'কার্টুন' বললেই ছোটরা চট করে বলে ফেলবে  জনপ্রিয় আ্যনিমেশন টিভি সিরিজের কিছু নাম ও চরিত্র --- পোকেমন, ছোটা ভীম বা মোটু পাতলু। আজকের বিশ্বায়িত অর্থনীতির যুগে কিছুটা শিশুসুলভ মজা ও হাইটেক বিনোদন যোগানোর বাইরেও যে 'কার্টুন' শব্দটির মধ‍্যে অন‍্য দ‍্যোতনাও ছিল, তা আমাদের বারে বারে নিজের সৃষ্টিতে, লেখায়, বক্তৃতায় ও সাক্ষাৎকারে বুঝিয়ে গিয়েছিলেন চন্ডী লাহিড়ী।  নিজের শৈলীটিকে চিনতেন, চেনাতেন, এর অনন্ত সম্ভাবনার কথা বিভিন্ন প্ল‍্যাটফর্মে  বলতেন এবং বাংলায় কার্টুনচর্চার বিলুপ্তির অশনিসঙ্কেত পেয়ে আতঙ্কিত হতেন এই অধুনাপ্রয়াত শিল্পী। বস্তুতপক্ষে,  চন্ডী লাহিড়ী  ও কার্টুন ---  শিল্পী ও তাঁর ফর্ম  -----অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছিল বাঙালীর চোখে।
    ১৯৩০ সালে নবদ্বীপে জন্ম চন্ডীদাস লাহিড়ীর। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার ঝোঁক। দুর্ঘটনাবশতঃ পেয়ারাগাছ থেকে পড়ে বাঁ হাতটি হারিয়েছিলেন। বাংলার কার্টুনিস্টদের অন‍্যতম বৈশিষ্ট‍্য, প্রত‍্যেকেই কমবেশি উচ্চশিক্ষিত  এবং আর্ট স্কুল পাশ না হলেও নিজস্ব অনুশীলনের দ্বারা ড্রয়িং এ দক্ষতা অর্জন করেছেন।  পূর্বসূরী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, পিসিয়েল বা প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ী, শৈল চক্রবর্তী, সমসাময়িক রেবতীভূষণ বা একটু পরবর্তী প্রজন্মের অমল চক্রবর্তীর মত তিনিও স্বশিক্ষিত কার্টুনিস্ট।
     কলকাতা বিশ্ববিদ‍্যালয় থেকে এম,এ পাশ করে তিনি চাকরীর খোঁজে কলকাতায় আসেন। ঐ শহরে তাঁর সাথে যাঁদের ঘনিষ্টতা গড়ে উঠেছিল, তাদের অনেকেই আর্ট কলেজের ছাত্র --- যেমন সুনীল দাশ। চাকরী পেলেন 'লোকসেবক' কাগজে।
     'রাত্রে লোকসেবকের সাবএডিটর। দিনে টো টো করে ঘুরে বেড়াই। উদ্দেশ‍্যহীনভাবে স্কেচ করে যাই।' 'কার্টুন ছিল নিছকই সখের ব‍্যাপার। কিন্তু মাঠে ঘাটে ঘুরে ছবি আঁকার উৎসাহ ছিল প্রথম থেকেই। নামে সাব এডিটর হলেও রিপোর্টারদের সাথে ঘুরে বেরিয়েছি এবং রিপোর্টিংও করেছি। ' 'লোকসেবকের মোটে আঠার টাকা বেতন, তাও দুমাস বকেয়া থেকে যেত। তাতে খাওয়া কুলোত না, কিন্তু ন‍্যাশনাল লাইব্রেরীতে যাওয়া চলত। ' চন্ডী লাহিড়ীর অদম‍্য জ্ঞানতৃষ্ণা তাকে টেনে নিয়ে যেত বিভিন্ন লাইব্রেরি,বঙ্গীয় সাহিত‍্য পরিষৎ এর রিডিং রুম ও রাস্তার ধারে পুরানো বই এর পসরায়।
    '১৯৬২ সালে চীন ভারত সংঘর্ষের ঠিক আগে কোন এক সময় হিন্দুস্থান স্ট‍্যান্ডার্ড পত্রিকায় থার্ড আই ভিউ নামে দৈনিক পকেট কার্টুন শুরু করি।' 'সংবাদপত্রে কাজ করার ব‍্যাকগ্ৰাউন্ড ছিল, সংবাদপত্র কি চায় ভালই বুঝতে পারতাম। '
    সেই কার্টুন দেখে আনন্দবাজারের সন্তোষকুমার ঘোষ চন্ডী লাহিড়ীকে ভার দিলেন 'তির্যক' নামে একটি পকেট কার্টুনে ছবি আঁকার।
    'তির্যক', আনন্দবাজার এবং চন্ডী লাহিড়ী এই ত্রিভুজ  প্রাচীনত্বের সীমায় পা দেওয়া বাঙালীদের স্মৃতিমেদুরতায় আজো আচ্ছন্ন করে। কাগজের প্রথম পাতার বাঁ পাশে পকেট কার্টুনের ছোট্ট পরিসরে চন্ডীবাবুর ব‍্যঙ্গ তূনীর থেকে নিক্ষিপ্ত হত অব্যর্থ  ও শানিত কটাক্ষ।
    'যখন আনন্দবাজারে এলাম, তখন চারিধারে কেবল 'নেই' 'নেই' ডাক। ' 'আমি কাজ শুরু করলাম সেই 'নেই' 'নেই' এর পশ্চাদপটে। সাধারন মানুষ এতই কষ্ট পেতেন যে কার দরজায় যাবেন ভেবে পেতেন না। সকালে কল খুলে দেখলেন জল নেই। কোথাও দেখা গেল কলের জলের সঙ্গে ছোট সাপ বের হয়ে এসেছে। এক কাপ চা মুখে দিয়েছেন, গা ঘিন ঘিন করে উঠল। চায়ে চামড়ার গুঁড়োর ভেজাল। ' 'এক সের চালে (কেজির হিসাব পরে চালু হয়েছে ) আড়াই ছটাক কাঁকরের মিশ্রণ সাধারন ক্রেতা প্রাপ‍্য বলে ধরে নিতেন। রসিক ক্রেতা কাঁকরমেশানো চালের নাম দিয়েছিল কাঁকরমণি।' আটায় তেঁতুলের বীচি বা স্টোন পাউডার, সিমেন্টে গঙ্গামাটি, ঘিয়ে পশুচর্বির মিশ্রণ তখনকার নৈমিত্তিক ঘটনা। '
    চন্ডী লাহিড়ীর মতে, কল‍্যানকামী  রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব সম্প্রসারনের সাথে সাথে কার্টুনিস্টদের সামনে উন্মোচিত হয়েছিল  বিপুল সম্ভাবনার দ্বার। চিকিৎসা, বাসগৃহ, ব‍্যবসা বানিজ‍্য, স্বাস্থ‍্য ইত্যাদি সবকিছুর দায়দায়িত্ব সরকারের। ' ফলে, হাসপাতালে বেড নেই, চেপে ধরো সরকারকে। বাড়িভাড়া মিলছে না, ধরো সরকারকে। স্কুলে সিট নেই সরকার করছে কি? চালে কাঁকর, খাদ‍্যমন্ত্রী কি ঘুমোচ্ছেন ?,'
    'কার্টুনিস্ট হিসাবে আমার কাজ হল দেশের সাধারন নাগরিকদের সংবিধান যে সব অধিকার দিয়েছে সেগুলি লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখা।'
    'সচিত্র ভারত' এ প্রকাশিত প্রমথ সমাদ্দার ও রবীন ভট্টাচার্যের কার্টুন, চন্ডী লাহিড়ীর মতে, স্থূল বিনোদনের উপাদান হবার বাইরে এগোতে পারেনি। ছাত্রী ও শিক্ষকের প্রেম, মাতালের মাতলামি, চাকরি করা মেয়েদের নিয়ে কৌতুক, ঐসব নিয়ে লঘু তামাশা নয়-- গোড়া থেকেই নিজের কার্টুনকে বিপরীত মেরুতে স্থাপন করেছিলেন তিনি। ' বিশুদ্ধ প্রমোদ বলে কিছু নেই। সবকিছুর সঙ্গেই রাজনীতি বা সরকার কম বেশি জড়িত। চালের দাম একটাকা বাড়লে খাদ‍্যনীতি চলে আসে, খাদ‍্যনীতি মানেই সরকার। সরকার মানেই রাজনীতি। '
    ' তির্যক' এর ছোট্ট জানালায় উঁকি মারলে দেখা যেত সমসাময়িক অবক্ষয়ের নানা খন্ডচিত্র। কালোবাজারি ও অসৎ ঠিকেদাররা পন্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বিপুল কর্মযজ্ঞের কনট্র‍্যাক্ট
    হস্তগত করছে, হাসপাতালে রোগীর সাথে বিড়াল কুকুরের সহাবস্থান, চাঁদার নামে তোলাবাজি, নেতাদের ঘুষ ইত‍্যাদি। সেই সময়ে রাজনীতির দুবৃর্ত্তায়ন সম্পূর্ণ হচ্ছে ধীরে ধীরে, পুলিশের ভূমিকা কখনো  খানিকটা উর্দিপরা গুন্ডা, কখনো বা নেতাদের আজ্ঞাবহ দারোয়ানের মত। 
    খাদ‍্য আন্দোলনে ছাত্ররা পথে নেমেছেন। পুলিশও লাঠি, কাঁদানে গ‍্যাস নিয়ে নেমে পড়েছে মোকাবিলায়। তির্যকে কার্টুন বের হল : পুলিশ অফিসার একপ্রস্থ গুঁতুনি দেবার পর  গ্ৰেফতার  ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করছেন, 'বাপের নাম কি?' ভয়ার্ত ছাত্রটি হাতজোড় করে বলছে 'ভুলে গেছি স‍্যার!!!'
    কিংবা হোমিওপ‍্যাথিক কলেজে ছাত্রবিক্ষোভ চলছে, অধ‍্যক্ষ  থানায় ফোন করেছেন শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায়। ওসি প্রত‍্যুত্তরে ফোনে জিজ্ঞেস করছেন,'কি চাই, হোমিওপ‍্যাথিক না আ্যলোপ‍্যাথিক ? ' অর্থাৎ লাঠৌষধি কতটা প্রয়োগ করা যাবে।
    'চোর মস্তান পুলিশ অথবা কেরানি গোছের লোক দারুন আঁকতেঁন চন্ডীদা ----- বিশেষ করে মস্তান হলেই তার পোশাক হবে চাপা প‍্যান্ট, সরু জুতো আর গায়ে ডোরাকাটা টাইট গেন্জি। এই ব‍্যাপারটা আমার ছোটবেলা থেকেই খুব মনে ধরেছিল তাই এখনও ওই রকম  কোন চরিত্র আঁকতে গেলেই তাঁর গায়ে ওইরকম পোশাক না দিয়ে পারি না। 'বলেছেন অনুজ শিল্পী  দেবাশীষ দেব। (  আমার বিচিত্র শিল্পজীবনের চৌহদ্দি, ধ্রুবপদ,২০০২ )
    তির্যকে আরো দু একজন কার্টুন করেছেন, কিন্তূ পকেট কার্টুনের অবিসংবাদী শিল্পী বার্ট ল‍্যাঙ্কাস্টারের মতই চন্ডী লাহিড়ী অপ্রতিদ্বন্দী। শুধু রাজনৈতিক বিষয় নয় ------  খেলাধূলা, পোশাক, শিক্ষাব‍্যবস্থা, বাসস্থান, পরিবহণ, চিকিৎসা, নারীস্বাধীনতা, পরিবেশদূষণ, বন্দীমুক্তি, বিজ্ঞান,মনস্তত্ত্ব, অর্থনীতি সবকিছুই চলে এসেছে তাঁর কার্টুনের বিষয়বস্তুতে।
     
    কার্টুন আঁকার ক্ষেত্রে পিসিয়েল বা প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ীর স্টাইল তাঁকে প্রভাবিত করেছিল।
    চন্ডী লাহিড়ী ১৯৯০ পর্যন্ত আনন্দবাজারে কাজ করেছেন। তাঁর মতে, ' প্রত‍্যেক বৃহৎ সংবাদপত্র অফিসের অন্দর মহলে ঘরের মধ‍্যে অনেক মশারি থাকে। নিজেদের স্বার্থের উন্নয়নে তারা ছোট ছোট গোষ্ঠী গড়ে মালিককে উস্কে দেন। সেখানে মালিককে খুশি করার জন‍্য ইঁদুর দৌড় চলে। কার্টুনিস্ট সংবাদপত্রে থাকেন একজন, বড়জোর দুজন। কাজেই কার্টুনিস্টকে মার খেতে হয়। তিনি সংখ‍্যালঘু।' ' কেউ একজন 'এটা কার্টুন হয়নি, কোনো হিউমার নেই ' বলে মন্তব‍্য করলে কার্টুনিস্টের পক্ষে বোঝানো শক্ত সেটা কার্টুন হয়েছে এবং যথেষ্ট হিউমারসমৃদ্ধ। সংখ‍্যায় তিনি একক, রিপোর্টার কয়েক ডজন। সাব এডিটর কয়েক ডজন, ফটোগ্ৰাফার কয়েক ডজন কিন্তু কার্টুনিস্ট একেবারে একা। '
    কর্মজীবনে বহু ব‍্যক্তিত্বকে কাছ থেকে দেখেছেন।  আনন্দবাজারের তৎকালীন মালিক অশোক সরকার ছিলেন বটবৃক্ষের মত।'সন্তোষ ঘোষ, সুবোধ ঘোষ, সরোজ আচার্য এবং সর্বকনিষ্ঠ নীরেন চক্রবর্তী --  যাদের আলাপ আলোচনা সাহিত‍্য সংস্কৃতির এক বিশাল অঙ্গনে পরিব‍্যপ্ত ছিল।' ' যে কোন আকাট মুখ‍্যুও ওই পরিবেশে পন্ডিত হয়ে যেতে পারে। '
    তাঁর কার্টুনে খাদ‍্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের প্রতি কটাক্ষ থাকত। 'প্রফুল্ল সেনের মূখে গান্ধীবাদ, মনে স্ক্রূর প‍্যাঁচ। ' ' প্রফুল্ল সেন সকালের আনন্দবাজারে আমার কার্টুন দেখলেই  ক্ষেপে যেতেন।' 'তিনি গোপনে নির্দেশ দিয়ে আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিলেন।'  বহু কষ্টে সেই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
    বাংলার মুখ‍্যমন্ন্ত্রীদের মধ‍্যে জ‍্যোতি বসু ছিলেন তাঁর চোখে সবচেয়ে নীরস। একবার মিনার্ভা থিয়েটারে একটি অনুষ্ঠানে  সেদিন আনন্দবাজারে প্রকাশিত একটি কার্টুনের সূত্রে  চন্ডী লাহিড়ীকে কুৎসিৎ আক্রমণ করে চরম অসৌজন‍্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। অন‍্যদিকে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সংস্কৃতিমনস্কতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন চন্ডী লাহিড়ী। প্রমোদ দাশগুপ্ত, হরেকৃষ্ণ কোঙার, বিনয় চৌধুরী, যাদুকর পি,সি , সরকার (সিনিয়র), মন্ত্রী ভূপতি মজুমদার ইত‍্যাদি বিখ‍্যাত মানুষদের সান্নিধ‍্যে এসেছিলেন। নাট‍্যব‍্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্রের সাথে গভীর পারিবারিক সখ‍্যতা। বিশিষ্ট দন্তচিকিৎসক বারীন রায়ের সাথে আমৃত্যু ঘনিষ্টতা ছিল।
    আনন্দবাজার ছাড়াও তাঁর কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে  ষষ্ঠীমধু, সরস কার্টুন, খেলা, পরিবর্তন, কোলফিল্ড টাইমস, সত‍্যযুগ প্রভৃতি পত্রিকায়।   আনন্দমেলা, শিশুসাথী, পক্ষীরাজ, আনন্দ,কিশোরমন, কিশোরভারতী, সন্দেশ  প্রভৃতি শিশুদের পত্রিকায় তাঁর  কার্টুন ও কমিকস নিয়মিত বেরিয়েছে। চচ্চড়ী, Toddle Trouble, বাহারী শৈশব, মিচকে ও নেংটি  হল ছোট্ট বন্ধুদেরকে দেওয়া তরুনমনস্ক চন্ডীর উপহার। আশির দশকে দূরদর্শনের চিচিং ফাঁক অনুষ্ঠানে তিনি হাতে কলমে কার্টুনশিক্ষার পাঠ দিয়েছেন। আ্যনিমেশান ছবি করেছিলেন তিনটি ---- Under the Blue Moon, The Biggest Egg এবং Be a Mouse Again. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের জন‍্য করা তাঁর প্রচারমূলক কার্টুনগুলো ট্রামে বাসে হোর্ডিংএ বা গণমাধ‍্যমে এখনো চোখে পড়ে। ধন‍্যি মেয়ে, চারমূর্তি, পাকা দেখা ও ফুলু ঠাকুমা ----- এই চারটি ছায়াছবির টাইটেল ক্রেডিট চন্ডী অলঙ্কৃত। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর টেলি সিরিয়াল অবিরত চেনামুখ ও মেঘনাদ ভট্টাচার্যের নাটক বধূতন্ত্রে ব‍্যবহৃত হয়েছে চন্ডী লাহিড়ীর অনুকরনীয় কলাকৃতি। গড়িয়াহাট মোড়ের ছায়া স্টোর্স  ও  এমপি জুয়েলার্সের  লোগো  তিনি করে দিয়েছেন। গাঙ্গুরাম মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠানের হয়েও কাজ করেছিলেন।  শহরের একটি হাসপাতালের ক‍্যান্সার ইউনিট শিশুদের জন‍্য তাদের কেমোথেরাপি ওয়ার্ডে টাঙ্গিয়ে রেখেছে মন ভাল করা চন্ডীর কার্টুন। এটা থেরাপীর একটা অংশ।
    যষ্ঠীমধু পত্রিকায় চন্ডী ঠাকুর ছদ্মনামে লিখতেন, লেখার অভ‍্যাস ছিল তাঁর সহজাত। কার্টুনের ইতিহাস নিয়ে যেমন লিখেছেন 'কার্টুনের ইতিবৃত্ত' , তেমনি বাংলা কার্টুনের পথিকৃৎ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কে নিয়ে তাঁর গবেষণার ফসল 'গগনেন্দ্রনাথ'।
    'বাঙালীর রঙ্গব‍্যঙ্গচর্চা' গ্ৰন্থে তাঁর পান্ডিত‍্যের ধার থাকলেও গুরুভার  নেই, আর 'বিদেশীদের চোখে বাংলা'   হল চন্ডীর  প্রিয় বিষয় ইতিহাস ও  Cultural Anthropology কে আরো সহজপাচ‍্য করে পাঠকের কাছে পেশ করার নিদর্শন। একটি টিভি চ‍্যানেলে   ' চন্ডীপাঠ' নামে একটি  অনুষ্ঠান জনপ্রিয় হয়েছিল। উল্লেখ‍্য, 'চন্ডীর চন্ডীপাঠ'  নামে একটি রসরচনাও তিনি লিখেছেন। 'কথায় কথায়' ও 'চলমান প্রসঙ্গ'  হল anecdotes একটি সংগ্ৰহ। চন্ডীর নিজের কথাতেই, বিদ‍্যা হিসাবে 'কার্টুন হল সর্বগ্ৰাসী।'প্রচুর জ্ঞান আহরণ, অভ‍্যাস ও পরিশ্রমের ফসল ঐ বই গুলি।  নিজের ব‍্যঙ্গ ও বৈদগ্ধকে সার্থকভাবে মেশাতে পেরেছিলেন তিনি।
    তাঁর কার্টুনের বইগুলির মধ‍্যে উল্লেখ‍্য হল Since Freedom , Chandi Looks Around, Visit India with Chandi প্রভৃতি। 'ছিঁটেফোঁটা' বইটিতে রয়েছে
     পরিবেশ দূষন নিয়ে ভাবনা উদ্রেককারী বেশ কিছু কার্টুন।
    ২০০৮ সালে চন্ডী লাহিড়ী বালিগন্জের উইভার্স স্টুডিও তে একটি কার্টুন নিয়ে প্রদর্শনী কিউরেট করেন। সব কার্টুনিস্ট ও কার্টুনরসিকরা এক জায়গায় মিলিত হন এই উপলক্ষে। ২০১৪ সালে গঠিত 'কার্টুনদল' এর সবচেয়ে বর্ষীয়ান সদস‍্য চন্ডী লাহিড়ী প্রত‍্যেক বছরই  অশক্ত শরীর নিয়েও হাজির থাকতেন সরকারী চারুকলা মেলায় 'কার্টুন দল' এর স্টলে। 'কার্টুন দল'এর স্টলের দেওয়ালে ঝুলত তাঁর আঁকা কার্টুন। এবছরও তার ব‍্যতিক্রম হয়নি। গত বছর 'কার্টুন দল' সাড়ম্বরে পালন করেছিল তাঁর জন্মদিন, মোহিত মৈত্র মন্চে। জানা ছিল না, তাঁকে বিদায় জানানোর পালা অচিরেই ঘনিয়ে এসেছে।
    যে মানুষটি দশকের পর দশক ধরে আমাদের ভাবিয়ে গেলেন, হাসিয়ে গেলেন, রাগিয়ে গেলেন প্রচলিত অসংগতির বিরুদ্ধে, তাঁর নিজের জীবনে হাসির উপাদান ছিল কি ? তাঁর একমাত্র সন্তান প্রতিশ্রুতিমান পেপার ফিলিগ্ৰি আর্টিস্ট তৃণা লাহিড়ীর অসুস্থতা তাঁকে উদ্বিগ্ন রাখত । এত নাম যশ সম্মান, মানুষের ভালবাসা  -- তবুও আর্থিক সচ্ছলতা কেন পেশাদার কার্টুনিস্টদের অধরা থেকে যায়, এটা বড় প্রশ্ন। 'কার্টুনিস্টরা মহাপুরুষ নন, রাজনীতিবিদ নন, সমাজ সংস্কারক নন, তাদের জীববদ্দশায় দু একটি ইন্টারভিউ ছাপা হলেও তাদের জীবনী কোথাও ছাপা হয় না। '  আক্ষেপ করেছেন শিল্পী।
    'কার্টুন পুষ্পমাল‍্য নয়, অস্ত্র।' চন্ডী লাহিড়ী বারবার তাকে অভিহিত করেছেন একটি এগ্ৰেসিভ টুল হিসাবে। এই অস্ত্রে বলীয়ান শিল্পীকে সংবাদপত্রের পলিটিকাল ইকোনমি আর জায়গা দিতে নারাজ। এই বিপন্নতা , ঐ অস্তিত্বের সংকটের শরিক আজ বাংলার ব‍্যঙ্গ চিত্রকাররা। চন্ডী লাহিড়ী ও অমল চক্রবর্তী  এই ধারার শেষতম প্রতিনিধি।

    ————

    তথ‍্য সহায়তা  : কার্টুনিস্টের চোখে দেখা  ---- চন্ডী লাহিড়ী  -- ধ্রুবপদ,  ২০০২
    কার্টুনের ইতিবৃত্ত  ----- চন্ডী লাহিড়ী
    কার্টুন রঙ্গ বিচিত্রা ---– বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ‍্যায় ।
    বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত চন্ডী লাহিড়ীর সাক্ষাৎকার ।
  • খাতাঞ্চী | 233.226.***.*** | ০৫ মার্চ ২০১৮ ১৭:২৪373975
  • খাতাঞ্চী | 132.172.***.*** | ০৭ মার্চ ২০১৮ ২১:৪৫373976
  • চন্ডী লাহিড়ীর কিছু ছবি-





  • Rituparno Basu | 117.167.***.*** | ১৯ মার্চ ২০১৮ ১৪:৫১373967
  • দারুন লাগছে। হ‍্যাঁ series ta korbo.
  • রিভু | 114.19.***.*** | ২০ মার্চ ২০১৮ ১২:৩৬373968
  • পড়ছি
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন