এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • দেশভাগঃ ফিরে দেখা(দ্বিতীয় পর্ব)

    I
    অন্যান্য | ২৬ অক্টোবর ২০১৭ | ৬৭১৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • amit | ***:*** | ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:০৭370828
  • ওপরে ফেডারেল বাজেট হবে ।
  • I | ***:*** | ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ১১:২৩370829
  • অমিত,
    আমিও ইকোনমিক্সের ১০০ মাইলের মধ্যে ঘেঁষি না।এ নিয়ে সহজ ব্যাখ্যা কোথাও পেলামও না।তবে আন্দাজ করছি এই হিসেবটা ব্রিটেনের ব্রিটিশ সরকার আর ভারতের ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে।মানে ভারতের অর্থভাণ্ডার থেকে টাকা খরচা হয়েছিল ব্রিটেনের জন্য যুদ্ধসামগ্রী কিনতে।এর আগে অব্ধি ভারত ঋণী ছিল ব্রিটেনের কাছে, কেননা ভারতে ইনফ্রস্ট্রাকচার তৈরী করতে ব্রিটেন টাকা দিয়েছিল(নিশ্চয়ই ভারত থেকে লুট করা মালের দাম এর মধ্যে ধরা হয় নি।)

    আর ব্রিটেনের সরকারের পক্ষে বোধ হয় প্রতিটা কলোনির জন্য আলাদা করে বাজেট অ্যালোকেশন করা সম্ভব ছিল না।সে তো হারকিউলিয়ান টাস্ক হবে।অত রাশি রাশি কলোনি। নিশ্চয় প্রতিটা কলোনির সরকার নিজের নিজের বাজেট আলাদা করে বানাত।

    অর্থনীতি জানা কোনো লোক বুঝিয়ে দিলে ভালো হয়।
  • I | ***:*** | ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৪২370830
  • কংগ্রেসের দিক থেকে দেখলে 'ভারত ছাড়ো আন্দোলন'এর সুফল ও কুফল দুইই ছিল। একটা সুফল তো আগেই বলা হয়েছে-জেলে থাকার ফলে কংগ্রেস নেতাদের যুদ্ধসংক্রান্ত অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্নের (ব্রিটিশ বিরোধিতা মানে ফ্যাসিবাদের সমর্থন করা কিনা, জাপানের সামরিক-সঙ্গী সুভাষচন্দ্রের আজাদ হিন্দ ফৌজকে সমর্থনের বিষয়ে কংগ্রেসের কী মত ইত্যাদি) উত্তর দিতে হয় নি। উল্টে জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর তাঁরা জনতার চোখে হিরো প্রতিপন্ন হলেন;দীর্ঘ কারাবাসজনিত আত্মত্যাগের মহিমা আর জনতার মধ্যে ফুটন্ত ব্রিটিশ-বিরোধিতা এ দুই মিলে তাঁরা মানুষের চোখের মণি হয়ে উঠলেন (যদিও আসল লড়াইটা লড়েছিলেন কংগ্রেসের আত্মগোপনকারী সমাজবাদী নেতা ও কর্মীরা।) ১৯৩৭ - ১৯৩৯-এ কংগ্রেস সরকারগুলির সাদামাটা পারফরম্যান্স (ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনবিরোধী নীতির কথা) মানুষ ভুলে গেলেন (1)। সবচেয়ে বেশী লাভবান হলেন কংগ্রেসের কিছু দক্ষিণপন্থী নেতা; এঁরা ত্রিশের দশক থেকে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার কথা বলে আসছেন, কিন্তু এখন বেমালুম সেসব কথা হজম করে 'ভারত ছাড়ো আন্দোলন'এর গৌরবে ভাগ বসালেন। (2)

    কংগ্রেসের ক্ষতির দিকটা হল রাজনীতির ময়দান মুসলিম লীগের জন্য পুরো উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া। জিন্না ও লীগ এর পূর্ণ সুযোগ নিয়েছিলেন। কংগ্রেস মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করায় ইতিমধ্যে সিন্ধ, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও আসামে মুসলিম লীগ ক্ষমতা দখল করেছিল। বাংলায় শ্যামা-হক মন্ত্রীসভারও সময় ঘনিয়ে এসেছিল। বাংলার গভর্নর জন হার্বার্ট ফজলুল হকের প্রতি খুব একটা প্রসন্ন ছিলেন না। মুসলিম লীগের বিরোধী দলনেতা খাজা নাজিমুদ্দিন ফজলুল হকের কাছে পটুয়াখালি'র পরাজয় কোনোদিন মেনে নিতে পারেন নি; তাঁর এবং ফজলুল হকের সম্পর্ক ছিল বেশ তিক্ত। নাজিমুদ্দিন-ইস্পাহানি চালিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ গভর্নরের কাছে অভিযোগ আনে হক দিন দিন হিন্দু মহাসভা নেতা শ্যামাপ্রসাদের আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন এবং এই সরকার ক্রমেই মুসলিম জনতার স্বার্থের পরিপন্থী হয়ে উঠছে; অতএব এই সরকারকে বরখাস্ত করা হোক। ১৯৪৩ এর ১৫ই ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় হক অভিযোগ করেন গভর্নর তাঁর বিশেষ ক্ষমতাবলে মন্ত্রীসভার বেশ কিছু সুপারিশ অগ্রাহ্য করেছেন। গভর্নর এই অভিযোগে ক্ষিপ্ত হন ও মূলতঃ তাঁরই উদ্যোগে লীগ হক সরকারের বিরুদ্ধে দু-দুটি অনাস্থা প্রস্তাব আনে। দুটিই অবশ্য অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। উপায়ান্তর না দেখে গভর্নর তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফজলুল হককে বাধ্য করেন পদত্যাগ করতে। মুসলিম লীগ নাজিমুদ্দিনের নেতৃত্বে একটি সংখ্যালঘু সরকার গঠন করেন। ইউরোপীয় ব্লকের বিধায়কদের সমর্থন এই সরকারকে টিকিয়ে রাখবে পরবর্তী নির্বাচন অবধি। (3)

    চার-চারটি প্রদেশে ক্ষমতায় আসার সুযোগ মুসলিম লীগ নেতারা পুরো উসুল করেছিলেন। লীগের জনপ্রিয়তা ও সদস্য-সংখ্যা দ্রুত বাড়লো। প্রাদেশিক নেতারা সংগঠনকে শক্ত হাতে ধরলেন। মুসলিম লীগ জাতীয় রক্ষীবাহিনী (ন্যাশন্যাল গার্ড) নামে একটি আধাসামরিক বাহিনীকে পুনর্জীবিত করে তোলা হল। (4) প্রাচীনপন্থী প্রাদেশিক যেসব মুসলিম নেতা ছিলেন, তাঁদের হাত থেকে নিজের পছন্দসই লোকের হাতে ক্ষমতা ছিনিয়ে এনে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে জিন্না আরো সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছলেন। উপমহাদেশের মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধি হওয়ার দাবী প্রতিষ্ঠার দিকে এগোলেন। কংগ্রেসের সঙ্গে সমমর্যাদা দাবী করলেন। সহানুভূতিশীল ব্রিটিশ সরকার সে ব্যাপারে তাঁকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল।যুদ্ধের সময় ব্রিটেনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় লিনলিথগো তাঁর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞ ছিলেন, আগেই বলেছি। তার প্রতিদানস্বরূপ, এবং কংগ্রেসকে খর্ব করবার জন্যেও জিন্নাকে সরকার গান্ধীর সমমর্যাদা দিয়ে আলোচনায় ডাকে। উৎফুল্ল জিন্না বলেন, " যুদ্ধের পর... (ইংরেজদের )আমার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যায়। মিঃ গান্ধীর সঙ্গে একই ভূমিকায় আমার প্রতি আচরণ করা হয়। আমার কেন উত্তরণ হল এবং মিঃ গান্ধীর পাশাপাশি কেন আমাকে স্থান দেওয়া হল তা ভেবে আমি বিস্ময়াভিভূত হই।" (5)

    লীগের এই অগ্রগতি অবশ্য শুধু সরকারী সাহায্য দিয়ে বুঝতে গেলে ভুল হবে। নানা কারণে পাকিস্তানের দাবী সাধারণ মানুষের মনে ধরেছিল। পাকিস্তান হলেই হিন্দু জমিদার-মহাজনদের শোষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে-বাংলা ও পাঞ্জাবের মুসলিম চাষীদের মধ্যে এমনটা প্রচার করা হয়েছিল। এছাড়াও পাকিস্তান প্রস্তাবে ছোট মুসলিম ব্যবসায়ী শ্রেণীর বেড়ে ওঠা আর উদীয়মান মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। মুসলিম সংখ্যালঘু প্রদেশে এই প্রতিশ্রুতি লীগকে অনেক সমর্থক এনে দেয়। (6) । মুসলিম লীগের পুর্বতন ভিত্তি জমিদার শ্রেণীর হাত থেকে জিন্না ক্রমেই লীগকে বের করে আনছিলেন। তাঁর প্রধান ভিত্তি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল উদীয়মান মুসলিম পুঁজিপতিরা। লীগের পত্রপত্রিকার টাকা জোগাতেন ইস্পাহানি ও আদমজি পরিবারের ব্যবসায়ীরা। জিন্নার আশীর্বাদ নিয়ে ১৯৪৫ সালে তৈরী হয় ফেডারেশন অফ মুসলিম চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রীজ। যুদ্ধের শেষে মুসলিম মালিকানাধীন ব্যাঙ্ক ও বিমান কোম্পানী তৈরীর উদ্যোগও শুরু হয়। বস্তুতঃ কি মুসলিম, কি হিন্দু, ভারতীয় পুঁজিপতিরা কখনোই সাম্প্রদায়িকতার অমোঘ টান এড়াতে পারেন নি। হিন্দু পুঁজিপতিদের কাছে ছিল হিন্দু মহাসভা-আর এস এস -গোরক্ষিণী সভা, মুসলিম পুঁজিপতিদের ছিল মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদ। অবশ্য মুসলিম পুঁজিপতি ও ছোট ব্যবসায়ীদের বিচ্ছিন্ন হতে চাওয়ার আর একটা বড় কারণ ছিল হিন্দু পুঁজিপতিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা এড়ানো। (7)

    যুদ্ধের পরে পরেই ভারতের অর্থনীতির হাঁড়ির হাল হল। দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি-নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের আকাল- মুদ্রাস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য ব্যাপক দুর্দশা নিয়ে এল। কিন্তু তারই মধ্যে ভারতীয় পুঁজিপতিদের (মুখ্যত হিন্দু) রমরমা;কালোবাজারি-ফাটকাবাজি করে খাদ্যে মুনাফা, শেয়ার কেনাবেচা-সব মিলিয়ে তার এমন সুখের দিন কমই এসেছে। স্বভাবতই এই শ্রেণী স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য আগ্রহী ছিল। তাই ১৯৪৫ এর পরে নতুন কোনো গণ-আন্দোলনের ছিল তারা সম্পূর্ণ বিরোধী। তারা তাদের প্রভাব খাটালো বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পথে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য। তাদের ইচ্ছা পূর্ণ হল- দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কংগ্রেস নতুন করে আর গণ-আন্দোলনের পথে গেল না। ক্ষমতা হস্তান্তরিত হল, তবে তার জন্য বিরাট এক মূল্য দিতে হল দেশের মানুষকে ঃ দেশভাগ; আর ভ্রাতৃঘাতী রক্তাক্ত দাঙ্গা। (8)

    Notes

    1.সুমিত সরকার পৃ ৩৪৯ (D D Kaushambi, The burgeoisie Comes of Age in India, reprint , Kaushambi, Exasperating Essays, Pune, p. 17.

    2.তদেব

    3.https://en.wikipedia.org/wiki/A._K._Fazlul_Huq

    4.এই বাহিনীটি ১৯৩১ সালে যুক্ত প্রদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এস এস গঠনের প্রতিক্রিয়ায় এটি তৈরী হয়েছিল। ৪৬-৪৭এর দাঙ্গায় এই বাহিনী এক ন্যক্কারজনক ভূমিকা নিয়েছিল।

    5.ভবানীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, পৃ ৪৯ (Mansergh, The Transfer of Power, pp.59-60)

    6.সুমিত সরকার, পৃ ৩৫৩

    7.তদেব

    8.তদেব
  • I | ***:*** | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০৭370831
  • 1941 saaler jaanuyaari maase gRihabandee thaakaakaaleen paaThaan inasiorens ejenTer chhadmabeshe subhaashhachandra deshatyaag karen. uttara pashchim seemaant pradesh periye tini kaabule ese pou`nchhan. kaabuler sobhiyet dootaabaaser sa`Mge JogaaJog karen, Jadio taaraa taa`nr prati kono aagrahai dekhaay naa.jaarmaan dootaabaaser abasthaao tathoibach; taaraa taa`nke anant apexaay basiye raakhe. ekamaatr itaaleey dootaabaas taa`nr prati saday hay. dootaabaaser ek karmee rome taarabaartaa paaThaan: nabaagat byakti ekajan 'buddhimaan, paaradarshee, aabegadeepta,eba`m ni:sandehe bhaarateey raajanoitik netaader madhye sabacheye baastababuddhisampann"(1) । ইতালীয় দূতাবাস থেকে তাঁকে জনৈক ইতালীয় কূটনীতিজ্ঞ 'কাউন্ট অরল্যান্ডো মাজেত্তা'-র নামে একটি ভুয়ো পাসপোর্ট দেওয়া হয়। সেই পাসপোর্ট নিয়ে তিনি এপ্রিলের শুরুর দিকে আফগান-রুশ সীমান্ত থেকে মস্কো হয়ে রোম ও সেখান থেকে বার্লিনে পৌঁছন।

    এই যাত্রাপথ অনুসরণ করায় বসু নিজের অজান্তেই একটি গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টার হাত থেকে রক্ষা পান। কেননা মার্চ মাসেই ব্রিটেনের কাছে সুভাষের গতিবিধির খবর পৌঁছে গিয়েছিল এবং তিনি যে বার্লিন যেতে পারেন , তাও ব্রিটিশ গোয়েন্দারা আঁচ করে ফেলেছিলেন। ব্রিটেনের গুপ্ত গোয়েন্দাবাহিনী 'স্পেশাল অপারেশনস এক্সিকিউটিভ' সুভাষকে গুপ্তহত্যার নির্দেশ জারি করে। কিন্তু গোয়েন্দারা সুভাষের যাত্রাপথটি অনুমান করতে ভুল করে। তারা ভেবেছিল তিনি ইরান, ইরাক ও তুরস্ক হয়ে জার্মানি পৌঁছবার পরিকল্পনা করছেন। স্থির হয় , তুরস্কেই তাঁকে হত্যা করা হবে।গোয়েন্দাবাহিনীর গোপন ডায়েরি থেকে জানা যায় ভারতসচিব লিও আমেরিও এই পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।(2)

    জার্মান সাহায্য চেয়ে সুভাষ যে যুক্তি সাজান, তা এইরকম ঃ জার্মানি ও ভারতের উদ্দেশ্য অভিন্ন-তা হল ব্রিটেনের পরাজয়। এই লক্ষ্যে জার্মানির উচিৎ জার্মান মাটিতে একটি স্বাধীন ভারত সরকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করা। এই সরকার বেতারবার্তার মাধ্যমে ভারতীয় জনগণকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিদ্রোহে উৎসাহিত করবে এবং ভারতীয় বিপ্লবীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করে চলবে। অক্ষশক্তি ব্রিটিশ কলোনি উচ্ছেদের সরকারী ঘোষণা করলেই মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় যুদ্ধরত দেশপ্রেমিক ভারতীয় সৈনিকরা দলে দলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ত্যাগ করবে। বিপ্লবের জমি তৈরী হয়ে উঠলে মাত্র পঞ্চাশ হাজার সৈন্যও যদি ভারতসীমান্তে গিয়ে পৌঁছয়, তাহলেই ব্রিটিশ সিংহ ল্যাজ গুটিয়ে পালাবে। (3)

    হিটলার স্বয়ং এই যুক্তিজালে কতদূর প্রভাবিত হয়েছিলেন , বলা মুশকিল। সুভাষকে কিছু সাহায্য অবশ্যই দেওয়া হয়েছিল; জার্মান সহযোগিতায় তিনি 'আজাদ হিন্দ' বেতারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। আফ্রিকা থেকে যুদ্ধবন্দী ৪৫০০ ভারতীয় সৈনিকের একটি বাহিনীও তৈরী হয়। কিন্তু এই পর্যন্তই; জাপান ও ইতালী ভারতের স্বাধীনতার স্বপক্ষে একটি যৌথ ঘোষণায় আগ্রহী থাকলেও হিটলার সেই উৎসাহে জল ঢেলে দেন।যুদ্ধের সেই পরিস্থিতিতে তিনি ব্রিটিশদের আরো ক্ষিপ্ত করে তুলতে চান নি। ১৯৪২ সালের মে মাসে হিটলারের সঙ্গে একমাত্র সাক্ষাতের পর সুভাষও পরিস্থিতির খানিক আঁচ পান; তাঁর মনে হয় হিটলার তাঁকে ও তাঁর দলবলকে প্রচারযুদ্ধের জন্যই ব্যবহার করতে চাইছ্নে, আসল যুদ্ধের জন্য নয় (4)।'৪৩ এর মে মাসে হতাশ হয়ে তিনি জার্মান সাবমেরিনে চেপে বার্লিন ছেড়ে জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

    নর্ডিক জাতির উৎকর্ষতায় বিশ্বাসী হিটলার ব্রিটেনের প্রতি একধরণের শ্রদ্ধা-সম্ভ্রমের ভাব পোষণ করতেন। জার্মানির পুনরুত্থানের জন্য তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের মডেলটি অনুসরণীয় বলে ভাবতেন। স্বভাবতই তিনি কলোনীর অ-নর্ডিক জাতিসমূহের অধিকার সম্বন্ধে বিরূপ ছিলেন। ভারতের সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনের সম্বন্ধে তাঁর মনোভাব ছিল-উচ্চতর ইংলিশ-নর্ডিক জাতির বিরুদ্ধে নীচ ভারতীয়দের বিদ্রোহ একটি ঘৃণ্য ব্যাপার এবং তা পরাজিত হতে বাধ্য।আত্মজীবনী 'মেইনক্যাম্ফ'এ হিটলার ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বর্ণনা করেছেন ' বিকলাঙ্গদের জোট' বলে ; জানিয়েছেন, জার্মান জাতির ভাগ্য তিনি কিছুতেই এহেন নীচ জাতির সঙ্গে যুক্ত হতে দেবেন না। ১৯৩৭ সালে লর্ড আরউইনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন-'গান্ধীকে গুলি করে মেরে ফেলুন, তাতেও কাজ না হলে কংগ্রেসের কয়েক ডজন নেতাকে গুলি করুন; না হলে আরো শ দুয়েককে-মারতে থাকুন, যতক্ষণ না শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসছে" (5)। এহেন হিটলার যে ব্রিটিশ-বিরোধী সামরিক অভিযানে খুল্লমখুল্লা কোনো মদত দেবেন না, তা তেমন অস্বাভাবিক ছিল না।বিশেষতঃ যিনি দীর্ঘকাল অবধি ব্রিটিশ ও জার্মান বন্ধুতা ও সহযোগিতার কথা ভেবে এসেছেন।

    Notes
    1.Madhushree Mukherjee, Churchill's Secret War,Penguin Random House India, 2018, p.23 (Bose and Bose, Netaji, Vol X, p.197)

    2.Ibid, (SOE War Diaries: HS7/214-17)

    3.Ibid,p.39 (Bose, vol XI,Netaji, pp. 45-7)

    4.https://en.wikipedia.org/wiki/Subhas_Chandra_Bose (Thomson, Mike (23 September 2004), Hitler's secret Indian army, BBC News, retrieved 6 February 2016).

    5.Madhushree Mukherjee, pp.32-40
  • I | ***:*** | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০৮370832
  • ১৯৪১ সালের জানুয়ারি মাসে গৃহবন্দী থাকাকালীন পাঠান ইনসিওরেন্স এজেন্টের ছদ্মবেশে সুভাষচন্দ্র দেশত্যাগ করেন। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ পেরিয়ে তিনি কাবুলে এসে পৌঁছন। কাবুলের সোভিয়েত দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যদিও তারা তাঁর প্রতি কোনো আগ্রহই দেখায় না।জার্মান দূতাবাসের অবস্থাও তথৈবচ; তারা তাঁকে অনন্ত অপেক্ষায় বসিয়ে রাখে। একমাত্র ইতালীয় দূতাবাস তাঁর প্রতি সদয় হয়। দূতাবাসের এক কর্মী রোমে তারবার্তা পাঠানঃ নবাগত ব্যক্তি একজন 'বুদ্ধিমান, পারদর্শী, আবেগদীপ্ত,এবং নিঃসন্দেহে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন"(১) । ইতালীয় দূতাবাস থেকে তাঁকে জনৈক ইতালীয় কূটনীতিজ্ঞ 'কাউন্ট অরল্যান্ডো মাজেত্তা'-র নামে একটি ভুয়ো পাসপোর্ট দেওয়া হয়। সেই পাসপোর্ট নিয়ে তিনি এপ্রিলের শুরুর দিকে আফগান-রুশ সীমান্ত থেকে মস্কো হয়ে রোম ও সেখান থেকে বার্লিনে পৌঁছন।

    এই যাত্রাপথ অনুসরণ করায় বসু নিজের অজান্তেই একটি গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টার হাত থেকে রক্ষা পান। কেননা মার্চ মাসেই ব্রিটেনের কাছে সুভাষের গতিবিধির খবর পৌঁছে গিয়েছিল এবং তিনি যে বার্লিন যেতে পারেন , তাও ব্রিটিশ গোয়েন্দারা আঁচ করে ফেলেছিলেন। ব্রিটেনের গুপ্ত গোয়েন্দাবাহিনী 'স্পেশাল অপারেশনস এক্সিকিউটিভ' সুভাষকে গুপ্তহত্যার নির্দেশ জারি করে। কিন্তু গোয়েন্দারা সুভাষের যাত্রাপথটি অনুমান করতে ভুল করে। তারা ভেবেছিল তিনি ইরান, ইরাক ও তুরস্ক হয়ে জার্মানি পৌঁছবার পরিকল্পনা করছেন। স্থির হয় , তুরস্কেই তাঁকে হত্যা করা হবে।গোয়েন্দাবাহিনীর গোপন ডায়েরি থেকে জানা যায় ভারতসচিব লিও আমেরিও এই পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।(২)

    জার্মান সাহায্য চেয়ে সুভাষ যে যুক্তি সাজান, তা এইরকম ঃ জার্মানি ও ভারতের উদ্দেশ্য অভিন্ন-তা হল ব্রিটেনের পরাজয়। এই লক্ষ্যে জার্মানির উচিৎ জার্মান মাটিতে একটি স্বাধীন ভারত সরকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করা। এই সরকার বেতারবার্তার মাধ্যমে ভারতীয় জনগণকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিদ্রোহে উৎসাহিত করবে এবং ভারতীয় বিপ্লবীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করে চলবে। অক্ষশক্তি ব্রিটিশ কলোনি উচ্ছেদের সরকারী ঘোষণা করলেই মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় যুদ্ধরত দেশপ্রেমিক ভারতীয় সৈনিকরা দলে দলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ত্যাগ করবে। বিপ্লবের জমি তৈরী হয়ে উঠলে মাত্র পঞ্চাশ হাজার সৈন্যও যদি ভারতসীমান্তে গিয়ে পৌঁছয়, তাহলেই ব্রিটিশ সিংহ ল্যাজ গুটিয়ে পালাবে। (৩)

    হিটলার স্বয়ং এই যুক্তিজালে কতদূর প্রভাবিত হয়েছিলেন , বলা মুশকিল। সুভাষকে কিছু সাহায্য অবশ্যই দেওয়া হয়েছিল; জার্মান সহযোগিতায় তিনি 'আজাদ হিন্দ' বেতারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। আফ্রিকা থেকে যুদ্ধবন্দী ৪৫০০ ভারতীয় সৈনিকের একটি বাহিনীও তৈরী হয়। কিন্তু এই পর্যন্তই; জাপান ও ইতালী ভারতের স্বাধীনতার স্বপক্ষে একটি যৌথ ঘোষণায় আগ্রহী থাকলেও হিটলার সেই উৎসাহে জল ঢেলে দেন।যুদ্ধের সেই পরিস্থিতিতে তিনি ব্রিটিশদের আরো ক্ষিপ্ত করে তুলতে চান নি। ১৯৪২ সালের মে মাসে হিটলারের সঙ্গে একমাত্র সাক্ষাতের পর সুভাষও পরিস্থিতির খানিক আঁচ পান; তাঁর মনে হয় হিটলার তাঁকে ও তাঁর দলবলকে প্রচারযুদ্ধের জন্যই ব্যবহার করতে চাইছ্নে, আসল যুদ্ধের জন্য নয় (৪)।'৪৩ এর মে মাসে হতাশ হয়ে তিনি জার্মান সাবমেরিনে চেপে বার্লিন ছেড়ে জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

    নর্ডিক জাতির উৎকর্ষতায় বিশ্বাসী হিটলার ব্রিটেনের প্রতি একধরণের শ্রদ্ধা-সম্ভ্রমের ভাব পোষণ করতেন। জার্মানির পুনরুত্থানের জন্য তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের মডেলটি অনুসরণীয় বলে ভাবতেন। স্বভাবতই তিনি কলোনীর অ-নর্ডিক জাতিসমূহের অধিকার সম্বন্ধে বিরূপ ছিলেন। ভারতের সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনের সম্বন্ধে তাঁর মনোভাব ছিল-উচ্চতর ইংলিশ-নর্ডিক জাতির বিরুদ্ধে নীচ ভারতীয়দের বিদ্রোহ একটি ঘৃণ্য ব্যাপার এবং তা পরাজিত হতে বাধ্য।আত্মজীবনী 'মেইনক্যাম্ফ'এ হিটলার ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বর্ণনা করেছেন ' বিকলাঙ্গদের জোট' বলে ; জানিয়েছেন, জার্মান জাতির ভাগ্য তিনি কিছুতেই এহেন নীচ জাতির সঙ্গে যুক্ত হতে দেবেন না। ১৯৩৭ সালে লর্ড আরউইনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন-'গান্ধীকে গুলি করে মেরে ফেলুন, তাতেও কাজ না হলে কংগ্রেসের কয়েক ডজন নেতাকে গুলি করুন; না হলে আরো শ দুয়েককে-মারতে থাকুন, যতক্ষণ না শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসছে" (৫)। এহেন হিটলার যে ব্রিটিশ-বিরোধী সামরিক অভিযানে খুল্লমখুল্লা কোনো মদত দেবেন না, তা তেমন অস্বাভাবিক ছিল না।বিশেষতঃ যিনি দীর্ঘকাল অবধি ব্রিটিশ ও জার্মান বন্ধুতা ও সহযোগিতার কথা ভেবে এসেছেন।

    Notes
    1.Madhushree Mukherjee, Churchill's Secret War,Penguin Random House India, 2018, p.23 (Bose and Bose, Netaji, Vol X, p.197)

    2.Ibid, (SOE War Diaries: HS7/214-17)

    3.Ibid,p.39 (Bose, vol XI,Netaji, pp. 45-7)

    4.https://en.wikipedia.org/wiki/Subhas_Chandra_Bose (Thomson, Mike (23 September 2004), Hitler's secret Indian army, BBC News, retrieved 6 February 2016).

    5.Madhushree Mukherjee, pp.32-40
  • I | ***:*** | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০৯370833
  • দুঃখিত, রিপোস্ট করলাম।
  • গবু | ***:*** | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:৪৬370834
  • বেশ করেছেন। আগের পোস্টের প্রথমদিকটা রোমান বলে অসুবিধে হচ্ছিল।

    শুভ দীপাবলির আগাম শুভেচ্ছা!
  • I | ***:*** | ০২ নভেম্বর ২০১৮ ২১:৫৭370835
  • শুভ দীপাবলী, আপনাকেও।
  • I | ***:*** | ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০০:২০370836
  • ১৯১৫ সালে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু জাপানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি ও তাঁর সহযোগী এ এম নায়ার অন্যান্য প্রবাসী জাতীয়তাবাদীদের নিয়ে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ তৈরী করেন। লীগের মিলিটারি উইং হিসাবে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আই এন এ)প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবা হয়। স্থির হয় জাপানের হাতে ধরা পড়া ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে এই সেনাবাহিনী তৈরী করা হবে। ১৯৪১ এর শেষদিকে জাপানী যুদ্ধবন্দী ক্যাপ্টেন মোহন সিং আই এন এ প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও '৪২ এর ডিসেম্বরে প্রথম আই এন এ-কে জাপানীদের সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে ভেঙ্গে দেওয়া হয়।লীগের নেতারা সিদ্ধান্ত নেন সুভাষ চন্দ্র বসু জাপানে এলে তাঁর হাতে ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে ও আই এন এ-কে পুনর্গঠিত করা হবে (1)। সেইমত ১৯৪৩ সালে সুভাষচন্দ্র নতুন করে আই এন এ প্রতিষ্ঠা করেন। বসু জাপানে একটি স্বাধীন ভারত সরকার (আর্জি হুকুমৎ- ই-আজাদ হিন্দ) গঠন করেন ও আই এন এ-কে (আজাদ হিন্দ ফৌজ) সেই সরকারের নিজস্ব সেনাবাহিনী বলে ঘোষণা করেন। জাপান সরকারের সহযোগিতায় জাপানী বন্দীশিবিরের ৬০০০০ ভারতীয় সৈন্যের মধ্যে ২০০০০ সৈন্য এই নতুন সেনাবাহিনীতে নাম লেখান(2)। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্য থেকেও স্বেচ্ছাসেবক ও আর্থিক সাহায্য নেওয়া হয়। দেশের স্বাধীনতার জন্য ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপোষ করতে রাজী হলেও [অবশ্য একথাও সত্যি যে তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক আদর্শ ছিল সাম্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের এক অদ্ভুত মিশ্রণ (3)] সুভাষচন্দ্র সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে আপোষ করতে কখনোই রাজী ছিলেন না। আজাদ হিন্দ ফৌজ ছিল সম্পূর্ন অসাম্প্রদায়িক একটি সংগঠন। বাহিনীর অনেক অফিসার ও সৈন্য ছিলেন মুসলিম। ঝাঁসীর রাণীর নামে একটি মহিলা ব্রিগেড গঠন করা হয়, যা ছিল এশিয়ার প্রথম মহিলা সেনা ইউনিট। এর নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন লক্ষী স্বামীনাথন। ৯টি অক্ষরাষ্ট্র আজাদ হিন্দ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।

    স্থির হয় আজাদ হিন্দ ফৌজ জাপানী বাহিনীর সঙ্গে একত্রে মণিপুর অভিযান চালাবে। উত্তর পূর্ব ভারতের ব্রিটিশ বাধা অতিক্রম করে গাঙ্গেয় সমতটে পৌঁছতে পারলে আজাদ হিন্দ ফৌজ গেরিলা বাহিনী হিসাবে লড়াই করবে, কেননা সামনাসামনি যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রবল ও লোকবল আজাদ হিন্দ ফৌজের ছিল না(4)। সংযুক্ত জাপ-ভারতীয়বাহিনী মণিপুরের মৈরাং পর্যন্ত দখল করে। মৈরাং টাউনে প্রথম স্বাধীন ভারত সরকারের ত্রিবর্ণলাঞ্ছিত পতাকা ওড়ানো হয়। সুভাষচন্দ্র আজাদ হিন্দ রেডিও মারফৎ 'জাতির পিতা' মহাত্মা গান্ধীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। জাপ বাহিনীর লক্ষ্য ছিল নিকটবর্তী ইম্ফল ও কোহিমা দখল করা; কিন্তু এই সময় থেকেই যুদ্ধের গতি জাপানের বিরুদ্ধে যেতে শুরু করে। ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রবল বাধার মুখে পড়ে জাপ বাহিনী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ পিছু হটতে শুরু করে। ১৯৪৫ এ রেঙ্গুনের পতনের সাথে সাথে আজাদ হিন্দ ফৌজের পরাজয় নিশ্চিৎ হয়ে যায়। জাপানী সেনাবাহিনী ও আজাদ হিন্দ ফৌজের মধ্যেকার সম্পর্ক কখনোই খুব একটা উষ্ণ ছিল না, যুদ্ধের শেষদিকে তা আরো খারাপ হতে শুরু করে(5)।

    রেঙ্গুন-পতনের তিন বছর আগেই অবশ্য জাপান আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দখল করেছিল। ঐ তিন বছরে আন্দামানে জাপানী বাহিনী যে অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছিল, তার সঠিক হদিশ পাওয়া মুশকিল, কেননা পরাজয় অবশ্যম্ভাবী জেনে জাপানী সৈন্যরা সব নথিপত্র নষ্ট করে দেয়। জনৈক স্থানীয় ভারতীয় ও এক ব্রিটিশ অফিসারের অপ্রকাশিত লেখা এবং সেসময়কার আন্দামান-বাসিন্দাদের স্মৃতিকথা থেকে সেই অত্যাচারের বিবরণ জানতে পারা যায়। গুপ্তচর সন্দেহে অজস্র ভারতীয়কে বিনা বিচারে বন্দী করে চূড়ান্ত অত্যাচার চালানোর পর হত্যা করা হয়। আন্দামানের ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগের সদস্যরাও রেহাই পান না।কোরিয়া ও মালয় থেকে অসংখ্য মহিলাকে বন্দী করে আনা হয় জাপানী সেনাবাহিনীর যৌনদাসী হিসেবে। ১৯৪৩ সালে সরকারীভাবে আন্দামান -নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ভার আজাদ হিন্দ সরকারের হাতে অর্পণ করা হয়; কিন্তু সে শুধু নামেই। আসল ক্ষমতা রয়ে যায় জাপানী সেনানায়কদের হাতে। সুভাষচন্দ্র পোর্ট ব্লেয়ারে এসে স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন; কিন্তু সতর্ক জাপানী সেনা তাঁকে স্থানীয় মানুষজনের কাছ থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়। অনেক চেষ্টা করেও ভারতীয়রা তাঁকে জাপানী সেনাবাহিনীর অত্যাচারের কথা জানাতে পারেন নি। ব্যথিত মানুষের মনে ধারণা তৈরী হয় সুভাষ তাঁদের বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছেন (6)। ভারতীয় মূল ভূখন্ডের মানুষজন স্বভাব্তই এসব ব্যাপারের বিন্দুবিসর্গও জানতেন না; তাঁদের একটা বড় অংশ তখনো ইংরেজের হাত থেকে মুক্তি পেতে জাপানী সৈন্যবাহিনী ও আজাদ হিন্দ ফৌজের পথ চেয়ে বসে আছেন।

    সামরিক শক্তির দিক দিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ কখনোই খুব বড় কিছু একটা ছিল না। জাপানী ফৌজ কিম্বা ব্রিটিশ সেনাবাহিনী কেউই তাদের তেমন গুরুত্ব দেয় নি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রত্যক্ষ প্রভাব খুব বড় কিছু ছিল না; কিন্তু অপ্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল বিশাল। দেশপ্রেমী মানুষের মনে আজাদ হিন্দ ফৌজ এক বিরাট গৌরবের জায়গা নিয়েছিল। ফলে ১৯৪৫-এর নভেম্বরে সরকার আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দীদের বিচার শুরু করার উদ্যোগ নিলে দেশজুড়ে শুরু হয় গণ-বিক্ষোভ। সুভাষ-বিরোধী জাতীয় কংগ্রেসও তার অভিঘাত এড়াতে পারে নি। জনতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে কংগ্রেসী নেতারাও বাধ্য হন আজাদ হিন্দ ফৌজের গুণকীর্তন করতে। স্বয়ং নেহরু কালোকোট গায়ে দিয়ে বন্দীদের পক্ষে সওয়াল করেন। সরকার ভয় পায়, '৪২এর মত আর একটি দেশজোড়া আন্দোলন বুঝি শুরু হবে। '৪৫-৪৬এর শীতকালে ব্রিটিশ- ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যে লাগাতার বিক্ষোভ-অসন্তোষের সূচনা হয় , তার পেছনেও একটি বড় কারণ আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিজ্ঞতা। এই সেনা অসন্তোষ চূড়ান্ত রূপ নেয় '৪৬-এর ফেব্রুয়ারি মাসে--বোম্বাই সহ গোটা ভারত কেঁপে ওঠে নৌ-বিদ্রোহে। সুমিত সরকার লিখেছেন-'ব্রিটিশদের দ্রুত পাততাড়ি গোটানোর সিদ্ধান্তের পিছনে এটিই সম্ভবত এককভাবে প্রধানতম নির্ধারক কারণ' (7) ।

    ব্রিটিশ সামরিক ইতিহাসবিদ ক্রিস্টোফার বেইলি মন্তব্য করেছেন- "INA was to become a much more powerful enemy of the British empire in defeat than it had been during its ill-fated triumphal march on Delhi." (8)

    Notes
    ---------
    1.https://en.wikipedia.org/wiki/Subhas_Chandra_Bose

    2.সুমিত সরকার পৃ ৩৫৪।

    3.https://en.wikipedia.org/wiki/Subhas_Chandra_Bose (Pasricha, Ashu (2008), "The Political Thought Of Subhas Chandra Bose", Encyclopaedia Eminent Thinkers, 16, Concept Publishing Company.

    4.https://en.wikipedia.org/wiki/Indian_National_Army (Fay, Peter W. 1993, The Forgotten Army: India's Armed Struggle for Independence, 1942–1945, University of Michigan Press, ISBN 0-472-08342-2).

    5.https://en.wikipedia.org/wiki/Indian_National_Army (Toye, Hugh ,1959, The Springing Tiger: A Study of the Indian National Army and of Netaji, Allied Publishers, ISBN 978-81-8424-392-5)

    6.https://en.wikipedia.org/wiki/Japanese_occupation_of_the_Andaman_Islands#cite_note-10 (Iqbal Singh The Andaman Story p. 249)

    7.সুমিত সরকার, পৃ ৩৫৪

    8.https://en.wikipedia.org/wiki/Indian_National_Army (Marston, Daniel , 2014, The Indian Army and End of the Raj, Cambridge University Press, ISBN 978-0-521-89975-8).
  • সিকি | ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:৪৪370838
  • প্রসঙ্গত, আন্দামান সেলুলার জেলের সঁ এ ল্যুমিয়েরে ইংরেজ শাসকের করা বন্দীদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচারের কথা খুব ডিটেলে বলা হয়। অথচ শর্ট স্প্যানে জাপানীরা যে নারকীয় অত্যাচার আর হত্যালীলা চালিয়েছিল, সেই বিবরণ পড়লে ইংরেজও লজ্জা পেত।

    সুভাষকে পোর্ট ব্লেয়ারে আসতে দেওয়া হয় নি। উনি রস আইল্যান্ডে (তৎকালীন আন্দামানের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ হেডকোয়ার্টার) আসেন এবং সেখান থেকেই ফিরে যান।
  • I | ***:*** | ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:১২370839
  • ধন্যবাদ সিকি, ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।একটু যদি রেফারেন্সটা দাও, ভালো হয়। টুকে দেবো।

    আমি সিকির কমেন্টের অপেক্ষায় ছিলাম।জানতাম, আন্দামানে জাপানীদের নিয়ে লিখবো আর সিকি কিছু বলবে না, হতেই পারে না।
  • b | ***:*** | ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৩৯370840
  • আই, "রেড সান ওভার ব্ল্যাক ওয়াটার" বইটা দেখতে পারেন। লেখক পোর্ট ব্লেয়ারে সত্তরের দশকে শিক্ষক হিসেবে যান। পুরোনো অধিবাসীদের স্মৃতি ইত্যাদির ওপরে ভিত্তি করে লেখা। কারণ জাপানীরা সব ডকুমেন্ট পুড়িয়ে দিয়েছিলো।
  • I | ***:*** | ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ১১:৫৬370841
  • ধন্যবাদ , b; গুরুতে লেখার এই একটা বড় লাভ।কত ইনফর্মড মানুষের ইনপুট পাওয়া যায়।
  • I | ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪৫370842
  • এই লেখাটিরই continution হিসেবে ১৯৪৩ সালের মন্বন্তর নিয়ে একটি নতুন লেখা শুরু করলাম আমার খেরোর খাতায়। উৎসাহী পাঠকদের ( যে কজন আছেন) সেটি পড়তে অনুরোধ করি। এখানেও লেখাই যেত, কিন্তু সম্প্রতি বাংলার দুর্ভিক্ষ নিয়ে দুটি শ্বাসরোধী বই পড়েছি; আস্তে আস্তে আরো অজস্র তথ্য এসে জমা হয়েছে। এখানে লিখলে লেখাটি একটি বিশালাকার ধারণ করত এবং কিছু কাটছাঁট করে লিখতে হত। সম্ভবতঃ তাতে লেখাটির প্রতি সুবিচার করা হত না।

    তাছাড়া সম্প্রতি লালগড়ের ঘটনা আমাদের রাষ্ট্রীয় structural violence, ও আমাদের, নগরবাসীদের ঔদাসীন্য নিয়ে বহুপুরনো কিছু কথা আবার নতুন করে তুলে এনেছে। ৪৩এর দুর্ভিক্ষ সেক্ষেত্রে আজো নিষ্ঠুরভাবে প্রাসঙ্গিক। যদিও এ বছর তার ৭৫ বর্ষ পূর্তি হল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন