এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • দেশভাগঃ ফিরে দেখা

    Indranil Ghosh Dastidar লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ৩৪৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Indranil Ghosh Dastidar | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫৩369462
  • রাত বারোটা পেরিয়ে যাওয়ার পর সোনালী পিং করল। "আধুনিক ভারতবর্ষের কোন পাঁচটা ঘটনা তোর ওপর সবচেয়ে বেশী ইমপ্যাক্ট ফেলেছে? "
    সোনালী কি সাংবাদিকতা ধরল? আমার ওপর সাক্ষাৎকার মক্সো করে হাত পাকাচ্ছে?
    আমি তানানা করি। এড়িয়ে যেতে চাই। তারপর মনে হয়, এটা একটা ছোট্ট খেলা। নিরাপদ। এর মধ্যে কোনো বিস্ফোরক নেই। নীল তিমি নেই। গৌরী লঙ্কেশ নেই ( না, গৌরী লঙ্কেশ তখন ভাবিনি, গৌরী লঙ্কেশ তো তার পরে ঘটল)।আমার নিমসুখী মধ্যবিত্ত জীবনে এমন ছোটখাটো খেলা সস্তা ও পুষ্টিকর। বিপর্যয়হীন। যে বিপর্যয় মানুষকে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে এক উপমহাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জল-জঙ্গল-কাঁটাতার পেরিয়ে , সন্তানের পচা লাশ পেরিয়ে তাড়িয়ে বেড়ায়, এর মধ্যে তার আভাস নেই। আমি বলে যাবো। ও শুনবে। প্রতিপ্রশ্ন করবে। আমি হাবিজাবি আরো কিছু বলবো। তারপর ঘুম পেলে -চল, কাটি- বলে কম্পিউটার বন্ধ করে দেবো। ঘুম দেবো। ক্লোনাজেপাম দিয়ে কেনা ঘুম।
    আমি আমতা-আমতা করে বলি ঃ
    এই মনে কর, ভারতের স্বাধীনতা দিয়ে শুরু করি। শুধু স্বাধীনতা নয়, তার সঙ্গে দেশভাগ। দেশভাগকে ধরতেই হবে।
    তারপর ।।।। জরুরী অবস্থা আর নকশাল আন্দোলন। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা। গোধরা রায়ট।
    আর সবশেষে, হ্যাঁ, সবশেষে নরেন্দ্র মোদী। পাঁচটা হল না?
    -কিন্তু দেশভাগ কেন? দেশভাগ তো তুই চোখে দেখিস নি। তার এমন ইমপ্যাক্ট কিসের?

    সোনালী ইচ্ছে করে নাইভ হচ্ছে। ও আমার কাছ থেকে কিছু শুনতে চায়। যা ওর কাজে লাগতে পারে। তখন কি আর জানি, সোনালী ওর নতুন নাটক নিয়ে রাত জাগছে?

    সোনালী আমার বোন। পেশাগত কাজ সামলে ও একটি ছোট নাটকের দল চালায়। ওর নতুন নাটক-যা এতদিনে তৈরী হয়ে গিয়েছে- নাম "ভাঙ্গন"- আসলে এখনকার সাম্প্রদায়িক ঘৃণা নিয়ে বানানো। ও এসবের শেকড় খুঁজতে চায়।আর আমাকে ও বোধ হয় কিছু একটা ভাবে। আমি কিছু একটা বললে, কিম্বা এখান -ওখান থেকে কুড়িয়েবাড়িয়ে কিছু যোগাড় করে আনলে যদি ওর কাজের কিছু সাহায্য হয়।

    বলিঃ এ সব কথা কি আর এমন চটজলদি বলা যায়? এমন মেসেঞ্জারে টাইপ করে ? সামনাসামনি কথা বলতে হবে।

    কিন্তু কী কথা বলবো? কিছু কি আমি জানি, বলবার মত? অচলায়তনের আচার্যদেবের মত কি আমি বলবো-"আমার তালু যে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে " ! আমি কি স্মৃতির আশ্রয় নেবো- সেই শৈশবের ভোরে, সব তারারা তখনো নেবে নি, বাইরের রাস্তা দিয়ে বোষ্টম গান গেয়ে চলেছেন-জয় জয় রাধে, কৃষ্ণ-মধুসূদনো, আমি ঠাকুমার কোলের কাছে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছি, আর ঠাকুমার মনে পড়ে যাচ্ছে বরিশাল; মনসাপুজোয়-রয়ানী গানে মা-ঠাকুমার মনে পড়ে যাচ্ছে বরিশাল; মুসলমান ফকির আসছেন বিচিত্র -রঙা তাপ্পিমারা আলখাল্লা পরে, আপদ-বালা-মুসিবত দূর হয়ে যাবার মন্ত্র পড়ে মাথায় ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে দিচ্ছেন চামর দিয়ে, আর মা-ঠাকুমা-পিসিমার স্মৃতি আমার মধ্যে দিয়ে কবে চারিয়ে গেছে বুঝতে না-পারা আমি মনে আনছি বরিশাল, যদিও সেদেশ কখনো চোখে দেখিনি আমি।আমি কি ছবি খুঁজবো সেলুলয়েডে, ঋত্বিক ঘটক আর নিমাই ঘোষ আর রাজেন তরফদারে? আমি কি তুলে আনবো তারাপদ রায়ের চারাবাড়ি-পোড়াবাড়ি আর শঙ্খ ঘোষের সুপুরিবনের সারি? তাছাড়া শুধু পরোক্ষই বা খুঁজতে হবে কেন, আমার আগের প্রজন্মই তো দেশভাগের সাক্ষাৎ ভুক্তভোগী, ঠাকুর্দা জলে ভাসমান শ্যাওলার মত এজায়গা-ওজায়গা করে বেড়ালেন কতকাল, সুস্থিতি এল না তাও, পিসিরা কেউ গোটা জীবনটা কাটিয়ে দিলেন অভাবে-অন্নকষ্টে। আমার রাঙা পিসিমা সেই সেকালে বাবা'র মুখের উপর বলেছিলেন- ভাত দেতে পারেন না, জন্ম দেছেন ক্যান? আমি কল্পনা করি আমার দীর্ঘদেহী ঠাকুরদা কেমন নুয়ে পড়েছেন এই করাল প্রশ্নের সামনে, কিভাবে তাঁর কর্ণমূল লাল হয়ে উঠছে চল্লিশের দশকের সেই শেষবেলায়, দেশভাগ-কলি যখন প্রবেশ করছে লাখ লাখ ভাগ্যহত নলের শরীরে। মা আজো বলেন, সেই শেষবারের মত ছেড়ে আসার কথা- ঘাটে নাও ঠেলে দিয়ে দাদু কিভাবে পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইলেন পাড়ে, সঙ্গে দিদিমা, যতক্ষণ চোখ যায় ততক্ষণ। উমা চলে গেল দেশান্তরে, আর কোনো দিন তার দেখা হবে না গিরি ও গিরিজায়ার সঙ্গে। দাদু মারা গেলেন, ছোট ছোট তিন ছেলে মুখাগ্নি করল, ঐ মৃতমুখে খড়ের আগুন ছোঁয়ালো, নাভিপিণ্ড ত্রাণহীন জলে ভাসিয়ে এসে কোরা ধুতি পরে শূন্য ঘরে ঢুকলো, অভিভাবকহীন। একটা পরিবার-একটা প্রজন্ম কেটে ছড়িয়ে গেল দুই কিম্বা তিন দেশে। এখনো প্রান্তিক মানুষের অভিশাপ মাথায় নিয়ে বড় হচ্ছে আমার নিকটজনেরা। আমারই প্রজন্ম। দেশভাগের পরিণাম বয়ে-বেড়ানো তিন নম্বর প্রজন্ম। সব রক্তপাত চোখে দেখা যায় না।
    সোনালী আমাকে কেমন নাড়িয়ে দিয়ে গেল। ছোট্ট খেলা। সূচের মত। অন্তর্ঘাতী। তাই কতকাল পরে আমি পড়তে বসলাম। পার্টিশন দলিলসমূহ। এই মুহূর্তে পড়ছি-ইয়াসমিন খানের ঠে রেঅত অর্তিতিওন। পড়তে চাই আরো। আর, এমনিতেই দুর্বল অশ্রুগ্রন্থি, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো। জলপড়া থামাতে লেখার আয়োজন। অনেকদিন পরে। যখন-যেমন পারি।
    -----

    ১৯৪৫ এর ৭ই মে ইওরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল।
    জুন মাস নাগাদ কংগ্রেস নেতারা একে একে জেল থেকে বেরিয়ে এলেন। গান্ধী তার আগের বছর স্বাস্থ্যের কারণে ছাড়া পেয়েছেন। নেতারা ক্লান্ত ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে দড়ি-টানাটানি করে। ক্লান্ত বয়সের ভারেও। গান্ধীর বয়স তখন ৭৭, বল্লভভাই প্যাটেল ৭১, নেহরু ৫৭। জেলের মধ্যে বাইরের পৃথিবীর খবর এসে পৌঁছত না। জেল থেকে বেরিয়ে তাই দেশের হালচাল কেমন, বুঝে উঠতে সময় লাগছে। নেতারা, তাই কিছুটা হতভম্বও। গান্ধী তাঁর অতীতের ছায়া -একথা বললে যদি বাড়াবাড়িও হয়, এটুকু অন্ততঃ নিরাপদে বলাই যায়, ভারতের জনমানসে গান্ধীর অহিংসার আবেদন স্তিমিত হয়ে এসেছে। কংগ্রেস ততদিনে বিরাট এক ডাইনোসরসদৃশ দলে পরিণত হয়েছে। দল না বলে নানা মতের , নানা পথের গোষ্ঠীর ঘোঁট বললেও কিছু ক্ষতি নেই। দলের মাথা আছে, কিন্তু তার সঙ্গে হাত-পায়ের কোনো কোঅর্ডিনেশন নেই। নীচুতলার কর্মীরা-ছোট- মাঝারী নেতারা প্রায়শই কেন্দ্রীয় নেতাদের পাত্তা দেন না।

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারকে সাহায্য করতে অরাজী হয়ে কংগ্রেস ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয়। জনযুদ্ধের তত্বে বিশ্বাসী কমিউনিস্ট পার্টি এই আন্দোলনের বিরোধিতা করে। আর বিরোধিতা করে মুসলিম লিগ, যারা মুসলিম সুরক্ষার শর্তে ব্রিটিশকে সাহায্য করতে রাজী হয়ে যায়। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় প্রায় ষাট হাজার কংগ্রেস নেতা- কর্মী গ্রেপ্তার হন। গোটা বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জাতীয় রাজনীতির পরিসর থেকে কংগ্রেস নেতাদের এই অনুপস্থিতির সুযোগ মুসলিম লিগ দুহাত ভরে নিয়েছিল। উপমহাদেশের মুসলমানদের ক্রেডিবল প্রতিনিধি হিসেবে তরতর করে উঠে আসে মুসলিম লিগ। লিগের এহেন প্রতিপত্তিকে আন্দাজ করতে পারেন নি জেলের মধ্যে থাকা কংগ্রেস নেতারা। ভবিষ্যতে স্বাধীনতা আর দেশভাগ নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসে দর-কষাকষি করতে গিয়ে সে ভুল তাঁদের ভাঙবে।
    যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশ সিংহও খুব ক্লান্ত। জয়ী, কিন্তু বিধ্বস্ত। হাওয়ায় ভাসছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা, যদিও কংগ্রেস নেতারা অনেকেই সে কথা তখনো বিশ্বাস করে ওঠেন নি। নেহরু দেশকে আসন্ন সংগ্রামের জন্য তৈরী হতে বলছেন।
    '৪৬ সালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন দিকে মোড় নিল। সুভাষ চন্দ্র বোস আর আই এন এ-র যুদ্ধপ্রয়াস নিয়ে দেশে প্রবল উত্তেজনা। ৪৫ এর নভেম্বর মাসে শাহ নওয়াজ খান, প্রেম শেহগল আর গুরবক্স সিং ধিলোঁর প্রকাশ্য বিচার শুরু হয় লাল কেল্লায়। জনমতের জোয়ারে ভেসে গিয়ে কংগ্রেস বাধ্য হল আই এন এ নিয়ে নতুন স্টান্স নিতে। কংগ্রেস ও লীগ যৌথভাবে "লাল কেল্লা ট্রায়াল"এর বিরুদ্ধে অন্দোলন শুরু করে-সেই শেষ যৌথ আন্দোলন। মহল্লায়-মহল্লায় কংগ্রেসী তেরঙ্গা আর লীগের সবুজ পতাকা একসাথে ঝুলতে দেখা যায়। তুমুল জনপ্রতিরোধের মুখে ফিল্ড মার্শাল অকিনলেক বাধ্য হন তিনজনকেই মুক্তি দিতে।

    ভারতে ইংরেজ শাসনের কফিনে এই সেই শেষ পেরেক। কলোনিয়াল স্টেটের শেষ স্তম্ভ সেনাবাহিনী-কে ১৮৫৭ র পরে কোনোদিন আর এত নড়বড়ে দেখায় নি।

    তপন রায়চৌধুরী লিখছেন - "আই এন এ-কে ঘিরে উত্তেজনা আমাদের কাছে নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাল। জাতীয় ফৌজে নেতাজীর অন্যতর অবদান জাতীয়তাবাদী চেতনাকে সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত করা। যুবনেতারা দেখলেন ঐ আদর্শে এক সত্যিকার জাতীয় আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব। এ ব্যাপারে বামপন্থী ছাত্র আন্দোলন, বিশেষ করে ছাত্র ফেডারেশন যে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সে কথা অস্বীকার করা যায় না।।।।।। নভেম্বর মাসে আই এন এ দিবসে কয়েক হাজার ছাত্র ওয়েলিংটন স্কোয়ারে জমা হয়েছিল। সেখান থেকে মিছিল বের হয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবেই ডালহাউসি স্কোয়ারের দিকে এগুচ্ছিল। কিন্তু ধর্মতলা স্ট্রীটে পুলিশ শোভাযাত্রাকে বাধা দিল।।।। শোভাযাত্রীরা রাস্তার ওপর বসে পড়ে। পুলিশ শোভাযাত্রীদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার আদেশ দেয়। সে কথায় কেউ কর্ণপাত না করায় গুলি চলে। বেশ কয়েকটি ছেলে খুনজখম হয়।।।। উপরিউক্ত ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রদের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যৌথভাবে সভা, মিছিল, এবং ডালহাউসি অভিযানের আহ্বান হল। ।।।এবারকার প্রতিবাদ ছেলেখেলা না, মনে মনে সংগ্রামের প্রস্তুতি নিয়ে ময়দানে নামা। এসব সময় মিছিলে কত লোক শামিল হয়েছিল তার সঠিক হিসাব কখনও পাওয়া যায় না। যদি বলি কয়েক লাখ লোক মিছিলে যোগ দিয়েছিল তাহলে বোধ হয় অতিরঞ্জন হবে না। এদিনের প্রতিবাদের আর এক বৈশিষ্ট্য, সভা এবং মিছিলে ছাত্র মুসলিম লিগের এক অংশের সক্রিয় অংশগ্রহণ। ফেব্রুয়ারি মাসে রশিদ আলি দিবসে মুসলিম লিগ সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। নভেম্বর মাসে আই এন এ দিবসের পরদিন ওয়েলিংটন স্কোয়ারের সভায় কংগ্রেসের তেরঙ্গা ঝাণ্ডার সঙ্গে মুসলিম লিগের সবুজ পতাকা আর ছাত্র ফেডারেশনের লাল ঝাণ্ডা এক সঙ্গে বাঁধা হল। সেই তিন ঝাণ্ডা নিয়ে মিছিল ধর্মতলা স্ট্রিট দিয়ে কিছুটা এগুতেই , সশস্ত্র পুলিশ পথ আটকাল। শোভাযাত্রীরা পথ জুড়ে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ পরে ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকে শরৎ বসু এবং কংগ্রেসি নেতা কিরণশঙ্কর রায় এলেন। তাঁরা ছাত্রদের কাছে আবেদন করলেন, "আপনারা ফিরে যান। আপনাদের দাবী যাতে যথাস্থানে পৌঁছায় তার দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি।" কিন্তু এই আবেদনে কেউ সাড়া দিল না। নেতারা ফিরে গেলেন। তার কিছুক্ষণ পর পুলিশ ছত্রভঙ্গ হওয়ার হুকুম দিল। কিন্তু যে যেখানে বসেছিল বসেই রইল। বোধ হয় একজনও নড়ে নি। তারপর গুলি চলল-সম্ভবত একাধিকবার। কারণ পরবর্তী হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা পঞ্চাশের উপরে, আহতের সংখ্যার ঠিক হিসেব কখনও শুনি নি।“

    -----

    স্বাধীনতাপূর্ব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রবলতর স্রোত যদি হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা, অন্যটি অবশ্যই হিন্দু জাতীয়তাবাদ। মুখে সেকুলারিজমের কথা বললেও কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানসিকতা যে হিন্দুত্ববাদী, সে নিয়ে খুব একটা সন্দেহের অবকাশ ছিল না। এর শুরু কোথায় জানি না, তবে বাল গঙ্গাধর তিলক ছিলেন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নরম হিন্দুত্ববাদের একজন বড়মাপের প্রবক্তা। গনেশ চতুর্থী পালন কিম্বা গোহত্যা রদের দাবী তিলক ব্রিটিশবিরোধী হিন্দু জাতীয়তাবাদকে সংহত করা কাজে লাগালেন। উপমহাদেশের মুসলিমদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রান্তে ঠেলে দেওয়ার সেই গালা সূচনা। তিলকের পথ ধরে বহু নরম হিন্দু কংগ্রেসী নেতা এসেছেন-গিয়েছেন। মদনমোহন মালব্য,বল্লভভাই প্যাটেল, পুরুষোত্তম দাস ট্যান্ডন, গোবিন্দবল্লভ পন্থ, বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ- অনেকের নাম করা যায়।কংগ্রেসের অনেক চার-আনা'র কর্মী তো স্বরাজ বলতে বুঝতেন স্বাধীনতা প্লাস গোহত্যা রদ। স্বাধীনতার কিছু আগে গোহত্যানিবারণ নিয়ে সাধারণ কর্মীরা নেতাদের কাছে-মূলতঃ গান্ধী ও রাজেন্দ্রবাবুর কাছে-হাজারে হাজারে পোস্টকার্ড পাঠিয়ে রীতিমত চাপ সৃষ্টি করেন। তার পেছনে কোনো সাংগঠনিক মাথা কাজ করছিল কিনা, না কি তা নিছকই স্বতস্ফুর্ত, বলা মুশকিল।
    আর্যসমাজের প্রভাব একটা বড় ব্যাপার ছিল। হিন্দু মহাসভা একদা কংগ্রেসের মধ্যেই প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করত। ১৯১৫ সালে হরিদ্বারে অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভার কনফারেন্সে গান্ধী উপস্থিত ছিলেন এবং হিন্দু মহাসভার স্থাপনাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। আর এস এস এর প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের রাজনৈতিক গুরু ছিলেন বি এস মুঞ্জে, একজন হিন্দু মহাসভা তথা কংগ্রেস নেতা। হেডগেওয়ার নিজেও অল্প সময়ের জন্য কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা দীর্ঘকাল ধরেই আর এস এস -এর প্রতি নরম ছিলেন। স্বাধীনতার পরে নেহরুর অনুপস্থিতিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় আর এস এস কর্মীরা যুগপৎ আর এস এস ও কংগ্রেসের সদস্য থাকতে পারবেন। নেহরু বিদেশ থেকে ফিরে এসে তা রদ করেন। বলাই বাহুল্য, তখনো গান্ধী হত্যা হয় নি।
    এবং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। সত্যিকারের সেকুলার এই মানুষটি মুখে কোনোদিন হিন্দু জাতীয়তাবাদের কথা না বললেও তাঁর কথা ও কাজে বারেবারে মুসলিম জনমানসে অন্য বার্তা পাঠিয়ে গেছেন। গান্ধীর রামরাজ্যের রেটোরিক কিম্বা ভারতমাতার মন্দির স্থাপনা মুসলিমদের কাছে টানতে খুব সহায়ক হয়েছিল মনে হয় না।
    শুধু তো কংগ্রেস পার্টি নয়। অনুশীলন ও যুগান্তর সমিতির মত সশস্ত্র বিপ্লববাদী দলগুলি গোড়াতেই মুসলিম বালাই চুকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছিল। একজন ধর্মপরায়ণ মুসলমানের পক্ষে গীতা ছুঁয়ে শপথ গ্রহণ করা যে কতখানি অসম্ভব, তা কি অরবিন্দ ঘোষ ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা কখনো ভেবে দেখেছিলেন? এ কি নিছকই বালসুলভ সারল্য না রক্তের গভীরে ঢুকে যাওয়া ধর্মীয় সংস্কার? সম্ভবতঃ কোনোটাই না। অরবিন্দ তাঁর বিখ্যাত উত্তরপাড়া বক্তৃতায় জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বললেন-"সনাতন ধর্মই আমাদের জাতীয়তাবাদ। এই হিন্দু রাষ্ট্র সনাতন ধর্মকে সঙ্গে নিয়েই জন্মগ্রহণ করেছে, সনাতন ধর্মের বৃদ্ধির সঙ্গেই তার বৃদ্ধি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।" বঙ্কিমচন্দ্র ও তাঁর আনন্দমঠের (অ)প্রচ্ছন্ন মুসলিম-বিরোধিতা অজস্র জাতীয়তাবাদী হিন্দু তরুণকে আবিষ্ট করেনি, কে জোর দিয়ে বলবে?
    মুসলমানরাও নিছক হাত গুটিয়ে বসেছিলেন না। উনিশ শতকের শেষদিকে স্যার সৈয়দ আহমদ খান অল ইন্ডিয়া মহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স ও আলিগর মুসলিম ইউনিভার্সিটি স্থাপন করেন। উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব, তাদের ব্রিটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা এবং ব্রিটিশ প্রশাসনে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো। এরই পথ ধরে ১৯০৬ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ স্থাপিত হয়। প্রসঙ্গতঃ, ঐ একই বছরে কিছুদিনের মধ্যে হিন্দু মহাসভারও জন্ম; মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা ও মুসলিমদের জন্য সরকারের তরফ থেকে পৃথক ইলেকটোরেট গঠনের প্রতিবর্ত ক্রিয়া ।
    শুরুর বছরগুলিতে মুসলিম লিগের হিসেবের মধ্যে পৃথক জাতি-রাষ্ট্রের কোনো ভাবনা ছিল না। মুসলিম জনগোষ্ঠীর অধিকারসচেতনতা বাড়ানো, অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে ইন্টার অ্যাকশন, ধর্মীয় হিংসা রোধ-এইসবই ছিল প্রায়োরিটি। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে না হতে চাকা অন্যদিকে ঘুরতে শুরু করে। খিলাফত আন্দোলনের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সোনার দিন ফুরিয়ে এল। আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির একদল তরুণ ইংরেজী-শিক্ষিত, পলিটিসাইজড মুসলিম ক্যাডারের উদ্যোগ পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রের পালে হাওয়া দিতে শুরু করে। সেই সময় নাগাদ মুসলিমদের মধ্যে একটি ছোটোখাটো কিন্তু তৎপর, অধিকারসচেতন শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্ম হয়েছে। যে কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে এরাই দিশা দিয়ে থাকে। দুঃখের বিষয় এই মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণী আত্মনির্মাণের জন্য র্যা ডিক্যাল ইসলাম-কেই আইডেন্টিটি হিসেবে বেছে নিলেন। হিন্দুসমাজকে খাড়া করা হল "অপর" হিসেবে। হিন্দুরাই যে মুসলমানের যাবতীয় দুর্দশার জন্য দায়ী,হিন্দুদের কারণেই সমাজে ও অর্থনীতিতে-ব্যবসাবানিজ্য হোক কিম্বা প্রশাসনিক পদে- মুসলমানদের পিছিয়ে পড়া -সে কথা জোরগলায় প্রচার করা শুরু হল। উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অংশে হিন্দু জমিদারের শাসনাধীন মুসলমান রায়তদের সেকথা বোঝানো কঠিন হল না। যে জরুরী তথ্য চেপে যাওয়া হল তা হল, মুসলমান জমিদারের অধীনেও ঐ একই মুসলমান রায়ত একই রকম নির্যাতন ভোগ করে থাকে। মহান ইসলামিক সাম্রাজ্যের স্মৃতি রোমন্থন ওরফে প্রাচীন মোগলাই পোলাওয়ের ঘি-শোঁকা সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে উস্কে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হল। বাতাসে ইতিউতি শোনা যেতে থাকল খিলাফৎ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে একযোগে হিন্দুদের ষড়যন্ত্র। এর অন্তত একটি সরাসরি পরিণতির সাক্ষী হল মালাবার উপকূল। ১৯২১ এর সশস্ত্র মোপলা বিদ্রোহ, যা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন হিসেবে, তা সহসা পরিণত হল হিন্দু-বিরোধী দাঙ্গায়।
    ঠিক একইভাবে হিন্দুমননে গেঁথে দেওয়া হতে থাকল মুসলিম "অপর" এর ভাবনা। হেডগেওয়ার, সাভারকর এবং পরবর্তীতে গোলওয়ালকরের মত তাত্বিকরা হিন্দুত্বের একটি এক্সক্লুশনারি নির্মাণ বানিয়ে তুললেন তিরিশ ও চল্লিশের দশক ধরে। মুসলমান-খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীকে মহান হিন্দুরাষ্ট্রের বুকে বিঁধে থাকা ফরেন বডি-র সঙ্গে তুলনা করা হল, যে কাঁটাকে সমূলে উপড়ে ফেলাই বাঞ্ছনীয়। জাতীয় আন্দোলনে গান্ধীর মুসলিম-তোষণের (!) তীব্র বিরোধিতা করা হল। হিন্দুত্ব নির্মাণের এই প্রকল্প থেকে ব্রিটিশ বিরোধিতাকে সযত্নে পরিহার করা হল। অহিংস অসহযোগ কিম্বা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগদান করা থেকে আর এস এস সদস্যদের বিরত করা হল। শুধু এ-ই নয়, হিন্দু মহাসভার মহান নেতা, বাঘের বাচ্চা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ব্রিটিশ প্রভুদের সতর্ক করলেন- "ভারত ছাড়ো" আন্দোলনে কংগ্রেস নানা ভাবে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে সচেষ্ট হবে; সরকার বাহাদুর যেন যথাবিহিত ব্যবস্থা নেন।
    এমন অবস্থায় যা হওয়ার তাই হয়। নিয়মিত ব্যবধানে ছোট-বড় দাঙ্গা বাধা (অথবা বাধানো)শুরু হল। হোলি/গোহত্যা/নামাজের সময় মসজিদের সামনে হিন্দু ধর্মীয় সঙ্গীত বাজানো- নানা কারণের নানা মাপের হাড়-হিম করা দাঙ্গায় মানুষ অভ্যস্ত হতে শুরু করে ১৯২২-এর পরের বছরগুলি থেকে। তবলিগি জামাত, আর্য সমাজ, জামাত উল ইসলামের সদস্য সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। ধর্মের রাজনীতিকরণ ও রাজনীতির সাম্প্রদায়িকীকরণ যদিও নতুন ঘটনা নয়, তবু দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝখানের সময়ে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে শুরু করে। এব্যাপারে শাসক ব্রিটিশের উৎসাহ কম ছিল না। কলোনিয়াল স্টেটের কাঠামোয় নিপুণভাবে ধর্মীয় বিভেদের চিহ্নগুলিকে মোটা অক্ষরে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলতে থাকে। রেল স্টেশনে হিন্দু-মুসলিম পৃথক রিফ্রেশমেন্ট রুম, প্ল্যাটফর্মের জলের কল "হিন্দু ওয়াটার"-"মুসলিম-ওয়াটার" বলে ভাগ করা, "হিন্দু- চা" , "মুসলিম-চা"-এর মত হাস্যকর কিন্তু নিদারুণ কার্যকরী বেড়াগুলির পরিণাম অচিরেই ভয়ানক হয়ে উঠবে। শুধুমাত্র ইচ্ছাকৃত বদামো-ই নয়, ব্রিটিশ শাসকরা সম্ভবতঃ অন্তর দিয়েই বিশ্বাস করতেন না হিন্দু-মুসলিম-শিখ জনগোষ্টির মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও একতা সম্ভব। এরই অনিবার্যতায় ধর্মভিত্তিক জনগোষ্ঠীগুলির জন্য প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে পৃথক পৃথক ইলেকটোরেটের ব্যবস্থা করা হল। বিষবৃক্ষের মূলে শুধু একরকম নয়, নানবিধ সারের বন্দোবস্ত হয়েছিল দেখাই যাচ্ছে।

    -----

    "ঘেটো"করণের একটা নতুন রকম দেখা যেতে থাকল শিগগিরই। মুসলিম রোগী কেবলমাত্র মুসলিম ডাক্তারের কাছেই যাবে, হিন্দু মক্কেল হিন্দু উকিলের শরণ নেবে, বাজারহাটের মত ছোটখাটো ব্যাপারেও মানুষ ধর্মীয় লক্ষণরেখার বাইরে পা ফেলবে না, এরকমটা আগে কখনো এত তীব্রতার সঙ্গে দেখা যায় নি। ভারতে হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থানের কমবেশী ৮০০ বছরের ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক বিষ এই প্রথম এমন কার্বঙ্কলের মত ফুটে বেরোলো।

    ইয়াসমিন খান প্রফেসর মহম্মদ মুজিবের উদাহরণ দিয়েছেন। আপাদমস্তক সেকুলার, আগাগোড়া কংগ্রেসী পরিবারের সন্তান প্রফেসর মুজিব ছিলেন জামিয়া মিলিয়া ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর। নেহরু-র ব্যক্তিগত বন্ধু এই মানুষটিও কালের প্রভাব এড়াতে পারেন নি। সে সময়কার অন্যান্য মুসলিম এলিটদের মত তিনিও ঠিক করেছিলেন, কেবলমাত্র মুসলিম ব্যবসায়ী-দোকানীদের কাছ থেকেই জিনিষপত্র কেনাকাটা করবেন। বাড়ির জেনানামহলের কাছে কিন্তু এহেন সুপ্রস্তাব ধোপে টিকল না। যেখানে ভালো জিনিষ, কম দাম আর ভালো ব্যবহার মিলবে, বেচাকেনা সেখানেই, সে হিন্দু হোক কি মুসলিম-গৃহকর্ত্রীর এই কথার পরে আর বাহাস চলে না। সংসার যাঁদের চালাতে হয়, তাঁরা জানতেন ধোঁয়াটে সাম্প্রদায়িক চেতনার চেয়েও বেশী জরুরী বাস্তববুদ্ধি।

    এই সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতার মধ্যেও কিছু ব্যতিক্রম ছিল-শ্রেণীগত সহাবস্থান অন্ততঃ কিছুটা হলেও, কিছুকালের জন্য হলেও সাম্প্রদায়িক বিভেদকে আটকে রেখেছিল। গরীব হিন্দু-মুসলমান চাষী কিম্বা কলের মজদুর সেই ভাঙনের মধ্যেও সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে চারপাইয়ে বসে সম্প্রদায় ভুলে নিজেদের মধ্যে সুখদুঃখের গপ্পো করতেন, উচ্চবিত্ত হিন্দু-শিখ-মুসলিম ব্যবসায়ী-জমিদার-চা বাগানের মালিকরা কেউ কেউ একে অন্যের সাথে পুরনো দোস্তির সুবাদে দামী হোটেলে-বারে নৈশভোজন বা মদ্যপান করতে যেতেন, কলেজের ছেলেছোকরারা হিন্দু-মুসলিম-শিখ ভেদাভেদ ভুলে একসাথে ক্লাসে যেত, আড্ডা-তকরার করত। কিন্তু এই শ্রেণীঐক্যও খুব বেশীদিন আর টিকবে না। কালো দিন বড় তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসছিল।

    জঙ্গী আন্দোলনের উর্বর ভূমি, শিল্প-সংস্কৃতির পীঠস্থান বাংলার অবস্থাও খুব একটা ভালো কিছু ছিল না। তপন রায়চোধুরীর অ্যানেকডোটগুলি উদ্ধৃত করার লোভ সামলানো মুশকিল- অতএব সে চেষ্টাও করছি না; চৌধুরীমশায় লিখছেনঃ
    "সাম্প্রতিক কালের গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে যে, বাংলায় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। এই কথা বোঝার জন্য আমরা যারা সেই সময় সাবালক হয়েছি তাদের গবেষণার আশ্রয় নিতে হয় না। তথাকথিত জাতীয়তাবাদী পত্রপত্রিকায় মুসলমানদের রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্খা নিয়ে যেভাবে নিষ্ঠুর বিদ্রূপ করা হত, তা সাম্প্রতিক কালের সঙ্ঘ পরিবারের ভাষার থেকে খুব কিছু আলাদা নয়।।।। এরকম একটি পত্রিকা সম্বন্ধে ফজলুল হক সাহেব একদিন মন্তব্য করেছিলেন, "দ্যাখ , আমি হিন্দুবিদ্বেষী, ছালান্নিয়া পাডা[ ।।। মানে যার নির্বুদ্ধিতায় কোনও ভেজালের স্পর্শ পড়ে নি।।।] ছাড়া এ কথা কেউ কইবে না। কিন্তু সকালে উড্ডিয়া ঐ কাগজখান পড়লে আমারও ইচ্ছা করে হিন্দুগো মুণ্ডু চিবাইতে।" ঐ পত্রিকার এক পূজা সংখ্যায় 'ছহি হকনামা' বলে একটি রসরচনা বের হয়েছিল। সেটি পড়ে সমস্ত শিক্ষিত মুসলমান যদি ক্ষেপে উঠে থাকেন তো বলার কিছু নেই।।।।"

    কিম্বা কলকাতার দাঙ্গা সম্বন্ধে যখন লিখছেন-"।।। বীভৎস সব কাহিনী রটিয়ে কিছু লোক এক ধরণের বিকৃত আনন্দ পায়। তার চেয়েও অবাক হলাম যখন দেখলাম কয়েকজন তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত লোক মুসলমানদের উপর নানা অত্যাচারের সত্যি বা কল্পিত কাহিনী বলে বা শুনে বিশেষ আনন্দ পাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে দু-তিনজন রীতিমত বিখ্যাত লোক। প্রয়াত এক পণ্ডিত ব্যক্তি, যাঁর নাম শুনলে অনেক নিষ্ঠাবান হিন্দু এখনও যুক্তকরে প্রণাম জানায়, তাঁকে এবং সমবেত অধ্যাপকদের কাছে নিকাশিপাড়ার মুসলমান বস্তি পোড়ানোর কাহিনী বলা হচ্ছিল। যিনি বলছিলেন তিনি প্রত্যক্ষদর্শী এবং বিশ্বাসযোগ্য লোক। বেড়া আগুন দিয়ে বস্তিবাসীদের পুড়িয়ে মারা হয়। একজনও নাকি পালাতে পারে নি। ছেলেটি বলছিল-কয়েকটি শিশুকে আগুনের বেড়া টপকে তাদের মায়েরা আক্রমণকারীদের হাতে দেওয়ার চেষ্টা করছিল, যাতে ওদের প্রাণগুলি বাঁচে। বাচ্চাগুলিকে নির্দ্বিধায় আবার আগুনে ছুঁড়ে দেওয়া হয়। আমরা শুনেছিলাম এই কুকীর্তির নায়্ক কিছু বিহারী কালোয়ার। তাই ভয়াবহ বর্ণনাটি শুনে সুশোভনবাবু মন্তব্য করেন, " এর মধ্যে নিশ্চয়ই বাঙালি ছেলেরা ছিল না?" শুনে সেই পণ্ডিতপ্রবর গর্জে উঠলেন, "কেন, বাঙালি ছেলেদের গায়ে কি পুরুষের রক্ত নেই?"

    শনিবারের চিঠি-ই তপনবাবু কিম্বা হক সাহেব বর্ণিত পত্রিকাটি কিনা জানি না; নাহলেও দৌড়ে সেটি খুব একটা পিছিয়ে ছিল না। নানাবিধ ছদ্মনামের আড়ালে শিক্ষিত মুসলমানের আকাঙ্খাকে যেভাবে ব্যঙ্গ করা হত, তাকে অশ্লীল বললে কম বলা হয়। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন এইসব হিঁদু চামচাদের চাঁদমারির মুখ্য বুল'স আই। একটি উদাহরণ দিই-
    "তখন সভাপতির আদেশে হাজী ভীমরুল বেসামাল নামক একটি বাবরীকাটা চুলওয়ালা যুবক বক্তৃতা দিতে আরম্ভ করিলেন। ইনি বলিলেন "বেরাদরগণ ও বেরাদরিণীগণা, বিটকেলউদ্দীন এতক্ষণ যা চিল্লালেন তা আপনাদের আলবাৎ কানে ঢুকিয়াছে। একবার হিন্দুদের বদমায়েসীত্ব নজর করুন, আজ হইতে আমরা জান্পনে উর্দোস্কৃতের চর্চা করিব। বড়ই আফশোষের বাত যে আজ বেহেস্তীয় দিলবাহার দাস মহাশয় এখানে হাজির নাই। তিনি জানবন্ত থাকিলে কংগ্রেসকে দিয়া বাংলা বাতের মধ্যে শতকরা ৮০টি উর্দুবাত দিবার প্ত করিতেন। মরদসিংহ সার জলদি-খোশ ছাড়া আর কারুর তাঁকে বাধা দিবার মত ছাতির জোর ছিল না। কিন্তু হায় দাস ছাব আজ ভেস্তে গিয়াছেন। তাঁহার কাম আমাদেরই করিতে হইবে। ইহাতে টেংরীপশ্চাৎ হইলে চলিবে না। আপনারা না করিলে আমি কখনও কসুরাপবাদগ্রস্ত হইব না। আমিও লেখার মধ্যে উর্দোস্কৃত ঢুকাইয়াছি। বিনয় ছরকারের কেরামতিতে বাংলার অঙ্গে পয়জার পড়িয়াছে আমিও উহাকে জিঞ্জির পরাইয়াছি। আমিই বা কম কিসে?"
  • Rabaahuta | 132.17.***.*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪৭369473
  • পড়ছি
  • সিকি | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:২৯369484
  • আশ্চর্য! সত্যিই আশ্চর্য! হুবহু এই রকমের ভাষাতে মোটাদাগের নিম্নরুচির ব্যঙ্গ আজও লেখা হয়। আজও। ফেসবুকে।
  • পাই | 57.29.***.*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১১:৩৩369487
  • আরে কতদিন বাদে ইন্দোদার লেখা! লেখো, লেখো, পড়ছি!

    এটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, এই একই সময়ে বোধহয় আবার ফিরে যেতে চলেছি! এখন অবশ্য মুসলমান মানে জাতীয়তাবাদী হতে পারে, এই ধারণাটাই চলে যাচ্ছে বা গুড মুসলিম হতে গেলে জাতীয়তাবাদী কিনা সেইঈ প্রমাণ দিয়ে যেতে হচ্ছে।
    '
    সাম্প্রতিক কালের গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে যে, বাংলায় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। এই কথা বোঝার জন্য আমরা যারা সেই সময় সাবালক হয়েছি তাদের গবেষণার আশ্রয় নিতে হয় না। তথাকথিত জাতীয়তাবাদী পত্রপত্রিকায় মুসলমানদের রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্খা নিয়ে যেভাবে নিষ্ঠুর বিদ্রূপ করা হত, তা সাম্প্রতিক কালের সঙ্ঘ পরিবারের ভাষার থেকে খুব কিছু আলাদা নয়।।।। এরকম একটি পত্রিকা সম্বন্ধে ফজলুল হক সাহেব একদিন মন্তব্য করেছিলেন, "দ্যাখ , আমি হিন্দুবিদ্বেষী, ছালান্নিয়া পাডা[ ।।। মানে যার নির্বুদ্ধিতায় কোনও ভেজালের স্পর্শ পড়ে নি।।।] ছাড়া এ কথা কেউ কইবে না। কিন্তু সকালে উড্ডিয়া ঐ কাগজখান পড়লে আমারও ইচ্ছা করে হিন্দুগো মুণ্ডু চিবাইতে।'

    ---

    কীরকম বিদ্রূপ করা হত, কিছু নমুনা কোথাও পাওয়া যাবে?

    তবে এইভাবে মারা নিয়ে মিথ্যে খবর ছড়িয়ে ফ্লন্ট করাটা বোধহয় এখনো প্রকাশ্যে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় তেমন ইন থিঙ্গ হয়নি। কিন্তু সে হতেও বা আর কতদিন?

    যাহোক, তুমি লেখো।

    নিমসুখী জীবনটা টুকে রাখলাম।
  • পাই | 57.29.***.*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১১:৩৩369486
  • আরে কতদিন বাদে ইন্দোদার লেখা! লেখো, লেখো, পড়ছি!

    এটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, এই একই সময়ে বোধহয় আবার ফিরে যেতে চলেছি! এখন অবশ্য মুসলমান মানে জাতীয়তাবাদী হতে পারে, এই ধারণাটাই চলে যাচ্ছে বা গুড মুসলিম হতে গেলে জাতীয়তাবাদী কিনা সেইঈ প্রমাণ দিয়ে যেতে হচ্ছে।
    '
    সাম্প্রতিক কালের গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে যে, বাংলায় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। এই কথা বোঝার জন্য আমরা যারা সেই সময় সাবালক হয়েছি তাদের গবেষণার আশ্রয় নিতে হয় না। তথাকথিত জাতীয়তাবাদী পত্রপত্রিকায় মুসলমানদের রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্খা নিয়ে যেভাবে নিষ্ঠুর বিদ্রূপ করা হত, তা সাম্প্রতিক কালের সঙ্ঘ পরিবারের ভাষার থেকে খুব কিছু আলাদা নয়।।।। এরকম একটি পত্রিকা সম্বন্ধে ফজলুল হক সাহেব একদিন মন্তব্য করেছিলেন, "দ্যাখ , আমি হিন্দুবিদ্বেষী, ছালান্নিয়া পাডা[ ।।। মানে যার নির্বুদ্ধিতায় কোনও ভেজালের স্পর্শ পড়ে নি।।।] ছাড়া এ কথা কেউ কইবে না। কিন্তু সকালে উড্ডিয়া ঐ কাগজখান পড়লে আমারও ইচ্ছা করে হিন্দুগো মুণ্ডু চিবাইতে।'

    ---

    কীরকম বিদ্রূপ করা হত, কিছু নমুনা কোথাও পাওয়া যাবে?

    তবে এইভাবে মারা নিয়ে মিথ্যে খবর ছড়িয়ে ফ্লন্ট করাটা বোধহয় এখনো প্রকাশ্যে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় তেমন ইন থিঙ্গ হয়নি। কিন্তু সে হতেও বা আর কতদিন?

    যাহোক, তুমি লেখো।

    নিমসুখী জীবনটা টুকে রাখলাম।
  • I | 53.239.***.*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ২০:৫৯369488
  • একটা বাড়াবাড়ি রকমের অ্যাম্বিশাস প্রজেক্টে হাত দিয়ে ফেলেছি। দেশভাগ নিয়ে লেখালিখি শেষ হওয়ার নয়। ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে।
  • h | 194.185.***.*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ২১:৪৮369489
  • যাক বাবা অন্তত লেখার কথা ভেবেছে। এমনিতে তো আড়ি ।
  • S | 184.45.***.*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০১369490
  • কঠিন কিন্তু ভালো প্রজেক্ট। আমিও একটু লিখি।

    আমি নিজে বাঙাল বাড়ির ছেলে। আশে পাশে বেশিরভাগ জনগনই বাঙাল। ছোটোবেলা থেকে যা দেখেছি বা শুনেছি তাই থেকে এখন যেটা মনে হয় তাই বলছি। একেবারেই নিজস্ব এক্সপিরিয়েন্স আর অবজারভেশন। ভুল হলেই বেশি খুশি হবো।

    ১) দেশভাগ নিয়ে একটা হা-হুতাশ ছিলো সেটা চারপাশে দেখেছি। কিন্তু সেটা কোয়ালিটি অফ লাইফ নিয়ে। যে কত ভালো ছিলাম। কত জমি ছিলো। কত গাছ, মাছ ইত্যাদি। আশেপাশের লোকেরা কত ভালো ছিলো। থেকে যেতে বলেছিলো। একবার যদি গিয়ে দেখে আসতে পারতাম ইত্যাদি। সেখানে সাম্প্রদায়িক ব্যাপারটা কখনো দেখিনি। বরন্চ উল্টো গল্পই শুনেছি যে ওপার বাংলায় হিন্দুরা মুসলমানদের উপরে কি অত্যাচার করেছে। বামুনের ছায়া মাড়িয়েছে বলে জুতোপেটা, এইসব। মনে রাখবেন ওপার বাংলা কিন্তু তখনো মুসলমান মেজরিটি ছিলো।

    ২) কিন্তু যে ব্যাপারটা বারবার এসেছে সেটা হলো এপার বাংলায় এসে যে কঠিন সময় কাটিয়েছে সেইটা। রিফিউজি ক্যাম্পের গল্প। কপর্দকহীন হওয়ার গল্প। কিছু না থাকার গল্প। আর অবশ্যই এপার বাংলার লোকেদের তাচ্ছিল্যের বা ব্যাঙ্গের গল্প। এটা আমি নিজেও কিছুটা দেখেছি। বাঙাল বাড়ির মেয়ে বৌ করে আনবোনা বা বাঙাল বাড়িতে মেয়ে দেবোনা এইসব আরকি। আরো কিছু সাটেল ব্যাপার স্যাপার ছিলো।

    ৩) এখন নিজের আশেপাশে অবজার্ভ করে যখন ভাবি তখন মনে হয় যে একটা পার্থক্য থেকেই গেছে বাঙাল আর ঘটিদের মধ্যে এই এতোদিন পরেও। সেটা হলো জমির মালিকানা। বিগত দুদশকে কোলকাতার আশেপাশে জমি বিক্কিরি করে যেসব লোকেরা বড়লোক হয়েছে/হচ্ছে (মেকিঙ্গ ওয়েল্থ ফ্রম লিকুইডেটিঙ্গ এনাদার ওয়েল্থ), তাদের বেশিরভাগই এপার বাঙলার লোকজন। আর আনলাইক অন্যান্য ইকনমি, ভারতে (বিশেষ করে কোলকতায়, যেখানে অন্য উপায়ে আয় করার সম্ভাবনা কম) এখনো জমির মালিকানা আপনার ওয়েল্থের একটা বড় অংশ, ফলে যার যত বেশি জমি সে তত বেশি বড়লোক।

    ৪) দেশভাগের সাথে বোধয় এই পাকিস্তান বিরোধিতা বা বাংলাদেশ বিরোধিতার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার তো মনে হয় একেবারেই উল্টোটা। পান্জাব আর বাংলার জনগন (যারা বর্ডার পেড়িয়ে এসেছিলো আর যারা এইপারেই ছিলো - তারাও তো সাফার করেছে) - তারাই বোধয় শান্তি চায়, বন্ধুত্ব চায়, হয়তো জোড় লাগাতেও চায়। মারাঠিদের মধ্যে বা ইউপি-বিহারে যে পাকিস্তান বিরোধিতা দেখি সেটা এসেছে এক্কেবারেই লোকাল এক্সপিরিয়েন্স থেকে। তাই এইদুটো আলাদা বিষয়।
  • I | 53.239.***.*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০৩369491
  • "১৯৪৬ সালের ওপর আমার বিশেষ একটা ভরসা নেই" -ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড ওয়াভেল তাঁর ৪৬-র নিউ ইয়ারের ডায়েরিতে লিখছেন-"খুব অবাক হব, খুশিও হব, যদি বছরটা ভালোয় ভালোয় কাটে।"

    ওয়াভেল কোনো হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার কথা ভেবে ভয় পাচ্ছিলেন না। যদিও পরিস্থিতি তখন যথেষ্ট বিষাক্ত, সাম্প্রদায়িক গন্ধে ভরপুর; যদিও পাকিস্তানের দাবী জোরালো ভাবে উঠে আসছে, কংগ্রেস আর মুসলিম লিগ কেউ কাউকে একটুও জমি ছাড়তে রাজী নয়।

    কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে ব্রিটিশ রাজ তখনো দোটানায়। পূর্ণ স্বাধীনতা, নাকি ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দিয়ে বাবা-বাছা বলে মাথায় হাত বুলিয়ে আরো কিছুকাল ভুলিয়ে রাখা!

    সাধারণ ভারতবাসী আর এই দোনোমোনো সহ্য করতে রাজী হচ্ছিলেন না। না হিন্দু, না মুসলিম। ক্ষমতার ভাগ নিয়ে নেতাদের হাত কচলানো চলছে; আবার একই সঙ্গে মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ছেন যে কোনো ছুতোনাতায়। প্রায়শঃই নেতৃত্বহীন। মানুষের লড়াইয়ের পেছনে পেছনে বিপদ বুঝে নেতারা ছুটছেন। আর এই লড়াই থেকে জন্ম নিচ্ছে সাময়িক এক সম্প্রীতি। কিছু সময়ের জন্য হলেও সাম্প্রদায়িক ঘৃণা প্রশমিত হচ্ছে। ধর্মের কারবারীরা প্রমাদ গুণছেন। লাল কেল্লায় আই এন এ সৈনিকদের বিচার চলছে। তাঁরাই তখনকার মত সাধারণ ভারতবাসীর চোখের মণি; কংগ্রেস-লিগ নেতারা নন। বাধ্য হয়ে সুবোধ বালকের মত প্রতিষ্ঠিত নেতারা আই এন এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছেন। দিল্লির রাস্তায় রাস্তায় লাল কালিতে আঁকাবাঁকা হাতে লেখা পোস্টার ছড়িয়ে পড়ছে- একজন আই এন এ সৈন্যের প্রাণের বদলা নিতে কুড়িটা ব্রিটিশ কুত্তা খুন করুন ।" বম্বে-কলকাতা-করাচির রাস্তায় ইওরোপীয়ানদের গা থেকে জোর করে হ্যাট-টাই খুলে ফেলা হচ্ছে, সাইকেল থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। "জয় হিন্দ" বলতে বাধ্য করা হচ্ছে তাঁদের। পাঞ্জাবের গভর্নরের গাড়িতে পাথর ছুঁড়ে মারা হচ্ছে। ওয়াভেলের আশংকার যথেষ্ট কারণ ছিল।

    এরই মধ্যে '৪৬ এর ফেব্রুয়ারি মাসে বম্বেতে নৌ-বিদ্রোহ শুরু হয়ে গেল। সাধারণ ভারতীয় নৌ-সেনাদের নিত্যকার দুর্দশা আর বৈষম্য থেকে ক্ষোভের শুরু। তারই রাজনীতিকরণ ঘটাল ব্রিটিশ-বিরোধী গণচেতনা আর কমিউনিষ্ট মতাদর্শ। আই এন এর বিচার আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছিল। বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ল করাচি থেকে কলকাতায়। বিদ্রোহী জাহাজে-জাহাজে কমিউনিষ্ট পার্টির লাল পতাকা কংগ্রেস আর লিগের পতাকার সঙ্গে একসাথে উড়তে থাকল। মাদ্রাজ ও পুনায় ভারতীয় স্থলবাহিনীর মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিল। বম্বে-র গুর্খা সৈন্যরা বিদ্রোহী নৌবাহিনীর দিকে গুলি ছুঁড়তে অস্বীকার করল।সে বড় সুখের সময়। মোচ্ছব-কার্নিভালের মত হালকা, ফুরফুরে। স্বাধীনতার প্রথম ছোঁয়াচ লাগা হো হো হাসির দিন। সে বড় সুখের সময় নয়। দমবন্ধ করা, অস্থির দিন। চারিদিকে শত্রুর গণ্ডি ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। বি সি দত্ত, নৌবিদ্রোহের অন্যতম কারিগর, সেই দিনগুলির কথা লিখেছেন-

    " সমাজের সব স্তরের মানুষ খাবারের প্যাকেট, জলের ঘড়া নিয়ে আসছেন। গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ার সামনের সমুদ্রমুখী রাস্তা ভিড়ে ভিড়াক্কার। রেস্তোরাঁ-মালিকরা লোকজনদের অনুরোধ করছেন যত খুশি খাবার নিয়ে বিদ্রোহী নাবিকদের পৌঁছে দিতে।এমন কি রাস্তার ভিখিরিরাও ছোট ছোট খাবারের পুঁটলি নাবিকদের জন্য বয়ে নিয়ে চলেছেন।বন্দরের সামনে সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। সশস্ত্র ভারতীয় সৈন্যরা গোটা এলাকা টহল দিচ্ছেন। ব্রিটিশ ফৌজ দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে। কাঁধে রাইফেল ঝোলানো ভারতীয় সৈন্যরা নাবিকদের জন্য আনা খাবার নৌকায় তুলে দিতে সাহায্য করছেন; এই নৌকা যাবে বন্দর থেকে বিদ্রোহী জাহাজে , রসদ বয়ে নিয়ে। ব্রিটিশ অফিসাররা অসহায় দর্শকের মত দাঁড়িয়ে।"

    বিদ্রোহ যদিও বেশীদিন টিকল না। কমিউনিষ্ট পার্টি ছাড়া জাতীয় স্তরের বড় নেতারা কেউ সমর্থন করলেন না। উল্টে বিরোধিতা করলেন।পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার ভয় ছিল। শ্রেণীলাইন বরাবর মানুষের ভাগাভাগি হয়ে গেলে কমিউনাল তাস খেলা যাবে না। লিগ-কংগ্রেস দুপক্ষেরই অসুবিধে। তাছাড়া তখন সরকারের সঙ্গে টেবিলে বসে বোঝাপড়া চলছে; এই অবস্থায় সরকারকে চটাতে কেউই চায় না। জিন্না ও প্যাটেল, লিগ আর কংগ্রেস নৌবিদ্রোহের বিরোধিতায়, কমিউনিষ্ট-বিরোধিতায় একসাথে হাত মেলালেন । কংগ্রেসের একমাত্র নেতা যিনি নৌবিদ্রোহকে সমর্থন করেছিলেন, তিনি অরুণা আসফ আলি। গান্ধী তাঁকে তীব্র ভর্ত্সনা করলেন। ক্ষুব্ধ অরুণা আসফ আলি সি পি আইয়ে যোগ দিলেন। ৪৭৬ জন বরখাস্ত নৌসেনার একজনকেও পরবর্তীতে স্বাধীন ভারত কিম্বা পাকিস্তান - কোনো দেশের সেনাবাহিনীতে পুনর্বহাল করা হয় নি।

    '৪৫-এর শেষ, '৪৬ এর শুরুর সেই সময় বিপ্লবের সম্ভাবনায় ভরপুর। শুধুমাত্র ব্রিটিশ-বিরোধিতা নয়, যে কোনো রকম স্থিতাবস্থার বিরুদ্ধেই জঙ্গী মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। ট্রেনচালক থেকে প্রেসকর্মী, পোস্টম্যান থেকে কটন মিলের শ্রমিক সকলেই ন্যায্য দাবীর জন্য আন্দোলন করছেন। মুহূর্মুহু বন্ধ ডাকা হচ্ছে। '৪৬ এর মার্চে বিহারে বড়সড় পুলিশ বিদ্রোহ ঘটে গেল। সেনা নামিয়ে তা থামাতে হল। দিল্লিতে বিদ্রোহ করলেন ৩০০ পুলিশকর্মী।'৪৬-এর গ্রীষ্মে সারা ভারত রেল স্ট্রাইক ডাকার বন্দোবস্ত প্রায় পাকা। শেষ মুহূর্তে তা রদ হল।'কমিউনিষ্ট পার্টির কৃষকসভা যেখানে যেটুকু শক্তি আছে তাই দিয়ে কৃষকদের সংগঠিত করছেন। জমিদার-মহাজন-দেশী রাজাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হচ্ছে। '৪৬-এই তেলেঙ্গানার সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহের শুরু। কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বে প্রায় চার হাজার গ্রামে বিদ্রোহের আগুন পৌঁছে গেল। এই আগুনের আঁচ নিভতে সময় লাগবে আরো পাঁচ বছর। সামন্ত-জমিদার-রাজাকার-নিজামের সৈন্যবাহিনীর যৌথ অত্যাচার আর পরবর্তীতে নেহরু-প্যাটেলের নির্দেশে স্বাধীন ভারতের সেনাবাহিনীর অভিযান এই বিদ্রোহকে শেষমেশ প্রশমিত করবে। '৪৬ এর সেপ্টেম্বরে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিষাণ সভার ডাকে বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তেভাগা আন্দোলন শুরু হল। যশোর-দিনাজপুর-রংপুর-ময়মনসিংহ-জলপাইগুড়ি -চব্বিশ পরগনায় তেভাগার ডাক উঠল। আন্দোলন থামতে খুব বেশী সময় লাগে নি। কিন্তু এর আবেদন বহুদিন ধরে রয়ে যাবে বিদ্রোহী বামপন্থী মননে,গানে-গল্পে-কবিতায়-ওরাল ন্যারেটিভে।

    রুজির লড়াই, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই যখনই দানা বেঁধে উঠেছে, তখনই পিছু হটে গেছে সাম্প্রদায়িকতা। কলকাতা ট্রাম কোম্পানির লড়াই এর আর এক উজ্জ্বল উদাহরণ। '৪৬ এর ১১ই ফেব্রুয়ারি রশিদ আলি দিবসের মিছিলে গুলি চালানোর প্রতিবাদে(যার কথা আগেই উল্লিখিত হয়েছে) পরদিন ১২ই ফেব্রুয়ারি কমিউনিষ্ট পার্টি সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। বন্ধ সফল করতে ট্রাম কর্মচারী ইউনিয়ন বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। নৌ-বিদ্রোহের সমর্থনেও সবচেয়ে বড় মিছিল ডাকেন তাঁরাই। এই মিছিলে বাঙালী হিন্দু-বিহারী মুসলমান এক সঙ্গে পা ফেলেছেন। '৪৬এর অগাস্ট মাসে দাঙ্গার কালো দিনগুলিতে, যখন সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে সব সংহতি ধুয়ে-মুছে যাচ্ছে, তখনো ট্রাম কর্মচারী ইউনিয়নের বাঁধন ছিল অটুট।
  • I | 53.239.***.*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ২২:৫৭369463
  • পাঞ্জাব আর বাংলার মানুষদের অনেক স্মৃতি,জীবনের অনেক্টা বড় টুকরো অন্যদেশে পড়ে রয়েছে।তারা তো শান্তি চাইতেই পারে।যদিও সবাই চায় না।খুব পরস্পরবিরোধী সেন্টিমেন্ট রয়েছে।

    দেশের অন্য অংশের এই স্টেক নেই।তাদের সম্পর্কটা অনেক একমাত্রিক। বিহারে তো মুসলিমবিরোধী বড় বড় দাঙ্গা হয়েছে। দেশভাগ আর পাকিস্তান বিরোধিতা এক নয় বললে একটু সরলীকরণ হবে। মোদ্দা ব্যাপারটা কমিউন্যাল ঘৃণা।তারই একটা ফল আউট দেশভাগ।
  • I | 53.239.***.*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ২৩:০২369464
  • যেটা বলার কথা,দেশভাগের স্মৃতির মধ্যেও সাম্প্রদায়িক ঘৃণা রয়েছে।রাগ রয়েছে।পাঞ্জাবে বেশী,বাংলায় একটু কম। কেন কম তাতে পরে আসবো। কিন্তু একদম নেই তা নয়।
    তবে কি,সময়ের সাথে সাথে তিক্ততা কমে আসে।সুখস্মৃতি রয়ে যায়।S ভাগ্যবান।খারাপ দিকটা শোনেন নি। আমি শুনেছি।
  • সিকি | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:৪৫369465
  • "কংগ্রেসের একমাত্র নেতা যিনি নৌবিদ্রোহকে সমর্থন করেছিলেন, তিনি অরুণা আসফ আলি। গান্ধী তাঁকে তীব্র ভর্ত্সনা করলেন। ক্ষুব্ধ অরুণা আসফ আলি সি পি আইয়ে যোগ দিলেন। ৪৭৬ জন বরখাস্ত নৌসেনার একজনকেও পরবর্তীতে স্বাধীন ভারত কিম্বা পাকিস্তান - কোনো দেশের সেনাবাহিনীতে পুনর্বহাল করা হয় নি।"

    - ফেসবুকে এই পোস্টের নিচে স্বাতী মৈত্র লিখেছেন,

    "একটা ছোট যোগ করি - স্বাধীনতার পর এরকম অনেক কর্মীকে চাকরি ফিরিয়ে দিলেন নেহরু। শুধু দিলেন না কয়েকজনকে। তাঁরা সকলেই কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন, যেমন আমার ঠাকুরদা।"
  • S | 184.45.***.*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৯:১৯369466
  • "দেশভাগ আর পাকিস্তান বিরোধিতা এক নয় বললে একটু সরলীকরণ হবে।"

    যেদুটো রাজ্য সবথেকে বেশি ভুক্তভোগী, সেখানে পাকিস্তান বিরোধিতা কম। বোধয় মুসলমান বিরোধিতাও কম। অথচ মহারাষ্ট্র, গুজরাত, ইউপি, বিহারের কথা ভাবুন। তাই কোনো সম্পক্ক নেই বলেই মনে হয়। এখন একজন বাঙালী কমিউনাল হতেই পারেন, বা একজন পাঙ্গাবী পাকিস্তান বিরোধি হতেই পারেন। কিন্তু তার জন্য তিনি যদি দেশভাগকে দায়ী করেন, তাহলে হয় সেটা একেবারেই তার নিজস্ব উপলব্ধি/মতামত, বা তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেস্টা করছেন।
  • aranya | 172.118.***.*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ২০:৪৬369467
  • ইন্দো লিখছে আবার, খুবই আনন্দের কথা। ভাল লাগছে, থেমে না যায় যেন
  • Du | 182.58.***.*** | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২০369468
  • আমার অভিজ্ঞ্তাও এস এর ধাঁচেই। অন্ততঃ সেই জেনারেশনের মধ্যে হিন্দুত্ব নিয়ে কোন মাথাব্যথা ছিলো না। হয়তো আমার দিদা মুসলমান কামলার জন্য কলাইয়ের থালায় খাবার দিতেন কিন্তু আমার বন্ধুর জন্য এমন কিছু হয়্নি। আর কামলাদেরও সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে গল্প করতেন অনেক। ঐ ব্যপারও খারাপ আর দেশভাগে আগুন জ্বালাতে কাজে লেগেছিল হয়তো কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে (অদ্ভুত শোনালেও) বিদ্বেষের সাথে এর কোন যোগাযোগ ছিলোনা উভয় পক্ষেই।
    অন্ততঃ এইটুকু তো বলাই যায় মেজরিটি থাকার কারনেই হোক বা চৈতন্য নানক তাদেরকে নাদির শাহের বঁশধর বলে কেউ ভাবতো না।
  • lcm | 179.229.***.*** | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২৮369469
  • পশ্চিমবঙ্গে পাকিস্তান বিরোধিতা কম বা মুসলিম বিদ্বেষ কম - এরকম কিছু নয়। দাঙ্গায় রেকর্ড পরিমাণ লোক মারা গেছিল অবিভক্ত বঙ্গদেশে - দেশভাগের আগেই।
  • S | 202.156.***.*** | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৫369470
  • লসাগুদা কি ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডের কথা বলছেন। তাহলে আবার অনেক গুলো অপ্রিয় কথা উঠবে। আমি তাই কাটিয়ে দিতে চাইছি ঃ)
  • lcm | 202.3.***.*** | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৮369471
  • ঃ-), না বলতে চাইছি বাঙালি খুব একটা শান্তিপ্রিয় সম্প্রদায় নয়। আজও নয়, মানে, ভারতের অন্য প্রদেশের তুলনায়।
  • aranya | 172.118.***.*** | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:১৬369472
  • অপ্রিয় কথা উঠুক না, দেশভাগ নিয়ে যখন আলোচনা, ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-র কথা তো খুবই প্রাসঙ্গিক।
  • S | 202.156.***.*** | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:৩২369474
  • না না, আমি ওতে নেই।

    "বাঙালি খুব একটা শান্তিপ্রিয় সম্প্রদায় নয়"
    এটা মেনে নিচ্ছি। বাঙালির বোধয় মুখে মারিতং জগত ব্যাপারটা কম। কিন্তু সশস্ত্র আন্দোলনের দিকে একটা ঝোঁক আছে। ছিলো। স্বাধীনতার আগে থেকেই। পরে নকশাল আন্দোলনও আছে।

    কিন্তু বাঙালী খুব সাম্প্রদায়িক, সেইটা মানতে পারছিনা।
  • lcm | 109.***.*** | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:৪১369475
  • বাঙালি সাম্প্রদায়িক - খুব সাম্প্রদায়িক কিনা জানি না। শিক্ষিত বাঙালিদের মধ্যে ক্লোজেট কম্যুনালিজ্‌ম্‌ একটা ব্যাপার থাকে, তারা বাইরে খুব একটা দেখায় না, কিন্তু ছোটখাট ব্যাপারেও হিন্দু-মুসলিম নিয়ে খুব সেনসিটিভ্‌। এই জায়গাটায় নর্থের অন্য রাজ্যের সঙ্গে তফাৎ।
  • S | 184.45.***.*** | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:০১369476
  • এটা থাক।

    http://timesofindia.indiatimes.com/india/India-sees-rise-in-communal-violence-UP-leads-states/articleshow/51127336.cms

    Among the top states in terms of communal incidents were Uttar Pradesh (155), Karnataka (105), Maharashtra (105), Madhya Pradesh (92), Bihar (71), Rajasthan (65), and Gujarat (55).

    এর মধ্যে একমাত্র ইউপি ছাড়া আর কোনো রাজ্যে পবের থেকে বেশি মুসলমান থাকেনা।
  • lcm | 60.242.***.*** | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ২১:০৮369477
  • এস,
    অফ কোর্স - হিন্দু-মুসলিম কনফ্লিক্ট এর সংখ্যা ধরলে পাঞ্জাব-পশ্চিমবঙ্গে কম। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে, যেটি মুসলিম জনসংখ্যার(%) নিরিখে এখন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য হলেও।
  • h | 117.77.***.*** | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ২২:২৩369478
  • ইন্দো ত্রিদিব বাবু সুকান্ত বাবু দের ওরাল আর্কাইভ্স দেখতে পরিশ।
  • Indranil Ghosh Dastidar | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ২৩:২৮369479
  • এই লেখাটা নিজের ব্লগে নিয়ে যাচ্ছি।এক জায়গায় থাকবে। আলোচনা-গপ্পো সেখানেই চলুক।
  • গবু | 57.15.***.*** | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫৬369480
  • লিংকটা পেতে পারি কি?
  • I | 57.15.***.*** | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১০:৪০369481
  • এখানেই থাকবে।আমার খেরোর খাতায়।
  • সিকি | ০৬ জুলাই ২০১৮ ২২:০৬369483
  • এই লেখাটা আর এগোবে না, ইন্দোদাদা?
  • কল্লোল | ***:*** | ০৭ জুলাই ২০১৮ ১২:০৬369485
  • একটা কথা। হয়তো রাজনৈতিক অশুদ্ধ কথা, তবুও।
    বাঙ্গালী হিন্দু বা মুসলমানেদের মধ্যে খুব বেশী "সাম্প্রদায়ীকতা" ছিলো না। মিহির সেনগুপ্ত বা অতীন বন্দ্যো কি গৌরকিশোর পড়লে মনে হয় ৪৫-৪৬এ বাঙ্গালী মুসলমানেদের মধ্যে মুসলমানত্ব চাগিয়ে দেয় লীগ। কিন্তু খুনোখুনির জন্য বেশীটাই দায়ী বাংলায় থাকা বিহার ও উপ্রর মানুষ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন