এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ইতিহাস ও প্রযুক্তি- পলাশীর যুদ্ধ

    বিপ
    অন্যান্য | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ৮৭৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ | 81.244.***.*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১২:৪৭368926
  • স্কুল লেভেল থেকেই ইতিহাস ভাষ্যের ( ন্যারেটিভ) দখল নেওয়ার কাজটা সব পার্টিই করে। কারন ভবিষ্যতের ক্যাডার তৈরীর জন্য, ওটা প্রথমে দরকার। রাজনৈতিক পার্টির অন্ধ সাপোর্টার বেস তৈরী করার ওটাই প্রথম ধাপ। আর সেই কারনে পৃথিবীর সব দেশেই ইতিহাসের ভাষ্য ভীষন ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রানদিত। অর্থাৎ ইতিহাসের গল্পে হিরো-ভিলেন থাকে-এবং তাদের নির্মান করা হয় গল্পের মাধ্যমে । প্রয়োজন মাফিক। যদিও আমি যেটুকু ইতিহাস ঘাঁটি, তাতে এটাই আমার কাছে পরিস্কার হয়, ইতিহাসের আসল গল্পের হিরো কিন্ত কারিগড়রা। প্রযুক্তিবিদরা।

    এই লেখাটাই বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করব- যেখানে ইতিহাসের গল্পটা, রাজনৈতিক প্রয়োজনে অন্যভাবে আমাদের জানানো হয়েছে ছোটবেলা থেকে।

    ধরুন পলাশীর যুদ্ধ। মিরজাফর বিশ্বাসঘাতক, ক্লাইভ ভিলেন, সিরাজ ট্রাজিক হিরো। এটাই ভারতের ইতিহাসের মেইনস্ট্রিম ন্যারেটিভ। এবার ব্যপারটাকে একটু অন্যভাবে দেখি।

    ২৩শে জুন ১৭৫৭, রাত একটার সময়, ক্লাইভ, তার সেনাপতি মেজর কিলপ্যাট্রিক, মেজর কোটে এবং মেজর গ্রান্ট পলাশীর আম্রকুঞ্জে আশ্রয় নেন। সাথে মেরে কেটে ৩০০০ সেনা। কোন ঘোরসওয়ার ( ক্যাভেলারী) নেই। মোটে ৮ টা কামান, তার মধ্যে দুটো হাউতজার ( যা উচ্চ উচ্চতায় ছুড়ে অনেক দূরে গোলা ফেলা যায়)। কামানগুলোও ছোট ছোট-গোলার ওজন মোটে ছ পাউন্ড বা তিন কিলো। যেখানে নবাবের কামান ৫৩ টি-গোলার ওজন ১৮, ২৪ এবং ৩২ পাউন্ড। বিশাল বড় বড় কামান। প্রতিটা কামান টানতেই লাগত ত্রিশ থেকে চল্লিশটা মোষের গাড়ি।

    ২২ শে জুন থেকেই পলাশীর প্রান্তরে ক্যাম্প করে আছে নবাবী সেনা। তাদের যুদ্ধ করার ইচ্ছা বিশেষ নেই। কারন তাদের মাইনে হয় নি। ১৯ শে জুন মুর্শিদাবাদ থেকে অনেকেই আসতে চাই নি। শেষে প্রচুর বোনাস দিয়েই তাদের আনতে হয়। সিরাজের মিসম্যানেজমেন্ট আরো সুবিধা করে দেয় মিরজাফরের চক্রান্ত-কারন সেনারাই যখন যুদ্ধে ইচ্ছুক না- মিরজাফরের চক্রান্তের বিরুদ্ধে তার সেনারা দেশপ্রেমের কারনে বিদ্রোহ করবে, তার লেশমাত্র নেই।

    নবাবের বাহিনী বিশাল। মিরজাফরের কম্যান্ডেই আছে ১৪ হাজার ঘোড়াসওয়ার ৩৮ হাজার পদাদিক । মীর মদন মোহনলালের কমান্ডে আছে ৬ হাজার ঘোরসওয়ার, সাত হাজার পদাদিক। ৫৩ টি কামানের গোলন্দাজ বাহিনী আলাদা। এর সাথে ফরাসী গোলন্দাজ মসিয়ে ফ্রেজের আছে পঞ্চাশ জন গোলন্দাজ এবং ৬ টি কামান। মোদ্দা কথা মীরজাফরের সেনারা কিছু না করলেও মীর মদনের হাতে যে সেনা, ঘোড়া এবং কামান আছে-তাই দিয়েই জেতা উচিত।

    এদিকে ক্লাইভ আছেন দোটানায়। মীর জাফর কি করবেন বলা যাচ্ছে না। কোন ঘাটের জল খাচ্ছেন বা খাবেন কেউ জানে না। দুদিন আগে মীর জাফরের প্রাসাদ ঘিরে তাকে বন্দী করেন সিরাজ। কারন তার কাছে খবর ছিল, মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন। মীর জাফর কোরান স্পর্ষ করে প্রতিজ্ঞা করেছেন সিরাজের কাছে, বিশ্বাসঘাতকতা তিনি করবেন না। সেই খবর পৌছে গেছে ক্লাইভের কাছে। মীর জাফর যদি ক্লাইভের দিকে যুদ্ধ না করেন, শ্রেফ মীর মদনের ছ হাজার ঘোর সওয়ারই কচুকাটা করে দেবে তাদের।

    সকাল আটটায় যুদ্ধ শুরু হয়। ফরাসী গোলন্দাজরা এবং নবাবের গোলন্দাজরা আগুয়ান ক্লাইভ বাহিনীর দিকে গোলা ছুড়তে থাকে। আধ ঘন্টায় ক্লাইভের প্রায় পঞ্চাশ জন মারা যায়। বেগতিক বুঝে ক্লাইভ পিছিয়ে এসে আম বাগানে লুকালেন। এতে নবাবের গোলার থেকে বেঁচে গেল কোম্পানীর সেনারা। সিরাজ ইনফ্যান্ট্রি ( পদাদিক ) পাঠালেন হাজার দশেক। কিন্ত এবার ক্লাইভের গোলন্দাজরা এবং বন্দুকবাজরা গুলি গোলা চালিয়ে তিন ঘন্টা আটকে রাখল তাদের। নবাবের প্রায় শ দুয়েক পদাদিক ঘায়েল-কিন্ত বৃটিশ ক্যাম্পে কেউ ঢুকতে পারল না।

    মাত্র আটটা কামান দিয়ে কি করে এত বড় ইনফ্রান্ট্রি আটকানো সম্ভব-তার কারন ও উন্নত বৃটিশ প্রযুক্তি। কোম্পানীর সেনাদের কাছে ছিল ক্যানিস্টার শেল বা গ্রেপ শট। অর্থাৎ এই গোলা গুলির মধ্যে থাকে ছোট ছোট লোহার বল। যখন ফাটে -তখন এক সাথে ডজনে ডজনে গুলির মতন চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। এই ক্যানিস্টার শেলের জোরেই হুগলিতে নবাবের চল্লিশ হাজার সেনাকে আটকে দিয়েছিল মাত্র হাজার খানেক কোম্পানীর সিপাই আর দুটো কামান। যার জেরে সিরাজ দৌল্লা আলিনগরের সন্ধি করতে বাধ্য হোন।

    সকাল এগারোটার সময় পলাশীর যুদ্ধের আসল ঘটনা ঘটে। মুশল ধারে বৃষ্টি নামে। নবাবের কামান ঢাকার কোন ব্যবস্থা নেই। কোম্পানীর লোকেরা তখন ত্রিপলের ( ট্রিপলিন ) ব্যবহার জানে কারন তা বৃটেনেই সদ্য আবিস্কৃত। ট্রারপলিন কথাটা এসেছে তার কারন প্রথম ত্রিপল যখন আবিস্কার হয়, তখন কাপড়ের ওপরে টার লাগিতে তা তৈরী হত। তখনো প্লাস্টিক আবিস্কার হয় নি। টারই ছিল বৃষ্টিনিরোধক। বৃষ্টির সময় নবাবের সব গোলা যখন ভিজে অকেজো-কোম্পানীর গোলাগুলি বা কামানের কিছু হল না। তা ছিল ত্রিপল দিয়ে ঢাকা। মুশকিল হচ্ছে, কোম্পানীর সেনাদের কাছে যে ত্রিপল দিয়ে ঢাকার মতন প্রযুক্তি আছে -সেই খবরটাও পর্যন্ত পৌছায় নি নবাবের ক্যাম্পে। যার ফলে ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন মীরমদন ।

    এদিকে বৃষ্টি যখন মুশলধারে, ক্লাইভ তার জেনারেলদের ডাকলেন। জিজ্ঞেস করছেন এই বৃষ্টির মধ্যে পালাই না এই ভাবেই চলুক? কারন মিরজাফর তখন ও দাঁড়িয়ে। ক্লাইভের দিকে তার সাহায্য না আসলে কচুকাটা করবে নবাব বাহিনী। সবাই গঙ্গা দিয়ে পালানোর দিকেই রায় দিলেন। ক্লাইভের সাথে আছে ২০০ বড় নৌকা। কাজটা কঠিন না। মীরজাফর কথা না রাখলে, পালাতে হবে-সেটা জেনে, দুশো নৌকাকে খুব কাছেই বেঁধে রেখেছেন ক্লাইভ। মেজর প্যাট্রিক বেঁকে বসলেন। প্যাট্রিক বল্লেন, বৃষ্টিতে ওদের কামান অকেজো হবে। ফলে ওরা পালাবে। ক্লাইভ সহ সবার মনে ধরল যুক্তিটা। দেখাই যাক। যদি নবাবের কামান অকেজো হয়ে থাকে বৃষ্টিতে তাহলে জয় নিশ্চিত।

    বৃষ্টি থামে বেলা একটা নাগাদ। মীর মদন ভাবলেন এটাই সুযোগ ঘোড়া ছুটিয়ে কোম্পানীর সেনাদের কচুকাটা করার । কারন মীর মদন ভেবেছিলেন যেহেতু ক্লাইভের কামানগুলো নেতিয়ে গেছে জলে ভিজে, ক্যাভেলারি চার্জ আটকানোর ক্ষমতা নেই ক্লাইভের। একমাত্র ক্যানিস্টার চার্জের ভয়েই যুদ্ধের প্রথম তিন ঘন্টা কোন ক্যাভেলারি চার্জ করেন নি মীরমদন।
    মীর মদনের ভুল সিদ্ধান্তে মাত্র কয়েক মিনিটেই যুদ্ধের ভাগ্য গেল ঘুরে। মীর মদন প্রায় দুহাজার ঘোড়সওয়ার নিয়ে কোম্পানীর কামান গুলোর দিকে ছুটে গেলেন। কিন্ত উনি জানতেন না ওগুলো কাজ করছে। ফলে শীঘ্রই কামানের ক্যানিস্টার শটে মীরমদন সহ সমগ্র ঘোরসওয়ার বাহিনীই আহত হয়।
    মীর মদনকে আহত অবস্থায় দেখে সিরাজ মীর জাফরের কাছে টুপি খুলে অনুরোধ করলেন বৃটিশ দের আক্রমন করতে। মীরজাফর একদিকে সিরাজকে আসস্ত করলেন, অন্যদিকে ক্লাইভের কাছে খবর পাঠালেন সিরাজের দিক -যা ছিল রাইট ফ্ল্যাংক, আক্রমণ করতে।

    ততক্ষনে ক্লাইভ বুঝে গেছেন নবাব পক্ষের একটাও কামান কাজ করছে না। ফলে মীর জাফর কি করবে সেই আশায় বসে থেকে লাভ নেই। ক্লাইভের সেনারা মিরজাফরের সেনাদের ও আক্রমণ করে। এমন অবস্থায় বেলা দুটোর সময় সিরাজ দু হাজার ঘোরসওয়ার সহ পালিয়ে যান মুর্শিদাবাদে।

    এই সময় কিন্ত মীর জাফর সহ নবাবের সব সেনারাই যুদ্ধে নেমে গেছে। তারা গাদা বন্দুক হাতে আম গাছে আড়াল থেকে গুলি ছুঁড়েছে। কিন্ত তাই দিয়ে ক্যানিস্টার শেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতা সম্ভব না। একেতে যুদ্ধ করার তাগিদ এমনিতেই তাদের কম যেহেতু মাইনে নিয়ে অসন্তোষ আগে থেকে ছিলই। ওই সব দেশপ্রেম বলে তাদের কিছু ছিল না। তাদের কাছে নবাব ও বিদেশী, ক্লাইভ ও বিদেশী। ফলে নবাবের সেনারা আস্তে আস্তে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালিয়ে যায়। বেলা পাঁচটার মধ্যেই ক্লাইভের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

    রাতের বেলায় মীরজাফর চিঠি পাঠান ক্লাইভকে যে তিনি দেখা করতে চান। ২৩শে জুন সকালে ক্লাইভ মিরজাফরের সাথে দেখা করেন এবং নির্দেশ দেন মুর্শিদাবাদে দ্রুত ফিরে সিরাজকে হত্যা করতে, যাতে সিরাজ তার ধণরত্ন নিয়ে না পালাতে পারে।
    কিন্ত এরকম ইতিহাস লিখলে ভারতীয়দের মধ্যে দেশত্মবোধ জাগবে কি করে? ফলে ভারতের জাতিয়তাবাদের উত্থানের সময় মীরমদনের লড়াইকে দেখানো হল বীররসে
    নবীন চন্দ্র সেন লিখলেন - ( কবিতা-পলাশীর যুদ্ধ )
    "৯
    অকস্মাত্‍‌ একেবারে শতেক কামান
    করিল অনলবৃষ্টি
    ভীষণ সংহার দৃষ্টি।
    কত শ্বেত যোদ্ধা তাহে হল তিরোধান। "
    মুশকিল হচ্ছে, শত কামান না, বৃটিশদের ছিল মোটে আটটি কামান। খুব পরিস্কারভাবেই নবীন সেন, এমন ভাবে লিখেছেন যেন ক্লাইভের ছিল প্রচুর সেনা এবং কামান-তার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে দেশপ্রেমী নবাবের সৈন্যরা। না তেমন কিছু হয় নি। মুষ্টিমেয় কিছু কোম্পানী সৈন্যর সামনে, পালানোর প্রথম সুযোগেই নবাবের সেনারা পালিয়েছিল। এবং মিরজাফর যুদ্ধে নামলেও সিরাজ হারতেন ই। কারন সেই প্রযুক্তি। নবাবের সমর প্রযুক্তি ছিল নেহাতই আদ্যিকালের। বৃষ্টিতে কামান ঢাকার মতন নুন্যতম প্রযুক্তিও তাদের হাতে ছিল না।
    ইতিহাসের এই নব মুল্যায়ন এই জন্যে গুরুত্বপূর্ন, ভারতীয় সমাজে বর্ণবাদের জন্য কারিগড়দের সমাজে উচ্চস্থান দেওয়া হয় নি। যতসব আটভাট গুলমারা ধর্মীয় দর্শন যারা কপচাতে পারে, ভারতীয় সমাজে উচ্চস্থান তাদের। মুসলমানরা আসাতে ভারতের বর্ণবাদ ত কমেই নি, বরং মুসলমান শাসকরাও ভারতের বর্ণবাদ টেকাতেই সচেষ্ট ছিলেন। কারিগড়, কৃষক বা উৎপাদকশক্তির যারা ধারক ও বাহক- তাদেরকে পায়ের নীচে রেখে, গুলবাজ দার্শনিকদের মাথায় বসানো ভারতে ট্রাডিশনে পরিণত। পশ্চিম বঙ্গের বাম শাসনকাল ও একই দোষে দুষ্ট। অনুৎপাদক বাম বুদ্ধিজীবিদের উৎপাদক শ্রেনীর মাথায় বসিয়ে বাঙালী জাতির সর্বনাশ করা হয়েছে । এবং এই সব সর্বনাশের শুরু হয় সেই সব ন্যারেটিভ থেকে যেখানে ইতিহাসে বা মানব সভ্যতায় কারিগড়ি বিদ্যার গুরুত্ব অগ্রাহ্য করে কখনো বাম, কখনো ডান চশমায় ইতিহাসকে দেখানো হয়।
    পরে কিস্তিতে আরেকটা গল্প লিখছি।
  • modi | 218.67.***.*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৫:৫৮368934
  • https://fas.org/sgp/crs/misc/R44762.pdf

    আমেরিকার সাড়ে-পাঁচশো হাউস আর সেনেটের মেম্বারদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শিক্ষাপ্রাপ্ত দেখছি এই রকম

    3 physicians in the Senate, 11 physicians in the House, plus 4 dentists and 3
    veterinarians;

    three psychologists (all in the House), an optometrist (in the Senate), a
    pharmacist (in the House), and two nurses (in the House);

    one physicist, one microbiologist, and one chemist, all in the House;

    8 engineers (7 in the House and 1 in the Senate);

    six software company executives in the House and two in the Senate;

    একুনে ৪৫ জন (৮।৫% মত)।

    http://www.hoover.org/sites/default/files/uploads/documents/clm8_lc.pdf

    একটু পুরোনো ডাটা।

    Technocrats are defined as people who have all the following three traits:
    technical education, professional experience, and employment in official posts.12 Most
    technocrats majored in engineering, and some majored in the natural sciences. Chinese
    technocrats’ ascent to the national leadership can now be seen more clearly than ever by
    examining the composition of the current Politburo of the CCP and the current State
    Li, China Leadership Monitor, No.8
    5
    Council: all nine members of the Politburo Standing Committee and eight of the 10 State
    Council members are technocrats. An analysis of all 356 members of the current Central
    Committee, however, reveals that the proportion of technocrats has actually dropped
    from 52 percent on the 15th Central Committee to 46 percent on the 16th Central
    Committee.

    বিপের ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যাচ্ছে চীনেরা কেন ট্রাম্পের নাক মলে দিচ্ছে।
  • S | 184.45.***.*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৭:৫৩368935
  • টেকনিকাল এডুকেশন মানে শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শিক্ষাপ্রাপ্ত নয়। টেকনোক্র্যাট মানে যিনি কেরিয়ার পলিটিশিয়ান নন, কিন্তু তাঁর বিশেষ এক্সপার্টাইজের জন্য সরকারের কোনো মন্ত্রকে নিয়োগ করা হয়েছে। খুব ভালো উদাহরণঃ মনমোহন সিং।

    আম্রিগার সেনেট আর হাউস মিলে কজন লইয়ার, ইকনমিস্ট, আর পিএইচডি আছেন সেটা দেখাও জরুরি। এম্বিএ তো ছেড়েই দিলাম। আনলাইক ইন্ডিয়া, আম্রিগাতে ভালো স্টুডেন্টরা শুধু ইন্জিনিয়ারিঙ্গ বা ডাক্তার হওয়ার জন্য ছোটে না। প্রচুর ভালো ছেলেপিলে পলিটিকাল সায়েন্সও পড়ে - যার যাতে ইন্টারেস্ট আছে, সেইটাই পড়ে এবং জীবনে সফলও হয়।

    আর এই হিসাব করে আম্রিগা চীনের মধ্যে পার্থক্যটা বোঝা যাবে বলে মনে হয়্না। এমনকি এই ট্রাম্পের ক্যাবিনেটও ওয়াল স্ট্রীট দিয়ে ভরা।
  • modi | 138.52.***.*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৯:২৯368936
  • বিপই বলবেন উনি লইয়ার আর ইকনমিস্টদের উৎপাদকশক্তির ধারক ও বাহকদের মধ্যে ধরেছেন কিনা। আমাদের জ্যোতি স্যার আর মমতা দিদিমনি দুজনেই অবিশ্যি ল'ইয়ার।

    কুলোকে ফাইনান্সের লোকেদের উৎপাদনের জন্য ক্ষতিকর বলে ধরে। সে সব কথায় কান দেবেন না। ২০০৮ অনেক দিন পেরিয়ে গেছে।
  • bip | 81.244.***.*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:৫৩368937
  • প্রযুক্তি ও ইতিহাস - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত বিজয় - পর্ব দুই
    **************

    বাংলায় এখনো অনেক কমিনিউস্ট - যাদের কাছে স্টালিনের মতন কুখ্যাত খুনী পরম পূজনীয়। এদের স্টালিনের বিরুদ্ধে যতই বলুন, দেখবেন, ফাইনাল দাবী- হু হু বাবা, যাই বলনা কেন, স্টালিন না থাকলে হিটলারকে কে ঠেকাত ?

    এটাও ইতিহাসের চূড়ান্ত অজ্ঞতা ছাড়া কিছু না। হিটলার আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ান - পশ্চিম এবং পূর্ব দুটো ফ্রন্টেই হেরেছেন। সেটাও বাদ দিচ্ছি। আসল ইতিহাস হচ্ছে গ্রেট পার্জের আগে ( যে গ্রেট পার্জের মাধ্যমে স্টালিন কয়েক লাখ উচ্চপদস্থ রাশিয়ানকে হত্যা করেছিলেন প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর নামে ) সোভিয়েত ইউনিয়ান, জার্মানির থেকে ট্যাঙ্ক এবং ফাইটার প্লেন প্রযুক্তিতে এগিয়ে ছিল। কিন্ত স্টালিন রাশিয়ান বুদ্ধিজীবি গণহত্যা শুরু করলে, খুব স্বাভাবিক কারনেই সোভিয়েত ইউনিয়ান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানীর থেকে অনেকটাই পিছিয়ে যায় মিলিটারী প্রযুক্তিতে।

    এখানে একটা প্রশ্ন অনেকেই করেন না। ১৯৩৯ সালে হিটলার স্টালিনের সাথে ভাগ করে খেলেন, পোলান্ড। পয়লা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ , পোলান্ড আক্রমন করেন হিটলার। ১৮ ই সেপ্টেম্বর স্টালিন আক্রমন করলেন পোলান্ড। একটা স্বাধীন দেশকে টুকরো টুকরো করে হিঁচড়ে খাওয়ার জন্য চললো শতাব্দির দুই কুখ্যাত ফ্যাসিস্ট শক্তির আক্রমন। হিটলার দখল নিলেন পোলান্ডের পশ্চিম দিকের, স্টালিন পূর্বদিকের। দখলীকৃত পোলান্ডের জনগোষ্ঠি শতাব্দির দুই কুখ্যাত কসাইএর হাতে তখন। হিটলার এবং স্টালিন-দুই মহান ব্যক্তি (!) পোলান্ডের লোকজনকে ধরে নিয়ে গেল ক্রীতদাস বানিয়ে নিজেদের দেশে-বিনাপয়সায় খাটাবে বলে। যারা অনিচ্ছুক, তাদের ফেলা হল মেশিনগানের সামনে। পোলান্ডের জনগণের প্রতি যে যঘন্য আচরন এবং গণহত্যা হয়েছে-তাতে নৃশংসতার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন স্টালিন এবং হিটলার।

    প্রশ্ন এটাই- ১৯৪১ সালে জুন মাসে হিটলার যদি সোভিয়েত আক্রমনই করবেন-তাহলে ১৯৩৯ সালে সোভিয়েতের সাথে ভাগ করে পূর্ব ইউরোপ খাচ্ছিলেন কেন? ১৯৩৯-১৯৪১, স্টালিন এবং হিটলারের সম্পর্ক বেশ গলায় গলায়-দুজনেই ভাগ করে দখল করছেন ইউরোপের ছোট ছোট দেশগুলি। হিটলার একটা দেশ দখল করেন ত, স্টালিন অন্যদেশ। ভাব এমন এই দুই জনই ইউরোপ দখল করে খাবেন। যদি ভবিষ্যতে সোভিয়েত আক্রমনের পরিকল্পনাই থাকে, তাহলে ত স্টালিনের শক্তিবৃদ্ধিতে সহায়তা করার কোন কারন ছিল না। ১৯৩৯ সালের মলটভ, রিবেনট্রপ চুক্তির মুল বক্তব্যই ছিল -চল যাই দুজনে মিলে ইউরোপ ভাগ করে নিই।

    এর মূল কারন এই যে, স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে জার্মানী এবং সোভিয়েত ইউনিয়ান মুখোমুখী হয় ১৯৩৭ সালে। ওই যুদ্ধে সোভিয়েত বিমান বাহিনী জার্মান বিমান বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে। হিটলার বোঝেন, ইউরোপ দখল করতে গেলে সোভিয়েতের সাথে ভাগ করেই তা করতে হবে। এবং সেই মতন স্টালিন হিটলারের আগ্রাসণনের দোসর হতে রাজীও হলেন। তবে হিটলার তখনো যেটা জানেন না-স্টালিনের গ্রেট পার্জের ফলে সোভিয়েত বাহিনী ক্রমশঃ দুর্বল হয়েছে ১৯৩৪-১৯৪১। সেটা হিটলার দেখলেন যখন স্টালিন ফিনল্যান্ড আক্রমন করলেন, দখল করার জন্য ( 1939, 29 Nov) । ইতিহাসে এটি উইন্টার যুদ্ধ নামে খ্যাত।

    ফিনল্যান্ড একটা ছোট্ট দেশ। সোভিয়েত দখলদারদের ঠেকানোর জন্য তাদের কাছে আছে মোটে ৩২ টি ট্যাঙ্ক, ১১৭ টা প্লেন। যেখানে রেড আর্মি পাঠিয়েছিল বিশাল বাহিনী- ৩৯০০ টি ফাইটার প্লেন, ২৫০০ এর কাছকাছি ট্যাঙ্ক। প্রথমে মনে করা হয়েছিল মাত্র এক সপ্তাহেই সোভিয়েত ইউনিয়ান দখল করবে ফিনল্যান্ড। কিন্ত না। ফিনল্যান্ড, প্রায় ছমাস রুখে দিয়েছিল রেড আর্মিকে। এতেই সবাই পরিস্কার ভাবে বুঝে যায়, স্টালিন গ্রেট পার্জের নামে যে ৩০,০০০ আর্মি অফিসারদের খুন করেছে, তাতে রেড আর্মির অবস্থা খুবই খারাপ। এতটাই খারাপ যে ফিনল্যান্ডের মতন এক পুঁচকে আর্মিও তাদের নাস্তানাবুদ করে। হিটলার দেখলেন এবং বুঝলেন, স্টালিনের সাথে শান্তিচুক্তি করে ডাঁহা ভুল হয়েছে। জার্মান প্যান্থার বাহিনীর সামনে রেড আর্মি শ্রেফ উড়ে যাবে। সুতরাং সোভিয়েত ইউনিয়ান ও পুরো দখল করা যাক। কারন পশ্চিমদিক তখন সম্পূর্ন জার্মানির দখলে। পূর্বদিকটাই বাদ যায় কেন?

    সেই হিসাব মতন ১৯৪১ সালের ২২ শে জুন শুরু হল অপারেশন বার্বারোসা। হিটলার আক্রমন করলেন সোভিয়েত ইউনিয়ান। পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই বৃহত্তম যুদ্ধ। দুইদিক মিলিয়ে ছয় মিলিয়ান সৈন্য।

    যুদ্ধ বলা ভুল। প্রথম ছদিন কোন যুদ্ধই হয় নি। রাশিয়ানরা মার খেয়ে পালিয়েছে, নইলে বন্দী হয়েছে। প্রথম ছদিনেই সোভিয়েত ইউনিয়ানের ৬৫০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে আসে জার্মান বাহিনী। রাশিয়ানরা প্রথম বাধাদিতে সক্ষম হয়, ড্যান্যুব নদীর ধারে। এবং এটি কাজে আসে। কারন বাধা পেয়ে, হিটলার সিদ্ধান্ত নেন, মস্কো দখল করে হবে কি? না আছে তেল, না আছে খাবার। বরং দক্ষিনে পাঠিয়ে দিলেন সেনাদের। ইউক্রেনের খাবার এবং তেল যুদ্ধের জন্য জরুরী। মস্কো বাদ দিয়ে দখল কর ইউক্রেন।

    যাইহোক অক্টবর পর্যন্ত যুদ্ধ চলেছে এক তরফা। সব জায়গাতেই হারছিল রাশিয়ানরা। কোন বীরগাথা সম্ভব না। কারন রাশিয়ান ট্যাঙ্ক বা বিমান বাহিনী, জার্মানীর কাছে শিশুতুল্য। যুদ্ধের প্রথম তিন মাসেই প্রায় ৬০০ হাজার রেড আর্মি মারা যায়। সেখানে জার্মান বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা ছিল নগন্য। মস্কোর মাত্র কুড়ি মেইল দূরে ক্যাম্প করে বসে আছে জার্মান বাহিনী। মস্কোর পতনের ভয়ে সবাই পালিয়েছে আরো পূর্ব দিকে।

    এই অবস্থায় হঠাৎ করে আস্তে আস্তে যুদ্ধের মোড় ঘুরতে থাকে। এবং তার মূল কারন , সোভিয়েতের ইউনিয়ানের নতুন টি-৩৪ ট্যাঙ্ক।

    অপারেশন বারবারোসা শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই টি-৩৪ ট্যাঙ্ক রেড আর্মিতে ছিল। এবং টি-৩৪ ট্যাঙ্ক এবং এর কামান তখন জার্মান ট্যাঙ্কের থেকে উন্নত। কিন্ত জার্মান ট্যাঙ্ক ঘায়েল করা সত্ত্বেও, টি-৩৪ যুদ্ধের গতি ঘোরাতে পারছিল না। মূল কারন এর মেকানিকাল গলদ। ট্যাঙ্ক প্রায় রাস্তায় খারাপ হয়ে বসে যেত। ফলে অধিকাংশ টি-৩৪ ট্যাঙ্ক যুদ্ধে না- শ্রেফ মেকানিক্যাল ম্যালফাংফশনিং এ হারিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ান।

    এর ও কারন আছে। মিখাইল কোশেন নামে এক আর্মি ইঞ্জিনিয়ার ১৯৩৭ সালে স্টালিনকে নেক্সট জেনারেশন ট্যাঙ্ক টি-৩৪ বানানোর প্রস্তাব রাখেন। স্টালিন তাকে ফান্ডিং দিলেন। কমিনিউস্ট দেশে যেহেতু মার্কেট কম্পিটিশন নেই, প্রতিযোগিতার আবহ বজায় রাখার জন্য একই প্রজেক্ট তিন চারটে সরকারি কোম্পানীকে দেওয়া হত। টি-৩৪ এর পাশাপাশি আরো চারটি নতুন প্রজন্মের ট্যাঙ্কের গবেষনার ফান্ডিং স্টালিন দিয়েছিলেন। তবে কমিনিউস্ট দেশে যা হয়- মিখাইলের ভাগ্যে জুটল খুব কম ফান্ডিং। কারন কমিনিউস্ট নেতাদের তেল মারাতে উনি দক্ষ ছিলেন না। এমন কি ১৯৩৯ সালে একবার তার প্রজেক্ট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কোশেনের সাথে স্টালিনের সম্পর্ক ছিল বেশ ভাল। সেই যাত্রায় স্টালিনের সাথে দেখা করে, কোন রকমে টি-৩৪ এর প্রজেক্টটি বাঁচিয়ে রাখলেন তিনি।

    কিন্ত অপরেশন বার্বারোসাতে দেখা গেল একমাত্র টি-৩৪ ই প্রতিরোধে সক্ষম প্যান্থার বাহিনীর। এই ডিজাইন স্ল্যান্টেড আর্মার ভেদ করার ক্ষমতা ছিল না জার্মান আর্মির সেই সময় ( যদিও পড়ে টাইগার ট্যাঙ্ক এই ক্ষমতার অধিকারি হবে )। কিন্ত তাও সুবিধা করা যাচ্ছে না। যেখানে সেখানে মেকানিক্যাল ফেলিওরে বসে যাচ্ছিল টি-৩৪।

    এদিকে যুদ্ধের কারনে গোটা টি-৩৪ ট্যাঙ্ক ফ্যাক্টরি রাতারাতি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উড়াল পর্বতে। পর্বতের প্রবল শীতে না খেতে পেয়ে কাজ করেছেন টি-৩৪ এর ইঞ্জিনিয়াররা। অনেকে মারাও গেছেন অত্যাধিক কাজের চাপে, ম্যালনিউট্রিশনে। কারন যে করেই হৌক টি-৩৪ এর ডিজাইন ডিফেক্ট সারাতেই হবে। স্টালিনের চাপ প্রচন্ড। এমন অবস্থা ডিজাইন ঠিক হয়েছে কি না বোঝার উপায় নেই- নতুন ডিজাইন-কোন ইঞ্জিনিয়ারিং টেস্ট হয় নি। সরাসরি ফ্রন্টে টী-৩৪। সেখানেই ফিল্ড টেস্ট! যুদ্ধ চলছে, তার মধ্যেই একের পর এক নতুন ডিজাইনের টি-৩৪ নেমে যাচ্ছে।

    ১৯৪১ সালের অক্টবর মাসেই বোঝা যায়, আস্তে আস্তে টি-৩৪ আর মেকানিক্যাল ফেলিওরের জন্য বসে যাচ্ছে না। ঠিক এই সময় থেকেই মার দিকে শুরু করে রেড আর্মি। কারন রিলাইয়েবল টি-৩৪ নিয়ে এবার জার্মান বাহিনীর মোকাবিলা করা আস্তে আস্তে সহজ হচ্ছিল।

    সোভিয়েত বিজয়ের প্রধান এবং মুখ্য কারন ট-৩৪ ট্যাঙ্ক। তবে স্টালিনিস্ট রাশিয়া মিখাইল কোশেনকে পর্যাপ্ত ফান্ডিং দিলে, সোভিয়েত ইউনিয়ানে ঢুকতেই পারত না প্যান্থার বাহিনী। যাইহোক, উড়াল পর্বতের প্রবল ঠান্ডা অগ্রাহ্য করে টি-৩৪ এর ইঞ্জিনিয়াররা যে কাজ করে গেছেন, তার স্বীকৃতি তারা খুব বেশী পান নি।
  • সিকি | 158.168.***.*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৯:৩৫368938
  • বিপের এই যে বাংলার কমিউনিস্টদের নিয়ে এমন ক্রিস্টাল ক্লিয়ার অথচ সুগভীর ধারণা, শুধু এইটুকুনি উপলব্ধি করেই আমি দিশেহারা হয়ে যাচ্ছি, বাকিটা আর পড়েই উঠতে পারছি না। হায়, এই সুগভীর ধারণার কণামাত্রও যদি বাংলার বানান সম্বন্ধে থাকত ...
  • PP | 159.142.***.*** | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:০৩368939
  • সিকি দা, বিপ প্রযুক্তিবিদ ব্যাকরণ শিং নন।
  • Ishan | 180.202.***.*** | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫৫368940
  • বিপের এই লেখাটার ন্যারেটিভে খুব কিছু গোলমাল নাই। মিরজাফরের ব্যাপারটা বিশদে জানিনা। উপর উপর যা জানি, এইরকমই।
    রাশিয়ার ন্যারেটিভে কিছু জিনিস বাদ গেছে। যেটুকু আছে, সেটা মোটের উপর ঠিক। পার্জের ভয় এবং প্রথম কিছুদিনের প্রবল পরাজয়, সব আখ্যানেই আছে। ক্রুশ্চেভের জমানায় বহুলভাবে প্রচার করা হয়েছে, মানে গোপন করা হয়নি। ফলে গপ্পোটা হুবহু সত্যি।
    যা বাদ গেছে, সেগুলোও বহুল প্রচারিত। জার্মান ব্লিৎসক্রিগের মূল পদ্ধতি ছিল ফ্রন্টের অনেকজায়গায় একসঙ্গে শত্রুর লাইন ভেঙে এগিয়ে যাওয়া। তড়িৎগতিতে। জার্মান সৈন্য এগিয়ে যাবে, আর পিছনে পড়ে থাকবে হতোদ্যম শত্রুপক্ষ। সোভিয়েতে এই পদ্ধতি কাজে লাগেনি। বারবার ফ্রন্ট ভেঙেছে, আর বারবার অবরোধ ভেঙে সেনারা পিছিয়ে এসে আবার লাইন খাড়া করেছে। মস্কোর একশ ক্লোমিটারের মধ্যে যখন জার্মানরা, যখন মস্কো থেকে জীবিত সমস্ত কমিউনিস্টদের বিশেষ ব্যাটেলিয়ানকে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ফ্রন্টে পাঠানো হচ্ছে (ফ্রন্ট আবার ষাট-সত্তর মাইল দূরে), তখনও যে স্তালিন খোলা আকাশের নিচে সাতই নভেম্বর ভাষণ দিচ্ছেন, সেটা স্রেফ নতুন সৈন্যদের উপর ভরসায় না। অবরোধ ভেঙে বেরিয়ে আসা পুরোনো সেনারাও ফিরে এসেছে, নতুন করে প্রতিরোধ তৈরি করেছে। সঙ্গে ছিল পূর্ব ফ্রন্ট থেকে নিয়ে আসা নতুন ডিভিশনগুলো।

    এই ন্যারেটিভের পুরোটাই প্রযুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। মস্কোর উপকন্ঠ বা স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধকে যায়না।
  • lcm | 179.229.***.*** | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:১৯368941
  • বিপ ভালো লিখেছে। কিন্তু যে কনক্লুশন করেছে, সেটা পার্শিয়ালি কারেক্ট মনে হয়েছে আমার।

    যেমন, পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফর থাকলে বেলা এগারোটার আগেই ক্লাইভ দলবল নিয়ে নৌকো ধরে পালাতো। কারণ জাস্ট ঐ নাম্বার - বিপ সংখ্যা দিয়ে দিয়েছে, ক্যানিস্টার শেল ফেল দিয়ে কিস্যু হত না -- ৩ হাজার ভার্সেস প্রায় ৪০ হাজার, ৮ টা কামান ভার্সেস ৫৩... সুতরাং, সকালের যুদ্ধটাতে (বৃষ্টির আগে) ডেফিনিটলি মীরজাফর বিগ ফ্যাক্টর।

    আর, বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েতের কাছে জার্মানির পরাজয় গত শতাব্দীর এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। এর বহু বিশ্লেষণ হয়েছে, বিবরণও আছে। অনেক কারণগুলির মধ্যে একটি হল সোভিয়েত T-34 ট্যাংক। অন্যতম কারণ হিসেবে এটিকে ব্যাখা করা হয় না - জেনারেলি যেগুলি উঠে আসে - প্রতিকূল আবহাওয়া, ক্লান্ত সৈন্যের দল (তাজা সৈন্য পাঠিয়ে ক্লান্তদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নাই) এবং রাশিয়ানদের অধ্যবসায় (হার-না-মানা মানসিকতা)।
  • PT | 213.***.*** | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১০:১২368927
  • ১৯৩৭ সালে "মার্কেট কম্পিটিশন"?
    আর কোন কোন দেশে ব্যব্স্থাটি ব্যবহৃত হত ঐ সময়কালে? ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী আমার ও বিপর ঠাকুর্দাদা ও তাঁদের বাবাদের আমলে কিরকমের কম্পিটিশনের ব্যবস্থা রেখেছিল?

    বিপর প্রগলভতা পড়ে অনেকদিন আগে আনন্দমেলায় প্রকাশিত একটা লেখার কথা স্মরণে এল।
    সেই লেখকের বক্তব্য ছিল যে জার্মান সেনাদের কোটের বোতাম নাকি টিনের তৈরি হত। রাশিয়ার ঠন্ডায় সেই বোতাম নাকি মুচমুচে হয়ে ভেঙ্গে যায়। সে কারণে জার্মান সৈনিকরা কোট দিয়ে নিজেদের যথেষ্ট ভলভাবে ঢেকে রাখতে না পারার জন্যে ঠন্ডায় পট পট করে মরে যায়!!!
    (স্মৃতি কিছুটা মশলা ঢেলেছে কিন্তু আদতে গপ্পটা ঐ টিনের বোতাম কেন্দ্রিকই ছিল!!)

    কোন এক ডিসেম্বরের ঠান্ডায় লেনিনগ্রাদের (এখন সেন্ট পিটার্সবার্গ) ৯০০ দিনের অবরোধের এলাকাটিতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। স্থানীয় যাদুঘরে সেই সময়কার রুশ যোদ্ধাদের পোশাকও রাখা আছে। ঐ অবরোধ শুরু হয় ৮-ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ কিনা শীতের শুরুতেই। তাই কোন বাঙালী, রুশ জার্মান যুদ্ধ নিয়ে প্রগলভতা করার আগে একবার দয়া করে ঐ ধরণের পোশাক পরে ঘন্টাখানেক (৯ দিনের দরকার নেই), ৯০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকবেন। তরপরে সিদ্ধান্ত নেবেন যে শুধু ট্যাঙ্ক দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় কিনা!!
  • sm | 52.***.*** | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১১:১৩368928
  • আমার মনে হয় হিটলার জাস্ট গোয়ার্তুমি করেছে।অতোবড়ো দেশ কি মার্চ করতে করতে জেতা যায়?
    প্রথমেই স্ট্যালিনের সেনার নায়কদের পয়সা দিয়ে কব্জা করতে হয়। তার পর কিছুটা যুদ্ধ করে অপর পক্ষের মনোবল ভেঙে দিতে হয়।
    তার পর পোলাও মাংস খেতে খেতে এগুতে হয়।
  • lcm | 109.***.*** | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১১:৩৮368929
  • রাশিয়ান লেখক ভিক্টর সুভোরভ-এর বিখ্যাত বই 'আইসব্রেকার', তাতে বলছেন - -

    স্তালিন ছিলেন ডিভাইড-এন্ড-রুল এর একজন ভীষন ভালো প্রবর্তক। এই জিনিস প্রয়োগ করে সোভিয়েত কমুনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সাত জন প্রতিষ্ঠাতার ৫ জন (লেনিন বাদে) কে একে একে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন।

    স্তালিন-এর স্ট্র্যাটেজি ছিল সেরকম ভাবে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে লড়াই বাধানো, যাতে করে জার্মানি-ইংল্যান্ড-ফ্রান্স-ইতালি পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হতে দুর্বল হয়ে যায়, আর সেই সুযোগে স্তালিন ঢুকবেন ইউরোপে। এই জন্যে তিনি হিটলার-কে প্রথমে অ্যালাউ করেন পোল্যান্ড আক্রমণ করার জন্য। এতে করে ইংল্যান্ড-জার্মানি একটা লড়াই বাঁধবে।

    এবং যে মুহুর্তে হিটলার বুঝে যান যে তিনি আসলে স্তালিনের দাবার বোড়ে, তখনই রাশিয়া আক্রমনের প্ল্যান করেন হিটলার। পশ্চিম ইউরোপ সাম্রাজ্য সুরক্ষিত - সেটি দখলে চাই - সেই সুরক্ষার বরফের চাঁই ভাঙ্গার জন্য স্তালিন ব্যবহার করেন হিটলার-কে আইসব্রেকার হিসেবে -

    -- এই হল সুভোরভ সাহেবের বই-এর বক্তব্য।
  • de | 69.185.***.*** | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৬:৪১368930
  • কারিগর, কারিগরী -
  • anag | 208.182.***.*** | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১২:১৫368931
  • ডিডিদা পুনে গেছেন - তাই বিপ-এর এই সন্দর্ভ সময় মত দেখে উঠতে পারেন নি মনে হয়। বিপ-এর আত্মবিশ্বাস খানিকটা নমো-র মত (যা বলি তাই ঠিক গোছের) - কিন্তু সে নিয়ে কথা না বলাই ভালো।

    শুধুমাত্র ত্রিপল, ক্যানিস্টার ইত্যাদি পলাশিতে সিরাজের পতনের কারণ হলে এতো গুলো পি এইচ ডি, এতো গুলো বই কেন যে লোকে লিখে ফেলল?

    বিপ, সুশীল চৌধুরী, কীর্তিনারায়ণ চৌধুরী - এদের বই গুলো একটু চেখে দেখবেন। দেজ-এর দুটো বই আছে - নাম মনে পড়ছে না এখন।

    বাঙ্গালিরা একটু পাকা এবঙ্গ ইতিহাসবিমুখ - সেজন্য এরকমই লেখা আশা করা যায়।
  • Atoz | 161.14.***.*** | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ২৩:০০368932
  • মাথায় ত্রিপল ঢাকা দিয়ে ক্যানেস্তারা বাজাতে বাজাতে----
    ঃ-)
  • চাঁদ মুহম্মদ | 52.***.*** | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৯:২৪368933
  • আপনারাতো কেউ সময় করে লিখবেননা, বিপ না হলে এই খরার বাজারে ঘোর দুর্দিন। কারু কথা গায়ে না মেখে বিপ কল্পনাপ্রবণ লেখা জারি রাখুন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন