এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সেখ সাহেবুল হক | 212.142.***.*** | ১৫ আগস্ট ২০১৭ ১১:১০368322
  • অতি দেশপ্রেম - একটি ব্যবসায়ী পন্থা
    -----------------------------------------------------------
    দেশকে সারাবছর লুটে খাওয়া কোম্পানিগুলো স্বাধীনতা দিবসে খবরের কাগজে বড়সড় বিজ্ঞাপন দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েই দেশহিতৈষী প্রমাণ করে ফেলতে পারেন। হ্যাঁ, এদেশে দেশপ্রেম এমনই সুলভ।

    ধর্ষক, খুনি, মুনাফাখোর নেতারা বিশেষ দিনে পতাকা তুলেই খুব সহজেই ভগৎ সিংদের উত্তরসূরি হয়ে উঠতে পারেন। তাঁরাও নেতা ছিলেন, এঁরাও নেতা!
    অথচ সাধারণ নাগরিকদের সেই সুযোগ নেই, তাই পৃথকভাবে দেশপ্রেমের প্রমান দিতে হয়।

    ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে, ভেজাল সামগ্রীর উৎপাদন করে, গুন্ডাগিরি করে, জালিয়াতি করে শুধুমাত্র ‘ভারত মাতা কি’ অথবা ‘বন্দে মাতরম’ বলেই নিজের ভাবমূর্তি ভালো করে নেওয়ার সুযোগ বোধহয় বিশ্বের একটিমাত্র দেশেই আছে।

    স্বদেশী যুগের কথা তুলে বিদেশী পণ্য বর্জনের কথা বলে ব্যবসা ফাঁদা দাড়িওয়ালা বাবা। নিজেস্ব কোম্পানি খোলার পরেই কেন দেশাত্মবোধক কথাবার্তা বলতে লাগলেন?
    মানে এর আগে এইভাবে বিদেশী পণ্য বর্জনের উপর গো সন্তানসুলভ দাবী ওঠেনি কেন।
    স্বদেশী যুগে যারা বিদেশী গুপ্তচর ছিলেন, তাঁদের উত্তরসুরিরাই দেশভক্তি শেখাচ্ছেন।

    কোনও নেতা সারাবছর ফেসবুকে বিদেশী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করে তুলছেন। লাইভ ভিডিও করছেন। অথচ ফেসবুকের উৎপত্তিস্থলটাও জানেন না। তাঁর মেয়ে বিদেশের নামি পারফিউম মাখেন, কেএফসিতে খেয়ে ফটো আপলোড করেন। এই হলো স্বদেশভক্তি। যে রাষ্ট্রনেতা বছরের অধিকাংশ সময় বিদেশে কাটান, তিনিও গান্ধীজীর নকল করে চরকা কেটে দেশীয় পণ্যের প্রচার করেন!

    দেশপ্রেমের নাটক করে এদেশে আপনি ইস্যু ঘুরিয়ে দিতে পারেন, অপরাধ চেপে দিতে পারেন। ‘দেশের জন্যই এই পদক্ষেপ’ অজুহাত দিয়ে জনগণকে নাজেহাল করে বিদেশ ঘুরে বেড়াতে পারেন, রামমন্দিরের স্বপ্ন দেখিয়ে সরকার গড়তে পারেন, ধর্মের দোহাই দিয়ে পিটিয়ে মারতে পারেন। মোদ্দা কথা ক্রাইম চাপা দিতে, মুনাফাখোর হয়েও দেশভক্ত প্রমাণ করতে, শুধু ‘বন্দে মাতরম’ বা ‘জয় হিন্দ’ বললেই চলে।

    ইদানীং ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিটিকেও দেশপ্রেমের অঙ্গ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। অথচ কোনও মুসলমান ‘আল্লা হু আকবর’ ধ্বনি তুললে সেটি পাকিস্তানকে সমর্থন বলে ধরে নেওয়ার পাঠ মানুষের মনে মনে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে।

    ভারতের নাগরিক নন, অথচ ‘ভারত মাতা কি’ বলে বা সেনাবাহিনীর প্রতি মেকি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সিনেমার প্রোমোশন করে, ব্যবসা করছেন যে অভিনেতা। তিনি বড় অভিনেতা হতে পারেন, কিন্তু দেশপ্রেমিক নন।

    কজন নেতার ছেলে আর্মিতে আছেন, পরিসংখ্যান ঘাঁটলেই সত্যিটা সামনে আসবে। দেশপ্রেমী নেতা নিজের কালো টাকার কতটুকু সেনাবাহিনীতে দিয়েছেন!
    উল্টেদিকে সেনাবাহিনীর কফিনের টাকাতেও দুর্নীতি হয়।
    সীমান্তে সেনা মরলে গরিব বাড়ির ছেলেরাই লাশ হয়ে ফেরেন। তখনই দেশাত্মবোধের জিগির তোলা নেতাদের কলার ধরে প্রশ্ন করা যায়, সেনাদের নিয়ে রাজনীতি করা নেতা বা অভিনেতাদের কেউ কোনওদিন সীমান্তে মরে ফেরেন না!
    কেন সিয়াচেনের ঠান্ডায় কোনও নেতার ছেলে কেঁপে মরেন না!
    না, এসব প্রশ্ন তোলার মতো সততা নেই। কারন কেউ হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছেন, তো কেউ সংখ্যালঘু রাজনীতির ফায়দা তুলতে ব্যস্ত।

    অথচ আমরা যারা দেশকে সত্যিই ভালোবাসি, তাঁরা প্রতারিত হই। দেশমাতৃকার ধর্ষকদের মুখে যখন ‘ভারত মাতা কি’ শব্দটা শুনি। তখন সেটা নিজের দেশমাতৃকাকে নগ্ন গালাগালির মতো শোনায়।

    স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যোগ্য শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেই বলা যায়, আজকাল ১৫ই আগষ্ট পালন আসলে দেশের গোল্লায় যাওয়ার বার্ষিক উৎযাপন। ব্যাপারটায় নেতাজী, ক্ষুদিরাম বসুদের জড়িয়ে দেওয়া হয় গ্যারেন্টার হিসেবে। প্রকৃত শ্রদ্ধা কই! সবই ব্যবসার অঙ্গ। আর নিজেদের সফেদ পাঞ্জাবী পরে রাজনৈতিক ইমেজ সফেদ করার দিন।

    দেশে দারিদ্র চিরকাল ছিলো, থাকবে। কিন্তু যারা সারাবছর পাবলিকের মৌলিক অধিকারের পায়ুমৈথুন করে ঢিলে করে দেন, তাঁরাই ধুতি-কুর্তা সামলে জাতীয় পতাকা তোলেন। দেশাত্মবোধক লেকচার মারেন, নিজেদের প্রকৃত দেশপ্রেমী বলেন, অন্যের দেশপ্রেমের প্রমাণ চান। দিনের শেষে পরিত্যক্ত কাগজের জাতীয় পতাকা গুলো রাস্তায় গড়াগড়ি যায়, আমাদের উন্নত দেশ দেখার স্বপ্নের মতো।

    এদেশে প্রকৃত মনীষীরা জন্মাতে ভুলে গেছেন। ভোগী-দিদি-দাদারা মনীষী হয়ে উঠছেন। বিকিয়ে যাচ্ছে দেশপ্রেম, মৌলিক অধিকার।

    দেশপ্রেম আসলে গোপনাঙ্গের মতো। সঠিক জায়গায় প্রয়োগ করতে হয়, রাস্তাঘাটে দেখিয়ে বেড়ানোর জিনিস নয়। লোকদেখানো দেশপ্রেমের রাজনীতির ফাঁস থেকে স্বাধীন হয়ে উঠতে হবে।

    #হককথা
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন