এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ক্যালাইডোস্কোপ

    R
    অন্যান্য | ১০ জুলাই ২০১৭ | ৭৮৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • R | 113.216.***.*** | ১০ জুলাই ২০১৭ ১৩:০১367991

  • আমার কোপাই

    তিরতির করে বয়ে চলে, গরম দুপুরে, আমার কোপাই। বালি নেই, জমেছে পাঁক, দুই তীরের বুকে। স্নান করেনা দুরন্ত কিশোর, নেই দিগন্তে বহুবিস্তৃত ভুবনডাঙ্গার মাঠ। ছোট মাছ আছে কি? ধরে না তো কেউ। জানা নেই।

    দুইদিকে গড়ে ওঠে রাশি রাশি বাক্স বাড়ি। তোমার বুক বেঁধেছে সেতুতে। ছুটে যায় মোটরগাড়ির চাকা। অফিসের জানলা দিয়ে, দেখে যাই তোমার মন্থরগমন।

    ধীরে ধীরে বয়ে যাও। হয়তো কোনোদিন দেখেছিলে তুমি, তোমার কোল দিয়ে চলে যাওয়া পাল তোলা নৌকাতে, লাল চেলি, মুখ ঢাকা বউ। তার দুচোখের জল, মিশেছিল তোমার আদরে। হয়তো বা, তারই চিতাকাঠ বুজিয়েছ তুমি, তোমারই জলেতে। ছুঁয়ে গেছ কবরের মাটি।

    সেই দিন গেছে। আজ শুধু বয়ে নিয়ে চলা শহরের মল মূত্র, দূষণের দায়ভার। আদিগঙ্গা নাম মুছে গেছে। তিরতির ঘোলা জল, বুক চাপা কথা নিয়ে, বয়ে চলো আমার কোপাই।
  • R | 113.216.***.*** | ১০ জুলাই ২০১৭ ১৩:০২367992

  • দু'জনে দেখা হল

    ব্যস্ত মফস্বল। পড়ে আসা বিকেলের কনে দেখা আলোতে আবীর রাঙা চারদিক। এমন আলোতে সময় ধরে হেঁটে যাওয়া গেছে বহুবার। সে দিন গেছে ? চোখের জলে?

    সর্দিবসা মাইকের ঘড়ঘড় আওয়াজে জানান দিয়ে ব্যস্ত সরীসৃপ মানুষ উগরিয়ে দেয়। ছোট্ট মফস্বলের ব্যস্ত স্টেশন ব্যস্ততর হয়ে উঠে। ফলওয়ালার দোকানে ভিড় উপচে ওঠে। ছোট ছেলেটার হাতের গ্যাস বেলুন হাত ফসকে আকাশে ভেসে ভেসে যায়। লাল বেলুনে গোধূলি লাগে। অনিমিখ মুহূর্তটুকু ধরে রাখার জন্য বাতাস থেমে আসে। কোথাও কে মনে মনে বলে ওঠে, "জয়মনি স্থির হও।"

    সেলসে চাকরি করা মাঝবয়সী, ব্যাগ সামলাতে সামলাতে ওভারব্রিজের সিঁড়িতে পা দেয়। মাথা নীচু, এবারও টার্গেট হল না। পিছনের ভিড় তাকে সিঁড়ির পরে সিঁড়ি তুলে নিয়ে যায়। নিজেকে ভিড়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে, সে ব্যস্ত হয়ে ওঠে, ব্যাগে ক্যাশমেমোর বান্ডিল গুছাতে। সামনের মেয়েটির মুখের বাঁদিকে তখন সিঁদুরের আলো। তারও বয়স যে পশ্চিমে ঢলেছে।
    ধাক্কা থেকে বাঁচতে ছেলেটা চোখ তুলে দেখে। আবার এক মুহূর্ত থামে সময়। ছেলেটা ভাবে কি বলবে, এতদিন পরে। 'কেমন আছো? ভালো তো?'

    মনের কথা মনে থাকে। মেয়েটি বুকে ব্যাগ আঁকড়ে এগিয়ে যায়, ছেলেটিকে আবার ঠেলে দেয় পিছনের ভিড়। আবার ক্যাশমেমোর বান্ডিলে ফিরে যেতে যেতে, ছেলেটা ভাবে, 'ইশ'।

    কাছের ট্রাফিক সিগন্যালে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় গেয়ে ওঠেন,

    "আর কি হবে না দেখা, জগতে দোঁহে একা,
    চিরদিন ছাড়াছাড়ি, যমুনাতীরে।"
  • R | 113.216.***.*** | ১০ জুলাই ২০১৭ ১৩:০৩367993


  • কলকাতার বাঁশিওলা

    বেজায় গরম পড়েছে। নিউটাউনের রাস্তাতে, গাড়ির উইন্ডশিল্ড দিয়ে দূরে তাকালে, মনে হচ্ছে, জল চকচক করছে। আমার ছেলে বলল, 'বাবা, দেখো জল।' আমি বললাম, - 'দূর বোকা, ওটাকে মরিচীকা বলে।
    '
    ইকো পার্কের ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছি বেশ কিছুক্ষণ, হঠাৎ ছেলেটা আবার চেঁচাল, 'বাবা, দেখো পুলিশটা নাচছে।
    '
    তাকিয়ে দেখি, অশোক গুপ্ত রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে নাচছেন। প্রবল গরমে, দরদর করে ঘামতে ঘামতে, হাসি হাসি মুখে, অশোক গুপ্ত নেচে যাচ্ছেন। ঘামের ফোঁটারা, তার পায়ের নিচে তৈরি করেছে জলাশয়, আকাশ ব্যস্ত হয়ে মেঘ পাঠাচ্ছে, তাঁর মাথায় ছায়া দিতে। কলকাতার বাঁশিওলা তিনি, আমার শিশুটির মন চুরি করে নিলেন এক নিমেষে।

    বাবা ও ছেলে, দুজনেই মুখে অনাবিল আনন্দ মেখে বসে থাকলাম। সিগন্যাল লাল থেকে সবুজ হল, চাকা গড়াল, গাড়ি এগোল।
    একটু এগিয়ে ছেলেটা আবার জিজ্ঞাসা করলো, 'বাবা, ওটাও কি মরীচিকা ছিল?'
  • R | 113.216.***.*** | ১০ জুলাই ২০১৭ ১৩:০৪367994


  • কথা-উপকথা

    এক যে ছিল রাজা।

    রাজার গল্প না। ভূতের গল্প।

    আরে শোন না, এই গল্পটা আসলে ভূতের গল্প।

    খুব ভয়ের?

    ভীষণ। সাংঘাতিক ভয়ের।

    উমমমম।।।।

    এক যে ছিল রাজা। রাজার হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া।

    হাতিশাল মানে?

    হাতিশাল হল, যেখানে হাতি থাকে। একটা ভালো বাংলা আছে, - পিলখানা।

    কিলখানা?

    আরে না না, পিলখানা। আর ঘোড়াশাল মানে যেখানে ঘোড়া থাকে। আস্তাবল। ইংরেজিতে স্টেবল বলে।

    উমমম।।।।
    যাই হোক, রাজার তো হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া। সাত রানী, আট ছেলে মেয়ে, প্রচুর টাকা পয়সা। কিন্তু রাজার খুব দুঃখ।

    কেন?

    রাজাকে রাজ্যের লোক মানেই না। তারা বলে, ধুর, এ আবার রাজা নাকি? রাজা ছিল এর বাবা দুর্লভ বিজয় সিংহ, ঠাকুর্দা ত্রিবিক্রম বিজয় সিংহ। দাপটে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত। আর এই রাজাটা কেমন মিনমিনে, গায়ে নেই জোর। যুদ্ধেও যায় না।

    রোগা রাজা? তোমার মতো?

    অ্যা, হুম। না মানে, ভালো রাজা। মারামারি করে না। রেগে যায় না।



    তো, একদিন রাজার সভাতে বেজায় গোলমাল হচ্ছে। রাজামশাই দু তিন বার আস্তে আস্তে বলেছে- ' চুপ, চুপ, আস্তে আস্তে।' কেউ শোনেই না। শেষে রেগেমেগে যেই বলেছেন, 'এবারে কিন্তু কথা বললেই গর্দান নেব,' অমনি সভা শেষের ঘন্টা টং টং করে বেজে উঠেছে। সবাই হ্যা হ্যা করে হাসতে হাসতে বাড়ি চলে গেছে। রাজা মশাইও বেজার মুখে রাজভোগ খেতে চলে গেলেন। রাজভোগটা নিমপাতার মতো তিঁতো লাগছিল।

    আমিও রাজভোগ খাবো। রাজভোগে কি কি থাকে? কোকাকোলা থাকে? আর পিজ্জা? কে এফ সি?

    না। এই পায়েস, পোলাও, মাংস, মিষ্টি এই সব।

    উমমম।।।।

    যাই হোক, সারা রাত রাজমশাইয়ের ভালো ঘুম হয় নি। একে তো কেউ মানে না, তার উপরে কাল রাতে মশারিতে দুটো মশা ঢুকেছিল। পরদিন একটু সকাল সকালই রাজ দরবারে চলে গেছেন।

    তারপরে?

    গিয়ে দেখেন মদ্র দেশের দূত এসেছেন।

    দূত মানে?

    দূত মানে মেসেঞ্জার।

    ফেসবুকের মতো?

    আরে না না, তখন তো টেলিফোন, হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক কিছু ছিল না, লোকে গিয়ে গিয়ে খবর দিত।

    গাড়িতে করে?

    না, হেঁটে যেত, ঘোড়াতে চড়ে যেত। ঘোড়ার গাড়িও ছিল।

    উমমম।।।।

    তো মদ্র দেশের দূত এসেছে। সেখানকার রাজকুমারী বৈজয়ন্তী মালার জন্মদিনের নেমন্তন্ন করতে। বিশাল চেহারা, কালো, মোটা, ইয়াব্বড় গোঁফ। লাল লাল চোখ। রাজামশাই তাকে পাশে বসিয়ে খোশগল্প করছেন।

    তারপরে?

    এবারে তো একটা দুটো করে, লোক আসছে। মন্ত্রী, সেনাপতি, কোটাল, আমাত্য। তারা ঢুকছে আর লোকটাকে দেখে চমকে চমকে উঠছে।

    কেন?

    আরে ভাবছে, কাল রাজা মশাই গর্দান নেবেন বলেছিলেন, এ নিশ্চই নতুন জল্লাদ। না হয়ে যায় না। যা চেহারা। সেদিন সভা সব চুপ চাপ, কারো মুখে আর টুঁ শব্দ নেই। সবাই ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক দেখে, আর দরদর করে ঘামতে থাকে।

    হি হি।

    এদিকে রাজামশাই তো সবই বুঝেছেন। পরদিন যখন দূত মশাই দেশে ফিরে গেছেন, সভায় এসেই রাজা মশাই বলে দিয়েছেন, আর কেউ কোনোদিন রাজ সভায় কথা বললেই আবার জল্লাদ ডেকে আনবো। এবারে একদম গর্দান। ব্যস, তারপর থেকে সব ঝামেলা শেষ। দেশ জুড়ে রাজা মশাইয়ের নাম ধন্য ধন্য পড়ে গেল। লোকে বলল, হ্যাঁ, রাজা বটে একখানা। বাপ ঠাকুরদার উপর দিয়ে যায়। রাজা মশাই এখন রোজ মিচকি মিচকি হাসতে হাসতে রাজভোগটা খায়।

    শেষ?

    হুম।

    ভূতটা কোথায়? অ্যা অ্যা অ্যা ।।।।।। শিগগির ভূতের গল্প বলো।
  • R | 113.216.***.*** | ১২ জুলাই ২০১৭ ১৩:৩৮367995


  • বৈদ্য-বাটীর কথা

    মুজতবা আলীর লেখাতে আছে, কোন এক আপিসের বড় সাহেব ছিলেন বৈদ্য। এবং বৈদ্যদের বৈধ নিয়ম মতো, চাকরি দেওয়ার সময় দেখতেন, ক্যান্ডিডেট লিস্টে কেউ বৈদ্য আছে কি না। তা একবার বড় সাহেব বড়ই বিপাকে পড়েছেন। আর্দালি জানিয়েছে, তালিকাতে বৈদ্য সেবারে কেউ নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করে দেখা গেল, বৈদ্যনাথ বলে একজন আছে। বড় সাহেব কপালের ঘাম মুছে বললেন, তবে তাকেই ডাক দেখি। সেবার চাকরিটা তারই হল।
    বদ্যিদের বদ্যি প্রীতির কথা ভুবন বিদিত। আমার মনে হয়, যদি বিদেশ বিভূঁইয়ে দুই বদ্যির দেখা হয়, তবে নাম শুনে, বিস্ময় সূচক 'আপনি বাঙালি' বলার আগে তারা বলবে, 'ও দাদা, বদ্যি। আমিও তো বদ্যি।' আর দুজনের বংশলতিকা নিয়ে রিসার্চ করে নিশ্চই দেখা যাবে একজনের ছোটমাসীর নন্দাইয়ের ভায়রার ভাগ্নীজামাই অন্যের মামাতো বোনের মাসতুতো দিদির মেয়ের বর। তারপরেই সৃষ্টি হবে এক যুগান্তকারী বন্ধনের অপূর্ব রূপকথা।
    অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বদ্যিদের এই জগৎ বন্দিত, কিংবদন্তি সমান স্বজাতিপ্রীতি আজ সংকটের মুখে। ভাবা যায়, আমি যখন সিসমিক স্কেলে ৮ এর সমান হৃদস্পন্দন নিয়ে, আমার সাথে আমার তৎকালীন সহপাঠিনীর প্রেমকে অফিসিয়াল স্বীকৃতি দিতে, বাবা মার সাথে কথা বলতে যাই, তখন আমার হাতে ছিল, একটি মাত্র তুরূপের তাস। আমার সহপাঠিনীটিও বদ্যি। তাতেই এক কথায় বাজিমাত। এবং এই কারণে, আজ, বিবাহের দশ বছর পরেও আমাদের জুটি, যৌথভাবে, মাতৃকুল এবং শ্বশ্রুকুল, দুপক্ষেই সুপার হিট। বহু লোকের এখনো ধারণা, বদ্যি বলেই নাকি প্রেমটা টিঁকে গেল।

    তবে বর্তমানে, বয়ে যাওয়া সময়ের মতো, গাছ থেকে ঝরে যাওয়া পাতার মতো, পুরোন চিঠির খামে লাগানো শুকিয়ে যাওয়া আঠার মতো, বদ্যিদের মধ্যেও সেই স্বজাতিপ্রেম ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণুমান। এইটে আমি প্রথম বার বুঝি, ভিন রাজ্যে ম্যানেজমেন্ট পড়তে গিয়ে। সেখানে ছিলেন এক বদ্যি প্রফেসর। সে ভদ্রলোক তাঁর দৈনিক রুটিনে আমার পিছনে তিন ফুট বাঁশ নিয়ে ঘোরার জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ করেছিলেন। ভালমানুষের দীর্ঘশ্বাসে তাঁর এই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। কিছুদিনের মধ্যেই আর দশটা প্রশাসনিক কারণে তাঁর আধিপত্য কমতে থাকে এবং শেষমেশ ভদ্রলোক, আই আই এম লখনৌ না কোথায় একটা চাকরি নিয়ে, তাঁর বাক্স প্যাটরা এবং বাঁশটা গুছিয়ে আমাদের টা টা বাই বাই করে চলে যান।

    যাই হোক, আমি না হয় ঠেকে শিখেছি, কিন্তু আমার মাতৃদেবী এখনো তাঁর ঐতিহাসিক বিশ্বাস আঁকড়ে বসে আছেন। তাঁর মতে, বদ্যিরা ঈশ্বরের সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি। মানে, ওই কিছুটা 'সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে সেনগুপ্ত, দাশগুপ্ত, ইত্যাদি প্রভৃতি' ধরনের। আমার মনে হয়, মা যদি আদালতের জজ সাহেব হতো, তবে এজলাসের যত বদ্যি আসামী বেকসুর খালাস পেত।

    মাঝখানে, সামান্য কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে, মাকে দিন দুয়েক হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সে সময়, মার ফোনে, আমি খাল কেটে কুমীর আনার উৎকৃষ্ট নমুনা হিসাবে, ফেসবুক ইন্সটল করে দিই আর সব মাসী পিসীদের অ্যাডও করে দিই। আমার মা করিৎকর্মা মহিলা। পরদিন গিয়ে মার ফ্রেন্ড লিস্টে পাঁচশো পঞ্চান্ন জন অপরিচিতকে দেখে আর নোটিফিকেশনে সাড়ে তিনহাজার উদ্ভট আপডেট দেখে আমি বিচলিত হয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করি, 'এসব কি? এরা কারা?' মা মুখে একটা স্বর্গীয় হাসি মাখিয়ে উত্তর দেয়, 'বদ্যি'।

    সময় অতিবাহিত হতে থাকে। মা খুঁজে পেতে গোটা ফেবুতে যত বদ্যি আছে তাদের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলে, আমাদের বিভিন্ন বিধিসম্মত সতর্কীকরণকে অগ্রাহ্য করেই। তাদের বিভিন্ন কমেন্ট ও আপডেট নিয়ে মধ্যে মধ্যেই মাকে দেখা যায় বিভিন্ন পরিচিতের সঙ্গে গল্প জমিয়ে বসতে। যেমন, এই অমুক দাশগুপ্তর ছেলের বউকে কিন্তু দারুণ দেখতে হয়েছে। সামনের মানুষটি, অমুক দাশগুপ্তকে বিলকুল চেনে না বললে মা বেশ অবাক হয়ে যায়। 'সেকি, তুমি ফেসবুক দেখো না? আরে অমুক দাশগুপ্ত, অমুক সেনগুপ্তের ফ্রেন্ডলিস্টে আছে, তমুক সেনের ফ্রেন্ডলিস্টেও তো আছে।' সামনের ভদ্রলোকটি ক্রমে গোলকধাঁধার পৌনঃপৌনিকতায় ঢুকে যেতে থাকেন।

    এভাবেই দিন কাটে। আমরা ক্রমে মার ফেসবুকের নীতি পুলিশের কাজ করা বন্ধ করে দিই। কেননা, অভিজ্ঞতা স্বরূপ দেখা গেছে মার ফ্রেন্ডলিস্টের বদ্যিরা রক্তবীজের মতোই, একটাকে কাটালে আরো দশটা নতুন এসে যায়।

    হঠাৎ দু তিন দিন আগে আমার মাতৃদেবী হাতে ফোন নিয়ে, প্রায় কাঁদো কাঁদো মুখে আমাকে এসে ধরেন। এমত বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে আমি যারপরনাই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে ঘটনাটা কি জানতে চাই। মা প্রায় হাহাকার করে ওঠে, ' দেখ, আমাকে এরা কি সব বলেছে।'

    দেখা গেল, সেইদিন ভোর ভোর মা ফেসবুকে একটি বিতর্কিত পোস্ট করে বসেছে। বিতর্কিত, মানে অধুনা বিতর্কিত, আজ থেকে কয়েক বছর আগে এই পোস্টটা নিয়ে খুব একটা নাড়াচাড়া হতো না, কিন্তু এখন হয়। মা ফেসবুকে আগাম রথ ও ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটা পোস্ট করে, তাতে লেখে এভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে এড়িয়ে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি। বোলতার চাকে ঢিলটি লাগে এবং মার বন্ধুতালিকার দেশপ্রেমিক বন্ধুরা রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশোদ্ধারে।

    কেউ লেখে, আপনি কোনদিন কোন মুসলমানকে দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছা পাঠাতে দেখেছেন? কেউ লেখে, আপনার মতো অসাম্প্রদায়িকরা দেশের শত্রু, এজন্যই নাকি ওদের এত বাড়বাড়ন্ত। কেউ মাকে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে গিয়ে থাকার সুপরামর্শ দেয়, কেউ আবার বলে, এদের জন্যই তো, মমতাকে একা দোষ দিয়ে কি হবে। জন্মসূত্রে বামপন্থী (অতি) মা এতে ভারি দুঃখ পায়।

    সব থেকে রেগে যান এক ভদ্রমহিলা। প্রতি দুটি কমেন্ট অন্তর অন্তর তাঁর একটি করে কমেন্ট দেখা যেতে থাকে। ননসেন্স দিয়ে শুরু করে কমেন্ট বাড়ার সাথে সাথে ভদ্রমহিলা মার সাথে বিভিন্ন তৃণভোজী চতুষ্পদর সাযুজ্য স্থির করতে থাকেন। অবশ্যি সহজবোধ্য কারণে গরু সেই তালিকা বহির্ভূত থেকে যায়।
    সব দেখে শুনে, আমি গম্ভীর মুখে মার ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে কিছু বন্ধুদের সরাই। প্রথমে কিছু কমেন্ট, আর তার পরে, ভবিষ্যতের শান্তির কথা মাথায় রেখে পুরো পোস্টটা উড়িয়ে দিই। তারপরে, ফোনটা ফেরত দিয়ে ঘুমোতে চলে যাই।

    আমার মা অসাধারণ মহিলা। ভাঙে তবু মচকায় না। আজ রাত পৌণে একটায় অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখি, মা আবার ফেসবুক নিয়ে বসেছে। আমি বললাম, 'কি ব্যাপার? আবার ফেসবুক?'
    মা বলে - ' করবো না কেন? দুটো লোক গালাগালি দিয়েছে বলে আমি কি ভয় পেয়ে যাবো? আর সব জায়গাতেই একটা দুটো বাজে লোক থাকে, তাই বলে কি সব বদ্যিরাই বাজে হয়ে যাবে নাকি?'
    কাজেই মায়ের ভার্চুয়াল বদ্যি মহা সম্মেলন অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন