এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাজে কথা

    Sanchayita Biswas লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৯ জুলাই ২০১৭ | ২২২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sanchayita Biswas | ১৯ জুলাই ২০১৭ ২৩:৫৯367259
  • তখন বোধহয় আমি সাত কিংবা আট।এক বিকেলে দেখি আমাদের বাসাবাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে কত লোক দুদ্দাড় ছুটছে নতুন বাজারের দিকে।নতুন বাজারটা আমাদের পাড়ার গায়েই।মা চেনাশুনা একজনকে জিগ্যেস করলো,"কি ব্যাপার?"কয়েক মুহূর্ত দৌড় থামিয়ে সে জানালো প্রকাশ্যে খুন হয়েছে বাজারের মধ্যে।কোন্ সবজিওয়ালার সাথে একজন কসাইয়ের বচসা হয়েছিল সকালে।দুপুর গড়াতে না গড়াতে সেই কসাই কোপ বসিয়েছে সবজিওয়ালার গলায়।সারা রাস্তা ভেসে যাচ্ছে টাটকা রক্তে।আমাদের ছোট্ট মফঃস্বল শহরকে সেইবারই প্রথম ও শেষবার উত্তেজিত হতে দেখেছি।

    রুবিয়া শিরিন প্রাইমারী স্কুল থেকে আমার সাথে এক ক্লাসে পড়তো।ভীষণ রোগা,ফর্সা,চিকন কন্ঠস্বরের রুবিয়া কখনো আমার বন্ধু ছিল না…কেবলই সহপাঠী ছিল…সুমন্ত,জলি,পায়েল,সৌম্যদের মতোই।কেবল ঈদ আসলে আমার খুব ইচ্ছে হতো রুবিয়ার সঙ্গে ভাব করে নিতে।তুলোপট্টীর লাগোয়া ছাতা-ব্যাগ-বইয়ের দোকানগুলোর সামনের ফুটপাথে রংবেরঙের লাচ্চা-সেমাইয়ের স্টল বসতো ঈদের আগে।ওগুলো দেখেই আমার লোভ হতো।নারকেলের দুধ দিয়ে সিমাই…আহা!ইস্,রুবিয়া যদি আমার বন্ধু হতো…

    ইলেভেনে উঠে অর্ণবদার কোচিঙে গেলাম বায়োলজি পড়তে।আটটা থেকে দশটা অবধি সময় দিতো দাদা।এগারোটায় স্কুল শুরু।এই সময়ের মধ্যে বাড়ি ফিরে রেডি হয়ে স্কুল যেতে পারবে না বলে আশরাফুল স্নান সেরে স্কুলের পোষাক পরেই পড়তে আসতো যাতে পড়া শেষ করেই সোজা স্কুলে যেতে পারে।মেধাবী ছাত্র ছিল আশরাফুল।অন্য সব শ্যামবর্ণের মানুষের মতোই ওর হাসিটা খুব ঝকঝকে ছিল।স্নান সেরে পরিপাটী করে চুল আঁচড়ে আসতো বলে হাসিটা বোধহয় আরো নির্মল মনে হতো।একদিন কথাচ্ছলেই আশরাফুলকে বলেছিলাম,"তোর হাসিটা একদম কৃষ্ণঠাকুরের মতো!"রাগে বেগুনী হয়ে গিয়েছিল ছেলেটা।কেন কি জানি!তারপর আর কথা বলতাম না ওর সঙ্গে।বহুদিন পর,বোধহয় কলেজের শেষের দিকে,একদিন ভ্যানরিকশায় যাচ্ছিলাম মিউনিসিপ্যালিটির সামনের পথ ধরে।হঠাৎই একটা সাইকেল আমার রিকশার সমান্তরালে চলে এলো।সাইকেল-আরোহী আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,"তুই কি আমার ওপর এখনো রেগে আছিস?"আশরাফুলকে চিনতে আমার সেদিন সময় লেগেছিল।ওর বদলে যাওয়া মুখে পুরোনো সেই হাসিটাই কেবল চিনিয়ে দিয়েছিল ওকে।

    আমাদের ইউনিভার্সিটিতে অনেকরকম কোর্স পড়ানো হয়।আশুতোষ বিল্ডিঙের চওড়া সিঁড়ি,ক্যাঁচকোঁচ শব্দওয়ালা লিফ্টখানা গেরুয়া উড়নি টিকিধারী যুবকের থেকে মুন্ডিতমস্তক বুদ্ধিস্ট স্টাডিজের ছাত্রকে কখনো পৃথক করেনি।গার্লস কমনরুমে জায়নামাজ পেতে সহপাঠিনীরা দুপুরের নামাজে বসলেই ক্যারামের খ্যাটখ্যাট শব্দ থেমে যেতো।যে মেয়েটা ক্লাসে এসেই বোরখাটা ব্যাগস্থ করে গল্প জমাতে বসতো,তার থেকে গলায় রোজারি ঝোলানো মেয়েটা যে আলাদা,সেটা কখনো মাথায় আসেনি।হস্টেলে আমার বেডের সাথে বেড জোড়া লাগিয়ে থাকতো জেসমিন।ভোরে উঠতাম বলে রোজার মাসে ওর সেহরির ভাগও জুটে যেত আমার।আর মালদা থেকে আসা পিনাজের কৌটোর আমসত্ত্ব ফুরোতো দশ মিনিটের কাড়াকাড়িতেই।

    ছোট শহরের মানুষগুলোর চাহিদাগুলোও হয় ছোট ছোট।রোববারের ভাতঘুম…টি টোয়েন্টি…পুজো বা ঈদে পাখি সালোয়ার…শীতের পিকনিক…পরীক্ষার পড়া…টিউশনে প্রেম…।পিঠোপিঠি পাশাপাশি বাস করতে করতে ধর্মের বড়াইটা বড়একটা থাকে না।প্রাত্যহিক প্রয়োজনটাই জীবনের ধর্ম হয়ে দাঁড়ায়।এই যেমন শ্যামের মুদিখানা বন্ধ থাকলে মাসকাবারি বাজার করা বিড়ম্বনা হয়ে যাবে।কিংবা বাবুরালি কাকু মাছ না বেচলে রান্নাঘরে চুলো বন্ধ হয়ে যাবে।…কিন্তু তারপরও হঠাৎ জ্বলে উঠলো ছোট্ট শহরখানা।অচেনা উদ্ভ্রান্ত পরিস্থিতিতে এক সপ্তাহ গৃহবন্দী থেকে শুনলাম মুহূর্মুহু বোমার গর্জন…ধর্মের ধ্বজাধারীদের গর্জন…কিছু সত্যি ঘটনা…কিছু গুজব...

    আজকাল ভয়ে ভয়ে বার হয় সবাই।কেউ কারো মুখের দিকে তাকায় না।ভাঙা দেবীমূর্তির সামনে বসে থাকে পুলিশ।সন্ধ্যে গাঢ় হওয়ার আগে ঘরে ফিরতে চায় সবাই।কাঁচভাঙা জানলা-পোড়া টায়ারের দিকে আড়চোখে তাকায় সবাই।মাছ কিনতে গিয়ে বাবুরালি কাকুকে চাপা গলায় জিগ্যেস করি,"কাকু,ঠিক ছিলে তো?" মানুষটা অন্যমনস্ক ক্লান্ত দৃষ্টিতে বিগত কোনো দুঃস্বপ্নের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে,"হ্যাঁ…"
  • aranya | 83.197.***.*** | ২০ জুলাই ২০১৭ ০৭:৩৬367260
  • চেনা শহর অচেনা হয়ে যাচ্ছে আজকাল, অচেনা হয়ে যাচ্ছে বহুকালের চেনা মানুষেরা

    সঞ্চয়িতা সুন্দর লেখেন
  • Sanchayita Biswas | ২০ জুলাই ২০১৭ ২২:১৯367261
  • আপনাকে ধন্যবাদ অরণ্য.
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন