এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পয়ের তলায় সর্সে -সুইট্জার্লান্ড

    Shabnam Dutta
    অন্যান্য | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ | ২৪৫৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • d | 144.159.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ১৪:১৫366014
  • লিখুন লিখুন।
    ভ্রমণকাহিনী দেখলেই আমি গুটিসুটি হয়ে বসে পড়ি।
  • Shabnam Dutta | 186.249.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ১৪:১৮366025
  • গত বুধবারের প্রায় না হওয়া সকালবেলায় আমরা আড়াইমূর্তি গ্যাটউইক এয়ারপোর্ট থেকে ইজিজেট র প্লেনে চড়ে বসলাম সুইটজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। তার আগের দিন ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে অন্তত পাঁচটা এমন ঘটনা ঘটেছিল যাতে করে আমার পিত্তগুলো টগবগ করে ফুটতে শুরু করে সাধারন অবস্থায়। কিন্তু সুইটজারল্যান্ড যাচ্ছি বলে কথা। শাহরুখ কাজল ডিডিএলজে। আমি তখন প্রায় গৌতম বুদ্ধের মতন ক্ষমাশীল। পিত্তগুলো প্রায় ফ্রোজেন স্টেটে। সক্কাল বেলায় বেসেল এয়ারপোর্ট, মানে ইউরো এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম সাড়ে দশটা নাগাদ। এই এয়ারপোর্টের দুটো এক্সিট. একটা সুইটজারল্যান্ডের দিকে আর অন্যটা জার্মানি/ফ্রান্সের দিকে। আমরা সুইটজারল্যান্ডের দিকে বেরিয়ে একটা বাসে চড়লাম রেল স্টেশন যাবার জন্য। আধঘন্টা পরে পৌঁছলাম স্টেশন. যেমনটা ভয় করা গেছিল ঠিক তেমনটাই হল। চারদিকে সাইনবোর্ডে কোন ইংলিশ নাই প্রায়। লোকজনকে জিগ্গেস করে করে বার্ন যাবার ট্রেন পাকড়ালাম। বার্ন হল সুইটজারল্যান্ডের সেন্ট্রাল ওয়েস্টে, সুইটজারল্যান্ডের ক্যাপিটাল। সেখানে নেমে প্রথমেই দেখি বেশ গরম। আমরা তো হাঁ। জন্ম থেকে শুনছি সুইটজারল্যান্ড ঠান্ডার জায়গা। যত লোকের সুইটজারল্যান্ডে ট্রিপের ছবি দেখেছি সব্বাই মাংকিক্যাপ পরা। আর আমরা ছোট জ্যাকেট পরে হাঁসফাস করছি! তারপরে দেখা গেল বার্ন এর টেম্পারেচার লন্ডনের র টেম্পারেচারের থেকে প্রায় 6-7 ডিগ্রী বেশী। কোনরকমে পেটফোলা ব্যাগগুলোর পেট আরো ফুলিয়ে জ্যাকেটগুলো ভেতরে ঢুকিয়ে হাঁটা দিলাম ওল্ড টাউনের দিকে। একটু এগিয়েই ডানদিকে একটা ভিউ পয়েন্ট. সেখান থেকে উঁকি মেরে প্রথম দর্শন মিললো আল্পসের স্নো ক্যাপ্ড পিকের। নিচে একটা নদীও দেখতে পেলাম। যার রং নীল সবুজে মেশামিশি। বেশ বসে আঁকো প্রতিযোগিতার নদী। প্রায় দশ বছর পরে স্নো ক্যাপ্ড পিক দেখে যখন বেশ হারানিধি ফেরত পেয়েছি বলে মনে হচ্ছে এক বাস ভর্তি চিনেপাড়ার লোকেরা উদয় হলেন রকমারী ক্যামেরা হাতে নিজেদের ভাষায় প্রবল কিচিরমিচির করতে করতে। তাদের ফাঁক ফোকোর দিয়ে পালিয়ে আরো খানিক হেঁটে পৌঁছলাম ওল্ড টাউন। ইয়োরোপিয়ান অন্য ওল্ড টাউন গুলোর মতন ফুল অব ক্যারাকটার না হলেও যাকে বলে বেশ আর কি। উঁচুনিচু রাস্তা, মাঝে মাঝে ফোয়ারা, রাস্তার দুদিকে হাওড়া বা ফ্লোরেন্সের মতনই হলুদ রঙের দু-তিনতলা বাড়ী। এখানে দু একজনকে ফোয়ারার জল খেতে দেখে বেশ অবাক হয়েছিলাম। পরে জানা গেছিল এর রহস্য। সে যাই হোক চাড্ডি ফাস্ট ফুড খেয়ে আবার ট্রেন ধরলাম লুসার্ন যাব বলে। ওখানেই একদিনের অস্থায়ী ঘাঁটি। যাবার পথে পড়ল ইন্টারলেকেন| সেই দুখান লেক যার ধারে ছবি না তুললে ইয়েরোপ ট্রিপ কমপ্লিট হয় না। এখানে সুইটজারল্যান্ডের ট্রেন সম্পর্কে কটা কথা না বললেই নয়। এই ট্রেনগুলোতে মেটাল কম, কাচ বেশী, মায় ছাদের আর্ধেকটা কাচ। ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস সবেরই এক ফান্ডা। দ্বিতীয় কথা গোদা গোদা ট্রেনগুলো পাহাড়ের গা দিয়ে যে স্পীডে ওঠে তাতে বেশ কেবলে যেতে হয়। আর কোন সময়ই কানেক্টিং ট্রেনের জন্য মিনিট পনেরোর বেশী অপেক্ষা করতে হয় না। সে যত আজব গজব জায়গাতেই যাওয়া যাক না কেন। লুসার্ন পৌঁছলাম সন্ধ্যাবেলায়। হোটেলে মাল পত্তর রেখেই পেটপুজোর খোঁজে বেরোনো গেল। হোটেলের সামনেই লুসার্ন লেক। দিনের আলো তখন আস্তে আস্তে পথ ছেড়ে দিচ্ছে নিয়নের আলোকে। লেকের জলে শহরের আলো পড়ে মনে হচ্ছে জলটা বুঝি চার্চের স্টেইনের গ্লাস. সেই লেকের ওদিকে খেয়ে ফিরতি পথে চ্যাপেল ব্রিজ দিয়ে লেক পেরোলাম। এটা প্রায় চারশো বছরের পুরোনো কাঠের তৈরী ব্রিজ যেটা শুধু মানুষ চলাচলের জন্য বানানো। ব্রিজটা ঢাকনাওলা। আর ছাতটা ট্রাসের। সেখানে বেশ কিছু পুরোনো ছবি। এটাই লুসার্নের সিম্বল। ফিরে এসে পপাত চ, ঘুমার চ।
  • de | 69.185.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ১৫:৩৪366036
  • বাঃ বাঃ, চলুক, চলুক!
  • shabnam dutta | 186.249.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ১৭:২৩366038
  • shabnam dutta | 186.249.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ১৭:২৫366039


  • সিকি | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ১৭:৩৪366040
  • ব্রেশ, ব্রেশ।
  • Shabnam | 186.249.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ২২:৩৪366041
  • পরদিন সকালে উঠে রোজকার কাজগুলো (আংরেজদের ভাষায় ডেলি অ্যাবলিউশনস) সেরে বেরিয়ে পড়লাম মাউন্ট রিগি দেখতে। এই রিগিকে বলে আল্পসের রানী। হোটেলের পাশের স্টেশন থেকে কিছুমিছু ব্রেকফাস্ট কিনে ছুটতে ছুটতে (এবং কফি চলকাতে চলকাতে) প্রায় ছেড়ে গেছে এমন লঞ্চে উঠে পড়া গেল হাঁচড় পাচড় করে। আমার ভাল মানুষ বরটা যত আতঙ্কিত আমি ততই খুশী। প্রায় ডিডিএলজে রিপ্লে বলে কথা। লঞ্চ যেখানে নামালো সেখান থেকে কগহুইল ট্রেন. যখন পৌঁছালাম তখন দেখি চারটে ক্যারেজের তিনটে ভর্তি আর অন্যটার তালা খোলেনি। ভাবছি বোধহয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে আচমকা চিচিঙ ফাঁক। চার নম্বর ক্যারেজ খুলে দেওয়া হল। পূর্বপুরষরা দেখলে গর্ববোধ করতেন এমন লাফ দিয়ে জানলার ধার দখল করা গেল। এবার টিরেন চড়তে আরম্ভ করল। হ্যাঁ, চলতে নয় চড়তে। বোধহয় তিরিশ ডিগ্রির বেশী অ্যাঙ্গল. বাঁ দিকে লেক লুসার্ন ধপধপ করে নিচে নেমে যাচ্ছে। আগের দিন বার্ন থেকে লুসার্ন আসার পথে যা বরফ দেখেছিলাম তার চেয়ে বেশী বরফ শুরু হয়ে গেল একটু পরেই। মাঝে একটা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের বরফ পরিষ্কার করতে হল ড্রাইভার সাহেবকে; না হলে বৃদ্ধা যাত্রী নামতে পারছিলেন না। তার আরো খানিক পরে পৌঁছলাম রিগির মুন্ডুতে। এক চিলতে এক চিলতে দুটো প্ল্যাটফরম। একটা খাবার দোকান কাম স্যুভেনিরের দোকান কাম হিসুর দোকান। এটুকু বাদ দিলে বাকিটা শুধু সাদা। (উজানের ভাষায় খুব বুড়ো মানুষের মাথার মতন সাদা) ঝকঝকে রোদে সেই সাদা হল গিয়ে সফেদিকা চমকার ইন রিয়েল সেন্স। আর দু নম্বর প্ল্যাটফরমের ওদিকে খাদ। খাদটাও গোটাগুটি সাদা। অনেক নিচে একটা ছোট্ট সিকি পয়সার মতন লেক. চারিপাশে যত ট্রেল সব সাদা। কেউ কেউ খোঁচাওলা লাঠি নিয়ে ঠুকে ঠুকে হাঁটতে যাচ্ছে ওই ট্রেলয়ে। আমরা উপরের ভিউ পয়েন্টটা গিয়েই ক্ষমা দিলাম।
    এবার হাতে আছে প্রায় আর্ধেকটা দিন। কি করা যায়? আমার বর প্রায় আর্কিমিডিস স্টাইলে এ ডিক্লেয়ার করল দু নম্বর প্ল্যাটফরম মোটেই ডাউন ট্রেনের জন্য নয়। ওদিকে আরেকটি অন্য ট্রেন চলে। সেটা গোলডাউ বলে কোথাও যায়। লাঞ্চ উপলক্ষে সসেজ কিনে সেই ট্রেনে চড়া গেল। গোলডাউ পৌঁছে দেখি নাকের ডগায় একটা মিষ্টি মতন চার্চ। সোজা চড়াও হলাম। কিন্তু দরজা খুললো না। অগত্যা বাইরে দাঁড়িয়ে খানিক ছবি তুলে গুগল দেবতাকে স্মরন করা গেল। তিনি জানালেন 2 মাইল দুরে একটি লেক আছে। নাম হল জুগের সি| জয় মা বলে হাঁটা দিলাম লেকের দিকে যদি কোন ক্রুজ থাকে সেই আশায়। মাইল খানেক হাঁটার পরে বোঝা গেল এই লেকে ক্রুজ মোটেই নাই। কিন্তু আমরা তখন লেক দেখবার পণ করে ফেলেছি; যাকে বলে ধনুক ভাঙা পণ। সুতরাং একটা বাসে চড়লাম যেটা লেকের ধার ধরে খানিক যাবে। এই বাসটাও খানিক চলার পর চড়তে শুরু করল। তারপর আরেকটা ট্রেন স্টেশনে নামিয়ে দিল। ম্যাপ দেখে বোঝা গেল এই ট্রেনটা জুগ যাবে লেকের পাশ দিয়ে দিয়ে। সুতরাং সহজেই নিঃসন্দেহ হওয়া গেল যে এই ট্রেনই আমাদের সঠিক সারথী। আমরা প্রশেসন করে উঠে পড়লাম ট্রেন আসতেই। লেকের জলে সাদা পাহাড়ের ছায়া দেখতে দেখতে, লোকের বাড়ীর রান্নাঘরে উঁকি দিতে দিতে আর সুইস পাবলিক ট্রান্সপোর্টের প্রশংসা করতে করতে জুগ পৌঁছলাম। সেখানে একটু এদিক ওদিক করে আবার বরের মাথায় আর্কিমিডিসের ভর। জুরিখ নাকি মোটে আধঘন্টা। সুতরাং নেক্স্ট ট্রেন এবং জুরিখ। নেমেই প্রায় সেদ্ধ হয়ে গেলাম। জ্যাকেট খুলেও শান্তি নেই। মোটা জামাটাও খুলতে পারলে বাঁচা যেত। অগত্যা আইস ক্রিমের দোকানে লাইন দেওয়া গেল। আইস ক্রিম হাতে নিয়ে দুটো চার্চ আর ক্যাথেড্রাল আর হাই স্ট্রীট দেখে জুরিখ লেকের ধারে পৌঁছলাম। প্রথমেই চোখে পড়ল রাজহাঁসের পল্টন। তাদের চলন বলন দেখে তাবৎ মডেলরাও লজ্জা পেয়ে যাবেন। ফিনিশিং স্কুলের টীচার হবার পুরো যোগ্যতা রাখেন তেনারা। এবার আবার ক্রুজ। লেক জুরিখের। এই বিকেলবেলায় লেকের জলে মিশেছে লালের আভা, ধারের পাহাড়ের গায়ের ছোট্ট গ্রামগুলোকে দেখাচ্ছে যেন সদ্য ছোটবেলা কাটিয়ে ওঠা কিশোরী, আর পাহাড় চুড়ায় ঘরে ফিরছে মেঘেরা। ক্রুজের পরে আবার ট্রেন ধরে লুসার্ন এবং একটি থাই রেস্টুরেন্টে গান্ডেপিন্ডে গিলে, পথে কেনা কনিয়াকের সাথে প্রেমালাপ সেরে ঘুম।
  • | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ২২:৫৮366042
  • ছবি ছবিইই
  • Titir | 138.2.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০৯366043
  • গোগ্রাসে গিলছি। আরো ছবি আর লেখা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
  • tania | 165.57.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪১366015
  • জ্যুরিখ কি শেষ হয়ে গেল? না আরও আছে? শবনম কিছু মনে না করলে আমিও দুকলম লিখি?
  • T | 229.75.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৫৩366016
  • ঢপের ভ্রমণকাহিনী হচ্ছে। শুদু এলুম খেলুম হালুম হুলুম। এতে কাহিনীটা কই। লেখারই বা কি দরকার কে জানে। এমনিই গুগুলে ছবি দেখা যায়। কি বিরক্তি!
  • tania | 165.57.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৫:৩৭366017
  • সুইটজারল্যান্ডের জন্য আমাদের বরাদ্দ ছিল ছদিন। জ্যুরিখ দিয়ে শুরু করে, সেখান থেকে লুৎসার্ন। তারপর ইন্টারলাকেন। অবশেষে মন্ত্র। এই হল প্ল্যান। আমরা আসছিলাম অস্ট্রিয়া থেকে গাড়িতে। বর্ডার ক্রসিং জনশুন্য। বিকেল পাঁচটা বেজে গেছে, তাই সাহেবরা সব বাড়ি চলে গেছেন। বর্ডার হাট করে খোলা।

    উঠলাম জুরিখের আইবিস হোটেলে। চেন হোটেল। আল্ট্রা মডার্ণ ডেকর। সস্তা ও পুষ্টিকর। অন্তত তাই মনে হয়েছিল। ভুল ভাঙতে এক মিনিটও লাগেনি। বলব কি দাদা, পুঁচকে এতটুকু ঘর, বাঙ্ক বেড, খাটের ওপর ছাড়া লাগেজ খোলার যাস্ট কোনো জায়গা নেই । আর বাথরুমের কথা জিজ্ঞেস করে লজ্জা দিবেননা। সে বাথরুমের ভেতর তোয়ালে রাখার পজ্জন্ত ব্যাবস্থা নেই। সাড়ে তিনফুট বাই চার ফুটের একটা টুকরোকে প্রাইভেট বাথ বলে চালাচ্ছে ব্যাটারা। পটির খুপরি আলাদা। বেসিন আট ইঞ্চি বাই দশ ইঞ্চি, ঘরের মধ্যে। মরুগ্গে। দু রাত্তিরের তো ব্যাপার।

    সকালে হোটেলের ব্রেকফাস্ট খেয়ে দিল খুশ হয়ে গেল। সরেস ব্যাবস্থা! তারপর বেরোনো গেল শহর দেখতে। হোটেলের উল্টোদিকেই ট্রাম স্টপ। এখান থেকে দুইখান ট্রাম পাল্টে বানহফপ্লাৎজ। সেখান থেকে বানহফস্ট্রাসা ধরে এগোনো। দুদিকে বুটিকশপ আর রাস্তায় হাইফাই ডিজাইনার জামাকাপড় পরা জনতা। হাইহিল পরে তারা কি সুন্দর গটগটিয়ে কবলস্টোন রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছে দেখে আমি যাকে বলে হিংসেয় জ্বলে গেলাম!

    দেখতে দেখতে এসে গেল প্যারেডপ্লাৎজ। এদিন শনিবার। একটা লোকাল ব্যান্ড বাজছিল, প্রচুর লোক চারদিকে। আমরাও দাঁড়িয়ে পড়লাম। খানিক বাজনা শুনে, আবার হাঁটা। পাথর দিয়ে পেভ করা অলি গলি, দুদিকে ছোটছোট দোকান, বাড়ি, জানলায় রং বেরঙের ফুলগাছ। সময় থমকে আছে এখানে। দুটো গলি দূরের ইষ্পাতের জঙ্গল এখানে অলীক স্বপ্ন। খুটখুট করে সেলাইকল চালাচ্ছে এক দোকানী, টুকটুক করে বেতের বাস্কেট হাতে বাজার করে ফিরলেন বৃদ্ধা। একটা বেঞ্চ খুঁজে নিয়ে একটু বসি।
    এখান থেকে খানিকটা উঠে গিয়ে লিন্ডেনহফ। গাছের ছায়া ঘেরা বেলভেডিয়ার স্কোয়ারের ফোয়ারা, নীচে লিমেট নদী বয়ে চলেছে, গোটা জ্যুরিখ রোদে ঝলমল করছে। সামনে বেশ কয়েকটা ব্রিজ, ওপারে রাৎহাউস, ভিয়েনপ্লাৎজ, ভাসের্কির্শে – সব ঘোরা হবে একে একে। তার আগে ক্যাফে ওডিয়ন। ঊইকি বলছে, “থিস ইস থে প্লে ্হেরে এনিন সত ঔত মোস্ত ওফ ওর্ল্দ অর ঈ, প্লোত্তিঙ্গ থে Rুস্সিঅন Rেভোলুতিওন”।

    লাঞ্চের পর বিখ্যাত চার্চ গ্রসমুন্স্টের। চার্চের চত্ত্বরটা খুব সুন্দর। ভেতরটাও নিশ্চয়ই সুন্দর, কিন্তু আমদের স্মৃতিতে তখন সদ্য দেখে আসা ভিয়েনা, মেল্ক, সলসবার্গ, ইন্সব্রুকের ব্যারোক স্থাপত্যের হুজ হু। তাই গ্রসমুন্স্টের দাগ কাটলনা। ওখান থেকে চলে গেলাম একটা পায়ে হাঁটা ওভার ব্রিজ পেরিয়ে লেকের পাড়ে। জ্যুরিখ লেকের ওপর তখন বিকেলের নরম রোদ। টিকিট আগেই কাটা ছিল, উঠে পড়া গেল বোটে। এইভাবে অস্ট্রিয়া যে সুইটজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধিপত্যকে প্রতিপদে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে, ভাবতে পারিনি। লেকের দুপাড়ের ছিমছাম বাড়িঘর পথঘাট সবই সুন্দর, দেখলাম, আহা বাহা করলাম, কিন্তু মনের মধ্যে তখনও দানিউবের হাতছানি।

    বোট থেকে নেমে ট্রাম ধরে পৌঁছে যাওয়া গেল গুরুবোন সে-দির বাড়ি। এখানে আসব শুনে সে-দি বার বার করে বলেছিলেন ওদের বাড়ি যাবার কথা। ফোন করে নেমন্তন্ন করেছিলেন। যে কোনোরকম দরকার হলে সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সত্যি বলতে কি, আমরা একটু কিন্তু কিন্তু করেই ওনার বাড়ি গেছিলাম। কারনটা আর কিছু নয়, আমাদের অতি পরিচিত এক দাদা জ্যুরিখেই থাকেন, উনিও বহুদিন ধরে বহুবার ওদের ওখানে যাবার নেমন্তন্ন করেছিলেন। কিন্তু আমাদের যাবার প্ল্যান হওয়া মাত্র ওনার তরফ থেকে আর কোনো সাড়া পাইনি। তাই বেশ দ্বিধাভরেই সে-দির নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেছিলান সেদিন। গিয়ে দেখলাম না আসলে খুব মিস হোত। এত আন্তরিক ব্যাবহার একদম অপরিচিত কারো থেকে কোনোদিন আশা করিনি! সে দি কে আগে কখনও দেখিনি, জামাইবাবুকে তো না-ই, কিন্তু ওরা দুজনে আমাদের যেভাবে আপ্যায়ন করলেন, সত্যি বলছি, অনেক আপনজনের কাছেও এমনটা পাইনি। আর খাওয়া দাওয়ার কথা আর কি বলব! আম পোড়া সরবত দিয়ে শুরু করে থরে থরে এত খাবার, সব আইটেম চেখেও দেখতে পারিনি, তার আগেই পেট ভরে গেছিল। সঙ্গে কত রাত পর্যন্ত আড্ডা! তারপর ওরা আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিয়ে গেলেন। জ্যুরিখ শুধু ওদের জন্যই অনেক অনেক দিন মনে থাকবে!
  • tania | 165.57.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৫:৩৭366018
  • সকাল হতেই আইবিসের খুরে খুরে পেন্নাম ঠুকে রওনা দিলাম লুৎসার্নের উদ্দেশ্যে। ও, তার আগের রাতের একটা ছোট্ট ঘটনা লিখে রাখি। আমাদের হোটেল বুকিং তিনজনের জন্য। অথচ ঘরে তোয়ালে দিয়েছিল দুটো। ফিরে স্নান করব ভেবে সকালে বেরোনোর আগে হাউস কিপিংকে বলেছিলাম আরেকটা তোয়ালে রেখে যেতে। সে বিটিও দিব্যি মাথা নেড়ে জানিয়েছিল রেখে যাবে। রাতে ঘরে ফিরে দেখি সবেধন নীলমনি দুটিও বেপাত্তা। রিসেপশনে গিয়ে বললাম। তখন ওরা বলল, ও, হাউস্কিপিং তো ইংরিজি জানেনা, ওরা ভেবেছে আপনারা একটাও তোয়ালে চাননা, তাই সরিয়ে নিয়েছে। এখন তারা এমনটা কেন ভেবেছিল খোদায় মালুম! যাহোক, খুব মোলায়েম গলায় জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে কি আমরা বিছানার চাদর দিয়েই তোয়ালের কাজ সারতে পারি? তাতে করে খুব অনিচ্ছাসহকারে ওরা আবার দুটি (হ্যাঁ, দুটি) তোয়ালের ব্যাবস্থা করেছিল।

    তো যা বলছিলাম। রওনা দিলাম লুৎসার্নের উদ্দেশ্যে। ঘন্টাখানেকের রাস্তা। লুৎসার্ন জ্যুরিখের দক্ষিণে। যত জ্যুরিখ থেকে দূরে যাচ্ছি, পাহাড়গুলো তত অবয়ব পাচ্ছে। আবছায়া থেকে হালকা ঘোলাটে, তার থেকে পাটকিলে হয়ে দস্তুরমত কালোকালো পর্বত হয়ে উঠল। আল্পস। এর এক ঝলক দেখেছি ইন্সব্রুকে, কিন্তু সে ছিল নস্যি। এই হল আসলি চিজ।

    লুৎসার্নকে টুকি করে আমরা প্রথমে গেলাম এঙ্গেলবার্গ। এখান থেকেই কেবলকার ছাড়ে মাউন্ট টিটলিসের জন্য। ছবির মত কুট্টি শহর। সবুজ আর সবুজ! সত্যি বলছি, এমন সবুজ দেখে আমাহেন ননভেজ জনতারও ছাগল-ভেড়া হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। গাড়ি পার্ক করে টিকিট কাউন্টারে গিয়ে জানা গেল ওপরে আইস ফেস্টিভাল চলছে, তায় রবিবার। তাই ইস্পেশাল ডিল। কিসব প্যাকেজ নিতে সাজেস্ট করল ওরা, আমরাও কিনে ফেল্লাম। ওপরে উঠে সে প্যাকেজের মাহাত্ম্য বুঝেছি আর টিকিটের কাউন্টারে বসা ভদ্রমহিলাকে প্রানভরে আশির্বাদ করেছি।

    এই কেবলকারের লাইনে দাঁড়িয়ে চাদ্দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেলা বসে গেছে। সেই অনুযায়ী চা সামোসাও পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়া যাচ্ছে। আজ্ঞে হ্যাঁ। সামোসা। কারন চাদ্দিকে দিশী লোকজন। আমরাও নেক্স্ট তিনদিনে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছোবো যে ভারতীয়দের ঐ সপ্তাহে ভারতের পরেই সবথেকে বেশী দেখা গেছে সুইটজারল্যান্ডে।

    তিরুপতির মত লম্বা লাইন পেরিয়ে কেবলকারে ওঠা গেল। এটায় বসা যায়। দিব্যি সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে ওপরে উঠে চলেছি। নীচে শহরটা ছোট হয়ে আসছে। এদিকওদিক থেকে কাউবেলের মিঠেসুর – হ্যাঁ এইবার ঠিক ফরেন ফরেন ফিলিং হচ্ছে। ঠিক যেন ডিডিএলজে টাইপ। ফিলিংটা ঠিকঠাক আসতে না আসতেই নাম নাম নাম! একি রে! এটা টিটলিস! না রে বাবা, পিকচার আভি বাকি হ্যায়। এবার সেকেন্ড ধাপ। আরেকটা কেবলকার। এটায় বসার ব্যাবস্থা নেই। লোকাল ট্রেনের মত ঠেসে লোক ঊঠছে। তারই মধ্যে এর মাথা তার মাঙ্কি ক্যাপের ফাঁক দিয়ে দেখলাম আমরা ট্রিলাইন ছাড়িয়ে এসেছি, এখন ঝাঁ ঝাঁ করছে রুক্ষ পাথরের খাড়াই। তারই গা বেয়ে আরও ওপরে উঠে চলেছি আমরা। আবার আরেক প্রস্থ নাম নাম নাম। এবার লাস্ট লেগ। এই কেবল কারটা আবার ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরে। এটাকে বলে রোটেয়ার। এইবার চারদিকে ধুধু বরফ। আসলি সুইটজারল্যান্ড!
  • tania | 165.57.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৫:৪০366019
  • ভালো লাগলে তবেই চলিবেক।
  • tania | 165.57.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৫:৪৯366020
  • প্রথম পোস্টের চার নম্বর প্যারার শেষ লাইন এরকমঃ
    ঊইকি বলছে, “this is the place where Lenin sat out most of World War I, plotting the Russian Revolution”।
  • Shabnam Dutta | 186.249.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ১১:৪১366021
  • তানিয়া বেশ হচ্ছে। আইবিস তো চিরকালই গজা। আপনারা নিশ্চিত না জেনে বুক করে ফেলেছিলেন।
    আমরা রাডিসন ব্লু তে ছিলাম।
  • shabnam dutt | 186.249.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ১৩:৪৩366022



  • Shabnam | 186.249.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ১৩:৪৪366023
  • সুইটজারল্যান্ডে এ তৃতীয় দিন। আগে থেকেই ঠিক করা ছিল যে জলদি উঠতে হবে রোদকে ধরতে হলে। একটু দুপুর গড়ালেই আল্পস সুন্দরী রোদের সাথে আড়ি করে দেন। সকালে ওয়েদার.কম বললেন এঞ্জেলবার্গ মানে যেখান থেকে মাউন্ট তিতলিসে ওঠা শুরু হয় সেখানে রোদ। সেই দেখে ব্রেকফাস্ট বগলদাবা করে সকাল নটা দশের ট্রেনে উঠে পড়লাম লুসার্ন থেকে। সকালবেলায় আমাদের রেডি হবার স্পিড দেখে অ্যাওয়ার্ড ফাঙ্কশনে এ কনজিকিউটিভ পারফরম্যান্স দেওয়া সেলেব রাও লজ্জা পেতেন। ট্রেন লুসার্ন ছাড়িয়ে একটু এগোতেই দেখা গেল রোদের দেখা নাই রে রোদের দেখা নাই। উল্টে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। পাহাড়ের খাঁজে খোচড়ে বেশ থাবা গেড়ে বসে আছে মেঘেরা। দেখে মনে হচ্ছে আজ গোটা দিনটা ঘর ছেড়ে নড়বার কোন তাগিদই নেই। এঞ্জেলবার্গ থেকে কেবল কার (রোপওয়ে) | একটা কার এ জনা ছয়েক বসতে পারে। অত সকালে একটা গোটা কার আমরাই দখলে পেয়ে গেলাম। এবার শুরু হল তার ওঠা। সামনে পেছনে কোথাও কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না। শুধু ঝুলে আছি যে তারটা থেকে সেটা হাত চারেক দুর অবধি দেখতে পাচ্ছি। হলিউডি হরর মুভিকে বলে বলে দু গোল দেবার অবস্থা। মনে হচ্ছে সব ইন্দ্রিয়গুলো একসাথে ছুটিতে গেছে। নাহলে এই পৃথিবীর বুকে আলো শব্দ গন্ধ কিছুটি নাই? এ কি করে সম্ভব? কখন যেন একটা স্টপ এল আর কারের দরজা খুলে গেল। দুজন মানুষকে দেখতে পেলাম। ধরফড় করে নেমে পড়লাম। এবারে তিতলিস রোটেয়ার। একটা ছোট ঘরের মাপের এলিভেটর যেটা পুরো কাচের। এ বস্তুটি নিজের অ্যাক্সিসে পাক খেতে খেতে উপরে ওঠেন। সেখানে দেখি আমরা ছাড়াও কিছু লোকজন আছে। সবাই মিলে একসাথে উপরে ওঠা শুরু হল। এবার একটু পরে পাহাড় দেখতে পেলাম। বলা ভাল সাদা দেখতে পেলাম নীল ব্যাকগ্রাউন্ডে। সুয্যিমামা দেখা দিলেন। তিতলিস দশ হাজার ফিট (রিগি ছিল সাত হাজার মতন)। উপরে উঠে একটা বাড়ীর মধ্যে নামিয়ে দিল এই রোটেয়ার। বাড়ীটার মধ্যে রেস্টুরেন্ট, স্যুভেনির শপ, প্যানোরামা টেরাস বিভিন্ন তলায়। সারপ্রাইজটা ছিল এ বাড়ীরই অন্য দিকটাই। তিতলিস গ্লেসিয়ারের মধ্যে একটা গর্ত করে মানুষের ঘুরে আসার পথ করা রয়েছে। ঢুকে দেখলাম নিচে ওপরে দুপাশে সব বরফ। বরফ এত কম টেম্পারেচারে আছে যে পায়ে পায়েও একটুও গলছে না। সে বস্তুতে মুগ্ধ হয়ে বেরিয়েই দেখি ইয়োরোপের হাইয়েস্ট সাসপেনসন ব্রিজে ওঠার সিঁড়ি। লোহার সিঁড়ির দুদিকে আশে পাশের পাহাড়ে শুধু বরফ। এবার আর সফেদিকা চমকার নয়। মনে হচ্ছে একটা বিশাল বরফের সমুদ্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। যার ঢেউগুলো আকাশ ছুঁতে চায়। সাসপেনসন ব্রিজটা একটা পাহাড়ের চুড়া থেকে অন্য পাহাড়ের চুড়া অবধি। কিন্তু এত বরফের জন্য মাঝের খাদটা ভাল করে বুঝতে পারলাম না। খালি হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে গেলাম টলমল করতে থাকা ব্রিজটা পেরোতে গিয়ে। তারপর আরো খানিক স্নোবল ছোঁড়াছুঁড়ি ডিডিএলজের কাট আউটের পাশে ছবি, রেস্টুরেন্টে খাবার এবং বীয়ার। পরবর্তী পয়েন্ট স্যুভেনির শপ। আড়াই দিন কাবার এদিকে ঘন্টা কেনা হয়নি। কি চাপ। আমার তো মনে হচ্ছিল এবার মাঠে গিয়ে গরুর গলা থেকেই খুলে নেব। অগত্যা মাউন্ট তিতলিস যেখানে কোন গরু কোনদিন চড়েনি সেখান থেকে তাদের গলার ঘন্টা কেনা হল। ফেরার পথে মাঝপথে স্নোটিউবিং স্নোবল ফাইট আবার। সেদিন হোটেল ফিরে একটু রেস্ট নেওয়া গেল বিকেল সন্ধ্যেটা। তারপর একটি রেস্টুরেন্টে লোকাল খাবার এবং আবার কনিয়াকের সাথে প্রেমটা ঝালিয়ে নেওয়া গেল।
  • Shabnam Dutta | 186.249.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ১৩:৫০366024


  • Shabnam Dutta | 186.249.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ১৩:৫১366026
  • চতুর্থ দিন সুইটজারল্যান্ডে। অনেক বিচার বিবেচনা, এরিথম্যাটিক (পকেটের টাকা) , ক্যালকুলাস (সময়ের সঠিক ব্যবহার) ইত্যাদি প্রভৃতির পরে রাইন ফলস্ দেখতে যাওয়া হল। এটি সুইটজারল্যান্ড আর জার্মানীর বর্ডারে রাইন নদীর উপরে। আমদের জুরিখ হয়ে যেতে হল। গিয়ে দেখি প্রায় গুপ্ত সুড়ঙ্গ দিয়ে গিয়ে একটা খোলা চত্তর। সেখানে টিকিট কাউন্টার। নামে মাত্র দামে টিকেট কেটে সিঁড়ি এবং ঢালু রাস্তা দিয়ে নেমে পড়লাম ফলসের কাছে। সাইজে নায়াগ্রার তুলনায় কিছুই নয় কিন্তু সৌন্দর্যর বিচারে ইনি বেশী পেছনে থাকবেন না। সবচেয়ে মজার হল যে এনার গায়ের ওপরে পাহাড়ে একটি সুড়ঙ্গ আছে যেটা দিয়ে দশ পা গেলেই এনার জলে হাত দেওয়া যায়। সামনে রেলিং আছে অবশ্য। কোমর অবধি। সেখান থেকে উঠে এসে সেই খোলা চত্তরে কিছু কেনাকিনি এবং লাঞ্চ কেনা হল।

    শেষ গন্তব্য appelzel| এটি একটি বিশুদ্ধ সুইস গ্রাম trip adviser র খবর অনুযায়ী। তিনটে ট্রেন বদল করে যাওয়া। শেষের ট্রেনটায় লোকে যেভাবে তাকাচ্ছিস তাতে এটুকু বুঝতে অসুবিধা হল না যে বাদামী রঙের মানুষের গপ্পো আজ হবেই এনাদের ডিনার টেবলে। শেষে যেখানে পৌঁছালাম সেটা আমাদের হিসেবে গ্রাম নয় একেবারেই। দিব্যি দোতলা তিনতলা বাড়ী। হাট বসেছে রাস্তার মাঝে (শনিবার হলেও!!)। পাবগুলো উপছে পড়ছে ভীড়ে। ছানাপোনারা খেলে বেড়াচ্ছে চার দিকে। একটা তিরতিরে নদী বয়ে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। তার উপরে যে ব্রীজটা তার উপর দাঁড়ালে দুরে দেখা যায় বরফঢাকা পাহাড়। বোধহ্য় ওইখানেই এই নদীটার শুরু। গ্রামের দোকান থেকে আকার ইঙ্গিতে চিz, পাস্তা, স্থানীয় লিকার (আপেল থেকে বানানো, 22%) কিনে একটি পাবে উদয় হলাম। সেখানে একবর্ন ইংরেজি বোঝে না কেউ। সাইন ল্যাংগুয়েজে যে আমি পিএইচডি সেটা আবার প্রমান করে দু গ্লাস বীয়ার কেনা গেল। বিয়ার খেতে খেতে আশেপাশের লোকেদের কথায় আড়ি পাতার বৃথা চেষ্টা দিলাম। কিস্সু বুঝলাম না। ভাষাটা বোধহয় জার্মান। শেষটায় খুব অনিচ্ছায় ফিরতি ট্রেন ধরে ব্যাক টু লুসার্ন. সেদিন রাতে ইটালিয়ান খেয়ে ফিরে ওই আপেলের দারু খেতে বসলাম। দারুটা খেতে কতটা ভাল সে বোঝানোর ভাষা আমার নেই। তবে আপনারা কেউ গেলে ওটা মিস করবেন না। খুব ইচ্ছে ছিল খেয়ে "জারা সা ঝুমলু ম্যায় করার"। কিন্তু বিধি বাম। প্রথমত দারুটা বেশীই জলদি শেষ হয়ে গেল। দ্বিতীয়ত আমার ভাল মানুষ বরটা বিদ্রোহ করে উঠল। সে এই রাতে রাস্তায় কিছুতেই যাবে না বলে। কি আর বলি! দিনকাল খুবই খারাপ! তাই মনের ইচ্ছে ন্যাপথালিন দিয়ে মনের বাক্সে জমিয়ে রাখা গেল। বলা তো যায় না যদি কোনদিন ঝেড়েঝুড়ে বার করার সুযোগ আসে?

    তারপরেই ফেরার দিনের সকাল। অনেক কুস্তির পরে রাত দশটায় বাড়ী।
  • Shabnam Dutta | 186.249.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ১৩:৫৫366027


  • d | 59.203.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ১৩:৫৭366028
  • কী লোকাল খাবার? শুনি একটু?
  • de | 24.139.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ১৪:২৩366029
  • আহা! ডাবল সুইস গপ্পো - ছবিগুলো ক্ষী সুন্দর!!
  • de | 69.185.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ১৪:২৬366030
  • এই ছবিগুলো দেখলে বারেবারে কাশ্মীরের কথা মনে হয় - দৃশ্যতঃ এতো এক, শুধু পর্য্যটন দিয়েই কাশ্মীরের অর্থনীতি চেঞ্জ হয়ে যেতো - কিন্তু কী অবস্থা এখন!
  • sswarnendu | 138.178.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ১৪:৫৯366031
  • appelzel| টা কি Appenzell লিখতে গিয়ে টাইপো? তাহলে চিজ মানে নিশ্চয়ই আপেনজেলার... আর আপেলের লিকারটার নাম কি? এমনিতে আপেনজেলের সবচেয়ে বিখ্যাত ড্রিঙ্ক সম্ভবত আপেনজেলার আল্পেনবিটার। আর ভাষাটা সুইস জার্মান, জার্মান বললে সুইস জার্মানরা বেশ রাগ করবে :)
  • Shabnam | 198.29.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ১৫:১৯366032
  • Swarnendu,

    হ্যাঁ টাইপো।
    সুইস জার্মান? হতেই পারে। আমি এক বিন্দুও বুঝিনা।
  • Shabnam | 198.29.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ১৫:২০366033
  • D,
    লোকাল খাবার মানে এমনি খাবারই কিন্তু কিসব সস ছিলো স্পেশাল।
  • tania | 165.57.***.*** | ০২ মে ২০১৭ ০০:৫৯366034
  • টিটলিসের ওপরের সিনিক বিউটির আর কি বর্ণনা দেব, সে কলমের জোর আমার নেই। বরং ছবি পোস্ট করব কিছু। শুধু এটুকু বলতে পারি, অস্ট্রিয়ায় বরফহীন আল্পস তখন আর মনেই পড়ছেনা। আর মনে পড়ার যো কি রে ভাই! আশেপাশে তখন রীতিমত জোড়ায় জোড়ায় ডিডিএলজের শুটিং হচ্ছে। দাদু দিদিমা থেকে ছোঁড়াছুঁড়ি, সবাই মাঙ্কিক্যাপ জ্যাকেট খুলে বীরবিক্রমে ফোটোসেশন করছে। সর্দারজী চোখ বন্ধ করে সাস্পেন্শন ব্রিজ পার হবেন না চোখ খুলে, সর্দারনী তার ইন্স্ট্রাকশন দিয়ে যাচ্ছেন, সেল্ফি স্টিকের ঠ্যালায় মানুষের দাঁড়ানোর জায়্গা নেই। একদিকে শাহরুখ কাজলের বিশাল কাটাউট। তারই মধ্যে আমাদের প্রেস্টিজ পাংচার করে সেই কাটাউট দেখিয়ে আমার ছেলের উচ্চস্বরে প্রশ্ন, “who are these guys?” পরের দশ সেকেন্ড পিন পতনের নীরবতা। পরক্ষণেই আবার ব্যাক টু সন্ধ্যেবেলার শ্যামবাজার মোড।
    আইস ফেস্টিভাল চলছে বলছিলামনা? এখানে যাবার জন্য আবার লাইন। এর টিকিট নীচে থেকে না কেটে আনলে উঠতে দেবেনা। তা আমাদের কিনা প্যাকেজ, তাই অবাধ গতি। এটা স্কি লিফ্টের মত রোপওয়ে। তাতে চড়ে পৌঁছে যাওয়া গেল ফেস্টিভাল চত্ত্বরে। এলাহী কান্ড। বাচ্চাদের জন্য হরেককরম ব্যাবস্থা। বড়দের জন্যও। আর আছে জিপলাইন। এই একটা জিনিস আমার বহুদিনের শখ, কিন্তু সাহস করে কোথাও করে উঠতে পারিনি। এখানে এই পাহাড়ের মাথায় জিপলাইন দেখে মাথাটা জাস্ট ঘুরে গেল। এটা না করলে জীবন বৃথা! খোঁজ নিতে গিয়ে শুনলাম, এর টিকিট নীচ থেকে কেটে আনতে হবে। এখন নীচে গিয়ে আবার আসার কোনো মানে হয়না, কারন ফগ এসে যাবে ততক্ষণে। আমরা বিমর্ষমুখে ফিরে আসছি, হঠাৎ জিপ্লাইনের ভদ্রলোক বললেন, একি, আপনাদের তো টিকিট আছে! কই, আমরা তো কাটিনি? কাটেননি মানে কি? আপনারা ফ্যামিলি প্যাকেজ কাটেননি? বিলক্ষণ কেটেছি, কিন্তু সে তো তিনটে আলাদা আলাদা টিকিটের থেকে সস্তা হবে বলে। আরে, তখন ওরা আপনাদের প্যাকেজ দিচ্ছি, বলেনি? আলবাৎ বলেছে! এই হচ্ছে সেই প্যাকেজ। এতে আইসফেস্টিভালের যাবতীয় জিনিস কাভার্ড। আনলিনিটেড টাইম। আমরা তখন আহ্লাদে আটচল্লিশখানা।
    তো দড়ি দড়া বেঁধে তো লাইনে দাঁড়ানো গেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি একএকজন করে যাচ্ছে জিপলাইনে। আমরাই একমাত্র ভারতীয়, বাকি সব সাদা চামড়ার লোক। বাচ্চারা দিব্যি চলে যাচ্ছে, মোটাসোটা যারা তাদের নিয়ে স্টাফ টোটাল গলদ্ঘর্ম হচ্ছে বাকল আপ করতে। আমি মনে মনে হিসেব কষছি, জ্যাকেট শুদ্ধ আমার ওজন কত হবে, জিপ লাইন ছিঁড়েটিঁড়ে যেতে পারে কি? দেখতে দেখতে আমাদের টার্ন এসে গেল। প্রথমে গেল ছেলে। রোগা পাতলা, খুব ইজিলি পৌঁছে গেল ওদিকে। ও আচ্ছা, তার আগে বলি বন্দোবস্তটা কেমন। এটা পাহাড়ের মাথায় একটা অপেক্ষাকৃত ফ্ল্যাট জায়্গায়। একটা উঁচু পয়েন্ট থেকে শুরু করছে, মাঝখানটা বাটির মত ঢালু হয়ে আবার ওদিকটা একটু উঁচু। এদিক থেকে একজন বেঁধেছঁধে ঠেলে দিচ্ছে, আর ওদিক থেকে আরেকজন দড়িদড়া খুলে নামিয়ে নিচ্ছে। পুরোটা আন্দাজ ২০০-২৫০ মিটার হবে। দেখলে মনে হয় পিস অফ কেক। ছেলে তো পৌঁছে গিয়ে লাফাতে লাফাতে বাটির মাঝামাঝি ফিরে এসে ক্যামেরা নিয়ে রেডি। এবার আমার পালা। হুক আপ করে ঠেলে দিতেই আমিও বডি ওয়েটে হুড়হুড় করে চললাম। কয়ক সেকেন্ডের ব্যাপার। কিন্তু সে যে কি অসাধারন অনুভুতি, ভাষায় বলার নয়। দশহাজার ফুট উচ্চতায় ধবধবে সাদা বরফের ওপর দিয়ে হুশহুশ করে চলেছি, নীচ থেকে আর্লি আফ্টারনুন ফগ উঠে আসছে, ৩০ মিটার দূরত্বে গভীর খাদ হাঁ হাঁ করছে, মুখে কনকনে হাওয়ার ঝাপটা – what can I say, I lived an entire lifetime of thrills in those few seconds!
  • tania | 165.57.***.*** | ০২ মে ২০১৭ ০১:০১366035
  • কয়েক সেকেন্ডের গপ্পো তো কয়েক সেকেন্ডেই শেষ। তারপর? ওদিকে জিপলাইনের শেষ মাথা হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ছে। আমার সে খেয়াল নেই। যখন খেয়াল হল তখন টু লেট। ধড়াম করে বরফের দেওয়ালে ধাক্কা। ডান হাত, কাঁধ, কোমর কয়েক মুহুর্ত কোনো সাড় নেই। জিপলাইন স্টাফ সমানে ইদিকে চিল্লিয়ে যাচ্ছে আন বাকল করার জন্য। যাহোক, নেহাৎ ঠান্ডা ছিল খুব তাই কিছু টের পাইনি তখন। নেমে একটু জিরোলাম। অত অল্টিচুডে নিঃশ্বাস নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে ধাক্কাটা খেয়ে। ততক্ষণে কর্তাও চলে এসেছে দড়ি মারফৎ। এবার ফেরার জন্য হাঁটতে হবে। ২০০-২৫০ মিটার জিপলাইন মানে প্রায় ৩০০ মিটার হাঁটা। হাঁটু ডোবা বরফে হাঁটা যে কি যন্তন্না, সে ভুক্তভুগী মাত্রেই জানে। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত তখন কানের কাছে দুই হ্যাহ্যা পার্টি সমানে বলে চলেছে বরফের দেওয়ালটা নাকি আমার ধাক্কায় ভেঙ্গে পড়েছে, জিপলাইন নাকি আজকের মত বন্ধ করে দিতে পারে সারাইয়ের জন্য।
    ৩০০ মিটার শেষে বেদম হয়ে স্নোপার্কের ধারে পাতা লাউঞ্জ চেয়ারে বসে পড়লাম। বেশ লাগছে দেখতে লাল নীল সোয়েটার টুপি পরে বাচ্চা বুড়ো বরফ নিয়ে খেলছে, স্লেডিং করছে। ভারতীয় বাবা মায়েরা ছানাপোনাদের খাবার নিয়ে তাড়া করার ফাঁকে পোজ দিয়ে ছবি তুলছে। বিশাল বপু মেমসাহেবরা করুণার চোখে সেসব দেখতে দেখতে সাহেবদের বিয়ার আনতে হুকুম করছে। মানে রীতিমত হইচই ব্যাপার।
    আস্তে আস্তে কখন কুয়াশা এসে চাদর বিছিয়ে দিল। ঘড়ি বলছে দুপুর তিনটে, কিন্তু রোদ মরে এসেছে, হাওয়ায় ঠান্ডার কামড়টাও বেশ মালুম হচ্ছে। গুটি গুটি পায়ে আমরাও ফেরার পথ ধরলাম। স্কি লিফ্ট, রোটেয়ার কেবলকার, বনগাঁ লোকাল, ফাইনালি, ফার্স্ট ক্লাস গদি আঁটা ঝুলন্ত গাড়ি চেপে আমরা আবার মাটির কাছাকাছি।
  • tania | 165.57.***.*** | ০৩ মে ২০১৭ ০৩:২৩366037
  • নেমে খেয়াল হল আমরা সেই ব্রেকফাস্টের পর আর কিছু খাইনি। আমরা এরকমই। বেড়ানো পেলে ক্ষুধাতৃষ্ণা ভুলে যাই। এদিন রবিবার। এঙ্গেলবার্গে অনেক দোকান বন্ধ। আমরা ঠিক করলাম একেবারে লুৎসার্নে পৌঁছে খাব। আর্লি ডিনার। মোটে তো ৩০ মিনিটের রাস্তা। সেইমত পৌঁছোনো গেল লুৎসার্ন। গাড়ি পার্ক করে বেরিয়েই দেখি বিশাল (মানে সুবিশাল) পোস্টার। ইন্ডিয়ান ডিনার ক্রুজ। যাক, আমরা খুঁজছি লোকাল কুইজিন। একটু এগিয়ে দেখি আমাদের ফ্লোটেল টাইপের একটা ব্যাপার। বেশ সম্ভ্রম জাগে দেখলেই। আমরাও আর বেশি ভাবনা চিন্তা না করে তাতেই ঢুকে পড়লাম। এদিকে হয়েছে কি, তখন বাজে মোটে পৌনে পাঁচটা, ওদের ডিনার শুরু পাঁচটা থেকে। শুধু বার খোলা তখন। তা, আমরা বললাম, বাবারা, আমাদের একটু বসতে দাও, আমারা পনের মিনিট পরেই না হয় অর্ডার দেবো। কি বুঝলো কে জানে, আমাদের একটা টেবিল দিলো। কিছুক্ষণ পর একজন সার্ভার এল মেনুকার্ড নিয়ে, কিন্তু তাতে কেবল চিজ স্টিক আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। আর কিসু নাই। কিছু একটা গন্ডগোল হচ্ছে বুঝে তাকে মহা পরিশ্রম করে বোঝানো গেল যে আমরা বারে না, ডিনারে এসেছি। সে কাঁচুমাচু হয়ে বলে, দেখুন আমি ডিনারের অর্ডার নিতে পারি না, আপনারা বরং ওপরের ডেকে গিয়ে বসুন। ওখানেই ডিনার হবে।

    সেখানে গিয়ে দেখি জনমনিষ্যি নেই। এমনকি আমাদের বসতে মানা করারও কেউ নেই। এবার বসে আছি তো বসেই আছি। কেউ আর আসেনা। প্রায় পনের মিনিট পর একজন হন্তদন্ত হয়ে এসে আমাদের দেখে প্রায় মুচ্ছো যায় আরকি। সে ব্যাটা সবে এসে এই ডেকটা খুলেছে, সেখানে আমরা কি করে অলরেডি বসে আছি এর মাথায় ঢুকছেনা। তারপর খুব ভয়ে ভয়ে আমাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কোথা থেকে এলেন? আমার তখন ক্ষিদেয় ব্রহ্মতালু জ্বলছে, সটান বললাম ক্যালিফর্নিয়া থেকে। বেচারা প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়ে কি পাওয়া যাবে তার ফিরিস্তি দিতে গিয়ে চারবার বিষম খেল। ফাইনালি কি অর্ডার করেছিলাম এখন আর মনে নেই, খাবার অবভিয়াসলি মনে রাখার মত কিছু ছিলনা, কিন্তু নৌকোয় বসে অসম্ভব সুন্দর লুৎসার্ণ লেকের ওপর সন্ধ্যে নেমে আসা দেখছি আর প্রচন্ড ক্লান্ত শরীরে আস্তে আস্তে দুপুরের পাপের জের টের পাচ্ছি – এইসব মিলিয়ে সন্ধ্যেটা বহুদিন মনে থাকবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন