এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • হাসির গপ্প- পাগলা দাশু

    Anindya Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ | ২২৭৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Anindya Mitra | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৬:০৬366013
  • হাসির গল্প
    সুকুমার রায়
    রূপান্তর - পাগলা দাশু

    আমাদের নবান্নের দিদিমনির বেজায় ভুলভাল বলিবার সখ। যেখানে সেখানে সভায় আসরে নিমন্ত্রণে, তিনি তাঁহার আইডিয়ার ভাণ্ডার খুলিয়া বসেন। দুঃখের বিষয়, তাঁর আইডিয়া আর জ্ঞান অতি সামান্য— কতগুলি বাঁধা গল্প, তাহাই তিনি ঘুরিয়া ফিরিয়া সব জায়গায় চালাইয়া দেন। কিন্তু একই গল্প বারবার শুনিতে লোকের ভাল লাগিতে কেন? দিদির গল্প শুনিয়া আর লোকের হাসি পায় না। কিন্তু তবু দিদির উৎসাহও তাহাতে কিছুমাত্র কমে না।
    সেদিন হঠাৎ তিনি কোথা হইতে একটা নূতন আইডিয়া সংগ্রহ করিয়া, রাজ্যের শিল্পপতিদের শুনাইয়া দিলেন। গল্পটা অতি সামান্য কিন্তু তবু ম্যাডাম খাতির করিয়া সকলেই হাসিল। ম্যাডাম তাহা বুঝিইয়াও বুঝিলেন না, তিনি ভাবিলেন তেলেভাজা শিল্পের গল্পটা খুব লাগসই হইয়াছে। সুতরাং, তার দুদিন বাদে দলীয় মিটিং এ বক্তৃতা দেবার সময়, তিনি খুব আড়ম্বর করিয়া আবার সেই গল্প শুনাইলেন। দলীয় সমর্থক সে সব শুনিয়া বেশ উৎসাহ পাইল। দিদিমনি ভাবিলেন তেলেভাজার গল্পটা জমিয়াছে ভাল।
    বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনে তিনি আবার সেই তেলেভাজার গল্পই খুব উৎসাহ করিয়া শুনাইলেন। এবারে হোঁৎকা পার্থ য়ার শুঁটকো অমিত ছাড়া আর কেহ গল্প শুনিয়া হাসিল, না, কিন্তু দিদি নিজেই নিজের আইডিয়া শুনিয়ে স্বীয় পিঠ চাপড়াইলেন। তারপরেও যখন তিনি আরও দু তিন জায়গায় সেই একই গল্প চালাইয়াদিলেন, তখন জনগণের মধ্যে কেহ কেহ বিষম চটিয়া গেল। সূর্য বলিল, "না হে, আর ত সহ্য হয় না। বিরোধী ব'লে আমরা এতদিন সয়ে আছি— কিন্তু ওঁর আইডিয়ার উৎসাহটা একটু না কমালে চলছে না।"
    দুদিন বাদে, দিদি রাজ্যের শিল্পের সম্ভবনা লইয়া সাংবাদিক সম্মেলন করিয়েছে, এমন সময় হোঁৎকা পার্থর নাদুস্‌নুদুস্‌ মূর্তিখানা দেখা দিল। সাংবাদিকরা ঠিক করিল ওঁর আইডিয়া শুনে কেউ প্রশ্ন না করে থাকিবেন না! দেখি উনি কি উত্তর দেন ।" দিদি মাইক লইতেই বসিতেই এক সাংবাদিক বলিয়া উঠিল, "নাঃ, দিদি আজকাল যেন কেমন হ'য়ে গেছেন। আগে কেমন মজার মজার ঐতিহাসিক গল্প বলতেন। আজকাল, কৈ? কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছেন।" দিদি একথায় ভারি ক্ষুণ্ণ হইলেন। তাঁর গল্প আর আগের মত জমে না, একথাটি তাঁহার একটুও ভাল লাগিল না। তিনি বলিলেন, "বটে? আচ্ছা রোস। আজ তোমাদের এমন গল্প শোনাব, হাস্‌তে হাস্‌তে তোমাদের নাড়ি ছিঁড়ে যাবে।" এই বলিয়া তিনি তাঁহার সেই মামুলি পুঁজি হইতে একটা গল্প আরম্ভ করিলেন সেই গান্ধীজী কে রবি ঠাকুরের ফলের রস পান করাইবার গল্প। কিন্তু গল্প বলিলে কি হইবে? সাংবাদিক কেহ হাসিতে রাজি নহি— সকলেই কাঠ হইয়া বসিয়া রহিল। একজন বলিল, "নাঃ, এ গল্পটা জুৎসই হল না।" তখন দিদি তাহার সেই পুঁজি হইতে একে একে পাঁচ সাতটি গল্প শুনাইয়া দিলেন যেমন রাকেশ রোশনের চাঁদে, যাওয়া, নাড়ির ৪৪ পালস, ডহর বাবুর খোঁজ করা, আর কতো কি । কিন্তু তাহাতে সকলের মুখ পেঁচার মত আরও গম্ভীর হইয়া উঠিল! তখন দিদি ক্ষেপিয়া গেলেন। তিনি বলিলেন, "যাও যাও! তোমরা ইতিহাস কিছু জান না— সততার কদর বোঝ না— আবার গল্প শুনতে চাও! এই গল্প শুনে সেদিন মোদী সাহেব পর্যন্ত হেসে গড়াগড়ি— তোমরা এসব বুঝবে কি?" তখন আমাদের মধ্যে একজন বলিয়া উঠিল, "সে কি দিদি? আমরা হাস্‌তে জানিনে? বলেন কি! আপনার গল্প শুনে কতবার কত হেসেছি, ভেবে দেখুন ত'। আজকাল আপনার গল্পগুলো তেমন খোলে না— তা হাস্‌ব কোত্থেকে? এই ত, সেদিন কে যখন রবীন্দ্রনাথ আর সেক্সপীয়ার কে নিয়ে বললেন তখন কি আমরা হাসিনে? কি বলেন?"
    দিদিমনি হাসিয়া বলিলেন, "পার্থ? এরা আমার সাথে ফাজলামো মারে নাকি? আরে, এক সঙ্গে দুটো কথা বলতে ওর মুখে আট্‌কায়, ও আবার গল্প বলবে কি?" পার্থ বলিল, "আমার দিদির গল্প শোনেন নি বুঝি?" আমরা সকলে উৎসাহ করিয়া বলিলাম— "হাঁ, হাঁ, একটা শুনিয়ে দাও ত।" পার্থ তখন গম্ভীর হইয়া বলিল, "এক ছিল রানী"— শুনিয়া আমাদের চার পাঁচজন হো হো করিয়া হাসিয়া বলিল, "আরে রানীর গল্প রে রানীর গল্প!— হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ।"
    পার্থ বলিল, "রানীর এগারোটা ধাড়ি ধাড়ি ভাই"—
    শুনিবামাত্র আমরা একসঙ্গে প্রাণপণে এমন সশব্দে হাসিয়া উঠিলাম যে, পার্থ নিজেই চম্‌কাইয়া উঠিল। সকলে হাসিতে হাসিতে, এ উহার গায়ে গড়াইয়া পড়িতে লাগিলাম— কেহ বলিল, "দোহাই হোঁৎকাদা, আর হাসিও না"— কেহ বলিল, "পার্থবাবু রক্ষে করুন, ঢের হয়েছে।" কেহ কেহ এমন ভাব দেখাইল, যেন হাসিতে হাসিতে তাহাদের পেটে খিল ধরিয়া গিয়াছে।
    দিদি কিন্তু বিষম চটিয়া গেলেন। তিনি বলিলেন, "এসব ঐ সূর্যের কারসাজি। ওই আগে থেকে সব শিখিয়ে এনেছে। নইলে, ও যা বললে তাতে হাস্‌বার মত কি আছে বাপু?" এই বলিয়া তিনি রাগে গজ্‌গজ্‌ করিতে করিতে উঠিয়া গেলেন।
    সেই সময় হইতে দিদির গল্প বলার সখটা বেশ একটু কমিয়াছে। এখন আর তিনি যখন তখন কথায় কথায় হাসির গল্প ফাঁদিয়া বসেন না ভাই গুলোর ওপরে সমনের খাঁড়া ঝুলছে কি না !
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন